নাম তার রহিম। একটি সমস্যার কারনে সে অবহেলিত। তার দু'মণি দু'হাতের বেশি দূরুত্ব দৃষ্টিগোচর হয়না। খেলা - ধুলা, লেখা- পড়ায় সে পিছিয়ে। যখন সে পঞ্চম শ্রেনী পাস করে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হল বাড়ি থেকে দূরে থানা শহরে। তখন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়। ডাক্তারি চিকিৎসা নিয়ে রহিমের দুঃখ দূর হয়ে দু'মণি সুস্থ হয়ে উঠে। রহিমের মণি পরিপূর্ণ রূপে সুস্থ হওয়ার পর সে আবিষ্কার করে ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী বালিকা। রহিমের চিন্তা কি ভাবে বালিকার সাথে বন্ধুত্ব করা যায়। এক পর্যায়ে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ভালোই চলছিল দু'জনার বন্ধুত্ব। রহিম বন্ধুত্বে ডুবে লেখাপড়ায় নিয়মিত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অষ্টম শ্রেণীতে উঠে রহিম প্রেম ভালবাসা বুঝতে শিখে। আর সুন্দরী বালিকা বন্ধুকেই প্রেমের প্রস্তাব দিল। সাথে সাথে তাদের বন্ধুত্ব শেষ, সাথে সাথে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেল। রহিম এতটাই অপমানিত হল যে, এই রকম অপমান সে কখনই হয়নি। এমনকি তার চোখের সমস্যার কারনে চশমা পড়তে হত আর সেই কারনে তার সহপাঠীরা থাকে ব্যাটারি, সিকু,পন্ডিত বলে কুটুক্তি করত। এতদিনে এসব কুটুক্তি থাকে এতটুকু অপমানিত করেনি যতটা সেই বালিকা করেছে। রহিমের প্রস্তাবে বালিকা রাজি হয়নি কারন কি হতে পারে? রহিমের একান্ত বন্ধুর কাছ বলল তার কারন। রহিমের বন্ধুর নাম কুদ্দুস।অবশ্য সহপাঠীরা থাকে কদু বলেই ডাকে।
কুদ্দুস:- কি'রে রহিম, বালিকা তোর প্রেমে রাজি হল'না কেন? রহিম:- আমি কি জানি। কুদ্দুস:- "ত" কে জানে? রহিম:- সালা তোর বউ জানে।
কিছুক্ষনের নিরবতা শেষে
কুদ্দুস :- আচ্ছা বালিকা কি বলেছে? রহিম:- বলল, আমি একটা ব্যাটারি, আমি একটা পন্ডিত, আর ব্যাটারির সাথে কি প্রেম করা যায়। আরো কত কি বলেছে। যাক বাদ দে।
তারপর রহিম আর কারো প্রেমে পরেনি, কাউকে প্রেমের প্রাস্তাব দেয় নি। কোনো মেয়ের দিকে থাকায় নি। আর লেখাপড়ায় মনযোগী হয়।
মনে মনে একটা আফসোস বন্ধু কে হারিয়ে। আরো একটা আফসোস সে এমন কেন করল? আফসোস নিয়ে সে চলতে থাকল। অবসরে আফসোস নিয়া চিন্তা করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ, তবে বালিকার আর কোনো সন্ধান নেননি সে।কোন কলেজে ভর্তি হল?কেমন হয়েছে দেখতে? কিংবা কোন বিষয় নিয়ে পড়ছে। এসবের কিছুই ভাবেনি সে। তবে ভালো বন্ধুত্ব থাকাকালীন সময়ে বলেছিল সে ডাক্তার হবে। বোধহয় কোনো মেডিকেল হয়'ত পড়ছে। ডাক্তার হবার আশায়।
আমার দু'মণিতে সমস্যা নেই সমস্যা হল চশমাটা। হয়ত চশমা পড়লে আমাকে খারাপ দেখায়। আর কোনো বালিকা চাইবে না যে, তার প্রেমিক দেখতে খারাপ হোক। আমার দু'মণি চশমার মাধ্যমে দেখে কিন্ত চশমা ছাড়াই দু'মণি বালিকা নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে। তাহলে কি সমস্যা চোখের?
