গোরস্থান

কৃপণ (নভেম্বর ২০১৮)

জসিম উদ্দিন আহমেদ
  • ১২
  • ৩১


গোরস্থানের পাশের বড় খেজুরগাছটার আধাআধি উঠে দৌলত আলী ওরফে দৌলত কঞ্জুস কোন মতে লটকে রয়েছে। জঙ্গলি গাছটার অমসৃণ গা আকড়ে এভাবে তিন চার ঘন্টা ঝুলে থাকা সহজ কথা না। তবুও থাকতে হচ্ছে। না থেকে দৌলতের কোন উপায় নেই। নিচে মানুষ-খেকো শিয়াল গুলো এখনো মরা মানুষের দেহ নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। মনে হয় ভোর না হওয়া পর্যন্ত এভাবে চালাতে থাকবে।

এখন রাত কত অইবো? তা কমপক্ষে দুইডা আড়াইডা তো অইবোই, দৌলত ভাবে। বাকি রাতটুকু এভাবে গাছে চইড়্যা কাটাইয়্যা দিতে অয় কি না কেডা জানে?

উপজেলা সদরের মুদি দোকানটা রোজ ঠিক সময়েই বন্ধ করে দৌলত। তারপর কর্মচারী দুইজনকে বিদায় দিয়ে নিজে বাড়ীর পথ ধরে। যে সাত কিলোমিটার রাস্তা গাড়ীতে চাপলে বিশ মিনিটে পৌঁছাতে পারে, দুটো পয়সা বাঁচাতে দৌলত তা আসে পায়ে হেটে, পাক্কা তিন ঘন্টা ধরে। ফলে প্রতিদিন যখন গোরস্থানের ধারে আসে তখন রাত এগারো সাড়ে এগারোটা বেজে যায় তার। বাড়ী পৌঁছে খেয়ে দেয়ে ঘুমোতে রাত বারোটা প্রতিদিন।

রাতের বেলা গোরস্থানের পাশের সামান্য এই পথটুকু পার হতে দৌলতের খবর হয়ে যায়। সে যখন গোরস্থানের ধারে পৌঁছায় তখন রাস্তায় কোন লোকজন থাকে না। আশেপাশে কোন ঘরবাড়িও নেই। কাজেই প্রতিদিন সে ভয়ঙ্কর ভয় নিয়ে এই রাস্তাটুকু পার হয়। নতুন কাউকে কবর দিলে ভয়টা তার বেড়ে যায়। মানুষ-খেকো শিয়ালগুলো গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসে নরমাংসের লোভে। সদ্য সমাহিত লাশ কবর খুঁড়ে বের করে ভোজনলীলায় মেতে ওঠে। গভীর রাতে চলাচলের সুবাদে দৌলতকে এসব দৃশ্য হরহামেশা হজম করতে হয়।

দৌলত প্রতিদিনই ভাবে পা চালিয়ে দ্রুত গোরস্থানের সীমানা পার হয়ে যাবে। কোন দিকে ফিরেও তাকাবে না। কিন্তু পারে না। এই জায়গায় আসলে যেন তার পা আর চোখ দুটো তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দৌলতের শত তাড়া উপেক্ষা করে পা নিজের চলার গতি শিথিল করে দেয়। আর গোরস্থানের খাড়া খাড়া কবর গুলো চোখ দুটোকে দুর্নিবার এক আকর্ষণে টানে। সেই আকর্ষণ উপেক্ষা করা দৌলতের পক্ষে অসম্ভব। সে ফ্যালফ্যাল করে কবরগুলোর দিকে চেয়ে থাকে। যেগুলো পুরাতন কবর, সেগুলো ভিতরের দিকে ভেঙ্গে গর্ত হয়ে গেছে। সেই গর্ত পন্ডিতকুলের অভায়ারণ্য। যেগুলো নতুন কবর, সেগুলো পিঠ চিতিয়ে এখনো মৃত ব্যক্তির অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে এই পৃথিবীতে। স্বজনেরা কিছুদিন ঘনঘন যাতায়াত করে, কবরের যতœ নেয়। তাপরপর একসময় সব ভুলে যায়। কাশ আর আখন্দের ঘন জঙ্গলে ঢাকা পড়ে যায় কবর, সেই সাথে মৃতের পরিচয়ও।

