আনেছের বউয়ের অপরাধ

শুন্যতা (অক্টোবর ২০১৩)

জাজাফী
  • 0
  • ৩৭
ছোট্ট একটি গ্রাম, যে গ্রামে গুটি কতক খেটে খাওয়া মানুষের বসবাস ছিল। দশ বছর যেতে না যেতেই গ্রামের চেহারাটা পাল্টে গেল। স্কুল হল মাদ্রাসা হল বড় মসজিদ হল আর গুটি কতক বাড়িতে উঠলো পাকা দালান। শিক্ষার হারও তুলনামূলক ভাবে বাড়লো শুধু বদলালোনা সেই সব গুটিকতক খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য। স্বাধীনতা কালীন সময়ে এ গ্রামের কয়েখজন লুটপাটের সাথে জড়িত ছিল। ক্রমে ক্রমে তারাই হয়েউঠলো সমাজপতি,গ্রামের মোড়ল কিংবা অনেকটা রাজা বাদশাহ দের মত। পার্থক্য এই যে রাজা বাদশাদের থাকতো সিংহাসন কিন্ত তাদের তা নেই। অর্থ সম্পদের অহংকারে তারা বলতে গেলে মাটিতেই পা ফেলতোনা।

কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাদের ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে উঠলেও স্বভাব বদলালোনা। বাবা চাচাদের মত তারাও একরোখা হয়ে উঠলো। যতই এক রোখা হোকনা কেন কেউ কিন্ত কোন দিন বলেনি যে তারা অত্যাচারি। কেউ কোন দিন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেনি। আসলে তারা যে অত্যাচারি এ কথা বলার সাহস কারো ছিলনা। তাদের বিরুদ্ধে হাজার অভিযোগ বুকের মধ্যে ঢুকরে কেদেছে কিন্ত থানায় যাওয়ার মত সাহসের অভাব ছিল সেই সব খেটে খাওয়া মানুষের। যে আকব্বর ফেরী করে চূড়ি ফিতা বিক্রি করে বেড়ায় তার কাছ থেকে মাল কিনে টাকা না দেওয়া থেকে শুরু করে মকিদুলের ভ্যান ভাড়া সহ এমন কেউ নেই যার মজুরীর টাকা ওরা ঠিকমত দিয়েছে। যাই হোক ওরা যখন সামনে আসে তখন কিন্তু ঠিকই সালাম ঠুকে দেয়। যে মানুষটি সালাম ঠুকে রাস্তার ধারে গিয়ে দাড়ালো তার মনের মধ্যে ওদের বিরুদ্ধে জ্বলে পুড়ে মরার যন্ত্রণা ছিল কিন্ত তার পরও সালাম দিতে হচ্ছে।


গ্রামের দরিদ্র মানুষ গুলোর মধ্যে আনেছ এর বউ ছবিরন ওই বড়লোক তবিজুদ্দিনের বাড়িতে কাজ করতো। তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে আনেছের সংসার চলছিলনা। সারা দিন খেটে কতইবা আয় হয় আনেসের । সেই আয়ের টাকায় দু বেলা খাবারও কেনা সম্ভব হয়না। সংসারের কথা ভেবেই আনেছের বউ তবিজুদ্দিনের বাড়িতে কাজ নেয়। গত আট বছর ধরে সে কাজ করে যাচ্ছে। তবিজুদ্দিন মানুষ হিসেবে যেমনই হোক তার চরিত্র ভাল। আসেছের বউ দীর্ঘদিন তার বাড়িতে কাজ করলেও তার দিকে সে বাকা নজরে তাকায়নি। আনেছের বউ দেখতে শুনতে বেশ আকষর্নীয় সেই হিসেবে অনেকেই তার দকে তাকায়। তবে তবিজুদ্দিন কখনো সেটা করেনি। অথচ এই তুবিজুদ্দিনই গরীবের জমি দখল,মজুরী কম দেয়া সব করে। একদিন আনেছের বউ তবিজুদ্দির বাড়ি থেকে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখলো রান্না করার মত কোন খড়ি পাতা নেই।

