নুপুর

কষ্ট (জুন ২০১১)

Mohmmad ibrahim khalil
  • ১০
  • 0
  • ১১
মিল দেখতে এসে তিনদিনের জায়গায় আজ পাঁচ দিন হতে চলল। কাজ তেমন কিছু নয় নতুন একটা প্লান্ট বসানো হয়েছে সেটাকে চালু করার জন্য আসা। মাঝে মাঝে আসতে হয়। এলাকাটা ভালই, মোটামুটি নিরিবিলি। ছিমছাম সাজানো গোছানো পুরো মিলটাই দেখার মত। কোন এক বিদেশীর গড়ে যাওয়া মিলটি বছর দশেক হয় আলফাজ গ্রুপের নিয়ন্ত্রনে। এই দশবছরে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। পর পর দু'দুটো নতুন প্লান্ট স্থাপন করা যা তা ব্যাপার নয়। সব মিলিয়ে মিলের অবস্থা সচ্ছল। দিনরাত তিন শিফ্টে উৎপাদন চলে। মিলের অভ্যান্তরেই নির্দৃষ্ট স্থানে কর্মচারীদের বাসস্থান থেকে শুরু করে যাবতীয় সুবিধাদির ব্যবস্থা আছে। মোটকথা সবকিছুই প্লান করে গড়া। এই এলাকার পাশাপাশি অন্যান্য এলাকা থেকেও লোকজন এসে এখানে কাজ করে। ইতিমধ্যে মিলটির যথেষ্ট নাম ডাক। বিশেষ করে মিলের সুযোগ সুবিধার প্রতি মানুষের আগ্রহটা একটু বেশী। আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারবেনা মিলটি নিয়ে কোন সমস্যা হয়েছে। সবাই যার যার মত কাজ করে যাচ্ছেন। অবশ্য এর মূলে যে মানুষটি সবচেয়ে বেশী প্রশংসার দাবীদার তিনি হচ্ছেন মরহুম আলফাজ চৌধুরী। কঠিন অধ্যবসায় আর দক্ষতা কাজে লাগিয়ে তিনি আলফাজ গ্রুপকে আজকের অবস্থানে দাড় করেছেন। সেই আলফাজ চৌধুরী আজ জীবিত না থাকলেও তার সুযোগ্য দুই সন্তানের বদৌলতে উন্নতির সে ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। শাকিব চৌধুরী এবং মিথিলা চৌধুরী। একমাত্র পুত্র-কন্যা পিতার গড়ে যাওয়া বিশাল ব্যবসার এতটুকু ক্ষয় হতে দেয়নি। এ ক'বছরে তাদের বুদ্ধি এবং বিচক্ষনতায় কোমপানী আজ গ্রুপ কোমপানীতে রুপ নিয়েছে। দুই সন্তানের জননী রেবেকা আলফাজ বর্তমানে আলফাজ গ্রুপের চেয়ারপার্সন। এখনও কোমপানীর প্রধান সিদ্ধান্তগুলো রেবেকা আলফাজের অনুমতি ছাড়া ইসু্য করা হয়না। এ ধারা আলফাজ চৌধুরীর মৃতু্যর পর থেকে চলে আসছে। একসময় ব্যবসার কিছুই বুঝতেন না রেবেকা আলফাজ। স্বামীর সাথে বিভিন্ন জায়গায় আসা যাওয়ার কারনে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ব্যবসার খুটি নাটি বিষয় নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেন। আলফাজ চৌধুরী স্ত্রীর এহেন আয়ত্বকরনের প্রক্রিয়াকে স্বাগত না জানিয়ে পারেন না। আস্তে আস্তে তিনি উদ্দ্যেগী হন স্ত্রীকে আরো সুযোগ্যা করে তুলতে। তিনি যতার্থই পেরেছেন তা নাহলে আজকের এ অবস্থানে পেঁৗছানো কিছুতেই সম্ভব হতনা। আলফাজ চৌধুরী নেই কিন্তু আছে তার রেখে যাওয়া সাম্রাজ্য। সে