সালমান আর আয়েশার সুখের সংসার।তাদের একটি ছেলে আর একটি মেয়ে।ছেলের দশ বছর আর মেয়ের তিন বছর।ছেলে মেয়ে আর বউকে নিয়ে সালমানের সুখেই দিন কাটতে ছিল।তার কোনো ঝামেলা ছিল না।চাকুরি আর বউ বাচ্চাদের নিয়ে সে ঝামেলা মুক্ত জীবন যাপন করতে ছিল।কিন্তু সহসা তারা একটা ঝামেলায় আটকে গেল।এক সপ্তাহ আগে তারা পাশের বাড়ীতে একটা দাওয়াত খেতে গিয়েছিল।আর ঝামেলাটা সেখান থেকেই শুরু হয়েছে।
বিয়ে বাড়ী থেকে অনেক দামী একটা সোনার হার চুরি হয়ে গেছে।এ খবর শুনে আয়েশা আর সালমান চিন্তায় পরে গেল।কেননা এখন সন্দেহের তালিকায় যারা খেতে গিয়েছিল সবাই থাকবে।সুতরাং তাদের চিন্তাটা অমূলক নয়।এরও একটা কারণ আছে,তাদের ছেলে রনজু র কিছুটা হাতটানের বাজে অভ্যাস রয়েছে।সেই ভয়টাই পাচ্ছিল দুজনে।
এই কারণে সালমান বারবার তাগাদা দিয়ে আয়েশাকে বলল,তুমি ভালো করে খুঁজে দেখ আবার রনজু কোনো ভুল করেছে কিনা।ওর সবকিছু খুঁজে দেখ ও আবার কিছু করেছে কিনা।
আয়েশা বলল,দেখ আমি সবকিছু খুঁজে দেখেছি,কিন্তু কোথাও কিছু পাইনি।আমার মনে হয় তারা কোনো ভুল করেছে বিয়ে বাড়ীতে সবাই গেছে খাবার খেতে আর বউ দেখতে সেখানে কেউ চুরি করতে যাবে কেন যত্তসব আমার মনে হয় তারাই কোনো ভুল করছে।পরে হয়তো শুনতে পারবে।
সে ত বুঝলাম।সেটা হলে তো ভালোই হয়,তবে আমার একটু ভয় হচ্ছে রনজু মাঝে মাঝে এখানের জিনিস ওখানে নিয়ে রাখে ও আবার কোনো ভুল করেছে কিনা।তুমি ওর কাছে জিজ্ঞাসা করে দেখেছ।সালমান তার বউ আয়েশার কাছে জানতে চেয়ে বলল।
জবাবে আয়েশা বলল,তোমার যত কথা কোথায় কবে কোনো  চুরি হয়েছে কিনা তার কোনো ঠিক নাই আর তুমি আমার ছেলে কে সন্দেহ করে বসে আছ।তোমার এই জিনিসটা আমার ভালো লাগে না।খালি খালি আমাদের রনজুকে সব সময়ে সন্দেহ করো।
আয়েশার রাগ দেখে সালমান তখনকার মতো আর কিছু বলল না।তবে সে নিজে গোপনে রনজুর রুমে গিয়ে তার সবকিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখল।কোথাও কোনো সোনার হার বা আর কোনো মূল্যবান জিনিস সালমান খুঁজে পেল না।এবার তার মনটা একটু শান্ত হলো।সে নিশ্চিন্ত হলো।আয়েশাকে ও এ নিয়ে আর তেমন একটা জ্বালা দিল না সালমান।কেননা সে নিজে সবকিছু চেক করে দেখেছে আর তাই এ নিয়ে আয়েশাকে সে আর কোনো জ্বালা দিতে চাচ্ছে না।
সালমান নিশ্চিন্ত হলে ও যাদের জিনিস চুরি হয়েছে তারা তো আর নিশ্চিন্ত হতে পারেনি।সুতরাং তারা চুপচাপ থাকবে কেন।এলাকা জুড়ে খবরটি ছড়িয়ে পরেছে যে বিয়ে বাড়ী থেকে সোনার হার চুরি হয়ে গেছে।সালমান চায়ের দোকানে বসে শুনল এ নিয়ে নাকি তারা পুলিশে কেস করে দিয়েছে। এখন পুলিশ তদন্ত করে বের করবে যে কে এই সোনার হার চুরি করেছে।সালমান পুরোপুরি চিন্তা মুক্ত হতে পারল না। সে চিন্তা ভাবনা করতে করতে অফিসে চলে গেল।সে অফিসে বসে ও কাজে মনোযোগী হতে পারল না।কেননা সোনার হার চুরির বিষয়টা যতক্ষণে পরিস্কার না হবে ততক্ষণে সে চিন্তামুক্ত হতে পারবে না।