বাড়ির পাশেই তবিজুদ্দির আমের বাগিচা। সেখান থেকে আনেছের বউ কিছু পাতা কুড়িয়ে আনলো। রান্না করার সময় হঠাৎ সেই পাতার ভিতর হাত দিতেই কিছু একটা হাতে বাধলো। হাত বের করে দেখলো একটা গলার হার। মনে মনে ভাবলো সোনা নয়তো! পরদিন সকালে ও বাড়ি কাজ করতে যাওয়ার সময় হারটা সাথে নিয়ে গেল। তবিজুদ্দিনের বউকে সেটা দেখিয়ে বললো দেহতো বু এইডা সোনা না নকল। তবিজুদ্দিনের বউ হারটা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখলো। তার মনের মধ্যে কিছু একটা খেলে গেল। বড়লোকের বউ সোনা চিনতে তার সমস্যা হবার কথা নয়। সে বুঝতে পারলো আনেছের বউ যে হারটা তার হাতে দিয়েছে তা সোনার। তিনি হারটা আনেছের বউকে ফেরৎ দিয়ে বললেন এটা সিটিগোল্ড বা কেমিকল সোনা। তুমি এটা ফেলে দিতে পার। তবিজুদ্দিনের বউ ভেবেছিল ফেলে দেয়ার পর সে সেটা নিয়ে নেবে। কিন্ত তার সে আশা পূর্ণ হলনা। আনেছের বউ বললো সোনা হউক আর সিটি গড় হউক আমার মাইয়াডারে দিবানে ও খুশি হবেনে বলে সে তার কাজে লেগে গেল। তবিজুদ্দিনের বউ আর কিছু বলতে পারলোনা।


পনের দিন পর মেয়েকে নিয়ে আনেছ বিনোদপুর হাটে গেল। মেয়ের গলায় তখন সেই চেইনটা ছিল। কি মনে করে আনেছ একটা স্বর্ণকারের দোকানে গিয়ে চেইনটা দিয়ে বললো এইডা এট্টু পরীক্ষা কইরা দেহেনতো কট্টুক কি আছে। গরীব হলেও আনেছ বেশ বুদ্ধিমান। তাই বউয়েল মত জানতে চায়নি আসল না নকল। স্বর্ণকার পরীক্ষা করে বললেন এতে প্রায় এক ভরি সোনা আছে। স্বর্ণকারের কথা শুনে আনেছের কি যেন হয়ে গেল। ভিতরে ভিতরে সে কী যে খুশি হল। সে স্বর্ণকারকে বললো আমি এইডা বিক্রি করতে চাই কত টাহা হবে? স্বর্ণকার জানালো বার হাজার টাকা হলে সে কিনতে রাজি আছে। বার হাজার টাকা সারা জীবনেও আনেছ চোখে দেখেনি। সে সেই দামেই বিক্রি করে দিল। তার মেয়েটা ভীষণ কান্নাকাটি শুরু করলো। আমি আমার গলার হার দিমুনা। এইডা বেচবা ক্যান? এইডা আমার। আনেছ মেয়েকে বুঝিয়ে বললো এইডা পুরান হইছে তাই তরে নতুন এট্টা হার আজকেই কিনে দিমু। মেয়ে তখন চোখ মুছে জানতে চাইলো হাছাই কিনে দিবা বাজান? আনেছের এখন অনেক টাকা। সে কেন তার মেয়েকে একটা হার কিনে দেবেনা! বাজারের ভিতরে মনিহারির দোকান থেকে মেয়েল পছন্দ মত একটা হার সে কিনে দিল। দাম পড়লো দশ টাকা।

বড় মাছ কিনলো দুই কেজি গরুর গোস্ত কিনলো। কতদিন যে মাছ মাংস খায়নি তার হিসাব নেই। দুই ঈদে কেবল খাওয়া হয়। বাজার থেকে ফিরে বউয়ের হাতে বাজারের ব্যাগ তুলে দিয়ে সে হাত মূখ ধুতে চলে গেল। বউ বাজারের ব্যাগ থেকে সব বের করতে গিয়ে অবাক হয়ে গেল। নিশ্চই ভুল করে অন্য কারো ব্যাগ নিয়ে এসেছে। আনেছ ফিরে আসার পর বউ তাকে বললো তুমি বাজার থাইকা ভুল কইরা কার ব্যাগ নিয়া আইছো? মাছ গোস্ত ভরতি!আমগো ব্যাগ কনে?আনেছ বউয়ের কথায় মুচকি হেসে বললো বউ ভুল কইরা আনি নাই এইডাই আমগো ব্যাগ। মাছ মাংস আমিই কিনছি। টাহা পাইলা কই,এতো টাহার মাছ গোস্ত কিনছো যে! আনেছ বউকে সব খুলে বললো। বউ ও ভীষণ খুশি।

পরদিন সকালে তবিজুদ্দিনের বাড়িতে কাজ করতে গেল আনেছের বউ। গিয়েই তবিজুদ্দিনের বউকে বললো বু তুমারে যে গলার হারডা দেহাইছিলাম,তুমি কইছিলা ওইডা কেমিকল,ওইডাতো সিটি গড় না। আমগো জামেনার বাপ ওইডা বাজারে স্বর্ণকারের কাছে নিছিল ওইডা খাটি সোনা। জামেনার বাপ ওইডা বেইচা ম্যালা টাহা পাইছে। এ কথা শোনার সাথে সাথে তবিজুদ্দিনের বউয়ের মুখ কালো হয়ে গেল। সে ঘরের ভিতরে ঢুকে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে আনেছের বউকে বললো তুমি আজকের মত বাড়ি চলে যাও তেমন কোন কাজ নেই। আর হ্যা খবর না দেওয়া পযর্ন্ত কাজে এসোনা। আনেছের বউ ফিরে আসলো। একদিন দুদিন একমাস দু মাস গেল কিন্ত কাজের জন্য তাকে আর খবর দেয়া হলনা। আনেছের বউ বুঝতেও পারলোনা যে আসলে তার চাকরিই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তার অপরাধ সে তবিজুদ্দিনের বউয়ের কাছে নিজেদের সুখের কথা বলেছে। যেটা ছিল তার ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আনেছের সংসার এখন আগের মত অর্ধাহারে কাটছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন আনেসদের কপাল ভাল, হার চুরির মিথ্যা মামলায় তাবিজুদ্দিনের কেউ ফাসায় নই। খুব ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।
আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ক্ষমতাবানরা এভাবেই গরিবদের অত্যাচার করে
রোদের ছায়া বড়লোকের মতিগতির ঠিক নেই , তাই কাজের লোকের সংসারের সুখের গল্প শুনে তাকে কাজ থেকে ছাটাই করতেই পারে তবে এরকম কখনো শুনিনি , ইনফ্যাক্ট আজকাল কাজের লোকের যা ক্রাইসিস তাতে টুকটাক চুরি করলেও ছাটাই করার আগে দুই তিন বার ভাবতে হয়।
রোদের ছায়া আমি আপনার সাথে একমত। তবে এই ঘটনাটা ঘটেছিল আমাদের গ্রামে। আর গ্রামে কিন্ত কাজের লোকের অভাব নেই। কারণ গ্রামে বেশ ক ঘর বড় লোকের পাশে শত শত খেটে খাওয়া মানুষ থাকে। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
জাকিয়া জেসমিন যূথী গল্পটা খুব সুন্দর লিখেছেন। এবং নতুনত্ব আছে।
ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