অবশেষে লাশ

ঐশ্বরিক (মার্চ ২০১৭)

আমিনুল ইসলাম
  • ১০
(১)
বাবা আমার কোন দোষ নেই!
বাবা আমার কোন দোষ নেই!আমাকে ছেড়ে দিতে বল।
ছেলের তীক্ষ্ণ চিৎকারেও আফজাল সাহেব পাথরের মুর্তির মত হয়ে দাড়িয়ে আছে।কিছুই বলছে না।আফজাল সাহেব তার ছেলেকে খুব ভালবাসে।নিজের জীবনের থেকেও বেশি।আর আজ সেই ছেলেকেই পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে।আফজাল সাহেবের ভেতরে ভেতরে জ্বালা করলেও।সে নিষ্টুরের মত একটুও প্রকাশ করছে না।আফজাল সাহেব নিজেই বুঝতে পারছে না।কি করে সে এতটা পাথর হয়ে আছে।কলিজার টুকরাকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে তবুও সে কিছুই বলছে না।
আদরের ছেলে সোহান বাবু।সোহানের সবসময়ের সুখের সাথী আফজাল সাহেব।কিন্তু আজ দুঃখের সাথীও কি আফজাল সাহেব হবে?
পাঠকের মনে এসব প্রশ্ন আসতেই পারে।এখানে দোষের কিছু নাই।
পাঠকের মনে এ প্রশ্নও ঘোরাঘুরী করছে যে,
সোহান বাবুর দোষটাই বা কি?কেনইবা তাকে পুলিশের কাছে তার বাবা পাঠিয়ে দিচ্ছে......
তাহলে শুনোন,
সোহান বাবু অষ্টম শ্রেনীতে পড়াশোনা করে।বয়স কতই আর হবে ১৫/১৬ এর ফাঁক দিয়ে হয়তো।গাঁয়ে গতরে ভালোই দেখতে হয়েছে।দেখতে দুলদুলে তুলতুলে নাদুসনোদুস দেহ।সবাই সোহান না ডেকে।বাবু বলে ডাকে।
বাবার কাছে শখ করে যে জিনিসটা চায়।তার বাবা আফজাল সাহেব তা পূরন করার চেষ্টা করে।
আফজাল সাহেব সিরাজগঞ্জ শহরের মধ্যবৃত্ত পরিবারের কর্তা।সিরাজগন্জ সরকারি কলেজের কেরানি পোস্টে তার চাকুরী।সামন্য বেতনের চাকুরী।
তবুও তাদের দিনপথ ভালোই চলে যায়।
বাবু ক্রিকেট খেলা খুব পছন্দ করে।টিভিতে বাংলাদেশের খেলা থাকলে। তাকে কেও সেই খেলার আসর থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেনা।এমন নেশা এই খেলাটার উপর।আফজাল সাহেব বাবুর এসব পাগলামীকে প্রশ্রয় দিত।তার কাছে বাবুর এসব পাগলামী বেশ ভালোই লাগতো।কিন্তু এসবে তার স্ত্রী নুরনাহার বেগম একটু কটুর কটুর করতো।বাবুকে বকতো।মা বকলে দৌঁড়ে গিয়ে বাবার কাছে যেত।অষ্টম শ্রেনীতে পড়লে কি হবে?আফজাল সাহেবের প্রশ্রয়ে, ভালবাসায় বাবুর স্বভাব প্রায় বাচ্চাকাচ্চাদের মতই আছে।তাই মা বকলে বাবার কাছে গিয়ে পালায়।

আফজাল সাহেবের সুখের সংসার।ভালোই চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু আজ তাকে সেই আদরের ছেলে,বুকের মানিককে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।কারন সোহান বাবু তার আম্মুকে হত্যা করেছে।

এই ত এখনি পুলিশের ভ্যানে সোহান বাবুকে পুলিশগুলো তুললো।
গাড়ি চলতে শুরু করলো।
আফজাল সাহেব আর চুপ করে থাকতে পারলো না।
হু হু করে কাঁন্না করে দিল।
চাপা কষ্ট সব বাহির করতে শুরু করে দিল।।।

