অলোকের একদিন

নগ্নতা (মে ২০১৭)

আখতার উজ্জামান সুমন
  • ১৫
ঢাকায় অনেক আত্মীয়স্বজন থাকা সত্ত্বেও অলোক তাদের ওখানে যায়নি। যদিও তারা তাকে অনেক কাঙ্খিত মনে করে, তারপরও দারস্ত হওয়া তার একদম পছন্দ নয়। বিকালবেলা কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে উঠতে হবে তাকে। দীপান্বিতা টিকেট করে রাখবে। পরিকল্পনাটা আরো আগে থেকেই ছিলো। দীপান্বিতা তার বন্ধু। দীপান্বিতার স্বামী আর্মি মেজর। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে পোস্টিং ছিলো, এখন রাজশাহীতে। কুমিল্লার এমন কোন রাস্তা, অলিগলি অবশিষ্ট নেই যেখানে তার আর দীপান্বিতার পায়ের ছাপ পরেনি। কুমিল্লায় কতশত মাইল যে দীপান্বিতার সাথে সে হেটেছে তা অন্তর্যামী-ই জানে। অপুর্ব মুখশ্রীর সে মেয়েটি লম্বায় প্রায় তার সমানই ছিল। তাই তার সাথে হাটতে অলোক একটু ইতস্তত বোধই করতো। ক্ষেত্র বিশেষ করার কোনো উপায়ও ছিল না; কারণ, সে অলোকের সাথে রিক্সায় বসবে না। কথাবাক্যে যথেষ্ট পটু ছিলো দীপান্বিতা। কথা বলতে বলতে প্রায়ই হেরে গিয়েছে অলোক। রাজশাহী বোর্ডে এসএসসিতে ৪র্থ ও এইচএসসিতে ২য় স্থান অধিকার করাতো আর চারটিখানি কথা নয়।
অলোক বিকাল বেলায়ই পৌছলো কমলাপুর স্টেশনে। সে এদিক ওদিক খোঁজছিলো দীপান্বিতাকে। কিন্তু কোথাও দেখা গেল না তাকে। তার সাথে যোগাযোগ করাটাও অতো সাধারন ব্যাপার ছিলো না। স্টেশনে দু'জনের দেখা হবার ব্যাপারটা আগেই পরিকল্পনা করা ছিলো। দীপান্বিতাকে না পেয়ে মনটা ভীষণ খারাপ হল অলোকের। সে সেদিন বুঝতেও পারেনি যে, দীপান্বিতার সাথে তার আর কোনো দিন দেখা হবে না। এদিকওদিক খোঁজাখুঁজি করে দীপান্বিতাকে না পেয়ে শেষমেশ টিকেট করার জন্য সে লাইনে দাঁড়ালো। হঠাৎ একটা লোক তার পিঠে হাত রেখে বলল, “আপনার নাম কি অলোক?” লোকটার পোশাক দেখেই অলোক বুঝে গেল যে, সে সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক । সে শুধু হে-সূচক মাথা নাড়লো। লোকটার হাতে অলোকের একখানা ছবি। ছবিটা দেখেই অলোক বুঝতে পারলো লোকটা তাকে এই ছিবি দেখেই খোঁজে বের করেছে। এই ছবিটা সে-ই একদিন দীপান্বিতাকে দিয়েছিলো। লোকটা তার হাতে একখানি হলুদ খাম ধরিয়ে দিয়ে চলে যেতে চাইল। সে লোকটাকে নিয়ে চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোথাও বসতে চাইলো। লোকটা বলল, তাকে নাকি বলা হয়েছে যে, চিঠিটা দিয়ে আর কোনো কথা না বলে চলে যেতে। অলোক ছবিটার কথা জিজ্ঞাস করাতে বলল, ছবিটা তাকে আবার নিয়ে যেতে বলেছে। লোকটা আর কিছু বলার আগেই চলে গেল। অলোক খাম খোলে দেখলো একখানা ট্রেন-টিকেট আর দীপান্বিতার হাতের লিখা একটি চিঠি। চিঠিটা সে বারবার পড়লো। চার পৃষ্ঠার চিঠিটায় অনেক কিছুই লিখা। পুরো চিঠিটার মর্মার্থ হল, দীপান্বিতার স্বামী ট্রান্সফার হয়ে ঢাকা ক্যন্টনমেন্টে চলে এসেছে। সেও এখন থেকে ঢাকায়ই থাকবে। তার সাথে হয়তো আর অলোকের জীবনে কখনো দেখা হবে না। রাজশাহী থেকেই মনে অনেক কষ্ট নিয়ে ঢাকায় এসেছে অলোক। এখন কষ্টের মাত্রাটা আরো বেরে গেল।
