মোট চারটে শিপ বেরিয়েছিল। এক একটা শিপে কুড়ি জন ক্রু। প্রায় একই সময়ে চারজনে চারদিকে ছিটকে পড়লো। যে শিপের ব্যাপারে বলছি তাতে একজন বয়স্কা, দশজন মা-বাবা, ছয়জন তরুণ তরুণী এবং তিনজন শিশু; একজনের সবে চোখ খুলেছে। এদের বয়স কার কতো তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। যে গ্রহ ছেড়ে এরা বেরিয়ে পড়েছে অন্য বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধানে, সেখানে সময়ের ক্যল্কুলেশন হয় না। তবু শরীরে ছাপ পড়ে, তবে মস্তিষ্কে নয়। আমৃত্যু ব্রেনকে বশে রাখতে পারে। এদের এই শিপের নাম **#()&*। নিজেদের গ্রহ ছেড়ে দিয়েছে তিন আলোকবর্ষ পেরিয়ে এসেছে। শিপের সমস্ত প্রোগ্রাম সুপরিকল্পিত ফ্লো চার্ট অনুযায়ী। শৃঙ্খলা বদ্ধ প্যরমুটেশন কম্বিনেশন। এতো বেশি করে টেস্টেড কোথাও ভুল হবার যো নেই। শিপ স্বয়ংক্রিয়। কখন কোন কক্ষ পথে ঢুকবে, বেরোবে, গতি নিয়ন্ত্রণ শিপ নিজেই করবে। নতুন বাসযোগ্য গ্রহ আবিষ্কার করেই পুনরায় তাদের নিজস্ব গ্রহে ফিরে আসার বন্দোবস্ত করা আছে। যারা ক্রু, তাদের কিছুই করতে হবে না, শুধু মাঝে মধ্যে লক্ষ্য রাখতে হবে কোথাও কিছু বিগড়োতে যাচ্ছে কি না। এরা কেউ কিছু খাচ্ছে না। দৈহিক শক্তির জন্যে মহাকাশীয় মলিক্যুল কনভ্যর্ট সাহায্য করছে। শিপের ইন্ধন মহাজাগতিক অবিরল রশ্মি যোগাচ্ছে। শ্বাস নেবার অক্সিজেন সেই একই পদ্ধতিতে গৃহীত হচ্ছে। সুতরাং কোন কিছু সঞ্চয় করে রাখার বা তা খরচা করার মাথাব্যাথা নেই।
এরা কখনও ঘুমোয়, কখনও জেগে থাকে। জেগে থাকলে আলোচনা করে। নতুন আবিষ্কৃত গ্রহের বাসিন্দারা কেমন হবে। তাদের থেকে কতটা উন্নত। তাদের থেকে উন্নত তো নয়, নইলে এতদিনে সঙ্কেত আদানপ্রদান হতো। নতুন মানবজাতির আকৃতি কি তাদেরই মতো, দুই হাত দুই পা, পাঁচটা পাঁচটা দশটা আঙুল। এমন চোখ কান নাক মুখ! দেখা যাক। এবং এরা কি তাদেরই মত অক্সিজেন নিয়ে বাঁচে! আর বংশবিস্তার? তাদের তো মানসিক মিলন হয় পুর্ণ তৃপ্তিসহকারে। এরা কি দৈহিক মিলনে অভ্যস্ত?
যে গ্রহ থেকে এদের চারটে শিপ বিভিন্ন দিকে নতুন গ্রহের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছে, তাদের সঙ্গে যেন সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন। আগে হোম প্ল্যানেট থেকে মহাবিশ্বের দুগ্ধপথে প্রায় শত সহস্র বার সঙ্কেত পাঠানো হয়েছে কিছুই প্রতিধ্বনিত হয়নি। এদিকে তাদের এত অত্যাধুনিক গ্রহ যেন ধীরে ধীরে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যেন নষ্ট করতে চলেছে। আর একশ বিলিয়ান আলোকবর্ষের মধ্যে কালো গহ্বরে চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে। আর অপেক্ষা করা যায়না প্রেরিত সঙ্কেতের প্রত্যুত্তরের আশায়। সতরাং চারটে শিপ, কুড়ি জন ক্রু।
শিপ **#()&* এর ক্রু-রা যেন আচমকা কিছু অনুভব করল। সব্বাই নড়ে চড়ে বসলো। কী ব্যাপার! প্রধান পাইলটের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। একজন মধ্যবয়স্কা মহিলার অনুভূতিতে ধরা পড়ে, তাদের শিপ কোন স্বয়ংক্রিয় কাজ করছে না। সমস্ত টেকনিক্যালিটি ফেলিওর। শিপ নির্দিষ্ট কক্ষপথ ত্যাগ করে অন্য কোন অচেনা অজানা কক্ষপথে ঢুকে পড়েছে। যেখান দিয়ে শিপ এগোচ্ছে সেই এরিয়া কারো মাধ্যকর্ষণ টানের মধ্যে নেই। সুতরাং নিউটনের প্রথম সূত্র অনুযায়ী একদম সোজা চলছে। যেহেতু কোনরকম সঞ্চিত ইন্ধন ছিলনা এবং পুরো টেকনিক্যালিটিই মহাজাগতিক শক্তির ওপরে নির্ভর করে চলছিল। এবার কী হবে। সবাই চঞ্চল হয়ে উঠল। সব কিছু অকেজো বিকল বিগড়ে গেছে। এমন সময় শিপ যেন কোন এক অজানা গ্যালাক্সির মধ্যে ঢুকে পড়েছে। মাধ্যকর্ষনের টান অনুভূত হচ্ছে। নীলচে গোলাকার সেলেসিয়াল বডি দৃশ্যমান। অনেকটা কাছাকাছি আসতেই শিপের দেওয়ালে ক্র্যাক ধরল। একটু একটু করে বড়ো হচ্ছে। ভেতরে অতি ক্ষীণ মাত্রায় অক্সিজেন। কী হবে। প্রায় তিরিশ কিলোমিট্যর, গ্রহ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ফাটল দিয়ে অক্সিজেন শিপে ঢুকছে। সবাই সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল। বেঁচে গেছে। এই গ্রহের বাতাসে তাদের গ্রহের মতই অক্সিজেন আছে। শিপটাকে সমুদ্রের কিনারে নামান হল। বাইরে বেরিয়ে সবাই অবাক। এতো তাদের গ্রহের মতই। তফাৎ শুধু সময়ের। এই গ্রহ এখনও উন্নত হয়নি। চারিদিক দুর্গম জঙ্গলে ঘেরা। এখনও পর্যন্ত কোন জীব জন্তুর দেখা মেলেনি। প্রধানের উপদেশ অনুযায়ী সকলেই গাছের ডালপালা ভেঙ্গে জুতসই অস্ত্র বানিয়ে নিল। দূরে হলেও একটা পাহাড়ের চুঁড়ো থেকে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। মনে হয় কয়েকদিন আগেই আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই গ্রহর হিসেবে এখন দুপুর বারোটা। রোদ্দুরের তেজ বেশ অনুভূত হয়।
প্রধান বলল, ‘আমার মনে হয় এই গ্রহটি জুরাসিক পর্যায় সবে পেরিয়েছে’
এক মহিলা, ‘কী করে বুঝলে? আমরা তো এতো বড়ো গ্রহের এক কোণে বসে আছি’
- প্রধান, ঠিক বলছে। আমি এই পাহাড়ের পাশটায় গিয়ে সাওরোপডের একটা ফসিল দেখেছি
- আমাদের সময় নষ্ট না করে বাসযোগ্য করে ফেলতে হবে দ্রুত। এটা তো নিশ্চিত আমরা আমাদের হোম গ্রহে আর কোনোদিন যেতে পারব না। আমরা তো সঙ্কেত পাঠাতে পারবই না, না সঙ্কেত এলেও তাতে সাড়া দেওয়া যাবে। সব এখন ম্যানুয়ালি করতে হবে, যা আমরা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম
- যা হোক, আমাদের ব্রেন তো এখানকার আরও অন্যান জীব জন্তু থেকে উন্নত
- দেখো এখানে গাছে গাছে ফল। শারীরিক শক্তি যোগাবে। এরা হয়তো এখনও এর ব্যবহারই জানে না
- এখনও পর্যন্ত কোন জীবের দেখা মেলেনি
- আমি দেখেছি। যখন শিপ সমুদ্রের জল প্রায় ছোঁয় ছোঁয়, দেখেছি ল্যান্সেট ফিশ
- অ্যালেপিসরাস
- বলেছিলাম না, এরা সবে জুরাসিক কাল পার হয়েছে।
- আমরা মানবজাতি এখানে বহিরাগত, এলিয়েন
রাতে আগুন জ্বালিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গাছের পাতা বিছিয়ে শুয়ে পড়লো। প্রতি দু ঘন্টা ধরে ধরে দুজন করে জেগে পাহারা দিতে থাকল।
সকাল হতেই আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে আসা গেল, এই পাহাড়ের অন্যদিক ঘোরা উচিৎ। কোথায় কী আছে, কারা আছে...
বাচ্চারা আর বয়স্কা মহিরা ছাড়া তিনটে দল তিন দিকে গেল। কথা হল, বেশিদূর যাবেনা। দূরত্ব এমন থাকবে যেন একে অপরের সঙ্কেত দেওয়া নেওয়া করতে পারে। ব্যস এভাবে শুরু হল অভিযান।
আস্তে আস্তে গ্রহের অনেকটা জায়গা পরিচিত হয়ে উঠল। প্রচুর জীবজন্তুর দেখা মিলল। এদের মধ্যে হোমোস্যাম্পিয়ান স্পেসিস এর কাউকে পাওয়া গেলো না। সুতরাং এই বহিরাগত মানব জাতি বংশ বিস্তার করে সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকলো। এরা ব্রেন খালি রাখে না। কিছু না কিছু করছেই। এভাবে এই পৃথিবী উন্নত হয়ে উঠল। বিলিয়ান ট্রিলিয়ান বছর পরে মানবের স্মৃতি থেকে এ কথাটা উবে গেল যে তারা এলিয়েন। এই অত্যধুনিক পৃথিবীতে আমরা আসলে এলিয়েন, বহিরাগত।
সবার হা গোল চোখ, এসব কী করে বন্ধ করা যাবে। কিছুক্ষণ পরে তৃণা একটু শ্বাস নিয়ে বলল, ‘দাদুভাই, আমরা যেখান থেকে এসেছি, সেখানে যাওয়া যায় না?’
- মানুষ তো চেষ্টা করছে। কবে যে স্যক্সেস হবে। এখনও পর্যন্ত চেনা জানা মহাবিশ্বে আমরা ছাড়া কেউ নেই। আমরা একা, খুব একা, একেবারে একা...
১৭ মার্চ - ২০১৬
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