(২)
আফজাল সাহেবের জন্ম পল্লীতে।
যে পল্লীতে এখনো চড়ই পাখি ডাকে।দোয়েল পাখি বাঁশের আড়ালে উঁকি দেয়।শালিক,ফিঙ্গে মাঠের মাঝে খেলা করে।
তার গ্রামের নাম পাহাড়তলি।গ্রামের নাম পাহাড়তলি হলেও সেখানে পাহাড়ের ক্ষয়প্রাপ্ত ঢিবে পর্যন্ত নেই।চলনবিলের কাছেই তাড়াশ উপজেলায় পল্লী গ্রামটা।গ্রামের মানুষগুলো একদম সাদাসিদে।সহজ সরল।তাদের জীবন ব্যবস্থাও সহজ সরল।
আফজাল সাহেব বাবার একমাত্র সন্তান। তার বাবারও কোন ভাই ছিল না।তবে একটা বোন ছিল।আফজাল সাহেবের ফুফু দেখতে ভিশন মায়াবী ছিল।ছোটতে পরীর বাচ্চার মত দেখতে লাগতো।
পল্লীতে এত সুন্দর মেয়ে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সেই পরীটার অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়।বিয়ে হয়ে যায় বললে ভূল হবে।কারন তখন অল্প বয়সের মেয়েদেরকেই বিয়ে দেয়া হত।আফজালকে তার ফুফু খুব ভাল বাসতো।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সন্তান জন্মদানকালে তার ফুফু মারা যায়।তাই তার বংশের মানুষজন খুঁজে পাওয়া যায় না।তার পরিবারে সে, তার বাবা ও মা।এ কজনের সংসার।তার দাদাদাদি তো অনেক আগেই মারা গিয়েছে।

শীতের সকালে স্কুলে পড়তে যেতো ধানের আইল ধরে ধরে।
সে আইলের উপরে দুর্বা ঘাঁসের উপরে শিশির পরে থাকতো।
সে শিশির দেখতে হিরোর মত লাগতো।সেই দুর্বা ঘাসের শিতল শিশির আফজালের পায়ে এসে পরতো।আর আফজাল তখন শিউরে উঠতো।দৌড়ে দৌড়ে স্কুলে চলে যেত।এভাবেই তার শিক্ষাজীবন পাড়ি দেয় আফজাল সাহেব।ছিল না কোন সঙ্গী।১৯৯০ সালে
আইয়ে পাশ করে।তারপর সরকারী কলেজে কেরানীর চাকুরীটা পায়।
চাকুরী পাবার এক মাসের মধ্যে আফজাল সাহেবের বিয়ে হয়ে যায়।নুরনাহার নামক মেয়ের সাথে।বিয়ের আগে শুধু নুরনাহারের একখানা তসবি দেখেছিল।ছবিতে নুরনাহারকে বেশ ভালোই লেগেছি।সে সময় বর কনের কোন মতামত নেওয়া হত না।তাই আফজালের পছন্দ না হলেও নুরনাহারকেই বিয়ে করতে হবে।আফজাল সাহেবের চেয়ে কমপক্ষে সাত আট বছরের ছোট নুরনাহার নামক মেয়েটা।বিয়ের পরে বউকে নিয়ে আফজাল সাহেব সিরাজগঞ্জের ছোট্র শহরে চলে আসে।এর
একবছরের মধ্যে আফজালের বাবা মা মারা যায়।
তাই গ্রামের যে অল্প কিছু জমিজমা ছিল তা বিক্রি করে শহরে কয়েক কাটা জমি কেনে।
তাদের সংসারে তিন চার বছরের মধ্যে একজন নতুন অতিথি আসে।আর সেই নতুন অতিথি হলো সোহান বাবু।
দেখতে দেখতে সোহান বাবু বড় হতে থাকে।

