আমি. 
নিজেকে যোগ্য প্রমান করার সুযোগ হয়নি কখনও। বাপের রক্ত পানি করে কামানো টাকায় লেখাপড়াটা শেষ করেছি। বাংলাদেশে সৎ মানুষের, তার উপর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের চাকুরী পাওয়াটা দুঃসাধ্যই। কথায় বলে না "ইজ্জত যায়না ধু\'লে/ আর খাছলত যায়না ম\'লে"। বাবার মতো আমিও যে অন্যায়গুলো চোখ বুজে মেনে নিতে পারিনা। 
শেষে পোড় খাওয়া বাস্তববাদী বাবাই আমাকে রক্ষা করলেন। নানার বাড়ী থেকে মায়ের অংশের পাওয়া জমিটুকু বিক্রি করে টাকাগুলো আমার হাতে তুলে দিলেন- 
: বাবা, সম্বল বলতে মাথা গোজার ঠাইটুকুই বাকি আছে। আর যা ছিল তা তোর হাতে রইল। তোর ছোট আরো তিনটা ভাই। হাতের টাকাগুলো শুধু কাগজের টাকা ভাবিস না। এখানে ছয়টা প্রাণ। তোর হাতে বাঁচবে নয়তো ধ্বংস হয়ে যাবে। 
- বাবা আমিতো ব্যবসার কিছুই বুঝিনা। আমাকে সাগরে ফেলে দিতে চাচ্ছ কেন? 
: চাকুরী যে তোর জুটবে না তাতো বুঝতেই পারছি। তাই দেখ যা পারিস কর। 
পনের লক্ষ টাকা! লেখাপড়া করার সময় মনে হতো, যদি এতগুলো টাকা পেতাম একটা পুরোনো গাড়ী কিনে প্রেমিকা রোকেয়াকে নিয়ে কত মজা করে ঘুরে বেড়াতাম! আর আজ হাতে টাকাগুলো পেয়েও মনে হচ্ছে, "এ টাকার কত ওজন! আমি কী এর ভার নিতে পারব?" 
চাঁন মিয়া. 
বাবা যে জুট মিলে চাকুরী করেন সেই মিলের যাচনদার চাঁন মিয়া, বাড়ী শরিয়তপুরে। বাড়ীর পাশে থাকার সুবাদে তার মেসে গিয়ে সিগারেট ফোকার কাজটা নির্বিঘ্নেই সারা যায়। আজও চাঁন মিয়ার মেস ঘরে বসে সিগারেট ফুকছি। 
: ভাইজান পড়াশুনাতো শেষ। চলেন ঈদের বন্ধে আমার বাড়ীততন গুইরা আইবেন। গেরামে গেলে আফনের বালা লাগব। 
- আরে তুমি বেড়ানো নিয়া পড়ছ। আমার এদিকে মাথা খারাপ। 
: কি অইছে ভাইজান? 
-ব্যবসা করতে হবে। জমি বিক্রি করে বাবা টাকা দিয়েছেন। 
: তাইলে ভাইজান আমার লগেই লন। আমাগো হোনে ভাল পাট অয়। আর এইবার ব্যবসাও ভাল অইব মনে লয়। 
চাঁন মিয়ার কথায় মনে হলো মেঘ চাইতেই জলের ছোয়া পেলাম। আমি রাজি হয়ে যাই। 
নুরু লস্কর. 
শরিয়তপুরে মিলগুলোর কোন পাটক্রয় কেন্দ্র নেই। সে তুলনায় পাশের জেলা মাদারীপুরের চরমুগুরিয়ায় অনেকগুলো মিলের পাট ক্রয় কেন্দ্র আছে। চাঁন মিয়ার কল্যাণে সেখানে নুরু লস্কর নামে একজন অভিজ্ঞ পাট খরিদের ফড়িয়ার বাড়ীতে ঠাই হলো। ফেরি জটিলতায় দেরি হওয়ায় প্রায় বিকেল হয়ে গেছে সেখানে পৌছাতে। নুরু লস্করকে দেখে একটা ভাল লাগা সৃষ্টি হলো সাথে সাথেই। ষাটোধর্্ব বয়স, প্রায় ফুট খানেক লম্বা কাঁচা পাকা দাড়ি। কপালের মাঝখানটায় কালো দাগ দেখে বুঝতে অসুবিধে হলোনা লোকটা পাঞ্জেকানা নামাজি। 
সন্ধায় হাতমুখ ধু\'য়ে উঠোনে মোড়ায় বসে আছি। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ কিছুই চিনি না। এতগুলো টাকাও হাতে। আল্লাহ্ মালুম ভাগ্যে কি আছে। কুপির আলোতে বসে আছি। সামনে নুরু লস্করের মেয়ের ঘরের ছোট নাতিটা এসে মাটিতে খেলতে শুরু করেছে বয়স হবে ৬/৭ বছরের মতো। আমি ওকে ডেকে নাম জিজ্ঞাসা করলাম- 
: তোমার নাম কী? 
মুখে বিস্তর হাসি ফুটিয়ে ন্যাংটোটা নুনুটা দুহাতে ধরে রেখে বললো 
- সুনা মিয়া 
আমি হাসি চেপে রাখতে পারছিনা কোন ভাবেই। কারণ আমাদের এলাকায় পুরুষের যৌনাঙ্গকে এ নামে ডাকা হয়। মজা করতে আমি আবার বললাম 
:কী নাম বললে? 
আগের চেয়ে বেশি হাসি ফুটিয়ে শরীরটা এদিক সেদিক দুলিয়ে মোচড়াতে মোচড়াতে বলল। 
-সুনা মিয়া। 
হাসতে হাসতে আবার জিজ্ঞেস করলাম তাহলে তুমি যেটা ধরে রেখেছ সেটা কী? 
মুখটা নীচু করে কাচু মাচু হয়ে বলল 
-এইয়া ধোন। 
কী অবলীলায় সত্যি বলে যায়। শহরে এই বয়সী কেউ এভাবে বলবে? গ্রামের প্রতিটা মানুষের সরলতার প্রতীক যেন সোনা মিয়া। 
নুরু লস্কর হাসতে হাসতে সামনে মোড়া পেতে বসলেন। 
=কী ভাই নাতিটার সাথে কতা কইতাছেন? ওইডা বড় দুষ্ট। বোঝলেন মাইয়াডা জামাই মরণের পরেততন আমার এই হানেই থাহে। গরে একটা মুরগী আছিল নাতীডার খুব শখের, আজকা রাইতে খাওনের জন্য কাটছি। হেল্লেইগা রাগ কইরা লেংটা হইয়া রইছে। 
আমার অবাক লাগলো। এতক্ষন ধরে সোনা মিয়া আমার সামনে বসে আছে, কই একবারওতো মনে হয়নি ছেলেটা রাগ করে আছে! শহরবাসী আমরা কী পারব কখনও ভাই-বোনের প্রিয় জিনিষটাকে অতিথির জন্য বিলিয়ে দিতে? আমার চিন্তার রেশ টেনে ধরে নুরু লস্কর- 
=লন চাইড্ডা খাইয়া হুইবেন। সেই বেয়ানে উডন লাগব। কাল কাজীর হাটে যামু। বহু বছর ধইরা হাড করি না। গাও-গেরামের সুখের দিন আর আগের মতো নাই। পাডের ব্যপারও অয়না আগের মতন। আমনে আইছেন বইলা যাওয়া অইব। 
রান্না করা মুরগীর মাংস পারলে পুরোটাই আমার পাতে ঢেলে দেন নুরু লস্করের বউটা। 
-নাতী খান। ডাহা সহরে আফনেরা এমুন সাদের মাংস পাইবেন না। আর চাইড্ডা ভাত লন। 
কোন মত খাওয়ার অত্যাচর শেষ করলাম। অত্যাচার বলছি এ কারণে ভাতগুলোয় যেন মনে হলো মাছি মরে পড়ে আছে। বাছতে গিয়ে দেখলাম মোটা ইরি চালের ভাতে কালো চাল গরমে ফেটে গিয়ে এমন দেখাচ্ছে। কিন্তু পেটের ওজনটা ঠিকই বেড়েছে। এত স্বাদের খাওয়া আসলেই অনেক বছর খাইনি। 
কাজীর হাট. 
পরদিন, আসলে রাত তখনও ফুরোয়নি। ভোর তিনটায় নুরু লস্কর আমাকে ডেকে তুললেন। আমার অবস্থা ছিল তথৈবচ। পনেরলক্ষ টাকার থলেটা বুকের সাথে যক্ষের ধনের মতো চেপে নিয়ে শুয়েছিলাম শুধু। সেখানে ঘুম ছিল সুদূর পরাহত। কখন কী হয়ে যায়। কোথা দিয়ে টাকাগুলো নিয়ে যায় কেউ। নাহ্ চাঁন মিয়ার উপর এতটা বিশ্বাস নিয়ে চলে আসাটা বোকামীই হয়ে গেল কিনা। 
আমার সমস্ত চিন্তার অবসান ঘটিয়ে নুরু লস্কর যখন ডাকলেন; কিছুটা হাফ ছাড়তে পারলাম। তখনও আকাশের কোথাও আলোর দেখা নেই কাকগুলোও ডেকে ওঠেনি। বড় একটা নৌকা ঘাটে বাধা ছিল। আমি ভাবতেও পারিনি এতবড় নৌকা দেখব। সেই ছবিতে দেখা গঞ্জের ঘাটে ভেরা পাল তোলা নৌকার মত, শুধু পালের বদলে তাতে যুক্ত হয়েছে ইঞ্জিন। 
বিস্মিল্লাহ্ বলে নৌকায় উঠে বসলাম। আরোহী আমরা তিনজন, আমি নুরু লস্কর আর একজন কয়ালী-ইউনুস মাদবর। একে আমি আগে দেখিনি আর কয়ালী কী জিনিস সেটাও আমি জানিনা। নুরু লস্কর আমার আগ্রহ মেটালেন, ও পাটের ওজন করবে মনপ্রতি ওকে হিসেব করে টাকা দিতে হবে। 
নৌকাটা চলতে আরম্ভ করল। পূব আকাশে আলোর একটা ক্ষীণরেখা ফুটে উঠছে। ঢাকায় কখনো এই দৃশ্যটা দেখা হয়ে ওঠেনি। নদীর দু'কুলে যতদূর চোখ যায় শুধু পাট ক্ষেত। দুই পুরুষ উচ্চতার পাট গাছগুলো সগর্বে দাড়িয়ে আছে। 
পাঁচটা নাগাদ কাজীর হাটে এসে পৌছলাম। ছোট ছোট কোষা, ডিঙ্গি নৌকায় অল্প অল্প করে সোনালী পাট নিয়ে এসেছেন চাষীরা। আমাদের নৌকাটায় সেগুলো ভিড়িয়ে দাম-দর হচ্ছে। আমি হারিকেনের আলোয় ক্যালকুলেটর নিয়ে বসে আছি। নুরু লস্কর আর কয়ালী ইউনুছ মাদবর দুজনে পাটের মান এবং ওজন আন্দাজ করে দেখছেন আর আমাকে পরিমান বলছেন। আমি যতক্ষনে ক্যালকুলেটর টিপে হিসাব বের করছি ততক্ষণে আরো পাঁচজনের কাছ থেকে পাট নেয়া হয়ে গেছে। 
আমার নৌকায় একটা ভীড় লেগে যায়। সেটা দেখে নুরু লস্কর আর ইউনুস মাদবর হেসেই খুন। চলন্ত নৌকায় পাট কেনা হচ্ছে একটু থামার অবকাশ নেই, মাপার উপায় নেই, হিসাব করে যে দাম বের করব তার উপায় নেই। এ কেমন খরিদদারী রে বাবা। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলাম। 
টাকার থলেটা নিয়ে নুরু লস্করের কাছে গিয়ে দাড়ালাম, 
: নানা আমার আর কাজ নেই আপনিই দাম বলে দেন। 
-ঠিক আছে নানা তাই অইবে। 
নুরু লস্কর পাট দাম করে নিয়ে পরিমান মত দাম বলে দিচ্ছেন আর আমি তা কৃষকের হাতে তুলে দিচ্ছি। বিংশ শতাব্দীর কম্পিউটার যন্ত্রও মাদারীপুরের নুরু লস্করের কাছে হার মানে। মাঝে মাঝে ইউনুছ মাদবর পাটের এক একটা ধরা (পাঁচ কেজি ওজনের পাট এক সাথে বাধা) আলাদা করে রাখছেন ওজন করছেন সেটায় আধাকেজি কম পাওয়া যায়। গড়ে সেই কৃষকের সব ধরায় আধাকেজি করে কম ধরে হিসাব করা হয়। কৃষকেরও কোন অভিযোগ নেই তাতে। আমিও তার দেখাদেখি একটা ধরা আলাদা করে ওজন করি, কৃষক হাসেন। মেপে সেটায় আধা কেজি বেশি পাই। সে অনুযায়ী দাম দিতে গেলে কৃষক নিতে রাজী হন না। 
এ এক মধুর সম্পর্ক ফড়িয়া শব্দটা আমাদের কাছে যতটা ঘৃণার এখানে ততটাই আপন কৃষকের কাছে। আশেপাশের নৌকার চেয়ে আমার নৌকায় ভীড় বাড়তে থাকে। কারণ বুঝতে পারি না। গড়ে একহাজার টাকা দরে চৌদ্দশত মন পাট কেনা হয়ে যায়। সময় লাগে মাত্র তিন ঘন্টা। নুরু নানাকে পাট কেনা বন্ধ করতে অনুরোধ করি, টাকা নেই বলে। তবুও নৌকায় ভীড় কমে না। 
আমার অবাক হবার আরো অনেক বাকি। নুরু নানা বললেন 
=আরো পাঁচশতমন পাট না কিনলে পোষাইবেনা। 
আমার মাথায় আঘাত পড়ার অবস্থা হয়। মনপ্রতি দশটাকা করে নুরু লস্কর আর ইউনুস মাদবরকে দিতে হবে। নৌকা ভাড়া আর অন্যান্য খরচের সুরাহা কিভাবে হবে ভাবতে থাকি।আবারও দু'জন মিলে হাসতে থাকেন। ভেতরে ভেতরে চিন্তায় মরে যাই। টাকা পাব কোথায়? আমার ভেতরের হাহাকার যেন নুরু লস্করকে ছু\'য়ে যায়। 
-নানা টাহার চিন্তায় আর অস্থির অওয়া লাগবেনা। এরা বাকিতে দেবে। 
বলে কী! পাগল নাকি? আমাকে চেনে না, জানে না, জীবনে দ্বিতীয়বার এখানে আসব কীনা তাও জানে না আমাকে বাকিতে দিবে! 
আমার চিন্তা শক্তি সত্যিই লোপ পায়। আমার কাছে পুরোটাই একটা ঘোরের মত মনে হয়। একি বাংলাদেশে আছি আমি! যেখানে স্বার্থের জন্য সন্তান বাবাকে, ভাই ভাইকে খুন করে সেখানে এই অজপাড়াগায়ের প্রান্তিক কৃষক আমার মত একটা অচেনা অজানা নব্য ব্যবসায়ীকে বাকিতে পাট দিবে। নুরু লস্করকে নৌকার ভার বুঝিয়ে দিয়ে ছোট একটা নৌকায় চড়ে আমি নেমে যাই পাড়ে। শুধু বলে যাই 
: সামনের ব্রীজের গোড়া থেকে আবার উঠব, একটু হাটটা ঘুরে দেখি। 
উপলব্ধি: 
আমার চোখ ছানাভরা হয়ে যায়। এতবড় হাট হতে পারে? পুরোটা ঘুরে দেখতে হলে হাতে দু'দিন সময় নিয়ে বেরুতে হবে। কী নেই হাটে! নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই আছে। শহরের আমরা সুপার মার্কেট নিয়ে যে রকম প্রচার আর আদিখ্যেতা দেখাই, এমন একটা হাটের কাছে সেগুলো স্রেফ পিঁপড়ার মত মনে হচ্ছে। সামনে বিশাল জায়গা জুড়ে সোলার (পাটখড়ি) সারি অনেক নৌকায় তোলাও হচ্ছে সোলা। খবর নিয়ে জানলাম এখান থেকে বেশ কয়েকটা পারটেঙ্ মিলে যাবে এগুলো। আর যেগুলোর মান একটু খারাপ, দেখতে কালো সেগুলো কেনা হচ্ছে চুলার লাকরী হিসাবে। রান্নার জ্বালানী হিসাবে পাটখড়ির বিকল্প এই গ্রামগুলোতে কিছু ভাবাই যায় না। 
আর একটু সামনে এগিয়ে একটা ভীর দেখলাম। সেখানে বেশ কয়েকজন কৃষক তাদের পাটে আগুন দিচ্ছেন। মাথা খারাপ হয়ে গেছে, নির্ঘাত মাথা খারাপ হয়ে গেছে এদের। নিজের কষ্টে ফলানো হাজার টাকা মনের পাটে কেউ নিজের হাতে আগুন দেয়। পেছন থেকে একটা কোমল হাত আমার মাথা স্পর্শ করে; নুরু লস্কর। 
