অমানুষ

ভৌতিক (ডিসেম্বর ২০১৮)

শরীফ মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান
  • ৩৪
জ্বি ভাইজান আপনি যখন এতো করে বলছেন ঠিক আছে আমি নিজেই এসে এবার না হয় সবকিছু আপনার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাব। মোবাইলে চাচাতো ভাইকে কথা দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন্ করলো আরাফাত খান। চাচাতো ভাইয়ের কথা ফেলতে পারল নাসে।
তার কথা শেষ হতে তার স্ত্রী তাকে বলল,কেন সবসময় যে লোকটা শহরে গিয়ে তাদের সবকিছু দিয়ে আসে সে কোথায় গেল। তুমি এত কিছু নিয়ে কিভাবে যাবে আর তোমার তো খুব কষ্ট হবে।
স্ত্রীর কথার জবাবে আরাফাত খান বলল,কি করবো বল,কয়েকদিন থেকে শুধু মোবাইলে কল করে যাচ্ছে ভাইজান যে তাদের চাল ডাল আর তাজা তাজা শাক সবজি আর পুকুরের কয়েকটি মাছ যেন খুব দ্রুত নিয়ে যাই । কি করবো বল সময় করে দিয়ে আসতে হবে। আর তাদের কেয়ারটেকার হান্নান একটু অসুস্থ ওর জ্বর হয়েছে। সে তো এখন যেতে পারবে না।সে বলেছে তাদের বাসায় যাবার মতো অবস্থা তার এখন নেই শরীর জ্বরে ক্লান্ত হয়ে গেছে। সুতরাং সেও আমাকে কয়েকদিন পর্যন্ত অনুরোধ করে যাচ্ছে।কি করবো আমি তুমিই বলো।
কিন্তু তারা ধনী মানুষ আর স্বামী স্ত্রী দুইজনে ডাক্তার তুমি সেখানে গিয়ে আবার নিজেকে অসহায় মনে করে না বসো। আর আমার ভালো লাগে না কোনো ধনী লোকের বাসায় তুমি যাও সেটা।আরাফাত খানকে একপ্রকার যেতে নিষেধ করে বলল তার স্ত্রী নিপা।
কিন্তু কি করবো আমি তো কথা দিয়ে দিয়েছি। আর আমি তো সেখানে থাকতে যাব না। কালকে সকালে রওনা দেব আর বিকেলে সেখান থেকে রওনা হলে ভোর রাতে চলে আসবো।তুমি চিন্তা করো না। আরাফাত খান তার স্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলল।
এবার আর বাঁধা দিয়ে কথা বলল না নিপা ।সে তার স্বামীকে বলল, আচ্ছা কথা যখন দিয়েছ যাও গিয়ে দিয়ে আস কিন্তু ওখানে রাতে থাকতে পারবে না।
না না তোমাদের ফেলে আমি একাকি থাকবো না,সে চিন্তা তুমি করো না। আরাফাত খান স্ত্রী ছেলে মেয়েকে ফেলে একাকি না থাকার কথা জানিয়ে দিল।
বাবা মায়ের কথা শেষ হতেই এবার আরাফাত খানের ছেলে রনি বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল, বাবা তুমি ঢাকা যাবা আর আমাকে না নিয়ে যাবা সেটা তো হবে না।তুমি এর আগের বার যখন ঢাকা গেছিলা তখন আমাকে বলেছিলে পরের বার যখন ঢাকা যাবে আমাকে নিয়ে যাবে ,কি মনে আছে সে কথা।
আরাফাত খান বিপাকে পরলো। তার এক ছেলে আর এক মেয়ে।মেয়েটা খুবই শান্ত।কিন্তু তার ছেলে রনি খুবই দূরন্ত। সে সবসময় বাবা কোথাও গেলে সাথে যাবার জন্য বায়না ধরবেই।প্রায় সময়ই তাকে সাথে নিয়ে যেতে হয়। সে ক্লাস ফাইভে পড়ে। কিন্তু বুঝ ব্যবস্থা অনেক বেশি।
এবার ছেলেকে সামলানোর জন্য সে বলল, বাবা আমি তো বেড়াতে যাব না যে তোমাকে নিয়ে যাব। আমি তো একটা কাজে যাচ্ছি গিয়েই আবার ফিরে আসব।
রনি বলল,সে আমি জানি না আমাকে নিয়ে যেতে হবে । না হলে আমি কান্না করবো।
ছেলের কথা শুনে নিপা বলল, এভাবে করেনা বাবা তোমার আব্বু কালকে ভোরে গিয়েই আবার রাতে চলে আসবে তুমি সাথে গিয়ে কি করবা।
আমি যাব আমার কোথাও যেতে ভালো লাগে। রনি নিজের কথায় অটল থাকলো ।
আরাফাত খান দেখল চাচাতো ভাইয়ের কথা রাখতে গেলে তাকে বেশ বেগ পোহাতে হবে। ছেলেকে সাথে নিয়ে এতো সব মাল জিনিস নিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টের কাজ হয়ে যাবে।সে ভাবতে লাগলো কি করা যায় নাকি সে তার ভাইজান কে বলে দেবে তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়।
এবার ছেলেকে সে বলল,আচ্ছা বাবা দেখি কি করা যায় তোমার কান্না করতে হবে না।তোমাকে সাথে নিয়েই আমি না হয় যাব।
বাবার কথা শুনে রনি খুব খুশি হলো।
সে তার বোনকে ডাকতে ডাকতে ভিতরে চলে গেল ,এই রিনু শুনছিস আমি কাল বাবার সাথে ঢাকায় যাব।
ছেলের অবস্থা দেখে নিপা মনে মনে খুশি হলো। সে তার স্বামীকে জিগ্যেস করলো, কি করবা?
আরাফাত খান একটু ভাবল । তারপরে বলল, বুঝতে পারছি না কি করা যায়।না কি ভাইজান কে বলে দেব আমার পক্ষে আসা সম্ভব নয়।
স্বামীর কথা শুনে নিপা বলল, না সেটা কেমন করে হয়।তুমি যখন কথা দিয়েছ যেতে তো হবেই।আর তুমি একজন শিক্ষক মানুষ তোমার কথার তো দাম রয়েছে। নয় ছয় কথা তো তুমি বলতে পারো না। আমার মনে হয় কি তার চেয়ে তুমি রনি কে সাথেই নিয়ে যাও।ছেলেটা না হলে কষ্ট পাবে আর তোমার জন্য সারাদিন কান্না করবে।
আমার যে তাতে বেশ কষ্ট হয়ে যাবে । একদিকে তোমার ছেলেকে দেখতে হবে আর একদিকে মাল জিনিজের খেয়াল রাখতে হবে। আরাফাত খান বলে উঠল।
নিপা বলল,কষ্ট একটু হবে ঠিক আছে। কিন্তু ছেলেটাকে তো কাঁদানো যাবে না।আর তেমন বেশি কষ্ট তো হবে না তোমার কারণ মাল জিনিস সব কিছু তো দুইটা বস্তায় ভরে গাড়ির নিচে বাঙ্কারে রেখে দেবে। শুধু রনির খেয়াল রাখতে হবে তোমাকে ঠিকভাবে বুঝতে পেরেছ।আর বাস স্টপে নেমে সবকিছু সিএন জি গাড়িতে বাসা পর্যন্ত নিয়ে যেও।
বুঝেছি তাহলে তুমি এখন রনিকে নিয়েযেতে বলছ। বউকে উদ্দেশ্য করে আরাফাত খান বলল।
এ ছাড়া আর কি করবা ।তোমার চাচাতো ভাইয়ের কথা রাখতে হলে রনিকেও সাথে নিয়ে যেতে হবে।আর তুমি না হয় তাহলে একদিন রনিকে নিয়ে থেকে এসো। কারণ তোমাদের একসাথে এত জার্নি করতে বেশ কষ্ট হয়ে যাবে।
