বিস্তৃর্ণ নীল আকাশের সূর্যটা লাল হয়ে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর স্তব্ধ হবে আকাশের রংধনু, স্বাধীন পাখিরা ফিরে যাবে নিজ
গৃহে। মাটির গন্ধ বুকে মেখে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে কৃষক লাঙ্গল কাঁধে
ফিরে যাচ্ছে ঘরে। নদীর ধারে আঁকাবাঁকা পথ মনে করিয়ে দেয় জীবননান্দ
দাস এর রূপসী বাংলার কথা। “আবার আসিব ফিরে/ ধানসিড়িঁ নদিটির
তীরে/ হয়ত মানুষ নয়/ শংকচিল শালিকের বেসে” এই সেই বাংলাদেশের
প্রতিচ্ছবি, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুফিয়া কামাল, জসীম উদ্দীন, লালনের
মতো হাজারো গীতি কবি, যারা ভালোবেসেছেন মা, মাটি ও দেশকে।
মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ইশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর সাতরিয়ে নদী পার
হয়েছিলেন। আর এই মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার জন্য ১৯৫২তে সালাম,
রফিক, সফিক, জব্বার, অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলেন। এটা বিশে^র জন্য
একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। আজ বিশ্বের মর্যাদার আসনে আসিন বাংলা
ভাষা। আর এই জন্মভূমি মা’কে রক্ষা করার জন্য ১৯৭১ সালে ৩০-লক্ষ
শহীদ জীবন দিয়েছিলেন। ৩-লাখ মা বোন হারিয়ে ছিলেন তাদের সম্ভ্রম।
অথচ আজ এই যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে, মা ও মাটির কথা কেউ ভাবে না।
সামান্য নিজের স্বার্থটুকুদেশের জন্য বিসর্জন দিতে পারে না। ইত্যাদি
নানা কথা ভাবতে ভাবতে লাল সুর্যটা পশ্চিম আকাশ থেকে লুকিয়েই
যাবে। ঠিক যেভাবে আমরা অন্যায় দেখলে উট পাখির মতো মাথাটাকে
লুকিয়ে ফেলি। যাই হোক প্রকৃতির নিয়ম সত্য এবং সুন্দর । মানুষের
নিয়ম স্বার্থের বন্ধন। নেমে এলো অন্ধকার। তবে বেশিক্ষণ নয় জ্যোৎ¯œায়
আলোয় আলোকিত করে আকাশে উদয় হলো চাঁদ। নদীর রূপ পাল্টে
গেলো। চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে নদীর পানি। সামনে বৈশাখ মাস
কখন আবার চাঁদ লুকিয়ে ঝড়বৃষ্টি শুরু হবে বলা যায় না। তরিঘড়ি করে
হাঁটছি বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। গ্রামে বাড়িতে বেড়াতে এসেছি প্রায় দেড়
যুগ পরে। শহরের যান্ত্রিক জীবন মানুষকে বড়ই নিষ্ঠুর করে তুলেছে। সেই
নিষ্ঠুরতা আমাকে গ্রাস করেছিল। আমি কোন কিছু বুঝবার আগেই
অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। নিজের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এতটাই
স্টান্ডবাই সংসার করেছি যে নিজের শেকড় নিজের অস্তিত্বের কথা ভুলে
গিয়েছি। সর্বদা নিজের স্ত্রী-সন্তানকে খুশি করা, আয় রোজগার করা
ইত্যাদি নিয়ে তাদের সুখ শান্তি জীবন গড়া ইত্যাদি নিয়ে বেশী ব্যাস্ত সময়
কাটিয়েছি। আজ বড়ই নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে নিজেকে। যা হোক ভাবতে
ভাবতে নদীর ধারে এঁকেবেঁকে বয়েচলা গাঁয়ের মেঠো পথ দিয়ে হাঁটছি।
