ভালোবাসার একটি রাত

এ কেমন প্রেম (আগষ্ট ২০১৬)

জসিম উদ্দিন জয়
  • 0
ব্যাগটা ছুরে ফেলে দিলে বিছানার উপর। ব্যাগের ভেতরে ছোটখাটো অনেক টাকা। টাকাগুলো ব্যাগ থেকে এলেমেলো ভাবে ছড়িয়ে পরেছে বিছানার চারপাশে। গায়ে জড়ানো জলপাই রংয়ের শাড়ীটাও খুব মানিয়ে ছিলো শতরাপাকে। সেই শাড়ীটাও দ্রুত খুলে ফেলছে। শাড়ীটাও তার প্রিয় ছিলো । সেটাও খুলে ছুরে ফেলে দিলে বিছানার এককোনে। ঘরের প্রধান দরজা বন্ধ করে নাই। হঠাৎ পাশের ফ্লাটের ভয়ংকর লোকটার কথা মনে পরতেই, অপ্রস্তুত তড়িঘরি করে প্রধান দরজা বন্ধ করলো শতরুপা। শতরুপার আজ কি যেনো হয়েছে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির ২.৫ লিটার এক বোতল বের করলো। পুরোটাই ঢক ঢক করে গিলে ফেললো। তবুও সে ঘামছে । নাগের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছতেই মনে পরলো শুভ্রর কথা। শুভ্র বলেছিলো,“ দেখিস শতরুপা তোর বর তোকে খৃুব আদর করবে”। শতরুপার বাকাঁ ঠোট, যেন শিশির ভেঁজা জীবন্ত একটি গোলাপ ফুল। সেই ঠোটে কিঞ্চিত লুকানো হাসি জেগে উঠে। তারপর হতাসায় মহুর্তে হাসিটুকু একরাস কালো মেঘে ঢেকে যায়। পুরো এক বালতি পানি দিয়ে নিজেকে ভিজিয়ে নিলো। ¯œান এর প্রস্তুতি। তাই ঝরনার নিচে আনন্দের জলে নিজেকে বিলিয়ে দিলো পানির ¯্রেেতা। নিজেকে খুব যতœ করে তার অঙ্গে থেকে অঙ্গে, মানে সর্বাঙ্গে সুগন্ধি সাবান মেখে গোসল করলো। পরন্ত বিকেলে সুর্য্যের আলোয় উদ্ভাসিত তার রুপ যৌবন। গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে সমস্ত শরীরে লোশন মেখে নিলো। কাঁচা হলুদের মতো উজ্জ্বল শতরুপার গায়ের রং। ফুর ফুরে মনে সেই শরীরে বড় একটি তোয়ালে এবং বাসন্তি কালারের ওরনা জড়িয়ে নিলো। ড্রইং রুমের হেলানো চেয়ারে একটি কবিতাই বই নিয়ে বসে পরে। তখন প্রায় মাঝরাত ছুই ছুই । কবিতার পড়ার পৃথিবীতে সে এখন সম্পূর্ন একা। একটু শান্ত ও আনন্দিত। হাতের মোবাইলটি টোটালি অফ। শতরুপার এই বিষন্ন পৃথিবীতে সে বড় একা। কবিতার পড়ার মাঝে মাঝে একঝাক দুঃখ তাকে ঘ্রাস করছে। এই বিশাল ফ্লাটটিতে তার একা থাকতে হয়। অন্য কেউ হলে হয়ত ভয় পেতো, ভূত- পেতœী, পেতাত্মা ইত্যাদি ইত্যাদি । শতরুপা এগুলোকে বিশ^াস করে না। তাই ভয় পায় না। সে মাঝে মাঝে ভ’তের ভংকর ছবি দেখেও তাকে ডর-ভয় কিছুই আচ্ছন্ন করতে পারে না। সে যখন তার ফ্লাটের প্রধান দরজাটা বন্ধ করে তখন সে স্বাধীন ও সকল ভয় ডর দূর হয়ে যায়। কেননা তার কাছে সবচেয়ে ভংকর হচ্ছে সমাজের কিছু কিছু মানুষ। মাঝরাত শতরুপা কবিতা পড়ার প্রখরতা বেড়ে যায়। সে খুব আনন্দ নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করতে থাকে। তখন মাঝরাত পেরিয়ে গভীর রাত। শতরুপর চোখ ঘুমের জন্য টলমল করছে। কবিতার বইটি তার হাতে ছিলো। উত্তপ্ত বুক যেনো তার ফুটন্ত যৌবন। লিও না দ্যা ভিঞ্চির আকাঁ সেই বিখ্যাত ছবির মতো বুকের গঠন। আলতো স্পর্শে সেই বুকের উপর শান্তির এই কবিতার বইটি রেখে ঘুমিয়ে পরে হেলানো চেয়ারে।
হঠাৎ দরজায় ঠক্ ঠক্ শব্দ।
শতরুপা ঘুমের ঘোরে অসপষ্ট বলে উঠে কে ?
