রোজ ভোরে একটা কাক আমার জানলায়-বেলকনীতে ডাকাডাকি করে। আমার ঘুম ভাঙিয়ে উড়ে যায়! অসহ্য; মাঝে মাঝে "আজ তোকে দেখে ছাড়ব"- ধরনের ইচেছ হয়! এক বিকেলে বেরোলাম বজ্জাতটাকে দুনিয়া ছাড়া করার উদ্দেশ্যে! ওর বাসাটা আগে থেকেই চেনা- বাগানে ঢুকে ডান দিকের বড় আম গাছের ডগা। পৌছেই হামলা- প্রথম ঢিলটি বাসায় না লাগলেও নিকটেই লাগল! বাসা থেকে একটি কোকিল উড়াল দিল। আমি সন্দিহান হয়ে পড়লাম! সন্দেহ দূর হল ওর 'উড়ালাগমন' দেখে। উড়ে এসে আপন নীড়ে বসেছে! সময় নষ্ট না করে আবার ঢিল। এবার লক্ষ্য ভেদ হল- কাক উড়ে গেল, বাসা নিচে পড়ে গেল। আমি ডান পা দিয়ে বাসাটি মাটিতে পিষে ফেললাম! ভিতরে ডিম থাকায় জুতাটা সামান্য ভিজে গেল।
চারদিকে চোখ বোলাতে লাগলাম। আশ্চর্য! শত্রু আমার মাত্র দুহাত সামনে। ওর প্রায় নিশ্চিহ্ন বাসাটার কাছে। হাতে ঢিল ছিল, ছুড়ে মারলাম। পায়ের উপরিভাগে লাগল। উড়তে না পেরে চিৎকার শুরু করল। আবার ঢিল ছুড়লাম, স্তব্ধ হয়ে গেল। আমি সফল!
স্থির হয়ে এখনো দাড়াতে পারি নি, এরমধ্যেই মাথার উপর কয়েক ডজন কাকের ঘন চক্কর আর বিকট চিৎকার শুরু হয়ে গেছে। ভয়ংকর অবস্থা! এখানে থাকা মোটেও নিরাপদ নয়। ২ দুদিন পরের প্রভাত- কা..কা.. শুনে ঘুম ভাঙল। উঠে দেখলাম- একটা লেংড়া কাক আমার জানালায়! আমাকে উঠতে দেখে অনেক কষ্ট করে উড়ে গেল!
৩ বোবা, বিবেকহীন একটি কাক, প্রতিদিন একই সময়ে একই যায়গায় কিভাবে আসতে পারে? ওর কাছে কি কোন ঘড়ি আছে? আল্লাহ কি ওকে সময় সচেতনার কোনো জ্ঞান দান করেছেন? হয়ত! না হলে..... টুং টুং......। স্কুলের ঘণ্টি বেজে উঠলো। দ্বিতীয় পিরিয়ড শেষ! কীভাবে যে দুটি ক্লাস শেষ হয়ে গেল- বুঝতেই পারলাম না। ভাবনার ঘোরে ছিলাম। অজ্ঞাত কোনো এক কারণে সিদ্ধান্ত নিলাম- আজ আর ক্লাস করব না। বাসায় গিয়ে ঘুমাবো; স্যারকে ফাঁকি দিয়ে ক্লাস, আর দারোয়ানকে ফাঁকি দিয়ে স্কুল ছাড়লাম! গ্রামের পিচঢালা পথ ধরে হাটছি। সঙ্গত কারণেই আমি একা। হঠাৎ একঝাক কাকের সন্মিলিত চেচানি কানটাকে অস্থির করে তুলল! চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে আবিষ্কার করলাম- কয়েক গজ সামনে পথের সামান্য ঢালুতে প্রায় এক ডজন বড় বড় কাক মিলে একটি ছোট 'মরামাছ' বেষ্টন করে আছে। সিংহভাগ সদস্য খাচ্ছে, বাকিরা দাড়িয়ে থেকে অন্যদের সুযোগ করে দিচ্ছে! বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম তো আসছে না। মাথার মধ্যে শুধু কাক আর কা..কা.!....। এভাবে আর কিছুদিন চললে, নির্ঘাত; আমি কাকবিজ্ঞানী হয়ে যাব! ৪ ঘড়ির কাটা আর ক্যালেন্ডারের পাতার সাথে সাথে আমার মনেরও পরিবর্তন হল। আগে কাকের ডাক শুনলেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যেতো। এখন ঘড়ির এলার্মের চেয়ে কাকের ডাকই বেশি ভাল লাগে। মনে হয় প্রভাত-প্রকৃতির ছোঁয়া! এখন দিনে কয়েকবার কাকটি আমার জানালা-বেলকনিতে উঁকি দেয়; মাঝেমধ্যে লাঞ্চের সময়ে উপস্থিত হয়। আগে ঢিল ছুড়ে তাড়িয়ে দিতাম, এখন খাবার দিয়ে কাছে ডাকি! আমি ওর একটা নাম ও রেখেছি- শুভ্র! এখন শুভ্র আমাকে জাগাতে পারে না; আমি আগে আগে জেগে ওর জন্য অপেক্ষা করি! নির্দিষ্ট সময়ে ওকে দেখতে না পেলে মনের মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এটাকে কী বলব? ভাললাগা না ভালবাসা, বন্ধুত্ব্ব না সহমর্মিতা?!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
গোবিন্দ বীন
ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম ।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।