সত্যই বিধাতা বড়ই সুন্দর করে এই জন্মভূমিকে সৃষ্টি করেছেন। ঠিক যেন
মায়ের আদর আর স্নেহমাখা জন্মভূমি। অথচ শহরের যান্ত্রিক
সভ্যতার মানুষগুলো বড়ই বিচিত্র জীবন যাপন করে, যারা দেশের
ভাগ্যবিধাতা তারা ক্ষমতা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। তারা দেশকে
ভালোবাসতে পারে না। তারা জন্মভূমিটাকে নিয়ে শুধু রাজনীতি করে।
আর নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করে কোটি কোটি টাকার ল্যান্ড ব্যবসার
ধান্ধা করে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য্য নীলাভূমিকে ধ্বংস করে তারা টাকার
পাহাড় গড়ার কাজে ব্যস্ত। রাতের অন্ধকার চলে নীলনকশার রাজনীতি।
ইত্যাদি নানা কথা ভাবছি আর হাঁটছি, অনেকটা সময় পার হয়ে যায়।
হঠাৎ অন্ধকার আকাশের চাঁদটি কোথাই যেন লুকিয়ে গেল। কালবৈশাখী
ঝড়ের আলামত অনেকটা আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ ব্যক্তিদের মতো
হরতাল আর অবরোধ। ঠিক তাই ঘটলো পথ হারিয়ে ফেলেছি। অন্ধকারে
আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কালো কুচকুচে অন্ধকার আর নদীর শোঁ শোঁ
বাতাস, শরীরে কম্পন ধরিয়ে দিল। শহরে যান্ত্রিক সভ্যতায় বড় হয়েছি
এই ধরনের পরিবেশ আমার কাছে নতুন। নদীতে নিবু নিবু বাতি জ্বালিয়ে
অনেকগুলো নৌকা এপাড় ওপার পাড়ি দিচ্ছে। কোন কোন মাঝি মনের
সুখে ভাটিয়ালি আর মুশির্দী গানের ঝংকার তুলছে। বড়ই সুন্দর, ভালো
লাগছে, গল্প কবিতায় পড়েছি কিন্তু আজ বাস্তবে দেখলাম। ভালো লাগলে
কি হবে মনে মনে ভয় লাগছে এই কালো ঘুটঘুটে অন্ধকারকে। রূপসী
বাংলার রূপসী চাঁদটি কোথায় হারিয়ে গেছে। এখন মনে হচ্ছে ঐ দূরের
রূপসী চাঁদটি আমার মা, যে আমাকে শৈশবে এমনটি করেই আলো
দিয়েছিল আমার পথচলায়। কিছু দূর এগুতেই নদীর শোঁ শোঁ বাতাস
আমার গায়ে লাগছে না। আমি এক বাঁশবাগানে মাঝে হারিয়ে গিয়েছি।
বাঁশবাগানের কটমট শব্দে কি যেনে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে। একঝাঁক বাঁশের
ধাপ্পাস ধাপ্পাস শব্দে চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু আমার চিৎকার কে শুনে।
দৌঁড়ে এঁকেবেঁকে কোন রকম বাঁশবাগান থেকে বের হলাম। সামনে বড়
একটি বিল। বিলের ধারে খোলা বড় জায়গা সেখানে একপাশে একটি
কুড়েঘর। চিনে ফেলেছি বিল আর বিল নেই গড়ে উঠেছে হাট বাজার।
একপাশের সেই কুড়েঘরটি ঠিকই আছে তবে তার ধরন পাল্টে পাকা ঘর
হয়েছে। কুড়েঘরের পাশে থাকা বিশাল আকৃতির বটগাছটি ঠিকই আছে,
শুধু বয়সের ভারে ঝুলে পড়েছে ডালপালাগুলো। আচমকা আরেকটা
বাতাসের ঝাঁপটায় গর্জে উঠলো আকাশ। মনের মাঝে খুব কনফিডেন্স বৃষ্টি
নামবে ১০০% শিউর। বৃষ্টিতে ভিজলে আমার খুব খারাপ হবে। ঠান্ডা
লাগলে আমার বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। একদিনের ঘটনা, তখন আমি ৮ম
শ্রেণীর ছাত্র। বর্ষাকাল মা আমাকে স্কুল থেকে নিতে এসেছে। ভুলে সেদিন
ছাতাটা বাসায় রেখে এসেছিল। মাঝপথে হঠাৎ বৃষ্টি নামল। মায়ের শাড়ীর
