প্রত‌্যাশা

প্রত্যাশা (আগষ্ট ২০২০)

শরীফ মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান
  • ৪১
তুমি আসলে বুঝতেই পারো না যে তোমার বাবা-মা কি চায়।নাজিফা অভিযোগের সুরে তার স্বামী পরশকে কথাগুলো বলল।
পরশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার বউকে বলল,তাহলে তুমি বলে দাও আমার বাবা-মা কি চায়।আমি তো বুঝতে পারি না সুতরাং তুমি কি বুঝেছ সেটা আমাকে বুঝিয়ে বল।আমি না হয় সেভাবেই বুঝে চলবো।
আমি অত পারি না বাবা।তুমি নিজেই বুঝে নাও।নাজিফা বলল।
পরশ বলল,আমি তো বলেছি আমি বুঝি না তুমি আমাকে বুঝিয়ে বল।
কি আর বলব আমি তো এতোদিন যা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে তোমার বাবা-মা তোমার কাছে ভালোবাসা না শুধু টাকা ই প্রত‌্যাশা করে।তারা চায় প্রতি মাসে তুমি তাদেরকে বেতনের বেশি অংশ দিয়ে দাও আর আমরা কষ্ট করে থাকলেও তাদের কিছু যায় আসে না।নাজিফা বলল।
এবার পরশ একটু রাগত স্বরে বলে উঠল,যা বুঝেছ তা সম্পূর্ণ ভুল বুঝেছ আমি যা বলি তা শোন আসলে কোনো বাবা মা ই তার সন্তানের কাছে কোনো বিষয়বস্তু কামনা করে না।সব বাবা মা ই তার সন্তানের কাছে ভালোবাসা প্রত‌্যাশা করে।তুমি ভুলের মাঝে রয়েছ নাজিফা বুঝতে পারছ।
পরশের কথা শুনে এবার নাজিফা আরো রেগে গেল। সে রাগান্বিত হয়ে বলে উঠল,তুমি তো সবসময় সত‌্যি কথা শুনে রেগে যাও আমার কথার দাম দাও না।একদিন বুঝবে যে আমি ঠিক বলেছিলাম।
তুমিও বুঝবে যে তুমি ঠিক বুঝতে পারনি।কেননা সব বাবা-মা ই তার সন্তানকে স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসে তারা সন্তানের কাছে কখনো কিছু প্রত‌্যাশা করে না।পরশ এবার তার বউ নাজিফাকে বুঝিয়ে বলল।
হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।নিজে যে নিজের বাবা মার পক্ষ নিয়ে কথা বলবে সেটা তো আমি সবসময় জানি।আমার আর ভালো লাগছে না তোমার সঙ্গে কথা বলতে।আমি ঐ পাশে গেলাম।এতটুকু বলে নাজিফা পাশের রুমে চলে গেল।
হায়রে অবুঝ মেয়ে মানুষ।পরশ মনে মনে এতটুকু বলে নিশ্চুপ বসে রইল।


পরদিন পরশ অফিস থেকে ফিরতেই আবার নাজিফা তার পিছনে লাগল।
পরশ ফ্রেশ হতেই সে এক কাপ চা তার হাতে দিয়ে বলল,আমি বলছিলাম না যে তোমার বাবা মা শুধু টাকাকেই ভালোবাসে সে কথাই সত্যি।আর তুমি তো আমাকে ভালোবাস না একটুও তাই আমার কথা বিশ্বাস করো না।
কেন কি হয়েছে আবার?পরশ তার বউ নাজিফার কাছে জানতে চাইল।