সাম্রাজ্যের তিল পরিমান ক্ষয় হতে দিতে চান না মিসেস আলফাজ। তাই ছেলে মেয়েকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে স্বামীর দিক নির্দেশনা অনুসারে বাচঁতে শিখিয়েছেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে আলফাজ গ্রুপের বর্তমান অবস্থান আকাশচুম্বী। কিন্তু একটা বিষয়ে তিনি হেরে গেছেন বলে প্রায় দুঃখ করেন। ছেলেটাকে কিছুতেই বিয়ের জন্য রাজী করাতে পারছেন না রেবেকা আলফাজ। পারত পক্ষে জোরও করতে পারছেন না। গত দু'বছর হলো মিথিলাকে বিয়ে দিয়েছেন, সেও ভাইয়ের মত গো ধরেছিল বিয়ে করবে না। শেষমেশ ছোট ভাইয়ের শরনাপন্ন হন রেবেকা আলফাজ। ভাইয়ের সহযোগীতায় একধরনের নাটকীয়তার মধ্যে বিয়ে হয়ে যায় মিথিলার। ছেলে বিদেশে থাকে, কর্মস্থলে অবস্থান অতীব জরুরী বিধায় মিথিলাকেও সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করে ওর স্বামী। কিন্তু মিথিলার স্পষ্ট কথা সে কিছুতেই বিদেশে থাকবেনা। প্রয়োজন হলে তার স্বামী চলে আসুক। অবস্থা বিপরীতমুখী দেখে রেবেকা আলফাজ মিথিলার স্বামীকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আপাতত পাঠিয়ে দেন এবং কথা দেন অতি সত্তর ওকে পাঠিয়ে দেবেন। সেই যে কথা দেয়া দীর্ঘ এক বছরের চেষ্টার পর মিথিলাকে যথাস্থানে পাঠানোর কাজে সফলকাম হন। হাঁফ ছেড়ে বাচেন রেবেকা আলফাজ। কিন্তু তারপরও মনের মাঝে অনিশ্চয়তা থেকে যায় কি জানি কখন আবার কি হয়ে যায়।
মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়ে আজকাল ভীষন একাকী বোধ করেন রেবেকা আলফাজ। দিনের পুরো সময়টা একরকম শূন্যতার মাঝে কাটান। ক'মাস হল একমাত্র ননদকে পেয়ে মোটামুটি মানিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু মনে মনে শাকিবকে বিয়ে করানোর জন্য উদ্গ্রিব হয়ে উঠেন। ক'জায়গায় কথাও চালিয়েছেন কিন্তু এ বিষয়ে শাকিবের কোন সাড়া না পাওয়ায় বুঝতে পারছেন না কি করবেন। শরীরটা ক'দিন যাবৎ ভাল লাগছিল না তাই মিলের নতুন প্লান্ট উদ্বোধন করার জন্য যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে পারেননি। শাকিবকে একাই যেতে হয়েছে। শাকিবের উপর পুরোপুরি ভরষা আছে মা রেবেকা আলফাজের, বাবার মতই অত্যন্ত বিচক্ষনতার সাথে ব্যবসার সমস্ত বিষয়ে বিবেচনা করে। যোগ্য বাবার যোগ্য পুত্র।
