অনুপমা কিরে মা অনেক সকাল হয়ে গেলো উঠবিত। হে তোমর আদরের মেয়ে আজ খুব সকালে উঠছে। কিরে অনুপমা তুই আজ এত সকাল সকাল উঠেছিস? মা ফুলের সাজি হাতে এগিয়ে এলো ওর কাছে। আকাশে সূর্যের হালকা উঁকিঝুঁকি, নীলচে কার্পেটে যেন কমলার ছোপ। এই সময় মায়ের সদ্যস্নাতা চুল দিয়ে জলের বিন্দুগুলো গড়িয়ে পরছে। মায়ের গায়ের থেকে চন্দনের বেশ একটা মিষ্টি গন্ধ আসছে। কই ঐ একই সাবান দিয়ে স্নান করেও তো অনুপমার গা দিয়ে এমন স্বর্গীয় গন্ধ আসে না? অনুপমা হয়তো মায়ের মতো পবিত্র নয় তাই!! তাহলে অনুপমা কি অপবিত্র!! কমল বলেছে, অপবিত্র বলে কোনো শব্দের অস্তিত্ব নেই। পবিত্রর সামনে একটা 'অ' বসিয়ে দিলেই কি সব কিছুর পরিবর্তন ঘটে যায়?? আচ্ছা বাপি এত চকলেট কিনে দেওয়া সত্ত্বেও কেন যে অনুপমা রায় কাকুর কাছ থেকে চকলেট নিতে কাকিমার অবর্তমানে কাকুর ঘরে ঢুকেছিলো। আর কাকু সেদিন ছাদ থেকে ইশারায় একটা বড় চকলেটের প্যাকেট দেখিয়ে ছিল অনুপমাকে। আজ পনেরো বছর পরও সেই বছর আঠেরোর অনুপমা ছটফট করে উঠলো। সদ্য জাগ্রত তার স্তন যুগল যেন যন্ত্রনায় কঁকিয়ে ওঠে আজও। এখন মাকে ছুঁয়ে দিলে মা কি বকবে? না হলে ওর খুব ইচ্ছে করছে একবার ছুটে গিয়ে মায়ের ঐ আধভেজা গায়ে মুখ ডুবিয়ে খুব কাঁদতে। সেই বছর আঠেরোর অনুপমার কাছে সেদিন বিস্ময় ছিল, চকলেট নেওয়া এতো কষ্টকর কেন? কেন রায় কাকু ওর নরম ঠোঁট দুটোকে নিজের মুখে ভরে ওর নিঃশ্বাস আটকে দিতে চাইছে!! কই বাবা যখন চকলেট দেয় ওর তো কোনো খারাপ লাগে না, অর্ক দাদাভাই যখন ওকে আইসক্রিম দেয় তখনও তো ওর বমি পায়না। এমনকি ওর ক্লাস মেট কমল যখন ওকে চকলেট কেক দেয় তখনও তো ওর বুকে এতো যন্ত্রনা করে না!! তাহলে রায় কাকু কেন বলছে বড়ো চকলেট পেতে গেলে এভাবেই নিতে হয়। আর এসব করতে হয়। এমনকি ওর ফ্রক তুলে পায়জামা খুলতে চাইছিল রায় কাকু। তখন অনুপমা কোনোমতে চকলেট না নিয়েই রায় কাকুর হাতে কামড়ে দিয়ে পালিয়ে এসেছিলো। একটা কথা মা শিখিয়েছিল, কারোর সামনে কাপর খুলে স্নান করতে নেই, অনুপমা এখন অনেক বড় হয়েছে। তাই সেদিন কিছুতেই রায় কাকুকে তার পায়জামা খুলতে দেয় নি ও। ঘরে এসে একটা অস্বস্থি আর খারাপ লাগা থেকে খুব কাঁদছিলো অনুপমা। সেদিন বাবা,মা বারবার জানতে চেয়েছিলো অনুপমা কোথায় পরে গেছে? কোনো বন্ধুকি অনুপমাকে মেরেছে? কারোর সাথে কি ওর ঝগড়া হয়েছে? কোনো কুকুর কি ওকে তাড়া করেছে? বাবা বলছিল, কার এতো বড় সাহস! কে আমার অনুপমা মামনিকে মেরেছে, আমি তাকে এখুনি পুলিশে দেব!! ওরে বাবা! তারমানে বাবা জানতে পারলে রায় কাকুর জেল হবে?? কিন্তু তাহলে কাকিমা তো খুব কাঁদবে? মিনি দিদিও কষ্ট পাবে, তার বাবা জেলে গেছে বলে!! অনুপমা চুপ করে গিয়েছিলো ভয়ে। ঐ খাকি পোশাক পরা কাউকে ট্রেনে দেখলেই মা বলে অনুপমা দুস্টুমি করলেই কিন্তু ধরে নিয়ে যাবে। মা কোনো একটা রবীন্দ্রসংগীতের লাইন
গুনগুন করছে। রবীন্দ্রসংগীতের এই এক মাহাত্ম তুমি কথাগুলো না জানলেও শুধু সুরের মূর্ছনায় চিনে যাবে এটি আমাদের কবিগুরুর। অনুপমার মনখারাপের সন্ধ্যেগুলোতে কবিগুরু ওকে সঙ্গ দেয়। অনুপমা কাল ভোর রাতে আবার ফিরে গিয়েছিলো সেই পনেরো বছর আগেকার সন্ধ্যেতে। অদ্ভুত একটা ব্যাপার...এতো বছর হয়ে গেলো, মানুষের শারীরিক চাহিদা, ভালোলাগা, খারাপলাগা সব এখন সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার অনুপমার কাছে তবুও ঐ সন্ধ্যের অব্যক্ত বমি বমি কষ্টটা আজও তাকে তাড়া করে নিয়ে বেড়ায়। ঘামে ভিজে যায় ওর কপাল,গলার ভাঁজ, ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে রায় কাকুর গলাটা চেপে ধরে। ঠিক ঐ ভাবে ওরও শ্বাস আটকে দেয়। অনুপমার এই লুকিয়ে রাখা কথাটা একমাত্র কমল জানে। কে জানে কেন ক্লাস ফোরের কমল অনুপমাকে বলেছিলো, ঐ লোকটা খুব নোংরা তুই আর কখনো ওর কাছ থেকে চকলেট নিবি না। কমলের অপটু হাতের একটা ঢিল রায় কাকুর মাথায় না লেগে পিঠে লেগেছিল সেদিন। অনুপমা জানে কমল ঐ ঢিলটা ঠিক কেন ছুঁড়ে ছিল। কমলের মা রেখা আন্টি ওকে বেয়াদপ ছেলে বলে খুব মেরেছিলো, সেদিন অনুপমার বড্ড কান্না পেয়েছিল। বছর বাইশ তেইশএর অনুপমার সমস্ত শরীর জুড়ে যে যৌবনের হাতছানি তার একমাত্র ভাগীদার কমল। যদিও অনুপমা সেটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করলেও কিছুতেই কমলকে বুঝতে দেয় না। কমলো নিশ্চিত ভাবেই জানে অনুপমা শুধু ওর, একান্ত ভাবে ওর। যেদিন এম বি এ পড়ার জন্য কমল লন্ডনে যাচ্ছিলো সেদিন
অনুপমা কিছুতেই এয়ারপোর্টে যেতে চায়নি। কারণ অনুপমা নিশ্চিত জানতো যে রেখা আন্টি আর প্রশান্ত কাকুর সামনেই ও কেঁদে ফেলবে। ফ্লাইট ধরার আগে কমল সকালের দিকে হাজির অনুপমার স্টাডি রুমে। কানের কাছে মুখটা এনে খুব আস্তে আস্তে কমল বলেছিলো, শোন পেঁচি তোর মত মুটকিকে আমি ছাড়া কেউ বিয়ে করবে না। তাই নিশ্চিন্তে তিনটে বছর অপেক্ষা কর আমি ফিরে এসে তোর একটা গতি করবো। কমলের কথা বলার স্টাইলটা অনুপমার কাছে নতুন নয়, কিন্তু খানিক্ষনের মধ্যেই দৃষ্টির আড়ালে চলে যাবে ওর সব থেকে কাছের মানুষটা এটা ভেবেই তোলপাড় চলছিল ওর মনে। চোখের জল শাসন না মেনেই কমলের
সামনেই গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো। কমলের আজ ফিরে আসার কথা লন্ডন থেকে। এতদিনের অদর্শনে দুজনেই ব্যাকুল। অপেক্ষার এই শেষ সময়টা বড় দীর্ঘ হয়। কিছুতেই যেন বিকেল পাঁচটা বাজছে না। অনুপমার অস্থিরতা দেখে হাসি মুখে বাবা জিজ্ঞেস করলো, কমলের ফ্লাইট তো সেই বিকেলে তুই এখন থেকেই ছটফট করছিস কেন মামনি?? লজ্জা পেয়ে ঘরে ঢুকে গেলো অনুপমা। অনুপমাকে আচমকা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো কমল। তারমানে ওর ফ্লাইট সকালে ছিল, শুধু অনুপমার সাথে দুস্টুমি করবে বলেই মিথ্যে বলেছে কমল। কমলের সাথে এতদিন পরে দেখা করতে যাবে বলে, ব্লু লং স্কার্ট আর ইয়েলো টপটা রেডি করে রেখেছিল অনুপমা। এখন এই বাড়িতে অগোছালো ভাবেই কমল দেখলো ওকে। ধুর!!!কমল টা না... শোন পেঁচি ঐ ভালো পোশাক পরলেই যে তোকে রাণী মুখার্জী লাগবে না তা আমি জানি। কিন্তু তুই যেটা জানিস না সেটা হলো, এখানে যদি রাণী মুখার্জীও উপস্থিত থাকতো তবুও আমি এই পাগলিটাকেই জড়িয়ে ধরতাম। এর আগে কোনোদিন কমল অনুপমার ঠোঁটে চুম্বন করেনি। না,অনুপমা দিতে চায়নি বা
ও চেয়ে ফিরে গেছে এমন
নয়, ওদের কারোরই মনে
হয়নি এই সম্পর্কটায় চুম্বনের কোনো বিশেষ গুরুত্ব আছে!! তাদের বন্ধুত্বটা এতটাই গাঢ় ছিল কখন যে ছিদ্রপথে প্রেম ঢুকে পড়েছিল ওরা বোধহয় বুঝতেই পারিনি। কমলের গায়ের পুরুষালী ঘেমো গন্ধটায় অনুপমা রক্তের শিহরণ টের পাচ্ছে। কমলের চোখ দুটো আজ একটু অচেনা লাগছে অনুপমার। কেমন যেন মায়াবী দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওর চির পরিচিতা অনুপমার দিকে। ওর মোটা পুরুষ্ঠ ঠোঁট দুটো আলতো ভাবে অনুপমার ঠোঁট স্পর্শ করল। একটা অসহ্য ভালোলাগায় পরিপূর্ন অনুপমার অনুভূতিরা। উফ অসহ্য ! এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়েছে ও কমলকে। আরেকটু হলেই কমল মাটিতে ছিটকে পরে যেত। কোনোমতে টাল সামলেই কাছে এলো কমল। খুব আস্তে আস্তে হাত বোলাল অনুপমার এলোমেলো শরীরে  না আঁচড়ানো চুলে। আঠ বছরের একটা খারাপ স্মৃতি বহন করে আর কতদিন চলবি অনুপমা?? ভালোলাগাগুলো উপভোগ কর, ভালোবাসাগুলো আকণ্ঠ পান কর, আর এক দু বছর পরই আমরা স্বামী স্ত্রী হবো। তুই আমার সন্তানের মা হবি। একটা ছোট্ট অনুপমা আসবে হয়তো। তাকে তো তোকেই শেখাতে হবে... শরীরের কোনো একটা অংশে ক্ষত হলে সেই অঙ্গটাকে কেটে না ফেলে ক্ষতটাকে সারিয়ে তোলা উচিত। তুই যদি নিজেই না বিশ্বাস করিস ওটা একটা একসিডেন্ট ছিল তাহলে তুই তাকে কি শেখাবি!! তুই চাইলে আজও ঐ ছোটলোকটাকে আমি শাস্তি দিতে পারি অনুপমা। আজ আর পরিণত হাতের ঢিলটা লক্ষ্যভ্রস্ট হবে না। একটা একসিডেন্ট কি জীবনকে থামিয়ে দিতে পারে অনুপমা?? আজ রায় কাকুর পঁয়ষট্টি বছর বয়স হলো, আর ওর বাঁ দিকটা প্যারালাইজড হয়ে গেছে কমল তুই আর তাকে কি শাস্তি দিবি রে?? দীর্ঘ আলিঙ্গন চুম্বনের পর অনুপমা ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলো ভালোলাগা, নিজের ইচ্ছেয় নিজেকে সমর্পন করা আর জোর করার মধ্যে পার্থক্যটা ঠিক কোথায়!! কমলের মুখের লালায় সিক্ত হতে হতে অনুপমা অনুভব করলো দীর্ঘ পনেরো বছরের ঐ অস্বস্থিকর বমির অনুভুতিটা ওর মন ছেড়ে বেপাত্তা হয়েছে এই মুহূর্তে। খুব চেপে আঁকড়ে ধরে আছে অনুপমা কমলকে। কমল বললো, পাগলি এবার লাগছে ছাড় রে। অনুপমা হেসে বললো দুষ্ট কোথাকার।            
                        
            
            
            
                        
            
            
                        
            
         
        
               
   
    
                    
        
        
            
            
                 ০৪ আগষ্ট  - ২০১৬ 
                                        
                            গল্প/কবিতা:
                            ৩৭ টি
                        
                    
            
            
         
     
    
        
বিজ্ঞপ্তি
        এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
    
    
        প্রতি মাসেই পুরস্কার
        
            বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
        
        
            লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
            
                - 
                    
                    
                        প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                    
                 
                - 
                    
                    
                        দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                    
                 
                - 
                    
                    
                        তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
                    
                 
            
         
     
    
    
        আগামী সংখ্যার বিষয়
        
        
            
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ  ২৫ নভেম্বর,২০২৫