আজ থেকে ঠিক ত্রিশ বছর আগে রেহানা বেগম নিজ হাতে লাগিয়েছিলেন কামরাঙা গাছটি। তারও ঠিক দশ বছর আগে তিনি আলতায় পা রাঙিয়ে বধুবেশে এ আঙিনায় প্রথম এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন এই বিরাট আঙিনা জুড়ে ছিল রোদ আর মেঘেদের লুকোচুরি। শ্বাশুড়ি আম্মা ভাদ্র- আশ্বিনের উঠতি রোদে উঠোনের বিশাল বুক চিঁতানো জায়গা জুড়ে ভাঁপ ওঠা গরম সিদ্ধ ধান রোদে শুকাতে দিতেন। আবার ক’দিন বাদেই এই বিশাল উঠোনের কড়কড়ে শীতের রোদে মেশিনে কাটা সেমাই পিঠা শুকাতেন, শুকাতেন মাসকলাই আর পাকা চাল কুমড়ার সাদা ধবধবে হাতে কাটা বড়ি। গ্রাম থেকে আনা হলুদের গুড়ো, বেগম মিল থেকে ভাঙানো শুকনো মরিচের গুড়ো এবং বছরে দ’ুবার নিজেদের ঢেঁকিতে কোটা বেশি পরিমান আতপ চালের গুড়ো। যা দিয়ে সারা বছরই সময় অসময় ছিটরুটি আর পাকান পিঠের ধুম পড়তো এ বাড়িতে। সারা মহল্লায় আর কয়টাই বা ঢেঁকি ছিল তখন? এই একটাই। শীত পড়তে না পড়তেই আতপ চাল কোটার ধুম পড়ে যেত। মহল্লার একেবারে শেষ সীমানা থেকেও আসত সম্ভ্রান্ত সব গৃহিনীরা। সারা বছরের মত প্রয়োজনীয় পরিমান আতপ চাল নিয়ে তাদের কাজের মেয়েদের সাথে করে সারাটাদিনের মত আসত তারা। তাদের কেউ কেউ এ বাড়িতেই দুপুরের খাবারে আপ্যায়িত হতেন মাঝে মাঝে। সে সব দিন এখন স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হয় রেহেনা বেগমের কাছে। বৈশাখ জ্যোষ্ট মাসে খুব ভোরে গোবর পানি দিয়ে উঠোন লেপতো রুস্তমের মা। ঝকঝকে উঠোনে ধান কিছুটা আশাতে না আশাতেই আকাশ জুড়ে মেঘেদের আনাগোনা দেখা দিতো। এই বৃষ্টি এই রোদ। উঠোন থেকে তাড়াহুড়ো করে এই ধান তোলো, তো আবার এই ধান আবার রোদে নামাও। কিছুটা শুকালো তো এই ভিজে সারা। সারাদিন চলতো এই নাজেহাল অবস্থা। রুস্তমের মায়ের সাথে যখন শ্বাশুড়ি আম্মা আয়েশা বেগম হাত লাগাতেন তখন তো আর রেহানার চুপ করে বৃষ্টি দেখা মানায় না। ঔ চট জলদি উঠোনে নেমে আসতো শ্বাশুড়ি আম্মার সাথে। বৃষ্টিতে মাখামাখি। ওর অবশ্য এমনিতেই আজন্ম বৃষ্টির সাথে মিতালি। বৃষ্টি এলে ও ঘরে থাকতে পারে না। কিন্তু নতুন বউ বলে কথা। অযুহাত ছাড়া মেঘবৃষ্টিতে উঠোনে নামা সহজ ছিল না তখন। শ্বাশুড়ি আম্মা মুখ টিপে হাসতেন। পারবে, এ বউ পারবে...
শ্বাশুড়ি আম্মা মারা যাবার পরপরই সেই ঝকঝকে লেপা দীর্ঘ উঠোনের চারপাশ ক্রমাগত ছোট থেকে আরো ছোট হয়েছে। কে আর এত ধান সিদ্ধের ঝামেলা পোহাবে? দিনকে দিন মোটা চালের ভাতের মজাও যেন উঠে গেছে এবাড়ি থেকে। বাচ্চারা একদম মোটা চালের ভাত হজম করতে পারে না। অবশ্য রেহানা বেগম যে খুব একটা ভালবাসে তাও না। রেহানা বেগমের নিজেরও মোটা চালের ভাত খাওয়ার অভ্যাস ছিল না। চিকন চালের ভাত খেয়েই সে বেড়ে উঠেছে। ওর বিয়ের পর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত ওকে ওর শ্বাশুড়ি আম্মা আলাদা করে চিকন চালের ভাত রেঁধে দিত। কিন্তু সে আর কয়দিন! তারপর ধীরে ধীরে ঔ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু এখন নতুন প্রজন্ম বলে কথ! এুিতেই যখন মোটা চাল বেচে চিকন চাল কিনতে হয়, তাহলে আর এসব ঝামেলার প্রয়োজন কি? আগের মতন এই মফস্বল শহরে যখন তখন বাড়তি কাজের মানুষও পাওয়া যায় না। সব মিলিয়ে খরচ পড়ে যায় কখনো সখনো আরো বেশি। রেহানা বেগমের যুক্তির কাছে বাড়িতে আর ধান আসে না। একেবারে চিকন চালের বস্তা আসে। চিকন চালের বস্তার জন্য তো আর দীর্ঘ উঠোনের দরকার নেই। তাই ধীরে ধীরে উঠোনের একপাশে জায়গা নিয়েছে বিভিন্ন জাতের গোলাপের বাগান। সেখানে হরেক রকম হরেক রংয়ের গোলাপ ফুটে থাকে। তার পাশে মৌসুমী ফুলের জন্য কিছুটা চারকোনা জায়গা ঘিরে নেওয়া হয়েছে। সেখানে ফুটে থাকে গাঁদা, ডালিয়া, কচমচ, অ্যালমন্ডা, রাঁধাচূড়া, জুঁই, বেলি, টগর, সন্ধ্যাতারা, শেফালি, নয়নতারা আরো কত কি নাম না জানা ফুলেরা সব। দক্ষিন পাশে সুন্দর সবজি বাগান। সেখানেও সারা বছর নানান মৌসুমী সবজির ছড়াছড়ি। লাল শাক, সবুজ শাক, পালং শাক, ধনে পাতা, ঢেড়শ, পুইশাক, লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, লম্বা বেগুনের চারা থরে থরে লাগানো হয়। রেহানা বেগমের নিবিড় তত্ত্বাবধানে উঠোনটি যেন সরকারী বাসভবনের কোন বুড়ো মালীর যতেœ পালিত বাগান হয়ে উঠেছে। উঠোনের উত্তর পাশে লাগিয়েছেন বেশ কিছু আম্রোপলী আমের কলম। আর কামরাঙা গাছটি লাগিয়েছিলেন তার ঘরের দরজার একেবারে সিঁড়ির সামনেই। খুব যতœ করে পানি দিয়ে সার দিয়ে গাছটিকে তিনি বড় করে তুলেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার গাছটির মত। প্রথম প্রথম গাছটি যখন ছোট ছিল রেহানা বেগম দুপুরটা না ঘুমিয়ে গল্পের কোন বই কিংবা নতুন মোটা ঈদ সংখ্যা হাতে নিয়ে কাব্যিক কামরাঙাগুলিকে পাহারা দিয়ে বড় করতো। তার পাহারার চোখ ফাঁকি দিয়েও পাড়ার কিছু ছেলেমেয়েরা ছোট ছোট কামরাঙা অসময়ে ছিঁড়তো। রেহানা বেগম তেমন কিছু বলতেন না। শুধু মনে মনে ভাবতেন গাছটি যখন সত্যিকারের বড় হবে তখন তোমরা এর হাজার হাজার পাকা কামরাঙা খেয়েও ফুরাতে পারবে না।
এই কামরাঙা গাছটি রোপন করা সম্পর্কে বিশেষ একটি কাহিনী আছে। যা একমাত্র রেহানা বেগম ছাড়া আর কেউ কোনদিন জানতে পারে নি। সেবার রেহানা বেগম চতুর্থবারের মত পোয়াতি। প্রত্যেক বারের মত পাড়ার মুরব্বীরা এবারও রেহানা বেগমের মেয়ে জন্ম দেবার আগাম প্রস্তুতি স্বরুপ বলতে শুরু করেছে
- মেয়ের মা সুন্দরী। ছেলের মা বান্দরী। এবারও আমাদের নোয়া বউয়ের মেয়ে হবে। দেখেছো দিনে দিনে টসটসে কমলার কোঁয়ার মতন সুন্দরী হইছে আমাদের নোয়া বউ। পা যেন মাটিতে ফেলতে পারে না। গলে গলে পড়ে। ফেটে ফেটে পড়ে।
তা শুনে নূর মোহাম্মদের হম্বিতম্বি বাড়াবাড়ি রকম বেড়ে যায়।
Ñ যদি এবারও তোমার মেয়ে হয় তো...
Ñ আমার কি দোষ? আল্লাহ যা দিবেন তাই হবে।
Ñআল্লাহর দোহাই দিয়ে কোন লাভ হবে না। এবার মেয়ে হলে আমাকে অন্য পথ ধরতে হবে। বংশের বাতি দেবার ...
Ñহায় আল্লাহ! কি কন আপনি? কি কথা মুখে আনেন? ক্রমোজমের দায়িত্ব তো আর আমার নয়। সে দায়িত্ব আপনারই।
Ñ এই চোপ। একদম চোপ। বিজ্ঞান শেখাবে না আমাকে। দিন কে দিন বড় বিজ্ঞানী হয়ে পড়েছো তুমি।
রেহানা বেগম আর কোন কথা বাড়ায় না। সে জানে, কোন বিজ্ঞানের ধার ধারে না এই মানুষটি। সে যা বোঝে, তাই ঠিক। কোন লাভ হবে না এর ব্যাখ্যায় যেয়ে। গত বার মেয়েটা হলে নূর মোহাম্মদ কতটা অসন্তুষ্ট হয়েছিল সে তার জানা আছে। কতদিন যে তার সাথে ভাল করে কথা পর্যন্ত বলেনি। দুঃসহ যন্ত্রণার দিনগুলো তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সে আবারো আগাম বিপদের সংকেত পায়। তাই তো গভীর রাত পর্যন্ত জায়নামাজের পাটিতে গভীর মনোযোগে জেগে থাকে। ভোর রাতে স্বপ্নে দেখে তার ঘরের দরজার সামনেই, যেইখানে কামরাঙা গাছটি লাগিয়েছে ঠিক সেইখানটায় এরকম একটি গাছে শত শত লাল লাল থোঁকা থোঁকা ফুল ফুটে আছে। একই সাথে ঝুলে আছে শত শত ফল। কে একজন শ্বশ্র“তমন্ডিত ধবধবে সাদা কাপড়ের বৃদ্ধ গাছটির নিচে দাঁড়িয়ে তাকে আশ্বস্ত করছে-
Ñ মা, মন খারাপ করো না। এবার তোমার ছেলে হবে, আল্লাহ ভরসা।
রেহানা বেগমের ঘুম ভেঙে দূরের মসজিদে আযানের ধ্বনি শুনতে পান। বিছমিল্লাহ বলে উঠে পড়েন তিনি। সারাদিন তিনি তার স্বপ্নে দেখা গাছের সাথে বাস্তব গাছের আদল খুঁজতে থাকেন। মেলাতে থাকেন। একই সাথে থোকা থোকা লাল লাল কাব্যিক ফুল, আবার একই সাথে অসম্ভভ সৌন্দর্য মন্ডিত শত শত সুন্দর ফল। কোথায় যেন দেখেছে সে। কোথায় যেন... অনবরত চিন্তায় দু’দিন পর তার ছোট বেলার দেখা বাড়ির পাশের স্কুলের আঙিনায় বেড়ে ওঠা কামরাঙা গাছের সাথে স্বপ্নে দেখা একই রকম ফুল ও ফলের সমারোহের কথা স্মরণে আসে। তখনি বাড়ির কাজের লোকটাকে দিয়ে নার্সারী থেকে গাছটা আনিয়ে নিজহাতে পুঁতে দেয় তার স্বপ্নে দেখা জায়গাটায়। কিন্তু স্বপ্ন বৃত্তান্ত সে কাউকে বলে না কখনো।
সত্যি সত্যি সবাইকে অবাক করে দিয়ে তার কোল জুড়ে হেসে ওঠে একটি ছেলে শিশু।
Ñ কী সোন্দর চেহারা হইছে! দেখছো? মেয়ে হইতে হইতে যেন আল্লাহ নিজ হাতে পুঁতটা বানাইয়া দিছে। এইবার বউয়ের ডাক শুনছে আল্লাহ। হের পেট দেইখা কেউ কইবার পারছে হের গর্ভে পুঁত আছে। হের ছেলে অইব এইবার, কে কইবার পারছে?
Ñহ, আল্লাহই সব করনের মালিক। হেই তো তার দুনিয়ায় স¹ল পুঁতও বানায়, বেডিও বানায়। তাইলে আর প্যাটের মাইয়ারে পুঁত বানাইতে কষ্ট কিয়ের? হেঁই তো সব বানায়!
Ñহ, তাই তো কইবার লাগছিলাম।
এত বছর পরেও আঁতুর ঘরে শোনা দূর সম্পর্কের দুই চাচী শ্বাশুড়ির রহস্যপূর্ন কথাগুলো চোখ বুজলেই শুনতে পায় রেহানা বেগম। যেন বা এই এখনি সেই সময়টাই ফিরে আসলো আবার! তিন মেয়ের পর ছেলে হলে নূর মোহাম্মদের আনন্দ দেখে কে? কী রেখে কী কেনে! কী করে! আস্ত গরু দিয়ে ছেলের আকিকা করে সাতদিনের মাথায়। কী নাম রাখবে ছেলের তাই নিয়ে কত জল্পনা কল্পনা। শেষে নাম রাখলো কামাল। ঐ সময় কামাল আতাতুর্কের নামটা তার খুব মনে ধরছিল। কিন্তু তিন মেয়ের পরে ছেলে হলে যা হয়, কামালের বেলায়ও তার কিছু ব্যত্যয় ঘটলো না। আদরে আদরে ছেলেটি সত্যিকারের কামালের মত বেড়ে উঠতে পারল না। পড়াশোনার শেষ ধাপ পর্যন্ত না পেরোনো কামালের উপার্জনের জন্য চোখ রাখতে হয় দেশের সীমানার বাইরে। কথা প্রসঙ্গে একথা বলে রাখা ভালো যে, কাউকে না বলে বোম্বের পথে পা বাড়াবার আগে কামাল কাউকে কিছু না জানিয়ে তিন বছরের প্রেম করা সুন্দরী মা মরা মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলে। এবং তার মায়ের মত তিন তিনটে কষ্টের সিড়ি না ডিঙিয়েই প্রথম চান্সেই একটি ছেলে সন্তানের গর্বিত পিতা হয় সে।
একমাত্র ছেলের চিন্তায় রেহানা বেগমের সময়গুলো পার হয় বড় কষ্টে। আগের মত তার আর ফুড়–ৎ করে দিন নামে না। রাত ফুরায় না এক ঘুমে। হাজারও কাজের ফাঁকে একটু সময় পাইলেই রেহানা বেগম সেই স্বপ্নের কামরাঙা গাছের নিচে দাঁড়ায়। পথ চেয়ে থাকে গভীর আকাক্সক্ষায়। কখন তার একাত্মা ছেলেটি তাকে ডেকে উঠবে গভীর মমতায়।
আজ কটা দিন তার খুব মন খারাপ। সে কামরাঙা গাছের রহস্য বৃত্তান্ত এবং তার কামালের জন্মকালীর রহস্য নিয়ে বড়ই আপ্লুত। কবে ফিরে আসবে তার ছেলেটি। তার বড় আদরের ধন কি বেঁচে আছে? সে কোথায়, কেমন আছে কিছুই জানতে পারে না রেহেনা বেগম। অকারণ রাগ করে কেন সে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। সে জানে, যতই সূর্য পশ্চিমাকাশে অস্ত যাক, পুব আকাশে তার লালিমা পড়বেই। তুমি যে বাবা মাকে অকারণ কষ্ট দিচ্ছ তুমিও তো একটা ছেলের পিতা। আমাদের কথা না হয় বাদই দিলাম, না হয় মনে পড়ল না তোমার, কিন্তু একমাত্র পুত্রের কথা তোমার মনে পড়বে না? মনে থাকবে না? সে জানে, ভালবাসা সব সময় নিুগামী। রেহানা বেগম হঠাৎ বড় উদাস হয়ে যান। জীবনের বাঁকে বাঁকে কত রকম ঝড়, ছোট ঝড়- বড় ঝড়- বজ্র- বৃষ্টি তাণ্ডব, বড়- কান্না, ছোট- হাসি, সুখ-দুঃখ- গল্পের সঞ্জীবনী সুধা তিন মেয়ের পরে আদরের কাক্সিক্ষত পুত্রসন্তান, কাউকে কিছু না বলে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া...া
তারপরও জীবন চলতে থাকে জীবনের গতিতে। সকাল দুপুর রাত কারো জন্য আটকে থাকে না মুহূর্তের জন্য। বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকানো যায় না। বউটার মলিন মুখটা ফুল দানির বাসি ফুলের মতন শুকনো। যখন তখন ঝরে পড়বে কারো টোকা না লাগলেও। রেহেনার কেন যে আজ বড় বেশি মনে হচ্ছে নূর মোহাম্মদের বাড়াবাড়ির শাস্তি আজ আমরা সবাই পাচ্ছি। নূর মোহাম্মদ যদি ঐ বাড়াবাড়ি না করতো তাহলে আজ এই দশা হতো না। এত চাপ, এত তাপ, উত্তেজনা, কষ্ট, অপেক্ষা মাতৃত্বের জ্বর। আহা! তার চেয়ে যদি ও মেয়ে হতো? রোকেয়া, সুফিয়া, রাফিয়ার মতো তাকেও বড় করে বিয়ে দিয়ে দিতো। ছেলের সংসার যাপনের চিন্তা রেহানার থাকতো না। অল্পবয়সী বউমা, একমাত্র নাতি ছেলের চিন্তায় সে পীড়িত হতো না। আহা! যদি তার ছেলেটা ভালোয় ভালোয় ফিরে আসতো তার কোলে। হা কামাল। কোথায় তুই বাপ, বেঁচে আছিস নাকি? এসে একবার দেখা দে আমারে... রেহানা বেগম অস্পষ্ট কেঁদে ওঠে।
এরই মধ্যে হঠাৎ যেন দুলে ওঠে কামরাঙা গাছের মগডালটি। চোখ যায় রেহেনা বেগমের। ওমা কি সুন্দর লালিমা পড়েছে গাছের মগডালে। এই পড়ন্ত বেলায় প্রতিটি পাতার ঝিলিক সোনার মোড়কে মুড়িয়েছে যেন কেউ। রেহানা বেগম অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন সেদিকে। লম্বা খয়েরি লেজের গোলাপি পাখিটা ডেকে ওঠে রেহেনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে, একেবারে স্পষ্ট ভাষায় ডেকে ওঠে যেন
- বাত দে মা, বাত দে।
স্পষ্ট শুনতে পান সে ডাক এবং রেহেনা বেগম নিশ্চিত হন তার ছেলে ফিরে আসবে। আসবেই। যে কোন বেশে, যে কোন মুহূর্তে সে ফিরে আসবে। রেহেনা বেগম উন্মুখ হয়ে পায়ে পায়ে বাড়ির গেটের কাছে যায়। ছোট্ট একটা হট্টগোল তার মনোযোগ কেড়ে নেয়।
পরদিনই সমস্ত খবরের কাগজের হেডলাইন সে। ‘রহস্য মানবে পরিনত হয়েছে মহেশপুরের ডাকাতিয়া গ্রামের কামাল। পুরুষ থেকে নিখোঁজ হয়ে মহিলায় রুপান্তরিত হয়ে ফিরে এসেছে গতকাল। সে ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর স্থানীয় গুরুদাহ বাজারের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। মা বাবা রাজি হবে না বলে কাউকে না বলে চলে যায় সে।’
যেদিন খাদিজা বোম্বে যাচ্ছিল সেদিন জীবননগর পর্যন্ত যাওয়ার পর কামাল তার সাথে মিলিত হয় বলে জানা যায়। সেখান থেকে বোম্বে নগরীর একটি সতের তলা বিল্ডিংয়ে কাজের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়। খাদিজা আসছি বলে চলে যেয়ে আর ফিরে না আসলে তাকে বলা হয়, দু’লক্ষ টাকায় তাকে বিক্রি করা হয়েছে। এখন থেকে তাকে প্রতিদিন এই বিল্ডিংয়ে কাজ করতে হবে। প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত থাকায় তাকে রাতের খাবার দেয়া হয়। এরপর থেকে সে দু’দিন অচেতন হয়ে পড়ে। চেতনা ফিরে আসলে সে নিজেকে সাদা কাপড় দিয়ে আবৃত দেখতে পায়। তার গায়ে আর অন্য কোন বস্ত্র ছিল না। তার ভাষ্যমতে,
‘শরীরের নিচের অংশে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করি। প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হয়। অবাক ব্যাপার আমি দেখলাম আমার পুরুষাঙ্গ নেই। কেন নেই... একথা কারো কাছে জিজ্ঞেস করেও সদুত্তর পাইনি। এর পরে শুরু হয় নির্যাতন। ইলেকট্রিক শক সহ নানাবিধ নির্যাতন করে আমাকে অনৈতিক কর্মকান্ডে বাধ্য করা হয়। বছর দুয়েক পরে ঐ বিল্ডিংয়ের দারোয়ানের সাথে যোগসাজস করে আমি পালিয়ে যাই। পরে দালালদের মাধ্যমে আমি দেশে আসি।’
ইতিমধ্যেই সার্জিকাল, গাইনী, মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তারা মেডিকেল টেষ্টে এতটুকু নিশ্চিত হয়েছেন যে, কালামের পেনিস কেটে ফেলা হয়েছে। তার শরীরে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট করা হয়েছে। যদিও কালাম হরমোন রিপ্লেসমেন্টের জন্য কোন ইনজেকশান নেয়া বা টিস্যু কালচারের কথা কখনো স্বীকার করেনি। কিন্তু তাদের ধারণা হরমোনের প্রভাবের কারণে তার ব্রেস্ট ডেভেলপ হয়েছে। তার চুল লম্বা হয়েছে, এবং তার কণ্ঠস্বর মেয়েলী। কিন্তু নিুাংগের গঠন সেইভাবে হয় নি। সে কারণে সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না কামাল মেয়ে হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ প্যানেল কোন মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারায় ঢাকায় উচ্চতর পরীক্ষার জন্য পাঠনো হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের বিশেষ অভিমতÑ
Ñ ছেলেটিকে আর পুরুষে রূপান্তর করা সম্ভব নয়।
থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন জানান-
Ñছেলেটির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার মাধ্যমে এই ঘটনা প্রকাশ করে বিচারের দাবি তুলতে হবে।
এ ঘটনায় প্রতিবেশি অনেকেই বলছেন-
Ñ হায় আল্লাহ! কিয়ামত আর কত দূর? আমরা কি আবার জাহেলিয়াতের যুগে ফিরে যাচ্ছি নাকি? যারা এই কাজের সাথে জড়িত তাদের তো ফাঁসি হওয়া উচিৎ। এর বিচার হোক বা না হোক আসলে প্রতিনিয়ত এই পৃথিবীতে উন্মোচিত হচ্ছে জীবনের নানান রহস্য।
এই তো কিছুদিন আগে ঝগড়া ঘরে (কি আশ্চর্য ঝগড়ার আবার আলাদা কোন ঘর লাগে নাকি? থাকে নাকি?) তবে বেশ আগে যখন এইট বা নাইন ক্লাসে পড়ত তখন একটা কি বই পড়েছিল। আজ আর শত চেষ্টাতেও বইটার নাম মনে করতে পারে না রেহেনা বেগম, ঐ বইয়ের কোথাও ও পড়েছিল নায়িকা বড় ভারাক্রান্ত মনে তার বান্ধবীর কাছে আফসোস করছে, জানিস একটু যে কেঁদে কেটে হালকা হবো সে জায়গাটুকুও আমি যে বাড়িতে থাকি সেখানে পাওয়া যায় না। তাই তোর এখানে মাঝে মাঝে আসি কেঁদে কেটে হালকা হবো বলে। রেহানা তখন বয়স অল্প ছিল ও তখন এই কথার মাহাত্ম খুঁজে পায়নি। এত বছর পর ও এখন ঐ কথার মাহাত্ম বুঝতে পারে যে, আসলেই কান্না কাটি করবার জন্য পরিবেশ লাগে, ঘর লাগে। অর্থাৎ কাঁদবার জন্য কারো নিশ্চিন্ত ঘর লাগে। কাঁধ লাগে। সেই কাঁধ বা ঘর রেহানা বেগম পান না। কারণ যেখানেই ও একটু কাঁদবে বলে জায়গা বের করে সেখানেই হাজির হয় কামালের অসম্ভব সুন্দরী মায়াবতী বউ লিমা। যার সাথে দীর্ঘ প্রেম করে মেয়েটা ঘর ছেেেড়ছিল বাউণ্ডেলে প্রেমিকের হাত ধরে। বাবার মামলা থেকে বাঁচবার জন্য দাম্পত্যের পুরোপুরি স্বাদ না নিতেই মা হয়েছে। সেই মা- ছেলেকে সামনে করে কি আর রেহেনা বেগম আয়েস করে কাঁদতে পারেন?
রেহানা বেগম আবার ভাবেন হ্যাঁ সেই ‘ঝগড়া ঘর’ শব্দটি জনপ্রিয় কখাশিল্পী হুমায়ুন আহমদের। তার নাটকের দৈত্যটি যখন সারা ঢাকা ঘুরে এসে সংসদ ভবনে দাঁড়িয়ে এ বাড়িটি কার বা কিসের- তার গাইড শিশু শিল্পীকে জিজ্ঞেস করলেই গাইডের চটপট উত্তর এটা কারো বাড়ি নয়। এটা হলো ‘ঝগড়া ঘর।’ বড়রা এখানে বসে ঝগড়া করে। আমরা তা ঘরে বসে টিভিতে দেখতে পাই। তো সেই ঝগড়া ঘরে দাঁড়িয়ে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নিজে বেশ ঘটা করে জানিয়েছেন,
‘তার সরকারের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে একদল বাংলাদেশী বিজ্ঞানী বিশ্বের বুকে প্রথমবারের মত ‘উন্মোচিত’ করতে সক্ষম হয়েছেন পাট ও একটি ছত্রাকের ‘জীবন রহস্য’!
- আহা! তিনি কি তার সরকারকে নির্দেশ দিতে পারেন না ‘পাট কিংবা একটি ছত্রাকের জীবনের রহস্যের থেকে একটি মানুষের জীবনের রহস্য ঢের বেশি প্রয়োজনীয়। হে মহান বিজ্ঞানীগণ! আপনারা আপাততঃ অন্য সব প্রাণীর গবেষণা স্থগিত করে শুধু মাত্র মানব জীবনের রহস্য নিয়ে গবেষণা করুন। কারণ বর্তমান সময়টা বড় রহস্য পুর্ণ। এখানে চোখের পলকে ছেলেগুলো মেয়ে হয়ে যাচ্ছে। তাই আপনারা এই মহান রহস্য নিয়ে গবেষণা করুন। কারণ সময়টা বড়ই সংকটাপন্ন।’
রেহেনা বেগম তার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে নিয়মিত খবরের কাগজ পড়েন। টিভি দেখেন। যদি কোন ইনক্লুসিভ খবরে কামালের মুখটা ভেসে ওঠে।
সত্যি সত্যি কামালের খবরটি খুব ফলাও করে প্রকাশ করছে দেশের সবকটি খবরের কাগজ। টিভি চ্যানেলগুলোয় তোড় জোড় চলছে তাকে নিয়ে। সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত বড় বড় ক্যামেরা কাধে ফেলে চলে আসছে। বিভিন্ন রকম প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন কছে। ছবি তুলছে ক্লিক ক্লিক। এমনকি রেহেনা বেগম এবং তার স্বামী নূর মোহাম্মদকে দুই পাশে বসিয়ে কামালের ঠোটে টকটকে লাল রংয়ের লিপিস্টিক, চুলের বেনীতে লাল গোলাপের সৌন্দর্য ছড়িয়ে। কিন্তু রেহেনা বেগম তো এই রকম ছবি তুলতে চায় নি। হ্যাঁ একথা ঠিক, তারও এক সময় খুব ইচ্ছে হয়েছিল তার একখানি ছবি খবর কাগজে ছাপা হোক। বিশেষ করে যখন সে ক্লাস ফাইভে পুরো থানার মধ্যে একলা বৃত্তি পেয়েছিল, তখন। কিন্তু এই কথা তার মনে মনেই ছিল। মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারে নি তখন। তখন তো আর আজকের মত মফস্বল শহর থেকে খবরের কাগজ বের হোত না। সেই ঢাকা থেকে প্রকাশ হতো ইত্তেফাক, বেগমসহ আরো কয়েকটি পত্রিকা। সেগুলোর সবকটি দেখবার সৌভাগ্য রেহেনা বেগমের ছিল না। আর টিভি তো আসলো আরো বেশ পরে। যুদ্ধের বহু পর এলো সাদা কালো বিটিভি। তাই ইচ্ছা থাকলেও তার সে স্বপ্ন পূরণ হয় নি তখন। এত বছর পরে ঘরে বসে ছবি তুলে নিয়ে গেল কাগজের সাংবাদিকেরা। রেহেনা তো এই রকম ছবি ছাপাতে চায় নি। সে চেয়েছিল সত্যিকার বিজয়ীর ছবি হতে। রহস্য মানবের মা হয়ে নয়।
নূর মোহাম্মদ এবং আব্দুর রাজ্জাক দুজন ঘনিষ্ট আত্মীয়। নূর মোহাম্মদের ছেলে কালাম এবং রাজ্জাকের ছেলে মোস্তফার একই সাথে ভারতে যাবার কথা ছিল। দুলক্ষ টাকা এবং ভারত যাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। আব্দুর রাজ্জাককে জব্দ করতে এতদিন পর এসব ঘটনার অবতারণা করা হচ্ছে বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করতে ছাড়ে না। কিন্ত রেহানা বেগমের মাথায় ভিন্ন প্রেক্ষাপট খেলা করে।
সারা দেশে হইচই। গত ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিচিন্তপুরে তাজরীন গার্মেন্টে যে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গেছে, সেই নারকীয় নরহত্যার শিকার হয়েছে কিছু রহস্য মানব। ১১১ জন শ্রমিকের এক সঙ্গে মৃত্যূ অত্যন্ত মর্মান্তিক ও অমানবিক। সেই রহস্য মানবদের দলে রয়েছে রেহানা বেগমদের পাশের বাড়ির আশার বাপ। সেও সেদিন ঐ গার্মেন্টে কাজ করছিল। আগুন জ্বলে উঠলে, চারিদিকে ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলেও কর্তাব্যক্তিরা কিছুই হয়নি বলে কারখানা থেকে শ্রমিকদের বেরিয়ে যেতে বাঁধা দেয়। শুধু মুখের কথায় বাঁধা দিয়েই তারা শান্ত থাকে নি। একেবারে বাইরে বের হবার দরজাগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আশার মায়ের সাথে শেষ কথা হয় তার।
Ñ বউ আমারে মাফ করে দিও। এ জীবনে হয়ত আর দেখা হবে না।
এ তো জীবন্ত মানুষকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। রেহেনা বেগম খবরের কাগজ পড়ে আর ভাবে।
হায় আল্লাহ! তোমার দুনিয়ায় কি সব নিত্য নতুন গজব শুরু হইলো?
যাদের জানাযার ইমাম সাহেব জানেন না, তিনি কার বা কাদের জানাযা পড়াচ্ছেন। অন্যরা যারা এতে অংশ নিয়ে জানাযা পড়ছেন তারাও কেউ জানেন না তারা কাদের জানাযা পড়াচ্ছেন। কাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করছেন
গার্মেন্টে আগুন তো এর আগেও লেগেছে। কিন্তু এ রকম ইচ্ছে করে কেউ মানুষ মেরেছে বলে শুনিনি। রাত আটটা থেকে প্রায় সারা রাত ধরে দমকল বাহিনীর মোট ১৫ টি গাড়ি সারা রাত ধরে আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত ছিল। এ থেকেই বোঝা যায় কি ভয়াবহ মাত্রায় আগুন লেগেছিল। গার্মেন্টেস এর রাস্তাগুলো প্রশস্ত ছিল না। কারখানার অ্যাপ্রোচ রোডটি ছিল সঙ্কীর্ণ। একসাথে দুটো দমকল বাহিনীর গাড়ি আসা যাওয়া করতে পারে নি। এছাড়া পানিরও অপ্রতুলতা ছিল। অথচ এ ধরনের কারখানা যেখানে থাকে সেখানে দূর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য পানির সরবরাহ থাকতে হয়। থাকতে হয় প্রশস্ত অ্যাপ্রোচ রোড। হায় আল্লাহ এদেরকে তুমি কি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠাইছো, এদের কি মায়া দয়া মনুষত্ব বলতে কিছুই নেই।
এই শোকাবহ ঘটনার জন্য বাংলা অভিধানের কোন একটি শব্দও এর যথার্থ বর্ণনার উপযোগী নয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হয়ত বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে নতুন কোন ঘৃণা উদ্রেককারী শব্দের উৎপত্তি হবে, রেহানা বেগম সে কথাও ভাবে একবার। পুঁজিবাদীর এই পৃথিবীতে পুঁজিই কি সব? এখন শোনা যাচ্ছে লাইফ টাইম ইনকামের প্রেজেন্ট ভ্যালুর কথা! কিন্তু তাদের এই পদ্ধতি অমানবিক এবং বৈষম্যমূলক। গার্মেন্টস শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের দাবি নিহত শ্রমিক প্রতি দশ লক্ষ টাকা ক্ষতি পূরণ দেওয়া হোক। রেহানা বেগম আবার তার নিজের পেটের ছেলের কথা ভাবে। যেই ছেলেটার জন্ম ছিল কত আকাক্সিক্ষত। কত আদরের সন্তান সে। কত যতেœ গড়ে তুলতে চেয়েছিল তাকে! কিন্তু কপাল দোষে আজ তার এই অবস্থা। রেহানা বেগম জানেন, দূর্বলেরাই শুধু কপালের দোষ দেয়, আল্লাহর কাছে বিচার দেয়, ফরিয়াদ জানায়। কিন্তু তার তো আজ এছাড়া নতুন কিছু করার নেই। আবার ভাবে, যদি তাও হতো যে- আশার বাপের মত নরহত্যার আগুনে পুড়ে কামালের লাশ ক্ষত বিক্ষত হতো কেউ চিনতা না, সে কামাল না কামাল্যা? লাইফ টাইম ইনকামের প্রেজেন্ট ভ্যালু পেতো ওর অবুঝ মায়াময় এতিম ছেলেটা, ওর বিরহ পীড়িত প্রেমিকা বউটা। যাদের নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকানো যায় না। হায়! তখন আমি চোখ বুজেও শান্তি পেতাম। এই প্রথম শব্দ করে হাহাকার করে ওঠে রেহানা বেগম। তার সে হাহাকারে এগিয়ে আসে না কেউ। পুরো বাড়িটা কেমন নিরব নির্জীব হয়ে আছে। শুধু উত্তরের হু হু হাওয়া কামরাঙার গাছ থেকে অসংখ্য কামরাঙার ছোট ফল ঝরিয়ে দেয়। চোখের পলকে সে হাজার হাজার কামরাঙা ফলগুলো মাটি ছুঁতে না ছুঁতেই একেকটা রহস্য মানবে পরিনত হয়। সেদিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন রেহানা বেগম।