এদিকে শাকিবের হাতে সময় খুব কম। এমনিতে দু'দিন অতিরিক্ত হয়ে গেছে কিন্তু সব কাজ সমাধা করা যায়নি। আজকের ভেতরে কাজ শেষ করে রাতের ট্রেনে ঢাকায় রওনা দিতে হবে। নতুন প্লান্ট উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন যাবৎ মিলের মধ্যে একপ্রকার সাজ সাজ রব । দুপুর নাগাদ সমস্ত কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন ম্যানেজার অজিত বাবু। তিনি নিজেও লজ্জিত সময়মত কাজ সমাধা করতে পারেননি বলে। মিল শুরু হওয়ার প্রথম থেকেই অজিত বাবু মিলের দায়িত্বে আছেন। আলফাজ চৌধুরীর খুব কাছের একজন এই অজিত বাবু। যেমন বিশ্বাসী তেমনী বিচক্ষন এক কথায় আলফাজ চৌধুরীর ডান হাত ছিলেন এক সময়। আজ আলফাজ চৌধুরী নেই কিন্তু অজিত বাবু তার কাজে কর্মে এখনও সেই আগের ধারা বজায় রেখেছেন। আগের তুলনায় এখন তার কাজে কর্মে এসেছে আরো ক্ষিপ্রতা। শাকিবকে ভীষন সমীহ করেন অজিত বাবু। ছোট সাহেব বলে নয় শাকিবের মনস্তাতি্বক চিন্তা ভাবনাকে গুরুত্ব সহকারে দেখেন তিনি। শাকিবও পিতার আস্থাভাজন সমপন্ন অজিত বাবুকে শ্রদ্ধা করে। সময়ান্তে পরামর্ষ নিতে ভুল হয়না। এবার মিলে আসার পর থেকে অজিত বাবুর কাজ আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় খবর নিয়ে যাচ্ছেন, নিজে না পারলে কর্মচারীকে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু অনেকক্ষন হলো অজিত বাবুকে দেখা যাচেছনা। নিজের কামরায় একা একা পায়চারী করছে শাকিব। সন্ধ্যে হওয়ার সাথে সাথে কোন ক্রটি ছাড়াই নতুন প্লান্টে উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে তাই মনটা ভাল লাগছে। এই মহুর্তে অজিত বাবুকে ভীষন দরকার ট্রেনের টিকেট কাটা হয়েছে কিনা তা জানার জন্য। আজ রাতের ট্রেনে যে করেই হোক ফিরতে হবে। এর আগে যতবার ট্রেনে আসা হয়েছিল একবারও গাড়ী নিয়ে আসেনি শাকিব। ট্রেনে যাতায়াতের আনন্দটাই অন্য রকম। তাছাড়া মিলের অবস্থান ট্রেনে যাতায়াতের অনুকুল থাকায় এই বাহনটাকেই পছন্দসই মনে হয় শাকিবের। টুকিটাকি যা কাজ ছিল তা শেষ করতে সন্ধ্যে পেরিয়ে যায়। পূর্ব আকাশ জুড়ে তখন কালোর আধিপাত্য। ষ্টেশনের উদ্দেশ্যে পা রাখে শাকিব সংগে অজিত বাবু ও গাড়ীর ড্রাইভার। ষ্টেশনে পেঁৗছাতে মিনিট বিশ লাগে। গাড়ীতে বসে প্রয়োজনীয় কিছু শলা পরামর্শ সেরে নেয়। ট্রেন তখনও আসেনি অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে আসবে বলে জানিয়েছেন ষ্টেশন মাষ্টার। অন্যান্যবার অজিত বাবু কাউকে না কাউকে সংগে পাঠিয়ে দিতেন, দুরের পথ কিজানি কোথায় কি হয়ে যায়। কিন্তু এবার শাকিবের ঘোর আপত্তির কারনে অজিত বাবু নিরাশচিত্তে এ কাজটি সমাধা থেকে বিরত আছেন। তবুও ড্রাইভার নুরু মিঞাকে তৈরি করে নিয়ে এসেছেন যদি প্রয়োজন মনেহয় তাহলে পাঠিয়ে দেবেন বলে। ট্রেন যথারীতি ষ্টেশনে এসে থামে। লোকজন তেমন কেউ নামেনি, শাকিব অজিত বাবুর কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় লক্ষ্য করে অজিত বাবুর চোখে পানি