আর কি হবে আম্মা কল করছিল সে বলছে দুই হাজার টাকা যেন এ মাসে বেশি পাঠাও একটু কাজে লাগবে।দেখলে তো এবার আমি যা বুঝেছি তাই ই ঠিক। আর তুমি তো আমাকে উড়িয়ে দিলে।নাজিফা বলল।
তা তুমি কি বলেছ?নাজিফার কাছে পরশ জানতে চাইল।
কি আর বলব। বলেছি আপনার ছেলের কাছে বলব।নাজিফা বলল।
আচ্ছা।পরশ এতটুকু বলে চুপ রইল।
আচ্ছা কি আমার কথা যে ঠিক সেটা মেনে নিলে তাহলে।নাজিফা বলল।
না কিছুতেই না।তুমি ভুল বুঝেছ সেটা তো আর মেনে নেওয়া যায় না।আমি বলেছি যে আচ্ছা ঠিক আছে দুই হাজার টাকা এ মাসে বাড়িতে বেশি পাঠিয়ে দেব তাই।পরশ বউয়ের কথার জবাবে বলল।
হয়েছে হয়েছে ওনার বাবা মা যা বলে ওনাকে তাই ঠিক আছে আর আমি কিছু বললে সেটা ওনার কানে ঢোকে না।আমার মাথাটাই গরম করে দিলে বুঝেছ।যদি আমার কথা মেনে নিতে তাহলে আমার মাথটা ঠান্ডা হতো।তুমি বেশি খামখেয়ালি কিন্তু একদিন বুঝবা যে কে তোমাকে বেশি ভালোবাসে আর আমি যা বলেছি তা সত‌্যি তোমার বাবা মা তোমার কাছে টাকাটাই বেশি প্রত‌্যাশা করে।নাজিফা একচোট নিয়ে নিল।
যা বোঝ না তা বেশি বকবক করে বলো না।বাবা মা সন্তানের কাছে কিছু প্রত‌্যাশা করে না।তারা সন্তানকে ভালোবাসে আর তার মঙ্গল কামনা করে থাকে সবসময় বুঝেছ।পরশ এবার বউকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করতে লাগল।
বুঝছি।আমার কথার কোনো দাম তোমার কাছে নেই।তুমি কিছুতেই আমার কথা কখনো মেনে নাও নি আর নেবেও না।আচ্ছা বিশ্রাম করো আমি আর কিছু বলবো না।তুমি যা ভালো মনে করো সেটাই ভেবে বসে থাকো।এতটুকু বলে নাজিফা সেখান থেকে উঠে চলে গেল।
যাক বাবা আপাততঃ একটু শান্তিতে থাকি।এতটুকু ভেবে পরশ নিশ্চুপ বসে রইল।


বাবা মা চিরকাল সন্তানের মঙ্গল কামনা করে আর কোনো কিছু তাদের সন্তানের কাছে চাওয়ার নেই।তাদের প্রত‌্যাশায় শুধু সন্তানের মঙ্গল।এই কথা পরশ কিছুতেই তার বউ নাজিফাকে বোঝাতে পারে না।সবসময় সব ব‌্যাপারে ই সে তার সাথে তার বাবা মা নিয়ে নানান কথা বলে থাকে কিন্তু পরশ তাকে বোঝাতে পারে না যে তার বাবা মা তাদের কাছে টাকা চায় না।তাদের কাছে তারা শুধু ভালোবাসা প্রত‌্যাশা করে।নাজিফা খারাপ মেয়ে না কিন্তু এই একটা বিষয়ে তারা একমত হতে পারে না।আসলে পৃথিবীর সব মেয়েরাই শ্বশুড়-শ্বাশুড়িকে পুরোপুরি আপন করে নিতে পারে না।তাই সবকিছুতেই তারা তাদের ভুল খুঁজে পেতে চেষ্টা করে থাকে।আর এভাবেই প্রতিটি মানুষের জীবন প্রবাহিত হয়ে থাকে।
রাতে আবার নাজিফা পরশকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলো এই বলে,তা তুমি কি ভেবেছ কি করবে?
