আমার ক্ষীণ আশা ছিল পারুলকে দেখব। মামুনের কাছে শুনেছি পারুল আজ তার বরকে নিয়ে বেরুবে। নিউমার্কেট মোড়ে অনেকক্ষন দাড়িয়ে রইলাম একা একা। চোখে জল আসবার মত কষ্ট হল। অনেকদিন পারুলকে দেখিনা। পারুলের সাথে আমার সম্পর্ক অল্পদিনের। একবার আমার বন্ধূ মামুন আমাকে কি মনে করে বলল- “তোকে একটা নাম্বার দেই তুই ফাও ফোন কর”। কৌতুহলবশত ফোন করে পারুলকে অনেক কিছু বলে ভড়কে দিলাম। এরপর কেবল অকারণেই পারুলকে অসংখ্যবার বিরক্ত করেছি। তখন খুব মজা পেতাম এই কাজটায়। একটা সময় কাজটা আপনিতেই বন্ধ হয়ে গেল। এর অনেক অনেক দিন পর একবার একটা নাম্বারে টিপতে গিয়ে ভুলে পারুলের নাম্বারে পড়ে গেল। অথচ এতবার বিরক্তের পরে ও সেবার পারুল আমার সাথে বেশ ভালই আচরণ করল। পারুলের সহজ-সরল ব্যবহার ও চমৎকার কণ্ঠস্বর শুনে খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম। আমি কিছু না বললে ও পারুলের জোরের মুখে ওর সাথে দেখা করলাম। যতবারই ওকে দেখি ততবারই বিস্মিত হই। একজন অচেনা-অজানা মানুষ যার নাম এবং ফোন নাম্বার ছাড়া সে কিছুই জানেনা তাকে কেউ এত আপন করে নেয় ? পারুল আসলেই অন্যরকম। একবার কি মনে করে ওকে বললাম-“পারুল তুমি কি একবার নীল শাড়ী পরে আমার সামনে আসবে?” বলেই আমার কান ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল। কিন্তু কত সহজেই না সেবার সে আমায় বলল “ অবশ্যই। বল কখন দেখতে চাও ?” পারুলকে নিয়ে আমি অন্য কিছু ভাবতে লাগলাম। ঘুমোতে গেলেই পারুলকে স্বপ্নে দেখি। একবার দেখলাম পারুল আর আমি দৌড়চ্ছি। অনেকদূর আসার পর একটা অচেনা জায়গায় এসে পারুল আমায় বলল- “এই ছেলে- তুমি কি জান যে আমি মারা গেছি?” আমি পারুলের দুহাত চেপে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। ঘুম ভেঙে দেখি আমি তখনো কাঁদছি। একবার পারুলের কাছ থেকে আনা বইয়ের ভেতর থেকে একটা পাখির পালক পড়ে গেল। আমি কুড়িয়ে নিয়ে এলাম। পালকটির রঙ লালচে সাদা। যতবারই পালকটি আমি ছুঁই ততবারই গা শিরশির করে উঠে। পালকে পারুলের স্পর্শ লেগে আছে ভাবতেই কেমন জানি মনে হয়। বুঝেই গেলাম পারুলকে আমি ভালবেসে ফেলেছি। চিন্তা করলাম যে করেই হোক পারুলকে “ভালবাসি” কথাটা বলবোই। ফোন করলাম, কিন্তু হাজারো চেষ্টাতে ও পারুলকে কেন জানি বলতে পারলাম না। ঠিক করলাম পরেরদিন বিকেলে বলবো। কিন্তু পুরো ২ ঘণ্টা দুজন একসাথে কাটিয়েও ওকে বলতে পারিনি। বারবার একটা কথাই কেবল মনে হত- পারুল অনেক বড়লোকের একমাত্র মেয়ে আর আমার পৃথিবীতে বাবা-মা এমনকি নিজের বলার মত কোন জায়গা-জমি ও নেই যেখানে পারুলকে নিয়ে সুখের সংসার গড়বো। টিউশনি আর পার্টটাইম চাকুরী করে নিজেকে চালাই। আমার মত হতভাগার আবার পারুলের মত মেয়েকে ভালবাসার স্বপ্ন দেখা ! তারপরেও মনের অস্ফুট স্পন্দন থামাতে পারিনা। তীব্র ভালোবাসা কাকে বলে বুঝতে পারি সেদিনই যেদিন পারুল আমাকে না জানিয়ে হঠাৎ করেই সিলেট চলে যায়। পারুলকে ফোনে না পেয়ে আমি পুরোপুরি দিশেহারা হয়ে যাই। অগোছালো দিন সঙ্গে নিয়ে পাগলের মত ঘুরতে থাকি পুরোটা সময়। খাওয়া, ক্লাস, টিউশনি সবকিছুতেই ছেদ পড়ে। ভেঙে পড়ে শরীর আর তাতেই আবিষ্কার করি আমার পুরোটা জুড়ে পারুলের অস্তিত্ব। প্রায় ১৬ দিন পরে পারুল যেদিন ঢাকা এসে আমায় ফোন করে আমি তখন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বেডে। প্রচন্ড জ্বর নিয়ে ভর্তির ৪ দিনের মাথায় পারুল আমাকে দেখতে আসে। অনেকটা হতবাক আর শূণ্য দৃষ্টিমাখা পারুলের দুটি চোখে অল্প অশ্রু বিন্দু দেখে কেন জানি আমি আমার ছবি দেখতে পাই। কিন্তু আমার অনুমান কিংবা স্পর্শের বাইরের কিছু আমাকে বাস্তবতার মুখোমুখি করে যখন পারুলের পাঠানো একটি সাদা খাম পাই যার উপরে লেখা- ফাহিম (তোমার জন্য)। বুভূক্ষের মত খামের মুখ ছিড়ে দেখি পারুলের বিয়ের কার্ড। সৌদি প্রবাসী জনৈক ব্যবসায়ীর সাথে পারুলের বিয়ে। পারুলের বিয়েতে আমি যাইনি। অথচ বিয়ের আগেরদিন মনে মনে ঠিক করেছিলাম পারুলকে শুধু একটি বারের জন্য হলেও দেখতে যাব। কিন্তু যাইনি। পারুল আমাকে বিয়ের দিনই ফোন করে বলল-“ ফাহিম- আমি নীল শাড়ী পড়েছি। তোমার খুব প্রিয় রংয়ের শাড়ী। তুমি কি সত্যিই আমাকে দেখতে আসবেনা ? ” অনেকদিন পর পাগলের মত হাউমাউ করে কাঁদলাম। পাশের রুমের আনিস সাহেব আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন- “ভাইসাহেব মনটা শক্ত করেন। দয়ালের উপর ভরসা রাখেন। তিনিই সব।” মাঝে মাঝে প্রচন্ড বৃষ্টির রাতে ঘুম ভেঙে যায়। মনে হয় কেউ একজন খুব জোরে দরজা ধাক্কায় আর আমি দরজা খুলে দেখি পারুল। পারুল আমায় বলে যায়-’এমন রাতে তুমি ঘুমাও কি করে?’ আমার হাত ধরে সে বৃষ্টিতে নেমে পড়ে। আমি পারুলকে নিয়ে কল্পনার বৃষ্টিতে ভিজতে থাকি আর অবাক হয়ে দেখি বৃষ্টির রং গাঢ় নীল আর পারুলের পরনেও নীল রঙের শাড়ী। আমার নীলপরী পারুল পাগলের মত ভিজতে থাকে সেই নীল রঙের বৃষ্টিতে আর আমি অবাক হয়ে আমার নীল পরীর দিকে তাকিয়ে থাকি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।