টলমল করছে, ষ্টেশনের মৃদু আলোয় স্পষ্ট না দেখা গেলেও শাকিব দেখতে পাচ্ছে অজিত বাবুর টলমলায়ীত দুটো চোখ। ভীষন আবেগপ্রবন এই অজিত বাবু। প্রতিবার বিদায়ের মহুর্তে অজিত বাবুর এহেন আচরন শাকিবকে বিচলিত করে। শাকিব নিজেও কিছুটা আবেগপ্রবন হয়ে যায়। হাজার হোক পিতার বয়সী। বুকে জড়িয়ে ধরে শাকিব অজিত বাবুকে। আর তক্ষুনি ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠে। এরিমাঝে ব্রিফকেস হাতে নুরুমিয়া ট্রেনের বাগিতে প্রবেশ করেছে। শাকিব নুরু মিঞার পিছু নেয়। সিটের নম্বর পেতে বেশী সময় লাগে না। ট্রেনের এ বগিতে যাত্রী তেমন একটা নেই। দু'একজন যাত্রী যার যার সিটে বসে আছে। শাকিব পকেট থেকে এক'শ টাকার একটি নোট নুরু মিঞাকে বাড়িয়ে দেয়। নুরু মিঞা নিতে চায়না কিন্তু মালিকের আদেশ না নিলে অপমান করা হবে। বাধ্য হয়ে টাকাটা নিয়ে পকেটে রাখে নুরু মিঞা। ট্রেন ছাড়ার শেষ হুইসেল বাজে। নুরু মিঞা নত মস্তিষ্কে শাকিবকে সালাম জানিয়ে বিদায় নেয়। যাওয়ার সময় বলে যায় স্যার সাবধানে যাবেন ঢাকায় পৌছে টেলিফোন করবেন আমরা খূব চিন্তায় থাকব। শাকিব মাথা নেড়ে অভয় দেয়। ট্রেন আস্তে আস্তে ষ্টেশন অতিক্রম করতে থাকে জানালা গলে দেখা যাচ্ছে অজিত বাবু দাড়িয়ে আছেন। নুরু মিঞা চলন্ত ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছে। ষ্টেশনের শেষ প্রান্তে এসে তার সে পাল্লা দেয়া থেমে যায়। শাকিব কিছু একটা ভাবে। তারপর পাশ ফিরতে যাবে দৃষ্টি আটকে যায় তার পাশর্্ববতর্ী সিটে। জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে এক যুবতী। মনে মনে বিচলীত বোধ করে। সিটের নম্বর ঠিক আছেতো? পকেট থেকে টিকেটের অংশটা বের করে সামনের সিটের সাথে মিলিয়ে নেয়। না ঠিকই আছে। পূনরায় টিকেটের অংশটা পকেটে রেখে দিয়ে নড়ে চড়ে বসে শাকিব। একবার ভাবে সিটটা ছেড়ে দেবে কিনা তারি পাশের সিটে একজন নারী বসে আছে ভাবতেই কেমন যেন লাগছে। আবার ভাবে বসাটা বোধহয় উচিৎ হয়নি কি জানি এই মহুর্তে কি ভাবছে সে। হয়ত ভেবে থাকবে লোকটার আক্কেল জ্ঞান বলতে কিছু নেই, বগিতে এতগুলো সিট খালি আছে যে কোন একটাতে বসতে পারত কিন্তু তা না বসে এসে বসেছে ঘাড়ের সামনে। যত্তসব নেকামী। মেয়েছেলে দেখলে আর মাথা ঠিক থাকেনা। আচমকা একটা ধাক্কা অনুভব করে শাকিব। ধাক্কাটা অন্য কিছুর নয় ট্রেনের ঝটাং ঝটাং শব্দের মাঝে কারো মিহি কান্নার শব্দের। প্রথমটায় আঁচ করে নিতে কষ্ট হয় শব্দটা আসলে কোথা থেকে আসছে। একি তারই পাশের সিটে বসা যুবতীটির কান্নার শব্দ। যাকে নিয়ে শাকিবের মনে দ্বিধাদন্দের কমতি নেই। কিন্তু কান্নার হেতু কি ? তাহলে কি শাকিবের