আড্ডা দেবার মত অঢেল সময় সাধারণত আমি পাই না। তবে যখন যেটুকু পাই তার সদ্ব্যবহার করি। অবশ্য শুক্রবারটা সকাল বেলা দু-চারটা কাপড় কেঁচে দিয়েই মোটামুটি সারাটা দিন ফ্রি-ই থাকি। বাকি দিন গুলোতে ঘুম থেকে উঠেই টিউশনি, কোচিং, মাঝে মাঝে কলেজ এবং সামান্য একটু আধটু পড়াশুনার চাপ থাকেই। এক শুক্রবারের বিকেল বেলা। সেদিন গ্রীষ্মের বিকালের রোদকে সোনার সাথে তুলনা না করে তপ্ত লোহার সাথে তুলনা করাটা বোধ হয় অযৌক্তিক হবে না। একটা ফোন কল পেয়ে কি যেন কথা শেষ করে রুমমেট আমাকে বলল ; " চল ক্যাম্পাসে যাই।" আমি বিছানায় এলিয়ে দেওয়া শরীরটাকে একটু খাড়া করে বললাম, কেন? রুমমেট: দরকার আছে চল না। আমি: না দোস্ত তুই যা। এই গরমের মধ্যে বের হবো না বলেই আবার চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়লাম। রুমমেট: আরে একটা মেয়ে আসবে। তার কি নাকি সমস্যা হইছে। চল না যাই। আমি: মেয়ে! কোন মেয়ে, কেন আসবে? রুমমেট: গেলে চল। তারাতাড়ি রেডি হয়ে নে। আমি এবার উঠে বিছানায় বসে বললাম, ভাল লাগছে না। আচ্ছা তুই যখন বলছিস তো চল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনে রেডি হয়ে বের হলাম ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। রুমমেট তাকে ফোন দিয়ে অবশেষে মিনিট দশেক পড়ে মেয়েটার সাথে দেখা হলো। মেয়েটা শুরুতেই একটা শুষ্ক হাসি দিয়ে বলল, কেমন আছেন দাদা? রুমমেট: ভালতো ছিলাম রে কিন্তু তোমার সমস্যার কথা শুনে খারাপ আছি এখন। কি হয়েছে তোমার বলো? মেয়েটা মুখ অন্ধকার করে বলল, আমি বড় ভুল করে ফেলেছি দাদা। কারো সম্পর্কে কিছু না জেনে তাকে ভালোবাসাটা আমার দারুণ ভুল হয়েছে। আমার সাথে এতো বড় প্রতারনা সে নাও করতে পারতো। মেয়েটার কথাগুলো শুনে রুমমেটের কি অবস্থা জানি না তবে আমার ভিতর কেমন যেন একটা আশার আলো উদয় হলো। কারণ ক্যাম্পাসে যেতে যেতে রুমমেটের সাথে অনেক কথাই হয়েছে। যে মেয়েটা আসছে রুমমেট তাকে অনেক দিন ধরেই পছন্দ করে আসছে। তার কেমন যেন দূর সম্পর্কের বোন হবে। কিন্তু সমস্যা হলো মেয়েটা অন্য কারো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাই মেয়ের এমন কথা শুনে একটু আশার সঞ্চয় হলো। রুমমেট প্রশ্ন করলো, কেন কি হয়েছে? মেয়ে : ও আমাকে মিথ্যা কথা বলেছে দাদা। আমি আর ওকে কোনদিন বিশ্বাস করতে পারবো না। ও আমাকে বলেছে সে নাকি চাকরি করে। আমি আজকে জানতে পারলাম সে কোন চাকরি করে না। তার বাবা চাকরি করে। আমি মেয়েটার চোখের দিকে লক্ষ্য করলাম তার চোখের কোণে জল চিক চিক করছে। রুমমেট: তো সমস্যা কি? সে তোমাকে ভালবাসে না? মেয়ে: সমস্যা কি মানে? সে আমাকে অনেক ভালবাসে কিন্তু তার এ ভালবাসা ধুয়ে কি আমি জল খাবো? তাকে কত বিশ্বাস করেছিলাম সে আমার সব বিশ্বাস ভেঙ্গে দিল। দুনিয়ার কোন ছেলেকে বিশ্বাস করা ঠিক না। মেয়েটা তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে "হ্যাঁ আন্টি বলেন" বলতে বলতে একটু দূরে সরে গেল। আমি এ সুযোগে রুমমেটকে বললাম তুই মেয়েটাকে বলতো ছেলে যে ওকে ভালবাসে সেটা সে নিশ্চিত তো না? কল কাটতে কাটতে মেয়েটা আবার আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল। এবার রুমমেট আমার মতো করে প্রশ্নটা করল। মেয়ে: হুম দাদা জানি সে আমাকে অনেক ভালবাসে। একদিন ফোনে কথা কম হলে পাগলের মতো হয়ে যায়। আমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। এবার মেয়েটার চোখ দিয়ে একসাথে দুই ফোটা জল তার গালে পড়লে সে হাত দিয়ে মুছে নিল। রুমমেট: তুমি তাকে ভালোবাসো নি? মেয়ে : বাসি নি আবার। কিন্তু ও আমার বিশ্বাস ভাঙছে। আর ওকে ভালোবাসি না। আমি আর সহ্য করতে না পেরে মেয়েটাকে বললাম, কেন আর এখন ভালোবাসো না? চাকরি করে নাতো কি হয়েছে? তোমাকে ভালো তো সে ঠিকই বাসে, তাই না? মেয়ে: না দাদা আমি আর এ সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছি না। আমার মা বাবা এমন একটা বেকার ছেলেকে কোন দিন মেনে নিবে না। আমি: আসলে কিছু মনে করিও না একটা প্রশ্ন করি, তোমার মা বাবা মেনে নেবে না, নাকি তুমি নেবে না? মেয়ে: কেউ না দাদা। আমি: ও ভালো কথা। সেটাই তো, মেনে নেওয়ার তো কোন কথা নয়। বেকার ছেলেকে মেনে নেওয়া যায় নাকি! এতো বাবা মার মুখে চুনকালি দেওয়া। চাকরি করা ছেলের সাথে প্রেম করলে তো তুমি বাবা মার মুখ উজ্জ্বল করতে, তাই না। মেয়ে মাথা নিচু করলে রুমমেট খোচা দিয়ে বলল চুপ কর তুই। আর কিছু বলিস না। মেয়ে রুমমেটের দিকে মুখ তুলে বলল, আচ্ছা দাদা আমি তাহলে আসি। রুমমেট এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকে ঝালমুড়ি খাওয়ার জন্য প্রস্তাব করলে মেয়ে নাকচ করে দিয়ে আসি বলে মেসের দিকে হাটা শুরু করল। আমি রুমমেটের দিকে তাকিয়ে একটা হতাশার হাসি দিয়ে বললাম, নিশ্চয় তুই ওর কতটা যোগ্য জেনে গেছিস? তাহলে আজ থেকে নতুন কিছু নিয়ে ভাবা শুরু কর। শুধু একটা কথা মনে রাখিস, চাকরি কর দেখবি ওর মতো শত শত মেয়ে তোর লাইন ধরবে। রুমমেট নির্বাক শ্রোতার মতো আমার প্রতিটা উপদেশ কানের মধ্যে গুজে নিল। আমিও উপদেশ দেওয়া চুপ করে ভাবতে লাগলাম, সখি ভালবাসা কারে কয়, সে কি কেবলি ক্যারিয়ার ময়।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।