মায়া

দুঃখ (অক্টোবর ২০১৫)

শেষ আলো
  • ১২
সরু একটা গাঙ যে গাঙ সংযুক্ত করেছে পদ্মা এবং মধুমতি নদীকে, তার পাশে ছোটো একটা গ্রাম । যে গ্রামে বাস করে বেশ কিছু পরিবার । যারা আপদে বিপদে ঝগড়া করে, হাসি আনন্দে মিলেশে থাকে । আপনার হয়ত ভাবছেন ঝগড়ার কথা কেন বললাম? কারন গ্রামে মাঝে মাঝে জমি নিয়ে ঝামেলা হয় এতে ঝগড়ার সৃষ্টি হয় আবার ভুলে তারা মিলেও যায় ।
সেই গ্রামের একজন বাসিন্দা মোঃ রাজা মিয়া যার অনেক নাম ডাক আশেপাশে দশ গ্রামে কারন সে আকজন ডিগ্রি ধারী লোক যা সে সময়ের সময় কম পাওয়া যেত তার পর সে সরকারি একটা ভাল চাকুরি করত এবং তার বাপ-দাদার আমলের অনেক সম্পত্তি পেয়ে ছিল সব মিলিয়ে তার নাম ডাক ছিল অনেক । লোক ছিল শত সহজ সরল এবং দেখতেও ছিল নায়কদের মত এ মন্তব্য টা অবশ্য তার মেয়ের বান্ধবীরা বলত আসলেও সে দেখতে সুন্দর ছিল ।সব দিক দিয়ে তার রাজ কপাল ছিল । মোঃ রাজা মিয়ার ছোট মেয়ে ছিল যাকে সে বুড়ি বলে ডাকত। বুড়ি সারা পাড়াময় ঘুরে বেরায় খেলে বেরায় পাড়ার ছেলে মেয়েদের সাথে ।গ্রামে মাষ্টার কাকার স্কুলে পরে সে যেটি তাদের গ্রামে । যে স্কুলে তাদের জমি আছে গ্রামের কয়েক জন প্রাভশালি মিলে এই স্কুল গ্রামে স্থাপন করেছে তাদের পাড়ায় । আশেপাশে গ্রাম অন্য পাড়া থেকেও সবাই আসে এই স্কুলে। বুড়ি খুব মজা পায় গ্রামে সে ঢাকায় যেতে চায় না । গ্রামে যে কি মজার খেলা খেলে সবাই আসলে যে গ্রামের জীবন কাটাই নি সে বুঝতে পারবেনা । তবে এখনকার সময় গ্রামের সেই মজার জীবনটা নেই । আমি গ্রামে গেলে সেই স্বাদ পাই না । এখন সবাই আত্ন কেন্দ্রিক ।
গ্রামে ছেলে মেয়েরা সবাই যেত বিকেলে মাঠে গরু ছাগল চরাতে । তখন তারা নানা ধরনের খেলা খেলত । বুড়ি গরু ছাগল ছিলনা তাওসে ত্তদের সাথে যেত তাকে বাড়ি থেকে যেতে দিতনা তাও সে যেত. কারন তার ভাল লাগত তাদের সাথে খেলতে। যখন তাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হত সে গ্রামের মায়ায় কাঁদত । গ্রামে ছিল সব মুরব্বিরা চাস্ত কাকা, কাকী কাকাত ভাই বোন সবাই মিলে গ্রামে খুব ভাল কাটত । তখন কার সময় তাদের গ্রামে মাঠ থেকে কচুর মুখি তোলা হত যা দিয়ে গ্রাম্য অঞ্চলে খাটা তৈরি করা হত তা সবাই মিলে উঠানে বসে খেত । গরমের সময় গ্রামের আম তলায় বসে পাঁচ গুটি, লুডু খেলত আর আম পরলে কুরিয়ে খেত । সবার কাছে শুকনা মরিচ আর লবণ গুড়া করা থাকত, ছুরি থাকত ।বৃষ্টি হলে বুরিদের বারান্দাই সবাই খেলত । বুড়ি খেলে খুব মজা পেত অদের সাথে। বুড়ীদের পালান অনেক বড় ছিল মাঝে মাঝে অদের পালানে সবাই খেলত বুড়ির আপুরাও খেলত ।বুড়ি গাছে ওঠা খেলত যার নামছিল গাইছো মাইছো যেখানে চোর কে গুণতে দিয়ে দ্রুত গাছে উঠতে হত । বর্ষায় নদীতে মাছ ধরা গাঙ্গের পানিতে গোসল করা । গ্রামে যত ধরনের খেলা আছে সব খেলত বুড়ি । তবে গ্রামের ছেলে মেয়েদের মত অত ও পারতনা । আসলে বুরি গ্রাম শহর দুই জাইগাতে থাকত তাই গ্রামের খেলাটা কম হত । তবে শহরে বুড়ি খেলাই পটু ছিল আসলে গ্রামের অভিজ্ঞতাতো । এই ভাবে গ্রাম শহর করে বুরির দিন ভালই আনন্দে কাটছিল । সে গ্রামে গেলে সবাই খুশি হত বুরির মস্টার চাচা অর জন্য সব সময় এক সেট বই রাখত গ্রামের স্কুল শহর সব জায়গার তার ভর্তি থাকত । সব শিক্ষক তাকে ভালবাসত ।তাদের বাড়ির মুরব্বি বড় কাকা বুড়ি গেলে খুব খুশি হত । বাড়িটাকে মনে হত ভরা বাড়ি উপরে বটের ছায়া আছে তার নীচে সবাই নিশ্চিন্তে আশ্রয় নিয়েছে ।