বসাটা মেনে নিতে পারছেনা ? হলে হতেও পারে । কিন্তু সে ধরনের কোন পরিস্থিতি শাকিবতো তৈরি করেনি। ট্রেন ষ্টেশন ছেড়ে এসেছে মাত্র মিনিট পনের হবে এরমাঝে যুবতীটি একবারের জন্যও মাথা তুলে তাকায়নি তার সামনে কে এসেছে বা কে গেছে। তবে কান্নার যাই কারন থাকুকনা কেন শাকিব বরাবর টিকেট কেটে ভ্রমন করছে। টিকেটের নম্বর অনুযায়ী নির্ধারিত সিটে বসাতো কোন অপরাধ নয়। তাছাড়া অন্য কোন সিটে বসার কারনতো খুজে পাচ্ছেনা। ট্রেনের সিট, যে কেউ বসতে পারে তা মেয়ে ছেলে হোক না কেন তাতে কিছু যায় আসেনা। তবুও মানবতা বলে একটা কথা আছে অন্তত কান্নার হেতু জানা প্রয়োজন। আশে পাশের লোক ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক ভাবে নেবেনা। শাকিব গলা খাঁকি দেয়। কিন্তু কোন উত্তর নেই দ্বিতীয় বারের মাথায় ফিরে তাকায় যুবতীটি। মহুর্তেই চোখ কপালে উঠে যায় শাকিবের। কি অদ্ভুত মুখাবয়ব। জীবনে এত জায়গা চষে বেড়িয়েছে কিন্তু এত সুন্দর মুখের গড়ন এর আগে নজরে এসেছে কিনা মনে পড়েনা। যেন মুখের প্রতিটি অংশই কথা বলছে। শাকিব স্বভাবসুলভ হাসির উপস্থিতি টেনে জানতে চায় কোন অসুবিধা বোধ করছে কিনা। যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে সিট বদল করে বসতে শাকিবের কোন আপত্তি নেই। কোন কথা বলেনা যুবতীটা। পূনরায় ঘাড় ঘুরিয়ে জানালার বাইরে রাতের আকাশে নিমজ্জিত করে আপন দৃষ্টি। শাকিব ব্রিফকেস হাতে উঠতে যাবে অমনি আবেদন আসে যুবতীটির পক্ষ থেকে।
- আপনি উঠবেন না প্লিজ। আমার কোন অসুবিধা হচ্ছেনা।
আমি আসলে --।
- না না ঠিক আছে। তবে একটা শর্তে বসতে পারি। গন্তব্যে পেঁৗছানোর আগ পর্যন্ত এই সময়টা আমরা একজন আরেকজনের সাথে শেয়ার করব। অবশ্য আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে। তার আগে বলুনতো আপনি কি একা ? অন্য কিছু ভাববেন না প্লিজ। নিশ্চই কোন বিপদে পড়েছেন তা নাহলে মেয়ে মানুষ হয়ে এই রাতের বেলায় একাকী ট্রেনের যাত্রী হওয়াটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছেনা। আর কিছু না বলতে চান অসুবিধা নেই কাঁদছেন কেন সে কথাটা অন্তত বলতে পারেন। কিজানি হয়ত আপনার কোন সহযোগীতায় আসতে পারি।
যুবতীটি এখনও সেই আগের অবস্থায় জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে। শাকিব পূনরায় বলে
- দেখুন আপনি কিছু না বললে আমি কিন্তু এই উঠলাম। অবশ্য আমার কোন ইচ্ছে ছিলনা উঠে যাওয়ার যেহেতু এটা আমারই সিট।
যুবতীটা এবার ফিরে তাকায় শাকিবের দিকে। আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
- আসলে ---
- থাক থাক আর বলতে হবেনা। আমি বুঝে নিয়েছি।
- কি বুঝেছেন ?
