হারানো চিঠি

অন্ধ (মার্চ ২০১৮)

কারিমুল ইসলাম
রিমি আর সিমি। দুইবোন। রোমাঞ্চটা যেখানে সেটা হল তারা যমজ, চেহারার সাথে এমন মিল যে খুব সহজে ধরা যায়না কে রিমি
আর কে সিমি। নিখিলের কেউ নেই চাচা চাচি ছাড়া। নিখিল আর রিমির প্রেমটা হয়েছিল অদ্ভুতভাবে। একটা ট্যুরে। গল্পটা এমনকিছুদিন
আগে থেকেই নিখিল রিমির বোন সিমির সাথে ভাব মারার চেষ্টা করছিল। ট্যুরেও চোখাচোখি হত। সিমি তেমন পাত্তা দিতনা।
কোন এক কিশোরের উদাস আবেগ নিয়ে চুরি করে লেখা চিঠি পড়ে থাকে নৌকায়। সিমির সামনে পড়ে থাকা চিঠিটা তুলবে কিনা
ভাবছে। এদিকে চোখাচোখিও হচ্ছে। নিখিলের লেখা ভেবে ও চিঠিটা তুলল। কারন চিঠিটা একটু আগেই নিখিলের পায়ের নিচে
গড়াগড়ি খাচ্ছিল। তারপর বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ করে চিঠিটা পড়ল উত্তরও পাঠাল। কিন্তু রোমাঞ্চের তো শেষ নেই। তার চিঠিটা
ঠিক সময়ে পৌঁছায়নি। যখন পৌঁছাল তার মধ্যে রিমির সাথে নিখিলের প্রেম হয়ে গেছে। রিমির সাথে নিখিলের প্রেম হওয়ার পেঁছনে
সিমির একটা ভুলই যথেষ্ট ছিল। কখনও কেউ যদি চিঠিটা পায় বাড়িতে, তবে যেন ভাবেনা চিঠিটা তার। তাই সে বোকার মত চিঠিতে
প্রাপকের নাম রিমি আর প্রেরকের নাম নিখিল লিখে দেয়। ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করতে গিয়ে চিঠিটা ও ডেস্কের
উপর রেখে যায়। ফলশ্রুতিতে, রিমি চিঠি আবিষ্কার করে। প্রাপকের স্থানে তাঁর নাম দেখে রিমি অবাক হয়ে গেল। চিঠির আদান প্রদান।
চলতে থাকে প্রেম। কারণ রিমির মধ্যে নিখিলের জন্য ভাললাগা ছিল। এভাবেই ভূল চিঠিতে শুরু হওয়া প্রেম চলতে থাকে ঘোরাঘুরি,
আড্ডা আর দার্শনিক কথা বার্তার মধ্য দিয়ে। যেহেতু নাম নিয়ে কোন কথাই হতনা, নিখিলের ধরার কোন উপায় ছিলনা যে সে রিমি
না সিমি।
-আকাশ মেঘলা থাকলেও কখন ভাল লাগে জান কি?
যখন হাতে হাত রেখে চলার মত কেউ পাশে থাকে। যখন আকাশ কাঁন্না করবে বলে মেঘগুলো ঘটা করে এক জায়গায় জড় হয়, তখন
যদি পেছন থেকে হঠাৎ কেউ কাধে হাত রেখে বলে-“ কি ভাবছ”? মন খারাপ? তখন আকাশের কালো মেঘগুলো দেখে মনে হয়,
সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসুক, ঝুম বৃষ্টি নামুক, বিদ্যুৎ চমকাক। দুজনে এক বৃষ্টিময় সন্ধ্যায় ভিজে যাই।
জীবনের কিছু কিছু সময় এমনই কালো মেঘের মত ছায়া হয়ে দাঁড়ায়, যে ছায়ার অন্তরে থাকে জ্বলন্ত বেদনাশিখা, পুঁড়িয়ে দিতে চায়
সব ভালবাসা। কালো মেঘেরা একসময় ধৈর্য্যহারা হয়ে যাবে, কিন্তু নিজেকে স্থির থাকতে হয় জলাভূমির জলের মত।
সমুদ্রের গা ঘেসে হাঁটছিল ওরা দুজন। রিমি কিছু বললনা। শুধু নিখিলকে চুপ করতে বলেই হঠাৎ সমুদ্রের বালিতে বসে পড়ল সে।
নিখিল তার পাশে গিয়ে আস্তে আস্তে বলল-“ বসে পড়লে যে?”
জবাবে রিমি শুধু বলল- তো?
এরপর নিখিল আর কিছুই বললনা। ঠান্ডা বাতাস বইছে, মনে হচ্ছে সমুদ্র তার সমস্ত জল বাতাসের মাধ্যমে ওদের গায়ে ঢেলে দিচ্ছে।
ঠিক সূর্যের উল্টো দিকে মুখ করে চুলগুলো এলিয়ে দিয়ে বসে আছে সে। পড়ন্ত বিকেল, কিছু দূরে কিছু মানুষের যাতায়াত, কয়েকটা
বাচ্চার চুপসে যাওয়া খেলার বল আর দূরের সীমান্ত। এসবই দেখছে রিমি।
রিমির তি কন্ঠ-দাড়িয়ে আছ কেন? বস । নিখিল বসতে বসতে বলল
বলত মানুষ কখন সমুদ্রের বালিতে বসে পড়ে?
-যখন কিছুই ভাল লাগেনা।
-ভুল উত্তর। আচ্ছা বলতো আমরা সমুদ্রে কেন এলাম?
বিস্ময় নিয়ে রিমির উত্তর -সাগর দেখতে। উপভোগ করতে।
-যারা এ পৃথিবীর আলো দেখতে পায়না? তারা ? তারাও কি সাগর দেখতে আসে?
যাদের চোখ আছে তারা সমুদ্রের কলকল ধ্বনি উপলব্ধি করতে পারেনা। সাগরের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস, উত্তাল ঢেউ কি বলে তাও কয়জন
বোঝে? অন্ধরাই হৃদয়ঙ্গম করতে পারে সাগরের ছলছলানিতে মিশে থাকা জীবন সংগীতের সূর। মর্মকথা।
বাহ! তুমি এত সাজিয়ে কথা বলতে পার? আগে তো কখনও শুনিনি। মনে হল কবিতা শুনছি।
রিমি এসব কথার উত্তর এড়িয়ে গিয়ে ক্ষীণ গলায় বললকাল
তো ফিরে যাচ্ছি। কি ভাবলে?
-কোনটা?
-জানিনা।
ও হাহা হা হা হা! নিখিল জোরে সোরে একটা হাসি দিল। তারপর হাসির শব্দটা বজায় রেখে এক চিমটি বালু নিয়ে রিমির কপালে
সিঁদুর দেওয়ার মত করে প্রলেপ দিয়ে বলল- এইতো আমি তোমাকে বিয়ে করলাম। হয়েছে? এখন তুমি আর আমি স্বামী স্ত্রী। রিমির
মুকখানা ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে নিখিল বলল।
নিখিল এখনও হাসছে। তার পাগলামি দেখে রিমিও না হেসে পারলনা। নিখিল রিমিকে ধাক্কা দিলে ওর চেপে রাখা অর্ধেক হাসি প্রকাশ
পেল। সূর্যমাখা সন্ধ্যার আলোয় বালু ছড়াছড়ির খেলায় মেতে উঠল তাঁরা।
নিখিল বলল- আমি একটু হেঁটে আসি, তুমি বস।
খুব দূরে গিয়ে নিখিল সমুদ্রের বালিতে বড় করে একটা ষড়াব চিহ্ন আঁকল। সেখান থেকে পায়ের দুটো আঙ্গুলের ফাঁকে একটা ইটের
টুকরা নিয়ে বালিতে দাগ ফেলতে ফেলতে রিমির কাছে আসল। তারপর সেই দাগ ধরে রিমিকে সামনে যেতে বলল।
-এই দাগটা যেখানে গিয়ে থেমেছে, তুমিও সেখানে গিয়ে থামবে। কেমন?
রিমি এঁকেবেঁকে নিখিলের অঙ্কিত খড়াব চিহ্নের কাছে গিয়ে অভিভূত হল। কতভাবেইনা পাগলামি করা যায়। আর এসব পাগলামি
থেকে জন্ম নেয় ভালবাসার কচুরিপানা। তা ভাসতে থাকে অবিরাম। কখোনও ফুল ফোঁটে, কখোনও জলের ঢেউয়ে নুইয়ে যায়।
নিখিলের প্রতি রিমি খুব রেগে আছে। কারনটা ক্ষুধা। কখন ধরে রিমি নিখিলের কানের কাছে বলছে- চলনা খেয়ে আসি, খুব ক্ষুধা
পেয়েছে। কিন্তু নিখিলের কাছে তা যেন একটা গানের মত মনে হচ্ছে। সম্ভবত শুনতে ভালই লাগছে। কিছুক্ষণ পর নিখিল আইসক্রিম
এনে তার পাশে বসে বসল-উল্টো দিকে মুখ করে মৃদু স্বরে বলল- “কেউ কি আইসক্রিম খায়?”
রিমি একবার আড়চোখে তাকাল।
সিমির সেই চিঠিটা পৌঁছেছিল। কিন্তু দেরিতে। চিঠি দেখে নিখিল অবাক হল। এতদিন প্রেম করছে। আবার প্রেমের প্রাথমিক চিঠি
কেন? সিমির ফোন।
-হ্যালো? কে?
পরে বলব।
কিছু কথা আছে। কোথায় আসব?
কিন্তু আপনি কে? কেন...
সব বলব। আগে বলেন কোথায় আসব?
আচ্ছা বিকেলে রমনা পার্কে আসেন। আমি ওখানে থাকব।
রিমিরও আসার কথা ছিল।
নিখিল উল্টোদিকে মুখ করে বসে আছে। পেঁছনে দুই বোন। অদ্ভুত। একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুজন থমকে গেল। নিখিল বললআরে?
তোমাদেরতো আমি একসাথে কোনদিন দেখিনি। আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।
নিখিল কাকে সিমি বলে ডাকবে ভেবে পারছেনা। মুখে অস্পষ্টতা আর চাঞ্চল্য। পাগল হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। মাথা নিচু করে চুপ
করে দাঁড়িয়ে থাকল নিখিল। রিমি আর সিমি দুজনই কাঁদছে। প্রেমিক নির্ধারিত। কিন্তু কে নিখিলের প্রেমিকা? নিখিল চিৎকার করে
বললআরে
তোমরা কাঁদছ কেন? কান্নাকাটি করার কথাতো আমার। সিমি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল- কেউ কাঁদবেনা। সিমি রিমিকে একটু
আড়ালে ডেকে নিয়ে গেল। নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। নিখিল এখন কিছুটা বুঝতে পারছে চিঠিটার ঘূর্ণণগতি কেমন ছিল। বেশ
কিছুক্ষণ হয়ে গেল। ওদের কথা কিছুই কানে আসছেনা। শুধু রিমির কন্ঠে একবার শোনা গেল- “আপু তুমি আমাকে একবার বলতে
পারতে”। ওরা নিখিলের সামনে এসে শশব্দে হাসতে শুরু করল। নিখিল আরও অবাক হল। যারা কিনা একটু আগে কাঁন্নার প্রতিযোগিতা
করছিল তাঁরাই আবার এমনভাবে হাসছে মনে হল আমি বোকা হয়ে গেছি। হঠাৎ রিমি নিখিলকে জড়িয়ে ধরল। প্রেমের জয় হল কিনা
জানেনা কেউ। তবে মনে হল পৃথিবীর সবাই আজ খুশি। নিখিল আধো আধো গলায় বলল- তুমি সিমি, সিমি না? নিখিল এখনও জানে
ও সিমি। ওরা দুই বোন আরও জোরে হাসতে শুরু করল। এর মধ্যে অবশ্য সিমির বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে ওর পরিবার।
আজ রিমি আর নিখিলের বাসর রাত। তিনজন বসে আছে। বর, কনে আর সিমি।
সিমি শান্ত গলায় বলল-ওকে। তোমরা এখন থাক। আমি যাই। আজ তো তোমাদের আবার বাসর রাত। অনেক রাত হল। যাই।
নিখিল সিমিকে থামাল। একটা কথা বলি?
-বলেন দুলাভাই।
-নৌকার চিঠিটা কিন্তু আমার ছিলনা।
সিমি হা করে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু দাঁড়িয়ে যায়না আমাদের জীবনের এমন গল্প। চলতে থাকে আজীবন। এ গল্পের যেন শেষ নেই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Farhana Shormin বেশ ভাল গল্প। ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট গল্পটি ভাল লাগল।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোঃ মোখলেছুর রহমান গল্প ভাল হয়েছে,চর্চা অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশা।
চর্চা অব্যাহত থাকার মত সময় খুবই কম। চেষ্টা করি আগের মতই সময় দিতে। কিন্তু জীবনতো আর বদ্ধ জলাশয় না। স্রোতের মত চলতে থাকে এপার ওপার ঘেঁষে। দোয়া করবেন।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পটা খুব ভালো লেগেছে। শাদামাঠা কাহিনী খুব সুন্দর হয়েছে। শুভকামনা নিরন্তর....
শাদামাঠাই করতে চেয়েছি। আপনারর ভাল লেগেছে জেনে আরও ভাল লাগল। আপনার জন্যও শুভকামনা অন্তহীন।
সালসাবিলা নকি ভালো লেগেছে। শেষের টুইস্টটাও দারুণ ছিল
ধন্যবাদ। শুভকামনা আপনার জন্যেও
কারিমুল ইসলাম এই গল্পের মাঝখানে দুই জায়গায় 'ষড়াব এবং খড়াব লেখা আছে। বানান টা 'লাভ চিহ্ন'। technical problem. মাফ করবেন।
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া অমন সুন্দর একটা গল্প এখনো পড়িনি দেখে বেশ আফসোস লাগছে। বেশ ভালো লেগেছে। রিমি-সিমি-নিখিল সবগুলো চরিত্রই জীবন্ত মনে হয়েছে। ভালো লাগা থেকেই পছন্দ, ভোট ও শুভকামনা রইল। আসবেন আমার গল্প ও কবিতার পাতায়।
ধন্যবাদ। আপনার প্রেরণাই জীবন্ত হয়ে থাকবে আমার অনুভূতি জুড়ে।
কারিমুল ইসলাম ধন্যবাদ। দোয়া করবেন ভাই
সাদিক ইসলাম ভালোবাসার মানুষকে কি কেউ চিনতে ভুল করে? চেনা উচিৎ ছিলো। থিমটা কিন্তু সুন্দর। আমার গল্পে আমন্ত্রণ।
ধন্যবাদ ভাই। দোয়া করবেন
াল থাকবেন। অসংখ্য শুভ কামনা

১০ ডিসেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