আপন সংসার

উষ্ণতা (জানুয়ারী ২০১৯)

রওনক নূর
  • ১২৫
সকাল থে‌কেই মনটা বেশ ফুরফুরা, গতরা‌তে আবরারের সম্ম‌তি পে‌য়ে‌ছি যে আমরা আলাদা বাসায় থাকব। অবশ্য এর জন্য কম কাঠখ‌ড়ি পুড়া‌তে হয়‌নি আমার। ত‌বে আবরা‌রের একটাই কথা, " অনিতা প্রতি শুক্রবার কিন্তু আমরা গাজীপু‌রে আস‌বো বাবা মা‌য়ের কা‌ছে।" আদি‌ক্ষেতার কথা শু‌নে ম‌নে ম‌নে রাগ হ‌লেও ওকের বুঝ‌তে দেয়‌নি। একবার আলাদা বাসা নি‌য়ে নেয়, তারপর ব্যাটার বাবা মা ভক্ত‌গি‌রি ছুটা‌বো। ছোট বেলা থে‌কে প্রতিটা মে‌য়ে আলাদা সংসা‌রের স্বপ্ন দে‌খে, আর আমার কপা‌লে কি জুট‌লো! অবশ্য এসব কা‌কে বল‌বো, আবরা‌রের কা‌নে এসব তো ঢু‌কেই না। ইদা‌নিং খুব অসহ্য হ‌য়ে যা‌চ্ছে আমার। আর মান‌তে পার‌ছিনা এ যন্ত্রনা। শ্বশুর শাশু‌ড়ি ব‌লে এটা ক‌রোনা, ওটা ক‌রোনা ,এটা ভা‌লো, ওটা মন্দ। ওদোর জন্য ঠিকমত ডায়‌টিং ও কর‌তে পা‌রিনা। প্রতিরা‌তে জোর ক‌রে আমা‌কে এত্তগু‌লো ভাত খাওয়া‌বে। এবার অবশ্য সব সমস্যার সমাধান হ‌বে। বাসা নি‌য়ে দুজন খুব আন‌ন্দে থাক‌বো।

আমি বাবা মা‌য়ের ছোট মে‌য়ে। আরো দু‌টো ভাইবোপন আছে আমার। আপু ধানম‌ন্ডি থা‌কে স্বামী আর দু‌টি বাচ্চা নি‌য়ে আর ভাইয়া মিরপু‌রে বাবা মা‌য়ের সা‌থে থা‌কে। আর আমি প‌ড়ে আছি গা‌জিপুর, ঢাকা থে‌কে এত দু‌রে। অবশ্য ভা‌লো‌বে‌সে বি‌য়ে ক‌রে‌ছি আমি, বলা চ‌লে নি‌জের পা‌য়ে নি‌জে কুড়াল মে‌রে‌ছি। আমার একটা ননদ আছে, অবি বা‌হিত। পৃ‌থিবীর সব দাবী যেন তার ভাইয়ার কা‌ছে, যা‌কে ব‌লে আদি‌ক্ষেতা। এটা দাও, ওটা দাও, সারা পৃ‌থিবী তা‌কে দি‌য়ে দাও। আর আমার জামাইটাও তেমন। বোন যা বল‌বে তাই দি‌তে হ‌বে। আমি জাস্ট আর নি‌তে পার‌ছিনা। এর ম‌ধ্যে আমার শ্বশুর মশাই গত সপ্তা‌হে ওয়াশরু‌মে প‌ড়ে যে‌য়ে চ‌ব্বিশ ঘন্টা অজ্ঞান ছি‌লেন। দৌড়া‌দৌ‌ড়ি তো সেই আমা‌কেই একা কর‌তে হ‌য়ে‌ছে। যাহোক আমি এ সংসা‌রে আর থাক‌ছিনা।

আমার আর আবরা‌রের অফিস উত্তরা‌তে। সেক্ট‌রের ম‌ধ্যে ভাড়া বে‌শি হওয়া‌তে সেক্ট‌রের বাইরো রেললাইনের ওইপা‌রে বাসা দে‌খে‌ছি। বাসাটা বেশ সুন্দর, দুজ‌নের ছিমছাম বাসা। গাজীপু‌রের বাসাটা ডু‌প্লেক্স হ‌লেও ওখা‌নে সব‌কিছু আমার শাশু‌ড়ির পছ‌ন্দে কেনা। ফা‌র্নিচার থে‌কে শুরু ক‌রে জানালা দরজার পর্দা পর্যন্ত তার পছ‌ন্দে কেনা। ও বাড়ী‌তে আমার কোন দাম নাই, তাই আমার পছ‌ন্দের ওরা দাম দেয়না। এমন‌কি আমা‌কে না জা‌নি‌য়ে ওদোর পছ‌ন্দে আমার জন্য ড্রেস নি‌য়ে আসে। ম‌নে হয় আমার প্র‌তি সব অধি কার পৃ‌থিবীর একমাত্র শুধু তা‌দের। আমার মা‌কে যখনই এই কথাগু‌লো ব‌লি তখন মা হে‌সে ব‌লে এটা না‌কি আমার প্র‌তি তা‌দের ভা‌লোবাসা। খুব অসহ্য লা‌গে। আমার অফি‌স ছু‌টি হয় সন্ধ্যা ছয়টা‌তে। তাই প্রতি‌দিন ছয়টা বাজার সা‌থে সা‌থে শাশু‌ড়ি ফোন কর‌তেই থা‌কে। কোন পর্যন্ত, কতদুর আস‌ছো, আবরার সা‌থে আছে কি, সাবধা‌নে এসো। এমন হাজারটা প্রশ্নের জবাব দি‌তে হয় আমা‌কে।

শ্বশুর মশাই বেশ ক্ষে‌পে‌ছেন। কথা বল‌ছেন না একবারও। ভাড়া করা পিকাপ আমা‌দের মালামাল নি‌য়ে চ‌লে গে‌ছে আগেই। ননদ আর শাশু‌ড়ি কাঁদ‌ছে ,ত‌বে কেউ কিছু বল‌ছেনা। সবার কাছ থে‌কে বিদায় নেবার সময় আমার কেন যেন বু‌কের ভেতর হু হু ক‌রে উঠ‌লো। কাউকে বুঝ‌তে দিলাম না। কারন নি‌জের আলাদা একটা সংসার নি‌জের মত সাজা‌নোর স্বপ্ন সব মে‌য়েরই থা‌কে। বের হবার সময় শাশু‌ড়ি বল্ল সাবধা‌নে থাক‌তে, নামায কালাম কর‌তে, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া কর‌তে। আবরা‌রের চোখ দি‌য়ে যেন রক্ত ছু‌টে যা‌চ্ছি‌লো। ত‌বে কিচ্ছু বল‌ছি‌লোনা ও। গাজীপুর থে‌কে উত্তরা এতটা পথ একটা কথাও বল্লনা, কোন কথার উত্তরও দি‌লোনা। য‌দিও আমার তা‌তে কিছু এসে যায় না। স্বপ্ন পূরন হ‌চ্ছে এতেই আমি খু‌শি।

নতুন বাসায় এসেন সব‌কিছু গোছগাছ করলাম দুজন মি‌লে। তারপর হো‌টেল থে‌কে বি‌রিয়া‌নি এনে দুজন খে‌য়ে নিলাম। এরম‌ধ্যে শাশু‌ড়ি আর ননদ বারবার ফোন কর‌ছে আবরার‌কে। প্রচন্ড রাগ হ‌লেও কিছুই বল‌ছিনা। সহ্য কর‌ছি শুধু ওকে নি‌জের আয়‌ত্বে আনার জন্য। রা‌তে খুব ভা‌লো ঘুম হল। ম‌নে হল হাজার বছর ধ‌রে আমি দিন‌টির জন্য অপে‌ক্ষা ক‌রে‌ছি। সকাল বেলা‌তে ঘুম থে‌কে উঠে ঘট‌লো বিপ‌ত্তি। নাস্তা কি বানা‌বো বুঝ‌তে পার‌ছিলাম না, কারন তিন বছর বি‌য়ে হ‌লেও শাশু‌ড়ি কখনও আমা‌কে রাধ‌তে দেয়‌নি। হয়ত উনি আমা‌কে হিংসা ক‌রেন ব‌লেই রাধতে দেয়‌নি। দুজ‌নের দু‌টি ডিম অম‌লেট ক‌রে পাউরু‌টি দি‌য়ে খে‌য়ে অফির‌সে গেলাম। অফিসে সব‌কিছু ফ্রেস ফ্রেস লাগ‌ছে আজ, নি‌জের বাসা থে‌কে অফিস করার মজাই আলাদা।

সন্ধ্যায় খুব ক্লান্ত হ‌য়ে বাসায় ফি‌রে রান্না করে‌তে খুব কষ্ট হ‌চ্ছে আমার। ইউটিউব দে‌খে কিছু রান্না করার চেষ্টা করলাম আজ । জা‌নিনা কেমন হ‌বে। ত‌বে আবরার‌কে অবশ্যই ভা‌লো বল‌তেই হ‌বে, কারন এটা ওর বউ‌য়ের হা‌তের রান্না।

এভা‌বে কে‌টে গে‌লো আমা‌দের দুজ‌নের সংসা‌রের এক সপ্তাহ। নি‌জের সংসার উপভোগ কর‌লেও খুব কষ্ট হয় বাসার কাজ কর‌তে। আস‌লে এগু‌লো কখনও ক‌রি‌নি আমি। অধিকাংশ সময় আমার ঘর খুব নোংরা থা‌কে, ও কিছুই ব‌লেনা আমা‌কে , শুধু মা‌ঝে মা‌ঝে কেন যেন দীর্ঘশ্বাস ফে‌লে।

সকাল সকাল আমার মা‌য়ের ফোন পে‌য়ে ঘুম ভাঙ‌লো। মা সাধারনত এত সকা‌লে কখনও ফোন দেননা। রি‌সিভ কর‌তেই ওপাশ থে‌কে মা‌য়ের কান্না জড়া‌নো কন্ঠ শুন‌তে পেলাম, " অনিনতা আমি তো তোর ভাইয়া‌কে ছে‌ড়ে থাক‌তে পা‌রিনা। ওরা যে চায়না চ‌লে যা‌চ্ছে। আমি এখন কা‌কে নি‌য়ে থাক‌বো।" ভাবী এক‌টি মা‌ল্টিন্যাশনাল কোম্পা‌নি‌তে আছেন। আর সেখান থে‌কে ভাবী‌কে প্রমোশন দি‌য়ে চায়না পাঠা‌চ্ছে, আর সা‌থে ভাইয়া ও যা‌চ্ছে। আমার মা যেন ফো‌নে ছটফট কর‌ছেন। মা‌য়ের এত ক‌ষ্টের কান্না সহ্য হ‌চ্ছেনা আমার। ভাইয়ার উপর খুব রাগ হ‌চ্ছে। ভাইয়া ভাবী‌কে ছে‌ড়ে বাবা মা এ বয়‌সে কি ক‌রে থাক‌বে।

খুব অস্থির লাগ‌ছি‌লো আমার। বাবা মা‌য়ের অসহায় মুখ দু‌টো চো‌খে ভাস‌ছি‌লো, আর সা‌থে সা‌থে শ্বশুর শাশু‌ড়ির কষ্ট জড়া‌নো মুখও। ম‌নে হ‌চ্ছে সারা পৃ‌থিবী আমা‌কে বল‌ছে যে আমি কা‌রো বাবা মা‌কে কষ্ট দি‌য়ে‌ছি তাই আমার বাবা মা‌কেও কেউ কষ্ট দি‌চ্ছে। রা‌তে বাসায় ফি‌রে আবরার‌কে জা‌নি‌য়ে দি‌লাম আমি গাজীপু‌রে ফি‌রে যে‌তে চাই শ্বশুর শাশু‌ড়ি আর নন‌দের কা‌ছে।

আজ আমরা গাজীপুর ফি‌রে যা‌চ্ছি। আমার মা ফোন দি‌য়ে জানা‌লেন ভাইয়া ভাবী চায়না যা‌চ্ছেনা। খুব আনন্দ হ‌চ্ছে আজ। আবরা‌রের চো‌খে মু‌খে আজ খুব খু‌শি। আমরা নি‌জের ঘ‌রে ফি‌রে যা‌চ্ছি, ভা‌লোবাসার মানুষগু‌লোর কা‌ছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোজাম্মেল কবির শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে যেমন গল্প হতে হয় ঠিক তেমন লিখেছেন। সুন্দর। তবে বেশ অনেক গুলো বানান ভুল আছে। একাধিক শব্দ দ্বিখণ্ডিত দেখলাম। লেখা জমা দেয়ার আগে বার বার দেখে নেয়া উচিৎ , কারণ লেখা পোস্ট হয়ে গেলে এডিট অপশন থাকে না। এইটুকু সতর্কতা আপনাকে অনেক উপরে তুলে নিবে। ভোট সাথে শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১৯
আসাদুজ্জামান খান মনের সুন্দর ইচ্ছেটাকে গল্পাকারে লিখলেন। বেশ লাগল। তবে বাস্তব বড় কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যৌথপরিবারের আনন্দ যারা একবার পায়, তারাই শুধু জানে এর মাহাত্ম্য।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ভালোবাসার উষ্ণতা যেখানে থাকে সেখান থেকে নিজেকে অালাদা করার ক্ষমতা মানুষের নেই। বাবা মায়ের শাষন অার ভালোবাসা এবং নিজ ঘরের পিছুটান অাবরার অার অনিতাকে ঘরে ফিরতে বাধ্য করেছে, এ যেন ভালোবাসার উষ্ণতায় ঘরে ফেরা।

১৩ নভেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