মিথ্যা লেখকঃ শেষ আলো বাংলাদেশ এ যখন গ্রামীনফোন প্রথম কল রেট কমালো, রাত ১২টার পর ২৫ পয়সা মিনিটতখন ওই সময় সবাই রাত জেগে কথা বলত বিশেষ কর স্কুল ,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পরা ছেলেমেয়েরা। তারা সারা রাত জেগে কথা বলে ক্লাস মিস করত নইলে ক্লাসে গিয়ে ঝিমাত। সেই সময় HSC পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলও দীপা, সে ঢাকার স্থানীয় মেয়ে । সেও তখনকার ছেলেমেয়েদের মত রাত জেগে কতা বলত । তার নিজের ফোন ছিলনা বাসার ফোন এ কথা বলত। দীপা সব সময়ই পড়া ফাঁকি দিত তাই ওর মামা বলত দীপা বই এর ধুলাও পরিস্কার করেনা, তাও সে মোটামুটি পাস করে যেত। কারন সে যতোটুক পরীক্ষার সময়ই দেখত তাতে তার হয়ে যেত কারন তার মেধা ভালছিল যদি সে ভাল করে পড়ত তাহলে হয়তবা ভাল ফলাফল করত যাই হক সেটাত সে করেনাই, পরিবার এর সবাই ভেবেছিলো হয়ত স্কুলের গণ্ডি পেরতে পারবেনা । সবার ভাবনাকে পেছনে ফেলে সে এখন কলেজর সীমানা পেরবার অপেক্ষায় । সে যতটুকু পড়ত তা রাত ১১টা ১২ টা পর থেকে । পরীক্ষার সময়সূচী দিয়েদিল তাই সে বই ধরেছে। যথারীতি সবাই যখন ঘুমায় তখন সে পড়তে বসে এবং বাসার ফোন তার কাছে রাখে ।প্রতি রাতেই সে অন্যদের মত রাতে কথাও বলে মজা করে। সে জয় নামে একটা ছেলের সাথে কথা বলে প্রায় প্রতিদিন। ছেলেটির নাম জয় তার কথা মত সে আগারগায় থাকে তার বাবার হোটেল রেস্টুরেন্ট আছে তার পড়াশুনা শেষ হয়ে গেছে এখন সে তার বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করছে । এভাবেই তাদের সাথে কথা চলতে থাকে দীপা তাকে বিশ্বাস করেনা । সে তার আসল পরিচয়ই গোপন রেখে কথা বলে দীপা মজা করতে ভালবাসে ফোন মিথ্যা কথা বলে রং নাম্বারে । ছেলেটি হয়তো ওকে চিনেই কল করেছে । তবুও দীপা তার মিথ্যা পরিচয় দেয় । সে বলে সে গ্রামে থাকে নাম নদী । ছেলেটি নদী মনযোগ পাওয়ার জন্য ওকে বলে তার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে সে সিঙ্গাপুর যাবে চিকিৎসার জন্য । তাই ওর সাথে দেখা করে যেতে চায় । দীপা একথা বিশ্বাস করেনা সে বলে আচ্ছা আমি যখন ঢাকা আসব আমার বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে আপনার রেস্টুরেন্ট যাব আপনার সাথে দেখা করব । ওর পরীক্ষা নিকটে চলে আসে আর যাওয়া হয়না অর । তবে ওর বয়ফ্রেন্ড ছিলনা, সে তার কোন ফ্রেন্ড কে নিয়ে যেতে চেয়ে ছিল। তার আর যায়া হয়না। জয়ের সে সময় চলে আসে সিংঙ্গাপুর যাবার,সে সিঙ্গাপুর চলে যায় । দীপা একদিন জয় এর নাম্বার এ কল করার চেষ্টা করে তার নাম্বার বন্ধ পায় । দীপা