অফিস থেকে ফেরার পথে সালমান বাসার কাছাকাছি এসে কিছুটা পথ হেঁটে আসে। আজও তাই করছিল সে।সহসা সে শুনতে পেল পিছন থেকে তাকে কে যেন ডাকছে।সালমান পিছনে তাকিয়ে দেখল তার প্রতিবেশী রবিন তাকে ডেকে যাচ্ছে সমানে।ছেলেটা একটা কোম্পানিতে চাকুরি করে।তাকে দেখে এবার সালমান দাঁড়িয়ে রইল।
রবিন একটু দ্রুত হেঁটে এসে সালমানের কাছে এসে বলল,ভাই আপনাকে কতক্ষণ থেকে ডেকে যাচ্ছি আপনি তো শুনছেনই না।কোনো চিন্তায় আছেন কি?
না তেমন কিছু না।কিছু বলবা নাকি এতো ডাকাডাকি করছ কেন?সালমান পাল্টা রবিনের কাছে জানতে চাইল।
সে কারণেই তো আপনাকে ডাকছি। রবিন বলল।
আচ্ছা বল কি বলতে চাও।রবিনকে তার কথা বলার জন্য সালমান অনুমতি দিল।
আর বলবেন না ভাই কি এক ঝামেলায় পরেছি বলেন তো,সেই দিন বিয়ে খেতে গিয়ে তো বেশ ঝামেলায় পরেছি।আপনিও তো গিয়েছিলেন ঐ বিয়েতে।শুনেছেন নিশ্চয় ওখান থেকে নাকি দামী একটা সোনার হার চুরি হয়ে গেছে। এখন তারা থানায় কেস করে দিয়েছে আর পুলিশ দলবল নিয়ে বাসায় বাসায় হাজির হচ্ছে তদন্ত করার কাজে।গতকাল রাতে আমাদের বাসায় পুলিশ এসেছিল সারা বাড়ি খোঁজ করেছে তন্ন তন্ন করে। আমি এত বললাম আমাদের কারো চুরির অভ্যাস নাই কিন্তু কে কার কথা শোনে।বোঝেন পরিস্থিতি কি অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।একটানা অনেক কথা বলে তারপরে রবিন থামল।
তা পুলিশ কি কি করল ? সালমান জানতে চাইল রবিনের কাছে।
আমাদের সবাইকে নানাবিধ প্রশ্ন করেছে আর সারা বাড়ি সোনার হার খুঁজে বেড়িয়েছে।এইত শুধু শুধু আমরা হয়রানি হলাম। রবিন বলল।
আচ্ছা চল বাসায় যাই।কি আর করবা ধনীর বাসায় দাওয়াত খাবা আর একটু হয়রানি হবা না এটা কি হয়।সালমান এটুকু বলে রবিনকে সাথে নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা শুরু করল।
কি যে বলেন ভাই । আমাদের চৌদ্দ পুরুষে কোনো চুরির রেকর্ড নাই।তা আপনার বাসায় কি পুলিশ গিয়েছিল নাকি? রবিন সালমানের কাছে জানতে চাইল।
নারে ভাই আমি তো অফিসে ছিলাম।তবে পুলিশ এলে তোমার ভাবি তো মোবাইলে বলতো মনে হয় আমাদের বাসায় তদন্ত করতে আসে নাই।রবিনের কথার জবাবে সালমান বলল।
দেখেন কখন এসে আবার পুলিশ হানা দেয়।তা আমার একটু দোকানে কাজ আছে আপনি তাহলে বাসায় যান।রবিন এতটুকু বলে মোড়ের দোকানের দিকে হাঁটা দিল।
সালমান আর কথা না বাড়িয়ে বাসায় চলে এল।তার চিন্তা আবার বেড়ে গেল।এবার পুলিশ তদন্ত করে যদি কিছু পেয়ে যায় তাহলে তো আর কোনো ইজ্জত থাকবে না।সে রনজুকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিল।তাই বাসায় পৌঁছেই আয়েশাকে ডাকতে লাগল সালমান।