ট্রেন ফ্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। অলোক ট্রেনে উঠলো। উঠার সাথে সাথেই হুইসেল দিয়ে ট্রেন ছাড়ল। এসি কম্পার্টমেন্ট; শীতের দিনে যদিও এর দরকার ছিল না। ব্যাগ দু’টোকে গুছিয়ে রেখে সিট নম্বর দেখে নিশ্চিত হয়ে বসলো সে। বসার আগেই খেয়াল করলো ঠিক তার পাশের সিটে একলোক চাদর গায়ে দিয়ে মাথার ক্যাপ মুখের উপর রেখে সিটে হেলান দিয়ে হাত দু’টো গোছ করে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। গত কয়েকদিনের ক্লান্তি অনুভব হচ্ছিলো তার। ভেবেছিলো, লোকটার মত সেও একচোট ঘুম দিয়ে নেবে। কিন্তু তা আর করতে পারলো না। হৃদয়ের মাঝে যে ঝড় বইছে আপাদত তা সামাল দিতেই ব্যস্ত হলো সে। সেও সিটে হেলান দিয়ে হাত দু’টো গোছ করে লম্বা হয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। দিপান্বিতার সাথে ১ম দেখা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সবকিছুর একবার এ্যকশন রিপ্লে করে নিলো। একটা লোক এসে তার পাশের লোকটাকে বলল,
-শাহেদ, ঘুমিয়ে পরেছ নাকী?
-না ভাই, ঘুমাইনি।
-তাহলে কাজটা কী শেষ করা যায়?
-অত তাড়া কিসের? মাত্রতো রাত আটটা বাজে।
-না, মীম বলছিলো সে নাকি কাজ শেষ করে ঘুমাবে।
-হুম, ঠিকই বলেছে। রাত বেশি হয়ে গেলে কাজ করতে ভালো লাগবে না। চলেন শেষই করে ফেলি।
অলোক চোখ বন্ধ করে সবই শুনছিলো। লোকটার জানালার পাশে সিট থাকায় সে না সরা পর্যন্ত বের হতে পারছিলো না। শাহেদ নামের লোকটা আমাকে বলল,
-এক্সকিউজ মী! ভাইয়া, একটু জায়গা দেবেন?
অলোক চোখ খোলে পা সরিয়ে বের হওয়ার জন্য একটু জায়গা করে দিলো। তারা চলে গেলেন।
লোকটাকে দেখেই চিনে ফেলেছিলো অলোক। নাট্য অভিনেতা শাহেদ খান। মনের মাঝে অনেক প্রশ্ন জাগতে লাগলো অলোকের। সে আবার চোখ বন্ধ করে স্মৃতিগুলো ফ্ল্যাশ করতে লাগলো। প্রায় ঘন্টা খানেক পরে শাহেদ খান ফিরে আসলো। ঠিক সেই আগের ভঙ্গিতেই, “এক্সকিউজ মী! ভাইয়া, একটু জায়গা দেবেন?” সেও আগের মত করেই জায়গাটা দিলো। শাহেদ চাদরটা গায়ে দিয়ে গোছগাছ করে বসতে বসতে তাকে বলল,
-কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
-চিটাগং।
-আপনারা?
-আমরাও চিটাগং।
-কোনো সুটিং চলছে বুঝি?
-হে। আপনি তাহলে চিনে ফেলেছেন?
-হুম…..। প্রথম দেখাতেই।
-নাটক দেখেন?