জবাবে পরশ বলল,মানে বুঝলাম না।
তাতো বুঝবা না।আমি কিছু বললে তাতো তোমার মনে থাকে না।নাজিফা রাগত স্বরে বলল।
মানে কি মনে থাকে না তুমি খুলে বল।সারাদিন কাজ করে আর কিছু মনে থাকে না।পরশ বলল ।
তা থাকবে কেন।আমাদের কথা তো তোমার মনে তাকে না।তোমার বাবা মা ভাই বোন বললে তো তা আর দেরি করো না সাথে সাথে যেভাবে পারো ধার করে হলেও তার ব‌্যবস্থা করে দাও।নাজিফা বলল।
কি ব‌্যবস্থা করে দেই।আর তোমার জন‌্য কি ব‌্যবস্থা করিনি খুলে বলোতো।আমি কিছুই বুঝছি না তোমার কথা।পরশ সহজভাবে তার কথা বলল।
আমার ভাইকে যে একটা মোবাইল ফোন কিনে দিতে বললাম তার তো কোনো কিছু বললা না।আর তোমার মা যেই বলল আর সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলে তাকে টাকা বেশি দেবার জন‌্য।আমি যে এই দুইমাস যাবৎ বলছি আমার ভাইকে একটা মোবাইল কিনে দাও তার তো কোনো আগ্রহ দেখছি না তোমার মধ্যে।নাজিফা অনুযোগের সুরে বলল।
তুমি কিছুই বুঝতে চাও না।আমাকে তো সবদিক চালিয়ে রাখতে হবে।আর এখন মোবাইল কেনার অবস্থা নেই আমার।বউকে বোঝানোর চেষ্টা করল পরশ।
তা তো আমি জানি আমি কিছু চাইলে তোমার কাছে আর টাকা থাকে না।আর তোমার বাবা মা চাইলে যেভাবে পারো ঠিকই দিয়ে দাও।নাজিফা অভিযোগ করে বলল।
আরে সেটা তো তাদের প্রয়োজন রয়েছে তাই দিতে হয়। পরশ বলল।
ও তাহলে আমি যেটা বলি তার কোনো প্রয়োজন নেই তোমার কাছে তাই তো।নাজিফা রাগ করে বলে উঠল।
পরশ কি যে বলবে বুঝে উঠতে পারলো না তাই সে নিশ্চুপ রইল।তাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে এবার নাজিফা বলল,ও আমার কথা ভালো লাগে না চুপ করে আছো কেন বলো আমি কি অপ্রয়োজনে তোমার কাছে সবকিছু চাই।
না তা তো বলিনি।আসলে তোমাকে বুঝতে হবে আমি সবসময় সবকিছু দিতে পারি না।পর্যায়ক্রমে একটার পর একটা সমস‌্যার সমাধান করতে হবে।পরশ বলল।
এবার নাজিফা ভীষণ রেগে গেলে।সে রাগান্বিত হয়ে বলল,ও আমি কিছু বললেই তা তোমার কাছে সমস‌্যা হিসেবে দেখা দেয়।আচ্ছা হয়েছে হয়েছে আর যদি কিছু আমি তোমার কাছে চাই তবে তখন আমাকে তুমি বকা দিও।তোমার সাথে আর কোনো কথাই বলবো না।
নাজিফা রাগ করে পাশের রুমে চলে গেল।পরশ তাকে ডাকল কিন্তু সে আর তার ডাকে সাড়া দিলো না।
সংসারে কিছু টানাপোড়ন সবসময়েই থাকবে আর তাকে এড়ানো যাবে না।সংসার জীবন এভাবেই সুখ-দুঃখ হাসি-কান্না দিয়ে গড়া।কখনো ভালো লাগবে আবার কখনো মনে হবে এতো খুবই কষ্টকর জীবনযাপন আর ভালো লাগে না।কিন্তু এসবকে মেনে নিয়েই আবার দাঁড়াতে হয় সংসার জীবনের প্রান্তে এসে।মানুষ সংসার জীবনকে উপেক্ষা করতে পারে না।সমস্ত বাধা বিপত্তিকে সঙ্গী করেই টিকে থাকতে হয় জীবনযুদ্ধে।আর পরশ নাজিফার জীবনও তার বাইরে নয়।