তার ডাকে সাড়া দিয়ে আয়েশা বলল,কি হয়েছে কি ? এত ডাকাডাকি করছ যে আবার কিছু হয়েছে নাকি?
তুমি কিছু শোনো নাই?সালমান জানতে চাইল।
কি শুনব, আমি তো কিছু শুনি নাই। আয়েশা বলল।
পুলিশ সোনার হার খুঁজতে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু করেছে।গতকাল রাতে রবিনদের বাসায় এসেছিল পুলিশ।আমাদের বাসায় কখন এসে হানা দেয় আমি আছি সেই চিন্তায়। সালমান বলল।
সালমানের কথা শুনে আয়েশা বলল,তা একটু চিন্তার বিষয় কিন্তু তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন আমরা তো ঐ সোনার হার চুরি করিনি।
না করিনি তবুও আমার ভয় হচ্ছে রনজুকে নিয়ে ওকে তো আমরা জানি যদি আমাদের অজান্তে কিছু করে থাকে তবে তো ইজ্জত শেষ।সালমান বলল।
আরে এত চিন্তা করো না।আমরা তো সবকিছু খুঁজে দেখেছি।সুতরাং এত ভাবনার দরকার নেই,আমাদের রনজু কিছু করেনি।তুমি এখন একটু বিশ্রাম করে কিছু খেয়ে নাও।আয়েশা সালমানকে চিন্তা না করতে বলল।
সালমান আর কোনো কিছু বলল না।সে আয়েশার কথা মেনে নিল।
ভোর বেলা অফিসে যাওয়ার জন্য সালমান রেডি হলো।কিন্তু দরজা খুলতেই সে দেখল পুলিশ এসে হাজির হয়েছে।সে তো এমনটা ভেবেই রেখেছিল তাই বেশি ঘাবড়ে গেল না।পুলিশ দেখলে ছোট বেলা থেকেই সে ভয় পেয়ে যেত। একটা আতংক তার মাঝে কাজ করত।কিন্তু এবার অতটা ভয় না পেয়ে সে পুলিশদের কে জিজ্ঞেস করল,আপনারা?
সালমানের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা বলল,জ্বি আমরা এসেছি আপনার বাসায় তদন্তের কাজে । সেই দিন আপনারাও তো ঐ বাড়িতে বিয়ে খেতে গিয়েছিলেন তাই না।আর একটা সোনার হার ঐ বাড়ি থেকে চুরি গেছে জানেন নিশ্চয়।সুতরাং আমাদেরকে তদন্ত করতে সাহায্য করুন।
আচ্ছা ঠিক আছে আপনারা ভিতরে আসুন। বলুন আমাদেরকে কি করতে হবে।সালমান বলল।
পুলিশ আর কিছু বলল না। তারা বাসার ভিতরে ঢুকে সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজল।সালমানের কাছ থেকে সবগুলো আলমিরার চাবি নিয়ে নিল।কোথাও কিছু না পেয়ে চাবিগুলো ফিরিয়ে দিয়ে পুলিশ সালমানের বাড়ি ছেড়ে চলে গেল।যাবার আগে সালমানকে বলে গেল প্রয়োজন হলে আমার আবার আসব।আপনার সাহায্য সবসময় কামনা করছি।
সালমান শুধু বলল,জ্বি আচ্ছা।
পুলিশ চলে যেতে আয়েশা সালমানকে বলল,যাক ঝামেলা গেছে এবার তো তুমি চিন্তা মুক্ত হতে পেরেছ।যাও এবার অফিসে যাও দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি রনজুকে স্কুলে পাঠানোর জন্য রেডি করো।আমি অফিসে গেলাম।এতটুকু বলে সালমান বাসা থেকে বেড়িয়ে পরল।
আয়েশা নিশ্চিন্ত মনে রনজুকে রেডি করে স্কুলের গাড়িতে উঠিয়ে দিল।তারপরে নিজের কাজে ডুবে রইল।
