প্রস্থান

দুঃখ (অক্টোবর ২০১৫)

সাবিহা বিনতে রইস
  • ১৩
  • ৬৭
লাইব্রেরীর বারান্দায় এসে দাড়াতেই দেখলাম
বৃষ্টিতে চারিদিক একাকার হয়ে আছে।সকালে
কলেজের লাইব্রেরীতে যখন ঢুকেছিলাম,তখন
আকাশের মুখ ভার।আর এখন তার কান্নায় থৈথৈ
অবস্থা।স্যান্ডেল জোড়া খুলে হাতে নিয়ে রাস্তায়
নেমে এলাম।ভেজা রাজপথের সিক্ত স্পর্শে পুরো
শরীরটা জুড়িয়ে গেল।এই বৃষ্টি টা কয়েকদিন আগেও
আমার বড্ড অপছন্দ ছিল।বৃষ্টি মানেই আমার বদ্ধ ঘরে
নাক কুচকে বসে থাকা।তিথী অবশ্য একদম আলাদা।ওর
কথায় বৃষ্টি হচ্ছে স্বর্গ ছেড়া ঝর্নাধরা।বৃষ্টি
আসলেই ও আমার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে,

-"আপু চল না!প্লীজ চল!দেখবি ভিজতে কত্ত ভালো
লাগে"

-উফফ!যা তো!বিরক্ত করিসনা আমাকে!
আমি ওর হাত ছাড়িয়ে দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিই!

-আচ্ছা থাক,তোকে ভিজতে হবেনা।অন্তত ক্যামেরা
টা নিয়ে ছাদে চল!আমি ভিজবো,তুই ছাতা নিয়ে
দাড়িয়ে আমার ছবি তুলে দিবি!

আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্যামেরা নিয়ে ছাদে এসে
দাড়ায়।
দীর্ঘক্ষনের বৃষ্টিতে কনক্রিটের ছাদ প্রায়
বরফ হয়ে থাকে।আমি কাঁপতে কাঁপতে নিচে নেমে
আসি।ছোটবেলায় একবার নিউমোনিয়া
হয়েছিলো,সেই থেকে বৃষ্টিটা আমার কাছে
অ্যালার্জীর মত।তার থেকে বরং আমি রোদ্রই
ভালবাসি।রোদ পড়া নির্জন দুপুরে আমাকে ছুটে
বেড়াতে ইচ্ছে করে বাধাহীন প্রান্তরে।পথের
পাচাঁলী দূর্গা হতে ইচ্ছে করে ভীষণ।
অথচ আমার এই বৃষ্টি বিদ্বেষী মনটা হুট করে পালটে
দিল ইমন ভাই।

ইমন ভাই বৃষ্টি ভালবাসে।তার মতে যারা নাকি
বৃষ্টি ভালবাসেনা,তারা নাকি অন্য কাউকে
ভালবাসতে পারেনা।বৃষ্টি হল আকাশের কান্না।
আকাশের এত কান্না দেখেও যার মন গলেনা,সে
কিভাবে একজন মানুষের চোখের ২ফোটা অশ্রুর দাম
দেবে?
আমি মগ্ন হয়ে শুনি আর অবাক হই।আসলেই ইমন
ভাইয়ের কথার যথেষ্ট যুক্তি আছে।

ইমন ভাই প্রায়ই বলে, "তন্বী তুমি বড্ড বেরসিক।এই
বয়সে কিসের এত গম্ভীরতা?তিথীকে দেখছো কি
প্রাণচাঞ্চল্য তার মধ্যে?ওর বোন হয়ে কিভাবে তুমি
এইরকম?"
আমি চুপ করে থাকি।আমার ভীষণ কান্না পায়।
আসলেই আমি কিচ্ছু পারিনা।
আমার মুখ ভার দেখে হেসে ফেলে ইমন ভাই।তারপর
বলে,

-তবে তন্বী..একটা জিনিস কিন্তু তুমি বেশ
পারো!

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করি,কি জিনিস ইমন
ভাই?
ইমন ভাই বলে,এই যে মনখারাপ করে মুখ টা একদম
মায়াবতীর মত করে ফেলা।
আমি লজ্জায় লাল হয়ে ইমন ভাইয়ের হাসি শুনতে
থাকি।কি অদ্ভূত সুন্দর হাসি তার!!
ইমন ভাই তাগাদা দেয়,তন্বী অংক গুলো দ্রুত শেষ
করো!
আমি খাতার দিকে শুধু তাকিয়েই থাকি,আমার
কানে বার বার প্রতিধ্বনিত হতে থাকে ইমন ভাইয়ের
হাসির শব্দ।

রাতে ঘুমিয়েও আমি ইমন ভাইকে দেখতে পাই।দেখি
সবুজ প্রান্তর জুড়ে শুভ কাশফুলের মেলা।আমি ইমন
ভাইয়ের হাত ধরে কাশবনের মধ্যে দিয়ে হেটে
যাচ্ছি।ইমন ভাই হাসছেন,হেসেই যাচ্ছেন।আমি রাগ
দেখিয়ে বলি,ইমন ভাই এভাবে সবসময় হাসবেন না
তো।ইমন ভাই সাথে সাথে মুখ গম্ভীর করে ফেলে!
-কেন?হাসলে খুব খারাপ লাগে বুঝি?
আমি মনখারাপ করে বলি,আপনি কিচ্ছু বোঝেন না
ইমন ভাই!এত সুন্দর হাসি অন্য কোন মেয়ে শুনলে সেই
তো আপনার প্রেমে পড়ে যাবে!
ইমন ভাই আবার হেসে ফেলে,এবার আরো জোরে শব্দ
করে হাসে।অদ্ভূত মায়াময় হাসির শব্দে আমার ঘুম
ভেঙে যায়,সারারাত আর ঘুমাতে পারিনা আমি।

টিপটিপ বৃষ্টি টা ক্রমশ জোরে হচ্ছে।ব্যাগে
রেইনকোর্ট,ছাতা রাখা আছে।বের করতে ইচ্ছে
করেনা আমার।আজ শুধু উপভোগ করার দিন।রাস্তায়
একটি বাচ্চা মেয়ে কাঠগোলাপের মালা বিক্রি
করছে।দুধে কাচা হুলুদ মেশানো রঙ কাঠ
গোলাপের,আকাগে কখনও খেয়ালই করিনি।সেদিন
পড়ানোর সময় ইমন ভাই তিথিকে বলছিলো,কাঠ
গোলাপ নাকি উনার প্রিয় ফুল।সেদিন থেকেই আমি
আমার শিউলি ঝরা সকালবেলা প্রীতি একপাশে
সরিয়ে রেখে কাঠ গোলাপকে প্রিয় বানিয়ে
ফেললাম।
ইমন ভাইয়ের জন্য আরো কত কিছুই না শিখেছি!সাদা
মাটা চোখে কাজল লাগাতে শিখেছি,চুলে হাত
খোপা বাধা শিখেছি,নতুন করে মেহেদি দেওয়াও
শিখেছি।আমার চুপ করে মুখ লুকিয়ে থাকা
স্বভাবটাকে ঝেড়ে ফেলে চড়ুই পাখির মত ডানা
মেলাও শিখেছি।

বাসায় ফিরেই দেখলাম তিথী হারমোনিয়াম নিয়ে
বসেছে।গলা ছেড়ে গাইছে

"এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে,এসো করো স্নান
নবধারা জলে।
দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ,পরো দেহ ঘেরি
মেঘনীল বেশ"

রবীন্দ্র সঙ্গীত বরাবরই তিথী অসম্ভব ভালো গায়।
আমি মুগ্ধ হয়ে ওর গান শুনতে থাকি।তিথীকে আজ খুব
বেশি অন্যরকম দেখাচ্ছে।বয়সে আমার থেকে মাত্র
২বছরের ছোট হলেও সব ক্ষেত্রেই আমার থেকে অনেক
বেশি পারদর্শী।

-আপু,,তুই কাউকে পছন্দ করিস?

তিথীর মুখে এই প্রশ্ন শুনে প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও
নিজেকে সামলে নিলাম।কেন যেন মনে হলো তিখী
বোধহয় আমার মনের কথা বুঝে ফেলেছে।

-কেন?তা জেনে তুই কি করবি?
-তোকে একটা কথা বলবো,কাউকে বলবি না তো?
-হুম বল!
-আগে বল, বলবি না?
-আচ্ছা ঠিক আছে!
-ইমন ভাইকে খুব বেশি ভালবাসি আপু।আমি জানি
ইমন ভাইও আমাকে....

তারপর লজ্জায় লাল হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়
তিথী।

প্রচন্ড জ্বরে মাথা টা ভোঁ ভোঁ করছে।বাইরে বৃষ্টির
শব্দ বাড়ছে।ও ঘর থেকে তিথীর গুনগুন গানের আবছা
সূর ভেসে আসছে।আমি দেখতে পাচ্ছি শুভ্র কাশবনের
মধ্যে দিয়ে হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে ইমন ভাই আর
তিথি
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ইমরানুল হক বেলাল অনেক সুন্দর একটি গল্প ।
নাইম ইসলাম ভালো লিখেছেন, ভালো লাগলো, শুভেচ্ছা...
পারভীন ভাল লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ আপু
রেজওয়ানা আলী তনিমা ভালো লাগলো। অজস্র শুভেচ্ছা ।
অনেক ধন্যবাদ :)
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ অসম্ভব সুন্দর একটা গল্প ! কিন্তু সুনির্মল কবিতা হিসেবে মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে । যদিও গল্পের সাথে কাব্যময়তা জড়াজড়ি করে হাসছে ! তবুও কেন যেন মনে হচ্ছে, এটা কবিতা না হয়ে গল্প হলে ভাল হতো ! অবশ্য এখন কবিতা আর গল্পের মধ্যে অনেক সময়ই ব্যবধান রচনা করা আমাদের জন্য বেশ কষ্টকর ! ভবুও বলবো, ভাল লিখেছেন ।
এফ, আই , জুয়েল # বেশ ভালো---, অনেক সুন্দর গল্প ।।
হুমায়ূন কবির অনেক ভালো লাগলো , শুভেচ্ছা রইলো.
Fahmida Bari Bipu আপনার লেখা পড়লাম।আপনার গল্পের প্লট টা ভাল লেগেছে আমার। আপনার পরিবেশনাও খারাপ ছিল না। যে অনুভূতি আপনি ধারণ করছেন, সেটাকে সঠিকভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করতে হবে।আপনি ভাল লিখতে পারবেন, কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। লেখায় বানানের ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে, স্পেসিং ঠিক হচ্ছে কিনা দেখুন। একটা লেখা শেষ করার পর বেশ কয়েকবার পড়ুন, পারলে অন্য কাউকে দিয়ে পড়ান। তার মন্তব্য খেয়াল করুন। অন্যদের লেখা পড়ুন, বিশেষ করে ভাল লেখা। শুভকামনা ও ভোট রইল।
অনেক ধন্যবাদ আপু,,বিষয় গুলো মাথায় রাখব অবশ্যয় :)
Mir An-Nazmus Sakib শুভ কামনা রইলো

২৩ সেপ্টেম্বর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