ঃ আমি ¯œপ্নিল, তোমার স্বপ্নিল ।
ঃ মিথ্যে বলছো। তুমি স্বপ্নিল নও। তুমি সমাজের ভয়ংকর কোন জানোয়ার।
ঃ না, সত্যি বলছি আমি স্বপ্নিল ।
ঃ আমি বিশ^াস করি না । তুমি আমাকে ফেলে চলে গেছো, ‘না ফেরার দেশে। আমার ভুবনে আমি ভীষন একা।’
( স্বপ্নিল একটু হেসে বলে ) ‘‘এত অভিমান তোমার’’
ঃ আমি কি ভিতরে আসবো ?
ঃ কি আশ্চার্য ব্যপার তুমি এসেই গিয়েছো । কিন্তু কিভাবে এলো । বাহিরের দরজা তো বন্ধ ছিলো।
( হোঃ হাঃ হাঃ করে হেসে উঠে স্বপ্নিল ) শতরুপার একদম কাছে গিয়ে বলে ঃ এই দেখ আমি তোমার কত কাছে। আমি সবসময়ই তো তোমার পাশে থাকি। তুমি আমাকে দেখতে পাও না ।
স্বপ্নিল একটু হেসে বলে “তুমি একা কেন । কাউকে তোমার ভুবনে নিলেই পারতে।”
শতরুপা মুগ্ধ বিস্ময়ে স্বপ্নিলের দিকে তাকালো। চোখের পাপড়ি এককোনো এক ফোটা জল জমতেই সেটা মুছে ফেলে। ঘরের উপরে ছাদ বরাবর তাকিয়ে বলে “ ভালোবাাসার অভিনয়-সবিনয় করে অনেকেই আমার ভুবনে আসতে চায়। আমাকে বিষদ গবেষনা বর্ননা করতে যেয়ে, তার রাজ্যে রাজকন্যা বানিয়ে ফেলে। আমাকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে। কথাগুলো বলতেই হো.. হো হেসে উঠে... শতরুপা ।
স্বপ্নিল শতরুপার কথাগুলো শুনে খানিকটা অনমনে অভিমানে প্রশ্ন করে “ বাহ্ তোমাকে খুব ভালোবাসে এই মানুষগুলো। তাদের কাউকে নিয়ে ঘর বাধঁলেই পারতে।”
স্বপ্নিল এর কথাগুলো শুনে শতরুপ আবার কষ্ট পেলো। আভিমানী মেয়ে শতরুপা চোখে কষ্টের জল মুছে এবারও বললো “ আমার ভালোলাগে না। জানো স্বাপ্নিল ওরা ভালোবাসার কথা বলেই আমার হাত ছুয়েঁ ঠোট স্পর্শ করতেই চায়, কোনটা ভালোবাসা কোনটা অভিনয় আমি সব বুঝি। আমাকের তোমার ভালোবাসার সংঘা দিতে হবে না।”
স্বপ্নিল দেখলো শতরুপা খুবই অসহায়। একটু গা ঘেষে শতরুপার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। শতরুপা হাত দুটি ধরে একটি একটি করে আঙ্গুল ফুটিয়ে ম্যাসেজ করে দিয়ে বলে “শতরুপা পাগলামি করো না, আমি এখন অন্যভ’বনের বাসিন্দা। আমাকে তুমি ভুলে যাও। ”
শতরুপা ভুলে যাওয়া শব্দটি শুনে চমকে উঠে। তড়িঘরি করে বলে উঠে “ভুলে যাও বললেই কি ভোলা যায়। স্বপ্নিল আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে আমার এই পৃথিবীতে ভালোবাসতে পারবো না। অনেক মাতাল আমার রুপযৌবনকে অফুরন্ত টাকা দিয়ে কিনতে চায়। আমি নিজেকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রন করি তবুও আমি বিক্রি হয় নাই। আমি মরে যেতে চাই। তবুও না। এই পৃথিবীটাকে আমার একটুও ভালো লাগে না। তোমার কাছে আমায় নিয়ে চলো। তুমি এত দূরে থাকো আমি সেখানে যেতে পারছি না। ”
তবুও স্বপ্নিল এর দয় হলো না। স্বপ্নিল তাকালো শতরুপার বুকের দিতে। টান টান যৌবন সেই বুকের উপর একটি ভালোবাসার কবিতার বই পরম যতেœ ঘুমাচ্ছে। বইটির মলাটে লিখা অন্যভ’বন। বইটির লেখক স্বপ্নিল । খানিক হেসে স্বপ্নিল বইটিকে তার বুক থেকে সরিয়ে নিলো। আলতো স্পর্শে শতরুপাকে হেলানো চেয়ার থেকে দুই হাত দিয়ে কোলে তুলে নিলো। তখন মাঝরাত পেরিয়ে একটি নতুন ভোরের অপেক্ষায়। শীতের কন কনে বাতাস বইছে। সে বাতাস শতরুপার ওরনা ছুরে ফেলে দেয় ফ্লোরে। স্বপ্নিল ধীর ধীর বেডরুমের দিকে নিয়ে যায় শতরুপাকে। মমতাভরা মনে বিছানায় শুয়ে দেয় শতরুপাকে । শতরুপা পা থেকে গরম কাপড়ের জুতাটা খুলে দিলো। নকশি সুতোয় গাথাঁ একটি কাথাঁ জড়িয়ে দিলো শতরুপার গায়ে। একটু মৃদ হেসে স্বপ্নিল ভাবছে ‘‘বড় অভিমানি মেয়ে শতরুপা, একটি ছেলেকে কতটা ভালোবাসলে এমনটি হয়।,” স্বপ্নিল একটু আবেগ চোঁখে শতরুপার দিকে তাকালে, তখন চোখ এর বাধঁ বেয়ে পানি জমে উঠেছিলো। স্বপ্নিল নিষ্পাপ ভালোবাসা বুকে নিয়ে শতরুপার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। দু‘হাত দিয়ে শতরুপার গাল স্পর্শ করে কপাল জুড়ে একটু চুমো দিলো । তারপর বুকভরা আত্মনাদ আর হতাসা নিয়ে তড়িঘরি করে বিদায় নিয়ে ফিরে যাবে। তখন শতরুপা স্বপ্নিল এর হাত ধরে বলে ‘ চলে যাচ্ছে কেন ? তুমি বড় স্বার্থপর, আমাকে একটুও ভালোবাসো না ।”
স্বপ্নিল তাকিয়ে দেখে বড় বিষন্ন সুন্দর লাগছে শতরুপাকে । স্বপ্নিলের মনের ভেতরটা খুব খারাপ লাগে। তবু স্বপ্নিল শতরুপার কোন কথা কর্নপাত না করে বলে উঠে ‘আমাকে যেতে হবে’’।
শতরুপা ঃ আমাকেও তোমার সাথে নিয়ে চলে।,
স্বপ্নিল আবার শতরুপাকে বোঝাবার চেষ্টা করে বলে “তুমি কেন আমার সাথে যাবে। তোমার মতো একজন আদর্শবান প্রতিভাবান মেয়ে এই সমাজের খুবই প্রয়োজন। তুমি এই সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য সংগ্রাম কর। তোমার এই মহৎকর্মের মাঝেই আমাকে খুজে পাঁেব।”
শতরুপা আজ স্বপ্নিল এর কোন কথার পাত্তা না দিয়ে বলে ‘‘ আমি তোমার কোন কথায় শুনতে চাই না, আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলে আমি যাব... যাব... যাব .... ।
স্বপ্নিল বুঝে যায় শতরুপার এই জেদ থামানো যাবে না। এটা ভালোবাসার তীব্র আকুতি থেকে জন্ম নেওয়া জেদ। তবুও স্বপ্নিল কে যেতে হবে। তাই সে শতরুপার দিকে আবার বিষন্নদৃষ্টি তাকালো, তারপর শতরুপার হাতটি জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে ‘‘আসি..... আমি আবার আসবো .... । আমি যে তোমার আত্ত্বা । আমাকে আসতেই হবে। কষ্ট পেয়েও না শতরুপা। যখন দেখতে মন চাইবে ঐ চাঁেদর বুকে আমাকে দেখতে পাবে। আসি ... আসি ... ।
শতরুপা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না স্বপ্নিল এ চলে যাওয়াকে। শতরুপার ঘুমের ঘোরে গোংঘানো গোংঘানো চাপাঁ কান্না। বুক থেকে কবিতার বইটি পরে যায় পাশের টি- টেবিলে । ড্রইং রুমে টেবিলে রখা গ্লাসটিও গেলে ভেঙ্গে। গ্লাস ভাঙ্গার শব্দে শতরুপা জেগে উঠে। চেয়ে দেখে কবিতার বইটি মেঝোতে পরে আছে। শতরুপর চোখে পানি। তরিঘরি করে করিডেরে ছুটে যায়। তখন ভোর রাত আকাশের ভরপূনিমার চাঁদটি প্রায়ই লুকিয়ে যাচ্ছে। শতরুপা দেখতে পেলে সেই চাদেঁ স্বপ্নিল এর মায়াবি চেহারা। আজ দিনটি ছিলো স্বপ্œিল ও শতরুপার ভালোবাাসা দিবস। এই দিনটিতেই স্বপ্নিল খুব কাছে এসেছিলো শতরুপার। হাতদুটি ধরে বলেছিলো ‘‘ পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাাসা তোমার জন্য ”। আমি শতরুপা আছি, পৃথিবীও আছে, পৃথিবীর ভালোবাসাও আছে, শুধু দেবার মতো তুমি নেই । শতরুপার মুগ্ধবিস্ময়ে তাকিয়ে থাকা চোখ শুধুই অতীতকে খুজেঁ বেড়াচ্ছে। স্বপ্নিল বাইক একসিডেন্ট-এ মারা গেছে প্রায় সাত বছর হবে। .............. .. .
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# ভালো লাগলো গল্পটি। যত্নবান হলে আরো ভালো গল্প বেরোবে এই লেখকের হাত থেকে। ধন্যবাদ।
সূর্য মানুষ জীব হিসেবে এমনই। পাশে পড়ে থাকা হীরেটাও হয়ত তার নজর কাড়ে না স্মৃতিময় নকল গহনাটা তারচে' বেশি আবেগ ধরে থাকে। পাশের ফ্লাটের দুষ্টলোকটা গল্পে আসায় তার দুষ্টুমীর কিছু বর্ণনা গল্পেরই দাবী ছিল। গল্পকারের খুব ইচ্ছে ছিল স্বপ্নীল যে অশরীরি স্মৃতি মাত্র তা গোপন রাখা সেটা হয় নি। ভাল হয়েছে ভবিষ্যতে আরো ভাল হতেই পারে...
ফেরদৌস আলম ভালো লাগলো । তবে বানানে আরও একটু যত্নবান হওয়া উচিত। আশা করছি সামনে অনেক ভালো করবেন।
আহা রুবন কম্পোজ করার পর একবার কি গল্পটি পড়েছিলেন? পাঠকের সময়ের মুল্য আছে।

১৮ নভেম্বর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ২৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