ধীরে ধীরে বুড়ি বড় হতে থাকে কিন্তু এখন আর বুড়ির গ্রাম ভাল লাগেনা সে আগের মত আনন্দ পায় না গ্রামের কেউ আর খেলে না মেয়ারা হাই স্কুল উঠার পরে তাদের স্বাধীনতা তেমন নেই সবাই বাড়ির কাজ করে । ছেলেরা সব মাঠে গিয়ে খেলে । বুড়ির খুব কষ্ট হয় ও খেলতে পারেনা যাদের সাথে একদিন সে খেলত তারা এখন ঘর মুখি । বুড়িকেও এখন সব জায়গায় জেতে দেওয়া হয়না , বাড়ির ভিতরেও মেয়েরা খেলেনা সাবাই যে জার মত অনেকের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে । এখন শহরেও বুড়িকে খেলতে দেওয়া হয়না । এটা একমাত্র ওই মেয়েটা বুঝতে পারবে যার স্বাধীনতা বা নিজেস্বত্বা চার দেওয়ালে বন্দি হচ্ছে । জানালায় দাড়িয়ে অনন্যার স্বাধীনতা দেখছে যেটা সে এত দিন যাপন করেছে । গুমরে গুমরে কাঁদা ছাড়া আর কিছুকরার নাই অনেক সময় তো জানালার সামনে যাওয়া বারান সব মেয়েই এই দুঃখ পেয়ে থাকে ।তাদের কৈশোর টাই শুরু হয় এই দুঃখ দিয়ে আর আভাবেই নিজের আনন্দ ভাললাগ হারিয়ে ফেলতে থাকে জীবনের শেষ দিনপর্যন্ত অনন্যর মত করে । এই নিশেদ মেনে বড় হতে থাকে বুড়ি, এটা শুধু একাটা বুড়িরই গল্প না আগুনেতিক বুরি আছে সমাজে , দেশে, বিশ্বে ।যাই হক এখনও বুড়ি গ্রামে যায় আস্তে আস্তে মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে এই পারিপারশিকতার সাথে কিন্তু মনে নিতে পারেনি । কিন্তু আর তার আগের মত ভাল লাগেনা । তাদের বট ছায়া আছে কাকা কাকিরা আদর করে এখন তার বড়বেলা ।
বুড়ির বাবা আসুস্থ । কিছু দিন পরে বুড়ির বাবা মারা গেলেন। বুড়ি আগে মৃত বাড়ী যেতে ভয় পেত কিন্তু আজ বুড়ীর বাড়িতে মৃত্যু কিন্তু বুড়ি আজ সেভাবে ভয় পাচ্ছেনা । কারন তার আপন জন মারা গেছে তার ভয় পয়ার মত কোন অনুভুতি নাই ।চলে গেল বুড়ির মাথার ছায়া , তার বিপদের নির্ভয়তা ,তার আবদার রাখার তাকে ভালবাসার আপন জন ।তার বাবা কাশির শব্দ শোনা যাবেনা যেটা অনেক দূর থেকে শুনতে পাওয়া যেত বোঝা যেত বাবা বাড়িতে আসছে । এখন আর কার কাছে জোর করে টাকা চাইতে পারবেনা, কাউকে বলবেনা আমার বই কেনার টাকা লাগবে, ভর্তির টাকা দিয়ে কেউ বলবেনা ভর্তি রশিদ দেখাবি যা বাবা কখন দেখতনা , হলে যাওয়ার সময়ই আর বুড়ি বাবার কাছে আর আবদার করবেনা আর কিছু টাকা বেশি দাও, বুড়িকে বাবা আর হলে দেখতে যাবেনা অর জন্য এটা অটা নিয়ে যাবেনা । বুড়ির কত বার পদ্মা পাড়ি দিয়েছে ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত বাবার সাথে ।যদিও বুড়ি একা চলতে পারে এখন । বুরির ভিতরের সব ভয় কষ্ট এখন চলে গেছে আর কার মৃত্যু তাকে সেই কষ্ট দেয়না তার বাবার মৃত্যু সব কষ্ট কে ছাপিয়ে গেছে এ কষ্ট কে কোন কষ্ট ছুতে পারেনা ।
তার বাবার মৃত্যুর এক বছর পর বুড়ির সোনা কাকা মারা গেল । সে বুড়িদে ঢাকার বাসায় প্রায় যেত বুড়ির বাবার সাথে গল্প করত, অসুস্থ হয়ার পর আর যেতে পারেনি । সেও পৃথিবী থেকে চলে গেল । বুড়ির খারাপ লাগল কিন্তু তার বাবার মৃত্যু কষ্ট থেকে আবছা । এর পর বড় সালাম কাকাও বহুদিন অসুস্থ থাকার পরে তিনিও চলেগেলেন কেউ আর খক খক করে কাশেনা ।
বুড়ির আপন বড় কাকী কোমলা সুন্দরি আসলেই কমলার মত সুন্দর ছিল ।সে কল ঘাটে অজু করত বুড়ি চেয়ে দেখত ।বৃদ্ধ হওয়ার পর জানালার পাশে বসে থাকত কেউ গেলে জানতে চাইত কিডারে বুড়ি গেলে বলত কাকী আমি বলত কবে আসছিস তর মা কেমন আছে? সেও চলে গেল বুড়ি তখন গ্রামে ছিলনা । পরে জখন গ্রামে আসে তখন অই জানালার পাশ দিয়ে যায় কিন্তু কেউ জানতে চায় না কিডআরে?
আবার মারা গেল বুড়ির মাস্টার চাচা নাড়ি ছিদ্র হয়ে গেছিল অনেক দিন ধরে ভুগেছে তিনি । কেউ আর এখানে ওখানে খুরে গাছ লাগাবেনা ।
চলে গেল বাড়ির ছায়া যাদের পদ ধ্বনিতে বাড়ি মই মই করত আর তদের পদ ধ্বনি শোনা জাবেনা । তারা আর বাড়ির কোন বিপদ থেকে বুড়িদের আগলাবেন করবেনা আনন্দের জোগার । বুড়ি কেমন যেন মাথার উপর রদের তাপ অনুভব করল ভীষণ রোদ কারন তাদের বাড়ির উপর বটের ছায়া গুলা আর নাই । এখন সব রোদ বৃষ্টি ঝড় বুড়ীদের উপর দিয়ে যাবে ।
বুড়ি ভাবতে থাকে আসলে জীবনটা কি ? এই যে দোর ঝাপ জীবনে ভাল থাকার জন্য এত সংগ্রাম । আমি তো আর কদিনের অতিথি, আমি আমার মৃত্যুর ছায়া আমাকে ঘিরে ফেলেছে । এবার পালা আমাদের । আমারা এখন কারো ছায়া হব আমরা আবার চলে যাব আমাদের পরে অন্য কেউ ছায়া হবে । এই ভাবে পৃথিবী চক্রাকারে চলতে থাকবে ।
এখন আমাদের পালা আমাকে চলে যেতে হবে আমিও এই পৃথিবীর বুক থেকে চলে যাব এত মায়া ভালবাসা ছেরে চলে যাব ।আমার সময় আর কতদিন আছে? এত সংগ্রাম করার কি আছে যে অর্জন আমার সাথে যাবেনা । আমাকে আর কেউ মনে রাখবেনা কালের স্রতে আমি বিলিন হয়ে যাব কারন আমি যে সাধারন মানুষ । আমার জীবনের গল্প এখানেই শেষ । মৃত্যুর সময় কেউ আমাকে ফেরাতে পারবেনা ।
এটাই মানব জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চিরতরে চলে যাওয়া !!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ শুরুর দিকটার চেয়ে শেষের দিকটা বেশ ভাল লেগেছে ।
ভাল্ লাগল দোয়া করবেন !
পন্ডিত মাহী আরো অনেক চেষ্টা করতে হবে।
ধন্যবাদ দোয়া করবেন !
রেজওয়ানা আলী তনিমা খুব ভালো লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইলো।
আপনার জন্যও শুভেচ্ছা রইলো ।
এফ, আই , জুয়েল # বেশ ভালো---, অনেক সুন্দর গল্প ।।
ধন্যবাদ দোয়া করবেন !
শামীম খান ভাল লিখেছেন । শুভাশিস রইল ।
ধন্যবাদ দোয়া করবেন । আসলে যেভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে চেয়ে ছিলাম পারিনি মাত্র এক এক দিনে লিখেছি তো ।

০১ আগষ্ট - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী