বোয়াল পোনা

প্রশ্ন (ডিসেম্বর ২০১৭)

reza karim
  • ১৫
  • ৩৮
নাজমুল মাছ ধরতে ধরতে চলে গেছে পূর্ব পাড়া। মাছের নেশা মানুষকে সব ভুলিয়ে দেয়। ওর চোখ কেবল মাছের দিকে। ঝোপঝাড়ের দিকে। যেখানটাতে মাছেরা বেশি করে থাকে। ঠেলাজাল দিয়ে ঝোপঝাড় আর শ্যাওলাযুক্ত জায়গায় ঠেলতে হয়। তবেই ভালো মাছ পাওয়া যায়।
নদীতে নতুন পানি এসেছে। অন্যবছর বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে পানি এলেও এ বছর চৈত্রমাসেই পানি এসে গেছে। নতুন পানির সাথে এসেছে মাছ, কঢ়ুরিপানা আর জোঁক। এগুলো পাহাড়ি ঢলের পানি। যতদিন ঢল আছে পানি আসবে। ঢল কমে গেলে পানিও কমে যাবে। এ পানি অস্থায়ী। এ যে বর্ষার পানি নয় গ্রামের ছেলে বুড়ো সবাই বুঝতে পারে। সবাই মাছ ধরার প্রতিযোগীতায় নামে।
নতুন পানির সাথে আকর্ষণীয় যে মাছটি এসেছে তা হলো বোয়াল। বড় বোয়াল নয়। সবই বোয়ালের পোনা। আকারে ছয় সাত ই্িঞ্চর মতো। বড় বোয়াল এখন এ নদীতে পাওয়া যায় না। একসময় পাওয়া যেতো। যা এখন অতীত। বড়দের চেয়ে ছোটদেরই আগ্রহ বেশি এ বোয়াল ধরার জন্য। দল বেধে ছেলেমেয়েরা মাছ ধরার জন্য নদীতে নামে। সবার হাতেই ঠেলা জাল। বড়রা নদীর বিভিন্ন জায়গায় বাইড় পাতে। সন্ধায় পাতলে সকালে গিয়ে দেখা যায় ভালোই আটকা পড়েছে। আবার পেতে রাখে। দুপুরে , বিকালে বা বেশ কয়েক ঘন্টা পরে পরে গিয়ে বাইড় তুলে মাছ বের করে আনে।
নাজমুল ¯স্রোতের বিপরীতে জাল ঠেলতে ঠেলতে এগিয়ে যায়। পূর্বপাড়ায় যেখানটাতে নদীর সাথে খাল এসে মিশেছে সেখানে থামে। থামতে না থামতেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। বৃষ্টিতে ভিজতে তার ভালোই লাগছে। যদিও গা কেপে কেপে উঠছে। মাছ রাখার পাত্রটা বাঁশের বেতের তৈরি। পাত্রের দিকে চেয়ে দেখলো ভালোই মাছ ধরা হয়েছে। বোয়ালের পোনা আছে সাতটি। খুশিতে তার মন ভরে গেলো। বোয়াল খেতে তার ভালোই লাগে। ভাবলো এবার বাড়ি যাওয়া যাক। তখনই হৈ চৈ শুনে সে খালের মুখের দিকে তাকালো। দেখলো তার বয়েসী ছেলেমেয়েরা সেখানে দলবেধে চিৎকার করছে। তাদেও সবার হাতেই ঠেলাজাল। কাছে গিয়ে দেখলো খালের মুখে জাল ধওে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। খালের পানি নেমে আসছে নদীতে। সাথে আসছে মাছ। সেই মাছ আটকা পড়ছে পেতে রাখা জালে। নাজমুলও একপাশে দাঁড়িয়ে ঠেলাজাল পেতে দিলো।

বাড়ি যাওয়া গোল্লায় যাক। আরও মাছ ধরতে হবে। মাছ ধরার নেশা বড় নেশা। ভুলে গেছে স্কুলে যাওয়ার কথা। ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। জাল পেতে দাঁড়িয়ে একদল ছেলেমেয়ে। তাদের সবার চোখ মাছের দিকে। বৃষ্টির পানি পেয়ে মাছেরাও যেন খুশিতে আতœহারা। তারা লাফিয়ে লাফিয়ে জালে এসে পড়ছে। বৃষ্টির পানিতে আনন্দে আত্মাহুতি দিতেও যেন তারা তৈরি। বৃষ্টির পানিতে মাছের বুক পিঠ ঝলমল করছে। ছেলেমেয়েরা ভুলে গেছে স্কুলের কথা। ভুলে গেছে কাদা বৃষ্টিতে ফুটবল খেলার কথা। বাড়ির উঠোনে কাদায় গড়াগড়ি খাওয়ার কথা।

যখন নাজমুল বাড়িতে গেলো তখন দুপুর। তখন বৃষ্টি কমে গেছে। মা কিছুক্ষণ বকাঝকা করলো। নাজমুল পরিপাটি হয়ে নামাজ পড়তে যায়। নামাজ পড়ে এসে দেখে মা মাছ ভাজা করছেন। সে চুপচাপ গিয়ে পড়তে বসে। একসময় মা এসে খেতে ডাক দেন। নাজমুল মায়ের সাথে খেতে বসে। তার ধরা মাছ দিয়ে মা দুটো পদ করেছেন। একটি ঝোলের তরকারি আর মাছভাজা। নাজমুল খাবার মুখে দিবে তখনই এক ভিক্ষুক এসে দুয়ারে দাঁড়ালো। এক থুত্থুরে বুড়ি। পরনে জীর্ণ কাপড়। দেখলেই কেমন যেনো মায়া লাগে। নাজমুল মাকে ইশারা করতেই মা বুঝে ফেললেন ছেলের চোখের ইশারা। তিনি আরেকটি প্লেট নিয়ে খাবার বাড়তে লাগলেন। নাজমুল বুড়িকে তার পাশেই টেনে বসায়। মা বুড়ির পাতে দিলেন নাজমুলের ধরা সেই বোয়াল মাছের পোনা। ভাজা বোয়াল পোনা।

বোয়াল ভাজা হাতে নিয়ে বুড়ি অপলক সেদিকে চেয়ে রইলেন। তার চোখ ভিজে ওঠে পানিতে। বহুবছর পৃথিবী দেখা দুই চোখ যেন হয়ে ওঠে পদ্ম পুকুর। সম্ভবত তিনি অনেকদিন বোয়াল ভাজা খান না। হয়তো তার মনের আয়নায় তখন ভেসে উঠেছে তার অতীতের স্মৃতি। তিনিও একদিন নাজমুলের মায়ের মতো এভাবেই মাছ ভাজা বেড়ে দিতেন স্বামী সন্তানের পাতে। বুড়ি বৃষ্টির মতোই অঝোরে কাঁদছেন। নাজমুল তার ছোট হাত দিয়ে মুছে দেয় বুড়ির চোখের পানি। বুড়ি নাজমুলকে জড়িয়ে ধরেন পরম মমতায়। নাজমুলের মায়ের চোখে পানি আর মুখে হাসি। ছেলের দয়া দেখে মায়ের বুক ভরে যায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া নাজমুল খাবার মুখে দিবে তখনই এক ভিক্ষুক এসে দুয়ারে দাঁড়ালো... চরিত্রের আগমনটি ভালো লাগল
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পটা একটানে পড়তে পেরেছি, খুব ভালো লেগেছে। ব্যাপার হলো→ বর্ণনাশৈলীর ভিতরে আর একটু যত্ন নিলে আরও চমৎকার গল্প পাবো আশা করেছি। শুভকামনা রইল....
ওয়াহিদ মামুন লাভলু শিক্ষা গ্রহণ করার মত অনেক ভাল একটি গল্প। মা যেভাবে বৃদ্ধাকে তার পাশে খেতে দিল তা তার অহংকারমুক্ত নির্মল মনের পরিচয় দেয়। অনেকে কাজের লোককেও পাশে বসিয়ে খাওয়ায় না। অহংকার একটি মারাত্মক চারিত্রিক দোষ। এই দোষ থেকে মুক্ত হওয়া অতীব জরুরী প্রতিটি মানুষের জন্য। আপনার গল্প পড়ে এই দোষ থেকে মুক্ত হতে অনুপ্রাণিত হবে অনেকেই। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা ও শ্রদ্ধা রইলো।
ভালো লাগেনি ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭
shuvo kamona
ভালো লাগেনি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি বোয়াল ভাজা হাতে নিয়ে বুড়ি অপলক সেদিকে চেয়ে রইলেন। তার চোখ ভিজে ওঠে পানিতে। বহুবছর পৃথিবী দেখা দুই চোখ যেন হয়ে ওঠে পদ্ম পুকুর। .....// বর্ণনা এবং বিন্যাসে দারুণ গল্পটি হয়েছে .....খুব ভালো....শুভ কামনা রইলো....আসবেণ গরীবের আঙ্গিনায়.....
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭
of course
ভালো লাগেনি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭
%3C%21-- %3C%21-- Vote rekhe gelam. Shomoy pele amar lekhati pore dekhben :) Dhonnobad.
মোঃ মোখলেছুর রহমান শেষের দিকে বেশ আবেক ঘন,ভাল লাগল।
মুশফিক রুবেল অনেক ভাল লাগলো , শুভ কামনা রইলো , সময় পেলে আমার গল্পটি পড়ার অনুরোধ রইলো
আমি মিয়াবাড়ির ছেলে শৈশবের একটুকরো স্মৃতি মাত্র। ধন্যবাদ।
মোঃ নিজাম উদ্দিন দারুন লেখনী। শুভকামনা নিরন্তর।

১৪ নভেম্বর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