শাকিব আমতা আমতা করে। আসলে ও কিছুই বোঝেনি কেবলি একটা নাটকীয়তা।
- না মানে --- । কিছুই বুঝিনি।
এবার দুজনেই হেসে উঠে।
- দ্যাটস এ গুড র্গাল। দেখুনতো হাসলে আপনাকে কত সুন্দর দেখাচ্ছে। এভাবেই হাসবেন। কফি খাবেন ? সংগেই আছে।
সিটের নিচে ব্যাগ খুলে ছোট একটা ফ্লাঙ্ সাথে দুটো প্লাষ্টিকের গ্লাস বের করে শাকিব। কফি গ্লাসে ঢালতে ঢালতে বলে।
- ভাবছেন চেনা নেই জানা নেই এত তাড়াতাড়ি কি করে মিশে গেলাম। আমি আসলে ওরকমই। খুব দ্রুত মিশে যেতে পারি। এই মিশে যাওয়াটা খারাপ দিক না ভাল দিক তা বলতে পারবো না। তবে এটুকু জানি মানুষের প্রয়োজনে মানুষ। এই যেমন ধরুন আপনি কাঁদছেন, কেন কাঁদছেন সেটা আমার জানা প্রয়োজন। আপনি না বললেও আমি জোর করে জানতে চাইব। কি বলবেন না ?
কফির গ্লাসটি সামনে বাড়িয়ে দিয়ে জানতে চায় শাকিব।
- আচ্ছা আপনাকে কিন্তু একবারও জিজ্ঞেস করিনি আপনি কফি খান কিনা। অনেকে আবার পছন্দ করেনা কিনা তাই।
যুবতীটা হাত বাড়িয়ে কফির গ্লাস তুলে নেয়। মনে হচ্ছে অভ্যেস আছে। শাকিব ভেবেছিল হয়ত নিতে সংকোচ করবে। কিন্তু যুবতীটির মাঝে সে ধরনের কোন পরিবর্তন নজরে আসেনি। তবে ধন্যবাদ দিতে ভুল করেনি যুবতীটি। উত্তরে শাকিব বলে ইটস মাই প্লেজার।
- আচ্ছা একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন ? এই এতক্ষন হলো আমরা কথা বলছি কিন্তু পরিচয়তো দুরের কথা আমাদের নামটা পর্যন্ত জানিনা কেউ। আমি শাকিব চৌধুরী। আপনি ?
- আমি তাহমিদা ইসলাম নুপুর সবাই নুপুর বলে ডাকে।
- নুপুর চমৎকার নাম। আচ্ছা এবার বলুনতো কান্নার রহস্য কি ?
এক এক করে নির্দিধায় বলে চলে সমস্ত কথা। ওরা একভাই এক বোন। বড় নুপুর ভাই ছোট বাবা সরকারী চাকুরীজীবি। অল্প কিছুদিন হলো রিটায়ার্ড করেছেন। নুপুর ডাক্তারী পড়ছে বর্তমানে শেষ বর্ষের ছাত্রী। ছোটভাই সবেমাত্র কলেজ শেষ করেছে। এরিমাঝে বাবার হঠাৎ হার্ট এটাকের খবরে কিছুটা অপ্রকৃতিস্ত হয়ে যায় নুপুর। আজ বিকালেই পেয়েছে বাবার হার্ট এটাকের খবর। এবার নিয়ে দু'বার, খবর পেয়ে আর এক মহুর্ত দেরি করেনি রওনা হয়েছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। এই সংক্ষিপ্ত বর্ননার মধ্যে দিয়ে শাকিব জানতে পারে কান্নার মূল রহস্য। কথা প্রশংগে শাকিব জানায় সহরাওয়াদর্ী হাসপাতালে ওর এক বন্ধুর বাবার কথা। হৃদরোগ বিভাগের সিনিয়র প্রফেসার। শাকিবের কথা শুনলে যথেষ্ঠ সহযোগীতা করবেন। তাছাড়া শাকিব নিজেই যাবে। নপুর প্রথম রাজী হয়না অযথা কাউকে কষ্ট দেয়া উচিৎ নয় ভেবে শাকিবের প্রস্তাব মেনে নিতে পারেনা। কিন্তু শাকিবের ব্যাক্তিত্যের কাছে হার মানে নুপুর। তাছাড়া তার বাবার জীবন মরনের প্রশ্ন। হোকনা শাকিব অপরিচিত। জীবনের কোননা কোন মহুর্তে কখন কাকে দিয়ে কি উপকার হয় তা কেউ বলতে পারেনা। নুপুরের মনে আর কোন দ্বিধা দন্দ থাকেনা যে শাকিব নিতান্তই একজন ভদ্রলোক।
এতক্ষনের ভাবগম্ভীর সময়টার মাঝে এক চিলতে আশার আলো দেখতে পায় যেন। এই কিছুক্ষন আগেও ভীষন অসহায়বোধ করছিল নুপুর। বার বার মনে হচ্ছিল বাবার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কি হবে ওদের। কোথায় গিয়ে দাড়াবে ওরা। ইন্টার পাশ করার পর বাবার অসমর্থতার কারনে পড়াশুনা এক রকম বন্ধ হয়ে যায় নুপুরের। বাবার ইচ্ছার কমতি ছিলনা কিন্তু সমর্থ ছিল শূন্যের কোঠায় সেই কারনে মেডিকেলে চাঞ্চ পেয়েও চালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেনা। তবুও দুঃখ ছিলনা ওর মনে, চেষ্টা করে না পারাতে কষ্ট আছে কিন্তু সেটা অনেকদিন ধরে মনকে আকড়ে থাকেনা। স্বাভাবিক ভাবে একসময় মুছে যায় নাপারার কষ্ট। অবশেষে নিরাশার ইতি টানেন নুপুরের দুর সম্পর্কের এক মামা। সেই থেকে আজ এ পর্যন্ত। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে যায় মনের অজান্তে।
- কিছু ভাবছেন ?
শাকিবের কথায় ট্রেনের ঝটাং ঝটাং শব্দ আর শোঁ শোঁ আওয়াজের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করে নুপুর। কিছুটা লজ্জাবোধের সাথে নিজের উপস্থিতি প্রকাশে ব্যাতিব্যাস্ত দেখে শাকিব কথা ঘুরিয়ে অন্য প্রসংগ রচনা করে চলে।
রাত তখন কত হবে বোঝা যাচ্ছেনা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে রাতের গভীরতা। আজকের রাতটাই যেন অন্য রকম। মনের উপলব্ধিতে ইতিমধ্যে ভিড় জমিয়েছে এক ধরনের ভাললাগা। ছন্দ নেই কিন্তু আছে সুন্দর অনুভুতি। যে অনুভুতি মনের অজান্তে অধর ছুয়ে যায়, ভাবতে শেখায় নতুন করে। মন পবনে শ্রোতের তীব্রতা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হারিয়ে যায় তার দিকহীন পথে। কিন্তু হৃদয় গভীরে অনুভুত হয়না সে তীব্রতা। কেন হয়না সে ভাবনার উত্তর জানা নেই শাকিবের কেবলি মনে হতে থাকে জীবন এত সুন্দর উপমার আবদ্ধে লালিত আগে কেন মনে হয়নি। তাহলে কি শাকিবের মন বলে কিছু নেই ? না তা থাকবেনা কেন। কি নেই শাকিবের কাছে অর্থ প্রতিপত্তি, ব্যক্তিত্ব, নাম জশ সবকিছুই আছে। তবে কি শাকিবের ভেতরের শাকিব এতদিন ঘুমিয়ে ছিল ? এতগুলো বছর পার