সকালের আলো ফুটে উঠতেই আবার নাজিফা তার সংসারের কাজে লেগে গেল।পরশ অফিসে যাবে তার জন‌্য সকালের আর দুপুরের খাবার তৈরি করতে সে ব‌্যস্ত হয়ে উঠল।সংসার জীবন এ রকমই সবকিছু বুকের মাঝে জমা রেখে সময়ের প্রয়োজনে সবকিছু করে যেতে হয়।নাজিফাও তার বাইরে নয়।
পরশ অফিসে যাওয়ার জন‌্য তৈরি হলো।সে খাবার দেওয়ার জন‌্য নাজিফাকে তাগাদা দিতে লাগল।
নাজিফা ওপাশ থেকে বলল,আর একটু অপেক্ষা করো আমি নিয়ে আসছি এইতো আর দুই মিনিট লাগবে।
একটু পরই নাজিফা দ্রুত খাবার নিয়ে আসতে লাগল খাবার টেবিলের দিকে কিন্তু সহসা সে পরে গেল পরশের সামনে সে আর টেবিল পর্যন্ত আসতে পারলো না। পরশ দ্রুত তাকে ধরলো পুরোপুরি পরে যেতে দিলো না।
নাজিফা অজ্ঞান হয়ে গেল।পরশের ডাকাডাকিতে সে সাড়া দিতে পারলো না।
নাজিফাকে দ্রুত পরশ কাছাকাছি একটা ক্লিনিকে নিয়ে গেল।নাজিফার জ্ঞান ফিরে আসলো এক ঘন্টা পরে।ডাক্তার অনেকগুলো টেষ্ট দিলো।পরশ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে টেষ্টগুলো করার ব‌্যবস্থা করতে লাগল।
নাজিফা তার কাছে জানতে চাইল,আমার কি হয়েছে আমি এখানে এই ক্লিনিকে কেন?
তুমি মাথা ঘুরিয়ে পরে গিয়েছিলে তারপরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে আর আমি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।তুমি আমার জন‌্য নাস্তা নিয়ে আসতেছিলে খাবার টেবিলের দিকে কিন্তু সহসা তুমি পরে গেলে মনে আছে।পরশ বলল।
নাজিফা বলল,হুম মনে পরেছে।আমার কি হয়েছে ডাক্তার কিছু বলেছে?
না তেমন কিছু হয়নি হয়তো প্রেসার বেড়েছিল তাই পরে গেছ। এই টেষ্টগুলো করে তার রেজাল্ট দেখে আর কোনো সমস‌্যা আছে কিনা তা ডাক্তার বলতে পারবে।পরশ বলল।
কাল রাতে আমার ভালো ঘুম হয়নি তাই ক্লান্ত লাগছিল।তবুও তুমি অফিস যাবা তাই খাবার তৈরি করতে গেছিলাম আর ক্লান্তিতেই মনে হয় পরে গেছি।চলো বাসায় চলে যাই।আর কোনো টেষ্ট লাগবে না এমনিতে ই ঠিক হয়ে যাবে।নাজিফা বলল।
কি যে বল,বোকা হয়েছ।আমি সবাইকে বলে এসেছি তারা এসেই তোমার ব্লাড আর ইউরিন নিয়ে যাবে।শুধু বুকের একটা টেষ্ট করার জন‌্য তোমাকে বাইরে নিয়ে যেতে হবে তাও বিকেলে।পরশ নাজিফাকে টেষ্টগুলো কিভাবে করতে হবে তা বুঝিয়ে বলল।
কিন্তু আমার এসব ভালো লাগছে না।চল বাসায় চলে যাই কিচ্ছু হয়নি আমার।এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবো।নাজিফা নিজের মনের কথা বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে এখন চুপ করে বস।আমি দেখি কিভাবে কি করা যায়। আগে তো টেষ্ট গুলো দিয়ে দেখি তারপরে না হয় বাসায় চলে যাব।পরশ এতটুকু বলে নাজিফার কাছ থেকে উঠে দাঁড়াল।
নাজিফা আর তেমন কিছু বলল না।সে নিশ্চুপে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগল।


