101 টি ভালোবাসার পদ্ম

ডিজিটাল ভালবাসা (নভেম্বর ২০২১)

জসিম উদ্দিন জয়
মোট ভোট প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.৮৮
  • ১২৪
যে মেয়েদের চোখের পাপড়ি মিটমিট করে করে জ্বলে রাতের তারার মতো। বাঁকা ঠোঁটে দুষ্টুহাসি। পিংক কালারের গাড় লিপিষ্টিক পরে। এরা সুন্দর করে কথা বলে। কিন্তু কথাগুলোর মাঝে ৯৯/৯৯ পারসেন্ট মিথ্যে কথা বলে। কথাগুলো কখনও বিশ্বাস করবি না। তখন পড়ন্ত বিকেল, পিস ঢালাইয়ের একটি নতুন রাস্তার একপাশে বসে নাদের আলীকে কথাগুলো বলছিল রাজ। রাজ এর ঠোঁটে তখন জ¦লন্ত সিগারেট জলছিল। সিগারেটের শেষ সুখটান দিয়ে আকাশপানে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বলল- এই পৃথিবীতে মেয়েদের ভালো না বেসে, একটি কুকুরকে ভালোবাসা উচিত। সে তোর সাথে মিথ্যা কথা বলবে না। ওহ ভালো কথা তুই জানিস মেয়েরা সবচেয়ে বেশি মিথ্যে অভিনয় করতে পারে। রাজের কথা শুনে নাদের আলী হোঃ হোঃ করে হেসে উঠে বলে তুই কিভাবে জানিস? রাজ- কেন, জি-বাংলা, ষ্টার জলসা, জি সিনেমা ইত্যাদি দেখিস না। মেয়েরা কত জটিল প্রকৃতির হয়। তারা যখন কথা বলে তুই বুঝবি না, কোনটা সঠিক কোনটি বেঠিক। নাদের আলী রাজের কথা শুনে এবার কিছুটা বিচলিত। রাজকে প্রশ্নকরে- তুই এত কিছু থাকতে হঠাৎ মেয়েদের বদনাম করছিস কেন?...ছ্যাকা খেয়েছিস নাকি...? রাজ ইজিলি বলে ছ্যাকা না দোস্ত, আস্ত একটা ধোকা খেয়েছি? কিভাবে?
ঃ রাজ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। হাতের ল্যাপটপটি ওপেন করে। রাস্তার ধারে ফুটপাতে বসে পড়ে। তখন পড়ন্ত বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। রাস্তায় ল্যাম্বপোষ্ট এর হলুদ বাতিগুলো এক এক করে জ্বলে উঠে...। রাস্তার পাশে রাজ ও নাদের আলীর মতো আরো অনেকেই বসে আছে। আশেপাশে ছেলে ও মেয়েদের গল্পও জমে উঠেছে বেশ। রাজের আজ কি যেন হয়েছে। কোন মেয়েদেরই সহ্য করতে পারছে না। যাকে দেখছে তাকেই নিয়ে আবোল-তাবোল বকছে। তবে খুব আড়ালে ও সাবধানে। নাদের আলী আবারও উৎকন্ঠা নিয়ে বলে, কি রে বলছিস না কেন? রাজ আবারও বিদঘুটে দৃষ্টিতে ল্যাপটপটার দিকে তাকিয়ে ফেইসবুক ওপেন করে। একটি ছবি দেখালো। নাদের আলী ছবিটি দেখে অবাক, বাহ্ কি সুন্দর! রাজের দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত অবাক কন্ঠে বলল, নিষ্পাপ মেয়েটি কে?