তখন ভাবে আসলেই কি লোকটা অসুত্থ ছিল? সে জানার চেষ্টা করে কিন্তু নাম্বার টা আর খোলা পায়না । ইতি মধ্যে তার পরীক্ষা দরজায় কড়া নাড়ছে । অনেক দিন পর ওই নাম্বার টা থেকে রাতে কল আসে দীপা রিসিভ করে। ও পাস থেকে শোনা যায় সেই কণ্ঠস্বর কিন্তু সেই কণ্ঠটি বলে আমি জয়ের ভাই, জয় ভাইয়া এক সপ্তাহ আগে সিংঙ্গাপুরে মারাগেছে, দীপা বিশ্বাস করেতে পারেনা সেই কণ্ঠ কিভবে সম্ভব? এর পর থেকে ওই নাম্বারে দিপার আর কথা হয় না ।দীপা সত্য বের করার জন্য ওই নাম্বারে কল করে বলে জয় আর সাথে আমার সম্পক ছিল আমি ওকে ভালবাসি আমাকে একটু অর কবর কথাই আছে বলবেন আমি দূর থেকে দেখে চলে আসব। কিন্তু সে কিছু স্বীকার করলনা সে বলল জয়দের পরিবারে কেউ জানতে পারলে সমস্যা হবে। দীপার মনে বুঝল জয় মিথ্যা বলছে আবার মনের এক কনে উকি দিচ্ছে হতেও পারে। এর পর ওই নাম্বার এ আর দীপার কথা হলনা । দীপা পরীক্ষা শেষ করল সে মোটামুটি ফলাফল করল। তার পর দীপা বিশ্ববিদ্যালয় ভরতি পরীক্ষা দিল হলনা। ইডেনে নির্বাচিত হল কিন্তু তার মনের মত বিষয় পেলনা। পরে সে রিলিজ স্লিপ নিয়ে ঢাকা ছেড়ে তার জেলা শহরে চলে গেল পরতে ।জয়কে দীপার মনে আর রইল না হারিয়ে গেল জয়। দীপা তার নতুন উচ্চশিক্ষা অরজন এ ব্যাস্ত হয়ে গেল নতুন পরিবেশ নতুন বন্ধু নতুন জীবন। যে জীবনের কোথাও রইলনা জয়। দীপার বাসার ফোন টা বাসায় থাকল । দিপার নিজের ফোন হল কিন্তু তাও সে জয়ের নাম্বার এ কল করেনি । দিপার কাছে জয়ের নাম্বারও ছিলনা সে জয়ের নাম্বার তার কাছে রাখেওনি , সে কখনও জয়কে মনেও করেনি। দীপা যখন তার ৩য় বর্ষে পড়ার সময় ঢাকা আসল তখন হঠাটৎ বাসার ফোন টা দেখছিল তার চোখে পরল সেই নাম্বার টা যা সে নেট নামে সেভ করে রেখেছিলো ৪ বছর আগে । বাসার ভয়ে ও এভাবেই সেভ করে রাখত ছদ্ধ নামে । নাম্বারটা দেখে মনে পরল জয়র কথা সেই ৪ বছর আগে মুছে যাওয়া জয় ভাবল দেখি এবার কিছু জানাযায় কিনা সে কল দিল নাম্বার টা বন্ধ পেল। নাম্বার টা নিয়ে সে আবার ঢাকা ছেড়ে তার হলে ফিরে এলো । ফিরে এসে যথারীতি তার স্বাভাবিক জীবন চলতে থাকল। এর মাঝে সে তার নিজের নাম্বার থেকে আবার জয়র নাম্বার চেষ্টা করল কিন্তু সে নাম্বার বন্ধ পেল। জয় আর দীপার গল্পটা হয়ত এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু তা হলনা , দীপা যখন তার অনার্স শেষ করে আবার সে ঢাকায় ফিরল তখন সে আবার নাম্বারটায় কল করে দেখল বরাবরের মত সে বন্ধ পেল । দীপা এটা করছিল কারন তার ভিতরে একটা বিষয় কাজ করতে থাকল আসলেই কি সে মারাগেছে নাকি মিথ্যা বলেছে ? দীপা এটা বুঝতে পেরেছিল মিথ্যা তারপরও মনের কোনে ছোট আগুনের ফুল্কির মত একটা কথা নিভু নিভু ভাবে জ্বলছিল সে আসলেই মারাগেছে?