আসসালাতু খায়রুমমিনান নাওম......দূর থেকে ভেসে আসে আযানের সুললিত ধ্বনি। আরেকটু ঘুমাতে মন চায় সালেহার। কিন্তু চাকরাণীর জীবনতো আরাম-আয়েশে কাটানোর জন্যে না। ঠেলে শরীরটাকে উঠিয়ে দেয় বিছানা থেকে। ফরজ গোসল সেরে নামায পড়ে সময়মতো নাস্তা বানিয়ে ফেলতে না পারলে স্কুলে যেতে দেরী হয়ে যাবে। শোভা আপা এটা একদম পছন্দ করেননা। চিবিয়ে চিবিয়ে কতগুলো কথা শুনিয়ে দিবেন। এতো ভোরে গোসল করতে বিশেষ করে শীতের ভোরে সালেহার খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু নাপাক শরীরেতো দিন শুরু করা যায় না। আর শাশুড়িরও কড়া নির্দেশ আছে আগে গোসল করে তারপর ঘরের কাজে হাত দিতে। পুরুষ মানুষ (আফসর মিয়া) হিসেবে সচ্চরিত্রেরই কিন্তু মাসের ত্রিশ দিনে গতর খাওয়ার ব্যাপারে কোন কামাই নাই এই মরদের, মনে মনে কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সালেহা। বিয়ের পর প্রথম দিকে মাসের বিশেষ দিনগুলোতে আফসর মিয়ার আবদার মেটাতে অনভিজ্ঞ, নিরুপায় সালেহার নিজেকে বড় অসহায় মনে হতো। আফসর মিয়া জোর করেই তার দাবী-দাওয়া আদায় করে নিত।
নারীর জীবন জলের লিখন, জলে মুছে যায় …
এখন আর " ঘেন্না", "নাক সিঁটকানো" বলে কোন শব্দ সালেহার অভিধানে নেই। আফসর মিয়া আর সালেহার দুই সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। বাচ্চা দু'টো পড়াশুনায় ভালোই করছে। কিছুটা মায়ের মেধা পেয়েছে। সালেহার অপূর্ণ স্বপ্ন হয়তো তার মেয়েই পূরণ করবে। ভাবতে ভাবতে কাজের ভিড়ে সালেহার লুকানো দীর্ঘশ্বাস পড়ে। মেট্রিক পরীক্ষার দুই মাস আগে হঠাৎ করেই সালেহার বিয়ে হয়ে যায় অনেকটা "উঠ ছুড়ি তোর বিয়ে"র মতোন। দিনের পুরো সময়টাতে নতুন পুত্রবধুকে সংসারমুখি করতে যেমনি শাশুড়ির দায়িত্বের কোন ত্রুটি ছিল না। ঠিক তেমনি রাতের পুরো সময়ে সালেহাকে পতিপ্রাণা হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে আফসর মিয়াও দায়িত্বের ছিঁটেফোঁটা অবহেলা করেনি।
স্বামী দেবতা যখন সালেহার শরীরের সাগরে সুখের অবগাহনে ব্যস্ত, সিঁটিয়ে থাকা সালেহা তখন পরীক্ষায় দুশ্চিন্তায় চোখে সরষে ফুল দেখতো। পরীক্ষার অঙ্কে উতরে গেলেও এক বিষয়ে আটকে পড়ার কারণে সালেহার জীবনের অঙ্ক থেমে গেল। শাশুড়িকে আর কোনভাবেই বোঝানো গেলনা পড়াশুনা করার কথা। আফসর মিয়াও অনেক চিন্তা করে দেখলো-"মাইয়া মানুষের ঘরের চাকরীইতো বড় চাকরী তাইলে আর পইড়া কী হইবো?" বাসের ড্রাইভার হিসেবে মেয়েদের যাতায়াতের অনেক দূর্দশাই তার চোখে ধরা পড়ে।
প্রতি ট্রিপ পেমেন্ট হিসেবে আফসর মিয়ার গাড়ি চলতো টর্নেডোর গতিতে। যত ট্রিপ তত টাকা। দিনে গড়ে কয়েক ট্রিপ বেশি মারতে পারলে ক্ষতি কী? আফসর মিয়ার কাছে জীবনের চেয়ে সময়ের মূল্যই বেশি।
ভরা বাদলায় তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে জরজেটের শাড়ি গায়ের সাথে লেপ্টে একজন বাসে উঠলো। ভেতরের লুকিং গ্লাস দিয়ে এক ঝলক দেখে কি মাথাটা একটু চক্কর দিয়ে উঠলো? শরীরের ঝঙ্কারে ব্রেক, একসেলেটর আর স্টিয়ারিংয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে না পেরে হারাতে হয়েছিল সাধের পা।
মনে মনে সেই "মাইয়া মাইনষে"র উদ্দেশ্যে খিস্তি ছাড়ে... খিস্তি শুনে নিবিড় দায়িত্ব পালনে কোন ত্রুটি হলো কিনা ভেবে সালেহা যত্নে মন দেয় আরো সতর্কভাবে।
স্কুলের হেডমাস্টারনি শোভা আপা। একসময় যাকে সালেহাদের ক্লাসে কেউ গনার মধ্যেই ধরতো না... সেই এখন একটা স্কুলের বড় আপার দায়িত্বে আছেন আর বরের পা হারানোর পরে ভাগ্যের ফেরে সেখানেই সালেহার আয়ার জীবন শুরু ।
জীবনের আইন সম্পর্কেই যার কোন পরিস্কার ধারণা নেই সে কীভাবে জানবে শ্রমিক আইন? আর শ্রমিক আইন জানলেও কোন লাভ হতোনা সালেহার। কেননা শ্রমিক আইনের বৈশিষ্ট্যের “ব”-এর ৪এর ছ অনুযায়ী সালেহা স্কুলের আয়ার এই চাকরীতে কোনদিনই শ্রমিক আইনের আওতায় বিশেষ কোন সুবিধা পাবেনা। আয়া হওয়ার পরও যখন সালেহাকে শোভা আপার বাসায় চাকরাণীর বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয় তখন গৃহকর্মীর ৮ ঘন্টা কাজের পর ছুটিও তার ভাগ্যে জোটে না। স্কুলে সাড়ে সাতটার মধ্যে হাজির থাকলেও স্কুল সংলগ্ন শোভা আপার বাসা ঝাঁট দিয়ে সাফ-সুতোর করে, নাস্তা তৈরি করে, টিফিন বক্স গুছিয়ে তারপরই স্কুল কম্পাউন্ডে সালেহাকে প্রবেশ করতে হয়। এই দায়িত্ব পালন না করলে হয়তো সালেহার আয়ার চাকরীটি হতোই না। আর শোভা আপাকেও স্কুল জীবনের পিছিয়ে পড়াদের কাতার থেকে মেধাবীদের যে উপেক্ষা সইতে হয়েছে তার শোধ নিতেও সালেহাকে চাকরী দিয়ে নিজেকে মহৎ হিসেবে প্রমাণের পাশাপাশি পুরোনো উপেক্ষা ফিরিয়ে দিতে ভুল করেন না এতোটুকু।
বেলাশেষে যখন ক্লান্ত-বিধ্বস্ত সালেহা বাসায় ফিরে আসে তখন তার বিশ্রামের বদলে ঢুকতে হয় রান্না ঘরে। সেই সূর্য উঠার আগেই যাকে সকালের নাস্তাতো বটেই দুপুরের খাবার তৈরি করে তারপর কাজে যেতে হয় তাকেই আবার স্বামী-শাশুড়ির দশ রকমের তিরস্কার শুনে নীরবে দায়িত্ব পালন করে যেতে হয় সুচারুরূপে। যা কোন মানবাধিকারের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। যার কোন ন্যায্য প্রতিদান সালেহাদের মতো ডাবল ডিউটি পালনকারীদের কপালে জোটে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্
গল্পের প্লটটা আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে নেয়া হলেও লেখকের বায়নোকুলার বাঁধা চোখ থেকে প্রতিটি চরিত্রের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বাদ পড়েনি ! এটাই আমার কাছে গল্পের বিশেষত্ব বলে মনে হয়েছে । এবং গল্পটির সার্থকতাও এখানে । খুব ভাল লাগল ।
Md.Nazmul Hasan Shanto
গল্পটা আমার বেশ ভালোলাগলো , বাস্তবে কিছু মানুষের চিত্র এমন হয় , মেয়েরা বেশী পড়লে কি আর কম পরলেইবা কি ,কিন্তু কেউ ভবিষ্যৎ ভাবেনা,
সেলিনা ইসলাম
এক কথায় চমৎকার গল্প ও গল্পের থিম। গল্পের চরিত্রগুলো খুব চেনা জানা মনে হল। খুব সুন্দর কিছু ম্যাসেজ আছে গল্পটাতে যা আর একটু কখপকথনে তুলে আনলে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হত। এইসব ম্যাসেজগুলো আসা দরকার নারীদের জন্যই। গল্পের ধারাবাহিকতা উপাস্থাপনা সব মিলিয়ে লেখার মান অনেক ভালো। তবে লেখায় যতি চিহ্ন ব্যবহারে আরও সতর্ক হতে হবে।(এইটা অবশ্য মাঝে মাঝে আমিও ভুল করি :D) সমাজের আরও সমস্যা তুলে আনুন লিখনির মাঝে। আরও গল্প পড়ার প্রত্যাশায় অনেক অনেক শুভকামনা নিরন্তর।
জয় শর্মা (আকিঞ্চন)
আমি ভাই মন ভোলানো মন্তব্য করতে পারি না, ছোট হলেও গল্প টা বেশ লেগেছে। ভাবনা টা সুন্দর। শুধু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কিছু লিখা মিস্টেক - ফরয/ফজর | কনেননা/করেন না।। হইত আপনিও আমারি মতন লিখা চেক করেন না। তবু ভোট দিলাম। গল্পটা মনে ধরেছে---
বিস্তারিত মতামতের জন্যে অনেক ধন্যবাদ । আপনি কি গল্পের তৃতীয় লাইনটিকে হাইলাইট করেছেন?
"ফরজ গোসল সেরে নামায পড়ে সময়মতো নাস্তা বানিয়ে ফেলতে না পারলে স্কুলে যেতে দেরী হয়ে যাবে। শোভা আপা এটা একদম পছন্দ করেননা।" ... "ফরজ গোছল" বোঝাতে চেয়েছি, "ফজর" নয়। আর "কনেননা" কোথায় লিখেছি খুঁজে পেলাম না। যদি অনুগ্রহপূর্বক নিশ্চিত করতেন তবে বুঝতে পারতাম বানান সমস্যা কোথায়।
আমি গল্পটি সাবমিট করার আগে যথাসাধ্য বানান চেক করে জমা দিতে চেষ্টা করেছি। তবুও নিজের অজান্তে ভুল হতে পারে। কৃতজ্ঞতা রইল।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।