১।
ঃ তুমি আমাকে এত ভালবাসো?
মিলির কপালের অবাধ্য চুলগুলাে সরিয়ে দিতে দিতে বললো আনিস।
ঃ শোনো, আকাশের মতো অসীম আমার ভালোবাসা! তুমি মাপতেও পারবে না। তোমাকে ছাড়া জীবন আমার কল্পনাতেও আসে না, আসবেও না।
ঃ এজন্যই তো তোমাকে আমি নীল প্রজাপতি ডাকি মিলি, কিন্তু আকাশে তো অনেক মেঘ, বাইরে তাকিয়ে দেখো ঝড় আসছে।
ঃ আসুক ঝড়, আসুক বৃষ্টি! আমার ভালোবাসা তাতে কমবে না।
ঃতাই! আমিও তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি মিলি, কোন শক্তি আমাদের আলাদা করতে পারবে না, কখনও না।
ঃ আমি জানি, এজন্যই তো তোমাকে এতটা ভালবাসি! কথা দাও কখনোও আমাকে ছেড়ে যাবেনা?
ঃ অসম্ভব মিলি, তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা।
ঃ ওরে আমার জানপাখিটা রে!
মিলি তার নিরাবরন শরীরে আনিসের বুকে মাথা রেখে কিছুটা উপুর হয়ে শুয়ে, ওকে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলছিল। আনিস দুহাতে ওকে শক্ত করে ধরে নিজের আরো কাছে টেনে নিলো। এই মুহূর্তে ওর চেয়ে ভাগ্যবান আর কে আছে?
নিজের মাথাটা তুললো মিলি, দুচোখে দুষ্টু হাসি। দুজন দুজনার চোখে চেয়ে রইলো খানিকক্ষন। মিলির তৃষ্নার্ত ঠোট জোড়া আনিসের দিকে এগিয়ে গেলো, পরম আবেগে আনিস সাড়া দিলো।
বাইরেও বোধহয় ঝড় শুরু হয়েছে।
২।
ঝড় থেমে গেছে, প্রকৃতি এখন শান্ত। আনিস আর মিলি দুজনেই শুয়ে আছে বিছানায়। হাপড়ের মতো ওঠানামা করছে দুজনের বুক। নিঃশ্বাস অনিয়মিত, কিন্তু দ্রুত।
তৃপ্ত দুজনেই।
কেউ কারো সাথে কথা বললো না, অনেকক্ষন। অবশেষে নিরবতা ভাঙলো আনিস।
ঃ আমাকে যেতে হবে মিলি।
ঃ এখনি! এই, তুমি না বললে আজ অফিসে যাবে না, কাজের প্রেশার কম!
ঃ আমার ম্যানেজার টেক্সট করেছে, শ্রমিকরা কি একটা নিয়ে ঝামেলা করছে। আমি না গেলেই নয়।
ঃ ঠিক আছে যাও, সাবধানে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল কোরো।
ঃ তুমি পাশে থাকলে কোন বাধাই আমার কাছে বাধা না মিলি।
মিলির কপালে দীর্ঘ একটা চুমু দিয়ে আনিস বিছানা থেকে উঠে পড়লো, শাওয়ার নিয়ে তৈরী হবে। ঠিক দশ মিনিটের মাথায় মিলির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের নীল রঙের রেন্জ রোভার গাড়িতে উঠলো আনিস। মিনিট বিশেকের মধ্যেই অফিসে ইন করলো।
৩।
ম্যানেজার অানিসের চেম্বারেই অপেক্ষা করছিলো। চেহারায় ভীতির ছাপ। আনিস চেয়ারে বসে চোখে প্রশ্ন নিয়ে ম্যানেজারের দিকে তাকালো।
সাভারে ওদের ফ্যাক্টরিতে এক শ্রমিক ম্যাশিন চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহত হয়। হাসপাতালে নিতে নিতেই বেচারার মৃত্যু, সম্ভবত অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে।
ম্যনেজারের ভাষ্যমতে এখানে মালিকপক্ষের কোন দোষ নেই, অবহেলাও নেই। কিন্তু শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করছে। গেট আটকে দেয়া হয়েছে। তা নাহলে ভাংচুরও করতো। অবস্হা মোটেই ভালো না, ঘটনা বায়ারদের কানে গেলে মুখ ফিরিয়ে নেবে ওরা।
আনিস উঠে দাড়ালো,
ঃ এক্ষুনি সাভার চলুন।
ঃ স্যার পাগল হয়েছেন? জায়গাটা এখন সেফ না।
ঃ যা বলছি করেন।
আনিসরা সাভারে পৌছুতেই ম্যানেজারের কথার সত্যতা পাওয়া গেলো। ফ্যাক্টরির কয়েক মাইল দুরে রাস্তা আটকে রেখেছে শ্রমিকরা। বেশ উত্তেজিত। দুয়েকটা টিভি চ্যানেলও চলে এসেছে।
ম্যনেজারের নিষেধ সত্বেও আনিস গাড়ি থেকে নামলো। দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে গেলো ভিড়টার দিকে। ওকে দেখে যেন আরো ক্ষেপে গেলো ওরা। বেশ উত্তেজিত সব স্লোগান শোনা যাচ্ছে।
আনিস সোজা হেটে শ্রমিকদলের নেতা জসিমের দিকে এগিয়ে গেলো। সবাইকে অবাক করে দিয়ে জসিমকে বুকে জড়িয়ে নিলো। আনিসের চোখ দুটো ভেজা ভেজা। কি করে এত দুঃখজনক ঘটনা হলো কান্নাভেজা কন্ঠে আনিস জানতে চাইলো জসিমের কাছে, যেন নিহত শ্রমিক ফকরুল ওর বড় আপনজন।