- চলেন নানা, নৌকায় যাই। 
: ওরা নিজেদের পাটে আগুন দিচ্ছে কেন? 
-নানা আপনেরে দেইখাই বুচছি আপনে এর আগে ব্যবসা করেন নাই। এই কয়দিন পরে ঈদ, ওরা পাট বেচছিল শিপারের কাছে ওরা ভারতে কাঁচা পাট বেচে। আর আদমজী মিলডা বন্ধ অইয়া পাটের বাজার নষ্ট অইছে। পাট কেনার মানুষ নাই। আর এই কৃষকগুলা অল্প অল্প পাট নিয়ে আসে বেচতে, সেই টাকায় বাজার করে, সংসার চলে। ঈদ, পূজা-পার্বন সব কিছু এখানে পাট। ধান ওডার পরে এইহানে পাট ছাড়া আর কোন ফসল অয় না পানি উইট্টা যায় বইলা, হুদা ধান দিয়া বছরের খরচতো চলে নারে ভাই। পাট ছাড়া আমাগো চলার কোন উপায় নাই। সরকার আইন করছে ক্রয় কেন্দ্রে নগদ টাহায় পাট বেছা যাইবে। পাট নেওয়ার পর হেরা যাচাই করবে, বাছাই করবে, মাপবে দিন পার, অপিস টাইম শ্যাস পরদিন আহো। আর হ্যাগো ধারে খুচরা পাড কেনার সময়ও নাই। আমাগো কী আর দোহানদাররা বাহি দেবে? এই যে আইজ্জ নানা, আপনেরে বাকিতে পাট দিলে, আপনেরে চিনে না জানে না, হ্যাতে কি বুজলেন? 
: আমারওতো খুব আশ্চর্য লাগছে। ওরা কেন এমন করল? 
-হ্যাগো কি আর উপায় আছে? বাড়ি ফিরাইয়া নিয়া গেলে আবার শুকাওরে পাহারা দেওরে কত্ত জামেলা। হ্যারতন আপনেরে দিয়া দিছে। টাহা পাইবে এইয়াই শান্তনা। শীপারগো দিলে হ্যারা গোডাউনে ফালায়া রাখবে। যহন পাট বাজারে থাকবেনা তহন বেচবে দ্বিগুন টাহায়। হেরা পাট লইয়া কিছু টাহা দেয়, বাকিতা বাজাইয়া রাহে, বেইচ্চা টাহা দেয়। তয় নানা আপনে হাডে আইয়া ভালা অইছে। পাটের বাজার পামু আমরা। আম্মে বাচলে মোরাও বাচুম। 
হায়রে কৃষক এত সহজ করে মনের দুঃখ চেপে ফসল ফলাও, আর হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতিদিন লেন-দেন হয় শেয়ার বাজারে, যেখানে সব হারাতে হয় অনেককে। কিছু মানুষ কী আসতে পারেনা এই কৃষক বাঁচাতে, দেশ বাঁচাতে? সৎ ব্যবসায় হয়তো লাভ কম হবে কিন্তু মানুষ বাঁচবে অনেক। আমি এই পাটের বিল কবে পাব তারওতো কোন ঠিক নেই। আরো দুটা চালান পাট কেনার টাকা যদি থাকতো আমার! তাহলে হয়তো ওদের কিছুটা হলেও উপকারে আসতাম। এখন ওদের বিশ্বাসের দাম কি দিতে পারবো। নুুরু লস্কর আমার মনের দরজা খুলে দেয়। এই পাট আছে বলেইতো এতগুলো জুট মিল চলছে। সেখানে চাকুরী করে বাবা আমাদের মানুষ করতে পেরেছেন। 
নৌকা বোঝাই পাট নিয়ে ক্রয় কেন্দ্রে ফিরি। ফিরতে ফিরতে মনে পরে এ দেশের সরকার, নেতা-নেতৃদের কথা, আইনের কথা। কত বড় বড় বিবৃতি, সভা-সেমিনার, আর কোথায় আমার কৃষক নিজের ঘরে আগুন দেয়। এই আইন-কানুন, সমাজ-রাষ্ট্র সবই শুধু ধনীদের রক্ষায় ব্যস্ত। পেটের জ্বালানী দেয় যে কৃষক তার কথা কী আমরা সত্যিই মনে-প্রাণে অনুভব করি? গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলোর কাছে নগদ পনের লক্ষ টাকা ততটা লোভনীয় নয় যতটা দিন যাপনের চিন্তাটা বড়। অনেক বলতে ইচ্ছে করে। মনে পড়ে নুরু লস্করের ছোট নাতিটার কথা, কেন যে সত্য কথাগুলো তোর মত করে বলতে পারিনা "এইয়া বেবাক.........................। 
[[আইনের অপপ্রয়োগ, কিছু স্ব-বিরোধী আইন, এবং আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতির বাস্তবতা এই গল্পের উপজীব্য, কাউকে কটাক্ষ, অবজ্ঞা, অশ্রদ্ধার ইচ্ছে থেকে নয়। বাস্তবেই এই অভিজ্ঞতাটা হয়েছিল কাজীর হাটে পাট কিনতে গিয়ে। চরিত্রগুলো সত্যি এবং ঘটনাও। এই হাটগুলোতে নগদ টাকা নিয়ে যেতে হয়, আধূলীটাও হিসেব করে বুঝিয়ে দিতে হয় কৃষকদের। কৃষকদের পক্ষ থেকে সেখানে কোন দুশ্চিন্তা নেই, তবে মাঝে মাঝে ডাকাত পরে, সব ছিনিয়েও নেয় অনেকের। গল্প পড়ে আমার কৃষকদের (যারা এ দেশের সূর্য সন্তান) প্রতি যদি কিছু মানুষের শ্রদ্ধা বাড়ে সেটাই আমার বড় পাওনা]]             
                        
            
            
            
                        
            
            
                        
            
         
        
               
   
    
                    
        
        
            
            
                 ১৯ জানুয়ারী  - ২০১১ 
                                        
                            গল্প/কবিতা:
                            ৩৫ টি
                        
                    
            
            
         
     
    
        
বিজ্ঞপ্তি
        এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
    
    
        প্রতি মাসেই পুরস্কার
        
            বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
        
        
            লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
            
                - 
                    
                    
                        প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
                     
 
     
    
        
        বিজ্ঞপ্তি
        “নভেম্বর ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
        প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী