যে চিঠি কোনদিনও পোষ্ট করা হবে না

মা (মে ২০১১)

মাসুম আহমদ
  • ১৫
  • 0
  • ১৭
মাকে লেখা একটা চিঠি শেয়ার করলাম।

"মা"
অবশেষে আমি কাজটি ছেড়েই দিলাম । হয়ত ভাবছ এই অর্থনৈতিক মন্দার সময় কাজটি ছাড়া ঠিক হল কিনা! এখানকার বন্ধুরাও বলেছে কাজটা ছাড়া আমার ঠিক হয়নি। আমিও জানি কাজটি ছাড়ার জন্যে কতটুকু বিপদ আমার সামনে অপেক্ষমাণ। কি করব বল মা,ওমরের সাথে আমি আর পেরে উঠতে পারছিলাম না। ওমরের কথা তো আমি তোমাকে ফোনে বলেছিলাম। সেই পাকিস্তানি এ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজারটি। পাকিস্তানি মানুষ সম্পর্কে আমার কিছুটা নেগেটিভ ধারনা বোঝ হওয়ার পর থেকেই ছিল। ওমর আমার সেই ধারণাকে আরও শক্তভাবে পাকাপোক্ত করেছে। সে আমাকে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়েছিল, না আমি কিছু বলতে পারতাম - না আমি সহ্য করতে পারতাম। আমি যদি আর একদিনও কাজ করতাম তাহলে হয়ত ওর সাথে আমার বিবাদ শারীরিক পর্যায়ে চলে যেত। ওর আওতায় কাজ করাটা প্রথম থেকেই একটা অজানা যন্ত্রণা আমাকে পীড়া দিত। সবকিছু বিবেচনা করেই কাজটা ছাড়লাম ।

আমার কাজের শেষ দিন,যেদিন আমি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসছিলাম, সেদিন কারেঙ্গা আর রবার্ট খুব মন খারাপ করেছে। ওদের কথা তো তোমাকে বলা হয়নি। তুমি আমেরিকা আসার আগে আমাকে অনেক সাবধান করে দিয়েছিলে যেন কালো মানুষদের কাছ থেকে সব সময় দূরে থাকি। কারণ তুমি মানুষের কাছ থেকে শুনেছ এরা নাকি ভাল না। আসার পর থেকে যখনি কোন কালো মানুষ দেখতাম তখনি তোমার কথা মনে পড়ে যেত । কিন্তু কাজ করতে গিয়ে কারেঙ্গা আর রবার্ট এর সাথে পরিচয়।ওরা দুইজনই আফ্রিকান আমেরিকান, গায়ের রঙ কালো। ওদের সাথে পরিচয় হওয়ার পর বুঝলাম তোমার কালো মানুষ সম্পর্কে শুনা কথাটা ঠিক না। এই ক্ষুদ্র জীবনে যে কয়জন ভাল মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে আমি তাদেরকে সে তালিকার প্রথম দিকে রাখব ।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের বিশ তারিখে আমি তাদেরকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্পর্কে বলেছিলাম। আমি যখন তাদের বলছিলাম আমি হলাম সে দেশের মানুষ যে দেশের মানুষ নিজের ভাষার জন্যে রক্ত দিয়েছে। আমি হলাম সে জাতির একজন যারা ভাষার জন্যে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছে। পৃথিবীর আর কোন দেশ বা জাতি এরকম আছে কিনা আমার জানা নেই। এটা শুনে ওরা দুজনেই লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে সমস্বরে অবাক হয়ে বলেছিল হোয়াট!! ইজ ইট ট্রু? আমি বলেছিলাম - ইয়েস দিস ইজ ত্রর - দিস ইজ প্রাওড অফ আওয়ার হিস্ট্রি। এরপর থেকে ওরা আমার কাছে বাংলা শিখতে শুরু করল। আমি তাদের তেমন শিখাইতে পারিনি। কেমন আছ, ভাল, ধন্যবাদ আর দুঃখিত এগুলি শিখাইতে আমার অনেক দিন লেগেছে। তারপরেও ভালভাবে উচ্চারণ করতে পারত না। ধন্যবাদ কে ঢন্যবাড আর দুঃখিত কে দুখিত বলত। আরেক টা মজার ব্যাপার হল, পাকিস্তানিরা যে আমাদের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল এটা শুনার পর থেকে ওরাও আমার সাথে ওমরকে অপছন্দ করা শুরু করেছিল ।

মা এখানকার মানুষগুলো কেমন রোবট রোবট - একে অপরের প্রতি তেমন কোন রকম আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না! সবাই এত ব্যস্ত যে পিছন ফিরে তাকাবারও সময় তাদের নেই! প্রথম প্রথম এই ব্যাপারগুলো আমাকে বেশ ভাবাতো কিন্তু এখন আমি বেশ মানিয়ে নিয়েছি । সকালে এলার্ম ক্লক ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে - তারপর ট্রেন নিয়ে যায় কর্মস্থলে - বিকালে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরি। মানুষ যখন ক্লান্ত থাকে তখন হয়ত তার পিছনের দিনের সুখের দিনগুলোর কথা বেশি মনে পড়ে - তাইতো কাজ থেকে আসার সময় সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে দেশের সেই অগোছালো সুখী দিনগুলোর কথা,সেই প্রাণের শহরের কথা,সেই শহরের সহজ সরল আন্তরিক প্রিয় মানুষগুলোর কথা। তখন আমি বোঝতে পারি - আমি আমার দেশকে,আমার শহরকে,আমার প্রিয় সেই মানুষদের কত ভালবাসি,কত মিস করি ।

মা সেই ছোটবেলায় তুমি যে আমার বুকে বাংলা বর্ণমালার বীজ রোপণ করে দিয়েছিলে। সেই বীজের ফসলে আমি আজও নিজের তৃষ্ণা মিঠাই,নিজের ক্ষুধা মিঠাই। আমার প্রবাস জীবনের একাকীত্ব দুঃখ কষ্ট সব ভাগ করে নেই বাংলা বর্ণমালার সাথে। তুমি আমাকে নিয়ে কোনরকম দুশ্চিন্তা কর না - আমি ভাল আছি। শুধু মাঝেমাঝে তোমার হাতের রান্না করা খাবার খুব মিস করি। বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে তুমিও ভাল থাক মা ।

ইতি তোমার ছোট ছেলে
মাসুম

উৎসর্গ - পৃথিবীর সব মায়েদের ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রাজিন অনেক কিছু না পাবার হাহাকার
Ruma আমি জানি কোনো লিখা পডে চুল ছেডা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আমার নেই। তবুও আপনার লিখাটা আমার ভালো লেগেছে।
মোঃ আক্তারুজ্জামান পাকিস্তানি মানুষ সম্পর্কে আমার কিছুটা নেগেটিভ ধারনা- আপনার ধারনাটি একেবারেই সত্যি| ছোট বেলা থেকেই আমারও একই রকম বিশ্বাস| middle east- এ ওদের সাথে ৭ বছর কাজ করে বিশ্বাসটি আরও পাকা পোক্ত হয়েছে| ওরা আসলেই এক একটা মূর্তিমান জানওয়ার| দুঃখের বিসয়টা হলো এই যে এসবের পরেও আমাদের দেশের অনেক অনেক মানুষ পাকিস্তানি পতাকা উড়াতে খুব ভালবাসে| আপনার লেখাটি বাস্তবতার ঝান্ডা বহন করে!
বখতিয়ার শামীম। মা মাটি দেশ যার কোন তুলনা হয়না। শুভেচ্ছা নিবেন অনেক অনেক ভালো লাগলো।
শিশির সিক্ত পল্লব ভালই চিঠিটা.......ভালো লাগলো
হোসেন মোশাররফ মা কে লেখা একটা চিঠির মাধমে আপনি আপনার প্রবাস জীবনের সুখ দুখের চিত্র তুলে ধরেছেন / গল্পটির নামকরণের মধ্যে দিইএই তার সার্থকতা ফুটে উঠেছে ..../ ধন্যবাদ আপনাকে ...........
sakil চিঠি আকারে লেখা হলে ও ভালো লেগেছে . আশা করি আগামীতে আরো লিখবেন
এস, এম, ফজলুল হাসান এটা তো একটা চিঠি , ভালো লাগলো ভালো চিঠিটি , ধন্যবাদ
মেহেদী আল মাহমুদ সুন্দর একটি লেখা। ভাল লাগল। আপনি ভালো লিখেন।

০৭ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