আফজাল সাহেবের কলিগ।প্রায়ই তার বাড়িতে আড্ডা দিতে চলে আসতো।জমিয়ে তারা আড্ডা দিতো।নুরনাহার বেগম ছিল আধুনিক মনোগত। আধুনিকতাকে নিজের পাজরে গুঁজে রাখতো।
ষলো বছরের ছেমড়িদের মত সাঁজগোজ করে সব সময় থাকতো।
যদিও আফজাল সাহেব এসব মোটেই এসব পছন্দ করতো।
আফজাল সাহেবের পক্ষে নুরনাহার বেগমের শত আবদার পূরন করা সম্ভব হত না।তবুও তা পুরন করার চেষ্টা করতো।
আফজাল সাহেবের কলিগ মাঝে মাঝেই আসতো।আফজাল সাহেব বাসায় থাকলেও আসতো।না থাকলেও আসতো।
ইদানিং আফজাল সাহেব লক্ষ্য করে,তার কলিগ রহিম
তার বাড়িতে বেশি যাওয়া আসা করে যাচ্ছে।প্রায়ই নুরনাহারের জন্য গিফট নিয়ে আসে।নুরনাহার বেগম আফজালের কলিগের সাথে খিলখিলিয়ে হেঁসে হেঁসে আড্ডা দেয়।তাদের মাঝে একটু কেমন কেমন ভাব লক্ষ্য করা যায়।।আফজাল সাহেব এসব দেখেও কিছু বলতে পারতো না।অনেক গিফট দিত নুরনাহার বেগমকে।একদিন শাড়ি তো অন্যদিন দামি অন্য কোন জিনিস।
আর তাতেই নুরনাহার বেগম বেশি গোলিয়ে যেতো।ধীরে ধীরে তাদের মেলামেশা চলাফেরা আরো বেশি চলতে থাকে।


আফজাল সাহেব সেদিন শহরের অন্য পাশে এক দুরস্পর্কের আত্বীয়ের বাড়িতে একটা কাজে চলে যায়।যাবার সময় বলে গেছে আসতে তার রাত হবে।
সেদিন বিকালে সোহাগবাবু বাসার পাশের হাই স্কুল মাঠে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল।সন্ধ্যার আগেই তাদের খেলার আসর ভেঙ্গে যায়।তাই সোহাগ ধীরে ধীরে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে বাসায় চলে আসে।
সোহাগ বাসায় ফিরে যে বিষয়টা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না।
সেটাই দেখে ফেলে।রহিমকে তার মায়ের সাথে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে ফেলে।সোহাগের মাথায় রক্ত উঠে যায়।মুহুর্তের মধ্যে যেন তার তার মাথাটা উলোট পালোট হয়ে যায়।সবকিছু আধার দেখায়।
প্রচন্ড রাগের মুহুর্তে একজন মানুষ কি করবে তা বুঝতে পারে না।
সোহাগেরও সে অবস্থা হয়।
ফলে তার রাগের ছিটেফোটা ঝেরে ফেলার জন্য রহিমের দিকে হাতের ব্যাট নিয়ে দৌড়ে যায়।হাতের ব্যাট দিয়ে কোষে একটা মারে রহিমের দিকে।
রহিম সেস্থান থেকে সরতেই ব্যাটের প্রচন্ড আঘাত লাগে সোহাগের মায়ের উপর।কেননা রহিমের নিচেই নুরনাহার ছিল।
রহিম দ্রুত সেখান থেকে পোলায়ন করে।
আর এ দিকে সোহাগ হাত থেকে ব্যাট ফেলে মাকে জড়িয়ো ধরে কাঁদতে থাকে।
তার কান্নার উচ্চ শব্দে পাশের ফ্লাটের মানুষজন চলে আসে।
এবং দেখতে পায় মারাত্মক এ কর্মকান্ড।মাকে জড়িয়ে ধরে ছেলে কান্না করছে।আফজাল সাহেবকে ফোন করা হয়।সে দ্রুত চলে আসে।পুলিশ চলে আসে।সোহাগকে ধরে নিয়ে যায়।
আফজাল সাহেব তা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখে।

(৩)
১২জানুয়ারী,২০১২।
দিনটাই সোহাগের খুনের রায় দিন।
বাংলাদেশ দন্ডবিধি ৩০২ নং ধারা অনুযায়ী
সোহাগ বাবুকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে।
আফজাল সাহেব আদালতের এ রায় শুনার পর।কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।কিন্তু
মৃত্যুর পিছনের ঘটনা কেউ জানে না।
সবাই শুধু এটুকু জানে যে সোহাগ তার মাকে খুন করেছে।

সোহাগ তার মায়ের আধা উলুঙ্গ শরীর খুব দ্রুত ঢেকে দিয়েছিল।যাতে কেউ বুঝতে না পারে।আসল ঘটনা।তাই ভেতরের খবর কেউ জানতে পারেনি।এমন কি আফজাল সাহেবও না।

আফজাল সাহেব সোহাগবাবুকে জেলখানায় দেখতে যায়।সোহাগ তার বাবাকে দেখেই কান্না জুড়ে দেয়।
আফজাল সাহেবও তার চোখের জলকে লুকিয়ে রাখতে পারেনা।
সেদিন সোহাগ তার বাবাকে সব খুলে বলে।ভেতরের গোপন কথাগুলো জানতে পেরে।খুব দ্রুত সেখান থেকে আফজাল সাহেব প্রস্থান করে।সেদিনের পর আর জেলখানায় আসেনি আফজাল সাহেব।আফজাল সাহেব ডিপ্রেশনে ভুকতে থাকে।
একদিকে আদরের সন্তান ও কলিজার টুকরার কারাবাসের কষ্ট।
অন্যদিকে প্রতারণাকারী স্ত্রীকে নিয়ে আক্ষেপ।
ধীরে ধীরে আফজাল সাহেব দুর্বল হয়ে যেতে থাকে।বছর দুয়েকের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।সে মৃত্যু সহজ মৃত্যু নয়।আত্বহত্যার মৃত্যু। মৃত্যুর পরে তাকে দাফন করার জন্য সোহাগকে নিয়ে আসা হয়।এরপর আবার তার বসবাস কারাগারেই হতে থাকে।

(৪)
বাবার মৃত্যুর পর থেকে তার আচারন একদম পাল্টে যায়।
জেলখানায় সাত বছর পার হয়ে গিয়েছে।
তার আচারন আরো ভয়ানক হয়ে উঠেছে।জেলখানায় তার আচারন ভযংকর টাইপের হয়ে যায়।
বিশেষ করে সেই কয়েদী কে দেখতে পারে না।যে কয়েদী ধর্ষন করে এবং মেরে ফেলার দায়ে জেলে ঢুকেছে।
সেই টাইপের কয়েদীকে খুব করে অত্যাচার করে।সোহাগ তাদের প্রতি বেশি ভয়ংকর হয়।তাকে দেখে সবাই ভয় পায়।তার এমন আচারনে জেলখানার দায়িত্বরত পুলিশেরা সর্বদা চিন্তিত থাকে।
রহমত চাচা নামের একজন জেলখানার পুলিশ আছে।যার কাছে সোহাগ তার জীবনের সব কথা খুলে বলেছে।জেলখানার প্রথম থেকেই রহমত চাচার সাথে সোহাগের ভাল সম্পর্ক।রহমত চাচার বাড়িতে আপন বলতে কেউ নেই।সবাই মারা গিয়েছে।তাই সোহাগের কষ্ট সে বোঝে।সোহাগও তার কষ্ট তাকে বলে মনটাকে হালকা করে।রহমত চাচা তাকে ভাল চোখে দেখে।তাই সোহাগকে বোঝায়,
সোহাগের আচারনের পরিবর্তন আনতে হবে।তিনি বলেন,তার খারাপ আচারনের জন্য তার কারাবাসের সময় বৃদ্ধি হতে পারে।কিন্তু তবুও সোহাগের পরিবর্তন দেখা যায় না।
।সবাইকে অর্ডার করতে সোহাগ পছন্দ করে।তার কথার বাহিরে কেউ গেলে তার সাথে মল্লযুদ্ব বেঁধে যায়।
সোহাগের দেহ বিশালাকার।সে দেহের শক্তির পরিমান অনেকবেশি।
তাই তার কথার বাহিরে কেউ যায় না।তার সবাই তোষামোদ করে।
সবকিছু তার অধীনে চলতে থাকে।

কিন্তু এসব কিছুর কিঞ্চিত পরিবর্তন দেখা দেয় হঠাৎ করে।
এর কারন জেলখানায় নতুন একজন কয়েদি এসেছে।সোহাগের
ব্যাপারে সে তেমন জানে না।কয়েদীকে সোহাগ দেখেছে।
ত্রিশ কি.. পঁয়ত্রিশ হবে হয়তো তার বয়স।দাড়ি মোছে পরিপুর্ন
তার মুখ।মোছ হালকা সাদা সাদা পাক ধরেছে।
সোহাগ শুনেছে লোকটা নাকি বড় ধরনের ডাকাত।বাক্কু ডাকাত নামে পরিচিত।এলাকার ভয়ংকর এক নাম বাক্কু ডাকাত।
ডাকাতি করতে গেয়ে সে বাড়ির যুবতী মেয়েকে দেখে
লালোষার দৃষ্টি দেয়।এবং পড়ে তাকে ধর্ষন করে। বাড়ির সবার সামনে এমন বিভৎস কর্মকান্ড করে।এবং মেরে ফেলে।অবশেষে সেই পরিবারের বাঁকি সদস্যরা যখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে চিৎকার দিয়ে ওঠে।তখন
বাড়ির আশেপাশের মানুষজন এসে ডাকাতকে ধরে ফেলে।
এবং পুলিশের কাছে অর্পণ করে।খুনের দায়ে তাকে
এরপর যাবতজীবন দন্ডপ্রাপ্ত হয়।
আর এখন সে জেলখানার বাসিন্দা।
সোহাগ তার কথার বিরুদ্ধে যাওয়াকে পছন্দ করে না।
কিন্তু সে বাক্কুকে কিছুই বলেনি।

সেদিন সকালে
সোহাগের কাজ পরে বাগান পরিস্কার করার।জেলখানার ভেতরের বাগান।জেলখানার মোটা মোঁছ ওলা লোকটার ও একই কাজ পরে।সেখানে সোহাগ একটা ফুল গাছে পানি দিচ্ছিল।তখন বাক্কু এসে সোহাগকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।আর বলে এ ফুল গাছে পানি দিতে হবে না।অন্যকাজ কর গিয়ে। সোহাগকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া দেখে আশেপাশের সবাই কাজ রেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকে।সবাই ঢোক গিলতে থাকে।যেন সবার গোলার পানি শুখিয়ে গেছে।এতে সোহাগ কিছু মনে না করে।সোজা হয়ে দাড়িয়ে আবার অন্য গাছে পানি দিতে থাকে।বাক্কু একই কাজের পুনরাবৃত্তি করে।
তাও সোহাগ কিছু বলে না।সোহাগ উঠে আবার গাছে পানি দিতে শুরু করে।তখন বাক্কু রেগে গিয়ে সোহাগকে বেশ্যার পোলা বলে গালি দেয়। তখন আর সোহাগ রাগকে ধরে রাখতে পারেনি।অনেক সময়ের পোষা রাগ বাক্কুর উপড়ে ঝারে।সোহাগের হাতে থাকা বস্তুটি দিয়ে সজোরে আঘাত করে।একটা নয় অনেকগুলো আঘাত করে।ফলে বাক্কুর অঙ্গান হয়ে যায়।বাক্কুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে বাক্কু হাসপাতালেই মারা যায়।
সোহাগকে আদালতে হাজির করা হয়।
এবার তাকে মৃত্যুদন্ডের রায় শুনানো হয়।
কেননা, দ-বিধির ৩০৩ ধারায়
বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দন্ডিত অবস্থায় খুন করে, তা হলে সে
ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবে।

