আজ রাতে অনিকের কিছুতেই ঘুম আসছেনা। বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। ফ্যান চালিয়ে কম্বল গায়ে ঘুমাতে ভালবাসে অনিক। কিন্তু আজ আর ফ্যান চালানো সম্ভব নয়। বাহিরে টিপ টিপ শব্দ পাওয়া যাচ্ছে মনে হয় বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার কাচটা কালো হওয়ায় বৃষ্টি দেখা যাচ্ছেনা। অনিক বিছানা থেকে উঠে বেলকুনিতে যেয়ে দাড়ালো। দুরে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলোতে বৃষ্টির ঝিরিঝিরি নাচন দেখতে বেশ উপভোগ্য লাগছে। বৃষ্টিতে ভিজতে বেশ পছন্দ থাকা সত্ত্বেও আজকাল আর বৃষ্টিতে ভেজা হয়না। কিভাবে ভিজবে, রাজধানীর যান্ত্রিক জীবনে। সকালে বাসা থেকে বের হয় অফিসের জন্য আর রাতে ফিরে। সপ্তাহে ১ দিনের ছুটি, সেদিন আবার সংসারের নানা কাজ জমা হয়ে থাকে আবার বউ কেউ সময় দিতে হয়। সারা সপ্তাহে একটি দিনই বউ তাকে কাছে পায়। তবে ছেলে বেলায় খুব বৃষ্টিতে ভিজতো সে। বৃষ্টি আসলে কে আর তাকে ঠেকায়, ভো দৌড় দিয়ে কোথায় যে হারিয়ে যেত! বেলকুনিতে দাড়িয়ে বৃষ্টির হালকা ছোঁয়া পেয়ে পুরানো দিনের কথা মনে পড়ে যায় অনিকের। বৃষ্টির দিনে বন্ধুরা মিলে ফুটবল খেলতো তারা, গাছের ডাল থেকে ঝাপ দিয়ে পানিতে পড়তো, কয়েকটা কলাগাছ জোড়া লাগিয়ে ভেলা বানিয়ে পানিতে ঘুরতো। সব থেকে মজা ছিল বৃষ্টিতে মাছ ধরা। বৃষ্টিতে এমন ভেজা নিয়ে মা কত রাগ করত, কত মার খেয়েছে অনিক তার অন্ত নেই। সব কিছু মনে করে মনের অজান্তেই হেসে ফেললো সে।
হঠাৎ খুব গান শুনতে মন চাইলো অনিকের। ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বরষায়’ গানের সাথে এক কাপ গরম চা হলে ভালই হয়। সাথে বৃষ্টিময় ভালবাসা। একবার বউকে ডাকবে ভেবেও ডাকলোনা। বেচারি সারাদিন কত কাজ করে। তার ঘুমিয়ে থাকা মুখখানি দেখতে অবুঝ বাচ্চার মত লাগে। কত নিষ্পাপ এই মুখখানা, কত নির্ভর করে অনিককে। পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবন কখনও একটি দিনও কাটায়নি স্বামীকে ছেড়ে। বেচারির মনে অনেক কষ্ট একটা বাচ্চার আসায়। প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গে একটি বাচ্চা পাবার স্বপ্নে। একবার স্বপ্ন সত্যি হয়ে এসেছিল ওর জীবনে কিন্তু দুই মাস পেটে থেকেই ওর স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে হয়ে সব শেষ হয়ে যায়। তার জন্য অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয় অাজও মেয়েটিকে অনিকের পরিবারের কাছ থেকে। এত কষ্ট নিয়ে মেয়েটি মানসিকভাবে বেশ অসুস্থ।
জেগে জেগেই আজ রাতটা পার হয়ে গেল। বৃষ্টি ভেজা সকাল দেখতে খুব ভালবাসে অনিক। তাই সকালে খালি পায়ে বের হল বৃষ্টির ভালোবাসা নিতে। ভেজা ভেজা রাস্তায় হাঁটতে বেশ মজা লাগছিলো অনিকের। রাস্তায় শিউলি ফুলের বেশ আবেগী গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো। হয়তো ইটপাথরের শহরে কেউ টবে বিলাসিতা করে লাগিয়েছে শিউলি ফুলের গাছ। আজকের সকালটা বেশ অন্যরকম লাগছে অনিকের। সামনেই একটি ডাস্টবিন। ময়লা শতছিদ্র পোষাকে গন্ধযুক্ত শরীরে বসে আছে একটি ৬ বছরের কুৎসিত মেয়ে। মনে হচ্ছে খুব বৃষ্টিতে ভিজেছে মেয়েটি। এখানে কি করছে মেয়েটি, জানতে ইচ্ছে হল অনিকের। কিন্তু ময়লার গন্ধ আর এমন বিশ্রি মেয়ে দেকে দাড়ালোনা সে। কিছুটা সামনে যেতেই মনে হল পিছন থেকে কেউ যেন তাকে ডাকছে। শুধু ডাকছেই মনে হল, কি বলে ডাকলো বুঝতে পারলোনা অনিক। অনিক মেয়েটার দিকে ফিরে তাকালো। মনে হল ওর চোখ ডাকছে অনিককে। অনিক মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেল আর বললো “কিরে কি করিস এই ময়লা আবর্জনার মাঝে?” মেয়েটা কিছু না বলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো অনিকের দিকে। অনিক আবার বললো... "এত ভিজেছিস কেন? তোর মা-বাবা কই?" "মা আছে বস্তিতে" "বাবা?" "জানিনা।" মেয়েটি ছল ছল চোখে অনিকের দিকে তাকিয়ে রইলো। অনিক বুঝলোমেয়েটি পথ শিশু, ওদের বাবা থাকেনা। ওরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন , কারো ক্ষনসুখের ফসল, অবহেলিত পরিচয়হীন শিশু।
এই জগৎটা কতই বৈচিত্রময়। কেউ পরিচয়হীন তাই কাঁদে আর কেউ কাঁদে পরিচয় দেবার অপারগতায়। প্রতিদিন বৃষ্টি ঝরে মানবের মনে, সবই বৃষ্টি একই, শুধু কষ্টের রং ভিন্ন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান
আপনার গল্পে অনিকের মানবিক গুণ প্রকট ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অনেক ভালো লাগলো। কিন্তু মেয়েটাকে '৬ বছরের কুৎসিত মেয়ে' বলাটায় আমার আপত্তি আছে। ৬ বছরের কালো হাড় ঝিরঝিরে- শ্রীহীন.... এইভাবে বললে আমার মনে হয় এই বঞ্চিত, অবহেলিতদের প্রতি সুবিচার করা হয়। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। [আবার বউ কেউ সময় দিতে হয় = আবার বউকেও সময় দিতে হয়। একটা বাচ্চার আসায় = একটা বাচ্চার আশায়]
জসিম উদ্দিন আহমেদ
সংক্ষিপ্ত পরিসরে সুন্দর গল্প। গল্পে যে রবীন্দ্র সংগীতের অবতারণা করেছেন, এটা আমার খুব প্রিয় গান। শুভ কামনা আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইল।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।