রাজ- কচু এটা নিষ্পাপ মেয়ে না। ডায়েনী, পাপী। অপেক্ষা কর, ওর ভিডিও ফাইলটি দেখাচ্ছি? ভিডিও ফাইলটি দেখছিল নাদের আলী। রাজ তখন ভিডিও ক্লিপটির দিকে টপ আঙ্গুল দেখিয়ে বলে, দেখছিস না, ওই
মেয়েটি কি সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করে। কি সুন্দর করে কথা বলে। জানিস ও যখন কবিতা আবৃত্তি করে ও কথা বলে আমি কেমন যেন হয়ে যাই। ওই মেয়েটি আমার আত্তার সাথে মিশে যায়। আমি মেয়েটি আজানা একটি স্পর্শ, ঘ্রাণ, সবই পায়। সত্যিই মেয়েটি নিষ্পাপ। বলতে বলতে রাজ এর চোখের গড়িয়ে জল পড়তে থাকে। তাৎক্ষণিক চোখের পানি মুছে ফেলে রাজ। মূহুর্তে চেহারাটা পাল্টে ফেলে রাজ। অগ্নিকন্ঠে বলতে থাকে, দেখছিস ওর চোখ দুটি কিভাবে রাতের তারার মতো মিট মিট করে। ও খুব মিথ্যে বলে। মিথ্যেবাদী। দেখছিস না ওর বাঁকা ঠোঁটে দুষ্টুমি কিভাবে
৩৫ ৩৬
খেলা করে। রাজের কথাগুলো নাদের আলী মনোযোগ সহকারে শুনছে আর ভাবছে, রাজ কি পাগল হয়ে গেলো! নাকি মারাত্মক ছ্যাকা খেয়েছে। এখন কিভাবে সামলাবো তাকে। তাছাড়া রাজ একটি প্রতিভাবান ও চমৎকার ছেলে। তার কিছু হয়ে গেলে মহাবিপদ। আমাদের সংগঠনের বারোটা বাজবে। নাদের আলী রাজকে শান্ত করার জন্য বলল- তুই এই মেয়ের ছবিযুক্ত ফেইসবুক আইডি কোথায় পাইলি। এই ফেইসবুক আইডিটা তো ফেক আইডিও হতে পারে। তুই জানিস না আজাকাল মেয়েদের ছবি ব্যবহার করে ফাজিল ছেলেরা ফেক আইডি বানিয়ে থাকে। মেয়েদের ছবি ও নাম ব্যবহার করে অনেকের সাথে প্রতারণা করে। নাদের আলীর কথাগুলো রাজ বিন্দুমাত্র কর্নপাত করলো না। সে সোজা কথা জানিয়ে দিলো, দুনিয়া মিথ্যে হতে পারে তার এই আইডি মিথ্যে না। মেয়েটিই তার জীবনের সব, সাফ কথা বলে দিল, যদি এই আইডি মিথ্যে প্রমাণিত হয় তবে সে এক্ষুণিই গাড়ীর নিচে ঝাঁপ দিবে। সে এই দুনিয়া থেকে চলে যাবে। আর কোনদিনও, এই মিথ্যে দুনিয়াতে ফিরে আসবে না।
নদের আলী রাজের এই উদ্ভুট আচরনে অবাক হচ্ছে। রাজ সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেলো কি না! নাদের আলী ভাবছে, এখন যদি সে গাড়ির নিচে ঝাঁপ দেয় তাহলে মহা বিপদ। সবাই ভাববে আমি তাকে গাড়ি নিচে ধাক্কা মেয়ে ফেলে দিয়েছি। নাদের আলী মনে মনে ভয় পেতে লাগলো। সে রাজের বা হাতটি জোরে চেপে ধরলো। রাজ নাদের আলীর হাতটিকে এক ঝাঁকি দিয়ে ফেলে দিয়ে বলতে থাকে,
- তুই কি ভাবছিস আমি সত্যি সত্যি গাড়ির নিচে ঝাঁপ দিব। কোনদিনও না। কখনও না। আমি ঐ মেয়েটি মানে আমার শতরূপাকে না দেখে কোনদিনও গাড়ির নিচে ঝাঁপ দিব না। আমি আগে বা¯Íেব ঐ মেয়েটি, মানে আমার শতরূপাকে দেখব। দু-নয়ন ভরে। যতক্ষণ না আমার মনের তৃষ্ণা মিটবে, ততক্ষণ আমি তাকে দেখবো” বলেই হোঃ হোঃ করে হেসে
উঠে ।
