আমি তখন নটরডেম কলেজের ছাত্র। দেশের সেরা কলেজগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে খ্যাত। দেশের সেরা সেরা ছাত্রদের মাঝে নিজেকে কখনো কখনো ভীষণ অসহায় মনে হতো। ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করলাম এই সেরা ছাত্রগুলোর সিংহভাগই আমারই মতন অতি সাধারন আর লুকিয়ে লুকিয়ে ওরা আমারই মত 'মাসুদ রানা', James Bond 007 আর Reader's Digest 'রিডার্স ডাইজেষ্ট' পড়ে আর কলেজ ক্যান্টিনে বসে ক্যাপস্টেন বা ষ্টার সিগারেট ফুঁকে। দিব্যি করে বলতে পারি চেক করা হলে প্রায় সবারই কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে এগুলোর মধ্যে অন্ততঃ দুটা হয়তো পাওয়া যেতোই। পরবর্তীতে বাংলা ম্যাগাজিন 'সাপ্তাহিক বিচিত্রা' অবশ্য রিডার্স ডাইজেষ্টের প্রচার সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল। তখনকার বিভিন্ন বিদেশী গল্প বই, ম্যাগাজিন, তখনকার রিডার্স ডাইজেষ্টে (সম্ভবতঃ হংকং থেকে ছাপা হতো)পড়া কয়েকটি ঘটনা বা গল্প আজও স্মৃতিপটে উজ্জ্বল হয়ে আছে। স্মৃতিপট থেকে নেয়া কিছু গল্প এগুলো...]
ভীষণ ভালবাসতো জন অন্ধ রোজ'কে। অন্ধত্বের কারনে রোজের ছিল বেঁচে থাকার অনিহা, আর পৃথিবীর প্রতি প্রচন্ড ক্ষোভ আর এই ক্ষোভটা ছিল মুলতঃ তার বাবা মায়ের কারণে। জন আর রোজ একসাথেই বেড়ে উঠেছে যদিও জনের ছিল সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম আর রোজ ছিল এক অভাবগ্রস্ত পরিবারের মেয়ে। জনের পরিবারের কেউ পছন্দ না করলেও জন খেলার সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিল রোজকেই। শুধু তাই নয়, জুনিয়র স্কুল পরীক্ষার পর বসন্তরোগে আক্রান্ত রোজের কুমারী মায়ের সাথে সেবা যত্নেও জন কোন কার্পণ্য করেনি। বসন্তে রোজের যখন দুটো চোখই নষ্ট হয়ে গেল তখন যেন আরো কাছে এগিয়ে আসলো জন, আর রোজের কুমারি মা তার বয় ফ্রেন্ডের হাত ধরে বেড়িয়ে পরলেন অজানায়, রোজের কুমার পিতাটির আইনি বাধ্যবাধকতায় দেয় মাসোহারা আর সোশ্যল মানির ভরসায়। তবে তার চেয়েও বড় ভরসা ছিল তার জনের কিশোর মনের আকাশের চেয়ে বিশাল ভালোবাসার প্রচণ্ডতা।
কেটে গেল বেশ কয়েকটা বছর। হাইস্কুল শেষ করে জন ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়ে পড়াশুনার পাশাপশি আয়ের সুযোগ পেয়ে রোজকেও ভর্তি করিয়ে দিলো একটা অন্ধদের স্কুলে। আরো কয়েকটা বছর কেটে গেলে ভাল একটা চাকুরীর নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে মেধাবী যুবক জন মনের গভীরে থাকা কথাটি জানালো রোজকে। গভীর আবেগে রোজ জানালো সেও জনকে ভীষণ ভালোবাসে। তবে অন্ধত্ব নিয়ে বিয়ে সে করবে না কারন সে জনকে দেখতে পাবে না। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেই সে বিয়ে করবে। বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও রোজের জবাব একটাই।
সেরা সেরা ডাক্তার দেখিয়েও কোন লাভ হলোনা। তবে কেউ চোখ দান করলে চেষ্টা করা যেতে পারে।
একদিন সন্ধ্যায় বাসায় এলে রোজ জনকে জানালো তার একটা সুখবর আছে। সে অন্ধদের স্কুলের ডিপ্লোমা অর্জন করেছে। জন জানালো তারও একটা সুখবর আছে। সে রোজকে বিয়ে করতে যাচ্ছে, কারন চোখ দান করার লোক পাওয়া গেছে। আনন্দে আত্মহারা রোজ জড়িয়ে ধরে জনকে বললো - সব তোমারই জন্য।
রোজের চোখের ব্যান্ডেজ খোলা হলো। অবাক বিস্ময়ে রোজ দেখলো জন একজন অন্ধ লোক। জন রোজের হাতটা ধরে বললো, "এখনতো তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছো, এবার কি আমরা বিয়েটা সারতে পারি?"
বিস্মিত রোজ বললো, "একি কথা? আমরা কখনো সুখী হতে পারবোনা। আমিতো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছি। তুমিতো এখনো অন্ধ। অন্ধকে কি আর বিয়ে করা যায়? আমাকে ক্ষমা করো।"
অশ্রুসিক্ত অন্ধ জন স্মিত হেসে মৃদু স্বরে বললো, "আমি বুঝতে পেরেছি। সবসময় আমি তোমাকে সুখী দেখতে চাই। নিজের প্রতি যত্ন নিও। যত্ন নিও আমার চোখ দুটোরও।"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Rashed Chowdhury
বাস্তবতা যখন অমানিশার অন্ধকারে রূপ নেয় তখন চাঁদের আলোয় পথচলা মানুষগুলো সাময়িকভাবে স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে কিন্তু তাইবলে পথচলা তো থেমে থাকবে না , এখন অন্যের গল্প লিখেছেন কিন্তু সেটা যেন ক্ষনিকের অমানিশার মতোই হয় , আমি আপনার অন্যান্য লেখা গুলো পরে বেশ বিমুগ্ধ হয়েছি সেই আলোকেই বলছি পরবর্তীতে যেন আপনার হৃদয়ে জমে থাকা রসে টইটুম্বুর এরকম কিছু পাই , ভালোলাগা রইলো , শুভ কামনা , জন আর রোজের এই ভালোবাসার গল্পটা আমাদের বর্তমান সমাজের সবাইকে পড়া উচিত এই কারণে যে রাতের আগমনে চোরেরা যেমন উল্লাসে মেতে ওঠে অপরদিকে ভোরের আলো ততই তীব্র বেগে ধেয়ে আসতে থাকে ,
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।