এভাবেই চলছিল আলোচনা। কথা বলতে বলতে একসময় দু’জন খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলো। শাহেদ তার অতীতের অনেক স্মৃতি শেয়ার করলো। অলোকও দিপান্বিতাসহ অনেক কিছু শেয়ার করলো। শাহেদের কথাগুলো শুনে সে মুগ্ধ না হয়ে পারলো না। সে তার জীবনের অনেক ঘটনা বলে বলে অলোককে সান্তনা দিচ্ছিলো। সে যে খুব মেধাবী একজন মানুষ তার কথাবার্তাতেই প্রমাণ পেয়েছে অলোক। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে শাহেদ খুব হতাশ। তার জীবনে অনেক না পাওয়ার কথা শুনলো অলোক। সেও শাহেদকে সান্তনা দিচ্ছিলো মাঝে মাঝে। শাহেদের কিছু কথা যা অলোকের জীবনে প্রভাব ফেলেছিল তা হল-
সে যখন কখনো একাকিত্ব অনুভব করে তখন ডায়রী লিখে।
যদি কখনো আশাহত হয় তাহলে একটা গান শুনতে খুব ভাল লাগে তার। গানটি হল- “যখন সময় থমকে দাড়ায়…………………..”।
তার প্রিয় একটা ছবি হল- “হটাৎ বৃষ্টি”।
তার প্রিয় রং হল- “নীল”।
তার জীবনে অনেক না পাওয়ার গল্প আছে।
চট্টগ্রাম নামতে নামতে রাত প্রায় শেষ। মিল্টন অলোককে রিসিভ করার জন্য স্টেশনেই ছিল। মিল্টন পাবনার ছেলে। অলোকের জীবনে সেও একজন গুরুত্বপুর্ণ বন্ধু। মিল্টনের সাথে যেতে যেতে গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে একসিডেন্ট থেকে শুরু করে শাহেদ পর্যন্ত সব বললো অলোক। দিপান্বিতার কথা শুনে সে খুব আফসোস করল। শাহেদের কথা শুনে সে অলোককে বলল, “দারুন ব্যপারতো! তোর জন্য আমি একটা টি-শার্ট কিনেছি; নীল রঙের। নুপুর সিনামা হলে হঠাৎ বৃষ্টি ছবিটাও চলছে।”
যখন সময় থমকে দাড়ায়- গানটি বহুবার শুনেছে অলোক। মিল্টনকে আবার শুনাতে বললো। সে বাসায় গিয়ে শুনাবে বললো।
বাসায় গিয়ে অলোক গানটা শুনলো। বারবার শুনলো। মিল্টনের দেওয়া নীল টি-শার্টটা গায়ে দিয়ে মিল্টনসহ নয়টার শো’তে নুপুর সিনামা হলে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিটাও দেখলো। বিকালে বাসায় ফিরে আবার সেই গানটা বারবার শুনছিলো আর শাহেদের জীবনের না পাওয়ার কথা ও তার জীবনের অনেক কথা মনে করতে লাগলো। আশ্চার্য রকমের একটা কন্ট্রাস্ট অনুভব করলো অলোক।
সে দিনটি তার কাছে স্মরণীয়। এই জন্য স্মরনীয় যে, সেদিন থেকে অলোক একদম অন্যরকম এক মানুষ হয়ে গেলো। সেদিন থেকে হাজারো না পাওয়ার মাঝেও সুখ খোঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো অলোক। সে বুঝে নিয়েছে, সুখ কেউ কাউকে দিতে পারে না। শুধু মাত্র ইচ্ছা থাকলেই নিজেনিজেও সুখি হওয়া যায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুহুল আমীন রাজু গল্পটাও বেশ ভাল লাগলো ।( আমার লেখা ' মেকআপ করা বৃষ্টি ' গল্পটি পড়ার আমন্ত্রন রইল )
পুস্পিতা আখি দারুন লাগ্ল গল্পটি.........।।
ধন্যবাদ। যদিও টাইপিং এর কারনে ছোটোখাটো ভুল ছিলো, তবুও পড়েছেন।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী অনেক অনেক ভালো লাগলো দাদা..... শুভকামনা, ভোট ও আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো।
জয় শর্মা (আকিঞ্চন) গল্প ভালো লাগলো! আরো খোলামেলা হতে পারতো হয়ত...
রুহুল আমীন রাজু ....jak, rorke bohodur.....golper thim besh sundor. banan anek somoy transferer karoneo hoe thake. smane asha kori sobay sojag thakben.( amar patay amontron roilo.)
তৌকির হোসেন নগ্নতার সাথে কী সম্পর্ক?
সেই দিন থেকে আলোকের মনের সকল নগ্নতা ধুয়ে মুছে গিয়েছিল।

১৭ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