অশ্রুজল

ঐশ্বরিক (মার্চ ২০১৭)

বাঘিনী
  • ৩৩
সকাল ১১টা ৩৮, ফারিন ফোনে সময় দেখল। শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে এই মূহুর্তে ফারিনের আর কিছু করার নেই বললেই চলে। আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে। শাহবাগ মোড়েই মনে হচ্ছে সবচেয়ে বড় আয়োজন। সবাইকে যেনো বলে দেওয়া হয়েছে আজকে লাল ছাড়া অন্য কোনো রঙ ছোঁয়াও যাবেনা। সত্যি কথা বলতে ফারিন নিজেও লাল রঙের শাড়ি পড়েছে। যদিও তার গায়ের রঙ এতোটা ফর্সা নয়, তারপরও অনায়াসেই বলে দেওয়া যায় ফারিনকে খুব সুন্দর লাগছে। চোখে হাল্কা কাজল দিতে বরাবরি ভালো লাগে ফারিনের। সবসময় এতেই সে অভ্যস্ত আর তাকে মানায়ও হাল্কা কাজল এ। একবার চাচাতো বোনের বিয়েতে পার্লার এ সাজতে গিয়েছিল ফারিন। সাজের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য পার্লারের মেয়েটা ফারিনের চোখে মোটা করে কাজল দিয়ে দিয়েছিল। ফারিনের কাছে নিজেকে দেখতে কাকতাড়ুয়ার মতো লেগেছিল। মনে হচ্ছিল সবাই যেনো ভয় পাচ্ছে। সেই থেকে ফারিন আর কখনো ভুল করেও মোটা করে কাজল দেয় না। ফারিন একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করছে। আজ অফিসে যায়নি। ছুটি নিয়েছে। ফারিনের শাহবাগ আসার তেমন বিশেষ কোনো কারণ নেই। তারপরও এসেছে।
ফারিন ব্যাগের মাঝপকেট থেকে ফোনটা বের করলো। ১১টা ৪০ বাজে। আজকে সময় কি খুব তাড়াতাড়ি কাটছে নাকি ধীরে, সেটা সে বুঝতে পারছেনা। এখন মনে হচ্ছে ছুটি নেওয়াটা ফারিনের সবচেয়ে বড় বোকামী হয়েছে। সময় কাটানো হোক কিংবা অন্যকোনো কারণেই হোক, ফারিন সামনের দিকে হেঁটে একটা ফুলের দোকানে ঢুকলো। দোকানের বাইরের দিকটায় বিভিন্ন ফুলের মালা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আর ভিতরের দিকটায় বিভিন্ন ফুলের তোড়া স্তরে স্তরে সাজানো। ফারিন কি কিনবে তা বুঝতে পারলো না। আজকে ফুলের দোকানে অনেক বেশি ভিড় মনে হচ্ছে। ভ্যালন্টাইনস ডে তে ফুলের দোকানে ভিড় থাকবে সেটাই স্বাভাবিক, তবে ফারিনের বিরক্ত লাগছে। বিভিন্ন ফুল দিয়ে বানানো একটা তোড়া খুব পছন্দ হলো ফারিনের। কিনতে যাবে এমন সময় পাশের একটা ছেলে আর একটা মেয়ের দিকে খেয়াল হলো তার।মেয়েটার হাতে অনেকগুলো লাল গোলাপ আর ছেলেটা দোকানের গোলাপ রাখার জায়গা থেকে তার পছন্দ মতো গোলাপ তুলে মেয়েটার হাতে দিচ্ছে। দুজনের মুখেই হাসি। যেনো এটা তাদের কোনো খেলা, যেটা সদ্যই আবিষ্কৃত হয়েছে। ছেলেটা আরেকটা গোলাপ তুলে মেয়েটার হাতে দিল। ফারিন একটু অবাক হয়েই ওদের খেলা দেখছে। মেয়েটা গোলাপ গুনতে গুনতে ছেলেটাকে বলল, “৭,৮,৯…১৫টা গোলাপ হয়ে গেছে। আর লাগবেনা। হিহিহি।” ছেলেটাও খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে মেয়েটার হাত ধরে গোলাপের দাম দিতে গেলো। ফারিন একবার দোকানে সাজিয়ে রাখা গোলাপগুলোর দিকে তাকালো আরেকবার মেয়েটার হাতের গোলাপগুলোর দিকে। ফুলগুলো একই কিন্তু দুটোর যেনো আলাদা সৌন্দর্য। ফারিন ফুলের তোড়াটা নামিয়ে রেখে ৩টা গোলাপ কিনে দোকান থেকে বের হলো।
