১..
শহরের মধ্যে অবহেলার উদাহরন হয়ে আছে উত্তর দিকের বস্তিটা ৷ বস্তির আশে—পাশে আবর্জনার স্তুপ ৷ মশা মাছির নিরাপদ আবাসস্হল সেখানে ৷ দুর্গন্ধে এমন ই ভরপুর তা যে সহজে ভদ্র বলে দাবিদার মানুষদের পা পড়ে না ৷ এমন ই এক নোংরা পরিবেশে কিছু ঝুপড়ি ঘরে একদল সংগ্রামী মানুষের বসবাস ৷ তা পরিবেশ যতই নোংরা হওক সংগ্রামী মানুষগুলোর কাছে এই যেন স্বর্গ ৷ এখানেই তারা মাথা গুঁজার টাই পেয়েছে ৷ এখানে প্রতিটি সংগ্রামী মানুষ এক জন আরেক জনের সাথে দুঃখ বিনিময় করে ৷ দুঃখের মাঝে ও হঠাৎ কখনও সুখ মরিচীকার মতো উঁকি দেয় ,কোন বিশেষ দিন বা বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ৷ তবে এ অবস্হা যে সবসময়ের জন্য তা না ৷ একটি নির্দিষ্ট সময় আছে যখন তারা আশায় সপ্ন দেখে দুঃখ—কষ্টকে জয় করার ৷ আর সেই কাঙ্খিত সময় টা হলো নিবার্চন এর সময় ৷ যা বস্তিবাসীদের কাছে ইলেকশন নামেই জনপ্রিয় ৷ সেসময় বস্তিমুখ হতে বিমুখ থাকা সাহেবদের পদ দূলি পড়ে প্রতিদিন সকাল,দুপুর,রাত্র ৷ নির্বাচনের প্রার্থিগন পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নেন তাদের ৷ বয়স্কদের পা ধরে আর্শিবাদ,দোয়া নেন ৷ সাথে তাদের মুখে তাকে হাজারো প্রতিশ্রুতি ৷ বস্তিতে রাস্তা করে দিবেন,মশা মাছির ঔষদ দিবেন নিয়মিত,ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্হা করে দিবেন,ময়লা আবর্জনা আর বস্তির পাশে ফেলবেন না,বস্তিবাসীর বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্হা করে দিবেন,বস্তিতে শিক্ষা র ব্যবস্হা করে দিবেন ,বস্তিবাসীদের চাকুরীর ব্যবস্হা করে দিবেন ইত্যাদি এমন হাজারো প্রতিশ্রুতি থাকে তাদের ৷ তাই নির্বাচন এলেই বস্তিবাসী সপ্ন দেখেন ভাগ্য বদলের ৷ কিন্তু নির্বাচন যায় নির্বাচন আসে তবুও বস্তিবাসীর ভাগ্যের হের ফের হয় না কখনও ৷ নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে তাদের দেখা সপ্নের ভাঙ্গা শুরু হয় ৷ তবুও পরের নিবার্চন ই আবার সপ্ন দেখেন ভাগ্য বদলের ৷ জানে ভাগ্যে বদল হবে না ৷ তবুও সপ্ন দেখে ৷ হয়ত গরীবরা সপ্ন দেখতে ভালোবাসে বলে ৷ হয়ত সপ্ন দেখতে পয়সা লাগে না বলে ৷ তবে কিছু বস্তিবাসী ব্যতিক্রম আছে ৷৷ তাই হয়ত প্রার্থীরা পয়সার লোভ ও জাগাতে চায় ৷ আবার ক্ষেত্রবিশেষে পেশি শক্তির ব্যবহার টাও করে নিবার্চন এলে ৷
২....
এই বস্তিবাসীর জীবনের ভাগ্য নিবার্চন ফেরাতে না পারলে ও ফেরানোর সপ্নে কাজ করে যাচ্ছে বস্তীর ই একদল অর্ধ শিক্ষিত যুবক—যুবতী ৷ এই ভাগ্য অন্বেষন করা যুবক—যুবতী দের অনুপ্রেরণা ,সাহস ও মনোবল যুগিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে একটি তরুনী ৷ নেতৃত্ব বলতে সাধারনত অর্থে যা বুঝায় এখানে তা নয় ৷ এখানে ক্ষমতা পাওয়ার,বা অর্থ ,বিত্ত ও প্রভাব বিস্তারের কোন বিষয় নেই ৷ এখানে নিজেদের মৌলিক অধিকারসমূহ অর্জন করার জন্য লড়াই রত একদল মানুষকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে এগিয়ে নিয়া যাওয়া অর্থে নেতৃত্ব ৷ আর এই বিশেষ কাজটি করছে যে তার নাম নন্দিতা ৷ সদ্য যৌবনে পা দেয়া সাহসী এই তরুণীটিকে এই বস্তিপাড়ায় দিশা নামেই চিনে সবাই ৷ আর সে নামের মতই বস্তিপাড়ায় সবাকেই বিপদে—আপদে সঠিক দিশা দেখিয়ে চলছে ৷ছোটদের কাছে সে তাদের প্রিয় দিশা দিদি ৷ যে তাদের সকল আবদার হাসি মুখে সাধ্য মতো পূরণের চেষ্টা করে যা তাদের মা বাবা ও করার সাহস পায় না ৷ আর বড়রা যে কাজ ই করুক তাদের আদরের দিশা মায়ের পরামর্শ না নিয়ে করবেই না তা ছোট—বড় যে কাজ ই হোক ৷ দিশার এসব বিরক্ত হওয়ার কথা ছিল ৷ যে কোন মানুষের ই হওয়ার কথা ৷ এটাই স্বাভাবিক বিষয় ৷ কীন্তু দিশা বোধহয় অন্য ধাতুতে গড়া ছিল ৷ এসব বিষয়ে বিরক্ত হবে দূরে থাক এসব বিষয়ে সে ভালোবেসে খুশি হয়ে এগিয়ে যেত ৷ যেন এসবের মাঝে ই নিজের দুঃখ—কষ্টগুলোর সেই পুরোনো দিন গুলোকে খুঁজে পায় ৷ দিশা এক অতি সাধারন মেয়ে ৷ কিন্তু সাধরনের মাঝেও এসব গুণাবলীর জন্য অসাধারন সে !
৩...
নন্দিতার পৈত্তিক ভূমি যদিও এটা নয় ৷ এটা তার মায়ের জম্মস্হান ৷ তার মা এ বস্তিতেই জম্ম গ্রহন করেছিলেন ৷ এখানে ই বড় হয়ে উঠেছিলেন ৷ ওনার মাঝে ও বস্তিবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে সপ্ন ছিল ৷ ওনি ই এই সংগ্রাম শুরু করে ছিলেন ৷ খুব লড়াকু মনোভাবের ছিলেন নন্দিতার মা ৷ আর এই লড়াকু মনোভাবটাই হয় ত নন্দিতা তার মা য়ের কাছ থেকে পেয়েছ ৷ নন্দিতার মা ভালোবেসে বিয়ে করেন এক চিত্র শিল্পীকে ৷ ওই বস্তির উপর চিত্রঅংকন করতে এসে তিনি নন্দিতার মায়ের প্রেমে পড়েছেন ৷ দুজনে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন ৷ সব কিছু টিকটাক চলছিল ৷ নন্দিতার মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বস্তিবাসীর উন্নয়নে সহযোগিতা করছিলেন নন্দিতার বাবা ৷ নন্দিতার জম্ম হলো ৷ চিত্র শিল্পী বাবা স্বাদ করে নাম রাখেন নন্দিতা ৷ আর নন্দিতার মা ওকে দিশা নামেই আদর করেন ৷ চিত্রশিল্পী বাবা বয়স বাড়ার সাথে সাথে নন্দিতাকে স্কুলে ভর্তি করে দেন ৷ নন্দিতার মায়ের অপূর্ন ইচ্ছে ছিল সংগীত শিল্পী হওয়ার ৷ ভালো গান গাইতেন ও৷ ভালো প্রতিভাও ছিল ৷ কিন্তু যেখানে বেঁচে থাকতেই প্রতিদিন সংগ্রাম করতে হতো সেখানে স্বাদ ও ইচ্ছে দেখাই ছিল বাবুআনা ৷ তাই নন্দিতার মায়ের প্রতিভা আর পূর্ণতা পায় নি ৷ ইচ্ছাটা অপূর্ণ ই রয়ে যায় ৷ কিন্তু তিনি নিজের মেয়ে নন্দিতার মাঝে যেন নিজেকে খুঁজে পান ৷ তা অবশ্য সকল মা বাবাই নিজের সন্তানের মাঝে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখেন ৷ আর তাই নন্দিতার মাও নিজের অপূর্ণ ইচ্ছাটা নিজের মেয়ের মাধ্যমেই পূরণ করতে চান ৷ তাই তিনি নন্দিতার জন্য গানের শিক্ষক রেখে দিলেন ৷ নন্দিতার চিত্রশিল্পী বাবার যদিও ইচ্ছে ছিল মেয়েকে চিত্র শিল্পী ই তৈরি করবেন তবুও তিনি খুশি ই হলেন৷ এভাবেই বস্তিবাসীর উন্নয়নে নিঃস্বার্থ ভাবে চেষ্টা ও হাসিখুশিতে ভালো ই চলছিল তিনজন মানুষের জীবন ৷ এর মাঝেই আবার নতুন সদ্যসের আগমন তাদের পরিবারে ৷৷ নন্দিতার ছোট বোন ৷ নন্দিতার ছোট বোনের জম্মের পর তাদের পরিবারে আনন্দের সীমা ছিল না ৷নন্দিতার বাবা নন্দিতার সাথে মিলিয়ে নাম রাখেন সন্চিতা ৷ নন্দিতার মাও তার আদরের দিশার সাথে মিলিয়েই নাম রাখেন তৃষা ৷ আনন্দেই দিন কাটছিল তাদের ৷ হঠাৎ করে ই খবর আসে নন্দিতার দাদু মারা গিয়েছেন ৷ নন্দিতার বাবা প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়েন ৷ নন্দিতার মা তাকে সান্তনা দিয়ে শান্ত করেন ৷ নন্দিতারা সবাই দাদুর বাড়ির উদ্দ্যেশে রওয়ানা হওন ৷ বাড়ি গিয়ে নন্দিতার দাদুকে শেষ দেখা দেখতে পারেন নি ৷ নন্দিতার দাদু ছিলেন প্রচন্ড রাগী ৷ ছেলে মতের অমতে বিয়ে করায় তাকে ত্যাজ্য পুত্র করে দেন ৷ সকল সম্পত্তি ২ মেয়ের নামে লিখে দিয়ে তাকে বন্চিত করেন ৷ নন্দিতার ঠাকুরমা নন্দিতার বাবার ছোট বেলায় ই দেহ ত্যাগ করেছিলেন ৷ তাই আর কেউ তাদের খুঁজ নেয় নি ৷ অপরদিকে বোনেরা না পাওয়া সম্পত্তি পেয়ে আর হারাতে চায় নি ৷ তাই ভাইয়ের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল ৷ আর তাই নন্দিতার দাদু দেহ ত্যাগ করলেও তার একমাত্র ছেলে সন্তানকে এই সংবাদ জানতে দেন নি প্রথমে ৷ অনেক পরে সামাজিক চাপে পরে খবর দেন ৷ তাই নন্দিতাদের দাদুর বাড়িতে তাদের জন্য ভালো কিছু ছিল না ৷ সবাই কথা শুনাচ্ছিল তাদের ৷ তার বাবা চলে আসে তাদের নিয়ে ৷ আসার পথে সব স্বাভাবিক ছিল ৷ নন্দিতার বাবা তার মা কে বলছিলেন সম্পতির জন্য আমাদের লোভ বা আফসুস নেই ৷ এখন আমাদের একমাত্র কাজ মেয়ে দুটোকে মানুষ করা ৷ তারা দুজন মেয়েদের ফিউচার নিয়ে কথা বলছিলেন ৷ অপরদিকে পেছনের সিটে নন্দিতার কোলে সন্চিতা দুজনই ঘুমোচ্ছিল ৷ হঠাৎ করেই সর্বনাশ ঘটে যায় ৷ নন্দিতাদের গাড়িটার ব্রেক ফেল করা ওভার কন্টোল ও অতি গতির একটি ট্রাকে র মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় ৷ ধুমরে মুছে যায় নন্দিতাদের প্রাইভেট কারটা ৷ নন্দিতার বাবা বিপদ বুঝা মাত্রই প্রানপণ চেষ্টা করেন নিজর স্ত্রী ও সন্তানদের বাঁচানোর ৷ তিনি ওদের টেলে ফেলে দেন গাড়ী থেকে ৷ ওই দুর্ঘটনায় স্পট ডেট হওন নন্দিতার বাবা ও ড্রাইবার ৷ নন্দিতার মাকে গুরুতর অবস্হায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয় ৷ অলৌকিক ভাবে অক্ষত অবস্হায় বেঁচে যায় নন্দিতা ও তার বোন সন্চিতা ৷ কিন্তু তার মা ও হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে হার মানেন ৷ মূহুর্তেই দুটি শিশু এতিম হয়ে যায় ৷ নন্দিতা তখন একটু বুঝত ৷ ও কেঁদে কেঁদে পাথর হয়ে যায় ৷ তাদের দায়িত্ব নেয় ওই বস্তিতে থাকা তার একমাত্র মামা ৷ ওনি অনেক বুঝিয়ে সন্চিতার কথা বলে নন্দিতাকে ওই শোকাবহ অবস্হা থেকে বের করে আনেন ৷ এর পর থেকেই নন্দিতার শুরু হয় নতুন সংগ্রাম ,বেঁচে থাকার সংগ্রাম ও বোনকে মানুষ করার সংগ্রাম !
৪....
আর এই সংগ্রামে সবই ছিল তার বিপরীতে ৷ দুঃখ,দ্রারিত্ব ছিল নিত্য সাথী ৷ নন্দিতার চেনা ও পরিচিত পৃথীবীটা হঠাৎ ই বড় অপরিচিত ও অচেনা হয়ে উঠল ৷ এমন কি তাদের মামী ও বুঝা মনে করতে লাগলো ৷ তবে লড়াকু মনোভাব ও মামার সহযোগিতায় নন্দিতা পড়াশুনো চালিয়ে যেত লাগলো আবার বোনকে ও মানুষ করতে লাগলো ৷৷ এভাবেই চলছিল তার সংগ্রামের দিনগুলো ৷ কিন্তু তাদের নিয়ে মামার সংসারে অশান্তি লেগেই থাকত ৷ তাও অবশ্য উচিত ও মনে হয় নন্দিতার কাছে ৷ কারন মামা দরিদ্র, বস্তিতেই থাকেন ৷ যেখানে নিজের সংসার চালাতেই নিত্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে সেখানে বোনের মেয়েদের দায়িত্ব নিলে এই বঙ্গ দেশে সহজে তা মেনে নিবে এমন স্ত্রী খুবই বিরল ৷ এটা ভালো করেই বুঝত নন্দিতা ৷ তবে সে নিরুপায় ৷ তাই নিরবে কাঁদত আর একটু বড় হয়ে কাজে লাগার অপেক্ষা করত ৷ এভাবে দেখতে দেখতে নন্দিতা তার পড়া শুনো এস এস সি শেষ করলো ৷ কলেজে ভর্তি হয়ে সে টিউশন শুরু করলো ৷ ভাল ছাত্রী হওয়ার ও অমায়িক ব্যবহার হওয়ায় সে সহজেই ভালো বেতনের টিউশনি পেল ৷ ফলে তার মামার উপর আর নির্ভর করার প্রয়োজন পড়ত না ৷ বরং মামার সংসারে সাহায্য করতে লাগলো ৷ এতে এতদিন অশান্তি করা ও তাদের দুচোখে দেখতে না পারা মামী ও আজ তাদের সেন্হের দৃষ্টিতে দেখে ৷ যা দেখে পরম শান্তি পেত নন্দিতা ৷ তার মায়ের কথা মনে পড়ত ৷ এত ঝড় ঝাপটার পরও নন্দিতা তার মায়ের অপূর্ণ ইচ্ছাটাকে বাদ দেয় নি ৷ বরং নিজ উৎসাহে তার বোন সন্চিতার মাঝে ও তা ছড়িয়ে দিল ৷তাকে ভালো গানের শিক্ষক রেখে দিল ৷ নন্দিতা ও তার বোন সন্চিতা দুজনেই ভাল গানের শিল্পী হিসেবে অনেক সুনাম ও পুরুষ্কার অর্জন করলো ৷ তাদের গানে মুগ্ধ হতো শ্রোতা ৷৪.২নন্দিতা এটা ভেবে মনে মনে আনন্দিত হতো যে তার মায়ের অপূর্ণ ইচ্ছা টা কিছুটা হলেও পূর্ণতা পাচ্ছে ৷ তবে দু বোনের মধ্যে গানের দিক থেকে নন্দিতাই সেরা ৷ এটার জন্য তার কোন গর্ব নেই ৷ বরং ছোট বোনের কাছে সে পরাজিত হলেই বেশি আনন্দিত হতো সে ৷ তবে অন্য একটি বিদ্যার জন্য সে তার ছোট বোন সন্চিতার জন্য অনেক গর্ব করে ৷ আর সেটা হলো চিত্র অংকন ৷ আর্টিস্ট বাবার ওই ঐতিহ্য টা ধরে রাখার জন্য সে অন্তর থেকে প্রতিদিন সন্চিতাকে ধন্যবাদ জানায় ৷ সন্চিতাও তার বাবার মতই চিত্র অংকন করতে খুবই ভালোবাসে ৷ এই বিদ্যাটা শিখার জন্য তার কোন শিক্ষকের প্রয়োজন অনুভব হই নি কখনও ৷ বরং অনেক বিশেষ চিত্রশিল্পী তার চিত্র অংকন দেখে আশ্চর্যিত হয় ৷ জম্মগত প্রতিভাগুলো যেন পিতৃ—মাতৃহারা দু বোনের মাঝে মা—বাবার পরশ হয়ে পাশে রয়েছে ৷৷
৫...
যাই হোক কষ্টের ও সংগ্রামের দিনগুলো ভালই কাটছিল নন্দিতার ৷ এর মাঝে তার জীবনে এক নতুন মোড় নেয় ৷ তারই মতো জীবনযুদ্ধে সংগ্রামী ছেলে নিত্যলাল রায় ৷ পেশায় একটি স্হানীয় পত্রিকার সাংবাদিক ৷ নন্দিতা যখন বস্তিরবাসীদের নিয়ে বস্তিতে বিশুদ্ধ পানির দাবিতে পৌর ভবনের সামনে আন্দোলন করছিল তখন দেখা ৷ নিত্য রায়ের নন্দিতার এই সাহসী ও নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন মুগ্ধ করেছিল ৷ অপরদিকে নন্দিতাও নিত্যরায়কে একটি বিশেষ কারনে ভাল লেগেছিল ৷ তা হলো অধিকাংশ সাংবাদিক যখন টাকা খেয়ে তাদের আন্দোলনের সংবাদ কাভার করত আসে নি ৷ তখন নিত্য রায় ই সত্যে ও সাংবাদিক স্বত্তায় অবিচল থেকে তাদের আন্দোলন কাভার করতে এসেছে ৷ যা নন্দিতাকে বিমুগ্ধ করেছিল ৷ আর এই শুরূ তারপর হতে বিভিন্ন কারনে অসংখ্যবার দেখা হয়েছে যত ততই পরস্পরের সংগ্রামী জীবন ও ব্যক্তিজীবনের প্রতি কৌতুহল ততই বেড়েছে ৷ আর তাই দুজন দুজনের সংগ্রামী জীবনের গল্প শেয়ার করে ঘনিষ্ট হয়েছে আরও ৷ দুজনই দুজনের ভাল বন্ধু হয়ে যায় ৷ এই বন্ধুত যে কখন ভালোবাসায় রুপ নেয় তা কেউ ই বুঝতে পারে না ৷ বাট নন্দিতার ভালোবাসা ও আবেগ থাকলেও তার বহিঃপ্রকাশ করতে চায় না ছোট বোন ও মা বাবার সপ্নের কথা ভেবেই ৷ সে নিত্যরায়কে শুধু বন্ধু হিসেবে চায় ৷ নিত্যরায়ের শত অনুরোধেও মন গলে নি ৷ তাই নিত্যরায় ও অন্তরে ভালোবাসা থাকলে ও বন্ধুতকেই আপন করে নেয় এবং সম্মান দেয় ৷ সারা দিন যত কাজ ই করুক বিকেলে দুজন একত্র হয় ৷ দুজনে ঘুরতে যায় ওই প্রকৃতির মাঝে ৷ তবে অন্তরে যতই ভালোবাসা থাকুক এটাকে ভালোবাসা বলে না ভাবাই উচিত ৷ কারন তারা দুজনই বন্ধুতের সম্পর্কের প্রতি পূর্ণ সম্মান দেয় ৷ তারা দুজনেই দুজনের অতীত ইতিহাস স্মরণ করে ৷ নিত্যরায় ও নন্দিতার মতো ছোট বেলায় ই মা বাবাকে হারিয়েছে ৷ নিত্যরায় পিসির কাছে মানুষ ৷ যার সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরায় এমন সংসারে ও পিসি যতটুকু পেরেছে সাধ্যমত করেছে ৷ আর তাই অনেক সংগ্রাম করে আজ নিত্যরায় কিছুটা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে ৷ নিত্যরায়ের এই সংগ্রামে যেন নন্দিতা নিজের সংগ্রামকের ই প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় ৷ আর তাই তাদের বন্ধুতের বাঁধন হিসেবে ও কাজ করে এই সংগ্রামী জীবন ৷
৬ ....
নন্দিতার পড়া শুনো শেষে একটি চাকুরী নেয় ৷ সে ভালোবেসে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বাছাই করে ৷ তার মায়ের আন্দোলনে প্রতিষ্টিত বস্তির পাশেই একটি স্কুলে তার চাকুরী হয় ৷ নন্দিতা মনে মনে খুব খুশি হয় ৷ কারন বস্তিবাসীদের জন্য ই তার সারাটা জীবন ব্যয় করতে চায় ৷ আর শিক্ষকতার মাধ্যমে বস্তিবাসিদের ছোট বাচ্ছাদের পড়িয়ে শিক্ষিত করে তুলতে চায় সে ৷ আর এভাবেই ভালো ই চলছিল নন্দিতার দিনগুলো ৷ নিত্যরায়ের সাথেও মাঝে মাঝে দেখা হয় তবে আগের মতো নয় ৷ নিত্যরায় সত্যিই নন্দিতাকে পাগলের মতো ভালোবাসে তবুও সে নন্দিতার অনুরোধে বন্ধুতের সম্পর্ক বেশি এগোয় না ৷ আর নন্দিতার ছোট বোন সন্চিতা ভালো রেজাল্ট করে কলেজে উটেছে ৷ এতে নন্দিতা অনেক আনন্দিত ৷ দু বোন মিলে বস্তিবাসীর জীবন উন্নয়নে কাজ করে যায় ৷ বস্তিবাসীর যে সমস্যা নিয়ে তারা সরকারী বড় দপ্তরে হাজির হয় ৷ বস্তিবাসীদের জন্য বাড়িতে তারা স্কুলের মতো খুলে যেখানে বস্তির ছোট ছোট বাচ্ছাদের পড়ানো হয়, গান ও আর্ট শিখানো হয় ৷ তারা যেমন বস্তিবাসীকে আপন করে নিয়েছে তেমনি বস্তিবাসী ও তাদের আপন করে নেয় ৷ যে কোন বিপদ—আপদে তারা প্রথমেই ছুটে আসে তাদের সবার প্রিয় দিশা র কাছে ৷ এভাবে ভালো চলছিল নন্দিতা,সন্চিতা ,নিত্যরায় ও বস্তিবাসীর জীবন ৷ কিন্তু নদী যেমন সর্বদা একইভাবে বহে না জীবন ও তেমনি একভাবে চলে না সর্বদা ৷ তেমনি তাদের সংগ্রাম ও সুখের দিনগুলোর ছেদ হয় ৷ কর্পোরেট হাউজের দৃষ্টি পড়ে ওই বস্তির উপর ৷ তারা এখান থেকে বস্তিবাসীদের সরিয়ে দিতে চায় ৷ নন্দিতা ও বস্তিবাসীর উপর যেন কালো ছাঁয়া পরে ৷ কর্পোরেট হাউজ,অর্ধশিক্ষিত,অশিক্ষিত,নিরক্ষর,সহজ—সরল বস্তিবাসীদের বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে ভিটে মাটি ছাড়া করতে চায় ৷ কিন্তু বাধা হয়ে সামনে দাঁড়ায় নন্দিতা ৷ সে বস্তির তরুনদের নিয়ে বস্তিবাসীদের সঠিক দিশা দেয় ৷ সে গরীব দুঃখি বস্তিবাসীদের বুঝাতে সক্ষম হয় এই লোভে পা বাড়ালে ভবিষৎ এ শুধু সর্বনাশ ই অপেক্ষা করছে ৷ যে সকল বস্তিবাসী কর্পোরেট হাউজের দেয়া টোপে পা বাড়াতে চেয়েছিল তারাও ফিরে আসে ৷ ফলে কর্পোরেট হাউজ কর্তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় ৷ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও কর্পোরেট কর্তারা আশা ছাড়েন নি ৷ বরং দ্বিগুন উৎসাহে উনারা এবার দুর্বল বস্তিবাসীদের উপর শক্তি প্রয়োগের বুদ্ধি নেন ৷ সে লক্ষ্যে কর্পোরেট হাউজের কর্তা ব্যক্তিরা এবার এলাকার মন্ত্রী ও প্রভাশালী মন্ত্রী দ্বারস্ত হন ৷ সকল অপকর্মের ডিপো মন্ত্রী তাদের অফার লুপে নিল ৷ সে পেশীর জোর ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে বস্তিবাসীদের উটিয়ে দিবে বিনিময়ে সে বিশাল অংকে টাকা পাবে ৷ এই চুক্তিতে কর্পোরেট হাউজের কর্তাব্যক্তিদের সাথে দফা রফা হলো মন্ত্রীর ৷ খুশিমনে পরদিন ই মন্ত্রী তার গুন্ডা ও নেশাগ্রস্হ ভাইয়ের নেতৃত্বে বিশাল গুন্ডা বাহিনী পাটাল বস্তিতে ৷ কিন্তু নির্বাচন এলেই শুধু বস্তিপাড়ায় পা রাখা মন্ত্রী জানে না বস্তির বর্তমান অবস্হা ৷ বস্তিবাসীদের মাঝে যে এখন পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে তা তার অজানাই ৷ বস্তিবাসীরা যে আগের মতো তার হুমকি—ধমকিতে ভয় পেয়ে তার কথা মতো কাজ করবে না সে তা চিন্তায় ই আনতে পারেনি ৷ তার বিশাল গুন্ডা বাহিনী বস্তা উচ্ছেদের উদ্যেশে বস্তিতে গেলে নন্দিতা সকল বস্তিবাসীদের নিয়ে রুখে দ্বারায় ৷ সকল বস্তিবাসীদের এমন অপ্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণে দিশাহারা হয়ে যায় বিশাল গুন্ডা বাহিনী ৷ প্রচন্ড মার খায় গুন্ডা বাহিনী ৷ মন্ত্রীরভাই কোন রকম প্রাণ নিয়ে পালায় ৷ বাকিরা বস্তিবাসীদের হাতে মার খেল ৷ বস্তিবাসীরাও যেন তাদের বহুদিনের জমিয়ে রাখা অত্যাচারের ক্ষোভ উগরে দিল ৷ এমন অপ্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমনে মন্ত্রী আর ফুঁশে উটল ৷ সে এবার পোষা প্রশাসনকে ব্যবহার করতে চাইল ৷ পুলিশ গিয়ে বস্তি আক্রমন করন ৷ অনেক ভাঙ্গচোর করল ৷ নন্দিতা সহ অনেক বস্তিবাসীকে ধরে নিয়ে মিথ্যে মামলা দিয়ে দিল ৷ এসময় বন্ধু হিসেবে পাশে আসলো নিত্যরায় ৷ তার সাংবাদিকতা দিয়ে বিষয়টার উপর বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করল ৷ ফলে পুলিশ বাধ্য হয় নন্দিতা সহ সকল বস্তিবাসীদের স্ব সম্মানে ছাড়তে বাধ্য হলো ৷ বস্তিবাসী সহ নন্দিতা নিত্যরায়কে ধন্যবাদ জানাল ৷
৭.....
অপরদিকে প্রচন্ড প্রভাবশালী মন্ত্রী ঘরে—বাহিরে এভাবে পরাজিত হয়ে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয় ৷ আহত বাঘের মত সে প্রত্যাঘাত করতে চায় ৷ তার সকল রাগ পরে নন্দিতার উপর ৷ তাই সে প্রচন্ড প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠে ৷ সে নন্দিতার দুর্বল দিক খুঁজে বের করে ৷ নন্দিতার আপনজন বলতে তার ছোট বোন সন্চিতা ৷ দুষ্টবুদ্ধি অধিকারী মন্ত্রী নন্দিতাকে বিভিন্নভাবে নন্দিতাকে হুমকি দিতে থাকে ৷ তবুও নন্দিতাকে বস্তিবাসীদের অধিকার আন্দোলন থেকে নড়াতে পারে না ৷ তাই মন্ত্রী তার লম্পট ছেলে রন্জিত কে ছদ্ধবেশে বস্তিতে পাটায় ৷ রন্জিত নিজের পরিচয় গোপন রেখে বস্তিতে একজন সাধারন চিত্র শিল্পী হিসেবে আশ্রয় ৷ সে বস্তিতে গিয়ে বস্তিবাসীদের পাশে দাড়ানোর অভিনয় করে ৷ সে বস্তিবাসীদের সহযোগীতার অভিনয় করে ৷ বস্তিতে নতুন বলে নন্দিতারা প্রথম প্রথম তাকে সন্দেহের চোখে দেখত ৷ কিন্তু পরবর্তিতে রন্জিত চলে,বলে,কৌশলে নন্দিতাদের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয় ৷ সে তার কূট কৌশনে নন্দিতার বোন সন্চিতার ও মন জয় করে নেয় ৷ সে সন্চিতার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে যায় ৷ সহজ সরল সন্চিতা তার এ কৌশলের কাছে পরাজিত হয় ৷ সে রন্জিত এর ছদ্ধবেশি সাধারন রুপে আকৃষ্ট হয় ৷ আর এভাবেই দুজনের মধ্যে মিথ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় ৷ রন্জিত তার পিতার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য লাগাতার অভিনয় করে ওদের ধোঁকা দিয়ে যায় ৷ বস্তির সহজ সরল মানুষগুলো তা বুঝতে ও পারে না ৷ মন্ত্রীর ছদ্ধবেশি ছেলে রন্জিত নন্দিতার সবচেয়ে দুর্বল জায়গা তার বোনকে আঘাত করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে ৷ ওদিকে মিথ্যে প্রেমের জাল সে সন্চিতার দিকে বুনতে থাকে ৷ যাতে সন্চিতা দিক ভ্রান্ত হয়,টিক—বেটিক ভুলে যায় ,মোহগ্রস্হ হয়ে পড়ে সে ৷ সন্চিতা এতটাই মোহগ্রস্হ হয়ে পড়ে যে সে কোন কাজ তা যাই ই হোক ভালোবাসার দিদির অনুমতি ছাড়া এ পা ও এগোয় না ৷ সেই সন্চিতা ই কি না নিজের জীবনের এত বড় একটা ডিসিশন মোহগ্রস্হ হয়ে ভালোবাসার দিদিকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না ৷ তবে তা নিয়ে তার ভিতর খচখচানি ছিল ৷ সে মুখোশ আড়ালে থাকা রন্জিতের কাছে এসব শেয়ার করত ৷ শয়তানি বুদ্ধিত পারদর্শী রন্জিত তাকে বলত যে ভালোবাসা কেউ পরিবারের অনুমতি নিয়ে করে না ৷ বিয়ের আগে টিক দিদিকে জানাবে ৷ ইনিয়ে বিনিয়ে আরও অনেক কিছু বলত রন্জিত ৷ যাতে সন্চিতার তার বোন নন্দিতার কথা ভুলে যেত মোহগ্রস্হ হয়ে ৷ অপরদিকে নন্দিতাও বস্তিবাসীর উন্নয়নে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল যে আদরের ছোট বোনটার প্রতি আগের মতো সময় দিতে পারছিল না ৷ আর এই সুযোগটা নিয়ে ই একাকিত্বে থাকা সন্চিতার পাশে এসে চলে,কৌশলে তার বিশ্বাস অর্জন করতে লাগলো ৷ মন্ত্রীর ছদ্ধবেশী পুত্র তার স্বার্থ সিদ্ধি ও অভিলাষ পূরণের জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগলো ৷ আর অবশেষে সেই সুবর্ণ সুযোগ সে পেয়ে গেলো ৷ বস্তিবাসীর একটি কাজের প্রজেট নিয়ে নন্দিতা বস্তির কিছু তরুন ও নিত্যরায়কে নিয়ে কয়েকদিনের জন্য বস্তির বাহিরে গেলো ৷ সে সুযোগে রন্জিত সন্চিতাকে কৌশলে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ের নাটক করল ৷ সন্চিতা তার জীবনের এতবড় সিদ্ধান্ত তার প্রিয় বড় বোন নন্দিতাকে ছাড়া করেছে সে নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিল না ৷ ঘটনার হঠকারীতায় সে কিছুটা স্তব্দ ছিল ৷ রন্জিত নন্দিতাকে বিয়ের পর লোক চক্ষুর অগোচরে মন্ত্রীর বাড়িতে নিয়ে গেল৷ পরের দিন সকালে নন্দিতা দেখল রন্জিতের নতুন রুপ ৷ বাড়িতে এসে সে নিজের প্রকৃত রুপ ধারন করল ৷ সে নিজের প্রকৃত পরিচয় যখন সন্চিতার কাছে দিল তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল ৷ সে কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে রইল ৷ মন্ত্রী আর তার ছেলে দুজনে সন্চিতাকে ব্লেক মেইল করার চেষ্টা করল ৷ তারা সন্চিতাকে শর্ত দিল যদি নিজের বিয়ে টিকাতে চায় তবে বস্তি ছেড়ে তার বড় বোন নন্দিতাকে সারাজীবনের মতো চলে যেতে হবে ৷ নন্দিতার মতই প্রচন্ড রাগী ও নির্ভীক সন্চিতা এত বড় প্রতারণা মেনে নিতে পারেনি ৷ সে ক্ষোভে ফেটে পরে ৷ সে মন্ত্রী ও তার পুত্র রন্জিতের গালে সপাটে কয়েকটা চড় মারে এবং সে মামলা করবে ,প্রেস কনফরেন্স করবে বলে পাল্টা হুমকি দিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ায় ৷ যেতে যেতে সন্চিতার আজ প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা অনুভব হচ্ছে ৷ তবে সে নিজেকে শক্ত করে এবং এর শেষ দেখতে চায় ৷ অপরদিকে মন্ত্রী ও তার ছেলে এমনভাবে চড় খেয়ে হতম্ভব হয়ে পড়ে ৷ মন্ত্রীর ছেলে রন্জিত ক্ষোভে ফেটে পরে ৷ সে সন্চিতাকে কিল
করতে চায় ৷ অন্যদিকে মন্ত্রী ও সন্চিতার দিয়ে যাওয়া ভয় পেয়ে যায় ৷ মিডিয়া এসব খবর ব্রাস্ট করলে তার মন্ত্রীত্ব ই চলে যাবে ৷ আগে একবার সন্চিতার বোন নন্দিতা তাকে নাকানি—চুবানি খায়িয়েছে ৷ তাই এবার সে রিক্স নিতে চায় না ৷ তার ছেলেকে সন্চিতাকে হত্যার অডার দিয়ে দেয় ৷ এটাই প্রত্যাশা করা রন্জিত আর দেরি করে না ৷ সে তার দলবল নিয়ে গাড়ী করে দাওয়া করে নির্জন রাস্তা থেকে সন্চিতাকে তুলে নিয়ে আসে মন্ত্রীর বাড়ির গোপন রুমে ৷ সে সন্চিতাকে প্রচন্ডভাবে আঘাত করতে থাকে ৷ সন্চিতা তার সর্ব শক্তি দিয়ে রন্জিতকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং পাশে থাকা রিভালভার নিজের হাতে নিয়ে নেয় ৷ সন্চিতা রন্জিতকে গুলি করতে উদ্যত হয় ৷ এবার রন্জিত ভয় পেয়ে যায় ৷ সে অনেক কাকুতি মিনতি করে ৷ কিন্তু সন্চিতা প্রতারক এই রন্জিতের এই অভিনয় দেখে বিদ্রুপের হাসিতে ফেটে পরে ৷ সে অন্য কিছু চিন্তা না করেই পর পর দুটি গুলি করে রন্জিতের বুক বরাবর৷সাথে সাথে ই রন্জিতের মৃত্যু হয় ৷ নিজের দিদির সাথে সে ও প্রতারণা করেছে বলে তার নিজের উপর প্রচন্ড ঘৃণার জম্ম হয় আর তা থেকেই সে নিজেকে শেষ করে দিতে চায় ৷ সে নিজের বন্ধুক নিজের মাথায় তাক করে গুলি ছুড়ে ৷ প্রচন্ড শব্দ হয় ৷ তার দু চোখে প্রিয় দিদি নন্দিতার মুখটাই ভাসতে থাকে ৷ চোখে পানি নিয়ে নিমিষেই সব ঝাপসা হয়ে যায় ৷ সে গুঙ্গিয়ে বলতে থাকে দিদি আমায় ক্ষমা কর ,,,,,,,,সময় যত যায় ততই কন্ঠস্বর নিচু হতে থাকে ,হঠাৎ সব চুপাচাপ,,,,,,,,,,,,,,,
৮.........
পরপর কয়েকটি গুলির শব্দে কেঁপে উঠৈ ৷ মন্ত্রী নিজের রুম থেকে নিচে ডেরায় যেতেই দেখে তার পুত্র রন্জিত এর মৃত দেহ ৷ মন্ত্রীর পরিবারের অন্য সদস্যরাও এসে কান্না ভেঙ্গে পড়ে ৷ পাশে পড়ে রয়েছে সন্চিতার মৃত দেহ ৷ ঘটনাটা এত দ্রুত ছড়িয়ে যে সকল সাংবাদিকবৃন্দ মন্ত্রীর বাড়িতে ভীর জমায় ৷ হাজারো প্রশ্নে জরজড়িত করে তুলে মন্ত্রীকে ৷ মন্ত্রী র ইচ্ছে ছিল সন্চিতাকে হত্যার পর নিঃশব্দে তার লাশ ঘুম করে ফেলবে ৷ কিন্তু তার ছেলের মৃত্যু ও দ্রুত সব ঘটনা ছড়িয়ে পড়ায় তার সব পরিকল্পনা ব্যস্তে যায় ৷ অপরদিকে সন্চিতার বড় বোন নন্দিতার কাছে খবর যাওয়ার পরই সে দিক ভ্রান্তের মত ছুটে আসে ৷ সঙ্গে বস্তির কিছু ছেলে—মেয়ে ও নিত্যরায় ৷ নন্দিতা এসে সন্চিতার মৃত দেহ দেখে প্রচন্ড শক পায় ৷ পাশে রন্জিতের মৃত দেহ পড়ে আছে দেখতে নন্দিতাদের আর বুঝতে বাকি রইল না নন্দিতার বোন সন্চিতার সাথে কত বড় প্রতারণা হয়েছে ৷ নন্দিতার নিজের বোনকে মেয়ের মতো মানুষ করেছে ছোট বেলায় মা—বাবাকে হারানোর পর থেকে ৷ তার এমন মৃত্যু কোনভাবেই সে মেনে নিতে পারছিল না ৷ প্রচন্ড শোকাগ্রস্হ হয়ে ভীষনভাবে ভেঙ্গে পড়ে ৷ তার কাছে যেন আজ গোটা পৃথিবীতে আঁধার নেমে আসে ৷ সে তার প্রিয় ছোট বোন সন্চিতার দেহ ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ৷ নিত্য রায় ও বস্তির বন্ধুরা নন্দিতাকে সান্তনা দিয়ে পুলিশে সেরে সন্চিতাকে নিয়ে বস্তিতে ফিরে এসে দাহ করে ৷ অপরদিকে এ ঘঠনায় নন্দিতা নিজের সকল মনোবল হারিয়ে ফেলে ৷ যাকে নিয়েই অতীতে তার মনোবল ,সাহস গড়ে উটেছে সে আজ নেই ৷ এটা সে কোন ভাবেই মানতে পারছিল না ৷ নিত্য রায় তাকে সাহস দেয় পুনরায় উজ্জবিত করে আন্দোলনে ফেরার ৷ নন্দিতাও নতুন করে শক্তি ও প্রেরণা পায় ৷ এবার আন্দোলন তার সত্নানের মত বোনের ন্যায় বিচার পাওয়ার ৷ যাকে নন্দিতার সাথে শত্রুতার জন্য জগন্য রাজনীতির শিকার হয়ে বিদায় নিতে হলো পৃথিবী থেকেই ৷ নন্দিতা বস্তির বন্ধুদের সাথে নিয়ে এবার দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলল ৷ প্রথম প্রথম সাড়া না পেলেও নিত্যরায়ের পত্রিকা সহ অন্য পত্রিকায় প্রকাশ হতেই সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হলো ৷ সরকারের উচ্ছ পর্যায় পর্যন্ত প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি হলো ৷ তারা মন্ত্রীকে বহিষ্কার করলো ৷ পুলিশ ও প্রচন্ড চাপে নন্দিতাদের মামলার ভিত্তিতে মন্ত্রীকে গ্রেপতারে বাধ্য হলো ৷ সংবাদমাধ্যম সহ সুশীল সমাজের প্রচন্ড চাপে কিছুদিনের মধ্যেই মামলা আদালতে উঠল ৷ আদলতে যুক্তি তর্ক সহ সকল আনুষ্ঠানিকতা সহ সব শেষ হবার পর রায় ঘোষণার দিন টিক হলো ৷ ঘোষিত দিন মতো রায় ঘোষনা শুরু হলো ৷ নন্দিতা ভগবানের কাছে এক মনে প্রার্থনা করলো যেন তার বোন সন্চিতা ন্যায় বিচার পায় ৷ বিচারক তার রায় ঘোষনার প্রথমেই মন্ত্রীকে দোষি বলে ঘোষনা করলেন ৷ তিনি বললেন সমাজের এমন ঘৃণ্য মানুষরা সমাজের ও দেশের প্রতিনিধি হতে পারে না ৷ যিনি তার ব্যক্তি স্বার্থে একজন উটতি বয়সী তরুণীর জীবন টা ধ্বংস করলেন ৷ তার যত শাস্তি হওক তা কম ৷ আইনের হাত বাধা ৷তাই আইন অনুসারে একজন তরুণীর জীবন নষ্ট করার জন্য, তাকে খুনের নির্দেশ দেয়ার জন্য এবং তাকে মৃত্যু পরিস্হিতিতে যেতে বাধ্য করার জন্য যাবৎজীবন অর্থাৎ ৩০ বছেরর কারাভোগের সাজা ঘোষনা করে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করলেন ৷ পুলিশ সাবেক মন্ত্রীকে নিজেদের হেফাজতে নিল ৷ অপরদিকে নন্দিতা সহ , বস্তিবাসি ও নিত্যরায় ও নন্দিতার আন্দোলনের সকল শুভাকাঙ্খি রায়ে প্রচন্ড আনন্দিত হলো ৷
৯......
সমগ্র বস্তিতে খুশির পরিবেশ বিরাজ করছিল নন্দিতার বোন সন্চিতা ন্যায় বিচার পাওয়ায় ৷ তাদের সবার আদরের তৃষা র প্রতি ন্যায় বিচার হওয়ায় সকলেই ভগবানের কাছে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে লাগলো ৷ নন্দিতাও তার আদরের প্রিয় তৃষার ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে নিজের মনের গভীর কোনায় প্রশান্তি অনুভব করল ৷ অপরদিকে নিত্য রায় ও পরীক্ষিত বন্ধুর মতো তার পাশে সর্বদা রইল ৷ সে এবার নন্দিতাকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেব পেতে চায় ৷ যদিও বন্ধুতের মর্যদার কথা ভেবে সে কথা কখনও নন্দিতার কাছে আর আনেনি ৷ তবুও নন্দিতা বুঝতে পারে ও অনুভব করে তা ৷ সে জানে নিত্যরায় তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে ৷ সেও অনেক আগেই নিত্যরায়কে ভালোবেসেছিল ৷ কিন্তু বস্তির মানুষের উন্নয়ন ও বোন সন্চিতাকে মানুষ করা যে তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য ছিল ৷ তাই সে নিজের ব্যক্তিগত সুখকে কখনও প্রাধন্য দেয় নি কখনও ৷ বরং নিজের জীবনের উদ্দেশ্য ব্যঘাত ঘটবে বিধায় তার সকল সুখ ও আনন্দকে দূরে ঢেলে দিত ৷ কিন্তু সে যতই বস্তির উন্নয়নে কাজ করুক ৷ তার সকল কার্যের জন্য অনুপ্রেরণা ও উৎসাহের প্রয়োজন ছিল ৷ এতদিন নন্দিতার বোন সন্চিতা তার সকল কার্যের ছাঁয়া সঙ্গি হিসেবে উৎসাহ ,প্রেরণা ও সহযোগীতা করত ৷ কিন্তু তার এ অকালে চলে যাওয়ায় নন্দিতা বড় শুণ্যতা অনুভব করতে লাগলো এ জায়গাটায় ৷ তাই সে নিত্যরায়কে দিয়ে তা পূরণের মনোবাসনা হলো তার ৷ এমনিতেই সে ও নিত্যরায়কে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে ৷ তার প্রতিটি সংগ্রামে পরীক্ষিত বন্ধুর মতো পাশে থেকেছে ও সর্বাত্তক সহযোগীতা করেছে ৷ তাই নন্দিতা আর তাকে দূরে টেলে দিতে চাইছিল না ৷ বরং নন্দিতা তাকে সাথে নিয়ে বস্তিবাসীর উন্নয়নে কাজ করতে চাইছিল ৷ নন্দিতা নিত্যরায়কে বসন্তের বিকেলে দেখা করতে বলল ৷ নিত্যরায় কখনও কল্পনাও করতে পারেনি তার জীবনে এত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে ওই বিকেলে ৷ নিত্যরায় যথারীতি নন্দিতার আহবানে সকল কাজ ছুটে ফেলে নন্দিতার সাথে দেখা করতে আসল ৷ বসন্তের ওই মনোমুগ্ধকর বিকেল ও হঠাৎ নন্দিতার এই তলব যেন অন্য কিছুর ইঙ্গিত পাচ্ছিল নিত্যরায়ে মনের গহীনে ৷ তারা যে স্হানে সর্বদা দেখা করে খোলা মাঠের নিচে ওই বিশাল কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে ওখানেই দুজন সমবেত হলো ৷ নন্দিতা আজ বাসন্তি রং এর শাড়ি পড়েছে ,চুলে তার লাল গোলাপ ৷ যেন নতুন নন্দিতাকে দেখছে সে ৷ বন্ধুতের সেই মর্যদা আজ সে ক্ষণিকের জন্য ভুলে যেতে চাইছিল ৷ তবুও সে বন্ধুতের মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট হলো নন্দিতাকে দেয়া কথা অনুযায়ী ৷ অন্য দিকে কাকতালীয় ভাবে সে ও আজ পান্জাবী পড়ে সাদা ধব ধবে ৷ নন্দিতা তাকে এসে যখন তার মনের কথা বললো সে তখন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না ৷ সে বার বার নন্দিতার কাছে জানতে চাইছিল যা বলছে তা সত্যি কিনা !!!নন্দিত উত্তর একই হওয়ার পর ও যেন সে বিশ্বাস করতে পারছিল না ৷ সব কিছু সপ্নের মতো লাগছিল ৷ তার এত দিনের ভালোবাসা,সপ্ন এভাবে হাজির হবে !! যেন সে সপ্ন দেখছে ৷ নন্দিতা এটা বুঝতে পেরে মুখে হাসি নিয়ে লম্বা একটা চিমটি কেটে বলল মশায় আপনি কোন সপ্ন দেখছেন না ৷ এটা বলার পর দুজনের অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল ৷ বেশ কিছুক্ষণ ধরে হাসি চলল থামার কোন নামই নেই ৷ যেন হাসির মাঝে তার প্রেম করছিল ৷ দুজনেই হাসতেছে প্রাণ খুলে তবুও দুজনের চোখ দুজনের চোখে ৷ দুজন দুজনকে প্রাণ ভরে দেখছে ৷ পরিশেষে দুজনের হাসির তীব্রতা কিছুটা কমল বটে ৷ তবে হাসি মুখে লেগেই রইল ৷ দুজনের এক অন্যের হাত ধরে নিজেদের ভবিষৎ জীবনকে সাজাতে লাগলো ৷ নিত্যরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলো যে আজ থেকে নন্দিতার সকল সপ্ন তার নিজের সপ্ন ৷ নন্দিতার সকল আন্দোলন তার নিজের আন্দোলন ৷ সে নিজেকে নন্দিতার মাঝে সঁপে দিল ৷ নন্দিতাও এমন একজন জীবনসঙ্গী পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করল ৷ বসন্তের সম্পূর্ণ বিকেলটা যেন আজ তাদের মতই অপূরুপ সাজে সেজেছিল ৷ বসন্তের ওই মনোমুগ্ধকর বিকেলটা যেন ছিল তাদের ভালোবাসার প্রথম উপহার ৷ দুজনে হাতে হাত ধরে বসন্তের বিকেলটা উপভোগ করল ৷ যেন এক বিকেলেই সারাজীবনের সকল সুখ এসে তাদের সামনে হাজির হয়েছিল !!
১০......
বসেন্তের ওই ভালোবাসময় সপ্নের বিকেল শেষ হতে চলছিল ৷ অপরদিকে তাদের ভালোবাসাময় সময়ের মেয়াদও যে ফুরিয়ে যাবে কে জানত ৷ দুষ্ট মন্ত্রী জেলে বসে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিল ৷ গুন্ডা থেকে মন্ত্রী হয়েছে সে তাই জেল তার কাছে অপমানের বিষয় ছিল না ৷ কিন্তু সামান্য এক নারীর কাছে এভাবে হারবে সে মেনে নিতে মারছিল না ৷ দুষ্ট মাথার বুদ্ধিজীবী মন্ত্রী ভয়ংকর এক দুষ্ট পরিকল্পনা আটল নন্দিতার জন্য ৷ যাতে সাপও মরবে না আবার লাঠি ও ভাঙ্গবে না ৷ দুষ্ট মন্ত্রী মুভির মতই কিছু পুলিশকে ম্যানেজ করে জেল থেকে কিছুক্ষনের জন্য বের হলো ৷ তার গুন্ডাদের নিয়ে নন্দিতাকে অনুসরন করল ৷ ওইদিকে নন্দিতা ও নিত্যরায় বিকাল শেষে সন্ধ্যা নামায় হাত ধরেই বাড়ি ফিরছিল ৷ নন্দিতাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে নিজের কর্মস্হলে ফেরার কথা ছিল ৷ কিন্তু তখনই অঘটন টা ঘটে গেল ৷ তারা সামনে একজনকে দেখে চমকে গেলো দুজনই ৷ তারা চোখের সামনে দেখলো দুষ্ট মন্ত্রীকে ৷ তারা বুঝতে পারছিল টিক দেখছে কি না ৷ কারন তার ত ত জেলে থাকার কথা ছিল ৷ তারা দুজনই দুজনের চোখে তাকাচ্ছিল ৷ অপরদিকে দুষ্ট মন্ত্রী শয়তানি হাসি হাসচ্ছিল ৷ তার হাতে যেন কি একটা ৷ দুষ্ট মন্ত্রী আর ও কাছে এসে হাতে থাকা জিনীসটা নন্দিতার মুখ বরাবর ছুড়ে মারল নিত্যরায়ের আর বুঝতে বাকি রইলো না কি অঘটন ঘটতে চলেছে ৷ সে আপ্রান চেষ্টা করল নন্দিতাকে সেইভ করার ৷ নন্দিতাকে জাপটে ধরে ঘিরে রাখতে চাইল ৷ কিন্তু এত কাছে থেকে ও গতিতে দুষ্ট মন্ত্রী ছুড়ে মারল ৷ তাই নিত্যরায় নন্দিতাকে নিরাপদ করার চেষ্টায় ঝাপটে ধরল ৷ কিন্তু তার চেষ্টা সম্পূর্ণ রুপে সফল হলো না ৷ মন্ত্রীর ছোড়া বস্তুটা নিত্যরায়ের হাতে পড়ল ৷ তা নন্দিতার মুখের এক পাশেও পড়ল ৷ নিত্যরায় হাত এ পোড়া অনুভব করল ৷ ওইদিকে নন্দিনি গগণবিদারী চিৎকার করলো ৷ ওইদিকে মন্ত্রী পালিয়ে আবার জেলে ঢুকে গেল ৷ যেন মুভির দেখা কোন অংশ ৷ আর ওই দিকে নন্দিতা রাস্তায় পরে কাতরাচ্ছিল ৷ তার গগন বিধারী চিৎকারে অসহায় লাগছিল নিত্যরায়ের ৷ চারদিকে অসংখ্য জনতা এসে সমবেত হলো ৷ তারা উল্টো টা ভাবল ৷ তারা নন্দিতাকে উদ্ধার করলো ৷নন্দিতাকে হাসপাতালে পাটানো হলো কিন্তু পাশে থাকা নিত্যরায়কে তারা ভাবল এসিড সন্ত্রাসী ৷ নন্দিতার এহেন অবস্হায় নিত্যরায় পাগলের মতো হয়ে গেলো ৷ সে এমন অবস্হা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না ৷ তার চোখের সামনে তার সকল সপ্ন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সে কিছুই করতে পারছে না ৷ আর নন্দিতার গগন বিধারী চিৎকারও তাকে পাগল করে দিচ্ছিল ৷ সে তা সহ্য করতে না পেরে পাগলের মত আচারণ করছিল ৷ তা দেখে জনতা সন্দেহ করল ৷ নিত্যরায়কে জনতা উত্তম মধ্যম দিল ৷ নিত্যরায় তখন নিজের মধ্যে ছিল না ৷ সে নিজেকে নিরঅপরাধ প্রমাণ করার কোন চেষ্টাই করল না ৷ অপরদিকে তার হাত এসিডের জ্বালায় পুড়ছিল ৷ জনতা এটা দেখেও নিত্যরায়কেই এসিড নিক্ষেপকারী হিসেবে ভাবল ৷ ফলে সে গনধোলাই খেলও ৷ শেষে পুলিশ এসে নিত্যরায়কে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলো ৷ একদিকে নিত্যরায় অপরদিকে নন্দিতার ট্রিটমৈন্টশ চলল ৷ নিত্যরায়ের ইনজুর নন্দিতার থেকে গুরুত্বর নয় বিধায় সে সুস্হ হয়ে গেল ৷ পুলিশ ওকে থানায় নিয়ে গেল ৷ অন্যদিকে নন্দিতার ইনজুর গুরূত্বর ছিল ৷ তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল ৷ কিন্তু অর্থের অভাব ছিল ৷ অপরদিকে এই ঘটনায় সমগ্র দেশে সাড়া পড়ে গেল ৷সকল আন্দোলনের সংবাদের পরিচিত মুখ নন্দিতার উপর ন্যাক্কারজনক এসিড আক্রমনে গর্জে উটলো সারা দেশ ৷ প্রচন্ড চাপে সরকারের উচ্চপদস্হ কর্ত ব্যক্তিরা স্পেশাল টিম গঠনের ঘোষনা করল এই ঘটনার তদন্তে ৷ আর এই খবরে মন্ত্রীসহ ,অভিযুক্ত পুলিশ গুলো ভয় পেয়ে নন্দিতার এই পরিস্হিতির সুযোগ নিতে চাইছিল ৷ তারা থানায় নিত্যরায়কে এই অফার দিল যদি সে সকল অভিযোগ নিজের কাঁধে নেয় তবে মন্ত্রী নন্দিতাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সকল খরচ তারা বহন করবে ৷ নিত্যরায় নন্দিতার এই পরিস্হিতিতি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না ৷ সে এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল যে তার উপস্হিতিতে ঘটনা হয়েছে তবুও সে নন্দিতাকে রক্ষা করতে পারেনি ৷ সে চরম অনুশোচনায় ভুগছিল ৷ সে পায়শ্চিত করত চাইছিল হিতাহিতজ্ঞনশুণ্য হয়ে ৷ তার চোখের সামনে ভেসে উটছিল নন্দিতার ওই চিৎকার করা ছবিটা ৷ তাই ওই শয়তানি বুদ্ধির লোকেদের প্রস্তাবে রাজি হলো ৷ শর্ত মতো নন্দিতার উন্নত চিকিৎসার জন্য বাহিরে পাটানো হলো ৷ অন্যদিকে নিত্য রায় সব অভিযোগ স্বীকার করায় সবকিছু বিচার করে বিচারক তাকে ৩ বছরের সাজা দিল ৷ বস্তিলোকেরাও ভাবলও যে নন্দিতার বোন সন্চিতাকে যেভাবে মন্ত্রীর ছেলে রন্জিত প্রতারণা করেছে টিক একইভাবে নন্দিতার সাথ নিত্যরায় প্রতারণা করেছে ৷কিন্তু নিত্যরায় জানত ও বিশ্বাস করত যে অন্য কেউ যাই ভাবুক নন্দিতা ত জানে সে অপরাধী নয় ৷ তাই সে খুশি মনে জেলে বসে নন্দিতার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলো ৷ এভাবেই তার সাজার মেয়াদ ২ বছর ৬ মাসের কাছাকাছি চলে এল ৷ অপরদিকে নন্দিতা চিকিৎসা অনেক সময় লাগলো ৷ মন্ত্রীর লোকেরা কথা মত টাকা কিছু দিলেও তার সটকে পড়ে কিছুদিন পরই ৷ অনেক দিন চিকিৎসা হীন ছিল সে ৷ পরে একজন বয়জৈষ্ঠ ডাক্তর যার মেয়ে ও এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মারা গেছে তিনি নন্দিতাকে নিজের মেয়ের স্হলে এনে পরম মমতায় চিকিৎসা করালেন ৷ নন্দিতা প্রচন্দ মানসিক ট্রমায় স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছিল ৷ ডাক্তার নিজের বাসায় রেখে ধীরে ধীরে তার স্মৃতি শক্তি ফিরিয়ে অানার চেষ্টা করে সফলও হলো ৷ স্মৃতি ফেরার পর তিনি নন্দিতার প্লাস্টার সার্জারী করাতে চাইলেন ৷ তবে নন্দিতা তাকে বাধা দিল ৷ সে নিত্যরায়ের এমন খবর শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ও ৷ নিরঅপরাধ মানুষটা কে এই নষ্ট সমাজ জেলের কুঠোরে বন্ধ করে রেখেছে ৷ সে ডাক্তার সাহেবে র কাছ কৃতজ্ঞতাসহিত বিদায় নিত্য রায়ের উদ্দ্যেশে চলল ৷ জেলখানায় নিত্যরায়ের সাথে দেখা করল ৷ নিত্যরায় নন্দিতাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ৷ এতদিনে তার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে ৷ নন্দিতা ও প্রচন্ড কান্নায় ভেঙ্গে পড়লও ৷ তখন নিত্যরায় তাকে সান্তনা দিয়ে বলতে নন্দিতা তুমি যেমন ই হও আমি শুধু তুমাকে ভালবাসি ৷ তুমার চেহারা কে নয় ৷ আর ৬ মাস তার পরই জেল হতে বের হবো তুমার সাথে সারাজীবন থাকতে চাই ৷ আর এভাবেই নন্দিতা আর নিত্যরায়ের জেলখানার দসাক্ষাৎ এর পর্ব শেষ হলো৷ অপরদিকে মন্ত্রী উচ্চ আদালতে আপীল করে অনেক টাকা খরচ করে বেকেসুর খালাস পেলেও ৷ সে আবার পুনরায় মন্ত্রী পদ ও ফিরে ফেলো ৷ তাকে এবার দেয়া হলো সরাষ্টমন্ত্রানালয় ৷ আর যে পুলিশ তাকে জেলখানায় সর্বাত্তক সহযোগীতা করে ছিল তাকে আইজিপি করে মন্ত্রী পুরুষ্কৃত করলো ৷ সেদিন ছিল মন্ত্রী আর আইজিপীর সংবাদ সম্মেলন ৷ নন্দিতা বিশেষ উদ্দ্যেশে নিত্যরায়ের সহকর্মীদের সহায়তায় ওই সংবাদ সম্মেলনে যোগদান করলো ৷ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নন্দিতা একটা কাগজে কিছু লিখে মন্ত্রী ও আইজিপির ফাইলের উপর রাখলো ৷ মন্ত্রী ও আইজিপি তা খুশি মনে সেক্রটারি তৈরি করা তাদের জন্য প্রেস স্লিপ মনে করে সকল সাংবাদিকদের সামনে যেখানে টিভিতে লাইভ চলছিল পড়তে শুরু করল ৷ এক লাইন পড়ছিল আইজিপী আরকে লাইন মন্ত্রী ৷ তারা যা পড়ছিল তা ছিল তাদের অতীত পাপের পুঙ্খানোপুঙ্খ বর্ণনাসহ বিবৃতি ৷ সরকারে উচ্চপদে আসীন হয়ে সুখে দিনে তারা এতটাই ব্যস্ত ছিল যে অতীত পাপগুলো বিস্মৃতি হয়েছিল ৷ তাই লাইভ টেলিকাস্ট এ পাপের বিবৃত্তিগুলো পড়েও বুঝতে পারলও না ৷ সচিবের লেখা তাদের প্রেস ব্যক্তব ভেবে খুশি মনে পড়ে গেল ৷ কিন্তু কিছুক্ষন পর তাদের যখন হুস হলো তারা কে ,,কে বলে লাফিয়ে উটলও ৷ তারা যত দ্রুত লাফিয়ে উটছিল তার দ্বিগুন গতিতে চিৎকার করে পরে গেলও ৷ কারণ সাংবাদিক বেশে থাকা নন্দিতা তাদের দুজনের মুখে কিছু একটা ছুড়ে মেরেছিল ৷ উপস্হিত পুলিশবৃন্দ নন্দিতাকে আটক করলো ৷ কিন্তু নন্দিতা হাসিতে ফেটে পড়লো ৷ সে চিৎকার করে সব কিছু বলতে লাগলো ৷ লাইভ টেলিকস্ট বিধায় সমগ্র দেশের মানুষ তা দেখলো ও শুনলো ৷ পুলিশ নন্দিতাকে ধরে নিয়ে গেল ৷ কিন্তু সারা দেশের মানুষ নন্দিতার মুক্তির দাবিতে ফেটে পড়লও ৷ পরদিন নন্দিতাকে বিচারিক আদালতে তুলা হলো ৷ নন্দিতা সকল দোষ স্বীকার করলো ৷ কিন্তু নন্দিতার পক্ষে গড়ে উঠা বিশাল জনমতকে উপেক্ষা করা কঠিন হলো বিচারকের ৷ তিনি নন্দিতার উপর হওয়া সকল অপরাধের জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করলেন ৷ যদিও সমাজ তাকে আইন হাতে তুলতে বাধ্য করেছে তবুও আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া অপরাধ বিধায় তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিল ৷ অপরদিকে নিত্যরায় বিনাদোষে জেল কাটায় তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হলো ৷ কিন্তু মিথ্যে তথ্য দিয়ে ও নিজের গারে দোষ নিয়ে আইন অমান্য করায় তার পরবর্তী ৬ মাসের জেল বহার রাখলো তবে বিনাশ্রম ৷ অপরদিকে আইজিপীকে বহিষ্কার করে চিকিৎসাপূর্বক তার বিরুদ্ধে মামলা চালনোর নির্দেশ দিল বিচারক ৷ আর মন্ত্রীর চিকিৎসা পূর্বক তার যাবৎজীবন সাজা বহাল রেখে ওই দিনের বিচারিক কার্যক্রম শেষ করলো !!!
নন্দিতাকে জেলে প্রেরণ করা হলো ৷ নিত্যরায় ও নন্দিতার একই কামরা হলো ৷ তারা সবকিছু ভুলে আবার নতুন করে সব শুরু করতে চায় ৷ তারা জেল হতে বের হয়ে দুজনে মিলে বস্তিবাসীর ভাগ্য বদলে কাজ করতে চায় ৷ তারা দুজনে হাতে হাত ধরে অনেক পরিকল্পনা করলো ৷ তাদের দুজনের মনে পড়নো বসন্তের সেই সপ্নের বিকেলটার কথা ওই বিকেলে পর যেন তাদের জীবনে অমবস্যার ঘন অন্ধকার নেমেছিল তাদের জীবনে ৷ সেই দীর্ঘ আঁধারের ঘন রাত্র শেষ হয়ে যেন আজ ভোরের অালো দেখছে দুজন ই নতুন শুরুর আশায়,,,,,,,,