এদিকে অফিসে এসে সালমান এবার নিশ্চিন্ত মনে তার কাজে যোগ দিল । পুলিশ এসে খুঁজে গেছে সুতরাং তার আর ভয়ের কিছু নেই।এবার সে কিছুটা চিন্তা মুক্ত হলো।রনজুকে নিয়ে যে ভয় পেয়েছিল সে তা থেকে সে এবার মুক্ত হলো।তাহলে রনজু কিছু করেনি সে শুধু শুধু ছেলেটাকে সন্দেহ করেছিল । নাহ্ নিজের কাছে ই এবার খারাপ লাগল তার । নিরপরাধ ছেলেটাকে অহেতুক সে সন্দেহ করেছিল।
এক সপ্তাহ কেটে গেল।সোনার হার চুরি হয়ে গেছে কিন্তু তার কোনো সুরাহা এখনো হয়নি।যেহেতু পুলিশ সারা বাড়ি খুঁজে পায় নি সুতরাং সালমানের চিন্তা করার আর তেমন কিছু নেই।এমনটাই সে ভাবল।হয়ত আর কোনো লোক ঐ বাড়ি থেকে সোনার হারটা চুরি করে নিয়ে গেছে। তাই সালমান পুরোপুরি চিন্তা মুক্ত হয়ে নিজের স্বাভাবিক জীবন যাপনে মনোনিবেশ করলো।কিন্তু সে চিন্তা মুক্ত হলেও ঝামেলা এড়িয়ে যেতে পারল না।
শুক্রবার দিন বন্ধের দিন হওয়ায় সালমান একটু বেশি সময় ঘুমিয়ে ছিল।সহসা দরজায় টোকা শুনে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল।আয়েশা তাকে ডেকে বলল,দেখ তো কে এসেছে ?
আচ্ছা আমি দেখছি বলে সালমান দরজা খুলে দিল।পুলিশ অফিসার তার দলবল সহ সালমানের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে।তাদেরকে দেখে সে কিছুটা চমকে গেল।কেননা যে চিন্তা থেকে সে মুক্ত হয়েছিল তা আবার সে মাথায় নিতে চায় না।তাই কিছুটা বিস্মিত হয়ে সে বলে উঠল,আপনারা? সেদিন না সবকিছু দেখে গেলেন।
কিছুটা দেখা বাকি আছে সালমান সাহেব।পুলিশ কর্মকর্তা বলে উঠল।
তার কথা শুনে সালমানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো।সে ভাবল হায়রে এর থেকে আমার কি আর মুক্তি নাই।কি যে বিয়ে খেতে গিয়েছিলাম,বড় ধরনের একটা অপরাধ ই হয়ে গেছে বোধহয়।সালমানকে নিশ্চুপ দেখে পুলিশ কর্মকর্তা বলল,কি সালমান সাহেব আমাদেরকে ভিতরে আসতে দেবেন না।নাকি ভয় পেয়েছেন যে সোনার হার টা আমরা আপনার ঘরের মাঝেই পেয়ে যাই কিনা।
সালমান বলল, না না তা হবে কেন। আপনারা আসুন আর ভালো করে দেখুন আমাদের ঘরে সোনার হারটা কোথাও রয়েছে কিনা।
পুলিশ ভিতরে প্রবেশ করে সালমান কে বলল,আচ্ছা আপনার ছেলে রনজু কোন রুমে বসে লেখাপড়া করে সেখানে আমাকে একটু নিয়ে চলুন।
পুলিশের মুখে রনজুর কথা শুনে সালমানের বুকটা কেঁপে উঠল।সে যে ভয় পেয়েছিল তবে কি তাই হয়েছে।রনজুর কথা পুলিশ জানলো কেমন করে।তাহলে কি পুলিশ কিছু জেনে গেছে যা তারাও জানে না।আর রনজু কি তবে ঐ সোনার হারটা চুরি করে এনেছে। না সে কিছু ভাবতে পারছে না্।নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল সে।
সালমানকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে পুলিশ কর্মকর্তা বলল,কই চলুন ভাই  আমাকে একটু আপনার ছেলের রুমে নিয়ে চলুন।আমাদের ওর রুমে একটু সার্চ করতে হবে। পুলিশের আগমন দেখে আয়েশা তার ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে রইল।
পুলিশ কর্মকর্তা কে সালমান রনজুর রুমে নিয়ে গেল।তার সাথে সাথে আয়েশাও তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে তাদের পিছু পিছু গেল।রুমে ঢুকে পুলিশ কর্মকর্তা রনজুকে বলল,বাবা তোমার বিজ্ঞান বই টা কোথায় রেখেছ।
না সেটা দেব না তার মাঝে আমার একটা দরকারি জিনিস আছে।রনজু বলে উঠল।
ততক্ষণে বাকি পুলিশরা রনজুর বিজ্ঞান বইটা খুঁজে বের করে ফেলল।আর তার মাঝখান থেকে সোনার হারটা বের করে নিল।সবকিছু দেখে আয়েশা আর সালমান বিস্মিত হয়ে গেল।আয়েশা রনজুকে ধরে বিছানার ওপরে বসে পড়ল।সে তার ছেলে রনজুকে ধরে বলল,বাবা এই টা তোমার বইয়ের মাঝে আসল কেমন করে।
রনজু মায়ের কথার কোনো জবাব দিল না।
পুলিশ কর্মকর্তা বলল,সালমান সাহেব আপনারা এই সোনার হারের লোভটা সামলাতে পারলেন না । ভদ্রলোকের লেবাস ধরে এইভাবে চুরি করে নাবালক ছেলের বইয়ের মাঝে লুকিয়ে রেখেছেন হারটা।
আয়েশার খুব লাগল কথাটা।সে বলে উঠল,দেখুন আমরা চোর না। এভাবে আপনি বলবেন না।
কিভাবে বলল।আমরা তো প্রমাণসহ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে।তারপরও বলবেন আপনার চোর না।চুরি করে এত বড় গলায় কথা বলবেন না।ধমকের সুরে আয়েশাকে পুলিশ কর্মকর্তা বলল।
আয়েশা আবার কিছু বলতে যাবে এমন সময় সালমান আয়েশাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,তুমি চুপ থাকো। আর একটা কথাও বলবা না।আমি ওনাদের সঙ্গে কথা বলছি।
আয়েশা আর কিছু বলল না।সে নিশ্চুপ হয়ে ছেলে আর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইল।
সালমান কি করবে এখন ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না । এমন পরিস্থিতি যে সৃষ্টি হবে তা সে কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি।আয়েশাও ভয়ানক ভাবে বিস্মিত হয়ে গেল।সে আর নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না।ছেলে মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে নিশ্চুপে কান্না করতে লাগল।রনজু হতবাক হয়ে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল।সে যে কত বড় অপমানের কাজ করেছে তা তার ছোট মাথায় হয়তো ঢুকবে না।তাই অবাক হয়ে সবাইকে শুধু তাকিয়ে দেখতে লাগল।
সবাইকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে পুলিশ কর্মকর্তা বলল,সোনার হার চুরি করে এখন সবাই নিশ্চুপ বসে থাকলে হবে না।আপনার ছেলের বইয়ের মাঝে সোনার হার পাওয়া গেছে সুতরাং আমরা ধরে নেব এই সোনার হার সেই চুরি করেছে সুতরাং তাকে এখন আমরা থানায় ধরে নিয়ে যাব।
পুলিশের কথা শুনে আয়েশা বলে উঠল, না এ হতে পারে না।এতটুকু বাচ্চা ছেলে আমার রনজু ও এ হার কিছুতেই চুরি করতে পারে না।
আপনাদের সামনে এর প্রমাণ রয়েছে।সুতরাং ওকে আমাদের গ্রেফতার করতেই হবে। পুলিশ কর্মকর্তা আয়েশার কথার জবাবে বলে উঠল।
