* এই বাঁদর! এত বেলা হয়ছে তারপরও দরজা-জানালা বন্ধ করে সব কি করছিস? আর তোর ফোনের কি হয়েছে? ফোন উঠাচ্ছিস না কেন? কথাগুলো বলতে বলতে দরজা ঠেলে সিমি এমনভাবে ঘরে ঢুকল যেন সে পারলে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে।
এদিক থেকে কোন প্রতুত্তর না পেয়ে সিমি আবারো বলে উঠল- • কিরে কানে কিছু ঢুকছে না নাকি? • বল সব ই তো শুনছি। • সব শুনলে আমার কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন? • প্রথমত আমি বাঁদর নই। দ্বিতীয়ত তুই ভাল করেই জানিস আমার ঘরের দরজা জানালা কেউ এসে যদি না খুলে তাহলে তা বন্ধই থাকে। তৃতীয়ত আমার ফোনের কিছুই হয়নি। আর শেষ কথার উত্তর হল ফোন সাইলেন্ট ছিল তাই...। • তুই কি আমার সাথে ইয়ার্কি করছিস? • কেন বলতো? এমন কেন মনে হল যে আমি ইয়ার্কি করছি? • তুই এমনভাবে আমার কথার উত্তর দিলি......।আচ্ছা ঠিক আছে মানলাম ইয়ার্কি করিস নি। তো মহারাজ বেলা ১১.০০ টা পার হল এখন পর্যন্ত ঘরে বসে বসে কি মহাভারত রচনা করা হচ্ছে শুনি একটু? • ভাবছিলাম। • হা হা হা...। আজকাল তাহলে মহারাজের মাথা কাজ করা শুরু করেছে। তা কি ভাবা হচ্ছিল আমাকেও একটু বল শুনি। • যা তো আবারো শুরু করেছিস। তোর কি প্রতিদিন আমাকে ছাড়া আর কোন সাবজেক্ট নেই হাসি-তামাশা করার। বের হ আমার ঘর থেকে। আজ এমনি আমার মনটা ভাল না। • হা হা হা... এ আর নতুন কি। তোর মন কি কখনো ভাল ছিল নাকি? কই আমার তো মনে পরছে না। • প্লীজ লক্ষ্মী বোন আমার, আজ আমাকে জ্বালাস না। আমাকে আজকের জন্য অন্তত ছেড়ে দে। • কেন আজ কি কারও আসার কথা নাকি? নাকি কাল কাউকে কোন কথা দিয়ে এসেছিস তাই এখন আর আমাকে ভাল লাগছে না। আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস মনে হয়? • না আমাকে আজ একটু একা থাকতে দে। প্লীজ আর কিছু জানতে চাস নে। • ঠিক আছে ছেড়ে দিচ্ছি তবে ভাল করে বল তাহলে ছেড়ে দিব। • জান আমার আজকের মত আমাকে ক্ষমা কর, মেহেরবানি করে আমাকে একটু একা থাকতে দাও? • ঠিক আছে বৎস আজকের মত ছেড়ে দিলাম।
শিশির আর সিমির রোজকার এই রুটিন। প্রতিদিন সকালে এসে সিমি যদি শিশিরকে একবার নাজেহাল না করে তাহলে বোধ হয় সিমির সারাদিনের খাবারই হজম হয়না। তবে আজ একটু আগেই যেন শিশির ছাড়া পেয়ে গেল। সিমি এত সহজে তাকে ছেড়ে দেবার পাত্রী না। মনে হয় শিশির এর আজকের আকুতিটা সে বুঝতে পেরেছে। অবশ্য শিশিরকে তারচেয়ে ভাল করে কেউ কখনো বুঝতে পারেনি আর পারবে বলে ও মনে হয় না।
শিশির এর পৃথিবীটা তার ঘর আর সিমি এ দুয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ। ছোটবেলা থেকেই শিশির কিছুটা আত্মমুখি।তার বয়সী ছেলে-মেয়েরা যখন খেলাধুলা আর ছুটাছুটিতে ব্যাস্ত তখন হয়ত সে কোন বড় গাছের নিচে বসে ছোট ছোট ঘাস টেনে টেনে ছিঁড়ছে। নতুবা নির্জন দুপুরে পুকুর পাড়ে বসে আনমনে ঢিল ছুঁড়ছে আর মাছের সাথে কথা বলছে।এমনিভাবে একা চলতে চলতে একদিন সিমিকে পেয়ে যায় একাকিত্তের সঙ্গী হিসেবে। সিমির ও অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের মত অজথা ছুটাছুটি তেমন ভাল লাগত না।
সেই থেকে আজ অবধি শিশির তার সকল দুঃখ-কষ্ট হাসি-কান্না সব ক্ষেত্রে সিমিকে পাশে পেয়েছে। তার যত কথা সব সিমিই জানে একমাত্র। সিমি যে তাকে এত জ্বালায় এতে সে এতটুকু বিরক্ত হয়না। কারন সে জানে সিমি এগুলো করে শুধুমাত্র তার একটু হাসি দেখার জন্য। তাছাড়া এটা তাদের নিত্যদিনের কাজ, এখন সব গা সওয়া হয়ে গেছে।
“শিশির”। সূর্যাস্তের শুরুতে যার আগমন এবং সূর্যোদয় এর ফলে বিনাশ/মরন। আজ সকাল থেকে এটা নিয়েই ভাবছিল শিশির। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে সে। একাউনটিং সাবজেক্ট নিয়ে (যদিও সিমির মতে সে এ বিষয়ে অনার্স পড়ার যোগ্য না, অবশ্য সে যে অনার্সে পড়ছে এটাই সিমির কাছে এক মহা আশ্চর্যের বিষয়। সিমির মতে তার মাথায় গোবর বই অন্য কিছু পাওয়া যাবেনা)। অনার্স লেবেলে যদিওবা পায়নি তবে স্কুল ও কলেজ জীবনে অনেকবারই গল্প বা কবিতার নামকরনের সার্থকতা বিষয়ে পড়েছে। এমনকি পরীক্ষার খাতায় লিখেছেও। সেই মুখস্থ করে পরীক্ষায় দেয়া নামকরনের সার্থকতা তার নিজের জীবনে এতটা মিলে যাবে তা হয়ত সে কখনো স্বপ্নেও ভাবে নি।
তার মাকে তার বাবা পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিল। পরিবার মেনে না নেয়ায় অজানার উদ্দেশে বের হয়ে বসতি গড়ে এই আনন্দপুর গ্রামে। আনন্দপুরবাসি তাদের সব কথা শুনে সানন্দে বরন করে নেয় তাদের। গ্রাম্য সরদারের মহানুভবতায় মাথা গুঁজার ঠাই মিলে যায়। লেখাপড়া জানার ফলে কাজ ও জোটে যায় জুলফু ব্যাপারীর পাঁটের আড়তে হিসাব রাখার কাজে। সবদিক বিবেচনায় আনন্দেই কাটতে থাকে তাদের দিনগুলো। আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে ধরা দিল যখন শিশির এর পৃথিবীতে আসার আগমনী বার্তা দুজনে টের পেল। কিন্তু কথায় আছে বৃক্ষ মরার আগে ফল বেশী দেয়। তাদের দুজনের আনন্দ মনে হয় বেশী দিনের জন্য ছিল না। শিশির এর পৃথিবীতে আসার পর তার মা নিজের কাজ পুরন হয়েছে ভেবে বিদায় জানাল পৃথিবীকে। একদিন এর জন্যও মায়ের আদর জুটল না কপালে। দুধের শিশুকে রেখে চলে গেল মা। আজও সে খুজে পেল না উত্তর কি দোষ ছিল তার। তার মাকে হারিয়ে তার বাবা পাগলপ্রায়। যার জন্য সব ছেড়ে চলে এলো সে কি না চলে গেল। এখানেও আনন্দপুরবাসি তাদের মহানুভবতার দৃষ্টান্ত রেখেছিল। একদিকে যেমন তার বাবাকে তার কথা মনে করিএ শক্ত করার চেষ্টা করছে অন্যদিকে তার দেখাশুনা ও করছিল বেশ যত্ন সহকারে। আনন্দপুরবাসির চেষ্টায় তার বাবা তাকে জীবনের লক্ষ হিসেবে মেনে বাচার চেষ্টা শুরু করল। কিন্তু পেরে উঠছিল না। সংসার টিকিয়ে রাখবে না সন্তান দেখাশুনা। কিন্তু দুদিক সামলানো সম্ভব ছিল না। তাই নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করে সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিল। সংসারে আসলো শিশির এর নতুন মা। সবকিছু জেনে এবং তাকে মেনে নিয়েই আসলো তার নতুন মা।তাই খুব সহজেই তাকে তার মা আপন করে নিল। বাবা-মার আদরে বড় হতে লাগল সে। মা নেই সেই অভাব বুজতে পারল না সে। তার কথা ভেবে তার বাবা আর সন্তান না নেয়ার চিন্তা করেছিল। তাই তার আর কোন ভাই বোন ছিল না। বাল্যকালটা তাই তাকে একাই কাটাতে হয়। সেই থেকে একাকিত্তের সাথে তার সখ্য। যখন থেকে সিমির সাথে পরিচয় তখন থেকে তার পৃথিবীটা কিছুটা বিস্তৃত হয়।