অদ্ভুত রাজের হাসি। যে মেয়েটির জন্য সে সমস্ত মেয়েদের আবোলতাবোল বকাঝকা করছে। সে মেয়েটিকে আবার অন্ধের মতো ভালোবাসার কথা বলছে। ব্যাপারটি সত্যি সত্যি মনে হয় পাগলামি। নাদের আলী ১০০% সিউর, রাজ পাগল হয়ে গেছে। নাদের আলী রাজকে শান্ত করার জন্য এবং পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় ঘুরানোর জন্য বলল- দেখি, দেখি তোর ফেইসবুক একাউন্ডে কতজন বন্ধু আছে। ফেন্ড্র লিস্টে কতজন আছে। জানিস আমার প্রায় সাড়ে চার হাজার ফ্রেন্ড আছে। বুক ফুলিয়ে গর্ব করে কথাগুলো বলছিলে নাদের আলী। তখন রাজ চুপচাপ কি যেন ভাবছে। তার অহংকার করার মতো এতো ফ্রেন্ড নেই। নাদের আলী খুবই কৌতুহল নিয়ে রাজকে বার বার প্রশ্ন করছে আর বলছে, কই দেখা তোর ফেন্ড্র লিস্ট কতজন আছে...? রাজ আবার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে। একজন। আমার একজন বন্ধু আছে। নাদের আলী অহংকার এবার আরো বেড়ে গেল। নাদের আলী বলে ফেলে নিশ্চয়ই আমি। আমিই তোর একজন ভালো বন্ধু। তাই না তুই আমাকে এ কথাটা বলছিস। রাজ আবার নাদের আলীর কথায় হেসে উঠে বলে...‘না’। আমি বলেছি আমার একজন ফেন্ড্রলিষ্টে মাত্র একজন ফেন্ড্র আছে। তুই দেখ বলেই রাজ ল্যাপটপে দেখালো, সত্যিই তো মাত্র একজন তার ফেন্ড্রলিষ্টে আর সে আইডিটি হলো তার ফ্রেন্ড শতরূপা। নাদের আলী অবাক হলো। মাত্র একজন তার ফেন্ড্রলিষ্টে। আর সেটা ঐ মেয়েটি। নাদের আলী ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছে আর মাথা চুলকাচ্ছে। কি ঘটতে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। রাজ তার ল্যাপটপটা দেখালো নাদের আলীকে। তার সম্পূর্ণ ফেইসবুক দেয়াল জুড়ে বিভিন্ন পদ্মফুলে ছবি। মনে হয় পৃথিবীর সেরা সেরা পদ্ম। এত পদ্মফুলের কালেকশন সে কখনো দেখেনি। কিন্তু প্রত্যেকটি পদ্মে ইতিহাস তারিখ দেওয়া আছে। তার একপাশে একটি করে ছোট ভালোবাসার গল্প লেখা আছে। অবাক, সংগ্রহ করা সেই ভালোবাসার গল্প। রাজ নাদের আলীকে যে কোন একটি গল্প পড়তে বলল। নাদের আলী তার শেষ গল্পটি পড়ছিল। নাদের আলী যে গল্পটি পরছিলো গভীর মনোযোগ সহকারে।
(....রাজ কিছুক্ষণ পর পর আকাশপানে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলছে আর বক বক করে বলছে ...কথা ছিলো শতরূপা আমার আকাশ হবে আর আমি মাটি হবো। আমরা দুইজন মিলে একটি দিগন্ত রচনা করবো। সব মিথ্যে, সব মিথ্যে, মেয়েদের সবকিছুই অভিনয়। ওরা
প্রতারক)

নাদের আলী গল্পটি পড়ার আগে, ব্লগ পেইজটি ভালো করে দেখে নিলো। চমৎকার। গল্পটি একপাশে একটি নীলপদ্ম। তাদের লেখা এটাই তার জীবনের শেষ সংগ্রহ করা পদ্ম। ১০০ নম্বর পদ্ম। পূর্বে আরো ৯৯টি পদ্ম পাঠিয়েছিল এবং সাথে একটি করে ভালোবাসার গল্প। মানে ৯৯ টি ভালোবাসার গল্প। এই্ গল্পটি ও তার শেষ গল্প। গল্পটিতে যা লিখা ছিলো....
