জগলু জব্বারের বোধোদয়

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০১৬)

মোঃ মিজানুর রহমান
  • ১০
  • ৩৩

আরে সুপ্ত ভাইজান! কেমুন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
আমিতো ভাই কিছুক্ষন আগেও ভালো ছিলাম। এক্কেবারে মার্সিডিজ গাড়ির লাহান। কিন্তু ভাই এই মুহূর্তে আমার অবস্থা টাটা ন্যানোর লাহান। উপরে ফিটফাট, ভিতরে কষ্টে কাঠ। মনডা আপনেরে দেইখা ব্যপক খুশী হইল। আবার আপনের কথায়ই বেজার।
আমি কি আপনাকে খারাপ কিছু বলেছি?
খারাপ বলেন নাই। কিন্তু তারচেয়ে ও নিচের দিকের কথা বলেছেন। এত নিচু মাপের কথা লেগুনার ড্রাইভাররা ও বলেনা।
আমি এইবার একটু চিন্তিত হলাম। লোকটাকে খুব পরিচিত লাগছে। আবার চিনতেও পারছিনা। বাংলায় এই অবস্থার নাম দোটানা। ইংরেজিটা মনে পরছেনা। মনে না পরার কথা না। মানব জাতীর ব্রেইন মনে হয় দোটানা অবস্থার জন্য উপযুক্ত নয়। না হলে দোটানা ইংরেজি ভুলে যাব কেন? আমি পকেট থেকে আমার Nokia-520 মোবাইলটি বের করলাম। কিন্তু লাভ হল না। আমার এই ফোনে Bengali to English DICTIONARY নেই। তাই সিদ্ধন্ত নিলাম আমার সামনে দাড়িয়ে থাকা টাটা ন্যানোর কাছে জিজ্ঞেস করব। আমি দেরি করলাম না। সময়ের এক ফোঁড় মেরে দিলাম। অসময়ের দশ ফোঁড়ের টাইম নাই।
জনাব, দোটানা শব্দটার ইংরেজিটা জানেন?
লোকটার মন আরও খারাপ হয়ে গেল। দোটানার ইংরেজিটা মনে হয় জানা যাবেনা। তবে আমার ব্রেইন আমাকে দোটানার কৃষ্ণ গহ্বর থেকে টেনে তুলল। আমি এখন আর লোকটাকে নিয়ে ভাবছিনা। সে তাঁর মত মন খারাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি আমার মত দোটানার ইংরেজি খুজছি। মানুষের ব্রেইন সৃষ্টিকর্তার এক অসাধারন আবিস্কার। এটা একা একাই অনেক সমস্যার সমাধান করেতে পারে। আমার ব্রেইন আমাকে প্রথমে দোটানা থেকে রক্ষা করেছে। এইবার অবশ্যই এর ইংরেজিটাও মনে করে ফেলবে। আর তাঁর পরে মিঃ ন্যানোকে চিনে ফেলবে। আমি আমার ব্রেইনের উপর ভরসা করলাম।
মিঃ ন্যানো আমাকে বলল, সুপ্ত ভাই আমাকে চিনতে পারলেন না!
আমি বললাম, তুই হইলি জগলু জব্বার। বাড়ি কেরামত গঞ্জ, পাবানা। বড় ছেলের নাম, মোঃ আমিনুল ইসলাম। ক্লাশ টু। রোল এক। ছোট ছেলের নাম, মোঃ জুলফিকার আলী। ক্লাশ ওয়ান। রোল এক। জগলু বিশাল এক হাসি নিয়ে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। আমার অসুবিধা হল না। আনন্দ মানুষের শরীর কে হাল্কা করে দেয়। আর কষ্ট করে দেয় ভারি । তাই হস্তি সাইজের জগলু আমার উপর ঝাপিয়ে পরলেও আমার বিশেষ কোন সমস্যা হলনা। ও যদি দুঃখ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ত, তাহলে আমি ভর্তা হয়ে যেতাম। নরমাল ভর্তা না। একেবারে নতুন আলুর ভর্তা। ও আনন্দ নিয়ে ঝঁপিয়ে পড়েছে তাই আল্লাহ্‌র কাছে মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলাম।
এইবার পৃথিবীর সবচাইতে অলস টাইপের ছোঁয়াচে রোগ আনন্দ আমার মাঝেও সংক্রমিত হল। আমি জগলুকে আরও জোরে ঝাপটে ধরে বললাম, কেমন আছিসরে জগলু?
এক্কেবারে চকচকে মার্সিডিজের লাহান। স্টার্ট দিলেই হাই স্পিড।
আমি বললাম, শোন মিঃ মার্সিডিজ, আমি দোটানার ইংরেজি পেয়ে গেছি। দোটানার ইংরেজি হল dilemma.
জগলু আমার কথায় পাত্তা দিল না। আমকে ছেড়ে দিয়ে হাত জোড় করে মাটিতে বসে পড়ল। আমি এইবার খেয়াল করলাম ওর পরনে দামি চকচকে কালো স্যুট, টকটকে লাল টাই। মানুষের পোশাকের দিকে আমি কখনই নজর দেইনা। এবার আমার ব্রেইন আমাকে নজর দিতে বাধ্য করল। এর কারন মনে হয় দুইটি।
কারন নাম্বার এক, মাটিতে বসার কারনে জগলুর দামী স্যুট ময়লা হয়ে যাবে।
আর কারন নাম্বার দুই, জগলুর এই সাহেবি পোশাকের কারনেই ওকে আমি চিনতে পারিনি।
আমার ব্রেইন মনে হয় লজ্জা পেয়েছে। তাই সে তাঁর ভুলের কারন ব্যাখ্যা সহকারে উপস্থাপন করল। ঠিক এই যায়গাতেই মানুষের ব্রেইন আর কম্পিউটারের ব্রেইনের তফাৎ। মানুষের ব্রেইন ভুল করে, ভুলের কারন দর্শায় এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ধীরে ধীরে জ্ঞানী হয়ে উঠে। আর যেহেতু কম্পিউটার ভুল করেনা তাই তার পক্ষে জ্ঞানী হওয়া ও সম্ভব না। আমার মনে হয় বিজ্ঞানীরা ভুল পথে এগুচ্ছেন। কম্পিউটারকে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন বানাতে চাইলে একে অবশ্যই ভুল করতে দিতে হবে। ভুল করার অধিকার হবে কম্পিউটারের কম্পিউটারিক অধিকার। মানুষ মাত্রই

যেমন ভুল তেমনি হবে কম্পিউটার মাত্রই ভুল। ইংরেজিতে হবে, to err is computer. বিষয় টা নিয়ে ভাবতে হবে। প্রয়জোন হলে মিছিল মিটিং এর আয়োজন করতে হবে। যেহেতু কম্পিউটারের কৃত্তিম বুদ্ধি বিবেক নেই সেহেতু এই গুরু দায়িত্ব আমাদের কাদেই নিতে হবে। আমরা কম্পিউটার সেজে প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে অনশন করব। সাথে চলতে থাকবে স্লোগান, কম্পিউটারের দাবী মানতে হবে, ভুল করতে দিতে হবে।
মানুষ অল্প হলে হবে না। অনেক হতে হবে। মানুষ জোগাড়েরও একটা উপায় আছে। আমারা মিছিলের সপ্তাহ খানেক আগে বিভিন্ন স্কুল, কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে লেকচার দেব। লেকচারের থাকবে দুইটা পার্ট।
পার্ট এক এ থাকবে, কম্পিউটারের কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কেন প্রয়জন, আর পার্ট দুই বা আখেরি পার্ট এ থাকবে, কেন আমাদের উচিত এই আন্দোলন শুরু করা। এই পর্যায়ে বলা হবে, কম্পিউটার বুদ্ধিমান হয়ে যখন পৃথিবীর নিয়িন্ত্রন নিয়ে নেবে, তখন আমরা আমাদের এই কার্যক্রমের ভিডিও ফুটেজ দেখাব। তখন কম্পিউটাররা খুশী হয়ে আমাদের বিশেষ অতিথি হিসেবে পৃথিবীতে থাকতে দেবে। এই পর্যায়ে একটু দেশপ্রেম বাচক কথা দিয়ে দিতে হবে। যেমন, কম্পিউটাররা যখন দেখবে তাদের এই বুদ্ধিমান বানানোর প্রকৃত আন্দলন বাংলাদেশ নামক ছোট্ট সুন্দর দেশ থেকে শুরু হয়েছে, তখন তারা কৃতজ্ঞ হয়ে আমাদের বাংলাদেশকে সত্যিকারের সোনার বাংলা বানিয়ে দেবে।
আশা করা যায় এই লেকচারের পর কম্পিউটারের পক্ষে আন্দলন কারি পাওয়া কোন ব্যপার না। আমি জগলু কে আমার প্রথম কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিলাম।
জগলু, উঠে আয়।
ভাই উঠব না।
আমি ফিসফিসে গলায় বললাম, জগলু উঠে আয়। রাস্থার মাঝ খানে এই ভাবে বসে থাকা স্যুট টাই পরা লোকের কাজ না। স্যুট নষ্ট হয়ে যাবে।
স্যুটের কপালে জুতা মারি সুপ্ত ভাই। সাত টা জুতার বাড়ি। সাতটা কেন জানেন?
আমি মাথা নেড়ে না করলাম।
জগলু বসে থেকেই বলল, সাত হইল ভাইজান অমঙ্গল নাম্বার। তাই সাতটা।
আমি তো জানতাম, অমঙ্গল নাম্বার ১৩। the unlucky thirteen.
কি বলেন সুপ্ত ভাই,! সাত ১৩ চেয়ে অনেক বড় অমঙ্গল নাম্বার। দাদা প্র-দাদা টাইপ। সাতে বাম পা যোগ করতে পারলে তো কথাই নাই। সোনায় সোহাগা।
এখানে তো সোনায় সোহাগা হতে পারেনা। এখানে হবে অমঙ্গলে সাত বাপালা।
জগলু হাসিতে ফেটে পড়ল। কিন্তু উঠে দাঁড়াল না। ওর হাসি দেখে মনে হল ওর অনেক কষ্ট। তাই আমি থামালাম না। ওকে হাসতে দিলাম। কাদলে যেমনি কষ্ট কাটে। তেমনি হাসলে ও কষ্ট কাটে। তবে এই কষ্ট কাটা হাসির একটা নিয়ম আছে। নিয়ম হল, হাসতে হাসতে চোখে জল এসতে হবে। চোখের জলের সাথে কষ্টের জীবাণু বের হয়ে যাবে।
জগলুর এখনো চোখে জল আসেনি। আমি ওকে নিয়ম পূরণ করার চান্স দিলাম। ও হাসছে। আমি ওর হাসি আরও বাড়ীয়ে দিলাম। ভর দুপুরে ঢাকার ব্যস্ত রাস্থর উপর বসে পড়লাম। আমি ওর সামনে আসন পিঁড়ি দিয়ে বসা ও আমার সমানে হাঁটু গেঁড়ে হা্ত জোর করে বসা। শিশ্য গুরুর কাছ থে্কে শিক্ষা নিচ্ছে।
২.
ঢাকা শহর বাসির আগ্রহ এখনো হারিয়ে যায়নি। তাঁরা দয়া পরবশ হয়ে আমাদের চারপাশে গোল হয়ে দাড়াচ্ছেন। আমি ওনাদের হতাশ করলাম না। হাসি থামিয়ে হুরমুর করে মন্ত্র পড়া শুরু করলাম। জগলু ও হাসি থামাল। ওর হাসি নিয়ম মত হয়েছে। চোখ বেয়ে ধেয়ে নামছে অশ্রু ফোঁটা। এই আনন্দ জল ওর চেহারার ভোল পাল্টে দিল। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম, হে আল্লাহ্‌ মহিলা মানুষ যেন চোখের জলের এই আউরবেদিক গুনের কথা না জানতে পারে। জানতে পারলে আমরা পরুষরা শেষ। ওনারা সারাক্ষন চোখের পানি সংগ্রহের ধান্দায় থাকবে। রান্না বান্না হয়ে যাবে আমাদের পার্মানেন্ট কাজ। ওনারা বাটি নিয়ে দুঃখী মানুষ খুজতে থাকবে। যে খানেই দেখবে কান্না সেখানেই থাকবেন ওনারা। অবশ্যই বাটি হাতে। যারা একটু বেশী এগ্রেসিভ তাঁরা মানুষ ধরে এনে পিটিয় কান্না করাবে তাঁর পর মহা উদ্দ্যমে শুরু হবে চোখের পানি সংগ্রহ।
অন্য দিকে মহিলাদের এই বিশাল চাহিদা পূরণ করতে তৈরি হবে বিভিন্ন কোম্পানি। মিনারেল ওয়াটারের মত বোতল জাত করে বিক্রি হবে চোখের জল। এটার ইংরেজি হবে, eye water. 100% authentic. বিজ্ঞাপনে বলা হবে, একেবারে খাটি চোখের জল। বিখ্যাত কান্না ক্লাব থেকে সংগ্রিহিত।
অন্য কোম্পানি বিজ্ঞাপানে বলবে, ১০০ ভাগ খাটি চোখের জল। একে বারে মরা বাড়ি থেকে আমদানিকৃত।
ফেইস বুকে ফেন পেইজ খোলা হবে, চোখের জলের কেরামতি।
পারায় পারায় মহিলারা ক্লাব খুলবে। নাম হবে চোখের জল ক্লাব। এখানে বড় করে লেখা থাকবে, চোখ, চোখের জল ও রুপের জাদু।
আমি মন্ত্র থামিয়ে জগলু কে বললাম। জগলু ওঠ। একটা আইডিয়া পেয়েছি। বলতে পারিস বিলিয়ন ডলার আইডিয়া। আজ থেকে ব্যবসা শুরু হবে।
আমি উঠে হাটা ধরলাম। আমার পেছনে জগলু।


৩. আমরা এখন রমনা পার্কে। গত এক ঘণ্টায় জগলুর ড্রাইভার থেকে অটোমোবাইল কোম্পানির মালিক হওয়ার কাহিনী শুনালাম। এখন আমারা ঘাসের উপর বসা। আমার ইচ্ছে হচ্ছে চিত হয়ে শুয়ে পরা। কিন্তু জগলুর জন্য পারছিনা। ও কি যেন বলতে চাচ্ছে। কিন্তু পারছেনা। এই হা করে আবার বন্ধ করে। কিন্তু কথা বের হয় না। এই অবস্থা বেশ কিছুক্ষন ধরে চলছে। তাঁর মানে যে ও বোবা হয়ে গেছে তা না। সব কথাই বলতে পারে। কিন্তু যে কথাটা বলার জন্য ও চেষ্টা করছে তা পারছে না। আমি ওর কথা শুনার আগ্রহ অনেক আগেই হারিয়েছি। কিন্তু তাঁর পরেও ভদ্রতার খাতিরে এটেনশান দিচ্ছি। এক বিখ্যাত ব্যক্তি বলেছিলেন, মনোযোগ দিয়ে কথা শুনতে পারাটা একটা বিশাল শিল্প। আমি এই শিল্পের শিল্পি হয়ার চেষ্টা করছি। তবে মনে হয় না বেশিক্ষন চেষ্টা করতে পারব। ঘাস আমাকে ডাকছে।
জগলুর মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। আমি আর পাত্তা দিতে পারলাম না। ঘাসের দিকে শরীর এলিয়ে দিলাম। ঠিক এই সময় পেছন থেকে একটা মেয়ে ডেকে উঠল।
এই সুপ্ত, এই?
আমি পিছনে ফিরলাম না। আমার এক গুরু হিমু ভাইজান বলেছেন, মেয়েদের ডাকে পেছনে ফিরতে নেই। তাই তাকালাম না।
মেয়েটা আমার সামনে চলে আসল। আমি একটু ও অবাক হলাম না। এই হল আমার পরশি শিলা। যার জন্য আমি গৃহ বন্ধী ছিলাম সুদীর্ঘ ৫ ঘণ্টা। যিনি আমার চার নম্বর বিবি হতেও রাজি। এবং যার কাছে সবসময় একটা বুলেট থাকছে আমাকে হুমকি দেয়ার জন্য। যেন আমি তাকে ফাকি দিতে না পারি।
হাই শিলা
এই বদমাশ, তুই আমার ফোন ব্ল্যাক লিস্টে রেখেছিস কেন?
আমি দুঃখিত শিলা। তুমি ইচ্ছা করলে তোমার বুলেট টা খরচ করে ফেলতে পার। কিন্তু তাঁর আগে একটু মিঃ ন্যানো জগলুর সাথে পরিচিত হয়ে নাও।
আমি একটু রোমান্টিক হয়ে গেলাম। শিলার হাত ধরে আমার পাশে বসালাম। এবং ভালো করে ওর দিকে তাকালাম। শিলা জগলুর দিকে তাকাল। জগলুর সাহেবি পোশাকের সাথে বর্তমান আসন মোটেও জাচ্ছেনা। জগলু অবশ্য এইসব নিয়ে ভাবছেনা। শিলাকে ও খেয়াল করে নি। সে ননস্টপ হা করছে আর বন্ধ করছে। শিলা আমকে বাদ দিয়ে জগলুকে দেখছে। আমি শিলাকে দেখচ্ছি।
অঞ্জন্সের লাল সালাওয়ার কামিজে যে মেয়েদের এত সুন্দর লাগতে পারে তা শিলাকে না দেখলে বুঝা যাবেনা। এই যুগে যদি মহাকবি আলাওয়াল থাকতেন তাহলে গ্যাচগ্যাচ করে লিখে ফেলতেন। লিপিস্টিক রাতুল হইল অধর পরশে। অর্থাৎ ঠোঁটের পরশে লিপস্টিক লাল হল।
শিলার যে বিষয়টা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হল হর পারফিউম। এই পারফিউমের ঘ্রাণটা আমি আর কোথাও পাইনি। এমন মিষ্টি ঘ্রান একেবারে কলিজার ভেতরে ঢুকে যায়। এই পারফিউমের নাম শিলা কাউকে বলেনা। এমনকি আমিও জানতে পারিনি। আমি একদিন ওকে বললাম, শিলা তুমি কি সাইকো?
এটা কেমন প্রশ্ন জান?
কেমন প্রশ্ন জানিনা। তবে আমার মনে হয় তুমি সাইকো।
কারণটা জানতে পারি?
অবশ্যই। তাঁর আগে বল তোমার বান্ধবী গুলো কী অনেক সুন্দর ছিল?
সুন্দর ছিল মানে? এখন ও সুন্দর আছে।
এবার আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। এই যে মিস্টার আমার বান্দবিদের রুপের কথা জেনে আপনি কি করবেন?
তাদের সাহায্য করব। আচ্ছা বল তো তুমি তাদের কয়জন কে হত্যা করেছো?
মানে কি? শিলা হেসে উঠল। আমি আমার বান্ধবিদের মেরে কি করব।
কি আর করবে মানে কি? তুমি already করছ। তাদের মেরে the perfume ছবির নায়কের মত তাদের চামড়ার নির্যাস দিয়ে পারফিউম বানাচ্ছ। তাই তুমি এই পারফিউমের নাম কাউকে বলতে চাওনা। আচ্ছা ডেড বডি কোথায় ডাম্প করেছ?
এই পর্যায়ে শিলা হাসতে হাসতে ফিট। কিন্তু পারফিউমের নাম জানা গেল না। আমি পারফিউম রহস্য বাদ দিয়ে শিলার চুলের ঘ্রান নিলাম। এটা আরেক রহস্য। সে ডাভ স্যম্পু ব্যাবহার করে। কিন্তু ডাভ স্যাম্পু ব্যাবহার করলে চুল এমন ঘ্রান হওয়ার কথা না। এই বিষয় নিয়ে শিলা কে প্রশ্ন করা হয় নি। আচ্ছা এখনি জেনে নেই না কেন।
শিলা। আমি মোলায়েম স্বরে ডাকলাম।
বল শুনছি। আমার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল।
তোমার চুলে এমন ঘ্রান কেন?
সুপ্ত এই সব মেয়ে ভুলানো কথায় তুমি মাপ পাবেনা। তুমি আগে জগলু ভাইয়ার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দাও। তাঁর পর তোমার কান টেনে আমার বাসায় নিয়ে যাব।
আমি আসলেই দুঃখিত। জগলু ভাই সারা জীবন এমন করে যাবে। তোমার সাথে পরিচয় করান হবে না।
শিলা এবার হেসে উঠল। ভয় পেয়ে গেলে না, সুপ্ত। আচ্ছা ঠিক আছে আমাদের বাসায় নেব না। তোমার বাসায় যাব।
আমি কিছু বললাম না। মনে মনে হাসলাম। হে ললনা তুমি যতই কঠিন পাথর হও না কেন রুপের প্রশংসায় তোমার মন গলবেই। আমার উপর শিলার যত রাগ ছিল চুলের প্রসংশায় সব চলে গেছে। এমন নরম মনের মেয়েদের সাথে কি করে খারাপ ব্যবহার করা যায়। আমার মনে হয় যারা মেয়েদের অত্যাচার করে তাঁরা হয় কাপুরুষ নয় জানোয়ার। কোন সুস্থ মানুষ মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারেনা। মেয়ে জাতী হল আদর ভালোবাসা দেয়ার জাতী। এদের মন ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিতে হয়। ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে হয় এদের হৃদয়। আমার হৃদয় ও শিলার জন্য কেঁদে উঠল।
শিলা চল যাই।
কোথায়? শিলা অমায়িক হাসি দিল।
তুমি যেখানে নেবে। এই সুপ্ত আজ সম্পূর্ণ তোমার। যেখানে খুশী নিয়ে যাও আমাকে।
শিলার মুখ খুশীতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। আমার হৃদয় কোনে একটা চিনচিনে ব্যাথা শুরু হল। এই ব্যাথা শুখের ব্যাথা।। রবি ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়, লাগল যেন সুখের মত ব্যাথা।
শিলা বলল, জগলু ভাইয়ের কি হবে?
ওকে নিয়ে চিন্তা কর না। ও এখন বিশাল অটোমবাইলসের মালিক। ওকে বাসায় গিয়েও দেখতে পারব।
ওনার যা অবস্থা। বাসায় কি ভাবে যাবেন?
সেঁটা নিয়ে ও আমাদের চিন্তার কিছু নাই। বাসায় গিয়ে সন্ধ্যার খবর শুনলেই হবে। কি ভাবে ও বাসায় গেল। কারা পৌঁছে দিল সব জানা যাবে। আমি এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বললাম। চান্সটা কি হারাতে চাও?
শিলা আমাকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। ও আমার এক বাহু দুই হাতে জরিয়ে ধরল। আমি হাটা শুরু করলাম। জগলু এখনো হা করছে আর বন্ধ করছে। আমি শিলাকে নিয়ে হাটা শুরু করলাম। শিলার মনের ভেতরটা এখনো জগলুর জন্য খচ খচ করেছে। ওর চোখ মুখ তাই বলছে। আমারা কিছুদূর গিয়ে পেছনে তাকালাম। সাথে সাথে শিলার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কয়েক জন স্যুট টাই পরা লোক জগলুর কাছে ছুটে গেল। সবাই স্যার স্যার করে মুখ দিয়ে খই ফুটাচ্ছে। শিলা শান্তিতে মুখ ঘুরাল। আমি ওর চুলে মুখ গুজে হাটছি। শিলা আমার প্রিয় কবিতাটি আবৃত্তি করছে। আমি ভাবছি। যেই মেয়েরা নিজের সুখের কথা না ভেবে অন্যের দুঃখে কাতর হতে পারে তাদের কি করে মানুষ অত্যচার করে। যারা নারী নির্যাতন করে তাঁরা নিশ্চয়ই জানোয়ার। অবশ্যই পিশাচ।

৪.
আমরা মানে আমি এবং শিলা এখন স্বর্গ পুরীতে। স্বর্গ পুরী বলতে শিলাদের নতুন গাড়ি। Mitsubishi ASX Z-C . এই গাড়ি বাংলাদেশে মাত্র একটিই আছে। শিলার বাবা বিশিষ্ট শিল্পপতি জনাব রকিবুদ্দিন আহমেদ স্পেশাল অর্ডার দিয়ে আনিয়েছেন। ওনার মতে এটি হল পৃথিবীর বুকে স্বর্গ। আমার অবশ্য কোন মতামত নেই। আমি এমনিতেই প্রাইভেট কার এ চড়তে পছন্দ করিনা। দম বন্ধ হয়ে আসে। শিলা আমার এই রোগ সম্পর্কে ভালো করেই জানে। তাই আমার রোগ সারাতে আমাকে গাড়িতে নিয়ে ঘুরছে। তার মতে এই গাড়িতে উঠলে আমার আর নামতে ইচ্ছে করবে না। আমার অবশ্য নেমে দৌড় মারতে ইচ্ছে করেছে। কিন্তু পারছি না। শিলা যে রকমের মেয়ে, আমাকে তাড়া করতে গিয়ে আমার উপর গাড়িও তুলে দিতে পারে। আমি যে ওকে জমের মত ভয় পাই সেটা বুঝানোর জন্য বললাম, জান, আমি কিন্তু সারাদিন তোমার গাড়িতে থাকবো। তুমি যতই জোরাজুরি কর আমাকে নামাতে পারবে না। কিছু খাওয়াতে চাইলে তুমি গিয়ে কিনে নিয়ে আসবে। আমি গাড়িতে বসেই খাব। টয়লেট চাপলেও নামব না। আচ্ছা তোমাদের স্বর্গ পুরীতে কি টয়লেটের ব্যবস্থা আছে?
শিলা আমার দিকে চোখ গরম করে তাকাল। এরপর একাটা খালি জায়গা দেখে গাড়ি থামাল। এবং গাড়ির টাচ স্ক্রিনের আঙ্গুলের একটা ছোঁয়া দিয়ে আমার পাশের দরজা টা খুলে দিল।
সুপ্ত, নামো।
আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম, এটা কি বলছ, জান? আমি নামবো কেন? তোমার কিছু খেতে ইচ্ছে করলে নিজে গিয়ে নিয়ে আসো। আমি এক মুহূর্তের জন্যও এই স্বর্গ পুরী ছাড়তে পারবোনা।
সুপ্ত, নামো বলছি। শিলার কণ্ঠে এবার নিখাদ লাভা। কিন্তু আমি বড়ই আজব কিসিমের মানুষ। রাগিকে রাগাতে রাগাতে রামছাগল বানানোই আমার কাজ। আমি এবার নিজ কাজে মনোনিবেশ করলাম।
শিলা, তুমি আজ ঘাড় ধাক্কা দিয়েও আমাকে বের করতে পারবেনা। এই তোমার বাবাকে বলনা এই স্বর্গ পুরীটা আমাকে যৌতুক দিতে। তাহলে সারাদিন সারারাত তোমার সাথে এই স্বর্গ পুরীতে কাটাতে পারব। আচ্ছা , বাসর রাতটাও যদি এই গাড়িতে কাটাই তাহলে কেমন হবে বলতো?
এবার শিলা আমাকে আশাহত করল। ভয়ঙ্কর ভাবে রাগ না হয়ে ব্যপক মাত্রার হাসি দিল।
সুপ্ত তুমি এমন কেন বলতো?
আমি আবার কেমন! আমি তো আমার মতোই। আগাগোড়া এক সলিড সুপ্ত। আমি নিরীহ সাজার ভান করলাম।
তুমি আমার উপর রাগ করোনা কেন? আমি তোমাকে যতই বকাঝকা করি তোমার ভালোবাসা ততই বাড়তে থাকে। তুমি এত ভালো কেন, জান?
কেন আবার? তুমি এত খারাপ, ডাইনি, রাক্ষস টাইপ বলে।
শিলা আবার হাসিতে ফেটে পড়ল। আমি বললাম, শিলা একটা কাজ করবে?
কি কাজ, সোনা পাখি? শিলা হাসতে হাসতেই উত্তর দিল।
তোমার গালটা একটু আমার কাছে নিয়ে আস।
কেন চুমু খাবে? শিলার চোখে দুষ্টুমি মাখা হাসি।
না, থাক আনতে হবে হবে না।
কেন?
আমি ভেবেছিলাম তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেব। কিন্তু তুমি তো বুঝেই ফেললে। আসলে আমার দরকার ছিল কোন রামহাদা টাইপ মেয়ের সাথে প্রেম করা।
এই গাধা, দুনিয়ার সব মেয়েরাই জানে ছেলেরা ঠোঁটের কাছে মেয়েদের গাল পেলে কি করে।
সত্যি? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
হ্যাঁ, মিস্টার রামপাঠা। শিলা উচ্ছ্বাসিত উত্তর দিল। এবং চোখ বন্ধ করে তার মিষ্টি গোলাপি বাম গাল খানি আমার ঠোঁটের কাছে পেতে দিল।
আমি শিহরিত হয়ে গেলাম। কন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করলাম। তবে আমার অবাধ্য হাত কথা শুনল না। শুনবেই বা কেন। এমন অসাধারন সুন্দর গাল কাছে পেয়ে ছুঁয়ে দিতে না পারলে তার হাত হয়ে জন্ম নেয়াটাই বৃথা।
আমি আলতো করে আমার ডান হাত দিয়ে ওর অনিন্দ সুন্দর গাল স্পর্শ করলাম। ও শিহরিত হয়ে উঠল। আমি হাত সরিয়ে বললাম, একটা মৌমাছি ছিল ধরতে পারলাম না।
শিলা আমার দিকে আবারো রাগি দৃষ্টি দিল। আমি উপেক্ষা করে বললাম, তোমার গাল অনেক মিষ্টি তো তাই মৌমাছি চলে এসেছে।
এবার শিলার রাগের জায়গায় কেমন যেন এক দৃষ্টি। এ দৃষ্টির মানে আমি পড়তে পারলাম না। আমার জায়গায় রবি ঠাকুর হলে বলে দিত, “নেত্র মাঝে তোমার এ কোন দৃষ্টি ললনা?
একি প্রেম দৃষ্টি নাকি ছলনা?”
যেহেতু আমি রবি ঠাকুর না। তাই কোন কিছুই বলতে পারলাম না। শুধু ড্যাবড্যাব করে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। যা বলার ওই বলে দিল।
সুপ্ত, তুমি আসলেই অনেক ভালো। অনেকের চাইতে অনেক অনেক বেশী ভালো। এই কারনেই তোমাকে আমি এত ভালোবাসি। অনেকের চাইতে অনেক অনেক বেশী ভালোবাসি। তুমি হলে সত্যিকারের পুরুষ। এযুগের অনেক ছেলেদের চেয়ে অনেক ব্যতিক্রম। অন্য কোন ছেলে হলে আমি মনে মনে যা চেয়েছিলাম তাই করে ফেলত। তোমার এই প্রত্যাখ্যান আমার চোখ খুলে দিয়েছে।
শিলা এবার আমার হাত ধরে বলল, জান পাখি, সোনা পাখি, তোমাকে আমি অনেক অনেক অনেক বেশী ভালোবাসব। অবশ্যই বিয়ের পরে। এই চলনা বিয়ে করে ফেলি।
ঠিক আছে। চলো তোমার বাবাকে একটা ফোন দেই।
বাবাকে কেন?
তোমার বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করলে তো এই স্বর্গ পুরী হাত ছাড়া হয়ে যাবে। তখন তোমাকে দিয়ে কি করব?
তখন আমাকে দিয়ে কি করবে তা দেখতে চাও?
না চাইনা।
উঁহু, তোমাকে দেখতেই হবে। দেখি তোমার হাতটা দাওতো।
আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিলাম। শিলা আমার হাতে এক জম-কামড় দিল। আমি ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলাম। চোখে জল চলে আসলো। শিলার কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। ও মনোযোগ দিয়ে দেখছে রক্ত বের হয় কিনা।
আমার হাত দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসল। শিলা এবার ওর ওড়নার একটা অংশ ছিঁড়ে যত্ন করে আমার হাতটা বাঁধতে শুরু করল। হাত বাঁধার মাঝেই ওর ওড়না দিয়ে আমার চোখ মুছে দিল। আমি বললাম, শিলা, আমার স্বর্গ পুরী লাগবেনা তুমি থাকলেই হবে।
তাহলে চলো বিয়ে করে ফেলি।
আমি আর না করার সাহস পেলাম না। পরবর্তী ডেমোতে আমার চোখ ও তুলে ফেলতে পারে।
শিলা গাড়ি স্টার্ট দিল। আমি বললাম, কাজী অফিস যাচ্ছ?
তুমি যদি চাও তাহলে তোমাদের বাসায় ও কাজটা সারতে পারি। সেক্ষেত্রে তোমার বাবাকে একাটা ফোন দিয়ে কাজী নিয়ে আসতে বল।
আমার বাবা তো তোমার বাবাকে আসতে বলবে। তখন?
বলুক। তাতে কি। আমরা তো এমনিতেই তোমাদের প্রতিবেশী। আর তাছাড়া, আমি তো আর কোন বখাটে কে বিয়ে করছি না। আমি বিয়ে করছি ২৫ বছর বয়সি একজন এক্স আর্মি অফিসারকে।
তোমার এই ২৫ বছর বয়সী এক্স আর্মি অফিসার যে কোন চাকরি করেনা!
কোন সমস্যা নেই। আমি আছি না।
তুমি কি করবে?
কেন মেয়েরা কি কিছু করতে পারে না? তবে আমি যা করব তা পরেই টের পাবে। এই শোন, বিয়ে করার আগে জগলু জব্বার ভাইকে একটু দেখে আসা উচিৎ না?
না। আমরা এখন একটা শুভ কাজে যাচ্ছি। এখন জগলু ভাইকে দেখতে যাওয়া যাবেনা।
ছিঃ ছিঃ সুপ্ত, এটা বল। ঐ লোক তোমাকে কত শ্রদ্ধা করে। আর তুমি কিনা এক অসুস্থ রুগীকে রেখে বিয়ে করতে যাচ্ছ। না, এটা হতে পারে না। আগে জগলু ভাইকে দেখতে যাব, তার পর বিয়ে।
আর যদি ফিরতে দেরি হয়?
তাহলে অন্য দিন। তুমি তো আর আমকে ছেড়ে পালাতে পারছনা। পালালেই বা কি! তোমাকে তো ৪ টি বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছিই। এর মধ্যে আমি থাকলেই হল। আমাদের পরিবার হবে আগের যুগের রাজ পরিবারের মত। একেক রানীর একেক সন্তান। কিন্তু তারা সবাই একজনেরই সন্তান। তারা সবাই হবে সুপ্ত রাজার সন্তান।
আচ্ছ ঠিক আছে, চলো জগলুর খোঁজে বের হই। আমি কিন্তু ওর বাসা চিনি না।
সমস্য নেই মহারাজা। আপনি ওর অটমোবাইল কোম্পানির ঠিকানা বলেন। আমিই আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি করেন মহারাজা।
৫.
আমরা এখন ধানমণ্ডির ল্যাব এইড হাসপাতালে। আমি আর শিলা বাহিরে ওয়েটিং রুমে বসে আছি। আমরা হাসপাতালে এসেছি এক ঘণ্টা হয়ে গেছে। কিন্তু একনো জগলু জব্বার সম্পর্কিত কোন ভালো তথ্য পাওয়া যায়নি। জগলু জাব্বার দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা ধরে ইমারজেন্সিতে আছে। ডাক্তারা ৪ ঘণ্টা ধরে নাকানি চুবানি খাচ্ছে। কিন্তু কোন কুল কিনার পাচ্ছে না। মিনিট ১৫ আগে এক নার্স এসে আমাদের জানিয়ে গেল যে, পেশেন্টের অবস্থা খারাপের দিকেই। মস্তিষ্কের উপর অতিরিক্ত চাপের কারনে ব্রেইন স্ট্রোক। এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ওনারা দেখছেন জ্ঞান না ফেরার সম্ভাবনা ৯৫%। আমার ধারনা এই ৫% ওনারা ইচ্ছে করেই হাতে রেখেছে। কারন, এই ৫% এর জন্য জগলু জব্বারের পার্সোনাল সেক্রেটারি কাম দ্বিতীয় বিবি সুলতানা জাব্বার ওনার সকল সম্পদ খরচ করে ফেলছে।
আমি জগলু জাব্বারের বিষয়ে বেশী মাথা ঘামালাম না। উপস্থিত সবার কাছে আমার স্ত্রী হিসেবে পরিচয় লাভ কারি শিলা এই কাজটি করছে। শিলা যে আমার স্ত্রী এ কথা আমাদের বলতে হয়নি। ওনারাই বুঝে নিয়েছে। আমরা কেউ আপত্তি করিনি। আবার আমি সুপ্ত এই পরিচয় ও দিতে হয় নি। সুলতানা জব্বার আমাকে দেখেই, সুপ্ত ভাই আমার সব শেষ বলে হাউমাউ করে কান্না শুরু করলেন। আমি যেহেতু একটু কঠিন প্রকৃতির মানুষ তাই কারো অতিরিক্ত আবেগ ই আমাকে আবেগান্বিত করতে পারলন। আমি নিষ্ঠুর মানুষের মত মনে মনে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জগলু জব্বারের এই অবস্থার জন্য কে কতখানি দায়ী তা বের করার চেষ্টা করছি। আমার প্রথম টার্গেট সুলতানা জব্বার।
প্রিয় পাঠক, আমি ধারাবাহিক ভাবে আপনাদের কাছে সন্দেহভাজনদের বিবরন দিচ্ছি। দয়া করে আমার সন্দেহের কারন গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
সুলতানা জব্বার
সম্ভবত ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা। দেখতে হিন্দি ছবির নায়িকাদের মত। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। অতিরিক্ত স্বামী ভক্ত।
সন্দেহের কারনঃ
১. পি.এস থেকে সুন্দরি দ্বিতীয় বউয়ে রুপান্তর।
২. টাকা পয়সা ছাড়া কোন ভাবেই জগলু এই মেয়ের উপযুক্ত না।
৩. জগলুর প্রথম স্ত্রী সহজ সরল গ্রামের মেয়ে মিনারা কে কোথাও দেখা জাচ্ছেনা।
৪. জগলুর দুই ছেলের কাউকে দেখছি না।
৫. কান্নার সময় চোখে পানি না আসা।
৬. অতি অভিনয় ও অতিরিক্ত ভালো সাজার চেষ্টা।
ম্যানেজার মোঃ আতাউল গনি
ছয় ফুটেরো বেশী লম্বা। স্মার্ট এবং নিতান্ত ভদ্রলোক মানুষ। এবং মালিকের জন্য নিবেদিত প্রান।
সন্দেহের কারনঃ
১. অতিরিক্ত স্মার্ট যা সুলতানা জব্বারের সুলতানা গনিতে রূপান্তরিত হতে যথেষ্ট।
২. অতিরিক্ত প্রভু ভক্তি।।
৩. জগলু জব্বারের কোন পরিচিত জনকে খবর না দেয়ার বুদ্ধি চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করা।
৪. আমাদের দেখে মারাত্তক বিরক্ত হওয়া।
৫. বিরক্ত হওয়া সত্তেও আমার সাথে খুবই ভালো আচরন করা।
আমার সন্দেহের তালিকায় আপাতত এই দুই জনই আছে। আমি গড়ির দিকে তাকালাম। জ্ঞান হিন অবস্থায় জগলু জব্বারের পাচ ঘণ্টা পনের মিনিট পূর্ণ হল।
এক জন নার্স ইমারজেন্সি রুম থেকে উঁকি দিয়ে হাঁক ছাড়ল।
এখানে সুপ্ত নামে কেউ আছেন?
আমি উঠে দাড়ালাম।
নার্স বলল, ডক্টর মাজাহার আপনাকে ডাকছে। আর্জেন্ট। এই বলে নার্স আবার গর্তে মুখ লুকাল।
আমি শিলাকে নিয়ে ইমারজেন্সি রুমের কাছে গেলাম। রুমে প্রবেশ করার পূর্বে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সুলতানা জব্বার ও মোঃ আতাউল গনির দিকে তাকালাম। আমার দৃষ্টি ওদের পিলে চমকে দিল। আমি একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে শিলাকে নিয়ে রুমে ঢুকলাম।
আমাদের দুজনকে দেখে নার্স মারাত্তক ক্ষেপে গেল, আপনাকে না একা আসতে বললাম!
দুঃখিত, উনি হচ্ছে আমার চোখ ওনাকে ছাড়া আমি চলতে পারি না। আমি হাসি হাসি মুখে বললাম।
আমার কথার ধরন দেখে সবাই মারাত্তক অবাক হল। নার্স আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু একজন ডক্টর ওনাকে হতাশ করে বলল, আসুন। আপনারা দুজনই আসুন।
আমি ধারনা করলাম, উনিই হলেন ডক্টর মাজাহার। যত বড় ডক্টর ব্যবহার ততই মধুর। যত নিচের দিকের ডক্টর ব্যবহার ততই বাজে। আর নার্সদের কথা তো বাদই। এটি বাংলাদেশের মেডিক্যাল লাইনের এক অলিখিত সংবিধানের আইন। যা সকল ডক্টরগণ মন দিয়ে পালন করেন। ওনারা মন দিয়ে রুগী না দেখলেও মন দিয়ে এই আইন টি পালন করেন।
নার্সটি আমার দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকাল। শিলা এই বিষয়টি খেয়াল করে বলল, আপনি প্লিজ এভাবে তাকবেন না।
আমি নার্সকে একটা শিক্ষা দেয়ার জন্য ডক্টর মাজাহারের দিকে তাকালাম। ডক্টর মাজাহার নিতান্ত ভদ্র লোকের মত নার্সটিকে বলল, তুমি একটু বাহিরে যাও তো মামনি।
আমাদের দিকে আরেক বার জ্বলন্ত দৃষ্টি দিয়ে ইমারজেন্সি রুম ত্যাগ করল এক মহান নার্স। ডক্টর মাজাহার আমকে বলল,
আপনি নিশ্চয় মিঃ সুপ্ত?
জি, আমিই সুপ্ত।
এবার শিলাকে দেখিয়ে বললেন, উনি নিশ্চয় আপনার স্ত্রী।
আমি সুকৌশলে প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে ডক্টরকে জিজ্ঞেস করলাম, ডক্টর, পেশেন্ট কি কথা বলতে পাড়াবে?
ডক্টর মাজাহার আমাকে ইশারায় রুমের এক কোনায় নিয়ে গেলেন। এবং আমাকে কানে কানে কিছু বিস্ময়কর কথা বললেন। আমি অবশ্য হিমু ভক্ত মানুষ তাই বেশী একটা বিস্মিত হই নি। স্বাভাবিক ভাবেই আবার জগলুর ব্যাডের কাছে এসে দারালাম।
এবার আমি জগলুর দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর চোখ দিয়ে বয়ে চলছে জলধারা। ডক্টর আমাকে বলল, আপনারা কথা বলেন। আমি বাহিরে যাচ্ছি। আর সুপ্ত সাহেব আমি আপনার সাথে পরে কথা বলব। দয়া করে আমার সাথে কথা না বলে যাবেন ন। এবার হেসে দিয়ে বলল, এভাবে বলার জন্য দুঃখিত। আসলে আপনার সম্পর্কে জগলু সাহেব আমাকে অনেক কথা বলেছেন।
ডক্টর মাজাহার তার ডক্টর বাহিনী নিয়ে বের হয়ে গেলনা।
আমি বললাম, কিরে জগলু, আছিস কেমন?
ভাই আপনে আইছেন, অহন খুব ভালো লাগতাছে।
এত ভান ভনিতা করছিস কেন? আমি মারাত্মক প্রশ্ন ছুড়লাম। শিলা আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। আমি পাত্তা না দিয়ে জগলুর উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
ভাইজান, আপনের কাছে মিথ্যা বলমু না। আমি ভাইজান ভান করি নাই। পাপ করছিলাম। পাপের শাস্তি পাইতাছি। ডক্টর কইল, আমার মুখ ছাড়া সব অচল হইয়া গেছে। এই গাড়ি আর কেউ ঠিক করতে পারব না। আল্লাহ্‌ পাকের বিচার সর্ব সেরা। আমি ভাই বিশাল পাপ করছি।
আমি শিলাকে একটা চেয়ারে বসতে বলে আরেকটা চেয়ার টেনে জগলুর কাছে আরাম করে বসলাম।
জগলু একটা প্রশ্নের উত্তর দে?
একটা না সুপ্ত ভাই, হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিমু। ভাই আপনের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে মইরা ও শান্তি। এবার জগলু শিলার দিকে তাকিয়ে বলল, ভাইজান, ভাবি জান অনেক সুন্দর। মাশাল্লাহ। আল্লহ হাত দুইটা দান করলে কদমবুচি করতাম।
আমি বললাম, কদমবুচি করতে পারবি। শুনলাম তোর মডার্ন বৌ তোকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে চিকিৎসা করাবে। চিন্তা নাই। তোর ম্যানেজারটা ও অনেক কাজের। সুস্ত হয়ে উঠবি আশা করি। শোন, এবার বল, এত মানুষ থাকতে তুই আমাকে ডাকলি কেন? আর তুই বুঝলি কি করে যে আমি এখানে আসব?
সুপ্ত ভাইজান, আপনি যে এখানে আসবেন এটা আমার বিশ্বাস ছিল। আর আপনারে ডাকার কারন হল, আমি মরার আগে কিছু কথা বলে যেতে চাই যা শুধু আপনিই শুনতে পারেন।
ঠিক আছে, তোর ভাবীকে বের করে দেব?
জগলু তাড়াতাড়ি করে বলল, না না সুপ্ত ভাই, ভাবী থাকুক। একটু লজ্জা অবশ্য লাগবে। তাতে কি। আমিতো কিছুক্ষণের ভিতরে মারাই যাব। মৃত্যু পথ যাত্রীর আবার লজ্জা কি।
শিলা আমার কথা শুনে এমন ভাবে তকাল যেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী নারী ও। যদিও এই পরিস্থিতিতে ওর এই সুখী ভাব যায় না তবুও আমি মেনে নিলাম। কারন জগলুর অবস্থা আমরা যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে ভালো। ও যে বেচে আছে এতেই আমি খুশী। তাই শিলার হাসি হাসি ভাব মেনে নিলাম।
জগলু ওর কথা শুরু করল।
ভাই আমি বিশাল পাপী মানুষ। এক জীবনে যে পাপ করেছি তা ১০০ জীবনেও কাটাতে পারব না। ওর কথার এই পর্যায়ে আমি থামালাম।
শোন জগলু, তুই যেহেতু মৃত্য পথ যাত্রী তাই তোকে এত কষ্ট দেয়া উচিৎ হবেনা। তাই এখন আমি তোকে প্রশ্ন করব আর তুই অল্প কথায় উত্তর দিবি।
আমার কথার ধরন দেখে জগলু হেসে দিলেও শিলা আমার দিকে ভালো দৃষ্টিতে তাকালনা। তার চোখের ভাষা অনুযায়ী মৃত্য পথ যাত্রী একজন মানুষের সাথে আমার এধরনের আচরন কঠিন শাস্তি যোগ্য অপরাধ। আমি আবারো শিলার দৃষ্টির প্রতি অবহেলা দেখিয়ে জগলুকে জিজ্ঞেস করলাম।
জগলু, তোর প্রথম স্ত্রী মিনারার কি খবর? বেচে আছে না মেরেটেরে ফেলেছিস?
শিলা আমাকে কিছু বলতে গিয়েও জগলুর কথার কারনে চুপ হয়ে গেল। জগলু খুব স্বভাবিক ভাবেই কথা বলল। সুপ্ত ভাইজান, আপনার অনুমান ঠিক। আমি মিনারকে মেরে ফেলেছি। নিজ হাতে না। ১০ মনি ট্রাক দিয়ে চাপা দিয়েছি। সবাই ধরে নিয়েছে রোড এক্সিডেন্ট। বাংলাদেশের অন্য আট দশটা গাড়ি চাপা দেয়া মামালার মত এটাও মাস খানেকের ভেতরে চাপা পরে গেল।
শিলার চোখ বিস্ময়ে ছানা বড়া হয়ে গেল। আমি আরো একটা চমক দেয়ার জন্য জগলুকে জিজ্ঞেস করালাম।
তোকে এই বুদ্ধি নিশ্চয় তোর মডার্ন বিবি আর তোর অতি চালাক ম্যানেজার দিয়েছে?
জি সুপ্ত ভাইজান, আপনি ঠিকি বলেছেন। ওরাই আমাকে এই চক্রে ফেলেছে।
জগলু তুই ভুল বললি। এক জন মানুষ অন্য একজন মানুষকে কখনই চক্রে ফেলতে পারেনা। যে যার চক্রে নিজে নিজেই গিয়ে পড়ে। উঁই প
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রেজওয়ানা আলী তনিমা বিশাল গল্প । মাঝে মাঝে টোল খেয়ে গেলেও আপনার বর্ননাভঙ্গি সুন্দর , অনেকটা হুমায়ূন আহমেদের মতো। তবে কিছু অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিলে গল্পটি আরও সুডৌল হতো আর প্রতিযোগিতার শব্দসীমার মধ্যে চলে আসতো।যাহোক , শুভকামনা রইলো।
মোঃ মিজানুর রহমান Remaining part. Plz read and comment. উঁই পোকার যেমন পাখা গজালে নিজে থেকেই আগুনের চক্রে পড়ে জীবন বিসর্জন দেয় ঠিক তেমনি করে মানুষ ও নিজে থেকেই প্রাণঘাতী কোন চক্রে গিয়ে আটকা পড়ে। যেমন তোর নিজের ইচ্ছেতেই তুই এই চক্রে আটকা পড়েছিস। ভাই আপানর কথা খুবই সত্য। আমি নিজেই নিজের চক্রে আটকে গেছি। এখান থেকে আমাকে একমাত্র মৃত্যুই উদ্ধার করতে পারে। আচ্ছা তোর ছেলে দুটোকে ও কি খালাশ করে দিয়েছিস? শিলা আমার কথা শুনে ভয়ানক ঘাবড়ে গেল। বেচারির অবস্তা দেখে আমার খুব মায়া লাগলেও পরিস্থিতির কারনে কিছু করতে পারলাম না। আমি জগলুর দিকেই মনোনিবেশ করলাম। জগলু খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল। জি ভাইজান, আমার ছেলে দুটোকেও মেরে ফেলেছি। আমার অবশ্য মারার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ওরা আমাকে খুব ভালো করে বুঝাল যে ছেলেদুটোকে মেরে ফেলা খুবই জরুরী। আমিও বাঁধা দিলাম না। ঠিক কাজই করেছিস। নিজের ছেলেদের নিজের হাতে মারতে না পারলেতো তোর বাবা হওয়াই বৃথা। আচ্ছ এই হত্যা ধামা চাপা দিলি কীভাবে? ভাই আমার স্ত্রী সুলতানা আর ম্যানেজার মিলে ওদেরকে কক্সবাজার বেড়াতে পাঠিয়ে দিল। ওখানে সুলাতানার এক বোন থাকে। যা করার সেই করল। সাগরের পানিতে চুবিয়ে মেরে পানিতেই ভাসিয়ে দিল। তার পর সে কি মায়া কান্না। আমরা সবাই গিয়ে অনেক খোঁজা খুজি করলাম। মিডিয়াতে দুই ছেলের নিখোঁজ সংবাদ ফলাও করে প্রচার করলাম। তিন দিন পর লাশ পাওয়া গেল। ব্যাস মামলা শেষ। শিলা হতবাক হয়ে বসে রইল। আমি জগলুকে বললাম, শোন, তুই হইলি গিয়ে সফল বাবা। এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। তোকে তো শান্তিতে নোবেল দেয়া উচুত। যাকগে, এবার বল তোর ম্যনেজার আর তোর মডার্ন স্ত্রীর ইটিশ পিটিশ কেমন চলছে। বিয়ে করেছে না বিয়ে ছাড়াই চলছে? ভাই ওরা গোপনে বিয়ে করেছে। আমার সব সম্পত্তি নিজদের করে নেয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। এখন শুধু আমার মৃত্যুর অপেক্ষা। আমি মরলেই সব ওদের। আমি নির্লিপ্ত স্বরে বললাম, তোকে মারার জন্য ওদের কোন উঁচুদরের প্লান নেই? আছে সুপ্ত ভাই, ওরা যে কোন একটা ডক্টরকে হাত করে আমাকে মেরে ফেলবে। পড়ে বলবে ব্রেইন স্ট্রোকের কারনে মৃত্যু। ডক্টরটা কি মাজাহার সাহেব হওয়ার সম্ভাবনা আছে? না সুপ্ত ভাই উনি সত্যই ভালো মানুষ। আমি ওনাকে কিছু কথা বলেছি। আমার মনে হয় নার্সটা অথবা অন্য কোন ডক্টর। শোন জগলু চিন্তা করার কিছু নেই। তুই মরবি না। অবশ্য তুই মারা গেলেই তোর জন্য ভালো। এই অবস্থায় তোর ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তাছাড়া তুই যে মহান কাজ করেছিস তার জন্য কিছু পুরুস্কার ও পাওয়া উচিৎ। তাই আমি চেষ্টা করব তোর মৃত্য যেন অপঘাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে। আমি আমার মোবাইল ফোনের রেকর্ডারটি অফ করলাম। এবার শিলাকে বললাম, চলো শিলা ওঠা যাক। তুমিতো এসেছিলে এক মানুষের সাথে দেখা করতে। কিন্তু সে তো এখন মানুষ নেই। অনেক উচ্চ স্তরে উঠে গেছে। তাই আমি দুঃখিত বিয়ের দিনেও তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারলাম না। তবে তোমাকে প্রমিস করছি, এই স্তরের প্রত্যকের যথাযথ পুরুস্কারের ব্যবস্থা আমি অবশ্যই করব। শিলা কিছু বললনা। আসলে ও কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ও তো আর আমার মত হিমু ভক্ত না। তাই স্বাভবিক হতে সময় নিচ্ছে। আমি জগলুকে বললাম, যাই রে পিচাশ। ডক্টরের কাছ থেকে সিসিটিভি ফুটেজটা নিতে হবে। তোদের সাথে দেখা হবে জায়গামত
প্রথমটুকু আর পরের টুকু মিলিয়ে ৪৪৯০ শব্দ। আমি যেই গল্প দিয়েছি তার ৯টার সমান প্রায়। তারপরও শেষ করেছি । প্রথমে শেষ করেছি ভোট দিব বলে।এবার আপনার মন্তব্যের অংশের টুকু পড়লাম শেষটা কেমন হয়েছিল সেটা দেখতে। তবে শেষটা অপরাধ আড়াল করার জন্যে বেশ হলেও উঁই পো দিয়ে যেই বাক্য শুরু হয়েছিল, সেই বাক্যের আগের অংশটুকুতেই গল্পের আসল রসটা পেয়েছি।
কেতকী যে যার চক্রে নিজে নিজেই গিয়ে পড়ে। এই পযর্ন্ত হলেও একটা সম্পূর্ণ গল্প ধরা যেতে পারে। কারণ জগলু ইতিমধ্যে তার পাপের বোধটা উপলদ্ধি করতে পারছে। কিন্তু পরের "উঁই প" দিয়ে কী লিখতে চেয়েছিলেন বা কীভাবে লেখাটা শেষ করতে চেয়েছিলেন সেটা পরিস্কার নয় আমার কাছে। আমি আগে একবার এসে অসমাপ্ত দেখে মন্তব্য না করে ফিরে গিয়েছিলাম। তখন আপনার পুরো লেখাটা কপি পেস্ট করে এর শব্দ সংখ্যা দেখেছিলাম কেন পুরোটা প্রকাশ হলো না। কিন্তু আমার যতদূর মনে আছে এটা ৫০০০ শব্দেরবেশ কমই আছে। পুরো লেখার মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের লেখার (নাটকের) একটা আবহ ছিল। তারপরও ভালো লেগেছে। ভোট দিয়েই দিলাম, যা হয় হোক।
Thanks a lot for ur explanation. Actually they did not publish the story fully. But i am going to send u the remaining part.
Remaining part. Plz read and inform me. উঁই পোকার যেমন পাখা গজালে নিজে থেকেই আগুনের চক্রে পড়ে জীবন বিসর্জন দেয় ঠিক তেমনি করে মানুষ ও নিজে থেকেই প্রাণঘাতী কোন চক্রে গিয়ে আটকা পড়ে। যেমন তোর নিজের ইচ্ছেতেই তুই এই চক্রে আটকা পড়েছিস। ভাই আপানর কথা খুবই সত্য। আমি নিজেই নিজের চক্রে আটকে গেছি। এখান থেকে আমাকে একমাত্র মৃত্যুই উদ্ধার করতে পারে। আচ্ছা তোর ছেলে দুটোকে ও কি খালাশ করে দিয়েছিস? শিলা আমার কথা শুনে ভয়ানক ঘাবড়ে গেল। বেচারির অবস্তা দেখে আমার খুব মায়া লাগলেও পরিস্থিতির কারনে কিছু করতে পারলাম না। আমি জগলুর দিকেই মনোনিবেশ করলাম। জগলু খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল। জি ভাইজান, আমার ছেলে দুটোকেও মেরে ফেলেছি। আমার অবশ্য মারার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ওরা আমাকে খুব ভালো করে বুঝাল যে ছেলেদুটোকে মেরে ফেলা খুবই জরুরী। আমিও বাঁধা দিলাম না। ঠিক কাজই করেছিস। নিজের ছেলেদের নিজের হাতে মারতে না পারলেতো তোর বাবা হওয়াই বৃথা। আচ্ছ এই হত্যা ধামা চাপা দিলি কীভাবে? ভাই আমার স্ত্রী সুলতানা আর ম্যানেজার মিলে ওদেরকে কক্সবাজার বেড়াতে পাঠিয়ে দিল। ওখানে সুলাতানার এক বোন থাকে। যা করার সেই করল। সাগরের পানিতে চুবিয়ে মেরে পানিতেই ভাসিয়ে দিল। তার পর সে কি মায়া কান্না। আমরা সবাই গিয়ে অনেক খোঁজা খুজি করলাম। মিডিয়াতে দুই ছেলের নিখোঁজ সংবাদ ফলাও করে প্রচার করলাম। তিন দিন পর লাশ পাওয়া গেল। ব্যাস মামলা শেষ। শিলা হতবাক হয়ে বসে রইল। আমি জগলুকে বললাম, শোন, তুই হইলি গিয়ে সফল বাবা। এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। তোকে তো শান্তিতে নোবেল দেয়া উচুত। যাকগে, এবার বল তোর ম্যনেজার আর তোর মডার্ন স্ত্রীর ইটিশ পিটিশ কেমন চলছে। বিয়ে করেছে না বিয়ে ছাড়াই চলছে? ভাই ওরা গোপনে বিয়ে করেছে। আমার সব সম্পত্তি নিজদের করে নেয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। এখন শুধু আমার মৃত্যুর অপেক্ষা। আমি মরলেই সব ওদের। আমি নির্লিপ্ত স্বরে বললাম, তোকে মারার জন্য ওদের কোন উঁচুদরের প্লান নেই? আছে সুপ্ত ভাই, ওরা যে কোন একটা ডক্টরকে হাত করে আমাকে মেরে ফেলবে। পড়ে বলবে ব্রেইন স্ট্রোকের কারনে মৃত্যু। ডক্টরটা কি মাজাহার সাহেব হওয়ার সম্ভাবনা আছে? না সুপ্ত ভাই উনি সত্যই ভালো মানুষ। আমি ওনাকে কিছু কথা বলেছি। আমার মনে হয় নার্সটা অথবা অন্য কোন ডক্টর। শোন জগলু চিন্তা করার কিছু নেই। তুই মরবি না। অবশ্য তুই মারা গেলেই তোর জন্য ভালো। এই অবস্থায় তোর ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তাছাড়া তুই যে মহান কাজ করেছিস তার জন্য কিছু পুরুস্কার ও পাওয়া উচিৎ। তাই আমি চেষ্টা করব তোর মৃত্য যেন অপঘাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে। আমি আমার মোবাইল ফোনের রেকর্ডারটি অফ করলাম। এবার শিলাকে বললাম, চলো শিলা ওঠা যাক। তুমিতো এসেছিলে এক মানুষের সাথে দেখা করতে। কিন্তু সে তো এখন মানুষ নেই। অনেক উচ্চ স্তরে উঠে গেছে। তাই আমি দুঃখিত বিয়ের দিনেও তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারলাম না। তবে তোমাকে প্রমিস করছি, এই স্তরের প্রত্যকের যথাযথ পুরুস্কারের ব্যবস্থা আমি অবশ্যই করব। শিলা কিছু বললনা। আসলে ও কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ও তো আর আমার মত হিমু ভক্ত না। তাই স্বাভবিক হতে সময় নিচ্ছে। আমি জগলুকে বললাম, যাই রে পিচাশ। ডক্টরের কাছ থেকে সিসিটিভি ফুটেজটা নিতে হবে। তোদের সাথে দেখা হবে জায়গামত
কেতকী আমি আগেও একবার পড়তে এসেছি এবং স্বাভাবিকভাবেই পড়া শেষে ভোট দেই। কিন্তু পড়াতো শেষ হয় না !
মোহাঃ ফখরুল আলম ভাল লেগেছে। ভোট দিতে মন চায়। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
ফেরদৌস আলম কিছুদূর পড়ার পর থেমে গেছি !
ইমরানুল হক বেলাল ভালো লেগেছে গল্পটি। শুভকামনা•••।
রুহুল আমীন রাজু খুব ভালো লাগলো গল্পটি....শুভেচ্ছা রইলো.
মোঃ মিজানুর রহমান The story is not published completely. I don't know why.
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রন রইল।

০৫ মার্চ - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