এবার সালমান চিন্তিত ভাবে পুলিশের কাছে জিজ্ঞেস করল,আমি একটা জিনিস আপনাদের কাছে না জানতে চেয়ে পারি না আর তা হলো রনজুর বিজ্ঞান বইয়ের মাঝে যে সোনার হারটা রয়েছে তা আপনারা জানলেন কি করে?
পুলিশ কর্মকর্তা বলল, ও এই কথা ।শুনুন তবে সালমান সাহেব,আসলে এই কেসের তদন্তের দায়িত্বে থেকে আমি তো ভাবছিলাম এ কেসের সমাধান করা আমার পক্ষে কোনো দিনও সম্ভব হবে না।কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল।সমস্ত বাড়িতে তদন্ত করে আমি একপ্রকার নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু গতকাল আমার মেয়ের একটা কথায় আমি আবার প্রাণ খুঁজে পেলাম।
একটু থেমে সে আবার বলল,আপনাদের হয়তো জানা নেই আপনাদের রনজুর সাথে আমার মেয়ে কাকলি এক স্কুলে একই ক্লাসে লেখাপড়া করে। ওদের সাথে বেশ বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক রয়েছে। গতকাল ক্লাষ শেষে রনজু কেন্টিনে বসে আমার মেয়ে কাকলিকে বিজ্ঞান বই থেকে বের করে এই সোনার হারটা দেখিয়েছিল। আর কাকালি বাসায় ফিরে রোজ স্কুলে যা যা করে তা আমাদের কাছে বলে।আমি সোনার হারের কথা শুনে একটু চমকে গেলাম এতটুকু বাচ্চার কাছে সোনার হার এলো কোথা থেকে।আর আমি তো এখন এই সোনার হার চুরির একটা কেস নিয়ে রাতে ঘুমাতে পারছি না।
আমি রাতেই হেড মাষ্টারের বাসায় গিয়ে তদন্ত করে রনজু যে আপনাদের ছেলে আর ওর বাসা এই এলাকায় তা বের করে ফেললাম।আমার সন্দেহ হলো তখনই যে এই সোনার হারটাই হয়তো চুরি হওয়া সেই হারটা । সুতরাং আর দেরি না করে সকালেই চলে এসেছি আপনাদের বাসায় আর পেয়ে গেলাম সোনার হারটা সেই বিজ্ঞান বইয়ের মাঝেই।সুতরাং আপনারাই বলুন এখন আমরা কি করতে পারি রনজুকেই তো গ্রেফতার করতে হবে। আমার ধারণা আপনারা কেউ চুরি করে ঐ বইয়ের মাঝে লুকিয়ে রেখেছেন এই হারটা এখন যদি কেউ সে কথা স্বীকার না করেন তাহলে রনজুকেই থানায় ধরে নিয়ে যেতে হবে।
সালমান যে একজন পিতা সে কিছুতেই তার সন্তানকে থানায় যেতে দিতে পারে না।সুতরাং দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সে।পুলিশকে লক্ষ্য করে সে বলল,আপনি ঠিকই বলেছেন আসলে আমি ই এই সোনার হারটা দেখে লোভ সামলাতে পারি নাই।তাই এই ভুলটা করে বসেছি আর এই হারটা চুরি করে রনজুর বইয়ের মাঝে রেখে দিয়েছিলাম।আপনার আমাকে শাস্তি দিন আমার রনজুর কোনো দোষ নেই।
সালমানের কথা শুনে আয়েশা বলল,একি বলছ তুমি। আমরা তো একসাথেই ছিলাম তুমি আবার কখন এই হার চুরি করে নিয়ে এসেছ।
আমি একবার বাথরুমে গিয়েছিলাম তোমার মনে আছে সেখান থেকে আসার পথে এই হারটা নিয়ে এসেছি।আর কিছু আমাকে জিজ্ঞেস করো না।সালমান তার স্ত্রীকে বলল।
পুলিশ সালমানকে হাতকড়া পড়িয়ে থানার দিকে নিয়ে গেল।রনজুকে আর কিছু বলল না।ছেলের ভুলের মাশুল বাবা নিজ স্কন্ধে তুলে নিয়ে নিজে অপরাধি সেজে ছেলেকে নিরাপদ রেখে বাবা বিপদের মাঝে পা বাড়িয়ে দিল।
