চারিদিকে ঝলমলে অালো, সবাই কত খুশি, অাজ যে অপরাজিতার বিয়ে। সবার খুশির মাঝে হয়ত কেউ খেয়াল করেনি অপরাজিতা খুশি কিনা। হয়ত খুশি, হয়ত না। নামটা অপরাজিতা হলেও সবাই অর্পা বলে ডাকতো মেয়েটাকে। ও সবার অর্পা হলেও সুমনের অপরাজিতা ছিল। অপরাজিতা অামার বন্ধু। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। মাইগ্রেনের প্রবলেম থাকায় প্রায়ই সে ডক্টরের কাছে যেত। অার ডক্টরের ভাগ্নে সুমন। সেখান থেকেই ওদের পরিচয়। হঠাৎ অামি ফোন পেলাম অর্পার , জরুরি তলব ওর সাথে দেথা করতে হবে। কিছু বলার সুযোগ দেয়না মেয়েটা । ও ডাকলেই অামি ছুটে চলে যেতাম। গেলাম ওর বাসায়। বল্ল ডক্টর সেলিনার ভাগ্নে কে নাকি ওর খুব ভালোলেগেছে। ও যা বলত অামি সেটাতেই পজেটিভ ছিলাম। বন্ধু হিসাবে ও ছিল অামার একমাত্র কাছের মানুষ। কিছুদিন পর ওর জরুরি তলবে অাবার ওর বাসায় গেলাম। জানতে পারলাম যে ছেলেটাকে ওর ভালো লেগেছে তার নাকি এই পৃথিবীতে কেউ নায়। সুমনের মায়ের অাগে একটা বিয়ে ছিল , অার সেখানে তার তিন সন্তান ছিল। পরে উনি তার সন্তানদের রেখে সুমনের বাবার সাথে বিয়ে করেন। সুমন যখন তার গর্ভে তখন তিনি অাবার তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে অাসেন। জন্মের পর থেকে সুমন তার ডক্টর খালার কাছে থাকে। নিঃসন্তান খালা-খালু তাকে সন্তানের মত বড় করেছেন। তারপরও ছেলেটা খুব অসহায়। তার বাবাও নাকি অাবার বিয়ে করছেন। তবে সুমন নাকি তার বাবা-মাকে খুব বেশি ঘৃনা করে। সুমনের এসব কথা শুনে অামারও ওর জন্যে খুব মায়া জন্মালো। কিন্তু এগুলো শোনার পর অামি অার অর্পাকে সাপোর্ট করতে পারলামনা। কারন অর্পা অামাকে জানালো সে সুমনের দুঃখ ভরা জীবনের সাথী হতে চায়। অামি জানি এটা কখনও অর্পার পরিবার মেনে নিবে না। অর্পা খুব কষ্ট পাবে অার সাথে ওই অসহায় ছেলেটিও কষ্ট পাবে।
অর্পার সাথে দেখা হলেই ও শুধু সুমনের গল্প করত। বারবারই ও বলত সুমন নাকি ওকে অপরাজিতা বলে ডাকে। তাই অামাকেও অনুরোধ করত অামিও যেন ওকে অপরাজিতা নামে ডাকি। তাই অামিও ওকে অপরাজিতা ডাকতাম।
মাইগ্রেনের প্রবলেমের কথা বলে অর্পা প্রায়ই যেত ডক্টরের কাছে। ডক্টরের চেম্বার ছিল বাসার সাথেই। তাই সুমনের সাথে দেখা হওয়াটা খুব বেশি কঠিন ছিল না। অর্পা ডক্টরের কাছে যাবে বলে অামাকে খবর পাঠাতো অার অামি বুঝতে পারতাম যে ওর সুমনের সাথে দেখা হওয়ায় উদ্দেশ্য ছিল। মাঝে মাঝে অামিও যেতাম সাথে। সুমন ছেলেটা খুব মিশুক টাইপের। প্রথম থেকেই অামার নাম ধরে তুই তুই করে ডাকতো। অামার অবশ্য খারাপ লাগতো না। কারন বন্ধুর প্রেমিক তো বন্ধুই হবে। কিছু দিন যেতে না যেতেই অর্পা অামাকে জানালো সুমন ওকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে । সব হারানো সুমন নাকি অর্পাকে হারাতে চায়না। অামি ঘোর বিরোধিতা করলাম। এটা কখনও অর্পার বাবা-মা মেনে নিবে না। অর্পা তাদের একমাত্র সন্তান। উনাদের বিয়ের ১২ বছর পর অর্পার জন্ম। বড় অাদরের ধন অর্পা । এমন কিছু করলে ওর বাবা-মা কে বাচানো যাবেনা। এর মধ্যে কিছুদিন পর অর্পার এইস.এস.সি পরীক্ষা। অামি বল্লাম পরীক্ষা শেষ হলে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে। অর্পা অামার কথা মেনে নিল।
বেশ কিছুদিন অর্পার সাথে যোগাযোগ হচ্ছিলনা অামার। অামি ভাবলাম হয়ত ও পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত অাছে। তাই অামিও অার যোগাযোগের চেষ্টা করলামনা। হঠাৎ একদিন অর্পা ফোন দিয়ে বল্ল তোকে একটা মেসেজ দিয়েছি পেয়েছিস। অামি বল্লাম কি মেসেজ। ও বল্ল অামি মুখে বলবনা, তুই পড়ে দেখ। মেসেজ পড়ে অামি অবস হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল অামার শ্বাস বন্ধ হয়ে অাসছে। এটা কি করল অর্পা। ও অামাকে মেসেজে লিখছে যে ও নাকি বিয়ে করে ফেলছে সুমনকে।
অামি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ফোন করলাম অর্পাকে। ও অামাকে সব কিছু খুলে বল্ল। দিনটি ছিল ১২-১২-১২। অর্থাৎ ১২ই ডিসেম্বর ২০১২। দিনটাকে সবাই বিশেষায়িত করার জন্য নানান উদ্দোগে বিভোর। অামাদের অলরাউন্ডার শাকিব অাল হাসান ও ওই দিন বিয়ে করছেন। অার দিনটাকে বিশেষায়িত করার জন্য অর্পা অার সুমনও বের হয়। অর্পাকে সুমন ওদের বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় যেতে অর্পা হতবাক হয়ে যায়। সেখানে সুমনের খালা- খালু অারও বেশ কিছু লোকজন উপস্তিত ছিল। অর্পা কিচ্ছু বুঝতে পারছিলনা। কিছুক্ষন পর একজন হুজুর টাইপের লোক উপস্তিত হলেন। বললেন , " সরি অাজ অনেক কপোত-কপোতির বিবাহ দিতে গিয়ে লেট হয়ে গেল।" অর্পা তখন বুঝতে পারলো কি করতে চাচ্ছে সুমন অার ওর পরিবার। সুমন অর্পাকে বল্ল ," অপরাজিতা তুমি যদি অামাকে ভালোবাস তবে অাজই বিয়ে হবে অামাদের, অার তা না হলে অার কখনও দেখা হবেনা দুজনার।" অর্পা নির্বাক হয়ে গেল। একদিকে তার পরিবার, যারা সুমনকে কোনদিন মেনে নিবেনা অার অন্যদিকে সুমন, যাকে ছেড়ে অর্পার একদিন ও বেঁচে থাকা কষ্টের। .....
অবশেষে ভালোবাসার কাছে হার মেনে মোটামুটি বাধ্য হয়ে অর্পা সুমনের সাথে বিয়ে করল। ফোনে সব শুনে অামি কি বলব ভাবতে পারছিলামনা। ম্যাজিক ডে তে যে ম্যাজিক ঘটলো তা অর্পার জীবনে কি মোড় নিবে এটাই অামি চিন্তা করছিলাম। শুধু বার বার ই মনে হচ্ছিলো অর্পা কি পারবে ওর এইস.এস.সি পরীক্ষাটা দিতে। সব থেকে অবাক হলাম ডক্টর সেলিনা কিভাবে পারলেন জেনেশুনে এমন একটা ভুল করতে। অাল্লাহর অশেষ রহমতে অর্পার এইস.এস.সি পরীক্ষা শেষ হল অার রেজাল্ট ও খুব ভালো হল। ওকে কোচিং করার জন্য ওর বাবা-মা ঢাকাতে পাঠালো। অার সুমনও তখন ঢাকাতে চলে গেল। অার ঢাকাতেই শুরু হল সুমনের অপরাজিতার সাথে নতুন জীবন। সুমন ডক্টর সেলিনার সহযোগিতা নিয়ে ঢাকাতে ছোট খাটো ব্যবসা শুরু করে। অর্পার পরিবারের কেউই জানতো না এসব। কিছুদিন পর অর্পার ভর্তি পরীক্ষা হল অার সে খুলনা মেডিকেলে চান্স পেল। সাথে সাথে অর্পা সুমনের সন্তানও গর্ভে ধারন করল। অর্পা ওর সব কথা অামাকে সব সময় বলতো। তেমনই এ খবরটাও দিতে দেরি করলনা। এর মধ্যে অর্পা খুলনাতে চলে অাসলো ভর্তি হতে। ওর বাবা-মা খুব খুশি ছিল কারন একমাত্র সন্তান এখন তাদের কাছেই থাকবে। অর্পা খুলনার মেয়ে। তবুও খুলনা যেতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল। সুমনকে ছেড়ে যে ও এখন অার থাকতে পারেনা। অার সুমনও তার নতুন ব্যবসা ছেড়ে খুলনা যেতে পারবেনা। তবে অর্পা সুমনকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলে ও খুব কষ্ট পাচ্ছে। যদিও সুমন অর্পাকে কিছু বুঝতে দিতে চায়না তার পরও সে অর্পাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে বলে ,"অামার পৃথিবী খুব ছোট, যেখানে তুমি ছাড়া অার কিচ্ছু নেয়। তোমাকে ছাড়া অামি বড় অসহায়। কথা দাও অামাকে তুমি কখনও একা করে দিবেনা অপরাজিতা।" এ কথা শুনে অর্পা কিছুই বলতে পারেনি। শুধু সুমনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে। কারন অর্পা নিজেও জানতো সুমন কতটা অসহায়। সারাটা জীবন স্বপ্নহীনভাবে কাটিয়ে এখন সে অর্পাকে পেয়েছে। অার অর্পাকে না হারাতে চাওয়াটাই সুমনের জন্য স্বাভাবিক।
অর্পা খুলনাতে চলে অাসলো। সে তার বাবা-মা কে সবকিছু জানাতে চায়লো কারন সে তার অার সুমনের ভালোবাসার ফসল তার গর্ভের সন্তানের পরিচয় দিতে চায়লো। একদিকে মেডিকেলে ভর্তির চাপ অার অন্যদিকে সুমনকে ফেলে চলে অাসা কিছুতেই মানতে পারছিলোনা। তার মনে হচ্ছিল মায়ের সাথে শেয়ার করলে সব ঠিক হয়ে যাবে কারন অর্পা তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। কিন্তু সুমন কিছুতেই এ সন্তান রাখতে চাচ্ছিলনা। কারন সুমন ভাবছিল যে এখন অপরাজিতার বাবা-মা কিছু জানতে পারলে সে চিরকালের মত তার ভালোবাসা কে হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু অর্পা কিছুতেই সুমনের কথা মানতে পারছিলনা। এর মধ্যে অাবার অর্পার মেডিকেলের পড়াশুনা শুরু করতে হবে। সুমন চায় তার অপরাজিতা অনেক নাম করা একজন ডক্টর হবে । কারন সুমন জানতো ছোট বেলা থেকে অপরাজিতার এটাই বড় স্বপ্ন ছিল। কিন্তু অর্পা অাজকাল তার সুমনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা ছাড়া অার কিছুই ভাবেনা। সুমনের খালা ডক্টর সেলিনা অনেক বুঝিয়ে অর্পাকে রাজি করালেন ডি .এন.সি করাতে। বেশ খানিকটা ভুল বোঝাবুঝি হল সুমন অার অর্পার। ডক্টর সেলিনা হাসপাতাল থেকে অর্পার বাসার নিচে পর্যন্ত দিয়ে গেলেন অর্পাকে।
বেশ কিছুদিন অর্পার শরীরটা ভালো যাচ্ছিলনা। প্রতি রাতে সে স্বপ্ন দেখে চিৎকার দিয়ে উঠতো। সে দেখতো যে সুমন অার ছোট্ট একটা বাচ্চা হাত ধরে অর্পাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ওদিকে সুমনও খুব অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। ওর শুধু মনে হয় ও ওর বাচ্চাটাকে খুন করেছে। তার নিজের অপারগতার জন্য তার সন্তানের মরন হয়েছে । অর্পা প্রায়ই অামার কাছে খুব কান্নাকাটি করত। অামি ওকে কিছু বুঝাতে পারতামনা কারন ওকে বুঝানোর শক্তি অামার ছিলোনা। অামি অবশ্য সুমনকে ফোন করে শুনেছিলাম যে কেন এমন হল। সুমন অামাকে বলেছিলো অামি অামার অপরাজিতাকে কখনও কারো কাছে ছোট হতে দিবনা। তার ধারনা ছিল এমন কিছু অর্পার পরিবার জানতে পারলে অর্পা তাদের কাছে খুব ছোট হয়ে যাবে। অার হয়ত তার সাথে যোগাযোগ করতে দিবেনা। কথায় অাছে ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়, তাই সব হারানো সুমন তার অপরাজিতার জন্য কোন প্রকার ঝুকি নিতে চায়তোনা। অর্পার অনুরোধে অামাকে প্রায়ই সুমনের সাথে কথা বলা লাগতো। সুমন সব সময় বলতো যে সে কিছু টাকা জমিয়ে কিছুদিন পর অর্পাকে কিডন্যাপ এর মত করে নিয়ে যাবে, তাহলে কেউ অার তার অপরাজিতাকে দোষ দিতে পারবেনা।
বেশ কিছুদিন সুমনের সাথে অপরাজিতার দেখা হয়না। দুজন এখন দুপ্রান্তে। সুমন অপরাজিতাকে ঘরে অানার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকে অার অর্পাও তার লেখাপড়া নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে যায়। তবে অর্পা খুব অভিমান। অামাকে বলত দেখ ও এখন অার অামাকে ভালোবাসেনা। দুজনের মাঝে মাঝে এটা নিয়ে মিষ্টি মিষ্টি ঝগড়াও হত। অার উকিল হয়ে অামাকেই সব মেটাতে হত। সুমন অর্পার জন্য অাস্তে অাস্তে সব কিছু কিনতে শুরূ করলো। সংসারের টুকিটাকে সবকিছুই কিনলো সুমন। অর্পার প্রিয় এলাকা ছিলো উত্তরা। তাই সুমন মিরপুর থেকে উত্তরা বাসা নিলো অার অর্পার জন্য একটা অালমারিও কিনলো। এ খবর দেবার জন্য ওরা দুজনই একসাথে কনফারেন্সে অামাকে ফোন দিয়েছিলো। কত খুশি যে দুজন সেদিন ছিলো সেটা কাউকে বলে বোঝানো যাবেনা। সুমনের ব্যবসাও অাল্লাহর রহমতে ভালোই চলছিলো। হঠাৎ করেই অর্পার ফোন দুইদিন বন্ধ ছিল। সুমন অামাকে ফোন দিয়ে বল্ল তুই তাড়াতাড়ি খবর নে। দেখ কি হল অামার অপরাজিতার।
অপরাজিতার ফোন বন্ধ পেয়ে সুমন অস্হির হয়ে যাচ্ছিল। অামাকে বার বারই ফোন করছিলো অর্পার বাসায় যাবার জন্য । অামারও খুব চিন্তা লাগছিলো। তাই সময় নষ্ট না করে অামি গেলাম অর্পার বাসায়। যেয়ে দেখি অর্পা খুব অসুস্হ। নিউমার্কেটে শপিং করতে যেয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। থুতনিতে সেলাই দিতে হইছে চারটা। দাত ও ভেঙে গেছে চার-পাঁচটা। অামি ওকে দেখে খুব কষ্ট পেলাম। অান্টি বললেন কিচ্ছু খেতে চাইনা অর্পা, তাই অাজ এ ঘটনা ঘটলো। অর্পা অামাকে কিছু না বলেই হাত ধরে টানতে টানতে ওর ঘরে নিয়ে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। অামি কিছু বুঝবার অাগেই ও অামাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকলো।
অামরা দুজন ছোট বেলা থেকেই দুজনের কান্না সহ্য করতে পারতামনা। ওর কান্না দেখে অামিও কাঁদতে থাকলাম। ও অামাকে বল্ল সুমনকে ছেড়ে থাকতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। অসুস্হতার জন্য দুইদিন কথাও হয়না ওদের। অামাকে পেয়ে অর্পা অর্ধেক ভালো হয়ে গেলো। ও সুমনকে ফোন করে কিন্তু কোন কথা বলতে পারেনা। শুধু কাঁদতে থাকে, বুক ফাটা কান্না। অামি বুঝতে পারি অর্পার খুব কষ্ট হচ্ছে।
কিছুদিন পর অর্পার ক্লাস শুরু হয়ে যায়। মেডিকেলের পড়ালেখা খুব কঠিন হওয়ায় অর্পা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অার সুমনও অর্পার সাথে সংসার শুরু করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকে। সুমন একটা অালমারি কিনে অর্পার জন্য। নতুন নতুন জিনিস কিনে অালমারিতে রাখে তার বউ তার ঘরে এসে ব্যবহার করবে তাই। জুতা, কানের দুল , লিপিস্টিক অারও কতকি। অর্পাকে ছবি তুলে পাঠাতো অার ও সেগুলো অামাকে পাঠাতো। খুব সাধারন ছোট ছোট সপ্ন ছিলো ওর। দুজনই ব্যস্ত থাকায় ওদের টাইম সিডিউল খুব কম মিলতো তাই কথাও ওদের কম হত। তারপরও ওরা সারা জীবন একসাথে থাকার জন্য সাময়িক দুরত্ব মেনে নেয়। সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ক্লান্ত থাকায় প্রায়ই সুমন খুব খারাপ ব্যবহার করত অর্পার সাথে।
১২ই ডিসেম্বর ২০১৩ তে ওদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী থাকে। অনেক প্লান ছিলো সেদিন ওদের। অর্পা সুমনের জন্য সুগার ছাড়া চকোলেট ব্লাক ফরেস্ট কেক অর্ডার করে। ব্লাক ফরেস্ট কেক সুমনের খুব প্রিয়। সুমনের প্রিয় রং লাল। অর্পা সুমনের জন্য কেনে টকটকা লাল রঙের পান্জাবী অার নিজের জন্য গাড়ো লাল রঙের শাড়ী। অামাকে সাথে নিয়ে অনেকগুলো মোমবাতি ও কিনলো। অামাকে বল্ল সুমন অাসলে ও নাকি এক ঘন্টা জড়িয়ে ধরে রাখবে। সুমন নাকি তার অপরাজিতাকে ঐদিন তিন রঙের জার্বেরা মাথায় পরতে বলেছে অার কপালে দিতে বলেছে খয়েরি টিপ। দুজনার প্লানের অার শেষ নায়। অাসলো ওদের প্রতিক্ষিত দিন। রাত বারোটার পর অামি অর্পার ফোন ওয়েটিং এ দেখে অার ফোন করিনা। ও অামাকে মেসেজ পাঠায় সুমন অাসছে(on the way) বলে। তাই অামি অার কাবাবের হাড্ডি না হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরদিন শুক্রবার থাকায় অনেক ঘুমায় সেদিন।
ঘুম থেকে উঠে দেখি ফোনে বাইশটা মিস্ড কল উঠে অাছে। বেশ কিছু মেসেজও। অামি তাড়াতাড়ি সুমনকে ফোন করি। সুমন বলে সে খুলনা পৌছেছে তিন চার ঘন্টা অাগে। সেই থেকে কল করছে অর্পাকে। কিন্তু সে ফোন ধরছেনা। অামিও অনেক বার ফোন করলাম অর্পাকে। ওকে না পেয়ে ওর মাকে ফোন দিলাম। উনিও ফোন ধরলেননা। খুব চিন্তা হচ্ছিলো অামার। একদিকে অর্পা ফোন ধরছে না অার অন্যদিকে সুমন কতক্ষন অপেক্ষা করবে। .....