পরদিন রাতে সবগুলো টেষ্টের রেজাল্ট পাওয়া গেল।ডাক্তার পরশকে বলল বুকে একটু সমস‌্যা আছে একটা অপারেশন করে নিলে ভালো হয় না হলে বিপদ হতে পারে।সেক্ষেত্রে আপনার সব নিয়ে পাচ থেকে সাত লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।আপনি যদি বলেন তাহলে আমরা অপারেশনের ব‌্যবস্থা করতে পারি।পরশ বেশি কিছু না ভেবেই ডাক্তারকে অপারেশনের জন‌্য বলে দিল।কারণ নাজিফার জীবন নিয়ে সে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না।
নাজিফাকে সবকিছু খুলে বলল পরশ।সবকিছু শুনে সে কেঁদে ফেলল।
পরশ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,আরে এতো ভাবছ কেন আর কাঁদতে হবে না।সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশআল্লাহ্ ।
কিন্তু এতা টাকা তুমি কোথায় পাবে?নাজিফা জানতে চাইল।
পরশ বলল,তোমাকে টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না আমি ঠিক জোগাড় করে ফেলব।
আমি জানি না তুমি কিভাবে এত টাকার ব‌্যবস্থা করবে।আমার তো খুব ভয় হচ্ছে।নাজিফা সংশয় প্রকাশ করে বলল।
কোনো ভয় নেই।আল্লাহ্ ভরসা সব ঠিক হয়ে যাবে তুমি আবার সুস্থ হয়ে উঠবে।পরম বউকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল।
কবে অপারেশন করতে চাও?নাজিফা জানতে চাইল।
ডাক্তার বলল অর্ধেক টাকা জমা দিলে আগামী সপ্তাহে অপারেশন করে ফেলবে যদি সবকিছু ঠিক থাকে।আমি বলছি টাকা জমা দিয়ে দেব তারা যেন অপারেশনের ব‌্যবস্থা করে ফেলে।তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি মা-বাবাকে ও জানিয়েছি তারা বলেছে একটু ও যেন দেরি না করি চিকিৎসা করতে।সুতরাং কোনো চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।আশা করি টাকার ব‌্যবস্থা হয়ে যাবে।তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।বউকে বহুভাবে সান্ত্বনা দিয়ে পরশ কথাগুলো বলল।
আমার বাবা মাকে জানিয়েছ?নাজিফা জানতে চাইল।
জবাবে পরশ বলল,সবাইকে জানিয়েছি,তারা বোধহয় কালকেই চলে আসবে।তুমি কোনো চিন্তা করো না অপারেশনের সময় সবাই তোমার কাছে থাকবে।
আচ্ছা।নাজিফা আর কোনো প্রশ্ন করলো না।
দ্রুত কিভাবে অপারেশন করা যায় সে বিষয়ে পরশ চিন্তা করতে লাগল।কিভাবে টাকা জোগাড় করা যায় তাই নিয়ে সে ভাবতে লাগল।এমন সময় তার মা তাকে মোবাইলে কল করে বলল বাবা আমরা তোদের কাছে রওনা হয়ে গেছি।বউমার এত বড় একটা বিপদ আমাদের তো কাছে থাকতে হয়।আর আমরা দশ লক্ষ টাকার ব‌্যবস্থা করে ফেলেছি সুতরাং তোর কোনো চিন্তা করার দরকার নেই।আমরা আসলেই তুই টাকা জমা দিতে পারবি যত লাগে।
মায়ের কথা শুনে খুশিতে মনটা ভরে উঠল পরশের। সে যে নাজিফাকে খুব ভালোবাসে তাই সঠিক সময়ে সে তার চিকিৎসা করাতে চায়।



