সকাল বেলা ফোন কল টি আসার পর থেকেই নাজিফা চৌধুরীর হাত পা কাঁপছে। তবে তা ভয়ে নয়,আবেগে আর উত্তেজনায়। কতদিন পর তার সাথে দেখা হবে। সত্যিই দেখা হবে তো? বিশ্বাস হতে চায় না তার।
বাসা থেকে বের হয়েই রিক্সায় চেপে বসে সে। টুংটাং আওয়াজ তুলে চওড়া রাজপথের ভীড় ঠেলে চলতে থাকে রিক্সা টা। হালকা আকাশ রঙা জামদানী শাড়ির আঁচলের কোনাটি ক্রমাগত প্যাঁচাতে থাকে আঙ্গুলের ফাঁকে। কপালে, নাকের উপর জমতে থাকে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোটা। নাজিফার ভিষন অবাক লাগে। কয়েকদিন আগেও যখন ইতালি থেকে দেশে ফিরেছিল,তখনও কি ভেবেছিল এইভাবে তার সাথে দেখা হতে পারে?
না ভাবেনি সে। বরং একটা সময় পর তার সাথে দেখা হওয়ার সব আশায় ছেড়ে দিয়েছিল সে। ভাবনায় ডুব দেয় নাজিফা।
মাধবীলতা বন্দোপাধ্যায়।
তার সাথে প্রথম পরিচয় কলেজে ভর্তির সময়। একই কলেজের ছাত্রী ছিল দুজন। নাজিফা তখন সবে মাত্র মাধ্যমিক পাশ করেছে। গ্রামে ভাল কলেজ নেই বলে মামার জোরাজুরি তে,অনেকটা ইচ্ছের বিরুদ্ধেই বাবা তাকে শহরের কলেজে ভর্তি করেছিলেন। শহরের কলেজ হোস্টেলেই থাকার বন্দোবস্ত হয় তার। আর সেখানেই এক অদ্ভুত বিকেলে দেখা হয় মাধবীলতার সাথে। জীবনে প্রথমবার নিজের পরিবার,চেনা পরিবেশ, বাবা-মাকে ছেড়ে আসতে হয়েছে বলে কিছু টা শোকে কাতর,অন্য দিকে প্রথম স্বাধীনতার চাপা আনন্দের অনুভূতি নাজেহাল করে ফেলেছিল নাজিফা কে। মনের ভেতর দূর্ণিবার টানা পোড়েনে দ্যোদুল্যমান অবস্থায় নিজেকে শান্ত করার জন্য বসে পড়েছিল জানালার পাশে। ঠিক তখনই চমকে ওঠে সে। তিনতলা এই ঘরের জানালার ঠিক নিচের রাস্তা দিয়ে বাই সাইকেল চালিয়ে চলছে এক মেয়ে। পরনে বেগুনী রঙা জামা,বাতাসে তার খোলা চুল উড়ছে কানের দুপাশ দিয়ে। আচমকা নাজিফা মুখে হাত দিয়ে বলে ফেলে, " এ আবার কোন ধরনের মেয়ে! "
নাজিফার কথা শুনে পাশের বিছানার মিতা এসেও উঁকি দেয় জানালায়,তারপর এক নজর দেখেই বলে,
খানিকটা সময় দাও,ও নিজেই আসবে তোমার সাথে দেখা করতে।
নাজিফা বিস্মিত হয়ে বলে, ও এখানেই থাকে নাকি?
মিতা মাথা নাড়ে।
সেসময় শহরের রাস্তাঘাট মেয়েদের জন্য এতটা খোলামেলা হয়ে ওঠেনি। রেস্তোরায় বসে,কিংবা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গল্পগুজবও তখন ছিল দৃষ্টিকটু। প্রকাশ্যে ছেলেদের সাথে আড্ডাবাজি তখনকার দিনে চরম বেহায়াপনার শামিল। আর রাস্তায় একা বাই সাইকেল চালিয়ে ঘোরার কথা কেউ তো দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারে না। অথচ নাজিফা হতভম্ব হয়ে দেখত, মাধবীলতার কাছে এইসব যেন কিছুই নয়। তার কাজ-কর্ম নিয়ে মানুষের মুখের শত কটুক্তি, কানাঘুষা, ফিসফিসানি কোন কিছুকেই পাত্তা দিত না সে। যেন এইসবের জন্য তার কোন সময়ই নেই। তার এই চঞ্চলতা, চপলতা আর সাহসের জন্য মাধবীলতাকে ভীষণ ভাল লাগত তার। সে প্রায়ই বলত, " বাঁচতে হলে জীবন টা উপভোগ কর নাজু। ছেলেদের জন্য যদি সব ক্ষেত্রে এত ছাড়,তবে আমরা কেন থাকব বন্দি দশায়?
কেন আমাদের সংসারে বন্দি হয়ে থাকতে হবে? এক শরীর গয়না পরে পটের বিবি হয়ে বসে থাকার মানে টা কি? "
নাজিফা চুপ করে শুনত কথা গুলো,কখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত। তারও খুব ইচ্ছে হত, সব বাঁধন কে ছেড়ে চোখ মেলে পৃথিবী টা দেখতে। কখনো বা রাগ হত ভীষণ, সেই রাগ অক্ষমতার।
পড়াশুনোর প্রতি আগ্রহ বরাবরই কম ছিল মাধবীর। উত্তম সুচিত্রার সিনেমার প্রতি তার ছিল প্রবল আকর্ষণ। তবে বেশির ভাগ সময়ই সিনেমা দেখার ইচ্ছে টা তার অধরায় থেকে যেত। সিনেমাহলে অল্প বয়সী মেয়েদের যাওয়া বারণ। এই নিয়ে ভিষণ আক্ষেপ ছিল তার। প্রতি রোববার রাতে হোস্টেলের মেয়েরা গানের আসর বসাতো। মাধবীলতা রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইত, " আমি তোমারও সঙ্গে বেঁধেছি আমারও প্রাণ... "
তবে সে শুধু গানেই, বাস্তবিক ভাবে সংসার তাকে তেমন একটা টানত না, কারো সাথে প্রাণ বন্ধনের ইচ্ছে তার ছিল না বললেই চলে।
দুরন্তপনায় সে ছিল সবার সেরা। একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে ঝুম বৃষ্টি নামল। ভর দুপুর বেলা,রাস্তায় খালি ট্যাক্সির খোঁজে নাজিফা এদিক ওদিক তাকাতে ব্যস্ত। হঠাৎ মাধবী হাত ধরে বলল,এই বৃষ্টি তে ভিজবি?
- এই খোলা রাস্তায়? মানুষ কি ভাববে? পাগল হয়েছিস নাকি? আৎকে উঠলো নাজিফা।
- উফফ,থাম তো তুই। যা ইচ্ছে ভাবুক। আমাদের ওসব দেখার সময় নেই।
তারপর হ্যাচকা এক টানে তাকে নিয়ে এলো রাস্তার মাঝে। নাজিফা তখনও ভয় আর বিষ্ময়ে চুপসে আছে। টুপটাপ বৃষ্টির ফোটা গুলো হঠাৎ ঢল নামালো তাদের শরীর বেয়ে। মাধবী তার এলো চুল মেলে দিয়ে আকাশ পানে মুখ চেয়ে উপভোগ করতে থাকল বৃষ্টি স্নান। এই দৃশ্য দেখে রাস্তার অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়ল, অবাক হয়ে দেখল দুই কিশোরীর বৃষ্টি তে ভেজার চিত্র। এই শহরে এমন ঘটনা আগে কখন ঘটেছে কি না জানা নেই তাদের।
সেদিন হোস্টেলে ফেরার পর হুড়মুড়িয়ে, জ্বর এলো নাজিফার। উথালপাতাল জ্বরে জ্ঞান শূন্য তার পাশে টানা তিনদিন বসেছিল মাধবীলতা। ঘোরের মাঝে নাজিফা দেখত ক্রমাগত তার চুলের ভেতর কোন এক মমতাময়ীর আঙ্গুলের পরশ ছুঁয়ে যাচ্ছে বারবার। তৃপ্ত হত সে,ঘুমিয়ে পড়ত শান্তি তে।
সেবারের পর থেকে মাধবীলতা কে আরো বেশি আপন মনে হত। সে যেন গ্রীষ্মের উত্তপ্ত রাতে হঠাৎ উড়ে আসা কোন আনমনা হাওয়া কিংবা শীতের রাতে এক টুকরো ঠাণ্ডা জোছনা।
সুস্থ হওয়ার পর মাধবী একবার নাজিফা কে বাই সাইকেলের পেছনে বসিয়ে ছুট দিয়েছিল। শাঁ শাঁ করে সাইকেল চলছিল নগরের অলিগলি কে পেছনে ফেলে। তারা এসে থেমেছিল লোকালয় থেকে অনেক দূরে,এক নদীর পাশে। অনেকদিন পর নদীর তীরের খোলা হাওয়াই বুক ভরে শ্বাস নিয়েছিল নাজিফা।
তারপর বেশ কৌতুহল নিয়ে বলেছিল,
- কখনো কারো প্রেমে পড়িসনি মাধবী? ভালবাসিসনি কাউকে?
হেসে ওঠে মাধবীলতা। বলে, কোন ভালবাসার কথা বলছিস? পুরুষের প্রতি ভালবাসা? তবে বলতেই পারি,সে ভালবাসা আমাকে টানে না। এদেশে পুরুষ রা মেয়েদের ভালবাসে না। তারা শুধু চাই এক টুকরো মোমের পুতুল।
তারপর দীর্ঘ একটা শ্বাস নেয় সে। নাজিফা হাত রাখে তার কাধে।
সচকিত হয় মাধবী,তারপর বলতে থাকে তার জীবনের কথা। আর নাজিফা রুদ্ধশ্বাসে শুনতে থাকে।
মাধবীর বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। হাতে কাঁচা টাকার অভাব ছিল না। কিন্তু তবুও সংসারে সুখ ছিল না । মাধবীর মায়ের উপর রাত দিন চলত মানুষিক অত্যাচার। আর পান থেকে চুন খসলেই তা রূপ নিত শারীরিক অত্যাচারে। মাধবী তখন অনেক ছোট। মেয়ে হয়ে জন্ম নেবার জন্য বাবার আদর কখনো পায়নি, বরং বাবার চোখে সে ছিল জঞ্জাল বৈ আর কিছু নয়। অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে তার মা একদিন আত্মহত্যা করে। আর তার ঠাঁই হয় মামার বাড়ি তে। তবে শেখানেও চলতে থাকে অত্যাচার।
তীব্র কষ্ট,বেদনা আর না পাওয়ার যন্ত্রণা ধীরে ধীরে তাকে কঠিন করেছে,করেছে বেপরোয়া। সেই সাথে পুরুষ জাতির উপর তৈরি হয়েছে ঘৃণা, আর ক্ষোভ।
নাজিফা তাকে বোঝায়,
"সবার মধ্যেই ভাল খারাপ আছে। তুই মাত্র কয়েকজন কে দেখেছিস, কিন্তু সবাই তাদের মত নয়। "
মাধবী মাথা নাড়ে। বলে, জানি। কিন্তু আমি এই সমাজ ব্যবস্থা কে ঘৃণা করি, যেখানে মেয়ে রা নিজের মত চলতে পারে না,নিজের ইচ্ছে পূরন করতে পারে না। কেন আমরাও পারব না নিজের মত করে থাকতে?
নাজিফা চুপ হয়ে যায়। সূর্য অস্তাচলে যাত্রা করেছে তখন। দিগন্তরেখা ছুঁয়ে উড়ছে পাখির দল। সেদিকে তাকিয়েই উদাস হয়ে যায় সে। আসলেই তারা পালক কাটা পোষা পাখির মত। যাদের নিজেদের ওড়ার ক্ষমতা নেই। যারা ইচ্ছে করলেই ডানা মেলতে পারে না।বুক ভরে শ্বাস নিতে পারে না। জন্মের পরই অদৃশ্য শেকলে আটকে দেয়া হয় পা দু খানা। এই শেকল বিধি নিষেধের,এই শেকল বন্দিত্বের।
সেদিন হোস্টেলে ফিরেই এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটে। ওয়েটিং রুম পেরুতেই নাজিফা দেখে তার বাবা বসে আছেন। চমকে ওঠে সে। বাবা শীতল দৃষ্টি দিয়ে তাকায় তার দিকে। সে দৃষ্টির শীতলতায় তার পায়ের তলের মাটিও যেন কেঁপে ওঠে। দুলে ওঠে চারিদিক। বাবা অনেক কিছু বলে যায়। নাজিফার মাথায় কিছুই ঢোকে না। শুধু এই টুকু বুঝতে পারে আকার ইঙ্গিত সবটাই মাধবীলতার দিকে। তার সহচার্যেই যে নাজিফা উচ্ছনে যাচ্ছে তা বোঝানোর ত্রুটি রাখে না। মাথা টা ভোঁ ভোঁ করতে থাকে তার। আড় চোখে একবার মাধবীর দিকে তাকায়, তার চোখে টলটলে জল। লজ্জায় নতজানু হয় সে। পরাজিত হয়। চিৎকার দিয়ে বাবা কে থামাতে ইচ্ছে হয়। বলতে ইচ্ছে করে অনেক কিছু। কিন্তু কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে তার। বিমুঢ় হয়ে সে কেবলই দাঁড়িয়ে থাকে।
এই ঘটনার পরই মাধবীলতার সাথে কথাবার্তা বেশ কমে যায়। পরীক্ষার রেজাল্ট হওয়ার পরপরই বাসায় ফিরে যাওয়ার ডাক পড়ে। নাজিফার অনেক ইচ্ছে করে একবার মাধবীর সামনে দিয়ে দাঁড়াতে, কিন্তু সংকোচে সে পথ রোধ হয় বারবার।
বাড়ি ফেরার কয়েকদিনের মধ্যেই নাজিফা মিস থেকে মিসেসে পরিনত হয়। সময়ের অবর্তনে সে জীবনেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে। বছর ঘুরতেই কোলে সন্তান আসে। যুগ পরিবর্তন হয়। দেশের স্বাধীনতার সাথে সাথে আসে মানুষের জীবনেও মুক্তি। স্বামীর চাকরির সুবাদে ছাড়তে হয় দেশ। ছেলে মেয়ে গুলো বড় হয়। তবে তারা বড় হয় নিজেদের মত। স্বাধীন ভাবে। আর তাদের জীবন যাত্রা দেখে বারবার নাজিফার মনে পড়ে যায় মাধবীলতার কথা। কেমন আছে সে এখন? কোথায় আছে? আজ কি সে খুশী? একাল যে আর সেকালের মত নেই। বদলে গেছে অনেক খানি।
হঠাৎ রিক্সা থামতেই সম্বিৎ ফেরে নাজিফার। ভাবনার স্রোত বেয়ে চলে গিয়েছিল অনেকদূর। দ্রুত হাতের মোবাইল ফোন টা দেখে সে। মিতার করা টেক্সট টি বের করে। সেখানে স্পষ্ট করে মাধবীর বাড়ির ঠিকানা লেখা। বেশ কয়েকটা বাড়ি পার হতেই সে খুঁজে পায় কাঙ্ক্ষিত সেই বাড়িটি। থমকে যায় সে। হাত কাঁপতে থাকে। কত গুলো দিন দেখা নেই তাদের? কতগুলো বছর? তিরিশ নাকি চল্লিশ?
আচ্ছা,মাধবীলতা তার সাথে কথা বলবে তো? নাকি আজও তার বাবার ওইসব অপমানজনক কথা গুলো রয়ে গেছে তার মনে?
ভেতরে ঝড় ওঠে নাজিফার। তবুও প্রাণপণ নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে সে। কড়া নাড়ে দরজায়। কিচ্ছুক্ষণ পরই যুবক বয়সী একজন দরজা খোলে। নাজিফা, মাধবীলতার নাম বলতেই ছেলেটি মৃদু হাসে। বলে,আপনি তাহলে মায়ের সাথে দেখা করতে এসেছেন? আসুন,ভেতরে আসুন।
চমকে ওঠে নাজিফা। ছেলেটি মাধবী কে মা বলল। তার মানে এইটা ওর ছেলে? মাধবী বিয়ে করেছে!!
নাজিফার মাথায় অনেক গুলো উত্তরবিহীন প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। আটপৌরে পলেস্তারা খসে পড়া দেয়ালের ড্রইংরুমে, মোলায়েম সোফায় বসে অপেক্ষা করতে থাকে সে। বুকের ভেতর বারবার বিস্ময় ছলকে ওঠে। বিবর্ণ ছাদের দিকে তাকিয়ে কাটাতে চায় উত্তেজনা। হঠাৎ কোন একটা শব্দে সচকিত হয়। মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখে মোটাসোটা চুল পাক ধরা এক মহিলা এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়। পরনে কস্তাপেড়ে শাড়ী। সিঁথি তে সিঁদুরমেঘের রঙ। তাকে দেখে উঠে দাঁড়ায় নাজিফা। অপলক চেয়ে থাকে। তারপরই বুঝতে পারে এই সেই মাধবীলতা। নাজিফার ইচ্ছা হয় তাকে জড়িয়ে ধরতে। হাউমাউ করে কাদঁতে। কিন্তু কিছুই করা হয়না। মুখোমুখি বসে দুজন। কথা হয়। কিন্তু সেদিনের সেই উন্মত্ত আবেগের দেখা পাওয়া যায় না আর। মাধবীলতা তার সংসারের কথা বলে, জীবনের গল্প শোনায় এক পরিপূর্ণ গৃহিণীর মত। কিন্তু নাজিফা তার চোখে সেই চঞ্চল রোদটিকে খুঁজে পায় না। খুঁজে পায়না সে মাধবীলতা কে,যে স্বাধীনতা চায়তো,যে মুক্তি চাইত বন্দিত্ব থেকে। বারবার মনে হয় নাজিফার, এই মাধবী কে তো সে চায়নি। তার সামনে থেকে উঠে আসার জন্য হাঁসফাস করে সে। কোন এক সময় বনফুলের একটা গল্প পড়েছিল, নাম পাঠকের মৃত্যু। এক যাত্রী ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় থাকাকালীন অপর এক যাত্রীর নিকট থেকে একটা বই ধার করে পড়ছিল। রুদ্ধশ্বাসে বইটি পড়ার পর শেষ অংশে গিয়ে দেখল বইটির শেষ কয়েকটি পাতা নেই। তারপর থেকেই সে মনের মধ্যে বয়ে নিয়ে বেড়াত,সে বইটির প্রতি তীব্র তৃষ্ণা। বহুবছর পর একদিন আবার সেই বইটি হাতে পেল সে। কিন্তু এইবার পড়তে বসেই সে আগ্রহ হারাল। মনে হলো,কি এমন ছিল বইটি তে যে সেদিন স্টেশনে অমন ভাবে পড়েছিল?
নাজিফার মনে হলো, আজ তার মনের মৃত্যু ঘটেছে। যে মাধবীলতার দেখা পাওয়ার আশা এত গুলো বছর লালন করেছিল সে,আজ তাকে সামনে পেয়েও বড্ড সাধারণ মনে হচ্ছে।
বেরিয়ে আসে নাজিফা মাধবীলতার বাড়ি থেকে। শহরের অলিগলি দিয়ে এগুতে থাকে সে। অথচ তার ভেতরে অনবরত ভাংচুর হতে থাকে। আবেগের কান্নায় ভাসতে থাকে বারবার। তার চোখ খুঁজতে থাকে বহু বছরের পুরানো একটা ছবি কে। শাঁ শাঁ করে একটা বাই সাইকেল ছুটছে নগরের রাজপথে। দুই কিশোরী সেই সাইকেলে চড়ে চলে যাচ্ছে অনেক দূর। তারা ছুটছে কাঙ্ক্ষিত এক আশার পিছে। সে আশা মুক্তির, সে আশা স্বাধীনতার।