৩৭ ৩৮
- রাজ তোমার জন্য আমার এই শেষ গল্পটি। জানিনা গল্পটি পড়ে তুমি কিছু বুঝতে পারবে কি না। তবে গল্পটি শেষের অংশ হয়ত আমাদের জীবনের সাথে মিলে যেতে পারে। গল্পের নায়ক ছেলেটি একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। কাজ করে ডেভেলোপমেন্ট একটি কোম্পানীতে। অফিসে তার অনেক বন্ধু ছিল কিন্তু বিশেষ বলতে তেমন কেউ ছিল না। তবে একজন নারী সহকর্মীর সাথে তার ভাল বন্ধুত্ব ছিল। তারা একত্রে কাজ করতো। একে অন্যের বোঝাপড়াও ছিল চমৎকার। মেয়েটি খুবই ভাল, দায়িত্বশীল এবং সহজেই ছেলেটিকে বুঝতে পারতো। কিন্তু কেউ কখনো নিজেদের মধ্যে একে অন্যের প্রতি প্রেম অনুভব করেনি।
একসময় কোন কারণে ছেলেটির মনে শূন্যতা ভর করে। মেয়েটিও তাকে সেই একাকিত্বকে অনুভব করে। মেয়েটি তার প্রতি আরো যত্ন শীল হয়ে উঠে। ছেলেটি একসময় অনুভব করলো সে সম্ভবত মেয়েটিকে ভালবাসে। কি মেয়েটির সরলতা আর স্নিগ্ধতা কাছে সে প্রেমের কথা বলতে পারলো না। কারণ সে দেখেছে দুজনের এই আন্তরিক সম্পর্ক যেন প্রেমের চাইতেও বেশী।
এভাবেই চলে যাচ্ছিল দিন। কি ছেলেটির মনে সংশয় দেখা দিতে লাগল। যদি তাকে প্রেমের কথা বলা না হয়। আর যদি সে কোনদিন হারিয়ে যায় তাহলে সে তার একজন প্রিয় মানুষকে হারাবে। আবারো মনকে বুঝানোর চেষ্টা করে। সে তো এমনিতেই তার অনেক ভাল বন্ধু। এর চেয়ে ভাল কিছুই হয় না। কিন্তু প্রেম চাইতে গেলে তো সবচেয়ে ভালো বন্ধুকে হারাতে হবে। অনেক ভেবেচিন্তে সে নিজের সাথে পেরে উঠলো না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল যে করেই হোক মেয়েটিকে জানাতে হবে। প্রেম শুধু কাছে কাছে থাকার বাহানা মাত্র। সে ভেবেই নিল এই বন্ধুত্বই চিরকাল থাকবে। পরদিন সে মেয়েটিকে লং ড্রাইভে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো। মেয়েটিও রাজি হয়ে গেল। যাওয়ার আগে সে মেয়েটির উদ্দেশে একটি চিঠি লিখলো এবং একটি গোলাপ কিনে নিল। চিঠি এবং গোলাপটি সে তার জেকেটের পকেটে রেখে দিল। গাড়ি তখন শহর ছাড়িয়ে শহরতলির দিকে ছুটছে। গাড়িটি যখন দ্রুত গতিতে ছুটছে সে তখন মেয়েটিকে বলল,
-আমার জ্যকেটের পকেটে হাত দাও। যা আছে সেগুলো তোমার। মেয়েটি পকেটে একটি লাল গোলাপ এবং একটি চিরকুট খুঁজে পেল। গোলাপ দেখে মেয়েটির ঠোঁটের কোনে স্নিগ্ধ হাসি ফুটে উঠলো।
মেয়েটি চিঠি খুলতে শুরু করলো, ঠিক তখন একটি বিকটশব্দ শুনতে পেল
এবং এরপর কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সে অজ্ঞান হয়ে গেল। জ্ঞান ফেরার পর সে জানতে পারলো একটি লরি তাদের গাড়িটিকে পাশ থেকে ধাক্কা দিয়েছে এবং ছেলেটি ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। সে এত কষ্ট পেল, যে পূনরায় অজ্ঞান হয়ে গেল। মেয়েটি আবিস্কার করলো সেই চিরকুটটি এখনো তারা হাতের মুঠোয় আছে। কম্পিত হ¯ে Íচিঠি খুলে পড়তে শুরু করলো। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি প্রিয়। যদি তুমি আমাকে ভালো না বাসো এই পথেই যেন আমার মৃত্যু হয়। আমি এখানেই মরে যাবো। মেয়েটির চোখের কোণ বেয়ে জল নেমে
গেল। তার মানে সে পৃথিবীতে সম্পুর্ণ একা হয়ে গেল।

মেয়েটি নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করল। সে ধরেই নিল যদি সে ছেলেটিকে ভালোবাসতো তাহলে হয়ত ছেলেটি বেঁচে যেত। মেয়েটির জীবনে এত বড় অপরাধবোধ তৈরী হবে সে নিজেও ভাবতে পারেনি। সে মনের অজান্তেই বলে উঠল, আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি প্রিয়। তুমি কেন আগে বলো নি তাহলে তো আমিও তোমাকে হারাতাম না আর আমাকেও এত কষ্ট পেতে হতো না।
এখনো মেয়েটি রাতে ঠিক মত ঘুমাতে পাওে না। প্রতিরাতেই ঘুমের ঘোরে ছেলেটি এসে হাজির হয়। আর বলে, -প্রিয়, আমি এখনো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি ভালোবাস আর নাই বাসো তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। তুমি আমাকে গ্রহণ করো আর নাই করো তাতেও আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি জানি আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। বিদেশী গল্পের বাংলা ভাবানুবাদ এই গল্পটি আজ তোমার জন্য। এই অনুবাদ গল্পটির মতোই আমার ভালোবাসা তোমার জন্য। পাঠালাম এটাই আমার শেষ গল্প। আর আমার হাতে রয়েছে ১টি পদ্ম। যার নম্বর ১০১। আর এই ১টি জীবন্ত পদ্ম নিয়ে তোমার সাথে দেখা করবো। তুমি বলেছিলে তোমার পছন্দের রঙ নীল। আমি সেই নীল শাড়ী পরবো। রাজ মনে রেখ বেদনার রং কিš‘ নীল। সেটা জেনেও আমি নীল শাড়ী পরবো। আমি যেখানে আছি সেখানে অর্থ প্রাযুজ্য চাকচিক্যে ভরপুর। নেই শুধু ভালোবাসা। চারদেয়ালে মৌলবাদ এর শিঁকল আমাকে আটকে রেখেছে। জানিনা তোমার কাছে পৌঁছাতে পারবো কিনা। তবে আমার আত্মা তোমার
৩৯ ৪০
কাছে পৌঁছে যাবে।
নাদের আলী গল্পটি পড়ছে গভীর মনোযোগ সহকারে। ল্যাপটপের স্কীন আর নাদের আলীর চোখ একাকিত্ব হয়ে গেছে। নাদের আলী গল্পটি পড়ছে। নাদের আলীর চোখ বেয়ে অঝরে পানি পাড়ছে। কি ঘটতে যাচ্ছে নাদের আলী কিছুই বুঝতে পারছে না। শুধু বুঝতে পারলো কিছু একটা হৃদয় বিদায়ক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। রাজ তখন তার সিগারেট এর প্যাকেট থেকে আরেকটি সিগারেট ধরালো। সম্ভবত এটাই প্যাকেটের শেষ সিগারেট। একটানে সিগারেটের অর্ধেকটা শেষ করে অনেকগুলো ধোয়া ছেড়ে নাদের আলী কে বলল, আজ সারাদিন আমি কিছুই খায় নাই। খেতে পারছি না। বুকের ভেতরে শুধু দাউদাউ করে আগুন জ¦লছে। এই আগুনে শুধু আমি একাই পুড়ছি। কাউকে পুড়ে মারতে পারছি না। ইচ্ছে করছে ঐ শতরূপাকে আগুনে পুড়ে মারি। আবার বলে উঠে আমি এখন কি করব বলে দেও নাদের আলী, ও একটা প্রতারক
ঠকবাজ।

নাদের আলী তখনও গল্পটির উপর আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে । সে রাজের কোন কথাই কর্ণপাত না করে বলল, -মেয়েটি এখন কোথায়? মানে তোর শতরূপা কোথায়?
তোর সাথে দেখা করে নাই? মেয়েটির বাসায় কোথায়? পুরো বিষয়টি আমাকে খুলে বল? রাজ অন্য দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘনিশ^াস ফেলে বলে, বলে আর কি হবে? সে একটা ঠকবাজ, একজন পাকা খেলোয়াড়, মানুষের হৃদয় নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ওস্তাদ উত্তরায় থাকে, মেয়েটির অল্প বয়েসে বিয়ে হয়ে যায়। মেয়েটির ¯া^মী অনেক বয়স্ক ও অনেক টাকার মালিক কিন্তু ফতোয়াবাজ। ইসলামের বিভিন্ন ফাতোয়া দিয়ে মেয়েটিকে ঘরে বন্দি করে রাখে। কোথাও বের হতে দেয় না। লোকটার অনেক শিষ্য আছে। তারা সবসময় তাকে নজরবন্দি করে রাখে। এমনকি ঘরে ডিস টেলিভিশনও দেখতে দেয় না। মেয়েটির সাথে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়, নাদের আলী বলল। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল, তোর সাথে পরিচয় কিভাবে?
৪১ ৪২
সে আমাদের সংগঠনের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য টাকা পাঠিয়েছিল, বিকাশের মাধ্যমে। সে টাকা দিয়ে আমরা চক পেন্সিল ব্ল্যাকবোর্ড আদশর্লিপির বই ইত্যাদি কিনেছিলাম। সেই মেয়েটি। নাদের আলী তার আদর্শের কথা শুনেছিল অনেক আগে। কিন্তু এটাই সেই মেয়ে সে বুঝ উঠতে পারেনি। নাদের আলীর মমত্ববোধ আরো বেড়ে গেল। রাজ পট পট করে বলতে থাকে- কথা ছিল ও আসবে, খুব ভোরে... সবুজ শ্যামল পার্কে... আমাদের একসাথে ভোর বেলায় দেখা হবে। আমরা শিশির ভেজা দুর্বা ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটবো। খুব মজা হবে। ওর হাতে থাকবে একটি জীবন্ত নীল পদ্ম। পরনে থাকবে নীল শাড়ী। রাজের মনটা ভীষণ ভার করে বলল - ও আসে নাই। আমি সারারাত একটুও ঘুমাই নাই। বাসায়ও ফিরি নাই রাতে। সারা রাত বাহিরে ছিলাম। বিশ^াস কর। নাদের বলল : সারারাত কি করেছিস? রাজ : ঐ পার্কে বসেছিলাম। মশার কামড় খেয়েছি কিন্তু ঘুমাই নাই। ও যদি এসে আমাকে না পেয়ে ফিরে যায়। নাদের আলী হোঃ হোঃ করে হেসে উঠে। মনে মনে ঘটনাটাকে শ্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারছে না। একটা সুন্দর সলিউশন খোঁজার চেষ্টা করছে। তখন প্রায় রাত্রী ১০টা। নাদের আলী রাজকে বলল, রাজ তুই বাসায় ফিরে যা। আমি সম্পুর্ণ ঘঁটনাটি দেখছি। কথা দিচ্ছি তোর শতরুপাকে তোর সাথে ফিরিয়ে দিব। তার জন্য যা যা করা লাগে আমি তাই করব। তবে আমি এতটুকু বুঝতে পারছি সে একটা মিথ্যাবাদি ভন্ড প্রতারকদের জালে আটকিয়ে আছে ও। সেখান থেকে সে বেরুতে পারছে না। আমি প্রয়োজনে আমার যতটুকু শক্তি সামর্থ্য আছে তাই দিয়ে তোর শতরুপাকে বের করে নিয়ে আসব। রাজ মুগ্ধ বিস্ময়ে একটা আশা নিয়ে নাদের আলী কথাগুলো শুনছিল। সে নাদের আলীর কথায় অনেকটা সান্ত¡না পাচ্ছে কিন্তু হৃদয়ের মাঝে একটা অপ্রাপ্তি তাকে বয়ে বেড়াচ্ছে। হৃদয়ে আগুন লাগলে, সেই আগুন কেউ দেখে না। রাজ তবু নাদের আলীর কথা বিশ্বাস করলো। এবং শতরুপা সাথে তার দেখা হবে। নাদের আলীকে বলল। নাদের আলী আমি ওর জন্য ১০০টি গোলাপ কিনেছিলাম। সবগুলো গোলাপ পানিতে ফেলে দিয়েছি। যাই এক্ষুণিই আবার গোলাপগুলো কিনে নিয়ে আসি। জলদি যাই নইলে দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। শতরুপা আসবে। শতরুপা আসলে আমি তাকে ফুল দিতে পারব না। রাজের ল্যাপটপটি নাদের আলীর কাছে দিয়ে বলল, তোর কাছে ল্যাপটপটি রাখ। এই ল্যাপটপে শতরুপার ঠিকানা হতে শুরু করে সব কিছুই আছে। তুই আমাকে কথা দিয়েছিস শতরুপাকে আমার কাছে নিয়ে আসবি। নাদের আলী রাজের ল্যাপটপটি বুঝে নিলো। জলদি যাই নইলে দোকান বন্ধ হয়ে যাবে, বলেই রাজ শো...শো... বেগে একটি রিকসা নিয়ে চলে গেল। নাদের আলী ও একটি রিকশা করে বাসায় ফিরে যাচ্ছে, তখন রাত ১১টা। নাদের আলী টিভি চ্যালেনে সংবাদ দেখছে আর ভাবছে রাজের কথাগুলো। শতরুপাকে কিভাবে রাজের কাছে নিয়ে আসা যায়। রাজকে সে কথা দিয়েছে। একঝাঁক হতাশা ভর করছে নাদের আলীর মাঝে। হতাশা নিয়ে টিভিতে সংবাদ দেখছে হঠাৎ একটি চ্যানেলে একটি সংবাদ দেখে চমকে উঠল নাদের আলী। এক্সক্লুসিভ নিউজ...। বুকের ভেতরটা ভূমিকম্পের মতো নাড়া দিয়ে উঠে। সংবাদটি আরো ভালো করে দেখার জন্য অন্য চ্যানেলে যায়। একটি চ্যানেল অনেকক্ষণ ধরে বিস্তারিত দেখাচ্চে। একটি মেয়ের আত্মহত্যা। শতরুপা নামের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। উত্তরার এক বাড়ির চতুর্থতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। নাদের আলী ভালো করে তাকিয়ে দেখে মেয়েটির পরনে নীল শাড়ী তখনও মেয়েটির হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রেখেছিল একটি জীবন্ত পদ্ম। সাংবাদিকরা এটাকে ভালো করে হাইলাইট করছে। অনেকের ধারনা মেয়েটি চারতলা থেকে পালিয়ে যাবার জন্য দড়ি বেয়ে নামার সময় উপর থেকে পড়ে যায়। এবং তাৎক্ষণিক মাথা ফেটে মেয়েটি মারা যায়। নাদের আলী ভালো করে বুঝবার আগেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। আর বলতে থাকে আমি কথা দিয়েছিলাম শতরুপাকে ফিরিয়ে দিব। আমি রাজকে কথা দিয়েছিলাম তার কাছে শতরুপাকে নিয়ে যাবো। ঘরের সকলে ছুটে আসে নাদের আলীর কাছে। নাদের আলী
কাউকে কিছুই বোঝাতে পারছে না শুধু বুক ভরা আর্তনাদ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

১৮ নভেম্বর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ২৭ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.৮৮

বিচারক স্কোরঃ ১.৮৮ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