হয়ে গেছে ভাবতে অবাক লাগে, একটি মহুর্তের জন্য শাকিব জীবনকে নিয়ে এতটা ভাবেনি যতটা ভাবছে আজ। কিন্তু এ পরিবর্তনের অন্তরায় কি ? তবে কি নুপুর নামের ঐ অচেনা মেয়েটি ? যাকে জীবনে প্রথম দেখেছে শাকিব। অথচ কেন জানি মনে হচ্ছে অনেক দিনের চেনাজানা। কি বিচিত্র মানুষের মনের গতি কখন কোথায় গিয়ে কিভাবে থেমে যায় কেউ বলতে পারেনা। জানালার পাশে মাথা রেখে কাত হয়ে ঘুমোচ্ছে নুপুর। চোখে মুখে এক রাজ্যের ক্লান্তি। মলিন হয়ে আছে চোখের প্রাচীর। কিন্তু তারপরও অসাধারন দেখতে সে মখাবয়ব। চেয়ে থাকতে থাকতে একসময় চোখ সরিয়ে নেয় শাকিব। আর ভাবতে থাকে অনাগত জীবনের কথা। ভাবতে থাকে মা রেবেকা আলফাজের কথা। একমাত্র ছেলের কাছে বয়সের ভারে নুয়ে যেতে থাকা মায়ের কি চাওয়ার থাকতে পারে সেই কথা। ভাবতে থাকে অচেনা এই মানুষটার সাথে হয়ত এই শেষ দেখা। কিংবা আর দেখা হবে কিনা ? আচমকা হৃদয় গহীনে এক ধরনের টান অনূভুত হয় শাকিবের। একি তাহলে অজানা কোন কষ্ট ? ভাবতে ভাবতে চোখের দু্যতি একসময় নিভু নিভু করে ছিটকে পড়ে অন্ধকার রাজ্যে। পাশে উপবিষ্ট সেই একজন নুপুর।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শাহ্‌নাজ আক্তার শেষে কি ওদের মাঝে কোনো সম্পর্ক হলো কিনা তা জানার জন্য মনটা ছটফট করছে , আসলে আমরা যখন কোনো সিনেমা দেখি তখন তাতে প্রেম , বিরহ অবশেসে মিলন এগুলো দেখেই অভ্যস্ত ,,,, যাই হোক খুব ভালো লাগলো আমার , ভোট টা ও করলাম I
মোঃ আক্তারুজ্জামান অনেক ভালো লিখেছেন| কিন্তু আমরা গল্প সিনেমায় নায়ক নায়িকার মিলন, বিচ্ছেদ, মৃত্যু এই জাতীয় পরসমাপ্তি দেখতে অভ্যস্থ| কিন্তু লেখক তার হাতে একটা কিছু যদি চেপে রেখে দেন এই রকম লেখাই আমার বেশি ভালো লাগে| ধন্যবাদ|
ঝরা অস্মাপ্ত গলপ তবে পড়তে ভাল লেগেছে
সূর্য কাহিনী বর্ণন ভালই হয়েছে। একটু অতৃপ্তি তবুও রয়ে গেল.......
মোঃ ইকরামুজ্জামান (বাতেন) @Mohmmad ibrahim khalil ভাই আপনার গল্পটা সুন্দর হয়েছে । ধন্যবাদ ।
মামুন ম. আজিজ বর্ননা সুন্দর। কিন্তু প্রতমে অনেক বেশী বেশী লম্বা কথা বার্তা , মসে হচ্ছিল কি যেন অপক্ষা করছে সামনে। কিন্তু আশাহত হলাম। সামনে ট্রেনে এক নারী আর তার প্রতি ভালবাসা বা ভাল লাগা জেগে ওঠা নায়কের মনে। ...কাহিনী গভীরতা ছাড়া আর সবই সুন্দর।
আবু ফয়সাল আহমেদ হুমম, ভাল বর্ণনা, কিন্তু গল্টটা শেষ মনে হল না
Neshi গল্প টা আমার জন্য একটও লম্বা হুইআগেছে .

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