অমরার জালে শেষ নিঃশ্বাস

ঘৃণা (সেপ্টেম্বর ২০১৬)

ভুতুম প্যাঁচী
  • ৪০
জামান মেডিকেল সেন্টার। প্রতিদিন অনেক রোগী আসে চিকিৎসার জন্য। গর্ভবতী মহিলাই বেশি। দিনের বেশিরভাগ সময় মুখরিত থাকে নবজাতকের কান্নার সুরে। আর তা উপভোগ করে চারপাশের পুরো পরিবেশ। মাঝেমাঝে ভরে ওঠে চিৎকার চেঁচামেচিতেও। ব্যর্থ মায়ের আত্মচিৎকারে।
মেডিকেল সেন্টারের পিছনের দিকটা খানিক নির্জন। সচরাচর ওইদিকটায় কারো যাতায়াত চোখে পড়ে না। প্রায়শই কতগুলো কুকুরকে দেখা যায়। ঘেউঘেউ শব্দে চিৎকার চেঁচামেচি আর ছুটোছুটি করে। কয়েকপা গেলেই ময়লায় জর্জরিত একটা ডাস্টবিন। সেখানেই ঘুরঘুর করতে থাকে কুকুরগুলো। খাবারের আশায়, তীব্র প্রতিক্ষায়। হা হয়ে জিভ বের করে রাখে হাটু পর্যন্ত। জিভ দিয়ে ঝরতে থাকে তৃষ্ণাতুর লালা। টকটকে লাল চোখ। সে চোখে এক ধরনের লোলুপ দৃষ্টি। সে যে কি ভয়ংকর! চোখের তারায় তাকালে বুকের ভেতরটা আতকে ওঠে।
.
ময়লার স্তুপে মিশে আছে কেউ! এক নারী! উবুথুবু হয়ে বসে। মাঝারি গড়নের শরীরে জরিয়ে আছে সাদা রঙের শাড়ি। সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ। হাতে সাদা লালের মিলনে জন্ম নেয়া মলিনপ্রায় শাঁখাপলা। বোঝা যযাচ্ছে নাক বরাবর কপালের ঠিক মাঝখানের সীঁথি, কোনোকালে রোজ রক্তিম সিঁদুরস্নান করত। মিলিয়ে যাওয়া সীঁথি-সিঁদুর এলোমেলো চুলে ঢাকা পড়ে আছে। গোলগাল চেহারাটায় বহুকালের অবহেলার ছাপ। যত্নের অভাবে ফেটে যাওয়া ঠোঁটজোড়া সামান্য ফাঁক করে কিছু বলার চেষ্টা। 'বা-আ-আ-চ্চা, আ-মা-আর বা-আ-চ্চা।' দলাপাকানো কথাগুলো অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে কান্নার তোরে। চোখের নিচে জমাট বাঁধা কালির পুরু আস্তর। চোখজোড়া অস্তগামী সূর্যের ন্যায় সিক্তলাল। ঢুলুঢুলু চোখ বেয়ে অনায়াসে গড়িয়ে পরছে অশ্রুধারা। সে চোখের প্রতিটা শিরা উপশিরা থেকে ঠিকরে পড়ছে ঘৃণা। নিজের প্রতি। মানুষের প্রতি। পৃথিবীর প্রতি।
কুকুরগুলো অপেক্ষা করছে কখন মহিলা চলে যাবে। কখন মেডিকেলের কোনো ময়লার গাড়ি আসবে। সেখান থেকে নীল পলিথিন ছিঁড়ে খুঁজে পাবে খাবার। প্রায় ছিঁড়ে যাওয়া ছোট ছোট নরম হাত পা। রক্তমাখা ক্ষত বিক্ষত ছোট ছোট শরীর। মানব শরীর। ওদের প্রিয় খাবার সেটা।
.
বছর দুয়েক আগের কথা। অনিন্দিতা। নির্মল চঞ্চলা মেয়ে। ভোরের শিশিরের মতো টলটলে রূপ। প্রখর সূর্যের ন্যায় দীপ্ত যৌবন। লেখাপড়ায় ভালো খারাপের মাঝামাঝি। এস এস সি পাস করে কলেজে উঠেছে সবে। তখনই বাবা মায়ের পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়। ছেলে ব্যবসায়ী। পড়ালেখা তেমন করেনি। এস এস সি দিয়ে বাবা আর ভাইয়ের সাথে ব্যবসার কাজে ঢুকে যায়। সে প্রায় বছর আট হবে। এখন নিজের আলাদা ব্যবসা। অনিন্দিতাকে প্রথম দেখেই মনে ধরেছে। বাবা মাকে বলে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। অনিন্দিতার বাবাও খোঁজ নিয়ে জেনেছে ছেলে ভালো। নিজের ব্যবসা। বনেদী পরিবার। মেয়ে তার সুখী হবে। কত স্বপ্নই না সুখের সুতাকে টানা আর পড়েনে ফেলে বুনেছে অনিন্দিতা। এক রাজপুত্রের সাথে বিয়ে হবে। রাণী করে রাখবে। কল্পনার থেকেও বেশি ভালোবাসবে। নিজের একটা রাজ্য হবে তার। মনের আনন্দে সেখানে রাজত্ব করবে সে। ফুটফুটে রাজকন্য রাজপুত্র আসবে কোল আলো করে। সারাক্ষণ মেতে থাকবে তাদের নিয়ে। মমতার পাহাড় তুলবে তাদের ঘিরে। পা টিপে টিপে এক সময় তারা বড় হবে। তখন তাদের বিয়ে দেবে নিজের মতো করে। বিদায় বেলা একদম কাঁদবে না। যখন নাতিনাতনি আসবে তখন সেও আবার ছোট হয়ে যাবে। সারাদিন খেলবে তাদের সাথে সেই ছেলেবেলার মতো।
.
আজ তার বিয়ে। বুকের গহীনে তিলে তিলে বেড়ে ওঠা স্বপ্নগুলো সত্যি হতে চলেছে। লাল বেনারসিতে অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগছে। লজ্জায় গাল টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে। আর চোখ লাল হয়েছে কান্নায় কান্নায়। পুরো লাল টুকটুকে বউ যাকে বলে। রাত আটটার শুভ লগ্নে সাত পাকে বাঁধা পড়ে অনিন্দিতা। সীঁথিতে ওঠে লাল সিঁদুর। হাতে স্থান করে নেয় শত অপেক্ষার শাঁখাপলা। বিদায়বেলা উৎসবের বাড়িতে উড়ে এসে জুড়ে বসে কান্নারা। সবার চোখে সমুদ্র সমান বিচ্ছেদের জল টলটল করছে। অনিন্দিতা কয়েক বার মাকে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠেছে। মায়ের চোখেও বাণ ডেকেছে প্রতিবার। মেয়েকে শক্ত করে বুকে চেপে ধরে বলেছে, 'পাগলি মাইয়া আমার। এমন কইরা কান্তে আছে? ওইটাই তো তোর আপনা বাড়ি। শ্বউর শ্বাউরির সেবা করবি। স্বোয়ামী যা কয় হুনবি। বাপের বাড়ির ইজ্জত রাখিস মা।'
.
অচেনা বাড়িতে অপরিচিত সব মুখাবয়ব ধীরেধীরে পরিচিত হতে লাগল। সকলের মন জয় করার সব গুণ ছিল অনিন্দিতার। সবার মুখে নতুন বউয়ের সে কি প্রশংসা! উঠোনের তুলসী গাছটাও তার ছোঁয়ায় হেসেখেলে উঠেছে।
সবুজ শেওলা ধরা দেয়ালে ঘেরা রাজমহল। ভেতরে পুরো রাজ পরিবার। ভালোবাসায় মোড়ানো রাজ্য। যার অঘোষিত রানী সে। স্বপ্নগুলোতে পাখা লাগাতে আরেকটা খুশির সংবাদ এলো। নতুন কারো পদার্পণ হবার আগাম বার্তা। রাজকন্যা কিংবা রাজকুমার আসছে। পুরো বাড়ি আনন্দে যেন ফেটে পরছে। অনিন্দিতার ঠোঁটে মায়াবী লাজুক হাসি। চেহারায় ফুটে উঠেছে মমতার ছাঁয়া। মা যেন সে অনেক আগেই হয়ে ছিল, শুধু আনুষ্ঠানিকতাটুকু বাকি ছিল। এখন সেটাও পূর্ণতা পেলো।
বড়দের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ কুড়াল অনিন্দিতা ও তার স্বামী। অনিন্দিতার শ্বাশুরি মা বউমাকে আশীর্বাদের সাথে অনেক আদেশ নিষেধও আঁচলে বেঁধে দিলেন। কী করা যাবেনা, কোথায় যাওয়া যাবে না, কী খাওয়া যাবেনা সব কিছুর বিশাল এক প্রজ্ঞাপন জারি হলো।
'বুঝলা বউমা, তোমার পেটে আমাগোর বংশের প্রদীপ। সাবধানে তো থাকতেই হবো। নাতির আমার যেন কোনো কষ্ট না হয় সেটা খেয়াল রাখার দায়িত্ব তোমার।'
-'নাতি? মা, ছেলে হবো বুঝলেন কেম্নে?'
'হ, আমার নাতিই হইবো। বংশধর। বংশকে আগে বাড়াবে বুঝলা?'
-'কিন্তু মা, ফুটফুটে একটা মেয়েও তো হবার পারে। ঠিক যেন রাজকন্যা।'
'অমন অলুক্ষুনে কথা মুখেও আনবা না কখনো বউমা। ছেলেই হবো। মনে থাকে যেন।'
বাড়ির সবাই তার কথায় সায় দিল। অনিন্দিতার স্বামীও ছেলে হলেই খুশি হবে এমনটাই হাপভাবে প্রকাশ করল। তবে মুখে কিছুই বলল না। ঠিক যেন মায়ের বাধ্য ছেলে।
সব কিছুর মাঝে এই একটা কথাই অনিন্দিতার হাসি কিছুটা ম্লান করে দিলো। তবে সময়ের সাথে সাথে কথাটা ভুলে নিজের ভেতর নতুন অস্তিত্ব বেড়ে ওঠার আনন্দ নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মাসে একবার হাসপাতালে, বাসায় সবার যত্নআত্তি এই করে বেশ যাচ্ছিল দিনগুলো। পাচঁ মাসের মতো সময় চলে গেছে এভাবে। হঠাৎ একদিন অনিন্দিতার শ্বাশুরি বউমাকে শহরে চেকাপের জন্য নেয়ার বায়না করল। সব ঠিক আছে জেনেও কেন শহরে চেকাপ করাতে হবে তার আগামাথা কিছুই উদ্ধার করতে পারল না অনিন্দিতা। মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খেলেও কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছে না। আগেই জিজ্ঞেসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শুধু বলা হয়েছে, এখানের ডাক্তাররা বেশি শিক্ষিত না। তেমন কিছু জানেনা। অনেকের বাচ্চা নষ্ট হয়েছে তাদের চিকিৎসায়। শহরের ডাক্তারদের পরামর্শ নিলে বাচ্চা মা দুজন সুস্থ থাকবে। বাচ্চাও স্বাস্থ্যবান আর সুন্দর হবে। তাই অনিন্দিতার ভালোর জন্যই শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনিন্দিতার ভাসুরও যাচ্ছে সাথে।
.
অনিন্দিতা ধবধবে সাদা বেডে সোজা হয়ে শুয়ে আছে। হাতের বাম পাশে কিছু যন্ত্রপাতি আর ডান পাশে একটা কম্পিউটার মনিটর। পাশেই একজন মহিলা ডাক্তার হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে। অনিন্দিতার পেটের ওপর কিছু যন্ত্রাংশ বসানো। ডাক্তার সাহেবা পেটের ওপরের যন্ত্রাংশ গুলো হালকাভাবে নাড়াচাড়া করতেই মনিটরে কিছু ছবি ভেসে ওঠে। ছবিগুলো বেশ স্পষ্ট না হলেও অনিন্দিতা যেন সব সুন্দরভাবে দেখতে পাচ্ছে। ছোট ছোট হাত পা, পরম শান্তিতে ঘুমন্ত একটা মুখ, অমরার জালে পেঁচিয়ে থাকা কোমল একটা শরীর। অনিন্দিতা অনেকক্ষণধরে পলকহীন তাকিয়ে আছে। ডাক্তার সাথে কী কী যেন পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। সেদিকে অনিন্দিতার কোনো খেয়াল নেই।

বাহিরে ডাক্তারের চেম্বারে চেয়ারে হেলান দিয়ে চিন্তিত মুখে বসে আছেন অনিন্দিতার শ্বাশুরি মা। পাশেই বসে আছে তার ভাসুর। তাদের পাশের বাড়ির সুলতানের বউ অনেক কিছু জানে। ভালো শিক্ষিতও। সেই বলেছে এখন ডাক্তাররা বলে দিতে পারে পেটে ছেলে নাকি মেয়ে ধরেছে? জানার খুব ইচ্ছা থাকলে ডাক্তারদের কিছু টাকাপয়সা ধরিয়ে দিলেই জানা যায়। তার কথামতোই তার দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী একটা মেডিকেলে বউমাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। ভগবানের কাছে তার একটাই আর্জি, ছেলেই যেন হয়। হ্যা, ছেলেই হবে। মেয়ে যদি হয়! না না, কি অলুক্ষুনে চিন্তা। ছেলেই হবে। তা না হলে সে কি করবে নিজেও জানে না। মনের সাথে যুদ্ধ করেই চলেছেন তিনি।

ডাক্তার সাহেবা বেড়িয়ে এলেন। পিছন পিছন অনিন্দিতা। ঠোঁটজোড়া বেশ প্রসারিত করে বললেন,
'জ্বি, সব ঠিক আছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই।'
-'সব কিছু ঠিকঠাক পরীক্ষা করছেন তো?'
'হ্যা, হ্যা, করেছি।
অনিন্দিতাকে বারান্দায় গিয়ে বসতে বললেন তার শ্বাশুরি। ডক্তারের থেকে কী ঔষধ খাবে, কিভাবে কী চলবে, কি খাবে না খাবে তার পরামর্শ নিয়ে সে আসছেন।
'কী দেখলেন ম্যাডাম, পোলা তো?' জানতাম আমি, পোলাই অইবো।'
-'সরি, আপনার বউমার গর্ভে মেয়ে সন্তান।'
'কী কন ম্যাডাম? না, এইডা হইতে পারে না। সবারে আমি মুখ দেখামু ক্যাম্নে?'
-' দেখুন, সব উপরওয়ালার হাতে।'
'হায় ভগবান! তোমার কী এমন ক্ষতি করছিলাম যে তুমি এত বড় শাস্তি দিলা?'
-'দেখুন, মেয়ে হলে সমস্যা কোথায়? এখনকার জামানায় মেয়ে আর ছেলের কোনো পার্থক্য নেই।'
'ফারাক আছে ম্যাডাম। বহুত ফারাক আছে।
.
অনেকক্ষণ ধরে ডাক্তার সাহেবার সাথে তারা কথা বলছেন। এত সময় ধরে কী এমন পরামর্শ অনিন্দিতা কিছুই বুঝতে পারছেনা। বারান্দায় এসে অনিন্দিতাকে তার শ্বাশুরি বলল আরও কয়েকটা পরীক্ষা করতে হবে। এখানে দুইদিন থাকতে হবে। শুনে অনিন্দিতার মুখটা চুপসে গেল। বুকের ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল। একটা অজানা ভয় বাসা বাঁধতে লাগল। অনিন্দিতা অনেক বার বলেছে আর পরীক্ষা করানোর দরকার নেই। সব ঠিক আছে। এখন চলে যাবে বাড়িতে। কিন্তু তার শ্বাশুরি আর ভাসুর তার কথার কোনো পাত্তাই দিল না।
পরের দিন অনিন্দিতাকে অনেকটা জোর করে নিয়ে আসা হলো। পরীক্ষার জন্য রুমের ভেতর নিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে ডাক্তার সাহেবা সবাইকে চলে যেতে বলল। ইনজেকশন ফুঁড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ কয়েকটা যন্ত্রপাতি নাড়াচাড়া করলেন। অনিন্দিতা তাকিয়ে আছে কিন্তু চোখে ঝাপসা দেখছে। সব কিছু কেমন যেন ঘোলাটে মনে হচ্ছে তার। জোর করে চোখ মুছে স্পষ্ট দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। হঠাৎ পেটের ভেতরে নলের মতো কিছুর অনুভব হলো। পেটে প্রচণ্ড ব্যথা করছে। ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে আর বলছে,
'আমার বাচ্চাটারে মাইরেন না। কী দোষ করছে ও! কেন ওরে বাঁচতে দিবেন না! মাইরেন না ওরে। দোহাই লাগে আপনাগো, বাঁচতে দেন ওরে। ভগবান সইবো না।'
কথাগুলোয় তেমন জোর নেই। জোর নেই গায়ে। ঘোরের অতলে হাবুডুবু খাচ্ছে যেন। সব কিছু অস্পষ্ট। ঠিক যেন স্বপ্ন। দুঃস্বপ্ন। ঘোরতর দুঃস্বপ্ন।
.
একদিন একরাত অনিন্দিতার পুরোপুরি হুস ছিল না। একটু পরপর চিৎকার করে উঠেছে, কেঁদেছে আর বকেছে সবাইকে। নিজেকে আর ভগবানকেও বাদ দেয়নি। পেটের প্রচণ্ড ব্যথা নিয়েই কোঁকড়াতে কোঁকড়াতে বেড থেকে নামলো। খুব কষ্টে পায়ে ভর দিয়ে দুলতে দুলতে বের হলো। ডাক্তার সাহেবার রুমে ঢুকবে এমন সময় তার শ্বাশুরি আর ভাসুরকে ভেতরে দেখল। তারা কথা বলছে। টলতে টলতে ভেতরে ঢুকছিল এমন সময় ডাক্তার সাহেবার একটা কথা শুনে থমকে গেল। পায়ের নিচের মাটি যেন সরে গেছে। শূন্যে দাঁড়িয়ে আছে সে। পুরো পৃথিবী যেন কাঁপছে, সে ব্যতীত। সবকিছু হঠাৎ স্পষ্ট মনে হচ্ছে তার। ঝড়ের বেগে ভেতরে ঢুকে গেল,
'কি বললেন ম্যাডাম? কি বললেন আপনে? আমি মা হইতে পারুম না! এত্ত বড় মিথ্যা কথা বলতে পারলেন? বাচ্চা! আ-আ-আ আমার বাচ্চা, আমার বাচ্চা! আমার বাচ্চা কোথায়?'
নিজের পেটে হাত দিয়ে অনিন্দিতা চিৎকার করতে লাগল। মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো পরক্ষণেই। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
'আমার বাচ্চার সাথে কী করছেন? ফিরায় দেন আমার বাচ্চা। আমার কলজের টুকরারে, ফিরায় দেন। ভগবান! কই তুমি? দেখতাছো না কিছু? কিভাবে করলা আমার সাথে এমনটা ভগবান! তুমি ভগবান না। ভগবান বইলা কিছু নাই। মানুষ বইলা কিছু নাই। সব জানোয়ার। হিংস্র জানোয়ার। বাচ্চা। আমার বাচ্চা।'
.
অনিন্দিতা নামের একজন মানসিক রোগীকে ঢাকার একটা পাগলাগারদ থেকে ছেড়ে দিয়েছে ক'দিন আগে। মহিলাটা বাচ্চা বাচ্চা করে কাঁদত আর সবাইকে শাপশাপান্ত করতো। কাউকে দেখতে পারতো না। কাউকে দেখলেই প্রবল ঘৃণায় চোখ লাল করে তাকিয়ে বকাঝকা করতো। হাতের কাছে পেলে খামচে দিতো। তার পরিবার থেকে কেউ খোঁজ না নেয়া আর টাকা না দেয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
.
অনিন্দিতার বাবা মা তাদের আদরের মেয়েকে খুঁজে বেড়াচ্ছে বছর দেড়েক ধরে। সেই যে সন্তানসম্ভবা মেয়েটি শ্বাশুরির সাথে ঢাকায় গেল ডাক্তারের কাছে আর ফিরেনি। তার শ্বাশুরি আর ভাসুর ফিরেছে। তারা বলেছে অনিন্দিতার এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। সে মারা গেছে। তাদের কান্না দেখে বিশ্বাস করার ইচ্ছা জাগলেও কেন যেন বিশ্বাস করতে পারেনি। তাদের মেয়ে বেঁচে আছে এই বিশ্বাস নিয়েই এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছে তারা। ঢাকায় এসে এসে খুঁজেছে। টাকা ফুঁড়িয়ে গেলে আবার ফিরেছে টাকার জোগার করতে। শুনেছে অনিন্দিতার স্বামী নাকি দ্বিতীয় বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছে। শুনে অনিন্দিতার বাবার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। ঘৃণায় চোখ দিয়ে আগুন ঝরছিল। কী করে পারে মানুষ এমনটা! মানুষ নয়, জানোয়ার। এগুলো জানোয়ার। হিংস্র জানোয়ার।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ভুতুম প্যাঁচী ধন্যবাদ খালামনি। আস্তে আস্তে শিখছি তোমাদের কাছ থেকে। পরেরবার আরেকটু ভালো করার চেষ্টা করব। :)
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
Fahmida Bari Bipu ভাগ্নী, তোমার গল্প পড়লাম বেশ মন দিয়ে। তোমার লেখনী দক্ষতা নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নাই। এবারে যেন আরেকটু নতুন স্পাইস পেলাম। ভালো লাগলো। বিশেষ করে প্রথমদিকের বর্ণণা পড়তে বেশ ভালো লাগছিলো। তবে উপরে একজন বলেছেন, কমন প্লট এর কথা। এটা তঠিক। কমন প্লট নির্বাচন করা দোষের কিছু না। বরং কমন প্লটে আনকমন গল্প লিখতে পারাটাই প্রকৃত দক্ষতা। তুমি অনেকটাই সফল হয়েছো। কিন্তু কাহিনিতে আরো কিছু উপাদান যোগ করতে পারতে। আরো মাথা খাটাও। তোমার অনেক অনেক সাফল্য কামনা করি।
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
মিলন বনিক কবিতারপড়ে গল্পে ঢুঁ মারলাম..দুদিকেই সমান দক্ষতা....খুব ভালো লাগলো...শুভকামনা...
ভালো লাগেনি ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
অনেক ধন্যবাদ :)
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
পন্ডিত মাহী আমি যখন আমার স্ত্রীকে চেকাপের জন্য নিয়ে যাই। তখন এক মহিলা ডাক্তার তাকে বলেছিল, মা বাচ্চাটা রাখবে তো... কথাটা এখনও কানে বাজে। ঠিক এ কারনেই, এখনও আমরা দু'জন জানতে চাইনি ছেলে না মেয়ে হবে। গল্প ভালো হয়েছে। তবে এ ধরনের কমন প্লটে লিখতে হলে আরো কিছু টুইস্ট থাকলে জমে ওঠে।
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
ধন্যবাদ। এরপর থেকে চেষ্টা করব টুইস্ট রাখার। :)
ভালো লাগেনি ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

২৭ মার্চ - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