দীপা শুধু এটাই জানতে চাইছিল লোকটা বেঁচে আছে না মরে গেছে এত দিন পরে তো কেউ মিথ্যা বলে না। এই কথাটা না বললে দীপা কখনই জয় কে খুজতনা । এই গল্পটা ৬ বছর আগেই শেষ হয়ে যেত কারন দীপা জীবন সময়ের স্রতে সাজিয়ে নিয়েছিল । কিন্তু ওই একটা জানতে চাওয়া জয় এত বড় মিথ্যা কেন বলল , নাকি সত্য সে মারাগেছে ? জেগে উঠল খুব নিরবে তার মনে এটা এমন নয় যে না জানলে তার খারাপ লাগবে শুধু একটা কৌতূহল । দীপা আর একদিন কল করল সে নাম্বার টা খোলা পেলো তখন দীপা তাকে বলল ৬ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা, তার পর দিপা তার বাসার নাম্বারটা বলে জয় দীপাকে চিনতে পারে তখন সে বলল আমি জয় নই আমি রাশেদ আমি আপনার সাথেই এক ইয়ার সিনিয়র ছিলাম। আমার রেস্টুরেন্ট ছিলনা আমি মিথ্যা বলেছিলাম, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়তাম, আমার বাড়ি পাবনাতে। দীপা জানতে ছাইল আপনি আপনি মারগেছেন এটা কেন বলেছিলেন ? রাশেদ বলল আপনার ভালবাসা পাওয়ার জন্য অসুখের কথা বলেছিলাম কিন্তু আপনি তেমন আগ্রহ দেখানাই পরে মিথ্যা কথা বললাম তাতেও কিছু হলনা তাই আমি দূরে সরে গেলাম । দীপা জানতে চায় আপনার সিম অফ ছিল কেন? আর আতদিন পার অন করলেন কেন? রাশেদ বলল সিমটা হারিয়ে গিয়েছিল আর তোলা হইনি, কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছিল কেউ হয়ত আমাকে খুজছে তাই সিমটা তুললাম। সেটা যে আপনি তা কখন ভাবিনি এটা হয়ত বিধাতা চাইছিল আপনার সাথে আমার আবার কথা হবে।তাই আপনাকে আমি ওই মিথ্যাটা বলেছিলাম এবং তার ইশারায় আমি আবার সিমটা তুললাম। এরপর থেকে দুজনে প্রতিদিন কথা বলতে থাকে একজন আরাকজন কে জানতে থাকে , দুজনের প্রতি আস্থা জন্ম নেয় । তারা এখন দুজন দুজন কে ভালবাসে , রাশেদ আর দীপা এখন ঘরবাধার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে । রাশদ বলে তাহলে আমি মিথ্যা টা বলে ভুল করিনি ওই মিথ্যার গভীরতা তোমাকে আমার কাছে এনে দিল । মিথ্যাটা্র আবেদন এত গভীর ছিল যে তুমি তাকে উপেক্ষা করতে পারনি । আমি যদি তোমাকে স্বাভাবিকভাবে ভালবাসি বলতাম তুমি আমাকে কখনই খুজতে না তোমাকে আমি পেতামনা । একটি মিথ্যা দীপা আর রাশেদ কে একি পথের পথিক করে দিল । যে দীপা রাশেদ কে বিশ্বাস করতনা সে এখন রাশেদ কে অন্ধের মত বিশ্বাস করে। রাশেদও ফিরে পেল তার হারান ভালবাসাকে । আজ দুজনার দুটি পথ একি পথে গেছে মিশ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।