আঁচল দিয়ে আমাকে ডেকে ফেললো এতটুকু বৃষ্টির ফোঁটা আমার মাথার
উপর পড়তে দেয়নি মা। অথচ ‘মা’ বৃষ্টিতে ভিজে চুবচুব হয়ে গেছে।
বৃষ্টির ভিজার কারণে মা’কে দুদিন ধরে বিছানায় অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকতে
হয়েছে। শুধু বৃষ্টি নয় এতটুকু রৌদের খরতাপ আমার গায়ে লাগতে দিতে
না। পেপারের কাগজ, ছাতা, অথবা মায়ের হাতব্যাগ কিছুই না পেলে
শাড়ীর আঁচল দিয়ে সবসময় আমাকে রোদ থেকে রক্ষা করতো মা। আজ
আমি সব বুঝি, টাকা নামের যন্ত্রটা আর বউয়ের স্বার্থের ভালোবাসা আজ
আমাকে সবকিছুই বুঝতে বাধ্য করেছে। মায়ের গভীর মমতা আর ত্যাগের
কথা সব কিছুই খুব বেশী বেশী মনে পড়ছে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বৃষ্টির
আগমণ। ঝরঝরে বৃষ্টির ঝাঁপটায় শেষমেষ আমাকে ভিজিয়ে ছাড়লো।
তড়িঘড়ি সেই বয়স্ক বটবৃক্ষের নিচের বাড়িটার বারান্দায় আশ্রয় নিলাম।
তখন আমি সম্পূর্ন ভিজে গেছি। স্বপন চাচাকে চিৎকার করে ডাকছি ‘স্বপন
চাচা, ও স্বপন চাচা, কোথায় তুমি? কে শুনবে আমার ডাক ও বাড়িতে
কেউ থাকে না। স্বপন চাচা মারা গেছে তাও প্রায় দু‘বছর হলো। তার
ছেলেমেয়েরা এই বাড়িতে থাকে না। সবাই বিদেশে থাকে। তারা কেহই
এদেশে আসে না। তবে বিশাল এই বটবৃক্ষের নিচে ঘরটি ভীষণ ভংয়কর
মনে হচ্ছে। আমার খুব ভয় ভয় লাগছে। অথচ এই স্বপন চাচা
ছোটবেলায় কত রপকথার গল্প শুনিয়েছিল। আমরা যখন বাড়িতে বেড়াতে
আসতাম তখন স্বপন চাচা আমাদের পুকুরধারে মাছ ধরতে নিয়ে যেত।
মাছ ধরার ফাঁকে ফাঁকে এই সব রুপকথার গল্প শুনাতো। এখান থেকে
বাড়ি অনেক দূর। পাশের গ্রামে মেম্বার বাড়ি পাড়ি দিয়ে, আমাদের বাড়ি।
বাড়িতে যেতে হবে। ‘মা’ আমার পথ চেয়ে বসে আছে, হয়তো বৃষ্টিতে
ভিজে আমাকে খুঁজতে বেরিয়েছে। বৃষ্টি না থামলে কিভাবে যাব! বৃষ্টির
তীব্রতা আরো বেড়ে গেলো কালবৈশাখী ঝড়ের ঝাঁপটায় বাতাস বইতে
লাগলো। আমি আরেকটু আড়াল হতেই রুমের দরজাখুলো গেল। ভয়ে
চমকে গেলাম। থমকে গিয়ে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি। অনেকটা চেনা
চেনা মনে হচ্ছে। বয়সের ভারে গায়ে চামড়ায় গুটি গুটি ভাঁজ পড়ে গেছে।
আমাকে বলল- বাবা কে তুমি? কন্ঠ শুনে চিনে ফেললাম চাচীমা। উত্তরে
বললাম চাচীমা আমি, বশির আহমেদ। ও বশির তুই কেমন আছিস বাবা।
আমি চোখে ভালো দেখতে পাই না। একলা একলা এই বাড়িতে থাকতে
থাকতে কেমন যেনো ভুতুড়ে হয়ে গেছি বাবা। আমার ছেলেমেয়েরা মাঝে
মাঝে ৪/৫ বছর পরপর আসে। বলতে না বলতে কেঁদে ফেললেন চাচীঁমা,
খক্ খক্ করে কাশিঁ দিচ্ছেন আর কাঁদছেন। আসুখে বিসুখে চাচীঁমা কেমন
হয়ে গেছে ভাবতে অবাক লাগছে। যে চাচীঁমা আমাদের দাদা-দাদী
পরিবারের সবাইকে দেখাশুনা করতো অথচ আজ কি অবস্থা হয়েছে।
ঘরের ভেতর থেকে দেখাশুনা করার দায়িত্বে থাকা একজন মহিলা তাকে
ঘরের ভেতর নিয়ে শুইয়ে দেয়। চাচীঁর মতো আমার ‘মা’ ও বৃদ্ধ হয়ে
গেছে। আগের মাতো ভালো করে চোখে দেখতে পায় না। ঠিকঠাক মতো
হাঁটা-চলা করতে পারে না। লাঠি ভর করে হাঁটে। ঠিকমতো হাঁটতে পারে
