অদৃশ্য শিকল কিংবা দেয়াল

প্রায়শ্চিত্ত (জুন ২০১৬)

ফেরদৌস আলম
  • ৪১
যে ছেলেটি এইমাত্র ঘর থেকে বের হয়ে গেল, একটা ব্লু জিন্স পরে, গায়ে হলুদাভ একটা গোল গলার টি-শার্ট, তার চশমা পরিহিত চোখের ভক্তিমাখা দৃষ্টি আর হাসিমুখে প্রস্থান কিংবা তার রেখে যাওয়া টাটকা রজনীগন্ধার তীব্র আর উন্মাদ সুঘ্রাণে মন অসম্ভব ভালো হয়ে যাওয়ার কথাই ছিল। কিন্তু ঘটনা যেন ঘটলো তার ঠিক উল্টো! সেই তখন থেকে ঘাম ঝরছে দরদর করে, চুয়ে চুয়ে, একদম একটানা, কপালে হাত দিয়ে দেখি তাপমাত্রাও বেড়েছে শরীরের। শরীরের অর্ধাংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত আমার, কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত- পুরোটুকুই যেন কোন শতবর্ষী বটবৃক্ষের গোড়ার কাণ্ডের মত স্থবির প্রায় আড়াই যুগের মত একটা সময় ধরে। এই অবস্থায় দীর্ঘ এই সময় টেনে টেনে বেঁচে থাকা- সেটি সম্ভব কীভাবে হল তাও আমার চিন্তাশক্তির বাইরে, কখনো কখনো মনে হত, এই বুঝি মরে গেলাম, মরেই যাব, তবুও শেষ পর্যন্ত মরে যাইনি। অদ্ভুত এক খেলা যেন আল্লাহ আমার সাথে খেলে চলেছে এই দীর্ঘ সময় ধরে।
প্যারালাইজ্‌ড হওয়ার পরে শরীর ক্রমাগত অবনতির দিকেই গেছে, আর বিপরীতে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বেড়েছে কয়েকগুণ। কী আশ্চর্য! এই সময়ের মধ্যে লেখা প্রত্যেকটি উপন্যাসের কাটতির কাছে পৌছাতেই পারেনি কয়েকজন নামকরা লেখকদের উপন্যাসসমগ্র একত্রেও। আসলে এর মূল রহস্যটা কী? শিবলু মাহমুদ চৌধুরীর এই প্রশ্নটা তার নিজের কাছেই। উত্তরগুলো এখনও ঘোলাটে, কুয়াশাচ্ছন্ন, কিংবা প্রচণ্ড ঘোর লাগার মতই। ছেলেটির অবয়ব দেখার পরেই শিবলু মাহমুদের মনে পড়ে যায় সেই আড়াই যুগ আগের একটা চরম জনপ্রিয়তা পাওয়া অপ্রতিদ্বন্দ্বী উপন্যাসের কথা। ঐ সময়ের বাজারে প্রথম প্রকাশেই যার কাটতি ছিল বিশ হাজারের উপরে। যে উপন্যাসের ব্যাপারে তার নিজের প্রত্যশাই সম্পূর্ণ ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল, বিক্রিও তাই। সেই উপন্যাসই আজ ভেসে আসছে চোখের অতীতের দৃষ্টিতে। পরের বছর আবারও আরেকটি উপন্যাস, সেটিও সেরকমই সমান কাটতি! কিন্তু প্রথম উপন্যাসটি তার লেখা নয়, তার বন্ধু রাশিদ আন্দালিবের, পরেরটাও তার বন্ধুরই কিন্তু তা ছিল অসমাপ্ত আর তার হাতে শেষ হওয়া।
রাশিদ আন্দালিব বেঁচে ছিলেন বছর পঁচিশের মতই একটা নাতিদীর্ঘ জীবন নিয়ে। শিবলু মাহমুদের সবচেয়ে ঘনিষ্টতম, গলায় গলায় পিরিতওয়ালা বন্ধু সে। শাহবাগের আজিজ মার্কেটে সবেমাত্র উঠতি লেখক-সমাজের একটি পাঠচক্র বসতো সপ্তাহ অন্তে, ‘উদ্ভাসিত প্রদীপ’ নামে। সেখানেই দুজনের পরিচয়ের সূত্রপাত ছোটগল্পের লেখক হিসেবে। ছ’ ফুটের লম্বা গড়নের দেহ, বেশ হ্যাংলা পাতলা, ঘাড় অবধি নেতিয়ে পড়া চিরুনী করা চুল, চোখের উপরে ঝুলে থাকা চশমা, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, গায়ে ঢিলে-ঢালা ফতুয়া-এই হল রাশিদ আন্দালিব। আর শিবলু মাহমুদ বেশ পরিপাটি সেদিক থেকে, যদিও সেগুলোও পুরাতনের মধ্যেই। দুজনেরই বাসা মোহাম্মদপুরেই, এ প্রান্তে আর অপ্রান্তে। তাই একে অপরের বাসায় হানা দিত মাঝে মধ্যেই, সেও সাহিত্যের আড্ডা দিতে। দুজনেই তখন বিবাহিত জীবনে বছর দুয়েকের কষ্টকর জীবন পাড়ি দিয়েছে। কারণ লেখককুলে তখন দুজনেরই ছা-পোষা চাকুরি, সামান্য বেতন এবং তারই আশীর্বাদে বেশ টানাটানির সংসার। এরই মাঝে পরের বছর দুজনেরই ঘর আলো করে আসে দুটি রাজকুমার! হয়তো তাদের নিয়ে কবিতা লেখা হয়ে যায়ও অনভ্যাসবশত। কিন্তু অভাবের মেঘের ছায়ায় দুই বন্ধুই চোখের সামনে অমাবশ্যার ঘোর অন্ধকার দেখতে পায়।
একদিন রাশিদ আন্দালিব শিবলু মাহমুদকে সোহ্‌রাওয়ার্দীতে তাড়া দিয়ে নিয়ে আসে কথা বলার জন্য। কথায় কথায় বলে,
- দোস্ত, সামনের বই মেলায় বই বের করার একটা দুঃসাহস করেছি!
- কোথা থেকে?
- বাংলাবাজারের প্রকাশক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ‘শ্যামলছায়া’ প্রকাশনীর মালিক।
- রাজি হল? না শুধু শুধু চাপা মারছিস্‌?
- সে অনেক কষ্টে! আমাকে বলে, ‘নাম-খ্যাতিহীন লেখক আপনি। আপনার বই বেরুলে দুর্নাম ছাড়া এক ফোটা সুনামও আমার প্রকাশনীর কপালে জুটবে না। আর বই বের করার পরে তা বিক্রি করে যদি দু মুঠো অন্ন আমরা মুখে তুলতে না পারি তাহলে তো নরকেও থাকা সমান কথা, তাই না? বলি মশায়, আপনি বরং অন্য কোন নতুন প্রকাশনীতে গিয়ে খোঁজ করুন গে।’
- তুই কী বললি?
- বললাম, দেখুন মশায়, আপনারা এই নতুন লেখকদের একটু-আধটু না দেখলে কারা আর দেখবে বলুন? আর কোথায়ই বা যাই বলুন। যদি একটু সদয় হতেন! আর তাছাড়া আমার লেখা তো বিভিন্ন কাগজেও ছাপায়। তা শুনে দত্ত মশায় বলে – ‘তা মশায় ঠিক বটে, সে তো পাড়ার কাগজ! সে কাগজে ভদ্র আর শিক্ষিত সমাজের চোখ পড়েনা, ঠিক নয় কি?’ আমি বলি, তা যথার্থ বলেছেন আপনি। তবুও বলে, ‘দেখুন, আমি আপনার বই বের করতে পারবো না, এ আমার শেষ কথা।’
- পরে কী হল?
- কী আর হবে, একটা জীবন-মরণ চ্যালেঞ্জ নিলাম। তবে তোকে নিয়েই!
- আমাকে নিয়ে? কী চ্যালেঞ্জ?
- শালা, মরে গেলে যাবি, কিন্তু চ্যালেঞ্জে হারা যাবেনা কিন্তু।
- ভণিতা না করে বলবি কী চ্যালেঞ্জ?
- বই বের হবে যৌথভাবে, তোর আর আমার নামে। কিন্তু সব বই বিক্রি করে দিতে হবে আমাদেরই। আমাদের প্রথম বই হবে ‘গল্পসমগ্রের’। প্রকাশক দু একটি বিক্রি করতে পারলে করবে, আর না পারলে নাই।
- বলিস কী? তোর মাথা ঠিক আছে আন্দালিব? এই ঢাকা শহরে কয়জন দিল-দরিয়া পাঠক আর লেখককে চেনা আছে আমাদের? পারবি তুই?
- দ্যাখ্‌ শালা, পারতেই হবে। নাহলে বলে দে এখনই, পারবিনা। টিকটিকির কলিজা নিয়ে চলাফেরা করিস্‌। আমি নিজেরটা নিজেই দেখব। তোকে লাগবেনা।
- তুই হঠাৎ এত খেপে গেলি কেন্‌, বল্‌তো?
- ক্ষ্যাপামির ভূত চেপেছে মাথায়, তাই! তোর কোন সমস্যা?
- না, না, তোর সমস্যা না থাকলে, আমার আবার কী সমস্যা?
প্রথম বই বেরুনোর লোভ আর এক প্রকার ফেরি করে দ্বারে দ্বারে গিয়ে বই বিক্রি করা - এই উভয় সংকটের মাঝে পড়ে গেলাম। তবুও ওর পাগলামি দেখেই সাহস জুটলো, কাঁধ চাপড়িয়ে বললাম, পারবো শালা। খুশি এবার?
ও খুশিতে বুকে জড়িয়ে নিল এক দারুণ উষ্ণতায়।

দুদিন পরে ওর বাসায় গেছি গল্পগুলো কেমন হবে-তা আলাপ করার জন্য। ওর স্ত্রীর মুখে একপ্রকার কৌশলেই শুনে ফেললাম – গত তিনদিন ওর বাসায় হাড়িতে তরকারীর বদলে শাঁক-ডাটা জুটেছে।পুঁটি মাছের মত অবহেলিত গলিত আমিষও ওদের পাতে জুটেনি গত কয়েকদিন। এবার তো পরিষ্কার বুঝলাম, বই বের করার নেশা ওরা মাথায় এভাবে চাপল কেন। তাকিয়ে দেখি খুব নিমগ্ন হয়ে কলম পিষে চলছে একাধারে। এরপরে তিনমাস লেখালেখি শেষে দত্ত সাহেবের কাছে ধরনা দিলাম আবারও। উনি পাণ্ডুলিপিগুলো দেখে কপাল কুঁচকে বললেন, আচ্ছা দেখি, কী করা যায় আপনাদের জন্যে।

ফেব্রুয়ারির পাঁচ তারিখ ছিল সেদিন। শীত শেষ শেষ একটা ভাব চলে এসেছে প্রকৃতিতে। কিন্তু আমি আর আন্দালিব দুজনেই ছিলাম ভীষণ উষ্ণ! কারণ বই বেরুচ্ছে আমাদের! আগের দিনে ইস্ত্রি করা ফতুয়া আর পালিশ করা চটি পায়ে বেরিয়ে পরি বাংলা একাডেমির উদ্দেশ্যে। প্রায় একশো গজ দুরত্বে থেকেই স্টলের টেবিলে গাদা করে রাখা আমাদের প্রথম বই দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠে আন্দালিব। কিন্তু তখনও দত্ত সাহেবের মুখে মেঘ জমে আঁধার হয়ে আছে। বইয়ের নাম ‘ খুধার্ত গল্পগুলো’- শিবলু মাহমুদ চৌধুরী ও রাশিদ আন্দালিব। দুজন দুজনের দিকে তাকাই বারবার, ঠোটের কোণে হাসি, চোখের কোণে জল, আর মুখাবয়বে একটা স্বর্গীয় দীপ্তি দুজনেরই। বিশ্বাসই হয়না! এ আমাদের লেখা প্রথম বই, মস্তিষ্ক হতে জন্ম নেয়া আরেক প্রথম সন্তান। প্রকাশক বিদ্রুপের হাসি হেসে বলে, এ আমার পাক্কা দু হাজার টাকার মামলা। দশটা বই স্টলে রাখলাম। বাকী দুইশোটা বই আপনাদের কাঁধে নিয়ে যেতে হবে। তবে আমার বিশ্বাসে আঘাত করে পালিয়ে থাকবেন না। ঠিক ঠিক টাকাটা পরিশোধ করবেন, যদি বই বিক্রি না হয়।
পরের দিন থেকেই ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকায়, নামীদামী প্রতিষ্ঠানে, স্কুল কলেজে হন্যে হয়ে ছুটি আমি আর আন্দালিব। মাটির সাথে মিশে গিয়ে কীভাবে অপমান হজম করতে হয় তা বুঝতে থাকলাম হাড়েহাড়ে। কিন্তু ওর কাছেই যেন এসব কিছুই না। ওর পাগলামি সেই আগের মতই, দমবার পাত্র নয় যেন ও কিছুতেই। আমি শুধু ওর এসব দেখলাম আর ছুটে চললাম মন্ত্রমুগ্ধের মতন। দিন শেষে আমাদের স্ত্রীগণ আমাদের ফোলা ফোলা পাগুলো দেখে চোখের জল ফেলতো প্রতিদিনই। অবশেষে এপ্রিলের কোন এক মধ্যদুপুরে যখন ব্যাগ থেকে আমরা শেষ কপিটি বিক্রি করে দত্ত সাহেবের সাথে দেখা করলাম টাকা নিয়ে, সে কী বিনয় ওনার! একগাল হেসে বলল, ‘আমি কিন্তু সেদিন আপনাদের চোখ-মুখ দেখেই টের পেয়েছিলাম – আপনারা মশায় বেশ জাঁদরেল মানুষ! আপনারা ঠিক ঠিক পারবেনই।’ নিজেদের পাওনা টাকা নিয়ে এসে সোহ্‌রাওয়ার্দীর মাঠে পড়ন্ত বিকেলে যখন বসলাম, তখন কতক্ষণ নিজেরা নিশ্চুপ হয়ে চোখের জল ফেলেছিলাম-তা আজও মনে নেই।

জুন মাসের এক বিকেলে আন্দালিব হাঁপাতে হাঁপাতে আমার বাসায় ছূটে আসে। বলে, শালা, দত্ত তো আমার একক বই বের করতে চায় পরের বছরের বই মেলায়।
- বলিস্‌ কী! দারুণ খবর তো। আমিও উল্লাসে মেতে উঠি। যদিও আমার মনে একটু ব্যথা এ কারণে চিনচিন করছিলো এই ভেবে যে, আমার বই বের করার কোন অফার আসলো না কেন। তবুও ওর খুশিটাই উদযাপন করলাম সেদিন। পরে জানতে পারি, পাঠক মহলে ওর লেখাটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে আমার চাইতে অনেক বেশী। প্রকাশকের কাছে ওর পরবর্তী বই প্রকাশের অনুরোধ করে প্রতিমাসে ঘনঘন চিঠি আসতে থাকে। পত্রিকা অফিস থেকে অনুরোধ আসে ওর লেখা চেয়ে। ও প্রতিবারই যখন একেকটা সুসংবাদ আমাকে এসে জানায়, আমি বাহিরে বাহিরে যতই খুশি হই, ভেতরে ভেতরে ততবারই একেকটা বজ্রপাত হয় আমার লেখক স্বত্বার উপরে! ওর খ্যাতির দীপ্তি যেন সূর্যালোকের মত আছড়ে পড়ে আমার বুকের শুষ্ক মরুভূমির উত্তপ্ত বালুকারাশির উপর। আর তখন যেন তা আরো গনগনে তাপ ছড়িয়ে দেয় আমার বুকের ভেতর। আমি যেন ধীরে ধীরে ডুবে যাই এক অন্ধকার জগতে। হয়ে যাই চরম হতাশ, শোকে মূহ্যমান! নিজের সামনে নিঃশেষ হতে দেখি নিজেকে।

পরের বছর ওর একক উপন্যাস বের হয় ‘আগুন্তক’ নামে। তিনবারের ছাপায় বিশ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আর তখন আমার চারপাশটা আমাকে আরো গোগ্রাসে গিলতে থাকে! মাঝে মাঝে অসাড় হয়ে যাই, পার্থিব জীবনের সবকিছুই মূল্যহীন হয়ে পড়ে আমার কাছে। কিন্তু নাহ্‌! আমি আবার নিজেকে শোনাই, আমাকেও পারতে হবে। এভাবে আমি হেরে যেতে পারিনা। আমি আবার সমস্ত শক্তি দিয়ে দাড়াতে শুরু করি। কিন্তু বেশ কয়েক মাস কেটে গেলেও কোথাও থেকে ভালো সাড়া পায়না আমি। অন্যদিকে আন্দালিব তখন রীতিমত ‘প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক’! মাঝে মাঝে আমাকে সময় দিতে চায়, কিন্তু আমি পাশ কেটে যায়, যেন ও আমাকে অনুকম্পা করতে যায়-এই ভেবে।

এরই মাঝে হঠাৎ একদিন আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত একটা খবর আসে, দুঃস্বপ্নের মত। আন্দালিব খুন হয়েছে সদরঘাটে, গতরাতে! গায়ের লোম শিউরে উঠে আমার, দরদর করে ঘাম ছুটতে থাকে, অনেক বছর পর আজ আবার যেমন ঝরছে, ঠিক তেমন করে! কিছুদিন স্তব্ধ হয়ে থাকি। ওর শূন্যতায় আমার বাহিরটা তখনও খাঁ খাঁ করতো। অজ্ঞাতনামা আসামীকে দোষী বানিয়ে কয়েকটি মামলা হয়, তদন্ত হয়, কিন্তু কেউ ধরা পড়েনা, কোন সুরাহাও হয়না। সুরাহা করতে হয় অন্য আরেকটি জিনিসের। একদিন দত্ত সাহেব আমার সাথে দেখা করে জানায় – ওর একটা অসমাপ্ত পান্ডুলিপি আছে, আমাকে শেষ করতে হবে। বের হবে যৌথভাবে। আমি সুযোগটা লুফে নিই এবং তা প্রকাশিত হয় ‘অদৃশ্য শিকল কিংবা দেয়াল’ নামে। নামটা ওরই দেয়া ছিল আগে থেকেই। আশ্চর্যজনকভাবে এটিও পাঠক ব্যাপকভাবেই গ্রহণ করে যৌথ জানার পরেও। এরপর আমার খুশি দেখে কে! কিন্তু কোন এক অদৃশ্য আন্দালিব আমাকে যেন বলে, ‘অত ঢং করিস্‌না শালা। বইটা আসলে আমারই! তুই তো শুধু মলাট!’ আমি বলি, ‘দ্যাখ্‌ না, তোর নাম আর কেই বা মনে রাখে। আগামী বইমেলায় আমার একক উপন্যাস বেরুবে। তোকেও ছাড়িয়ে যাবে।’ ও বলে, তাই নাকি? দেখা যাবে!

পরের দিনই ভোরবেলা আমি আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার করি, কাঁদি। হঠাৎ যেন শরীরের নিম্নাংশ পাথরের মত কঠিন ভারী হয়ে গেছে! শরীরের সমস্ত শক্তি এক জায়গায় জড়ো করে চেষ্টা করি, এক বিন্দুও নড়াচড়া হয়না পায়ের। আবার যেন খিলখিল করে হেসে উঠে অদৃশ্য আন্দালিব! বলে, পারবি তো উদযাপন করতে তোর এত এত সাফল্য? আমি নিশ্চুপে চোখের জল ফেলে অনুনয় করে বলি, যদি তোকে হিংসা করে ভুল করি, ক্ষমা করে দে না! কোন জবাব আসেনা। সেদিন থেকেই এই আড়াই যুগের বেশী সময় ধরে বন্দী আমি এই বিছানা আর হুইল চেয়ারে! শরীর দিনের পর দিন অবশ হয়েছে খানিকটা কিন্তু আমার একক উপন্যাসের কাটতি এখন এত বেশী যে, আমিও অপ্রতদ্বন্দ্বী কথাসাহিত্যিক! কিন্তু আন্দালিবের ‘অদৃশ্য হস্তক্ষেপে’ সে সাফল্য উদযাপন করতে পারিনা আমি, শত করুণ ইচ্ছে সত্ত্বেও। যে ছেলেটা তাজা রজনীগন্ধা দিয়ে চলে গেল আমার জন্মদিনে, সে আর কেউ নয়-সে হচ্ছে জুনিয়র আন্দালিব। সে চলে যাওয়ার পর থেকেই অস্থিরতা বেড়েই চলছে মুহুর্মূহু, মনে হচ্ছে আমার এ অচল, ঘৃণ্য জীবন, বন্দী জীবন, যাতে সর্বক্ষণ পায়ে এক অদৃশ্য শিকল আর চারিদিকে অদৃশ্য দেয়াল – এ থেকে আমার মৃত্যু অবধি কখনোই মুক্তি নেই! এটাই হয়তো আমার উপযুক্ত, অবধারিত আর অলঙ্ঘনীয় প্রায়শ্চিত্ত! কারণ রাশিদ আন্দালিব নামের প্রিয়তম বন্ধুটিকে আমিই খুন করিয়েছিলাম সেদিন!

পরের দিন প্রতিটি পত্রিকায় শিরোনাম আর সংবাদ আসে, “প্রখ্যাত, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শিবলু মাহমুদ চৌধুরী সম্পূর্ণ প্যারালাইজ্‌ড হয়ে গেছেন গতকাল। যেটি বাংলা সাহিত্যের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি! হয়তো আর কোনদিনই তিনি লিখতে পারবেন না তার প্রিয় পাঠকবর্গের উদ্দেশ্যে। তবে তার মুখে কখনো কখনো গোঙানির শব্দ পাওয়া যায়!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শামীম খান বাহ মন ভরে গেল । খুব সুন্দর গল্প । অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য ।
বস, আপনাকে বিজয়ী হওয়ার জন্য অভিনন্দন! আর সেই সাথে অনেক অনেক ধন্যবাদও আপনাকে!
রুহুল আমীন রাজু anek valo laglo golpotio.dhonnobad.
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
ইমরানুল হক বেলাল Bangla sahitter kichu guropttopurno kotha aponar golpoti pore kichu shiklam, janlam . aponar lekhar maje lekhoker vumikha sompor k onek kichu bujar moto ache. ei ridoy grahi golpotir jonno aponak donnobad.
বেলাল ভাই, চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
কেতকী এই থিমের উপর একটা গল্প আগে পড়েছিলাম। যার কারণে ধারণা করেছিলাম আন্দালিবকে কে খুন করেছে। প্রায় নির্ভুল বানানের আপনার ঝরঝরে লেখা পড়ে আরাম পাওয়া যায়, লেখক হিসেবে এটা আপনার বড় গুন। অনেক শুভেচ্ছা রইল।
হয়তো পড়েছেন, তবে আমার এ লেখাটি মৌলিক বলেই আমি দাবি করছি। তবে আপনার প্রেরণামূলক মন্তব্যে আমি সত্যিই অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
আহা রুবন চমৎকৃত হলাম! লেখনী তো আছেই গল্পের ঘটনাও দারুণ, আগে থেকে কিছু আঁচ করা যাচ্ছিল না। প্রায়শ্চিত্ত বিষয়ের প্রথম লেখাটা আপনারটাই পড়লাম। ভোটও দেব। আমার কপাল খারাপ, মাস ভরে একটু একটু করে একটা গল্প লিখলাম। ২৯ তারিখ রাতে শুরু করলাম কম্পোজ করতে। সারা রাত টাইপ করে, বানান ঠিক করে, কাটছাঁট করে শুতে গেলাম। ভাবলাম ঠাণ্ডা মাথায় দু বার দেখে পোস্ট করব। আর সকালে উঠে দেখি গল্প জমা বন্ধ! যাক ভাল একটা গল্প পড়ে মনটা ভাল করে দিলেন। কিন্তু ভোটের বাক্স গেল কোথায়?
ও হ্যা, ভোট বাক্স যদি নাও থাকে। তাতে কী? আপনার মুল্যবান এই মতামতই বা ভোটের চেয়ে কম কোন অংশে?
রুবন ভাই, অনেক মূল্যবান কথা বলে আপনি আমার লেখার সম্মানটা যে পরিমাণে বাড়িয়ে দিলেন আমি বোধহয় সে পরিমাণে কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারবো কিনা জানিনা, তবে সবটুকু ঢেলেই বলছি, আমি অশেষ কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি! দুঃখ প্রকাশ করছি, সেই সাথে সমবেদনাও, আপনার শত চেষ্টা সত্ত্বেও এবারের সংখ্যায় লেখাটা জমা দিতে না পারার কারণে। তবে ইনশাআল্লাহ আগামী মাসে অবশ্যই আপনার লেখা আমরা পড়বো-সে আশাই করছি। আমার এই গল্পটি সত্যি কতটুকু কী হয়েছে-জানিনা। তবে থিমটা এসেছিল যখন মাথায়, তারপরে পুরো তিনমাস লেগেছে লিখতে। পুনশ্চ, ধন্যবাদ।

২৬ ফেব্রুয়ারী - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