আচ্ছা ঠিক আছে যেভাবে ভালো হয় সেটাই না হয় করবো চলো এখন খেয়ে আমরা ঘুমিয়ে পরি। আরাফাত খান তার বউকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে এসে খেয়ে ঘুমানোর জন্য তৈরি হয়ে গেল।
তার চাচাতো ভাই ইমরান খান ঢাকায় থাকে।তার অনুরোধে ই আরাফাত খান তাদের গ্রামের কিছু মাল জিনিস ঢাকায় পৌঁছে দেবার জন্য রাজি হয়েছে। এবার রাত পোহালেই আরাফাত খানের ঢাকায় রওনা হবার পালা।
ভোর হতেই ফজরের নামায আদায় করে আরাফাত খান ঢাকায় যাবার জন্য তার চাচাতো ভাইয়ের যেসব জিনিসপত্র নিয়ে যেতে হবে তা ঘোচাতে শুরু করে দিল।তার স্ত্রীও তার সাথে হাত লাগালো।
সকাল আটটায় তাদের স্থানীয় বাজার থেকে গাড়ী ছেড়ে যাবে।তার আগেই তৈরি হয়ে সেখানে যেতে হবে তাকে। রনিকে অবশ্য সে না নিয়েও যেতে পারে কিন্তু ঘুম থেকে উঠে তাকে না দেখলে রনি খুব কান্না করবে।তাই রনিকে সাথে নিয়ে যাবার জন্য তাকে ঘুম থেকে উঠাতে বলল তার স্ত্রী নিপাকে।
স্বামীরকথা শুনে নিপা বলল,আমি তো কয়েকবার ডেকেছি কিন্তু রনি তো ঘুম থেকে উঠতেই চায় না। আমি কি করবো বলোতে আমি আর ডাকতে পারবো না।এখন তুমি এসে একবার ডেকে যাও। আর তোমার বস্তা ভরা হলো।
ডেকে তোলো তাড়াতাড়ি। আমি ডাকতে পারবো না আমার বস্তা ভরা শেষ এখন দুইটা রিক্সা ডেকে আনতে যেতে হবে এগুলো নিয়ে যেতে হবে তো বাজার পর্যন্ত।রনিকে ডেকে তুলে তুমি ওকে রেডি করে রাখো।আমি রিক্সা নিয়ে আসি।
নিপা দেখল সময়ও হয়ে যাচ্ছে তাই সে আর কথা বাড়াল না। সে খাবার তৈরি করতে করতে বলল আচ্ছা যাও তুমি রিক্সা নিয়ে এসো।আমি তোমাদের জন্য খাবার তৈরি করে তারপরে রনিকে উঠাচ্ছি।তুমি তাড়াতাড়ি এসো।
আচ্ছা আমি রিক্সা আনতে গেলাম।তুমি সবকিছু তৈরি করে রেখ।আমি এসে শুধু খেয়ে রওনা হবো। এতটুকু বলে আরাফাত খান বের হয়ে পরলো।
আরাফাত খান বের হয়ে পায়ে হেঁটে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।তাদের বাড়ী থেকে বিশ মিনিট পায়ে হেঁটে বাজারে যেতে হয়। তাই আরাফাত খান দ্রুতপদে হেঁটে বাজারের পানে রওনা হলো।
এদিকে নিপা খাবার রেডি করে সবকিছু ঘুচিয়ে রেখে রনিকে ডেকে তুলল।রনি ঘুম থেকে উঠে বাবাকে না দেখে বেশ অস্থির হয়ে উঠল। সে তার আম্মুকে জিগ্যেস করল, আম্মু বাবা আমাকে না নিয়ে চলে গেল।
জবাবে নিপা বলল,ওরে বাবা রে আমার ! তোমাকে না নিয়ে কি যেতে পারবে, আমি কি সেটা হতে দেব। তোমার আব্বু রিক্সা আনতে গেছে। তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। তোমার আব্বু আসলেই কিন্তু রওনা হতে হবে।