নিজের কেনা গোলাপগুলো দেখে ফারিনের ফাহিমের কথা খুব মনে পড়ছে। প্রকাশ ফারিনকে সবসময় ৩টা গোলাপ একসাথে দিত।ফারিন যতোবারই জানতে চাইতো ততবার ই বলত
“দুইটার সাথে একটা ফ্রী।”
প্রকাশ ফারিনের খুব ভালো বন্ধু ছিল। ঝগড়া-মারামারি-ভালোবাসা কোনোটারই কমতি ছিলনা। প্রকাশ আর ফারিন একি ভার্সিটিতে পড়তো। ফারিন পুরনো সৃতিগুলো মনে করতে করতে হাঁটতে লাগলো। এমন তো হওয়ার কথা না। আশেপাশের যারা আছে সবাই জোড়া জোড়া হাঁটছে। ফারিনের খুব একা লাগছে। কে ই বা ভেবেছিল ফারিনের জীবনটা এমন হবে। ৩টা গোলাপ ফারিনকে একা কিনতে হবে একদিন।ফারিনের হাতের ব্রেসলেটটা ফাহিমের দেওয়া। ফারিন আর ফাহিমের জন্মদিন একই দিনে। প্রথম যেবার ওদের জন্মদিন একসাথে সেলিব্রেট করার সুযোগ এসেছিল তখন ফারিন প্রকাশকে একটা ঘড়ি আর প্রকাশ ফারিনকে এই ব্রেসলেটটা দিয়েছিল। ওরা সবসময় দেখা করতো একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে। গাছের নিচটা অনেকটা বাঁধাই করার মতো, বসা যায়। ফোনে ফারিন অনেক কথা বলত কিন্তু সামনাসামনি প্রকাশ ই বেশি কথা বলত। কেন জানি ফারিন এখন ফাহিমের অভাব অনুভব করছে খুব। মন খারাপ করে হাঁটতে লাগলো। একটু এগিয়ে ফারিন সামনে একটা গাছের নিচে বসল।খুব সুন্দর গাছ। ফারিন গাছ তেমন চিনে না। তবে এটা শিমুল্ গাছ ফারিন জানে। হাতেগোনা কয়েকটা গাছ ফারিন চিনে যার মধ্যে ভাগ্যক্রমে এই শিমুল গাছ আছে। পাশে তাকাতেই ফারিন দেখল একটা ছেলে হাঁটুগেড়ে বসে তার সামনে এক মেয়েকে তার ভালোলাগার কথা বলছে। যদিও ছেলে ও মেয়ে দুইজনই কিছুটা দূরে,তাদের কথা শোনা যাচ্ছে না কিন্তু অঙ্গ-ভঙ্গি দেখে বোঝা যায় এটা প্রোপোজাল। ছেলেটার মতো ফারিনেরও খুব আগ্রহ লাগছে মেয়েটা কি জবাব দেয় তা শোনার জন্য। মেয়েটার হাসিমুখ দেখেই বুঝা গেল উত্তর “হ্যাঁ”। ফারিনও নিজের অজান্তে মুঁচকী হাসি দিয়ে অন্যদিকে তাকালো।প্রকাশ ও ঠিক একইভাবে ফারিনকে প্রপোজ করেছিল তবে বরাবরের মতো ৩টা গোলাপ না, ৯টা গোলাপ দিয়ে। ৯ সংখ্যাটা ওদের দুইজনেরই খুব প্রিয় ছিল।ফারিনও হাসতে হাসতে ফাহিমের এর প্রপোসালের জবাব দিয়েছিল “ইয়েস”। স্মৃতিগুলো মনে করতেই ফারিনের চোখের কোণে পানি জমছে। কাজলে ঢাকা ডান চোখ থেকে টপ করে এক ফোঁটা পানি ফারিনের হাতে থাকা গোলাপে পড়ল। তখনই হঠাৎ ফোনের রিংটন বেজে উঠলো। ফারিন ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো “প্রকাশ” লেখা নাম তার স্ক্রিনে ভেসে উঠছে। ফোন ধরল ফারিন।
“হ্যালো।”
“হ্যালো, ফারিন তুমি কি বের হয়েছো?”
