সাবিহা আজ দু’দিন ধরে গরুর ঘরে বসে আছে।স্বামী তাকে মেরেছে, অপরাধ হল গরুকে দুপুরে খাবার দিতে ভুলে গেছে।তিন ছেলেমেয়ে আর বুড়ো শ্বাশুড়ী নিয়ে শাবিহার সুখের সংসার!স্বামীটা খারাপ না কিন্ত বুড়ো শ্বাউরি নানান দোষ ধরতেই থাকে সাবিহার। ছেলে যখন বাড়ি ফেরে তখন বউ এর নামে নানান নালিশ করতে থাকে,ছেলে কখনো চুপ থাকে আবার কখনো মাথা গরম করে,বউকে ধরে পেটায়।কিন্ত আজকের অপরাধ বিশাল বোবাজীব টাকে খাবার না দিয়ে ছেলে নিয়ে সোহাগ করা!তারপর আবার দুপুরের রান্নাও হয়নি শেষ।বজলু মায়ের উপর রাগ করে আজ সাবিহাকে অনেক বেশীই মেরেছে।পিঠের কয়েক জায়গা কেটে গেছে।পাশের বাড়ীর রুনুর মা এসে কয়েকবার মলম লাগিয়ে দিয়ে গেছে,জোর করে ক’এক শুনিয়ে শুনিয়ে গালমন্দ করে গেছে।‘কোন মানুষকে এভাবে পশুর মত মারে?পরের মেয়েকে এভাবে মারলি!আল্লাহ সইবেনা,ঘরে যারা বড় থাকে তাদেরও বুজতে হয়।এত যে পরের মেয়েকে মার খাওয়ালে এখন তোমার জন্য ¬¬রানবে কে?কথাগুলো বলতে বলতে রুনুর মা চলে গেল।সাবিহা দু’দিনে অনেক কেঁদেছে,শরীরটাও দুর্বল হয়ে গেছে।কিন্ত জেদ কমেনি,বজলু সাবিহাকে মেরে এখানে রেখে গেছে আর বলেছে,আইজ থাইকা এখানে গরুর লগে থাকবি তুই।খবরদার ঘরে যাবি না।ঘরে গেলে তোরে আমি শেষ কইরা ফালামু।ছোটবেলায় বাবা মা মারা যাবার পর সাবিহা মামাবাড়িতে মানুষ হয়েছে ।গরিব মামা বিয়েতে কিছু দিতে পারেনাই তাই নিয়েও সাবিহাকে অনেক কথা শুনতে হয়,সাবিহার বড় দু ভাই,মাঝে মাঝে আসে হাতে করে বাচ্চাদের জন্য ফল বা মিষ্টি নিয়ে কখনো কখনো আদর আপ্যায়ন হয় আবার কখনো অপমানিত হয়ে চলে যেতে হয়।সাবিহা তো জানে ভাইদের অবস্থা,দিন আনে দিন খায় ওদের ছেলেমেয়েরাই না খেয়ে থাকে।তারপরেও সাবিহা ভাইদের সাথে ঝগড়া করে,মামার কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে।সাবিহার যখন বড় ছেলে হল তখন মামা একটি সোনারআংটি দিয়ে নাতিরমুখ দেখে গেছে,সাবিহার শ্বাশুড়ি খুব খুশি হয়েছিল।সবাইকে ডেকে ডেকে দেখিয়েছে।
সাবিহার বড় ছেলে এবার ক্লাস ফাইভ এ পড়ে,মেয়েটা পরে ফোরে আর একটা ছেলে ছ’মাস বয়স।ছেলেমেয়ে দুটি স্কুল থেকে ফিরে ঘুরঘুর করছে একবার গোয়ালঘরে একবার দাদির ঘরে যাচ্ছে,খেতে চাইছে কিন্ত রান্না হয়নি।দাদির চলাফেরার শক্তি নেই তাই সারাদিন শুয়েই কাটে।নাতিদের ঘ্যানঘ্যানে বিরক্ত হয়ে অনেক কষ্টে লাঠি ভর করে গেল রান্নাঘরে।কিভাবে কি করবে, বুড়ির অনেক পরিশ্রম হবে এটা বুঝতে পেরে বুড়ি ওখানেই বসে পড়ল আর চিৎকার করে সাবিহাকে গালমন্দ করতে লাগলো ।মাইয়াপোলাগুলা কি না খাইয়া থাকব?