ড.ভূইয়া

আমার স্বপ্ন (ডিসেম্বর ২০১৬)

নুরুন নাহার লিলিয়ান
  • ১৩
  • ১১
জাপানের হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ে উড এনড কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের পিএইচডির নতুন ছাত্র বাংলাদেশের এম. এন ভূইয়া।গত দুই বছর একই ডিপার্টমেন্টে মাস্টার্স ও করেছে। মাস্টার্সে রেজাল্ট ভাল হওয়ায় মুনোগাকুবসু বৃত্তিটা আরো তিন বছরের জন্য বাড়ানো হলো।

দিন রাত পরিশ্রম করছে এম. এন ভূইয়া। তবুও কাংক্ষিত ফলাফলের ক্যামিক্যালটা খুজেঁ পাচেছ না। পিএইচডি তে ও ছয় মাস চলে গেছে। যে বিষয়টা নিয়ে এম.এন ভূইয়া কাজ করছে সেটা তার আগে আরো তিনজন কাজ করেছে।কিন্তু তারা অর্ধেক কাজ করে রেজাল্ট না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে চলে গেছে। বাংলাদেশের এম.এন ভূইয়া কে ব্যর্থ হলে চলবে না। জাপান সরকারের দামি বৃত্তি। নিরাপদ পরিবেশ এবং জীবনব্যবস্থা ।

গবেষনার জন্য এমন সূযোগ আর কোথায় পাবে। বাংলাদেশে সরকারী বৈজ্ঞানিক পদের চাকরির পদোন্নয়নে ভাল রেজাল্ট নিয়েই দেশে ফিরতে হবে। নিজের ভিতরে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা তাকে পিএইচডি ডিগ্রী নিয়ে ড.ভূইয়া হতেই হবে।দিন রাত ভূতের মতো ল্যাবে কাজ করে। বাইরের সমাজ কিংবা পৃথিবীর কোন কিছুতে তার আগ্রহ নেই। কিছু দিন যাবৎ তার মন ভাল নেই।

খুব কাছের কেউ তার বিশ্বাসের জগৎ ধোয়াটে করেছে। দুই সপ্তাহ ধরে মধ্য রাত অবধি ল্যাবে মেশিনের সামনে বসে থাকে। টনে টনে পানি তাকে বাষ্পীয়ভাবে উড়াতে হয়।সেই পানির মধ্যেই আছে হয়তো তার আকাংক্ষিত ক্যামিক্যাল। পানি বাষ্প করতে গিয়ে মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন ফেসবুকটাই আপন হয়ে ধরা দেয়।

কিংবা জাপানি সংস্কৃতি অনুষ্ঠান উপভোগ করে। প্রতি মঙ্গলবার বিশ্ব বিদ্যালয়ের করিডোরে বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের জন্য ইকেবানা দেখানোর আয়োজন হয়। প্রফেসরদের স্ত্রীরা সেচ্ছাসেবী হিসেবে বিনামূল্যে ফুল সাজানো শেখায়। জাপানে ফুল সাজানোর শিল্পকেই ইকেবানা বলে। ছাত্রছাত্রীদের শেখানোর পর কিছু ফুল দিয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা সাজিয়ে রাখা হয়।

নিজের রুমের কাছেই সুন্দর একটা ইকেবানা। ভেঙেগ যাওয়া ধুসর মনটাকে সবুজ আর লালে রঙিন করে দিল। কাঁচা ফুল গুলো থেকে অদ্ভুত ঘ্রান। সেদিন মধ্যরাতে নিজের অফিস রুম থেকে ল্যাবের দিকে যাচিছল। হঠাৎ মনে হল সাদা এপ্রোন পড়া কোন জাপানি মেয়ে মাথা নিচু করে ভূইয়ার পিছনে পিছনে হাটছে। কয়েক মিনিট নিজের মনে ল্যাবের দিকেই হাটছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর মনে হল কেউ নেই। আশে পাশে ঢোকার মতো কোন রুম নেই। সাদা এপ্রোন পড়া মেয়েটি তাহলে কোথায় গেল।বিজ্ঞানী বলে কথা। বিজ্ঞান চিন্তা মাথায় নিয়ে তো ভূতের কথা ভাবা যায় না।

সেদিনের পর থেকে ল্যাবের সুনসান নিরবতার মাঝে ও কোন এক সুঘ্রাণ বহন করা অস্তিত্বের টের পায়। পানি বাষ্প করার মেশিনটা হঠাৎ করে কেপে উঠে। সামনে নানা রকম ক্যামিক্যাল রাখার কাঁচের ছোট ছোট ক্লনিকেল ফ্লাস্ক গুলো হালকা কাপতেঁ থাকে। এম. এন ভূইয়া মনেকরে মৃদু ভূমিকম্পে জাপান দেশটা বুঝি কাঁপছে। গভীর রাতের ঘুমে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ঠিক সে সময় দুই ফুট উচ্চতার প্রায় অষ্টাদশী কোন মেয়ে যেন তার সামনের ডেস্কে বসে পা দুলাচ্ছে। তার দুই হাতে ছোট ছোট দুটো ক্লনিকেল ফ্লাস্ক। একটিতে গাড়ো সবুজ রংয়ের ক্যামিক্যাল আর অন্যটিতে মেরুন রংয়ের।

তারপর কাছে এসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নাকি সুরে বলে,”ভূইয়া ও ভূইয়া ঘুমিয়ে গেছো! কি ক্লান্ত! রিসার্চ নিয়ে চিন্তা হচ্ছে! সব ঠিক হয়ে যাবে। যেকোন কষ্টের ফলাফল আছে। এই নাও ফ্লাস্ক দুটো রাখোতো। ”
এমন করে প্রায় প্রতি গভীর রাতে ল্যাবে সেই প্রিয়দর্শিনীর সাথে কথা হয়। সারাদিনের চেনা জীবন থেকে এম.এন ভূইয়া অন্যকোন জগতে চলে যায়। আলো আধারির সেই প্রিয়দর্শিনীর সাথে জীবনের অনুক্ত দু:খ সুখ গুলো এম.এন ভূইয়া কোন দ্বন্দ্ব ছাড়াই প্রকাশ করতে পারে। চেনা প্রিয় মানুষরাও মাঝে মাঝে ঈর্ষা কাতর হয়ে মনের অজান্তে ব্যথা দেয়। কিন্তু অদৃশ্য অস্তিত্বরা তা করে না ।

কারন মানব মনের মতো কোন স্বার্থপর মন তাদের থাকে না। এই চেনা পৃথিবীর থেকে অচেনা এক জগৎ নিয়ে এম.এন ভূইয়ার অদ্ভুত জীবনটা ভালই কাটছিল। একদিন ভোর রাতে ল্যাবেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।তখন রাত সাড়ে তিনটায় ঘুম ভেঙেগ যায়।তিন ঘনটা সময় পার্থক্য হওয়ায় বাংলাদেশে তখন রাত সাড়ে বারোটা। কি মনেকরে ফেসবুকে হোম পেজে ঢুকতেই দেখে সেই অদৃশ্য প্রিয়দর্শিনীর মতো কোন মানবী। ঘুম ঘোরে কিছুই বিশ্বাস হচেছে না। অনেকটা সময় ধরে তাকিয়ে থাকার পরও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস হয়না।

তারপর থেকে এম.এন ভূইয়া সেই প্রিয়দর্শিনীর দেখা পায়না।জীবনে আসা সেই মানবীর মাঝেই যেন সেই অষ্টাদশী প্রিয়দর্শিনীর অদ্ভুত অবয়বের ছায়া। জীবনের অদ্ভুত খেলায় সব যেন নিজের নিয়মের মধ্যেই চলছে। তারপর একদিন অজস্র পানির বাষ্প কনা থেকে সেই ক্যামিক্যালটি পাওয়া গেল। দুর্ভেদ্য অসম্ভব সফলতা সহজ পথে হাটতে লাগলো। রহস্যময় বিজ্ঞানের ইতিহাসে নিজের নামটিও যুক্ত হলো।

তবুও কোথাও যেন জীবনের রহস্যভেদ হলো না। সাথে আসা সেই অজানা পারফিউমের সুঘ্রাণটা মস্তিষ্কের কোথাও একান্ত গভীরে জায়গা করে নিল। একদিন ফেসবুকের টাইম লাইনে ভাসা সেই মানবী ও জাপান সাগর অতিক্রম করে সহস্র মেঘ ছুয়েঁ ছুয়েঁ এম.এন ভূইয়ার জীবনে সত্যি হয়ে এলো।

জীবনের সব মেঘজাল কেটে গিয়ে সাফল্যের সূর্যের হাসি দেখা দিল। তবুও প্রাত্যহিক জীবনের নানা জটিলতা আর সুখ দু:খের মাঝে সেই নিরবে আসা অদৃশ্য প্রিয়দর্শিনীর আধারি অবয়ব ভেসে উঠে। কখনও পাশে থাকা মানবীর মাঝে আবার কখনও ক্লান্ত বিকেলের একান্ত নিঃসঙগ ভাবনায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সেলিনা ইসলাম স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার বাস্তবে দেখা...! চমৎকার গল্প শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬
ভালো লাগার জন্যে ভালোবাসা রইলো। অশেষ ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
ভালো লাগেনি ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব গল্পকারের জন্য অসংখ্য ভালোবাসা!! লিখতে থাকুন। সাফল্য অাসবে।
ভালো লাগেনি ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬
অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো লাগেনি ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬
আপনাকে ধন্যবাদ। অবশ্যই পড়বো।
ভালো লাগেনি ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬
মিলন বনিক গল্প বলার ঢং-েএ বৈচিত্র আছে..একটু যত্ন নিলে অারো অনেক ভালো হবে...শুভকামনা...
এম এ রউফ গতানুগতিক লেখা। শেষটা একটু .........তবে ভাল লাগলো
হুমায়ূন কবির Likhata pore valo laglo, du akta banane vul ache. subecha soho vut...
জয় শর্মা (আকিঞ্চন) আমার কিন্তু বেশ লেগেছে। সরল ভাবে শুরু, শেষ টা জটিল হলেও বেশ সহজতম জট... ভোট এবং শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬
উৎসাহ পেলাম।অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬
রওনক নূর আপু আমি অনেক সময় নিয়ে সবটুকু লেখা পড়েছে অসাধারন লিখেছ।
অশেষ ধন্যবাদ রওনক।
Fahmida Bari Bipu Amar o mone hoyese, apni lekha lekhi te notun Na. Shuvokamona roilo. Ami honest opinion dewar pokkhhhe. Daishara comment e kisu jana jai Na. Valo thakten..:)
আপা,এই ব্লগে ঢুকেই আপনি সহ বেশ কয়েকজনের লেখা পড়েছি। সময় পেলে আপনাদের খুজেঁ নেই। দোয়া করবেন। অশেষ ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

০২ নভেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