কৃপণ মা

মা আমার মা (মে ২০২১)

শরীফ মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান
মোট ভোট প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.১
  • 0
  • ১৫৮
জগতে মায়ের চেয়ে আর কেউ বেশি আপন হতে পারে না। আবির তার মাকে সবচেয়ে বেশি আপন করে রেখেছে তারপরও নানাবিধ অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে তাদের সংসারে।কারণ তার মা তার সবকিছুতেই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।বিশেষ করে টাকা খরচের কোনো বিষয় হলে সেই খরচের কতটা গুরুত্ব আছে তা বিবেচনা করে সে সেই ব‌্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে।আর এ বিষয়টা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলে দেয় তার বউ সাবিনাকে।সংসারে এ নিয়ে সবার মাঝে একটা চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে কিন্তু কেউ মুখ ফুটে কিছু বলে না।ছেলের বউদের কাছে শ্বাশুড়ীরা সবসময় একটু অন‌্যরকম হয়ে থাকে এটা সমাজের চিরাচরিত নিয়মে পরিণত হয়েছে।তবুও তাদের মাঝে সম্পর্ক তেমন খারাপ না যদিও বউ শ্বাশুড়ির সম্পর্ক অম্ল মধুর হয়ে থাকে।
আবির এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে কমবেশি ঝগড়ায় জড়িয়ে পরে কিন্তু পরে আবার সে নিজেই ব‌্যথিত হয়।তার বউ সাবিনা আবার তাকে এ নিয়ে বকা দেয় যে সে মায়ের সঙ্গে কেন ঝগড়া করে অবশ‌্য তার মা একটু বেশিই কৃপণ।কখনো কাউকে কিছু দিতে চায় না।আর সে যদি কিছু তার শ্বাশুড়ির কাছে চায় তাহলে তো সে খুব রেগে যায়।
সাবিনা আবিরের কাছে এ বিষয়ে বহুবার অভিযোগ দিয়েছে কিন্তু আসলে আবিরের কিছুই করার নেই।কারণ সে তার মায়ের সঙ্গে কখনো কঠোর হতে পারবে না।সবকিছুর ওপরে তার মা,শত ঝগড়া করলেও মাাকে সে খুব ভালোবাসে।তাই মাকে নিয়ে কোনো অভিযোগই তার কাছে কখনো বেশি গুরুত্ব পায় না।আর তার মা যে কিছুটা কৃপণ তা সেও জানে।এসব অবশ‌্য তার মা তাদের ভবিষ‌্যতের জন‌্যই করে থাকে।তাই সে এ বিষয় নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামায় না।মূলতঃ তার বাবার যে সম্পদ রয়েছে তা তার মা কাউকেই তেমন একটা দিতে চায় না।জমানো টাকা সে বেশি একটা খরচ করতে চায় না। আর এ কারণে সবার কাছে সে কৃপণ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
আবিরের কৃপণ মাকে নিয়েই তাদের মধ‌্যবিত্ত সংসার।তারা দুই ভাই এক বোন।বোনের বিয়ে হয়ে গেছে আর তার ভাই চাকুরি নিয়ে আর একটা শহরে বসবাস করে।তাদের সবার সংসার মোটামুটি ভাবে চলে যাচ্ছে।আবির ব‌্যবসায়ী।তার ব‌্যবসা মোটামুটি চলে তাই সে তার বউয়ের সব চাহিদা ঠিকমতো মেটাতে পারে না।আর এ কারণে কোনো বড় ধরণের চাহিদা এলে তা সে তার মায়ের কাছে চেয়ে বউয়ের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে।আর যখনই আবির তার মায়ের কাছে কিছু চাইতে যায় তখনই তার মা তাদের উপরে রেগে যায়।সবকিছু জানা সত্ত্বেও তার বউ সেই পথেই যায়।এবার তার ইচ্ছে হলো একটা ওয়াশিং মেশিন কিনতে হবে।যথারীতি সে আবিরের কাছে কথাটা খুলে বলল।
বউয়ের কথা শুনে আবির বলল,দেখ ব‌্যবসা কোনো রকম চলে যাচ্ছে আর এর মধ‌্যে এত টাকা খরচ করা আমার পক্ষে এখন সম্ভব নয়।
সবসময়ই তো তোমার টানাটানি থাকে।আর এত কষ্ট করে আমি আর কাপড় কাঁচতে পারবো না।তুমি আম্মাকে বলো তার কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে নাও।সে লক্ষ লক্ষ টাকা জমিয়ে রেখে কি করবে।বাবা মারা যাবার পর সেতো আমাদের কাউকেই কিছু দেয়নি।তুমি এবার মাকে বলে ঘরে একটা ওয়াশিং মেশিন আনার ব‌্যবস্থা করো।আবিরের কথার জবাবে তার বউ সাবিনা বলল।
এত সহজ নয় তুমি মাকে জানো না।দুই মাস আগে দুই লক্ষ টাকা কত কষ্ট করে তার কাছ থেকে নিলাম।ব‌্যবসার কাজে লাগাবো তা তাকে কতো কষ্ট করে বোঝাতে হলো।আমি এখন আবার মার কাছে টাকা চাইতে পারবো না।আবির বলে দিল সে তার মার কাছে টাকা চাইতে পারবে না।
আবিরের কথা শুনে তার বউ রেগে গেল।সে বলল,আমি অত কিছু বুঝি না তুমি যেভাবে পারো আমাকে ওয়াশিং মেশিন কিনে দাও।না হলে নিজের টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে এসো তবু আমার চাই।
বেশ ভালো ঝামেলা হয়ে গেল।আবির দেখল তার বউ বেশ শক্ত করেই তাকে ধরেছে কিছু একটা করতে হবে তাই সে পরিস্থিতি গরম না করে শান্ত হয়ে ভাবতে লাগল কি করা যায় একটু ভেবে সে বলল,আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখি কত দ্রুত তোমাকে ওয়াশিং মেশিন কিনে দিতে পারি।
সবকিছুতেই তো তুমি এভাবে করো।তারপরে আর কোনো খবর থাকে না আমি বলতে বলতে শেষ হয়ে যাই তারপরে তোমার কানে পানি ঢোকে।এবার কিন্তু আমি তোমাকে কোনো সময় দেব না।আমার কোনো বিষয়ে তুমি বেশি গুরুত্ব দিতে চাও না।তাই এ মাসেই আমি আমার ওয়াশিং মেশিন কিনতে চাই।আবিরের বউ সোজা জানিয়ে দিল তাকে।
বুঝছি বাবা বুঝছি আর বলতে হবে না আমি মায়ের সাথে কথা বলে দেখি কত দ্রুত সমাধান করা যায়।এবার তুমি একটু আমাকে একা থাকতে দাও।এমনিতেই ব‌্যবসায় মন্দা যাচ্ছে।আবির কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে উঠল।
তার কথা শুনে সাবিনা সেখান থেকে পাশের রুমে চলে গেল।
আবির ভাবল কিছু একটা করতে হবে।তার বউ যখন চেয়েছে তাকে তা কিনে না দেয়ার আগ পর্যন্ত তার কোনো শান্তি হবে না।কয়দিন পর পরই তার কানের কাছে এ কথা বলতে থাকবে তার সহধর্মিনী।সুতরাং তাকে ঠান্ডা করতে হলে তার চাওয়া জিনিস তাকে কিনে দিতে হবে।অতএব আবির মায়ের কাছে গেল।কারণ তার কাছে ওয়াশিং মেশিন কেন কোনো অতিরিক্ত জিনিস কিনে দেওয়ার মতো টাকা নেই।সংসার জীবন খুবই জটিল জীবন,এখানে লাগার কোনো শেষ নেই আর চাহিদারও কোনো শেষ নেই।এ সংসার জীবন টিকিয়ে রাখতে সবাইকে ই হয়রান হতে হয়।
মায়ের কাছে কোনো কিছু চাইতে যেতে আবিরের খারাপ লাগে কারণ তার মা তাতে রাজি হতে চায় না।সে খুব হিসেবি।হিসেব করে চলেই সে সংসারের হাল টিকিয়ে রেখেছে।কিন্তু তবুও তাকে যেতে হবে কেননা বউকে খুশি রাখতে না পারলে সংসারের শান্তি দূর হয়ে যাবে।কি আর করা যে কাজটা তার খুব অপ্রিয় সেই কাজটাই তাকে করতে হবে খুব আপন করে।বেশি চাপচাপি করলে হয়তো তার মা তাকে টাকাটা দেবে কিন্তু তাতে তার মা তার উপর রাগ করবে হয়তো।
আবির আর কোনো কিছু ভাবলো না সে রাতে তার বউকে সঙ্গে নিয়ে মার রুমে গেল।আবিরের মা তাদের দুজনকে একসঙ্গে দেখে বলল,কিছু বলবে তোমরা বসো আমার কাছে।
জ্বি মা খাবার সময়ও বলতে পারতাম কিন্তু তাতে তোমার খাবার অসুবিধা হবে তাই এখনই এলাম তোমার কাছে।আবির বলল।
আচ্ছা কি বলবে বল শুনে দেখি তোমার কথা। আবিরের মা বলল।
কোনো ভনিতা করলো না আবির।সে সরাসরি বলল,মা আমাদের টাকা লাগবে।একটা ওয়াশিং মেশিন কিনতে হবে।
আবিরের কথা শুনে তার বউ বলল,জ্বি মা একটা ওয়াশিং মেশিন আমাদের ঘরে দরকার।আপনি একটা ওয়াশিং মেশিন কেনার টাকা আমাদেরকে দেন মা।
এবার আবিরের মা বলল,না তাতো কিনে দিতে পারি কিন্তু আমি এখন এসব বিষয় নিয়ে ভাবছি না।আর দরকার পরলে তোমরা কিনে নেবে নিজেদের টাকায়।সেটা ভালো হয় না।
মা আমার কাছে এটা কেনার মতো টাকা এখন নেই।আবির বলল।
তাহলে আপাততঃ এটা কেনার দরকার নাই ।যখন হাতে টাকা হবে তখন কিনে নিও।খুব জরুরি হলে আমি দিয়ে দিতাম কিন্তু ঐ মেশিন ছাড়াও তো সংসার চলবে।কি বলো তোমরা? এবার একটু কড়া ভাবে আবিরের মা তাদেরকে কথাগুলো বলল।
আবির মার কথা শুনে নিশ্চুপ হয়ে রইল।সে বুঝতে পারছে না কি বলবে।তার মার কথা শুনে সাবিনা নিশ্চয় রেগে গেছে।
আচ্ছা মা আপনার কাছে তো টাকা রয়েছে সেখান থেকে কিছু দিলে তো আমরা ওয়াশিং মেশিনটা কিনতে পারতাম।আপনি কেন দিতে চাচ্ছেন না।এজন‌্যই আপনাকে সবাই কৃপণ মা বলে ডাকে।আপনি কাউকে কিছু দিতে চান না।কেন এমন করেন মা।আপনার ছেলেদের কাজেই তো টাকাগুলো লাগানো দরকার তাই না মা।আবিরের বউ এবার তার শ্বাশুড়িকে লক্ষ‌্য করে কথাগুলো বলল।
ছেলের বউয়ের কথা শুনে এবার আবিরের মা বলল, না বউ মা তোমরা আমাকে আর বেশিদিন কৃপণ মা বলতে পারবে না। আসলে আমি কৃপণ নই।আমি হিসেবী মানুষ তোমরা অপচয় করতে চাও আর আমি সেটাকে রোধ করতে চাই।আর সে কারণে তোমরা আমাকে কৃপণ বলো।এ অপবাদ আমি আর নিতে চাই না।আমি কৃপণ মা হতে চাই না।
মায়ের কথা থামিয়ে দিয়ে আবির বলল,আচ্ছা মা ঠিক আছে আর কিছু বলতে হবে না।তুমি বিশ্রাম নাও।তুমি টাকা দেবে না এটাই ধরে নিলাম।
তোমার কথা ঠিক আপাততঃ আমি এই ওয়াশিং মেশিন কিনতে তোমাদের কোনো টাকা দেব না।তবে তোমরা জেনে খুশি হবে যে আমি আগামি শুক্রবার আমার কৃপণ নাম ঘুচিয়ে ফেলব।আবিরের মা বলল।
সেটা কিভাবে মা?আবির মায়ের কাছে জানতে চাইল।
আবিরের মা বলল,আমি মিতু আর রবিনকে আসতে বলেছি আগামি শুক্রবার তোমাদের আমানত তোমার বাবা যেটা আমার কাছে রেখে গেছে সেটা তোমাদের মাঝে ভাগ করে দেব।কেননা এই পাচ বছর তোমাদের টাকা পয়সা আমি আমানত হিসেবে রেখেছি এখন সময় হয়েছে তা তোমাদেরকে দিয়ে দেওয়ার। সুতরাং বউ মা আমাকে আর কৃপণ মা বলতে পারবে না তোমরা।
আবিরের মন খারাপ হয়ে গেল তার মায়ের কথা শুনে।
সে বলল,মা এসব তুমি রাগ করে করছ।দরকার নাই এসব ভাগ বাটোয়ারা করার।
আবিরের মা তাকে বলল,না বাবা আমি রাগ করে কিছু করছি না।তাহলে আগেই করে দিতাম।আসলে তোমরা মাঝে মাঝে নানান কারণে আমার কাছে টাকা চাও কিন্তু আমি দিতে পারি না।কারণ এই টাকাগুলো তোমাদের সকলের।তাই কাউকে কম বেশি দিয়ে আমি অবিচার করতে পারি না।আর এ কারণে এ পাচ বছরে আমি তোমদের কাছে কৃপণ মা হয়ে গেছি।সুতরাং আমি আর এ দায় নিতে পারবো না।এখন সময় হয়েছে যে যার পাওনা বুঝে নাও।
মায়ের কথার আর কোনো জবাব দিতে পারলো না আবির আর তার বউ।শুধু বলল,মা তুমি যেভাবে ভালো মনে করো।আচ্ছা চলো এখন খেয়ে নেবে।
তোমরা যাও আমি আসছি।আবিরের মা তাদেরকে খেতে যাওয়ার জন‌্য বলল।
খাওয়ার পরে আবির নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল।তার মনটা খারাপ হয়ে গেল।মায়ের প্রতি তারা কেমন ভুল আচরণ করেছে মাঝে মাঝে সেটা ভাবলে তার চোখে জল চলে আসতে চায়। আর তার মা তাদের সম্পদ কে আমানত হিসেবে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে এতদিন আর আজ তা আর সে ধরে রাখতে চাচ্ছে না।এটা ভেবেই তার মনটা বিষণ্ণ হয়ে উঠল।
আবিরের মনের অবস্থা বুঝতে পারলো তার বউ সাবিনা।
সে স্বামীকে সান্ত্বনার সুরে বলল,মন খারাপ করো না দেখ আমরা তো বুঝতে পারিনি।তাহলে কখনো মাকে কৃপণ মা বলতাম না আর মাও আমাদেরকে এমন ভুল বুঝতো না।যাহোক মা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমার মনে হয় সেটা ভালো।কারণ তাতে সমানভাবে সবাই সবকিছু পাবে আর মায়ের ও কোনো দোষ হবে না।
সেটাতো ঠিক আছে কিন্তু মা যে আমাদের কারণে কষ্ট পেয়েছে সেটা তুমি কিভাবে মোচন করবে।না আমার ভালো লাগছে না।তোমরা সবাই মিলে মাকে কৃপণ বলেছ এবার তোমরাই মায়ের মন ভালো করার চেষ্টা করো।আবির তার বউকে লক্ষ‌্য করে বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে আমরা সবাই মিলে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব।তবুও তুমি মন খারাপ করো না।আবিরকে তার বউ মন খারাপ না করার জন‌্য বলল।
আবির আর কোনো কথা বলল না।সে নিশ্চুপ একাকি বসে রইল।সহসা তার মোবাইল রিংটোন বেজে উঠল।
আবিরের ছোট ভাই রবিন মোবাইলে কল করেছে।আবির কল রিসিভ করে বলল,রবিন বল।
ওপাশ থেকে রবিন বলল,ভাইয়া মা তো আমাদের শুক্রবার আসতে বলেছে তুমি জানো কিছু কেন বলেছে?মায়ের কথা শুনে মনে হলো তার মনটা খারাপ।
জবাবে আবির বলল,না তেমন কিছু না আসলে মা চাচ্ছে বাবা যে নগদ টাকা রেখে গেছে এখন তা সে আমাদের মাঝে ভাগ করে দেবে।কারণ আমরা যখন যার যা লাগে তাই তার কাছে চাই আর হয়তো মা ভয় পাচ্ছে এভাবে দিতে গিয়ে সে কারো প্রতি অবিচার করে না বসে।
রবিন বলল,ভাইয়া তুমি তো রয়েছ দেখ মাকে বলে মা যেভাবে চায় সেভাবেই হবে। আমার কোনো বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই।
ঠিক আছে আগেই চলে আসিস।মা যেহেতু চায় দিক ভাগ করে আমরা তো একই আছি।আবির ছোট ভাই রবিনকে আসার জন‌্য বলে দিল।
মিতুকেও মা আসতে বলেছে।তোমার কাছে কল করেছিল মিতু?রবিন এবার জানতে চাইল বড় ভাইয়ের কাছে।
না ওতো কল করেনি।দেখি আমিই এখন কল করি। ওকে কালই আসতে বলি।তাহলে রাখ এখন।আবির ছোট ভাইকে কল কেটে দেবার জন‌্য বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে বলে রবিন লাইন কেটে দিল।
কি আর করা আবির নিজে নিজে মনে মনে শান্ত হলো।যেহেতু তার মা এমন ইচ্ছা পোষণ করেছে সুতরাং তাকে বাঁধা দিয়ে আর লাভ নেই তার চেয়ে মাকে একাজে সহযোগিতা করাই তার জন‌্য উত্তম।কেননা সে সংসারের বড় ছেলে।তাই মাকে সাহায‌্য করা তার জন‌্য দাায়িত্বের মধ‌্যে পরে যায়।
আবির মাকে সব বিষয়ে সাহায‌্য করবে এটাই সে মনোস্থির করে নিল। এবার সে তার বোনকে মোবাইলে কল করে কালকেই আসার জন‌্য বলে দিল।
মিতু ভাইয়ের কথায় রাজি হয়ে গেল।তারা বেশি দূরে থাকে না তাই যেকোনো সময়েই আসতে পারে।
পরদিন ভোর বেলায় ই মিতু তার ছেলেকে সঙ্গে করে বাবার বাড়ি এসে হাজির হলো।এবার সে প্রায় দুইমাস পরে বাবার বাড়িতে এসেছে।তাই তাদেরকে দেখে সবাই খুব খুশি হলো।
এবার কিন্তু বেশ কয়েকদিন থেকে যাবি মিতু।মা মিতুকে লক্ষ‌্য করে বলল।
জবাবে মিতু বলল,মা কি যে বলো তোমার জামাই রান্না কিছু জানে ও কিভাবে কি খেয়ে থাকবে আর তোমার এই যে দুষ্ট নাতি হিমেল ওতো বেড়ানোর সুযোগ পেলে লেখাপড়া সব ভুলে যাবে।
পাশেই ছিলো হিমেল।সে তার নানিকে বলল,নানু তুমি চিন্তা করো না এবার এক সপ্তাহ না থেকে আমি যাব না।
হয়েছে হয়েছে তোমাকে আর এক সপ্তাহ বেড়াতে হবে না।সুযোগ পেলেই বেড়াতে চায়।হিমেলের মা তাকে বকা দিয়ে বলল।
না না আমার হিমেল ভাইকে বকা দিচ্ছিস কেন।ঠিক আছে ভাই তোমার যতদিন ইচ্ছা তুমি সে কয়দিন থেক। নাতিকে ভালোবেসে মিতুর মা কথাগুলো বলল।
একটু থেমে মিতুর কাছে তার মা জানতে চাইল,তা জামাই সঙ্গে এলো না কেন?
জবাবে মিতু বলল,আর বলো না সে এখন আর ব‌্যবসা ছাড়া কিছু বুঝতে চায় না।শুক্রবার সকালে চলে আসবে।এ দুই দিন নাকি সে হোটেলে খেয়ে থাকবে।
আচ্ছা তোরা তাহলে এখন একটু বিশ্রাম করে নে।কম পথ হলেও কিছুটা জার্নিতো হয়েছে।মা মিতুকে বিশ্রাম নেবার জন‌্য বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে। আগে ভাইয়া ভাবির সঙ্গে দেখা করে নেই।
এতটুকু বলে মিতু উঠতে যাবে এমন সময় আবির আর সাবিনা তার সামনে এসে হাজির হলো।তাদেরকে দেখে মিতু জানতে চাইল,ভাবি ভাইয়া তোমরা ভালো আছো?
আমরা ভালো আছি।তোমরা সবাই ভালো আছো তো?সাবিনা বলে উঠল।
জ্বি আমরা সবাই ভালো আছি।মিতু বলল।
আবির বের হতে হতে বলল,আমি একটু বাইরে যাচ্ছি মিতু তোরা রেষ্ট কর।পরে এসে কথা বলব।
আবির বের হয়ে যেতে মিতু আর হিমেলকে নিয়ে সাবিনা ভিতরে চলে গেল।
সবার মাঝে খুবই ভালো সম্পর্ক বিরাজমান।কিন্তু ঐ টাকার কারণে তাদের মা আজ তাদের কাছে কৃপণ হিসেবে পরিচিত হয়েছিল।যে বিষয়টি আবিরের মা বুঝে ফেলেছিল আর এ কারণেই সে এমন সিদ্ধান্ত নিল যে সবাইকে খুশি করে দিয়ে সে নিজের কৃপণ নাম ঘুচিয়ে ফেলবে।আর এসব টাকাতো তার ছেলে মেয়েদের জন‌্যই।সে চেয়েছিল দেরি করে দিতে কেননা যদি তার সন্তানেরা টাকাগুলো নষ্ট করে ফেলে এই ভয়ে।
কিন্তু এখন সে ভেবে দেখল টাকাগুলো তার স্বামীর কথামতো ভাগ করে দেয়াই ভালো।আর তাই সে সবাইকে আসতে বলেছে যে যার ভাগ বুঝে নিতে পারে যেন তাই।
এখন সময় এসেছে যে যা পাবে তা তাকে বুঝিয়ে দেবার।কারণ তার দুই ছেলে আর এক মেয়ে তাদের কোনো প্রয়োজন হলেই তারা মায়ের কাছে টাকা চায় সুতরাং তাদের এত চাওয়া মিটিয়ে দেওয়াই উত্তম।আর টাকাগুলো তো তাদের জন‌্যই।শুধু শুধু সে তা আটকে রেখে কেন কৃপণ নামে নিজেকে পরিচিত করতে যাবে।অতএব সিদ্ধান্ত অনুযায়ি সে শুক্রবারের অপেক্ষা করতে লাগল।
সময়ের অবগাহনে নির্দিষ্ট দিন এসে হাজির হলো।রাতেই বাড়ির ছোট ছেলে রবিন আর তার বউ চলে এসেছিল।আর সকালবেলা মিতুর জামাই এসে হাজির হলো।
দুপুরের খাবার পর সবাই বসল বসার রুমে।আবির,রবিন একসাথে বসল,আর তাদের বউরা বসল একসাথে।মিতু আর তার জামাই বসল একপাশে।হিমেল তার নানির সঙ্গে বসল।যেহেতু সবাইকে মা ডেকেছে তাই মা কি বলে সে কথা শোনার জন‌্য সবাই অপেক্ষা করতে লাগল।
আবিরের মা ই শুরু করলো।সে বলল,তোমাদের একসঙ্গে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে।কত ছোট ছোট ছিলে তোমরা আর আজ কত বড় হয়ে গেছ।ছোটবেলার দিনগুলো মনে পরে যায় তোমাদের একসঙ্গে দেখলে।
মা র কথা শুনে রবিন বলে উঠল,ছোটবেলার দিনগুলো খুব ভালো ছিল মা।আমাদের দিনগুলো খুব মজার ছিলো।মধুময় দিনগুলো আমরা পিছনে ফেলে এসেছি।
তুমি ঠিক বলেছ বাবা।আচ্ছা সে যাই হোক আমি এবার কাজের কথায় আসি।আসলে তোমাদের আমি আসতে বলেছি তোমাদের বাবার রেখে যাওয়া নগদ টাকাগুলো ভাগ করে দেবার জন‌্য।আবিরের মা এতটুকু বলে চুপ করলো।
আবির মায়ের কথা শুনে বলল,জ্বি মা আমরা সবাই এখন এ কথা জেনে গেছি।তুমি বলে দাও কে কত টাকা পাচ্ছি আর সেগুলো তুমি আমদের কিভাবে দেবে।
এবার মা বলল,তোমাদের বাবা তার সারাজীবনের রোজগারের টাকা নিজেই ভাগ করে রেখে গেছেন।আমি এতদিন তা আমানত হিসেবে ধরে রেখেছি।তোমার বাবার সব টাকাই ব‌্যাংকে রাখা আছে আমার একাউন্টে।সেখানে মোট সত্তর লক্ষ টাকা আছে।
এতটুকু বলে একটু চুপ করলো আবিরের মা। তারপরে সে বলল,সেখান থেকে তোমরা এক এক জনে পনের লক্ষ করে পাবে যা তোমাদের বাবাই ঠিক করে দিয়ে গেছেন। আর বাকি টাকা থেকে দশ লক্ষ টাকা তিনি তোমাদের গ্রামের বাড়ির এতিম খানায় দান করে গেছেন। সবকিছু একটা চিঠির মাধ‌্যমে তোমাদের বাবা লিখে রেখে গেছেন। আর বাকি টাকাটা মানে বাকি পনের লক্ষ তিনি আমাকে দিয়ে গেছেন। যা চিঠিতে উল্লেখ করে গেছেন তোমাদের বাবা।
আবার একটু থেমে আবিরের মা বলল,আর একটা কথা আমি তোমাদের টাকা থেকে কিছু খরচ করিনি।তোমাদেরকে যখন যা দিয়েছি তা আমার টাকা থেকে দিয়েছি।সুতরাং তোমাদের টাকা সবটুকুই রয়ে গেছে।এখন এই চিঠিটা নাও আবির। আর পরে দেখ আমি যা বলেছি তাই তোমার বাবা তোমাকে ঠিক ভাগে পালন করার জন‌্য নির্দেশ দিয়ে গেছেন।সুতরাং আমার নির্দেশ হচ্ছে তুমি এই চিঠিতে যেভাবে লেখা সেইভাবে নিজেদের মধ্যে পনের লক্ষ করে টাকা ভাগ করে নাও।আমি চেক কেটে দিচ্ছি। আর এতিম খানার টাকাটা আমি আগেই সেখানে দিয়ে দিয়েছি।
এই কথা বলে আবিরের মা তার বড় ছেলের হাতে চিঠিটা দিল।
একে একে সবাই চিঠিটা পড়ে দেখল।
তাদের মায়ের কথাই ঠিক।সবাইকে তাদের বাবা পনের লক্ষ করে দিয়ে গেছেন।যা তাদের মা এতদিন আমানত হিসেবে তার একাউন্টে জমা রেখেছেন।আর তারা সবাই এতদিন ধরে তাদের মাকে ভুল বুঝে এসেছে।সবাই মনে মনে বেশ লজ্জিত হলো।
সবাই নিশ্চুপ রইল।
আবিরের মা এবার বলল,তাহলে তোমরা এবার বুঝতে পেরেছ যে আমি আসলে কৃপণ ছিলাম না।তোমাদের টাকা জমা রেখে আমি আমার নিজের টাকা থেকে তোমাদেরকে দিয়েছি।সে যাই হোক আমি আরো কিছু টাকা আমার থেকে দান করতে চাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে তোমাদের কোনো আপত্তি আছে কিনা আমাকে জানাও।এ নিয়ে পরে কিন্তু কোনো কথা বলতে পারবে না। রবিন,আবির আর মিতু তোমাদের কোনো কথা থাকলে আমাকে এক্ষুণি বলো।
মায়ের কথার জবাবে সবাই বলল,না মা তোমার টাকা তুমি যে কাউকে দিতে পারো আমাদের কোনো আপত্তি নাই।
সবার কথা শুনে সে খুব খুশি হলো।তারপরে আবিরের মা বলল, তাহলে শোনো আমি পাচ লক্ষ টাকা বড় বউমার মায়ের চিকিৎসার জন‌্য দান করলাম।আর দুই লক্ষ টাকা ছোট বউমার ভাইয়ের বিদেশ যাওয়ার জন‌্য এবং জামাইয়ের ব‌্যবসা বৃদ্ধির জন‌্য তিন লক্ষ টাকা দান করলাম।
মায়ের কথা শুনে সবাই খুব খুশি হলো।
মিতু মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,মা তুমি সবার কথা ভেবেছ আর আমরা সবাই তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। আমাদের কে তুমি ক্ষমা করে দিও।
না মা আমি তোমাদের উপরে কোনো ধরণের রাগ করিনি। তোমরা সবাই ভালো থাকো এটাই তো আমি সবসময় চেয়েছি। যাহোক এবার সবার ভুল তাহলে ভেঙ্গেছে।আর তোমরা আমাকে কৃপণ মা বলে ডাকবে না আশা করি।আবিরের মা সবার উদ্দেশ‌্যে কথাগুলো বলল।
সবাই আবারো লজ্জা পেল।একে একে সবাই মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিল।মা সবাইকে ক্ষমা করে দিল।
সুন্দর এক পরিবেশ সৃষ্টি হলো আবির,রবিনদের বাসায়। সবার মনের জটিলতা দূর হয়ে গেল।মায়ের প্রতি সকলের ভালোবাসা আবার নতুন করে আরো বেশি করে সৃষ্টি হয়ে গেল।
সকলের হাসিমুখ দেখে আবিরের মা ও খুব খুশি হলো।সে এবার আবিরের নামে পঞ্চান্ন লক্ষ টাকার একটা চেক কেটে দিয়ে বলল,বাবা আবির এই টাকাটা উঠিয়ে তুমি সবার মাঝে ভাগ করে দিও।
মায়ের কাছ থেকে আবির চেকটা নিয়ে টাকা ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে নিল।সবাইকে খুশি করতে পেরে আবিরের মা ও মনে মনে তৃপ্ত হলো।
সবার ভুল ভেঙ্গে গেল আর কৃপণ মা এবার দানশীল মা রুপে পরিচিতি পেল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী অসাধারণ লেখায় মুগ্ধতা অশেষ

২২ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১১৬ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.১

বিচারক স্কোরঃ ২.১ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