আমি আর আমার পোলায় না হয় দোষ করছি ওরাতো করে নাই,আমাগো লাইগা রান্দিস না অগো লাইগা তো রান!অতো তেজ ভালো না,অরম কত মাইর খাইছি আবার সব ভুইলাও গেছি,তোর মত অত তেজ কইরা বইসা রইনাই।শ্বাশুরির গলা শুনে সাবিহা উঠে দাঁড়াল,মাথাটা ঝিম ঝিম করছে গতকালও ওরা প্রায় না খেয়েই ছিল রুনুর মা দুপুরে ডেকে দু ভাইবোনকে খাইয়েছে রাতে আর সকালে মুড়ি খেয়ে কাটিয়েছে,এখন খুদায় ওরা কাঁদছে মা হয়ে কি কিরে বসে থাকবে সাবিহা।তাছাড়া বুড়ি যেভাবে গালমন্দ করছে এখন যদি সাবিহা রান্না না করে ওদের বাবা বাড়ি ফিরলে কিনা আবার অশান্তি শুরু হয়,কোলের বাচ্চাটাকে দাদির ঘরে রেখে সাবিহা রান্নাঘরে চলে গেল।অনেক কষ্ট করে দুটো ভাত ফুটিয়ে ওদের খাইয়ে সাবিহা আবার গিয়ে গোয়ালঘরে ঢুকল।বিকেলে বজলু বাড়ি ফিরে দেখে ছেলেমেয়েগুলো ঘুমিয়ে গেছে।বজলুর সারা শরীরে ধুলোবালি ক্ষেতে কাজ করে এসেছে গোছল করা দরকার কিন্ত অনেক ক্ষুধা লেগেছে গোছল করে আসলে তো ক্ষুধাটা আরো বেড়ে যাবে,মাকে ডেকে বলল,ও মা!খাওয়ের কিছু আছে?পাতিলে ভাত আছে লইয়া খা।গোছল করে এসে বজলু খেতে বসেছে,আজ রান্না হয়েছে,সাবিহাই করেছে খেতে বসে বজলু তা বুঝতে পেরেছে।সাবিহার জন্য বুকের ভেতরটা হঠাৎ মুষড়ে উঠল,মারটা বেশিই হয়ে গেছে ঐদিন।মাঝেমাঝে কিযে হয়!মাথাটা বেশি গরম হয়ে যায়,বজলু চুপচাপ খেয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল।সাবিহাকে কেউ বলল না খেতে,আজ সারাদিনে রুনুর মা আসেনি।
রাতে বজলু আসল সাবিহাকে ঘরে নিতে।ছোট ছেলেটাকে শাড়ির আচল দিয়ে ঢেকে সাবিহা গুটিসুটি মেরে শুয়েছিল।মশা ভ্যানভ্যান করে উড়ছে এইতিনদিনে সাবিহার গায়ের রক্ত বোধহয় কমিয়েছে কয়েক কেজি,বাচ্চাটার সারা গায়ে লাল লাল গোটা উঠে গেছে মশার কামড়ে।সারা রাত বাচ্চা নিয়ে গোয়াল ঘরে থাকা সম্ভব নয় তাই বাচ্চাটা যখন ঘুমিয়ে পরে তখন দাদির কাছে শোয়ায়ে রেখে আসে।আজ যখন বাচ্চাটা ঘুমিয়ে পরেছে উঠে দাড়াল ওকে ঘরে রেখে আসার জন্য,সামনে তাকাতেই দেখে বজলু দাঁড়িয়ে আছে।হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে নিতে চাইলো সাবিহা দিলনা।বজলু সাবিহার মাথায় হাত রাখল বলল,আমার অন্যায় হইছে আর তোরে এরম মারুমনা,এহন ঘরে ল,সাবিহার জেদ আরো বেড়ে গেল শক্ত হয়ে ছেলে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।বজলু আরো কাছে গিয়ে সাবিহাকে কাছে টানতে চাইল কিন্ত সাবিহা শক্ত হয়েই দাঁড়িয়ে রইল।‘আর গোস্বা করিসনা এইবার ঘরে ল’।সাবিহা তীক্ষ্ণ চোখে বজলু দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’এহন রাইতে আমার কথা মনে হইল তমার,দিনে মনে ছিল না?’সাবিহা কথা বারাইসনা কইলাম তো আমার ভুল অইছে এবার ক্ষেমা দে,আর ভাল লাগতাছে না।আমারও কি ভালা লাগছে এইতিন দিন!রাগের মাথায় যা হইছে হইয়া গেছে এবার আয় ঘরে যাই,সাবিহার হাত ধরে বজলু ওদের ঘরের দরজা পর্যন্ত নিয়ে আসলো কিন্ত সাবিহা বজলুর হাত ছাড়িয়ে আবার গোয়ালঘরের দিকে চলে গেল।বজলুর এবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল কিন্ত কিছু বলল না আবার সাবিহাকে মানাতে শুরু করলো,টানাটানির একপর্যায় বাচ্চাটার ঘুম ভেঙ্গে গেল আর কান্না শুরু করে দিল।বজলু এবার জোর করে বাচ্চাটা কোলে তুলে নিল, সাবিহা এবার আর জোর দেখাল না বজলুর পিছন পিছন আসতে শুরু করলো।বজলুর জামার আস্তিন টেনে ধরল সাবিহা,আমি ঘরে যামু না কইলাম,বজলু ফিরে তাকাল সাবিহার দিকে,দ্যাখ সাবিহা বাড়াবাড়ি করিস না,ভাল বুইজা ঘরে নিতে আইছি অত দেমাগ দেহাইস না কপালে খারাবি হইব’।হোক খারাবি,খারাবি কি কম হইছে।যা,যা এহান দিয়া!তোর লাইগা গোয়ালঘরই ঠিক আছে বলে লাথি মারল বজলু,সাবিহা ছিটকে পরে গেল,ও মাগো বলে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল সেই সাথে শুরু করল গালাগালি।বজলু ঘুরে এসে আবার কয়েকটা লাথি দিয়ে ঘরে চলে গেল।চিৎকার চেঁচামিচি শুনে বজলুর মা উঠে আসলো সেও কতক্ষণ বকাবকি করে ঘরে চলে গেল।আজকের রাতও সাবিহার গোয়াল ঘরে কাটল,সারারাত সাবিহা ঘুমালো না,কখনো ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদল,কখনো গলা ফাটিয়ে শাপশাপান্ত করল।নিস্তব্ধরাত অনেকদূর পর্যন্ত সাবিহার গলা শোনা যাচ্ছে কিন্ত ঘর থেকে কেউ বেরিয়ে আসলোনা।এধরনের ঘটনা গ্রামের ঘরে ঘরে ঘটে,কারো ঘরের ব্যাপারে মাথা না ঘামানোই ভাল।আর রাতের ঘুম হারাম করে কেই বা আসবে!দিনেরবেলা হলে হয়ত লোক জমে যেত।দশ কথা হত আরো ঝগড়া হত।সাবিহার বড় ছেলেমেয়ে দুটো ঘুম থেকে উঠে এসে মাকে জড়িয়ে ওরাও কাঁদছে।ঘর থেকে দাদি ডাকছে,ও রহিমা,ও সাব্বির আয় দাদু আমার কাছে আয়,মায়েরে লইয়া ঘরে আয়।রহিমা মায়ের হাত ধরে টানছে চল মা ঘরে চল,দাদি ডাকে এইবার চল।সাব্বিরও উঠে দাঁড়াল,হ মা চল এইহান দিয়া চল,কি মশা!তোমারে খাইয়া ফালাইব।রহিমা সাব্বির দুজনেই মাকে উঠাতে চেষ্টা করছে,দাদি কইছে বাবায় কইছে অহন তুমি ঘরে চল মা, তোমারে না লইয়া আমরা যামু না। ওরে রহিমা রে! ওরে আমার বাপ সাব্বির!আমি ঘরে যাইতে পারমু না,ক্যান মা,ক্যান পারবা না ক্যান?বাবায় তো তোমারে কইছেই ঘরে যাইতে অহন তো আর তোমারে মারবো না।সাব্বিরঃএইবার বাবায় তোমারে মারলে আমি ঠেকামু তুমি চল ঘরে।না রে বাপ, আমি যামু না তোরা যা।হাল্কাঅন্ধকার রাত কিন্ত নির্জনতার মাঝে রাতপোকাদের কিরি কিরি আওয়াজে কেমন গা ছম ছম করে।গরুগুলো পাশেই বাঁধা চুপচাপ বসে জাবর কাটছে,বোবাপ্রাণী হলেও যেন ওরা সব বুঝতে পারছে তাই সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,একটু পরে পরে লেজ দিয়ে মশা তাড়াচ্ছে।দু’ভাইবোন মশার কামড়ে অস্থির হয়ে গেল হাত পা চুলকাচ্ছে আর মাকে টানাটানি করছে,ওমা লও ঘরে লও।সাবিহা এবার কান্না বন্ধ করে ছেলেমেয়েকে কাছে টেনে আদর করলো,বলল তোরা ঘরে যা বাপ আমি আসতেছি,না তুমি না গেলে আমরা যামু না।শোন মা,আমি যদি এহন ঘরে যাই তয় তোর বাবায় আবার গোস্বা অইব,ওরা সবতে ঘুমাইলেই আমি ঘরে যাইয়া ঘুমামু আমার লাইগা তোমাগো পাশে যায়গা রাইখ আইচ্ছা বাপ!তুমি মিথ্যা বলতে আছোনাতো মা? না না মা আমি সত্য সত্য আসমু।তোরাএহন ঘরে যা,এবার ওরা মায়ের কথা শুনলো ধীরে ধীরে ওরা ঘরে চলে গেল।মায়ের জন্য জায়গা রেখে দু’ভাইবোন মিথ্যা বিশ্বাস নিয়ে ঘুমিয়ে গেল।
খুব সকালে রুনুর মা ঘুম থেকে উঠেই এদিকে চলে আসলো।রাতে চেঁচামিচি শুনেছিল কিন্ত রুনুর বাবা রাগারাগি করবে এই ভয়ে ঘর থেকে বের হয়নি,সকালে ঘুম ভাঙতেই বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠল।রাতটা কেটেছে ভীষণ দুশ্চিন্তা যে জেদি মেয়ে!কি করে বসে কে জানে।গোয়াল ঘরে সাবিহা নেই,গেল কই!তাহলে মনে হয় রাতে ঘরেই নিয়ে গেছে বজলু।যাক তাহলেই ভাল।রুনুর মা গোয়াল ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানের দিকে চলে গেল।চারপাশে এখনো অত আলো ফোটেনি সব ঘরের মানুষজনও উঠেনি,আবছা অন্ধকারে উত্তরদিকের জঙ্গলের দিকে একটি ছায়ামূর্তি!কে দাঁড়িয়ে আছে অখানে? কি যেন মুখে ঢালছে রুনুর মা যা বোঝার বুঝে গেছে যা ভয় করেছিল তাই ঘটতে চলেছে।রুনুর মা দৌড়ে গিয়ে সাবিহার হাত থেকে বোতলটা টেনে নিয়ে পায়ের কাছে ফেলে ভেঙ্গে ফেললো।এই আবাগির বেটি পোড়াকপালী!কি করতে চাইছিলি?নিজের কথাই ভাবলি তিন তিনডা সাওয়ালের কথা একবারও চিন্তা করলি না?তুই কি বলদ,ওরে আইজ তুই মরলে কাইলকাই বজলু বিয়া কইরা ঘরে নতুনমানুষ আনবো অগো কিছু অইবো?কিচ্ছু অইবো না,তোর ছাওয়ালগুলা লাথিগুতা খাইবো। আরে আবাগির বেটি!বলতে বলতে সাবিহার দুই গালে চড় লাগিয়ে দিল,চারপাশের ঘর থেকে লোকজন বেরিয়ে আসতে লাগল,কৌতূহলী চোখে দেখছে ওদেরকে আর বুঝতে চেষ্টা করছে ব্যাপারটা।রুনুর মা সাবিহাকে টেনে ঘরে নিয়ে গেল।রুনুর মায়ের তীক্ষ্ণ আওয়াজে বজলুর ঘুম ভেঙ্গে গেল।ধড়ফড় করে উঠে বসল বিছানায়।এই দ্যাখ বজলু তোর বউ কি করতে গেছিলো!বজলু হতবাক হয়ে চেয়ে রইল,সব শুনে বজলু ঘাবড়ে গেলো,কোন কথা বলতে পারল না,আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে সাবিহার কাছে গিয়ে দাঁড়াল,সেদিন ক্ষেতে পোকার বিষ দিয়েছিল শেষ বিকেলে বাড়ি ফিরে এই বোতলটা তাড়াহুড়া করে রান্না ঘরের দাওয়ায় রেখে গোসল করতে চলে গিয়েছিল পরে আর মনে নেই কিন্ত কাজটা ঠিক হয়নি ছেলেমেয়ের ঘর সাবধান হওয়া উচিত ছিল।এই সুযোগটা সাবিহা কাজে লাগিয়েছে লুকিয়ে রেখেছে নিজের কাছে বিষের বোতল।রুনুর মা দু জনার মাঝে এসে সাবিহাকে আড়াল করে বলল,খবরদার বজলু!তুই আর ওর গায় হাত দিবি না।তিন তিনডা সাওয়ালের বাপ মা তোরা।না,না ভাবী ওরে আর আমি মারুম না,কিন্ত তুমি ওরে জিগাও তো সত্য কইরা ও কউক,ওরে আমি জানের মধ্যে রাখছি কিনা!এই ঘটনা তো নতুন না!ওয়ে এত বোজে আমার মনের কথাডা বোজেনা!সাবিহার বাহু ধরে বজলু জোরে জোরে ঝাঁকি দিয়ে বলল,এই সাবিহা এই! কি করতে গেছিলি?এই কারনে কাইলরাতে ঘরে আসোস নাই?এই কাম করবি হের লাইগা?ক্যান করমুনা।আপণে কি করছেন?আমারে গরুর মত মাইরা গরুর লগেই থাকতে দিছেন।কোন খাওন না ঘুম নাই,আমি কি মানুষ না!সাবিহা আবার কাঁদতে শুরু করল।বজলুঃআমি না ওয় গোস্বা অইছিলাম তুই ঘরে আইলিনাক্যান?আমি কি হারাদিন ঘরে আছিলাম?তুই রানতি অগোরে খাওয়াতি,তুই খাইতি।মানুষের কি গোস্বা সারাক্ষণ থাকে?হের পরে তোরে আমি ঘরে আনতে গেছিলাম না?তোর দারে মাফ চাইছিনা?তোর এত জেদ কেনরে?এই জেদের কারনে তোর একদিন সর্বনাশ অইব দেহিস।রুনুর মাও এবার কথা বলে উঠল,এমন কাম আর করিস না রে।বাইরে উঠানে ইতিমধ্যে অনেক লোক জমে গেছে। কতক্ষণ সাবিহাকে কতক্ষণ বজলুকে আবার কতক্ষণ সাবিহার শ্বাশুড়িকে কথা শোনাচ্ছে,রুনুর মা মান অভিমানের মাঝে আর থাকলো না।
বেলা বারোটার দিকে সাবিহাদের উঠানে আবার হট্টগোল শোনা গেল,হঠাৎ করে কয়েকটা মুরগি ছটফট করতে করতে মরে গেল,কেউ একজন জোরে চিৎকার করে বলছে,ও সাবিহা! তোর পোলা এহানে পইরা আছে ক্যান?ও বজলু !ও রহিমা!তোরা শীগগির আয় এদিগে,হায় আল্লাহ এইডা কি অইলো?মাসুম বাচ্চাডা কি দোস করল!সবাই দৌড়ে আসল,সাবিহার কোলের বাচ্চাটা নিথর হয়ে পরে আছে উঠনের কোনে।উঠানে বসে খেলছিল ভাইবোনদের সাথে, কখন যেন হামাগুড়ি দিয়ে এখানে এসেছে কেউ খেয়াল করেনি।সকালে এখানেই বিষের বোতলটা ভেঙ্গে গিয়েছিল।সাবিহা গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে ওখানেই ফিট হয়ে গেল।রুনুর মা দৌড়ে এসে সব দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল,হায়রে! আমি ক্যান বোতলডারে এহানে ফালাইলাম,অ আল্লাহ একি অইল!