নাজিফার অপারেশন হয়ে গেল।প্রায় একমাস পর সে ক্লিনিক থেকে ছাড়া পেল।ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে উঠল।আবার আগের মতো সে একটু একটু করে সংসারের কাজ করার চেষ্টা করতে লাগল তবে তা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই।বেশি ভারি কাজগুলোকে সে এড়িয়ে চলে ছোট ছোট কাজে হাত লাগাতে লাগল নাজিফা।তবে তাকে সব ধরনের কাজ করার জন‌্য পরশ নিষেধ করতে লাগল।কিন্তু তার কথা সবসময় নাজিফা ফলো না করে কিছু কিছু কাজ করতে লাগল।
অফিস থেকে এসে পরশ নাজিফাকে কাজ করতে দেখে একটু রেগে গিয়ে বলল,মা তো সবকিছু করছেই আবার তুমি কেন এত কাজ করতে যাও আর একটা মাস যাক তারপরে না হয় সবকিছু করতে পারবে।
না আমি তো তেমন কিছু করি না।আম্মাই সবকিছু করে তবে একটু একটু সাহায‌্য করি।নাজিফা বলল।
না তোমার সাহায‌্য করার দরকার নাই।সামনে মাসে বাবা-মা চলে গেলে তখন তো তোমাকেই আবার সব করতে হবে।সুতরাং আর কিছুদিন চুপচাপ বসে থাক।পরশ বলল।
ঠিক আছে আম্মাও নিষেধ করে আচ্ছা আমি না হয় রেষ্টেই থাকব।তুমি চিন্তা করো না এখন তো আমি অনেকটাই সুস্থ।নাজিফা পরশের কথা মেনে নিয়ে বলল।
পরশ আর কোনো কথা বলল না তখন সে ফ্রেশ হওয়ার জন‌্য বাথরুমে চলে গেল।
রাতে নাজিফা পরশের কাছে জানতে চাইল,আচ্ছা একটা বিষয় তো জানা হলো না আর তুমিও তো আমাকে নিজে থেকে বললে না।
পরশ বলল,কি সেটা?
নাজিফা বলল,না আমিও অবশ‌্য তা জানতে চাইনি যে তুমি বলবে।আর বাসায় আসলামই তো কয়দিন হলো।মানে বলছিলাম আমাকে অপারেশনের জন‌্য যে টাকা লেগেছে তা তুমি কিভাবে পেলে।
ও এই কথা তা তুমি জানতে চাওনি আর তাই বলাও হয়নি।পরশ বলল।
ঠিক আছে এখন তো বলো কিভাবে তুমি টাকাটা জোগাড় করলে?নাজিফা পরশ কে তাড়া দিয়ে বলল।
পরশ বলল,আচ্ছা বলছি শোনো আমি তো টাকার চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছিলাম তোমার ভাইকে সহ আরো অনেক বন্ধুবান্ধব আর আত্নীয়স্বজনকে মোবাইলে কল করে টাকা ধার দিয়ে সাহায‌্য করার জন‌্য বলেছিলাম কিন্তু কেউ টাকা দিতে রাজি হয়নি।আমি চিন্তায় ডুবে গেলাম।ভাবতেছিলাম তখন কি করবো আমি, তবে কি টাকার জন‌্য তোমার চিকিৎসা হবে না।কিন্তু বেশিক্ষণ আমাকে টেনশন নিতে হয়নি। এতটুকু বলে একটু থামল পরশ।
পরশকে থামতে দেখে নাজিফা বলল,বলো না তারপরে কি হলো ,তুমি থামলে কেন?
এবার আবার পরশ বলল,বলছি শোনো আমার টেনশনকে বেশি বাড়তে দিলো না আমার মা।ঠিক তখনই মা আমাকে মোবাইলে কল দিল আর বলল আমরা তোদের কাছে রওনা হয়ে গেছি আর দশ লক্ষ টাকার জোগাড় হয়ে গেছে তুই কোনো চিন্তা করিস না।মায়ের কথায় তখন খুশিতে আমার বুকটা ভরে গিয়েছিল। জানো তারপরই আমি ডাক্তারের কাছে দৌঁড়ে গিয়ে বলেছিলাম টাকার জোগাড় হয়ে গেছে আপনি অপারেশনের ব‌্যবস্থা করুন।
পরশের কথা শুনে নাজিফার নিজের অজান্তেই চোখের কোণায় পানি চলে এলো।সে কান্না লুকানোর চেষ্টা করতে চাইল কিন্তু পারলো না।কান্না জড়ানো কন্ঠে সে আবার পরশের কাছে জানতে চাইল,আম্মা এতগুলো টাকা এত দ্রুত কিভাবে পেয়ে গেল জানতে চাওনি?
হ‌্যাঁ তা তো জানি।আমাদের বাড়ির কাছেই মায়ের নামে কিছু জমি ছিল তা সে বিক্রি করে দিয়েছে আর আমাদের এক প্রতিবেশি তোমার চিকিৎসার কথা শুনে আগেই টাকাটা দিয়ে দিয়েছে পরে তার নামে জমিটা করে নেবে।আর বাবা-মা টাকাটা নিয়েই চলে এসেছিল।বুঝতে পেরেছ।পরশ এবার সবকিছু তার বউয়ের কাছে খুলে বলল।
সবকিছু শুনে এবার নাজিফা বলল,হ‌্যাঁ বুঝতে পেরেছি আর এও বুঝেছি আমি এতোদিন ভুলের মধ‌্যে ডুবে ছিলাম তোমার কথাই ঠিক ছিল।
পরশ জানতে চাইল,কি কথা ঠিক ছিল?
এবার নাজিফা বলল,কেন ভুলে গিয়েছ সেই কথা যা নিয়ে আমি প্রায়ই তোমাকে বিরক্ত করতাম।আমি বলতাম তোমার বাবা-মা আমাদের কাছে শুধু টাকাই প্রত‌্যাশা করে কিন্তু আমার সেই ধারনা আজ মিথ্যে প্রমানিত হলো আর আমার ভুলও ভেঙ্গে গেল।প্রতিটি বাবা-মা ই তাদের সন্তানের মঙ্গল কামনা করে।আমি বুঝলাম এবার বাবা-মা টাকা চান না তারা সন্তানের কাছে প্রত‌্যাশা করেন ভালোবাসা আর তাদের সঙ্গে উত্তম যোগাযোগ রাখা।কারণ আমি দেখেছি তুমি প্রতিদিন আম্মার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে যোগাযোগ রাখতে আর তাতেই আম্মার মনটা সবসময় খুশি থাকতো। তাহলে আমি আমার ভুল যেহেতু বুঝতে পেরেছি সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও আর আম্মা আমার এই আচরণ না জানলেও আমি তার কাছে কালকে ক্ষমা চেয়ে নেব আর এই রকম মনোভাব কখনো ধরে রাখবো না।
নাজিফার কথা শুনে পরশ বলল,ভুল বুঝেছ তাতেই হয়েছে আমার কাছে আর ক্ষমা চাইতে হবে না।আর আম্মাকে শুধু ভালোবেস তাতেই হবে।
তুমি বললেই আমি শুনবো কেন।আমি আমার মতো আম্মার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব।আর তুমি আমাকে ক্ষমা করেছ তো এখন ই বলতে হবে সে কথা তোমাকে।বলো ক্ষমা করেছ?নাজিফা অনুনয়ের সুরে পরশের কাছে জানতে চাইল।
পরশ বলল,ধূর বোকা তুমি তো কোনো দোষ করোনি শুধু ভুল বুঝেছিলে এখন তো নিশ্চিত হলে বাবা-মা সন্তানের কাছে কি প্রত‌্যাশা করে।যাহোক ওসব ভুলে যাও।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
পরশের কথা শুনে কেঁদে ফেলল নাজিফা।কান্না জড়িত কন্ঠে সে শুধু বলল,আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।
১৭.০৭.২০২০
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মাইদুল সরকার সংসারে এমন হয় স্বামী স্ত্রীতে। মা বাবা শেষ বয়সে সন্তানদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, চায় অর্থ, সম্মান, ভালবাসা।

২২ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