শিশির ও সিমির আজকের খুনসুটি পর্ব খুব তাড়াতাড়ি ই শেষ হয়ে গেল। তার কারন আজ শিশির হার মেনে নিয়েছে আগেই। সিমির নজর এরায়নি এটা । তবে সে আর কথা বারাতে চায় নি বলে সেটা জিজ্ঞেস করেনি। পড়ে জিজ্ঞেস করবে ভেবে চলে গেছে।
কিন্তু শিশির এত তাড়াতাড়ি রনে ভঙ্গ দেবার কারন অন্য কিছু। তার ব্রেইন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। কয়েক দিন যাবতই তার মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। প্রথমে ভেবেছিল এমনি সামান্য মাথা ব্যাথা সেরে যাবে। কিন্তু প্রায়ই যখন এমন হচ্ছিল তখন ডাক্তার মশাই এর কাছে যায়। তিনি সব শুনে কিছুক্ষন চিন্তা করে তাকে বললেন • লক্ষন টা তো ভাল মনে হচ্ছে না আমার তুমি এক কাজ কর পারলে ঢাকা গিয়ে একটা ভাল ডাক্তার দেখিয়ে নাও। • শিশির জিজ্ঞেস করল খারাপ কিছু কি কাকু। • নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না তারপরও পরীক্ষাটা করিয়ে নিলে নিশ্চিত হউয়া যাবে। এই ওষুধ গুলো আপাতত খেয়ে দেখ। • ঠিক আছে কাকু আমি সময় করে ঢাকা গিয়ে নাহয় পরীক্ষা করে আসব। তবে একটা কথা ঢাকা থেকে আসা পর্যন্ত তুমি কাউকে কিছু বলনা। সিমিকে তো না ই বাবাকেও না। • ঠিক আছে বলব না তবে দেরী না করে পরীক্ষাটা করে ফেলিস যেন।
ঢাকা গিয়ে সব পরীক্ষা করার পর রেজাল্ট এর জন্য অপেক্ষা করছিল। কিছুটা ভয় ভয় করছিল। ডাক্তার এসে জিজ্ঞেস করল সাথে কেউ এসেছে কি না। তখনি সে বুঝে গেল রেজাল্ট ভাল কিছু আসে নি। নিজেকে সাম্লে নিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল আমি একাই এসেছি যা বলার আমাকেই বলুন। তখন ডাক্তার সাহেব তার দিকে রিপোর্ট গুলো এগিএ দিয়ে ইতস্তত করতে করতে কথাগুলো বলল। কিন্তু প্রথম কথাটা শোনার পর আর কোন কথা তার কানে ঢুকছিল না। শুধু একটি কথাই প্রতিধ্বনিত হয়ে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল “আপনার ব্রেইন টিউমার হয়েছে”। ডাক্তার কে ধন্যবাদ জানিয়ে সোজা বাড়ির পথে রওনা হয়। রাতেই বাড়ি চলে আসে । কাউকে কিছু না বলে রিপোর্ট গুলো পুড়িয়ে ফেলে। সাড়া রাত শুধু বসে বসে ভেবেছে যে আমি আর মাত্র ১৫ দিনের অতিথি এই পৃথিবীতে। কি পেলাম আমি? কেন আমার সাথেই এমন হল? কোন উত্তরই খুজে পেল না প্রশ্নের।
সিমিকে নিয়ে দেখা সুখের সপ্নতা অঙ্কুরেই মরে গেল। সিমিকে তো বলাই হল না। ভেবেছিল ঢাকা থেকে ফিরেই বলবে ভালবাসার কথা। কিন্তু......। দিনের সূর্যের আগমনে শীতের শিশির এর মরন ঘটায়। তেমনি সুখের সুরজ উকি দেয়া মাত্র তার স্বপ্নের ও মৃত্যু হল। কোন প্রশ্নের উত্তর না পেলেও সারারাত ভেবে নামকরনের মিলটা সে খুজে পেয়েছে। শুধু কষ্ট একটাই রয়ে গেল যে ভালবাসার মানুষটিকে ভালবাসার কথাটিই বলা হল না। রয়ে গেল অব্যাক্তই............।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য
প্রথমে ডায়লগগুলো যেভাবে শুরু হয়েছিল, ভেবেছিলাম হয়ত নাটক হবে। পড়তে পড়তে সেই ভাবটা বদলে গেছে। সিমিকে আমি হলে লক্ষী মেয়ে লিখতাম লক্ষী বোনটা কেমন যেন শেষে এসে বেমানান লাগলো। ...... ভাষার ব্যবহার সুন্দর, প্রবাহ ভাল, পরিনতিও ভাল, শিশিরের ব্যাখ্যা যে ভাবে দেয়া হয়েছে নামটা শিশির হলেই বোধহয় ভাল মানাতো................ সবমিলিয়ে খুব ভালো একটা গল্প বলতেই হয়। অনেক শুভ কামনা।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।