“প্রকাশ, আমি তো একটু শাহবাগ এসেছি।কেন কী হয়েছে?”
“শাহবাগ? আমিও আসছি তাহলে। নাহ কিছু হয়নি। আজকে একসাথে দুপুরে খাব দেখে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। ভেবে ছিলাম তোমাকে সারপ্রাইস দিব। কিন্তু বাসায় এসে দেখি তুমি নেই।।”
“হাহাহা। ফোন দিয়ে আসতা। আমি তো জানি তুমি দুপুরে আসবেনা।”
“বিয়ের পর কতদিন হয় তোমাকে সারপ্রাইস দেওয়া হয় না। বিয়ের পর থেকে সব সারপ্রাইজ তুমি দাও, তাই ভেবেছিলাম আজ সব উসুল করবো।যা হোক, তুমি থাকো আমি আসছি।”
“আচ্ছা আসো। আমি চারুকলার পাশেই আছি।”
এই বলে ফারিন ফোন রেখে দিল। আসলেই কে ই বা ভেবেছিল প্রকাশই হবে ফারিনের সারা জীবনের বন্ধু। ফারিন উঠে দাঁড়ালো, শিমুল গাছটা এখনো আগের মতই আছে, যেমনটা আছে তাদের ভালবাসা। এই গাছের নিচে ফাহিমের হাত ধরেছিল সারাজীবনের জন্য, আজ তার জন্যই ৩ টা গোলাপ নিয়ে ফারিন বসে আছে। প্রকাশকে আরেকটা সারপ্রাইজ দিবে বলে... *
*(উল্লেখ্য, সাইকোলজিতে বলা হয়ে থাকে ডান চোখ থেকে যদি কান্নার জলের প্রথম ফোঁটা পড়ে তাহলে সেটি কষ্টের নয়, আনন্দের অশ্রু। ফারিনের ক্ষেত্রে প্রতিবারই সাইকোলোজিটা খেটে যায়)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ভূবন khub valo laglo, amar kobita porar jonno amontran roilo....
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী অন্যের গল্প কবিতা গুলো একটু পড়তে চেষ্টা করুন। ভালো লাগার উপরে ভিত্তি করে তাকে মন্তব্য করুন এবং ভোট দিন। দেখবেন নিজের লেখার মান বাড়বে এবং এক সময় তরুন প্রজন্মকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারবেন। শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ, এই গল্পটি আসলে হুট করে লিখা
কাজী জাহাঙ্গীর গল্প লেখার ধাচ ঠিক আছে, কিন্তু ‍বিষয়টা এখনো দুরে। গল্পে কোন ঐশ্বরিকতা খুজে পেলাম না। বুঝলাম না একবার ফাহিম একবার প্রকাশ এরকম হল কেন, শুধু ফাহিম বা শুধু প্রকাশ লিখে কি ইতে টানা যেত না। যাক পাঠক আর লেখকের ভাবনা এক নাও হতে পারে। অনেক শুভ কামনা আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
দুঃখিত। "প্রকাশ" নামটা দিয়ে লিকাহ শুরু করেছিলাম। ফাহিম নামটা দেওয়ার পর এই প্রকাশ এর জায়গাটা আর মোছা হয়নি। তাই গল্পটা এলো মেলো হয়ে গেছে :(
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী দারুন লিখেছেন। পুরটা পড়ে খুব ভাল লাগলো। অনেক শুভকামনা আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো।

০৫ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