বাবাকে চলে যেতে দেখে রনজু কেঁদে ফেলল।সে তার মাকে বলল,মা আমার ভুল হয়ে গেছে কোনোদিন আর এখানকার জিনিস ওখানে নিয়ে রাখব না।এটা যে ভুল কাজ আমি বুঝতে পারছি।তুমি বাবাকে বাসায় নিয়ে আস।
বাবার মহত্ত দেখে রনজু শুধরে গেল। আয়েশা থানায় গিয়ে যাদের সোনার হার চুরি হয়েছিল তাদেরকে অনুরোধ করে আসল ঘটনা তাদেরকে খুলে বলে এটা যে ছোট বাচ্চার ভুল সেটা বুঝাতে সক্ষম হলো আর  একটা আপোস রফা করে সালমানকে পরদিনই থানা থেকে ছাড়িয়ে আনল।
বাবাকে কাছে পেয়ে রনজু বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,বাবা আমি আর কোনো দিন এমন ভুল করবো না।তুমি আমাকে মাফ করে দাও।
সালমান ছেলেকে  কোলে তুলে নিয়ে বলল,আমার সোনা বাবা আর কখনও ভুল করবে না।শুনেছ আয়েশা আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে এসো । আমি এবার সত্যিই চিন্তা মুক্ত হলাম।            
                        
            
            
            
                        
            
            
                        
            
         
        
               
   
            
                
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
                ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
                একজন বাবার প্রকৃতি বিবৃত হয়েছে গল্পে।বাবার হৃদয় কতটা সন্তানের জন্য আকুতি পূর্ণ তা ই দেখা যাবে এই গল্পে।
            
    
    
                    
        
        
            
            
                 ২২ জানুয়ারী  - ২০১৭ 
                                        
                            গল্প/কবিতা:
                            ১২৪ টি
                        
                    
            
            
         
     
    
        
বিজ্ঞপ্তি
        এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
    
    
        প্রতি মাসেই পুরস্কার
        
            বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
        
        
            লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
            
                - 
                    
                    
                        প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
                     
 
     
    
        
        বিজ্ঞপ্তি
        “নভেম্বর ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
        প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী