শীতের চাপে বাঘে কাঁপে

শীত / ঠাণ্ডা (ডিসেম্বর ২০১৫)

মোকাদ্দেস-এ- রাব্বী
  • 0
  • ৪৪
অয়ারড্রবের উপরে অনেকগুলো খেলনা সাজানো আছে। ব্যাট আছে,বল আছে। পাশে দুইটা পুতুল আছে,একটা খরগোশ আছে। বন্দুক আছে, বিল্ডিং বাড়ী আছে। আর একটা বাঘও আছে। বাঘের চামড়া কী সফ্ট। বাঘের খেলনাটা ধরে থাকতে তাই খুব ভালো লাগে হামিমের। বিছানায় শুয়ে হামিম খেলনা গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে ওর বিল্ডিং বাড়ী বানাতে ইচ্ছে করছে। বিল্ডিং বাড়ী বানানোর খেলনাটা নেয়ার জন্য বিছানা থেকে নেমে ফ্লোরে পা রাখে ও। অমনি পিছনে শব্দ শোনা গেল,‘হালুম হালুম,তুমি আবার খালি পায়ে পা রেখেছো। ঠান্ডা লাগছে না?’ একথা শুনে চমকে ওঠে হামিম। একটু আগে খালি পায়ে ব্যাট আর বল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করার জন্য একথা বলেছে আম্মু। শুধু তাই নয়,হাত থেকে ব্যাট আর বল কেড়ে নিয়ে বিছানায় দিয়ে গেছে। আরও বলেছে,‘ঠান্ডা লেগে গেলে অসুখ করবে জানো না! তখন বিছানায় শুয়ে থাকতে খুব মজা লাগবে না?’ বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেছে আম্মু। হামিম সে কথা ভেবে চমকে গিয়ে বিল্ডিং বাড়ী না নিয়েই এক লাফে আবার বিছানায় ওঠে। ভাবে আম্মু মনে হয় বুঝতে পেরেছে।
বিছানায় ওঠে কম্পিউটার টেবিলের নিচে চোখ যায় হামিমের। ও দেখতে পায় বাঘের ছোট্র একটা বাচ্চা জড়সড় হয়ে বসে আছে। ভাবে খেলনা বাঘটা মনে হয় পড়ে গেছে। সংগে সংগে অয়ারড্রবের সামনে চোখ যায়। উপরে সব খেলনা ঠিকই আছে। বাঘটাও আছে। তাহলে কী ওটা সত্যিকারের বাঘের বাচ্চা। ভাবে হামিম। তবে ভয় পায় না। বাঘ ছানাটা একটু নড়েচড়ে বসে। হামিম বুঝতে পারে সত্যি ওটা জ্যান্ত বাঘের ছানা।
পিচ্চি বাঘ ছানাটা হামিমের চোখে চোখ রেখে বলল, ‘হালুম - - - হালুম।’
হামিম একদম ভয় পেল না। ও বাঘ ছানাটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করল। বলল,‘তুমি কী সিসিমপুরের হালুম?’
বাঘ ছানা বলে,‘না।’
‘তাহলে তুমি কোথাত থেকে এসেছো ?’ এ কথা বলেই হামিম বিছানা থেকে নেমে আবার ফ্লোরে পা রাখে। অয়ারড্রবের উপরের খেলনা বাঘটাকে কোলে নেয় ও।
‘সুন্দর বন থেকে শহরে। শহর থেকে এখানে।’ বলেই একটু থেমে বাঘ ছানাটা আবার বলল,‘হালুম - - - হালুম, আমাকে দেখে তুমি ভয় পেয়েছো?’
‘না। ভয় পাব কেন!’ হামিম কোলের খেলনা বাঘটাকে দেখিয়ে বলে,‘আমি তো সারাদিন এই বাঘ নিয়েই থাকি। ভয় পাব কেন?’
বাঘ ছানা বলে, ‘হালুম! হু , তুমি খুব সাহসী। জ্যান্ত বাঘ দেখেও তুমি ভয় পাওনি।’
হামিম বলে, ‘ভয় পাওয়ার কথা বাদ দাও। এবার বলো তুমি এখানে কীভাবে এলে?’
‘ভয় পাওয়ার কথা বাদ দেব কেমন করে? ভয় পেয়েই তো ছুটে এসে এ বাসায় ঢুকলাম।’
‘ভয়ে?’
‘হালুম, হু।’
‘কিসের ভয়ে,মানুষ তোমাকে মারার জন্য তাড়া করেছে?’
‘না।’
‘তাহলে তোমাকে চিড়িয়াখানা থেকে কেউ ধরতে এসেছে?’
‘আরে না। শীতের ভয়ে। বাইরে প্রচন্ড কুয়াশা পড়ছে। ঠান্ডার পরিমাণ অনেক বেশী।তাই ঠান্ডার ভয়ে ঢুকে পড়েছি তোমাদের বাসায়। ঢুকেই দেখলাম তোমার আম্মু তোমাকে ঠান্ডার জন্য বকাঝকা করছে। তুমি ফ্লোরে খালি পায়ে হাঁটতেছো এজন্য তোমাকে স্যান্ডেল পড়াল।’
‘আম্মু তোমাকে দেখেছে?’
‘না। আমি তখন লুকিয়ে এই রুমে ঢুকে পড়েছি।’ এ কথা বলেই বাঘটা দ্রুত গতিতে কম্পিউটার টেবিলের নিচ থেকে খাটের নিচে চলে যায়।
একটু পরেই আম্মু ঘরে ঢুকে পড়ল। হামিম বুঝতে পারল যে আম্মুর আসা বুঝতে পেরেই বাঘ ছানাটা লুকিয়ে পড়েছে। আম্মু ঢুকেই আবার বকাঝকা দিতে শুরু করল ওকে। বলল,‘তুমি আবার খালি পায়ে ফ্লোরে কেন? ঠান্ডা লাগিয়ে জ্বর বাধালে কী হবে?’ একথা বলেই হামিমকে কোলে তুলে আবার বিছানায় দিল আম্মু। হাত থেকে খেলনা বাঘটাকে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল ফ্লোরে। বলল,‘সারাদিন এই বাঘের পুতুল নিয়ে খেলতে হবে! কথা না শুনলে চিড়িয়াখানায় নিয়ে গিয়ে জ্যান্ত বাঘের খাচায় ফেলে দিয়ে আসব তোমাকে।’
হামিম কোন শব্দ করে না।
এরপর আম্মু ওকে মাথায় টুপি পড়াল। পায়ে পা মোজা এবং হাতে হাত মোজাও পড়িয়ে দিল। যাওয়ার সময় আবার ফ্লোর থেকে খেলনা বাঘটাকেও তুলে দিয়ে গেল। আর বলল,‘ বাইরে অনেক ঠান্ডা। খবরদার বিছানা থেকে নামবে না। এই বাঘ নিয়েই খেল বিছানায়।’ বলেই হন্হন্ করে চলে গেল।
আম্মু যাওয়ার খানিক পড়েই বিছানাটা র্থর্থ করে কাঁপতে শুরু করল। হামিম মনে মনে ভাবল এবার কি বিছানাটাকে ঠান্ডা লাগা শুরু করল নাকি। সে আবার বিছানা থেকে নামল। ফ্লোরে বসে খাটের নিচে তাকাল। বাঘ ছানাটা খাটের সাথে শরীর লাগিয়ে বসে আছে। শীতের চাপে র্থর্থ করে কাপছে ওটা। ওর কাঁপুনির ঝাঁকুনিতে বিছানাটাও র্থর্থ করে কাঁপছে।
হামিম বলে,‘কী তোমার ঠান্ডা লাগছে?’
বাঘ ছানাটা বলে,‘হালুম - - -।’
হামিম আবার বলে,‘আসো ওখান থেকে বের হয়ে আসো।’
বাঘ ছানাটা পুনরায় বলে, ‘হালুম - - -।’
‘কই আসো বের হয়ে আসো।’
বাঘ ছানাটা বের হয়ে আসে না। ওটা শুধু মাঝে মাঝে হালুম বলছে আর র্থর্থ করে কাঁপছে। হামিম জ্যান্ত বাঘ ছানাটার পা টেনে খাটের নিচ থেকে বের করল। এরপর পুতুলের মতো কোলে তুলতে গিয়ে ধপাস্ করে পড়ে গেল ফ্লোরে। তবুও সে ওটাকে কষ্ট করে কোলে নিয়ে বিছানার উপরে তুলল। এরপর ওটাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিল।বাঘ ছানাটার কাঁপুনি থামল না তবুও। র্থর্থ করে কাঁপতেই থাকল। আর মাঝে মাঝে হালুম - - - হালুম - - - বলতে থাকল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ বেশ মজার গল্প ! ভাল লাগল ! ভেট রেখে গেলাম ।
মোকাদ্দেস-এ- রাব্বী ধন্যবাদ কাজল দত্ত দাদা
দেবজ্যোতিকাজল ভাল হয়েছে ।ভোট রেখে গেলাম

২০ নভেম্বর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