ছবি

বাবা দিবস (জুন ২০১৩)

এস.এম. মোবিন
  • 0
  • ৫৬
প্রতিদিনের মতো ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসের পথে রওনা দিলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎ মনে হলো রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি । একটু একটু করে মনে করতে চেষ্টা করলাম এবং মনে হল পুরো স্বপ্নটা।
বাবাকে হারিয়েছি যখন আমার বয়স চার কি পাঁচ মাস। বাবা কাকে বলে তা বোঝার ক্ষমতা তখন আমার ছিল না। কিছু বড় হওয়ার পর সমবয়সীরা যখন বাবা বাবা বলে ডাকে তখন মাকে জিজ্ঞাসা করতাম আমার বাবা নেই কেন?
মা কিছু না বলে শুধু বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেন। যখন বুঝতে শিখেছি তখন জানতে পারলাম আমার বাবা ঢাকায় রোড এক্সিডেন্টে মারা যান(১৯৭৯)। বাবার অনুপস্থিতি প্রথম প্রচণ্ড ভাবে টের পেলাম কিশোরগঞ্জ বেড়াতে গেলে। সেখানে এক ভদ্রলোক কে দেখলাম তার মেয়েকে খুব আদর করছে এমন দৃশ্য দেখে।
আমি একমনে দেখতে থাকলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম, ইস! আমার জীবনে এমন যদি কেউ থাকতেন তা হলে আমাকে ও এ ভাবে আদর করতেন। ঠিক তখন থেকে মাথায় এই চিন্তাটা যেন বাসা বেধে বসল। বাবার বয়সের কাওকে দেখলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি এবং মনে মনে ভাবি আমার জীবনে কেন এমন হল!
বাবার আদর আবার চাচাদের কাছে ও কিছু পাওয়া যায়। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বাবা মারা যাওয়ার এক বছরের মধ্যে দুই চাচা ও আপু মারা গেলেন।তাই আমার জীবন শুধু শুন্যতাই ভরে রইল। হ্যাঁ , যা বলছিলাম। বাবার কথা ভাবতাম আর মনে করতাম, বাবা যদি মরে না গিয়ে কোথায় হারিয়ে যেতেন এবং এখন আসতেন তা হলে কতই না মজা হত! সিনেমা বা নাটকে কতই না দেখেছি, এভাবে হারিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসতে। বাবা নেই এ কথা শুনে এক ভদ্রলোক বললেন বাবা নেই কি হয়েছে, বাবার বয়সের লোকদের শ্রদ্ধা কর, বাবার আত্মা শান্তি পাবে। আমি এখন তাই করি।
ওই রাতে যখন স্বপ্নে দেখলাম বাবা চলে এসেছেন আমাদের মাঝে তখন মাকে বলেছি, মা, আমি বলেছিলাম না বাবা ফিরে আসবেন। এই দেখ বাবা ফিরে এসেছেন।বাবা চেয়ারে বসে মিষ্টি মিষ্টি করে হাসছে। যখন স্বপ্নে দেখেছি তখন এমন ভাবে দেখেছি যেন এটাই বাস্তব। সকাল বেলা যখন বুঝলাম আসলে আমি সবকিছু স্বপ্নে দেখেছি ঠিক তখন আর চোখে পানি ধরে রাখতে পারলাম না।দুই চোখ পানিতে ছল ছল করছে। কিন্তু কাঁদতে পারলাম না। সারাটা দিন মনে মনে অনেক কান্না করেছি কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়তে দিইনি। অফিসের সবাই আমার অন্ধকার মুখটাই দেখেছে ভাঙ্গা হৃদয়টা দেখাইনি। মনের দুঃখ মনে রেখেই চাপা কান্নায় আমার সরাটা দিন কাটিয়েছি।
বাবার বংশে থাকার মধ্যে এখন শুধু বেচে আছেন আমার একমাত্র ফুপু যিনি চট্টগ্রামে বাড়ি করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে থাকেন। ছোটবেলা বেড়াতে গিয়েছিলাম সেখানে। ফুপু অ্যালবাম দেখাতে গিয়ে একটা ছবি আমার হাতে দিয়ে বললেন দেখ তো এটা কার ছবি? আমি চিনি না বলে ছবিটার কোন গুর“ত্ব না দিয়ে রেখে দিলাম এবং বাকি ছবি গুলো মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলাম। তখন ছবিটা আবার হাতে তুলে দিয়ে ফুপু বললেন এটা তোর বাবার ছবি বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। আর আমি ও ঠিক থাকতে পারলাম না। তখনো আমি বাবা দেখতে কেমন ছিলেন তা কিছুই জানতাম না।এখন বাবা বলতে সেই ছবিটাকেই বুঝি।