আচ্ছা আম্মু আমি তাহলে বাথরুম সেরে আসি।তুমি বাবাকে একা যেতে দিওনা কিন্তু আমার জন্য অপেক্ষা করতে বলো। এতটুকু বলে রনি যাওয়ার আনন্দে বাথরুমে চলে গেল।
আধাঘন্টা পরে আরাফাত খান রিক্সা নিয়ে এলো । সে বাসায় ফিরে দেখল সবকিছু তার স্ত্রী রেডি করে রেখেছে।দ্রুত খাওয়া শেষ করে ছেলেকে সাথে নিয়ে সে একটারিক্সায় উঠল আর একটা রিক্সায় বস্তা দুটি উঠিয়ে দিয়ে রওনা হয়ে গেল।
নিপা তাদের মেয়ে রিনুকে নিয়ে রিক্সার পিছনে পিছনে কিছুদূর এগিয়ে আসল। আরাফাত খান তাকে ইঙ্গিতে বাসায় যাওয়ার জন্য বলল। সে বাসায় ফিরে আসতে আসতে বলল,সাবধানে যেও আর রনির দিকে খেয়াল রেখ।
আচ্ছা তুমি যাও। আমরা তো কালকেই ফিরে আসবো। চিন্তা করো না। আমি সবসময় রনিকে দেখে রাখবো।আরাফাত খান বউকে সান্ত্বনা দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।
বাজারে এসে সে ঢাকার গাড়ির টিকেট কেটে নিল।তাদের এখান থেকে ঢাকা যেতে চার ঘন্টার মতো সময় লাগে।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তারা দুপুরের মাঝেই ঢাকায় পৌঁছে যাবে। গাড়ি ছাড়তেই সে মোবাইলে তার চাচাতো ভাই ইমরান খান কে কথাটা জানিয়ে দিল যে সে রওনা হয়েছে সাথে তার ছেলে রনিও রয়েছে।
ইমরান খান মোবাইলে তাকে শুধু বলল,ওকে।সরাসরি সবকিছু নিয়ে আমার বাসায় চলে এসো।এতটুকু বলে সে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলো।
গাড়ি দ্রুত গতিতে চলতে লাগল। আর রনির প্রশ্নের ডালপালা দ্রুত গতিতে বাড়তে লাগল।রনির প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে আরাফাত খান ক্লান্ত হয়ে গেল।শেষে সে রনিকে চুপ থাকার জন্য বলল।
রনি প্রথমবার গাড়িতে করে দূরে কোথাও যাচ্ছে সুতরাং তার উৎসাহ বাবার চেয়ে অনেক বেশি।তাই সে কি আর বাবার কথা শোনে । একটু পর পর সে তার কাজ চালাতেই লাগল বাবা এটা কি ওটা কি জিগ্যেস করে করে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আর বাবাকে প্রশ্ন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একসময় রনি ঘুমিয়ে পরলো।যখন রনির ঘুম ভাঙ্গল তখন তারা ঢাকা পৌঁছে গেছে। গাড়ির বাঙ্কার থেকে বস্তা দুটি বের করে রনিকে সাথে নিয়ে আরাফাত খান সিএনজি গাড়ি খুঁজতে লাগল।
এত মানুষ দেখে রনি আবার বাবাকে প্রশ্ন করা শুরু করলো। রনির প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে সে একটা সিএনজি গাড়ি পেয়ে গেল। আর তাতে বস্তা দুটি উঠিয়ে তারা নির্দিষ্ট গন্ত্যেব পানে ছুটে চলল।
এবার রনি বাবাকে জিগ্যেস করলো, বাবা আমরা আর কতক্ষণে চাচার বাসায় যাব?
এইতো বাবা আমরা একঘন্টার মাঝে তোমার চাচার বাসায় পৌঁছে যাব যদি কোন জ্যাম না লাগে।আর যদি সে আগ্রহ করে তবে আমরা তোমার চাচার বাসায় আজ রাতে থাকবো আর না হলে আমরা আজই আবার ফিরে যাব।
আম্মু যে বলল আমরা আজ ঢাকায় বেড়াব তাহলে ফিরে যাব কেন। রনি জানতে চাইল বাবার কাছে।
এমন সময় নিপার কল পেল আরাফাত খান। সে রিসিভ করতেই নিপা জানতে চাইল, কি তোমরা ঠিক ভাবে পৌঁছেগেছ?
জবাবে সে বলল, পৌঁছেছি । তবে এখনো বাসায় যেতে পারিনি । রাস্তায় বেশ জানযট রয়েছে। আর তোমার ছেলের নানাবিধ প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি।
নিপা বলল,তা প্রশ্ন তো একটু করবেই কখনো দূরে কোথাও যায় নি তো।তুমি আবার বিরক্ত হইও না। আমার বাবার সব কথার জবাব দিও।
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আমি সব কথার জবাব দিচ্ছি।আর এখনআমরা বাসায় কাছাকাছি এসে গেছি। তোমরা সাবধানে থেক। এখন রাখলাম তাহলে।এতটুকু বলে আরাফাত খান লাইন কেটে দিল।
চাচাতো ভাইয়ের বাসায় পৌঁছে আরাফাত খান দেখল তার বাসায় অনেক লোকের সমাগম।এখানে হয়তো কোনো অনুষ্ঠান চলছে।আরাফাত খান কিছু বুঝতে পারলো না।সে গেটের দাঁড়োয়ান কে তার আসার কথা ইমরান খানকে বলতে বলল।
দাঁড়োয়ান তাকে বাইরে রেখে ভিতরে চলে গেল। একটু পরে সে এসে বলল,আপনাকে ভিতরে যেতে বলেছে আর এই বস্তা আমরা নিয়ে যাচ্ছি।আপনি ভিতরে যান।
আরাফাত খান খুশি মনে ভিতরে চলে এলো রনিকে সাথে করে। সে ভিতরে এসে দেখল বাইরে থেকে যা বোঝা গেছিল তাই ভিতরে অনেক লোক রয়েছে।বিশ পচিশ জন তো হবেই।সবার সামনে আরাফাত খান রনিকে নিয়ে হাজির হয়ে ভাইকে সালাম দিল।
ইমরান খান সালামের জবাব দিতে তার সাথে দাঁড়ানো একজন মহিলা জানতে চাইল, এরা কারা ?
জবাবটা ইমরান খানের বউ দিল। সে বলল এভাবে, আরে ভাবি বলবেন না এরা হলো ওদের গ্রামের বাড়ীর কাজের লোক । এতো করে বললাম অনুষ্ঠানের দিন এদের গ্রামের জিনিস পত্র নিয়ে আসতে বলো না। তবু সে নিষেধ করলো না আর এরাও বোকার মতো চলে এলো।
বউয়ের কথার সাথে তাল মিলিয়ে ইমরান খান বলল, ও আমাদের গ্রামের বাড়ী দেখাশুনা করে । একপ্রকার কাজের লোক । আজ অনুষ্ঠান তাই গ্রামের তাজা তাজা জিনিসপত্র নিয়ে আসতে বলেছি যাতে সবাই খেয়ে মজা পায়।
একটু থেমে আবার সে বলল,তা আরাফাত তোমার ছেলেকে সাথে নিয়ে এসেছ বুঝি।খেয়ে যেও তোমরা । রান্না চলছে এখনো। আমাদের গ্রামের বাড়ী ঠিকভাবে দেখে রাখছ তো।
চাচাতো ভাই আর তার বউয়ের কথা শুনে এমনিতেই পেট ভরে গেছে আরাফাত খানের । তার কাছে মনে হলো তার পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে কোথাও।সে দাঁড়িয়ে আছে শুন্যের ওপরে।ভাগ্যিস তার রনি বয়েসে অনেক ছোট না হলে কথাগুলোর মানে সেও বুঝে যেত ।চাচাতো ভাইয়ের বাসায় ভাইয়ের প্রয়োজনেই সে এসেছে কিন্তু তারপরেও শহরের এই ধনী লোকদের সামনে তাকে ভাই বলে পরিচয় করিয়ে দিতে পারলো না তার চাচাতো ভাই ইমরান খান।জীবনে সবচেয়ে বড় দুঃখ এখন সে পেয়ে গেল এই চাচাতো ভাইয়ের অনুরোধ রক্ষা করতে এসে।
সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বলল, না ভাইজান আমরা আসি আমাদের ক্ষুধা নেই। আপনাদের জিনিস ঠিকভাবে দিয়ে গেলাম। এতটুকু বলে আরাফাত খান বাসা থেকে বের হতে লাগল।এমন সময় তাকে থামিয়ে দিয়ে ইমরান খান পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে রনির হাতে দিয়ে বলল, আসা যাওয়ার ভাড়াটা তো নিয়ে যাবা না হলে চলবে কেমনে।
নিজেকে যথেষ্ট অপমান হতে দেখেও আরাফাত খান নিজেকে সামলে রাখল। রনির হাত থেকে টাকাগুলো নিয়ে সে ইমরান খানের হাতে দিয়ে বলল,এগুলো রাখুন আপনার কাজে লাগবে।এই বলে রনিকে নিয়ে সে চাচাতো ভাইয়ের বাসা থেকে বের হয়ে আসল।
তাদের চলে আসতে দেখে ইমরান খানের বউ বলল, দেখলেন সবাই কাজের লোকের কতো দেমাগ। ছাড়ুন এসব আমরা এবার সবাই খাবার আয়োজন করি।
আরাফাত খান আর পিছন ফিরে তাকালো না। রনি তাকে বলল,বাবা আমরা যাচ্ছি কোথায় চাচার বাসায় থাকবো না। আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে।
রনির কথার জবাবে সে বলল, বাবা আমরা তোমার আর একটা চাচার বাসায় থাকবো চলো আমরা এখন কোনো ভালো হোটেলে গিয়ে খাব।এই কথা বলে সে মোবাইলে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে কল করলো আর জানিয়ে দিল তোর বাসায় বেড়াতে আসব ঠিকানাটা বল।
ওপাশ থেকে আরাফাত খানের বন্ধু বলল, তুই আসবি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। কখন এসেছিস ঢাকা। আর এখন কোথায় আছিস আমাকে বল।
আরাফাত খান তার বন্ধুর কথার জবাবে বলল, দোস্ত খুব ক্ষুধা লেগেছে আমার ছেলের তাই ওকে নিয়ে একটা ভালো হোটেলে খেতে যাচ্ছি এখন রিক্সায়। তুই ঠিকানাটা বল, খাওয়া শেষ করে তোর বাসায় আসছি রাতে থাকব।
আরাফাত খানের কথা শুনে তার বন্ধু বলল, তুই হোটেলে যাবি কেন, আমার বাসায় এসে খাবি। আমি আসছি তোকে নিতে তুই বল কোথায় আছিস।
বন্ধুর কথায় খুশি হলো আরাফাত খান । বহুদিন পরে সে ঢাকায় এসেছে চাচাতো ভাইয়ের অনুরোধে আর তার আচরণে যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল সে। এখন বন্ধুর কথায় সে যেন আবার নিজেকে ফিরে পেয়েছে। রিক্সা থেকে নেমে সে তার বন্ধুকে জানিয়ে দিল তার বর্তমান অবস্থান। তার বন্ধু তাকে বলল, তোকে কতদিন পরে দেখব আরাফাত, তুই ঐখানে ই থাক আমার আধাঘন্টা লাগবে।
ছেলেকে নিয়ে আরাফাত খান বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।আর রনি তাকে জিগ্যেস করলো, বাবা আমরা ঐ চাচার বাসায় থাকলাম না কেন?
জবাবে সে বলল, বাবা রনি তোমার ঐ চাচা টাকার প্রভাবে মানুষ থেকে অমানুষ হয়ে গেছে। তাই ওদের বাসায় আমাদের থাকা শোভা পায় না। আমার ভয় হচ্ছে খুব ভয় হচ্ছে এইসব মানুষদের কারণে পৃথিবী থেকে মানবতা হারিয়ে না যায়।
বাবার এতো গভীর কথা রনি তেমন বুঝতে পারলো না। তাই সে চুপ করে রইল আর কোনো কথা বলল না।
পরদিন ইমরান খানের চেম্বারে তার এক ঘনিষ্ট বন্ধু এসে হাজির হলো। তাকে দেখে ইমরান খান বলল, আরে দোস্ত আরফান আয় আয় বল কালকের খাবার দাবার কেমন হলো।
জবাবে তার দোস্ত আরফান বলল, না বেশিক্ষণ বসব না দোস্ত।তোর অবস্থা যে এত অবনতি হয়েছে সেটাই বলতে এসেছি।
কি হয়েছে দোস্ত আমাকে খুলে বলো। ইমরান খান জানতে চাইল।
জবাবে আরফান আহমাদ বলল, না দেখলাম শুনলাম টাকার প্রভাবে কিভাবে তুই আর তোর বউ অমানুষ হয়ে গেছিস।নিজের চাচাতো ভাইকে কাজের লোক বলে পরিচয় করিয়ে দিস।
তুই জানলি কিভাবে? ইমরান খান বিস্মিত হয়ে জানতে চাইল।
এবার আরফান আহমাদ বলল, কাজের লোকের এত দেমাগ সে তোর টাকা ফেরত দিল আর তুই কিছু বলতে পারলি না এটা দেখে আমার বিষয়টা খটকা লেগেছিল তাই কাল রাতে তোর বাসা থেকে ফিরে আসার সময় আমি তোর বাসার দাঁড়োয়ানকে বিষয়টা জিগ্যেস করেছিলাম। সে ই আমাকে সবকিছু খুলে বলল। ছি ছি ইমরান তোকে আমার বন্ধু বলতে লজ্জা হচ্ছে। তোদের মতো মানুষ সমাজে বৃদ্ধি পেলে সমাজ থেকে দেশ থেকে মানবতা আর ভালোবাসা হারিয়ে যাবে। আমার ভয় হচ্ছে তোদের মতো ধনী লোকের সংখ্যা বাড়লে মানুষ অমানুষে পরিণত হয়ে যাবে। আমার খুব ভয় হচ্ছে আর এ ভয়টা অমূলক নয় যে তোদের কারণে মানবতা হারিয়ে না যায়।
এতটুকু বলে আরফান আহমাদ ইমরান খানের চেম্বার থেকে বের হয়ে গেল আর তার কথা শুনে সে নিশ্চুপ থ হয়ে বসে রইল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান সাবলিল বর্ননা। তবে ইমরানের একটা শাস্তি দরকার ছিল,তবুও মনে হচ্ছে মানসিক শাস্তি হয়েছে।
ভালো লাগেনি ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮
ধন্যবাদ অফুরন্ত।শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগেনি ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মানুষের অমানবিক আচরণে মানবতা হারানোর সংশয়/ভয় বিবৃত হয়েছে এই গল্পে।

২২ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