দৌলতের মনে পড়ে গতকাল ও-পাড়ার মজু শেখের মা মারা গেছে। বুড়ি তিন চার বছর বিছানায় পড়ে ছিল। বাড়ির লোকজনকে এক্কেবারে ত্যক্তবিরক্ত করে ছেড়েছে। বুড়ি মারা যাওয়ার সাথে সাথে ছেলেরা দায়-সারাভাবে লাশ কোনমতে মাটিচাপা দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। ‘এই লাশটাই হিয়ালে টাইন্যা বাইর করছে কব্বর থিক্যা’, দৌলত ভাবে।

আরো একটি ঘন্টা কেটে যায়। দৌলত আগের মতই ঝুলে আছে। নিচে নামার উপায় নেই। তার হাত দুটো আর পারছে না। বুক দিয়ে গাছ আকড়ে থাকার কারণে বুকেও ব্যাথা লাগছে। দৌলত একবার ভাবে, একহাতে মোবাইল বের করে ছেলেকে ফোন দিবে। তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু পরক্ষণেই সিদ্ধান্ত বদলায়। ছেলের সাথে সম্পর্ক ইদানিং ভাল যাচ্ছে না তার। ছেলেটা মোটরসাইকেলের বায়না ধরেছে। দৌলতের বউ আর ছেলের ধারণা, সামর্থ্য থাকা সত্বেও পয়সা খরচের ভয়ে দৌলত ছেলের আব্দার পূরণ করছে না। কিন্তু অন্তর্যামী জানেন, খরচের প্রশ্নে জীবনে এই প্রথম বার দৌলত পয়সার কথা মাথায় আনে নি। সে মাথায় এনেছে ছেলের নিরাপত্তার কথা। মোটরসাইকেল কিনে দিলে ছেলের যেকোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, এই ভয়েই সে নিমরাজি। কিন্তু তার বউ আর ছেলেকে এই কথা কে বুঝাবে!


হাজেরা বেগমের ডাক-চিৎকারে দৌলত আলীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। সারারত একগাদা মানুষ-খেকো শিয়ালের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে গাছের উপর নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দৌলত সবেমাত্র ঘুমিয়েছে। এরই মধ্যে বউয়ের বেরসিকের মতো ডাকাডাকিতে সে বিরক্ত হয়ে বিছানায় উঠে বসে।
‘কই, বেলা দশটা বাজে অহনতরি ঘুম ভাঙ্গে না ক্যান, দোকানে যাঅন লাগত না না-কি?,
‘দশটা বাইজ্যা গেছে। উরে সর্বনাশ, একটুও টের পাই নাই! তাড়াতাড়ি নাস্তা দেও, খাইয়্যা দোকানে যাই’, দৌলত আলী ঘুম জড়িত কন্ঠে বলে। মুখে দোকানে যাওয়ার কথা বললেও তার শরীর চাচ্ছে শুয়ে বিশ্রাম করুক। তবুও সে জোর করে নিজেকে টেনে তোলে বিছানা থেকে।

‘দোকানে যাওনের আগে আইজকা তোমার পুলার ফয়সালা দিয়া যাইবা কইলাম। তুমি হেরে মোটরসাইকেল কহন আইন্যা দিতাছ। পুলাডা কহনো কুন বায়না ধরে না তোমার কিপটামি স্বভাবের জন্য। একটা মোটরসাইকেল চাইছে, এইড্যা এমুন আর কি দাবি করছে, তুমি দিতা না ক্যারে?’

কথাটা হাজেরা ঠিকই বলেছে, দৌলতভাবে। নিজের কৃপণতার জন্য ছেলেটা কামান দাবী করলে দৌলত পিস্তল দিয়ে এসেছে সারা জীবন। একারণে মানিক পিতার কাছে কোন কিছু চাওয়া একরকম ছেড়েই দিয়েছে! কিন্তু কলেজে যাওয়ার পর থেকে মোটরসাইকেলের জন্য ছেলেটা একেবারে ব্যাকুল হয়ে পড়েছে।

‘বাজান, একটা বাইক কিইন্যা দিতে তুমার এত অসুবিদা কিয়ের? আমি চাকুরি পাইলে তুমার সব টেহা ফিরৎ দিমু’, মায়ের সাথে এসে মানিকও যোগ দিয়েছে মোটরসাইকেল-আদায় যুদ্ধে।

দৌলত যুক্তি দিয়ে ছেলেকে বুঝানোর চেষ্টা করে।
‘মোটর সাইকেলের আরেক নাম মরণ সাইকেল! হেইডা বহুত লোকের জীবন কাইড়্যা লইছে। আমি জাইন্যা শুইন্যা এই মরণকল তুমারে কিইন্যা দিতে পারমু না, বাজান’

মানিক বুঝে গেছে তার কৃপণ বাপ কোনভাবেই এতগুলো টাকা খরচ করবে না। পিতার প্রতি তার খুব রাগ হয়। এই রাগ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। রাগের বদলে প্রচন্ড অভিমান এসে ভর করে তার মনে। চোখে মুখে ভয়নাক নির্লিপ্ততা নিয়ে সে দৌলতের দিকে তাকায়। দৌলতের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে। ছেলের এই নির্লিপ্ত চাহনির সাথে তো সে পরিচিত নয়। ছেলের এই শীতলমূর্তি সে আগে তো কোনদিন দেখে নাই। মোটরসাইকেলের নেশায় ছেলেটা তার উন্মাদ হয়ে গেছে একেবারে।

‘সোজাসাপ্টা কইয়্যা দেও মোটরসাইকেল কিনতে তুমার অনেক টেহা খরচ হইব। এত টেহা পোলার লাইগ্যা তুমি খরচ করতে পারতা না। এইডা ওইডা কইয়্যা আমারে ভুলাও ক্যারে? টেহাই তুমার কাছে বড়। আসলে লোকে তুমারে যতডা কঞ্জুস জানে তার থিইক্যা তুমি অনেক বেশি কঞ্জুস বাজান, অনেক বেশি কঞ্জুস! যেইখানে আমার কুন দাম নেই, সেইখানে আমি আর থাকুম না। একদন্ডও থাকুম না।’

দৌলত ও হাজেরার শত পিছুডাক উপেক্ষা করে মানিক বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। ছেলের চলে যাওয়ার ভঙ্গিটা দৌলতের একদম ভাল লাগল না। তার শান্ত-শিষ্ট ছেলেটা হঠাৎ এমন চঞ্চল হয়ে উঠল কেন, কে জানে?



খরচের প্রশ্নে চিরকাল দৌলত নির্বিকার থেকেছে। কিন্তু ছেলের চলে যাওয়া দেখে আজ আর সে চুপ করে বসে থাকতে পারল না। ঘরে তার সবসময় টাকা থাকে। স্ত্রী হাজেরার কাছেই থাকে। কিন্তু হাজেরা স্বামীর অনুমতি ছাড়া একটা পয়সাও খরচ করে না।

দৌলত আলমারি খুলে হাজেরাকে টাকা আনতে বলে। হাজেরা পাঁচশ টাকার চারটি বান্ডিল এনে স্বামীর হাতে দেয়। দৌলত গুনে দেখে টাকাগুলো। পুরো দুই লক্ষ টাকাই আছে। টাকাগুলো সে হাজেরার হাতে দিয়ে বলে, ‘এই ন্যাও, পোলারে কইও মোটরসাইকেল কিইন্যা পঙ্খিরাজের লাহান য্যান উইড়্যা না বেড়ায়! একটু সাবধানে চালাইতে কইবা, বুঝছো। যার দরদ সেই যদি না বুঝে তয় আমি বুইঝ্যা কি করমু!’

দৌলত আলী আর বলতে পারে না। তার গলা কেমন ধরে আসছে। সে বউয়ের হাতে টাকার বান্ডিল রেখে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে।

স্বামীর কান্ড দেখে হাজেরার হাসি পায়। সে ভাবে, এতগুলো টাকা খসে যাওয়ায় তার স্বামীর এই কাঁদ কাঁদ অবস্থা। আহারে! টেহার জন্য লোকটা কত কান্ডই না করতে জানে! এই বুইড়্যা বয়সে আবার না কি কারু চোক্কে পানি ঝরে!



দৌলত আলীর গোরস্থান-প্রীতি ইদানিং ভয়ানক রকমে বেড়ে গেছে। গোরস্থানকে ঘিরে তার মতো এমন কৃপণ লোকের এত উন্মাদনাকে একেকজন একেকভাবে দেখলো। কেউ প্রশংসা করলো, কেউবা আবার সমালোচনা করলো। একসময় নিন্দুকেরা হাল ছেড়ে দিয়ে তার সমালোচনা করা বন্ধ করে দিলো।

কিন্তু দৌলত আলী হাল ছাড়ল না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে পন্ডিতকুলের বিরুদ্ধে জেহাদে নেমেছে। তাদের শেষ না দেখে সে থামবে না।

প্রথম প্রথম হাতে টর্চ ও বল্লম নিয়ে সে সারারাত গোরস্থানের শিয়াল তাড়াতে লাগল। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হলো না। শিকারপুর গোরস্থানটি আয়তনে অনেক বড়, প্রায় এক-দেড়শ বিঘা জমি জুড়ে। আশপাশের দশ গ্রামের গোরস্থান এটি। পুরো গোরস্থান জুড়ে কাশ, আখন্দসহ নাম না জানা হাজারো লতাগুল্মের জঙ্গল। একপ্রান্ত থেকে তাড়া খেয়ে শিয়ালের দল হেলে দুলে আয়েশি ভঙ্গিতে আরেক প্রান্তে এসে জড়ো হয়। তাদের চলার ভঙ্গি দেখলে মনে হয় তারা দৌলতের সাথে মজার কোন খেলা খেলছে।

গোরস্থানের জঙ্গলা যদি সাফ করন যাইত, দৌলত মনে মনে ভাবে।

গোরস্থান কমিটির সভাপতির কাছে গিয়ে দৌলত কথাটা একদিন পাড়ে। সভাপতি মাওলানা সাহেব সব শুনে বলেন, ‘হেইডা তো অনেক ভাল প্রস্তাব। তবে কি দৌলত মিয়া, পুরা গোরস্থান সাফ করতে তো অনেক টেহার দারকার। ফান্ডে তো এত টেহা...’

‘টেহার বিষয় লইয়্যা আফনের ভাবতে হইবো না। আফনে শুধু অনুমতি দ্যান’। মাওলানা সাহেবকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দেয় দৌলত।

মাওলানা সাহেব অনুমতি দিয়ে দেন। সেই সাথে দৌলতের এই কাজ কতবড় সওয়াবের কাজ তা কোরআন হাদিসের উদ্বৃতি দিয়ে তাকে বুঝান। দৌলত ভাবে, সওয়াবের চিন্তা পরে। আগে হিয়ালের দফারফা কইর‌্যা লই!

জনা বিশেক কামলা নিয়ে একনাগাড়ে দশ বারো দিন কাজ করে দৌলত গোরস্থানের পুরো জঙ্গল সাফ করে ফেলে। সকলেই তার এই কাজের কম বেশি প্রশংসা করল। নিন্দুকেরা বলতে লাগল, দৌলত আলীর মনে মরণের ভয় ঢুকছে। হের লাইগ্যা সে পয়সা খরচ কইর‌্যা সওয়াব কামাইয়্যা লইতাছে!

জঙ্গল পরিস্কার হওয়ায় শিয়ালের উৎপাত কিছুটা কমলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। দৌলত আলীর দুশ্চিন্তা যায় না। সে ভাবে, কি করলে গোরস্থানের বেবাক হিয়াল তাড়ানো যাইবো?


মাওলানা সাহেব দৌলতের প্রস্তাব শুনে হতবাক হয়ে যান। দৌলতের মত এরকম একজন কৃপণ লোক কি করে এতবড় একটা ব্যয়সাধ্য কাজের প্রস্তাব দিতে পারে তা তাঁর মাথায় ঢোকে না। সর্বোপরি, কাজটা যখন দশজনের কাজ। তিনি অনেকটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলেন, ‘গোরস্থানের চারপাশে বাউন্ডারি দিতে কত টেহার দরকার হেইডা কি তুমার জানা আছে দৌলত মিয়া?’

‘একুরেট হিসাব অহন তরি পাই নাই। তবে মিস্ত্রি গো লগে কথা বইল্যা ইট, বালু, সিমেন্টের একটা ইস্টিমেট লইছি। হেতে ধরেন...’

‘কিন্তু বাবা, এত টেহা আইবো কোথা থিইক্যা? আজকাল মানুষ তো ঈদগাঁহ, গোরস্থানে টেহাই দিতে চায় না। এক সাথে এত্ত গুলা টেহা....’

দৌলত এবারও মাওলানা সাহেবকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দেয়।

‘টেহার বিষয় লইয়্যা আফনের ভাবতে হইবো না। আফনে খালি অনুমতি দ্যান’

মাওলানা সাহেব দৌলতের মুখের দিকে চেয়ে থাকেন। দৌলতের চোখে মুখে আত্ম-প্রত্যয়ের দীপ্তি। এ যেন অচেনা এক দৌলত আলী।


শিকারপুর গোরস্থানের চারপাশে সুউচ্চ বাউন্ডারী ওয়াল উঠে গেল তরতর করে। গোরস্থানে প্রবেশের জন্য দুই পাশে সুদৃশ্য লোহার দুইটি গেইট বানানো হলো। এই সকল কাজ যে একমাত্র দৌলত আলীর টাকাই করা হয়েছে, মাওলানা সাহেবের কল্যাণে তা জানতে কারো বাকি রইলো না। সকলেই একবাক্যে স্বীকার করলো, দৌলত কঞ্জুস সত্যি বদলাইয়্যা গেছে।

কিন্তু লোকের কথায় দৌলত আলী কান দেয় না। সে এখন পুরোদস্তর গোরস্থানের খাদেম বনে গেছে। গোরস্থানকে ঘিরেই তার দিন রাত কেটে যায় কেউ মারা গেলে গোসল দেওয়া থেকে খবর খুঁড়া পর্যন্ত সব কাজ সে করে। আর রাতের বেলায় টর্চ ও বল্লম হাতে কবর পাহার দেয়। শিয়ালে যেন লাশ টেনে বের করতে না পারে কবর থেকে। বাউন্ডারী ওয়াল করার পর গোরস্থানকে সে শিয়ালমুক্ত করে ছেড়েছে। তারপরেও নতুন কোন কবর হলে দৌলত আলী সতর্ক হয়ে ওঠে। পাহারার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

মাওলানা সাহেবের অনুমতি নিয়ে গোরস্থানের ভিতর একটি ঘরও তৈরি করেছে দৌলত আলী। এই ঘরে তার কবর খুঁড়ার সরঞ্জামাদি থাকে। তাছাড়া দিনের বেশির ভাগ সময় দৌলত এই ঘরেই কাটায়। ঘরে একটি মাত্র জালানা। জালানা খুলে যে কবরটি চোখে পড়ে, দৌলত তার দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকে আনমনে। এই নির্দিষ্ট কবরটির উপর দৌলতের বিশেষ নজর। এর উপর সে কখনো লতা-গুল্ম জমতে দেয় না। সবসময় যতœ নেয়। প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে এই কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সে দোয়া দুরুদ পাঠ করে কিছুসময়। তারপর দুহাত তুলে সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থণা করে, আয় খোদা, অবুঝ পোলা আমার, বাপের উপর অভিমান কইর‌্যা আত্মঘাতী অইছে। তুমি তারে ক্ষমা কইর‌্যা বেহেস্ত নসিব কইরো গো মাবুদ! বেহেস্ত নসিব কইরো!

-০-



আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব প্রিয় কবি/লেখক. অাপনাদের জন্য নতুন ওয়েব সাইট www.kobitagolpo.com তৈরি করা হয়েছে নতুন অাঙিকে। এখানে বর্তমান প্রতিযোগীতার জন্য নির্ধারিত “বাবা-মা” শিরোনামে লেখা জমা দেয়ার জন্য অামন্ত্রণ করা হচ্ছে। অাগ্রহীগণ ২৫ নভেম্বরের মধ্যে www.kobitagolpo.com এ লিখা জমা দিন। প্রতিযোগীতায় সেরা নির্বাচিত ৬ জনকে সম্মাননা দেয়া হবে।।।
নাজমুল হুসাইন শুভ কামনা আর ভোট রইলো,সেই সাথে আমার পাতায় আমন্ত্রন,আসবেন।
ধন্যবাদ, নাজমুল ভাই।
Jamal Uddin Ahmed বিজ্ঞজনদের মতামত আমার ভাল লেগেছে। তারপরও আপনার বিষয়-বর্ণনা খুবই চমৎকার। অনেক শুভেচ্ছা।
কৃতজ্ঞতা জানবেন।
শামীম আহমেদ শুভ কামনা আর ভোট রইল।আসবেন আমার পাতায়,আমন্ত্রণ রইল।
আহা রুবন খুবই সাজানো-গোছানো গল্প। বিষয়-বৈচিত্র্য ও কথনশৈলী ভাল লেগেছে। সর্বোচ্চ ভোট থাকল।
মোঃ মোখলেছুর রহমান আপনার লেখা দেখলেই হুকো বন্দনার কথা মনে এসে যায়। অসাধারন লেখন।
'হুকো-বন্দনা' আমার প্রথম গল্প ছিলো। 'হরমুজ আলী' চরিত্রটির জন্য অনেকে প্রশংসাও করেছেন। আপনার উৎসাহমূলক মন্তব্য দেখে উদ্দীপ্ত হলাম। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল। এই সংখ্যায় লেখা দেন নি, পরপর দুবার আত্মজীবনী পেলাম, 'ভয়' সংখ্যায় লেখা পাবো আশা করছি। শুভকামনা রইলো।
রঙ পেন্সিল সত্যি অসাধারন লেগেছে গল্পটা।অনেক অনেক শুভকামনা
ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা জানবেন।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত গল্পের " থিম " টা ভাল লাগল । পড়ে বেশ ভাল লাগল । ভোট সহ শুভকামনা রইল ।
কৃতজ্ঞতা জানবেন।
প্রজ্ঞা মৌসুমী শেষের দিকে এসে শেয়ালগুলোর জন্য মায়াই লাগছিল। গোরস্থানের প্রতি তুমুল ভয়কে তুমুল ভালোবাসায় নিয়ে আসাটা অভিনব। দুলাখ টাকা বাবা তো দিয়েইছিল মোটর সাইকেলের জন্য, সেক্ষেত্রে দূর্ঘটনায় মৃত্যুও আসতে পারতো। অর্থাৎ সেদিন মানিক বাড়ি ফিরেনি। অবশ্য টাকাটা দেয়ার ব্যাপারটা একেবারেই না থাকলে কিংবা দেয়াটা ওর ভাবনাতেই থেকে গেলে পাঠক হিসেবে ধাক্কাটা হয়তো জোরসে হতো। তবে শেষ পর্যন্ত গল্পটা অসাধারনই।
টাকা দেওয়ার বিষয়টি ছেলে জানতে পারেনি। এখানে irony of fate. একটি tragic mood দেওয়ার চেস্টা মাত্র।... ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
satota 2007 অসাধারণ। শুভেচ্ছা।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

আমার গল্পের প্রধান চরিত্র দৌলত আলী একজন কৃপণ ব্যক্তি। নিজের একমাত্র ছেলের মোটরসাইকেল কেনার আব্দার সে রক্ষা করেনি। ফলে ভুল বুঝে ছেলে আত্মহত্যা করে। ছেলের মৃত্যুর পর দৌলত আলী ভিন্ন মানুষে পরিণত হয়। সে তার কৃপণতাকে কবর দিয়ে সম্পূর্ণ নিজের টাকা ব্যয়ে গোরস্থানের সংস্কার কাজে লেগে পড়ে। সে গোরস্থান হতে মানুষ-খেকো শিয়াল তাড়াতে উঠে পড়ে লেগে যায়। যেন মৃত্যুর পর তার আদরের সন্তান র্নি বিঘ্নিনে শান্তিতে ঘুমাতে পারে শিয়ালের উৎপাত ছাড়া। সর্বস্ব বিক্রি করে গোরস্থানের চারিদিকে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মান করে। ছেলের মায়ায় সে দিনরাত গোরস্থানেই পড়ে থাকে। হয়ে যায় গোরস্থানের খাদেম।

১২ ডিসেম্বর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