যখন বাবাকে প্রচণ্ড ভাবে মিস করি তখন কম্পিউটারে স্ক্যান করা ছবিটার দিকে তাকিয়ে খুঁজি তার জীবনটাই বা কত দুঃখে গেল আর আমার জীবনটাই বা কত দুঃখ পেল। এই আমি কত জনকেই না বাবার মত মিলানোর চেষ্টা করি। শুনলে অবাক হবেন অফিসের কাজ সেরে এক মামার অফিসে গেলাম দেখা করতে। মামা তার পাশের টেবিলের কলিগ কে ডাকছেন হেবজু সাহেব একটু আসবেন? আমি তো শুনে হতবাক ! এ যে আমার বাবার ডাক নাম। মামা এ কাকে ডাকছেন, কে এই ভদ্রলোক। বুকের কোথায় যেন তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম। ত্রিশ বছর আগে যে নামটি মাটি চাপা দিয়েছিল তা আবার কি করে চলে এলো। পরোক্ষনে আমার ধ্যান ভাঙ্গল এবং হাজির হলেন বাবার বয়সের এক ভদ্রলোক। মুখে দাড়ি, লম্বাচওড়া সুন্দর চেহারার লোকটি যখন আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন আমি একবার তাকিয়েই যেন আর তাকাতে পারছিলাম না । আমার ভেতরে যেন সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। মামা পরিচয় করিয়ে দিলেন আমার ভাগিনা খুব দুঃখী ছেলে, খুব ছোট বেলা বাবাকে হারিয়েছে তা ও আবার আপনার নামে নাম।আমি ছালাম দিলাম, উনি বুকে জড়িয়ে ধরলেন। সাথে সাথে আমি যেন উনার বুকের মধ্যে ডুকে গেলাম। জীবনের ত্রিশটি বছরের মধ্যে যেখানে একটু মথায় হাত বোলানো পেলাম না সেখানে বুকে জড়ানো .......
আর দেড়ি না করে চলে আসলাম।এখন আমি মামা বলেই ডাকি। আসলে পৃথিবীতে সবার জন্য সবকিছু আসে না। দুনিয়াতে বাবা একজনই হয় যার বিকল্প আর হয় না। হেবজু মামার সাথে ফোনে কথা বলি, দেখা করি কিন্তু আমার আবেগ কি মামাকে সে ভাবে নাড়া দেয়? নাকি দেয় না । হয় তো দেয় কিন্তু আমার মত লিখে বুঝাতে পারে না।
আবার কত বাবাই না বৃদ্ধাশ্রমে থাকে ছেলে মেয়েদের ছেড়ে। তাদের সন্তানেরা কি ভাবে আমার মত করে? হয়তো ভাবে না । তা না হলে তারা কি করে বাবা মাকে ছেড়ে বাসায় থাকতে পারে। ঘৃণা জানাই সে সন্তানদের যারা এ নিষ্ঠুর কাজটি করে থাকে। ধন্যবাদ ও দুয়া জানাই মুকুল চাচাকে যে কিনা বৃদ্ধাশ্রম দিয়ে দুঃখী বাবা মায়েদের পাশে থাকেন।
বাবার কথা যখন মনে হয় সাথে সাথে কম্পিউটারে স্ক্যান করা ছবিটা দেখি আর ভাবি, আমার জীবনটা কেমন। মা আর বড় ভাই ছাড়া যে কেউ নেই এই পৃথিবীতে আদর করার, একটু মাথায় হাত বুলানোর। এই দুঃখ আমি কাকে বলব, কে শুনবে আমার এ দুঃখের কথা, এ কেমন জীবন আমার ! এই কথা লিখতে লিখতে এখনো কেঁদে ফেললাম।
প্রিয় পাঠক কান্না নয়,ভালোবাসাই পারে আমাদের মত হতভাগাদের জীবন বদলে দিতে। দোয়া করবেন যেন মা কে নিয়ে ও লিখতে পারি।

আংশিক নয় পুরোটাই সত্য কাহিনী
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কলমের কান্না আমি জিবনের জোয়ারে বহু কচুরি পানা দেখেছি, ভেসে গিয়েছে ঢেউ আসতেই । আপনাকে দেখলাম ভুলে যান নি শিকড় । সালাম ও দোয়া রইল ।
ভালো লাগেনি ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
সৈয়দ আহমেদ হাবিব আপনার জন্য আমার খুব একটা খারাপ লাগেনি, আমার চোখে ভেসে উঠেছে খালাম্মার চেহারা (আপনার আম্মা) আপনি অনুভব করেছেন একজনকে কিন্তু একাকিত্ব আমি খুব ভয় পায়, চারপাশ ঘুরে যখন কাউকে পাওয়া যায়না কথা বলার, মনের ভাব প্রকাশ করার কি যে অসহ্য যন্তণা, সামী চলে গেলে বাংলার মা রা সন্তানের দিকে চেযে দিন পার করে দেয়, কিন্ত খুব একা হয়ে যায় মা তখন, আমি খুব ভয় পায় একাকিত্ব, মা কে সালাম জানালাম

০৬ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