না চোখেও ভালো দেখতে পায় না তবুও মা যেন আমাদেরকে নিয়ে
সারাদিন ব্যস্ত থাকে। এটা সেটা এনে খাওয়ানোর জন্য। সেই ছোট
বেলায় আমাদের যেভাবে খাওয়াতো। আয়োজনের কোন কমতি নেই। মা
যতটা সম্ভব ততটা আমাদের জন্য করবেই। মনে পড়ে যখন স্কুল শেষ
করে কলেজে আসি তখন রাত জেগে জেগে ক্লাসের বই পড়তাম। তখন
মা আমাদের পাশে বসে থাকতো। শীতের রাত আমাদেরকে সুন্দর করে
কাথা লেপ দিয়ে গুটিশুটি করে ঢেকে দিত। আমরা আরাম করে পড়াশুনা
করতাম। কিন্তু একদিন খেয়াল করলাম ‘মা’ শীতে থরথর করে কাঁপছে।
মা’কে জিজ্ঞাসা করলাম ‘মা’ তুমি কাঁপছো কেন? সেদিন মা কোন উত্তর
দেইনি। আজ বুঝেছি। আমার বাবা খুব সাধারণ আয়ের মানুষ ছিলেন।
মাকে গরম কাপড় কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না বাবার। আমাদের
পরিবারে আমরা সাত ভাই বোন। আমার মা আমাদের কখনও অভাব
বুঝতে দেই নাই। একদিন রাতের খাবার খেতে দেরী হচ্ছিল, মা বার বার
আমাদের সান্ত¡না দিয়ে বলছিল- আজ রান্না দেরি হচ্ছে। রান্নার চাউলগুলো
খুব পুরনো তাই সিদ্ধ হতে একটু দেরি হবে। তোরা ঘুমিয়ে পড়, রান্না
হলো তোদের ঢেকে দেব। আমরা খিদে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন
সকাল হতেই বাবা বাজার করে বাসায় ফেরে। মা আমাদের তড়িঘড়ি করে
রান্না করে খাওয়ালো। আজ মনে পড়ে সেদিন ঘরে বাজার-সদাই ছিল না,
মা সান্ত¡না দেওয়ার জন্য গরম পানি চুলোয় দিয়ে রেখেছিল। আমরা না
খেয়ে ঘুমিয়েছি বলে ‘মা’ সারারাত কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছে। আজ
আমরা ৭ ভাই বোন সবাই অনেক বড় হয়েছি। অথচ অর্থের বিলাসিতায়
ভাসছে আমাদের ভাই-বোনদের আয়েশী জীবন। সবাই প্রয়োজনের
তাগিতে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা বসবাস করছে। বিচিত্র এই দুনিয়া রীতিনীতি
এখন আর একসাথে কেউ নেই।
চাচীঁমা‘র কথা ভাবতে অবাক লাগছে বৃদ্ধ বয়সে তাকে একাকিত্¦
জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এই বিশাল পৃথিবীর কাছে আজ চাচীঁমা বড়
অসহায়। ঘরের ভেতর যেয়ে চাচীঁমাকে পা ধরে সালাম করে নিলাম।
চাচীঁমা তখনও গো গো করে কাশি দিচ্ছে, আমার সাথে অনেক কথা বলার
ছিল হয়ত, কিন্তু বলতে পারছে না, শরীর অসুস্থতার জন্য।
“চাচীঁমা আমি আসি” পরে আবার আসবো, বাহিরে ঝড় কিছুটা কমে
গেছে। হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। আমি যেতে পারব। বলেই আমি চলে আসি।
পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম চাচীঁমা নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
আমার চলে যাওয়ার দিকে। আমার চোখের কোণাবেয়ে পানি জমলেও
কিছু করার নেই। যেভাবেই হোক আমাকে যেতে হচ্ছে, মা হয়ত এতক্ষণ
আমাকে খুঁজতে বেরিয়েছে। বৃদ্ধ মা এই বৃষ্টির মধ্যে আমাকে খুঁজে
বেড়ালে অসুস্থ হয়ে পড়ব। তড়িঘড়ি বের হয়ে পড়লাম। বাহিরে হালকা
বৃষ্টি হচ্ছে। মাঠের কোল ঘেষে পাশেই বিশাল পুরাতন জ্বরাজীর্ণ খাল।
আমি তড়িঘড়ি হাঁটছি আর বৃষ্টিতে ভিজছি। হঠাৎ বৃষ্টির বেগ আবারও
বেড়ে গেল। দৌঁড়ে একটু সামনে যেতেই রমিজ মামার দোকান।
দোকানটি বন্ধ। রমিজমামা মারা গিয়েছে তাও বছর তিনেক হবে।
দোকানটি পাশঘেষে পাশেই একটি কুড়েঘর সেখানে মাঝে মাঝে বাউল
গানের আড্ডা হয়। নবান্নের উৎসবের সময় গ্রামের কৃষক লাঙ্গল কাঁধে,
মাঝি, মাল্লা সবাই এখানে বাউল আর মুর্শিদি গানের রমরমা আড্ডা
জমায়। আজ এখানে কেউ নেই। খাঁ খাঁ অন্ধকার চারিদিক। ভূতুড়ে ভয়
আমাকে গ্রাস করছে। বৃষ্টিতে ভিজবার কারণে শরীরে শীত ধরে গেছে।
কিন্তু আমাকে যেতে হবে মা আমাকে খুঁজছে। যেমন ভাবা তেমন কাজ।
বৃষ্টিতে ভিজে রওনা হলাম কিছুদূর এগুতেই পেছন থেকে একজন আমাকে
বলল- খোকা বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন? তোর বুকে ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
পেছন ফিরে তাকালাম দেখলাম এক হাতে একটি নিবু নিবু বাতি অন্য
হাতে ছাতা নিয়ে আমাকে ডাকছে। সে আর কেউ নয় আমার মা। এই
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী শুদ্ধ এবং মধুর একটি নাম মা। বৃদ্ধ মা লাঠি ভর
করেও ঠিকমতো হাঁটতে পারে না অথচ এই বৃষ্টির মাঝে আমাকে নিতে
এসেছে। মা আমার মাথার উপর ছাতাটা দিয়ে বলল, চল বাড়িতে, এত
দেরি করলি কেন? মায়ের হাতে নিবু নিবু হারিকেনের বাতিটি। তাকিয়ে
দেখি মা বৃষ্টিতে ভিজছে। ছাতাটা শুধু আমার মাথার উপর। মা’কে
অনুরোধ করলাম। মা বলল, খোকা আমার কিছু হবে না, তুই বাড়ি চল।
পুরাতন ভাঙ্গাচোরা একটি বাড়ি। মা এখানে একলা থাকেন, বাড়ি ফিরতেই
মা একটি পুরাতন তোয়ালে দিয়ে আমার শরীর মুছে দিয়ে বলে, বাবা ঠান্ডা
লাগলে তো তোর বুকে ব্যথা করে আমি জানি, যাই সরিষার তৈল নিয়ে
আসি তোর বুকে মলিশ করে দেই। মা চোখে ভালো দেখে না তবুও এদিক
সেদিক খেয়াল করে অনেক কিছু রান্না করেছে। বয়সের ভারে মা শুকিয়ে
গেছে, চামড়া ভাজ পড়ে জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে এই বয়সে আমার জন্য
এতকিছু রান্না করেছে মা! কতই না কষ্ট হয়েছে মা’র। গরমভাত, পুটি
মাছের জোল আমার খুব পছন্দের। খুব মজা করে খেয়ে শুয়ে পড়ি।
পরেরদিন পরিস্কার সকাল, চারিদিক পাখিদের কলকাকলি। কে যেন
আমাকে ডাকছে! বাবা ও বাবা তুমি ওঠো, এভাবে ছাদে শুয়ে ছিলে কেন?
তুমি আম্মুর সাথে ঝগড়া করে কোথায় গিয়েছিলে? আমি তোমাকে কাল
সারা বাড়িতে খুঁজেছি। চোখ মেলতেই জেগে উঠে দেখি আমার মেয়ে
জয়িতা আমাকে ডাকছে। আমি বাড়ির ছাদের উপর আছি। আমার
মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললাম- আম্মু, আজ আমার মা তোমার দাদুমনিকে
স্বপ্ন দেখলাম। মা মারা গিয়েছে প্রায়ই পাচঁবছর হবে। পৃথিবীর সবকিছুই
ঠিকঠাক মতো আছে, কিন্তু আমার মা নেই কেন...?
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
জননী ও জন্মভূমির গল্প
১৮ নভেম্বর - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
২৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