মৃত্যুদন্ডের কথা শুনে সোহাগ একটুও বিচলিত হয়নি।সোহাগ হয়তো এটাই চেয়েছিল।তার দুনিয়ায় কেউ নেই।সবাই মৃত।
একমাত্র তার দেহটাতেই রক্ত মাংসে তাজা ছিল।তবে সে তো আগেই মারা গিয়েছে।একবার নয় অনেকবার মরেছে।

সে প্রথম মরেছে তখন, যখন তার মাকে অন্য পুরুষের সংঙ্গে দেখেছে।
সে দ্বিতীয়বার মরেছে তখন,যখন তার যাবতজীবন কারাদন্ডের কথা তাকে শুনানো হয়েছে।
সে তৃতীয়বার মরেছে তখন, যখন তার বাবা তাকে জেলখানায় দেখতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
সে চতুর্থবার মরেছে তখন,যখন জানতে পেরেছে তার বাবা আত্বহত্যা করেছে।।


আর এখন যে মৃত্যুদন্ডের রায় শুনানো হয়েছে।যে বিষয়টা সোহাগের কিছুই মনে হচ্ছে না।কারন এর আগেই কয়েকবার মরেছ সে।
দিনক্ষন ঠিক করে সোহাগকে
ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
অবশেষে মানুষ থেকে লাশে পরিনতি হয় যায়।
সোহাগ নাম ভুলে সবাই লাশ নামে ডাকতে থাকে।
যেমনটা তার মাকে বলেছিল সবাই।যেমনটা তার বাবাকে বলছিল সবাই।
আর এখন সে একটা লাশে রুপান্তরীত হয়েছে।
এই লাশের জন্য কাঁদার মত এই দুনিয়া আপন বলতে কেউ নেই।তবে আপনের চেয়েও কাছের একজন আছে।রহমত চাচা।
রহমত চাচার চোখের জল নিরবে ঝরে পড়ছে।
এই লাশকে কি করা হবে প্রশ্ন উঠলে,রহমত চাচা নিয়ে নিজের সন্তান হিসেবে দাফন করে।আর এভাবে একটা লাশ হয়ে সোহাগ তার জীবনের কালো অধ্যায় মুছে দেয়।
কঠিন জীবনের অবশান ঘটে।

কি নিষ্ঠুর এ পৃথিবী!
এখানে জীবনের কিছু কাল সুখে কাটে,আর কিছু কাল কষ্টে কাটে।
তবে চিরন্তন সত্য হিসেবে কষ্টের পাল্লা সবসময়েই ভারি হয়ে থাকে।


আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আল মোমিন ভালো লেখেছেন, শুভকামনা রইলো।
আমিনুল ইসলাম আপনাকে ধন্যবাদ।।ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।।
কাজী জাহাঙ্গীর চরিত্রটা শুরু করলেন সোহান বাবু দিয়ে আরে শেষে এসে সোহান হয়ে গেল সোহাগ. লেখকের অসতর্কতা এটা। বানান না হয় ভুল হতে পারে কিন্তু একটা কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম পাল্টে গেল সেটা লেখক ধরতে পারলেন না বুঝতে কষ্ট হয়। আর এখানে ঐশ্বরিক কিছু পাওয়া যায় নি যেটা নির্ধারিত বিষয় হিসেবে ধরে নেয়া যবে, তবুও লেখার চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। অনেক শুভ বামনা আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী অন্যের গল্প কবিতা গুলো একটু পড়তে চেষ্টা করুন। ভালো লাগার উপরে ভিত্তি করে তাকে মন্তব্য করুন এবং ভোট দিন। দেখবেন নিজের লেখার মান বাড়বে এবং এক সময় তরুন প্রজন্মকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারবেন। শুভকামনা রইলো।
আমিনুল ইসলাম মানুষের গল্প পড়ার ধৈর্য নেই।।
আমিনুল ইসলাম অসংখ্য ধন্যবাদ।দাদা।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী বিভিন্ন চরিত্রের সাথে গ্রামের চরিত্রটি বেশ ভাবে ফুটে তুলছেন। খুব ভালো লাগলো দাদা। শুভকামনা ও ভোট রইলো।

১১ ডিসেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