ম্যানেজারের কাছে আগেই জেনে নিয়েছে নিহত শ্রমিকের নাম। শ্রমিকরা অবাক চোখে ঘটনাটা দেখলো। তাদের রাগ উবে গেছে।
আনিস গোটা ব্যাপারটা অস্বাভাবিক দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করলো। বললো, তোমরা কিছু মানুষ চলো আমার সাথে, ফকরুলের বাড়িতে যাবো। বেচারার পরিবারটাতো দেখতে হবে। ওর দাফন- কাফনও করতে হবে। লাশ নিয়ে আমরা এখানে ফিরে আসবো জানাজার জন্য।
সে সারাটা দিন ফকরুলের পরিবারের সাথে থাকলো, দাফন- কাফনের সব খরচ দিলো। বেশ মোটা অংকের এককালিন টাকা ফকরুলের বৌয়ের হাতে তুলে দিলো।
সব কাজ সেরে, রাত ১১ টায় সে বাড়ির পথে রওনা দিতে পারলো।
৪।
বাড়ির পোর্চে গাড়িটা রেখে চাবিটা কেয়ারটেকারের হাতে দিয়ে ঘরে ঢুকলো আনিস। ওর বছর পাঁচেকের ছোট্ট মেয়েটা দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়লো ওর উপর। পরম মমতায় মেয়েকে কোলে তুলে নিলো আনিস। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিগ্গেস করলো,
ঃ তোমার মামনি কোথায় সোনামনি?
ঃ ম্যাডাম আফনের চাচার বাড়িত গেসে, মেয়ের হয়ে জবাব দিলো মেয়ের কেয়ারটেকার নার্গিস।
বলতে বলেতেই গেটে গাড়ির আওয়াজ হলো। ঘরে ঢুকলো ওর স্ত্রী শাহেদা, ওদের দেখে হাসলো। নার্গিস ওদের মেয়েকে ঘুমাতে নিয়ে গেলো।
ঃ কখন এসেছো?
ঃ এই তো মাত্র, তোমাকেই খুজছিলাম, বড় চাচার বাড়িতে গিয়েছিলে শুনলাম?
ঃ হুমম উনি একটু অসুস্হ হয়ে গিয়েছিলেন, এখন ঠিক আছেন।
ঃ সে কি! আমাকে জানাও নি কেন?
ঃ খবর পেয়েছি আনিস, আজ খুব ঝামেলা গেছে তোমার, ম্যানেজার সব জানিয়েছে। এত সুন্দরভাবে এরকম একটা ব্যাপার সমাধান করা তোমার মত একজন ভালো মানুষের পক্ষেই সম্ভব আনিস। মানুষের উপকার করার তোমার এই মানসিকতার আমি বড় ভক্ত। ব্যাবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকো, সেই সকালে বেরিয়েছো। যতটুকু সম্ভব সংসারের ঝামেলা, আত্বীয় স্বজনদের দায়িত্ব আমিই মেটাতে চাই।
ঃ তুমি না থাকলে কি যে হত শাহেদা! তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা সত্যি অসম্ভব। এজন্যই তোমাকে আমি যাদুর বাক্স বলি!
ঃ হয়েছে, হয়েছে আর তেল দিতে হবে না। হাত মুখ ধুয়ে এসো খাবার দিতে বলি; হাসিমুখে বললো শাহেদা।
ঃহুমম বলো, আচ্ছা শোনো কাল ভোরে বেরিয়ে যাবো নতুন বায়ার এর সাথে সাইট ভিজিট আছে।
ঃ আমিও বেরোবো ১২ টার দিকে, তোমার কথামতো মিরপুরের এতিমখানার কাজ কতটুকু আগালো দেখতে যাবো। তোমার স্বপ্ন এটা, ভালোভাবে করতে চাই কাজটা।
ঃ হ্যা দেখো কতটা অগ্রগতি হলো, আমাদের ন্যায় আর সততার পক্ষে থেকে দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে। তুমি পাশে থাকলে আমার সব স্বপ্ন সত্যি হবে।
ঃ চলো এবার।
ঃ হ্যা চলো।
৫।
মিলি আজ অনেক সেজেছে, কপালে টিপ দিয়েছে, হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। মাত্রই শাওয়ারে নিয়েছে, ঝরঝরে লাগছে শরীরটা সাথে মনটাও। আনিসের প্রিয় নীল রঙের কামিজ আর কালো সেলোয়ার পড়েছে। পায়ে পেন্সিল হাই হিল। শরীরে ছিটিয়েছে দামী পারফিউম।
ফুল বডি লেন্থের আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিচ্ছে নিজের মেইনটেইন করা ছিমছাম শরীরটা।
অপেক্ষা করেছে মিলি। আনিস আসবে। আজ ওরা সারাদিন ঘুরবে, নিজেদের মতো করে কাটাবে সারাটা দিন। গতকাল আনিসের তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার কমপেনসেশান এটা। মাঝে মাঝে ভাবে মিলি, আচ্ছা আনিস এত ভালো কেন? সব কিছু পুষিয়ে দেয়।
বাইরে গেটে হর্নের আওয়াজ শুনতে পেলো মিলি। ওর শরীরে বিদ্যুত খেলে গেলো।
আনিস এসে গেছে।
২২ জানুয়ারী - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