বৃষ্টি তুমি সুখি হও

রহস্যময়ী নারী (জুলাই ২০১৬)

ইমরানুল হক বেলাল
  • ১৪
  • ১১
নিরব-নিস্তব্ধ রাত্রি।লাইটপোস্ট গুলো দাঁড়িয়ে আছে শহর আলোকিত করে।
দূরে কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। রাত প্রায় তিনটা পঁচিশ।
বাইরে নিঝুম আঁধার। কোন টু শব্দ নেই।
সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। চারদিকে শোনা যাচ্ছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। কিন্তু এ মূহুর্তে নীলের কিছুতেই ঘুম আসছে না। শীতে গা একটু একটু করে কাঁপছে। নীলের অকৃতজ্ঞ নারীটার কথা বারবার মনে পড়লো, চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই রহস্যময়ী অকৃতজ্ঞ নারী বৃষ্টির স্নিগ্ধ-সুন্দর মায়াবিনী মুখচ্ছবিটা।
মানুষ যে মানুষের সঙ্গে কখনো এত বড় প্রতারণা করতে পারে বৃষ্টিই সেটা প্রমাণ করে দিয়ে গেল।
বৃষ্টিকে সমস্ত মন-প্ৰাণ উজাড় করে ভালবেসেছিল নীল।
বৃষ্টির প্রতি নীলের ভালোবাসা ছিল সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন, ছিদ্রহীন, সমুদ্রের মতই অসীম ও গভীর।
বৃষ্টিকে ভালোবাসার দোষটা নীলের নয়।
বৃষ্টিই একদিন তার শূন্য হৃদয়ে সুখের প্রদীপ জ্বালিয়েছিল।
এসেছিল বন্ধুত্বের প্রতি নিয়ে।
বৃষ্টির সাথে নীলের পরিচয়টা হয়েছিল রহস্যজনকভাবে।
প্রথমে পত্র-মিতালী, তার পর ফোনে আলাপ...।
সময়টা ছিল 2006 সালের 20 জুলাই।
চট্টগ্রাম দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার 'সুজনেষু' নামক সাহিত্য পাতায় বর্ষা নিয়ে লেখা 'বর্ষণ মুখর একটি সন্ধ্যা' এ নামের একটি প্রবন্ধ প্রকাশ হয়।
লেখাটি হঠাৎ বৃষ্টির হৃদয় ছুঁয়ে যায়। পত্রিকা থেকে নীলের ঠিকানাটা টুকে রেখে একটি চিঠি লিখে পাঠালো।
ঘটনার আকস্মিকতায় চিঠি পেয়ে নীল অবাক হয়ে যায়।
কারণ হলুদ খামের ওপর শু প্রেরণকারীর নাম ছিল, ঠিকানা লেখা ছিলনা। নীল ভাবলো, এমন একটা উড়ন্ত চিঠি কে দিল?
কে সেই মেয়েটি?
এই ভাবে উড়ন্ত চিঠি দেবার অর্থই বা কী?
কি চায় সে?
তার পর চিঠির খাম খুলে দেখলো,
এতে লেখা আছে-
শুরুতেই আমার সালাম নিবেন,
কেমন আছেন ভাইয়া,
আমি কে? আমাৱ চিঠি পেয়ে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন তাই না। আমি আপনার অচেনা একজন, আপনার বন্ধু হতে চাই।
দৈনিক পূর্বকোণের সাহিত্য পাতায় আপনার লেখাটি পড়ে ভীষণ মুগ্ধ হলাম।
খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখলেন তো, আপনি সব সময়ই ভালো লিখে থাকেন। এর আগেও আপনার অনেক গল্প কবিতা পড়েছি।
আপনার সাহিত্যচৰ্চা ও মনুষ্যত্ব হৃদয়ের ভালোবাসা এবং দেশ সমাজ সচেতনতা দেখে মুগ্ধ হয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলাম।
বন্ধু হিসেবে আপনার হৃদয়ে এই অধ্যম কন্যার স্থান হবে কি?
আশা করি ফিরিয়ে দেবেন না।
ইতি অচেনা বন্ধু বৃষ্টি।
প্রতি উত্তরে নীল ও চিঠি লিখে পাঠালো।
এভাবেই দিনের পর দিন, পরস্পরের চিঠির ভাষাতেই কথা হয়।
এক সময় দু'জনার মাঝে গড়ে ওঠে পবিত্র ভালোবাসার সেতু বন্ধন।
ভালোবাসা এতটাই গভীরতর হলো যে,
প্রতিদিন দুজনের ফোনে কথা না হলে রাতের ঘুম হারিয়ে যেতো।
আর প্রতি সপ্তাহে জুড়ে থাকতো একটি করে প্রেম-পত্র।
নীলের তখন মনে হতো, ভালোবাসা কী মিষ্টি! চিঠির ছত্র গুলো কী মিষ্টি! জীবনটা কী মিষ্টি!
কত মধুর আমাদের এই জীবন!
নীলের শরীরের গঠন, চেহারা-দোহারা স্মার্ট না হলেও জ্ঞানের দিক থেকে তার কোন প্ৰতিবন্ধকতা নেই।
কথাভ-বাৰ্তা, চালচলন, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিতে ছিল তার অসাধারণ গুণ।
সেই গুণে মুগ্ধ হয়েই বৃষ্টি নীলকে ভালবেসেছে।
এটাই ছিল নীলের জীবনের প্রথম প্রেম।
জন্ম হওয়ার পর থেকে এর আগে কখনো কেউ এভাবে প্রেম নিবেদন করেনি। নীল বৃষ্টির কাছে কিছু গুৰুত্বপূৰ্ণভাবে প্রশ্ন করেছিল- 'কেন তুমি মিথ্যে আশা দিচ্ছ?'
আমি তো দেখতে সুন্দর নই, অনেক বেঁটে। মাথায় চুল ও নেই প্রকৃতির নিয়মে টাক পড়ে গেছে। আমাকে দেখলে তোমার ইচ্ছে করবে না। দূর থেকে দেখেই পালিয়ে যাবে।
তুমি কি আমাকে স্বপ্নের পুরুষ হিসেবে তোমার বুকে স্থান দিতে পারবে? তুমি কি সারাজীবন আমার স্বপ্নের রাণী হয়ে থাকতে পারবে?
পৃথিবীতে সব চেয়ে দামী জিনিস হলো সেই ভালোবাসা,
সব করা যায়, কিন্তু পবিত্র ভালোবাসা নিয়ে খেলা করা যায় না।
আমাদের ভালোবাসাটাও যদি মিথ্যে হয়ে যাই?
তার জবাবে বৃষ্টি বলেছিল,
শোন নীল, আমি তোমার মনুষ্যত্ব হৃদয়ের ব্যক্তিত্বের রূপকে পছন্দ করে ভালোবেসেছি। ব্যক্তিত্ব হলো মানুষের একটি সামাজিক অংশ। যারা শুধুই রূপ দেখে ভালোবাসে তারা শুধুই সুন্দরের পূজারী। তাদের মনের ভেতর সত্যিকারেরভালোবাসা নেই। আমার সুন্দর পুরুষের দরকার নেই। আমার কাছে তোমার মনটাই অনেক বড়। আর যদি অসুন্দর হয়েই থাক তাই বলে কি আমাদের ভালোবাসা শেষ হয়ে যাবে?
এক মাত্র তুমিই হবে আমার স্বপ্নের পুরুষ।
আমরা পরস্পরের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে থাকতে চাই চিরজীবন।
তার পর নীলের কাছে বৃষ্টি একদিন দু'কপি রঙিন ছবি চাইল।
নীল ছবি পাঠানোর পর সেও পাঠালো।
ছবিতে দুজন দুজনকে দেখে পছন্দ হলো।
যাকে বলে প্ৰথম দর্শনেই প্ৰেম। তাই তো বৃষ্টিকে পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করে ভালবেসেছিল নীল।
এভাবেই দীর্ঘ একটি বছর কেটে যাওয়ার পর একদিন হেমন্তের এক শুভ বিকেলে দু’জনের দেখা হয়।
পৃথিবীর সমস্ত শুদ্ধতা দিয়ে হৃদয়ের শুদ্ধ অঙ্গনে নীল বৃষ্টিকে বসাতে চেয়েছিল।
কিন্তু তা আর হলো না। সেদিন বৃষ্টিকে প্রথম দেখে মনে হয়েছিল ভাব-ভঙ্গির মধ্যে ছল-চাতুরী ভরা।
কণ্ঠটা শুনে কেমন যেন বারবার মনে হচ্ছে এড়িয়ে যাবার ভাব।
অপমানের কষ্টে নীলের চোখ দুটো জলে ভরে গেল।
তবু ও কষ্টটাকে অনেকক্ষণ কন্ট্রোল রেখে পরাজয়ের হাসি হেসে বলল, 'আচ্ছা সত্যি করে বলতো, আমাকে তোমার ভালো লেগেছে?
জবাবে সে কিছু বলেনি।
দ্বিতীয়বার প্রশ্নের উত্তরে ও বলল, কেন ভালো লাগবেনা নীল?
-'তার পর ও এখানে পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার থাকতে পারে। তাই...।'
-'যদি বলি ভালো লাগেনি? '
-' ভালো না লাগলে কিছু করার নেই। কেউ চলে যেতে চাইলে কাউকে জোর করে ধরে রাখা যায় না।
কারণ মনের ওপর কখনো জোর করা যায় না,
-'তোমার খুব কষ্ট হবে বুঝি?'
-'তাতো হবেই, তুমি এমন করে কথা বলছ কেন?
শোন, জ্ঞানত আমি তোমার কাছে কোন অপরাধ করেনি।
তারপরে ও যদি অজান্তে করে থাকি আমাকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখো,
তবু ও কষ্ট দিয়ো না প্লীজ!'
বৃষ্টির চোখ দুটো জলে ছলছল করছে। সে ভাবতে লাগল এ ধরনের ছেলেদের সঙ্গে খেলা করা যায় না।
বৃষ্টির চোখে পানি দেখে নীল বলল, কেন কাঁদছ তুমি...!
আমি কি তোমার মনে কোন কষ্ট দিয়েছি?'
-'না।'
-'তাহলে কাঁদছ যে...!'
-'কি আর বলবো কিছু বুঝতে পারছি না।'


শেষ বিদায়ের সময় অশ্রুভেজা কণ্ঠে বলে গিয়েছিল,
চিঠি দিয়ো, আমি ও লিখব। শরীর যত্ন নিও, কেমন? আর...।
তার পরের কাহিনী অতি সংক্ষেপ।
অনেকদিন পর বৃষ্টির হাতের লেখা ছোট্ট একটি চিরকুট নীলের হাতে আসে।
তাতে বৃষ্টির স্বহস্ত লেখা ঝরঝরে কয়েকটা লাইন-
নীল তোমাকে ভালোবেসেছিলাম,আগে তোমার প্রতি আমার যতটুকু টান ছিল, দেখা হওয়ার পর থেকে এখন আর নেই।
কারণ, তোমাকে যে রকম আশা করেছিলাম তুমি দেখতে সেই রকম নয়। তাই তোমাকে ভালো লাগেনি। আমি এমন ছেলে চেয়েছিলাম যে সে হবে স্মার্ট, লম্বা চওড়া। নীল আমাকে ভুলে যাও। আমাকে মন থেকে একদম মুছে ফেলো। বিশ্বাস করো তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি। কি আর বলব, আমার মনের আশা পূর্ণ হলো না। শেষান্তে ভালো থেকো।
ইতি বৃষ্টি।
চিরকুট পেয়ে নীলের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তার মধ্যে যেন কোন চেতনাবোধ নেই। মুহূর্তেই বরফ মূর্তির মত হয়ে গেল।
হালকা নীলাভ রঙের শার্টটায় তার অশ্রু ফোঁটাগুলো টুপ টুপ করে পড়তে লাগলো। এর পর অবাক নয়নে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল-এই কি ছিল বৃষ্টির ভালোবাসা?
কি অপরাধ ছিল আমার?
কেন সেই মেয়েটি মিথ্যে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমার জীবনে এসেছিল? ভালোবাসা মানেই যদি বেদনা, কষ্ট পাওয়া, তাহলে ভালোবাসা কে-ন-ই বা আসে মানুষের জীবনে? কে-ন-ই বা কিছু মানুষ অপূর্ণতার ঝুলি নিয়ে পৃথিবীতে আসে!
কে-ন-ই বা প্রয়োজন হয় এই অনর্থক অর্থহীন ভালোবাসার!
তবুও বৃষ্টি ওকে ভালোবাসুক আর নাই বাসুক নীল দূর থেকে বৃষ্টিকে চিরকাল ভালোবেসে যাবে।
মনে মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগল, বৃষ্টি আমাকে কষ্ট দিয়ে যদি সুখি হতে পার সুখি হও।
তোমার সুখ দেখে না হয় আমি আমার সুখ খুঁজে নেব।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাস‌রিন নাহার চৌধুরী ঠিকই পত্রবন্ধু থেকে প্রেম অথবা হালের ফেসবুক থেকে প্রেমে কোন নিশ্চয়তা নেই। বাস্তবতার গল্প লিখেছেন। ভোট রইল গল্পে।
নাজমুছ - ছায়াদাত ( সবুজ ) খুব ভালই লাগলো ।ভোট রেখে গেলাম ।
প্রান্ত স্বপ্নিল বেলাল ভাই, সরল ভাষায় কথার গাঁথুনি বড্ড ভালো লাগলো। আপনার প্রতিটি লেখা এই বৈশিষ্ট্য বহন করে। এটাকে ধরে রাখবেন আশা করি। ভালো থাকবেন।
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ খুব ভালো লেগেছে ভাই----।।
ইমরানুল হক বেলাল donnobad azaha sultan bhai, aponar mulluban montobbo dear jonno kittogota janai.
Azaha Sultan বেশ লাগল.....দরদভরা কথাগুলো....
ইমরানুল হক বেলাল donnobad kobi bondhu, gobindo bin, amak mulluban montobbo dear jonno asonko kittogota roilo, sobokamna roilo.
ইমরানুল হক বেলাল aponar mulluban montobbo dear jonno aponak donnobad, sahajis Dada, amar Salam o subeccha niben, Ed Mubarak!
ইমরানুল হক বেলাল aponar mulluban montobbo dear jonno aponak donnobad, sahajis Dada, amar Salam o subeccha niben, Ed Mubarak!

২৫ অক্টোবর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ২৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