অর্পার ফোন গত তিনদিন অার খোলা পায়নি। অনেক অভিমান নিয়ে রাগে কষ্টে সুমন চলে গেলো। অামিও অার খোজ নেবার চেষ্টা করলাম না। কোচিং এ যাবার সময় ভুল করে ফোনটা বাসায় রেখে গিয়েছিলাম। বাসায় এসে দেখি অান্টি (অর্পার অাম্মু) অনেক বার ফোন দিয়েছেন। বুকের মধ্যে অাতকে উঠলো, অর্পার কি কিছু হয়েছে। অামি ফোন দিলাম অান্টিকে। অান্টিকে খুব খুশি খুশি লাগছিলো। উনি অামাকে বললেন অাজই উনাদের বাসায় যেতে অামার অাব্বু-অাম্মুকে নিয়ে। ছোট ভাইয়ের পরীক্ষা থাকায় অামার অাব্বু-অাম্মু গেলেননা। অামি একাই গেলাম অর্পার বাসায়।
ওদের বাসায় গিয়ে অামি খুব অবাক হলাম। অালোয় অালোয় সজ্জিত ওদের বিল্ডিং। অনেক মেহমান ওদের বাসায়। কেউ অামাকে কিছু বলেনি। অর্পার ঘরে যেয়ে দেখি পুতুলের মত বউ সেজে বসে অাছে। পাথরের মত লাগছে অাজ ওকে। অামাকে দেখে কেমন জানি অস্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে ছিলো। ওর চোখ অামাকে অনেক কিছু বলতে চায়লো কিন্তু ও কিছুই বলেনি। মনে হচ্ছে ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে। অামিতো ওকে খুব ভালো করে চিনি , তাহলে অাজ কেন এত অচেনা লাগছে মেয়েটাকে। এদিকে সুমন অামাকে একের পর এক ফোন করতেই অাছে। অামি ফোন বন্ধ করে দিলাম। অর্পার চোখের দিকে তাকিয়ে হাত দুটি ধরে বললাম, " অামাকে কিছু বলতে চাস?" মুখে কিছু বলেনি, শুধু মাথাটা নাড়ালো যে কিছু বলতে চায়না।
অান্টি অামাকে ডাকলেন তার কাজে অামাকে সাহায্য করার জন্য। বরপক্ষ চলে অাসবে কিছুক্ষনের মধ্যে। সুমনের অপরাজিতা অাজ অন্য কারো ঘরে চলে যাচ্ছে। অান্টি বললেন অনেক ভালো ছেেল, ডাক্তার। অপরাজিতার সাথে খুব ভালো মানাবে। কিছুক্ষনের মধ্যে ছেলেপক্ষের লোকজন চলে অাসলো। বিয়ে হয়ে গেলো অর্পার। জানিনা এরপর কি হবে। সুমন কি তার অধিকার নিয়ে অাসবে তার অপরাজিতার কাছে অার অপরাজিতাও বা কি করবে।
১৩ নভেম্বর - ২০১৬
গল্প/কবিতা:
৩৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