ইদানিং চাকুরীর জন্য কতখানে দৌড়াদৌড়ি হচ্ছে কিন্তু কোথাও চাকরি হচ্ছেনা। কাল একটি ইন্টারভিউ এর ডাক পরেছে। যেতেই হবে। ইন্টারভিউ এর ওয়েটিং রুমে অনেক ছেলে-মেয়ে। কিন্তু কোনো শব্দ নেই। এক এক করে নাম ডাকা হচ্ছে। আর বিরক্তি বেড়ে চলছে। "শারমিন আক্তার জেনি!"
সকল বিরক্তি ভেঙ্গে এগিয়ে গেলাম, এক নজর দেখব বলে। এই মেয়ে কি সেই বালিকা? নাম "ত" একই। চেয়ে দেখলাম সেই বালিকাই এখানে। কিন্তু চোখে চশমা কেন? বালিকা ভিতরে গেলেন। আমি দাড়িয়ে, কিছুক্ষন পর সে বাহিরে আসল আমি চেয়ে আছি। আর এদিকে রহিম রহিম বলে ডাক পড়েছে। আমার কোনো খবর নেই। বালিকা আমার দিয়ে চেয়ে বলল- আরে রহিম ডাক পরেছে ভিতরে যাও।
কিসের চাকরী কিসের ইন্টারভিউ। নিজেকে বন্দি মনে হচ্ছিল ইন্টারভিউ এর রুমে। ভিতরে ঢোকে আর মনে হচ্ছিল শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। কি প্রশ্ন করা হল? কি উত্তর দিচ্ছি। কিছুই বুঝতে পারছিনা।
ইন্টারভিউ কর্তিপক্ষে বলল:- আপনি আসতে পারেন। আমার কাছে মনে হল - আমি যেন দীর্ঘ কারাবাস থেকে মুক্তি পেলাম। রুম থেকে বের হয়ে আসতে আসতে ভাবছি বোধহয় বালিকা চলে যাচ্ছে। না'কি রহিমের ইন্টারভিউ কেমন হল? এ প্রশ্ন করার জন্য অপেক্ষা করছে। না'কি চশমা পরা রহিমকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে?
কোথায় সে? চলে গেছে? যাক! আমি ও চলে যাই। হাই হিল এর শব্দ শোনা যাচ্ছে মনে হয় কেউ দৌড়ে আসছে! পিছু চাইতেই.. রহিম.. রহিম..।
জেনি:- আমি অপেক্ষা করছি, আর তুমি চলে যাচ্ছ! ইন্টারভিউ কেমন হল? রহিম:- বাহ্! আমার জন্য মানুষ অপেক্ষা করে। কি সৌভাগ্য হয়েছে আমার। জেনি:- এখানে ভাগ্যের কি হল? চাকরি হবে? রহিম:- না। জেনি:- কেন? রহিম:- তোমায় দেখেছি তাই। জেনি:- কেন আমার চেহারার কি দোষ করেছে? রহিম:- তোমার চেহারার কোনো দোষ নয়। জেনি:- তবে? রহিম:- তোমায় এমন ভাবে, এত দিন পরে এখানে দেখব! কখোনো ভাবিনি।তাই। জেনি:- তোমার ভাবনার সাথে ইন্টারভিউ এ কি সম্পর্ক? রহিম:- ইন্টারভিউ এর রুমে ঢুকে তোমার কথাই ভেবেছি। জেনি:- বাহ্! আমার জন্য প্রেম এখনো আছে। রহিম:- তেমার চাকরি হবে? জেনি :- মনে হয়, হবে। রহিম:- ভালো। তুমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলে? কিন্তু ব্যাংকে ইন্টারভিউ দিতে আসছ কেন। জেনি:- মেডিকেলে চান্স পাইনি। তাই এখানে আসা। রহিম:- ও আচ্ছা। তোমার চোখে চশমা কেন? জেনি:- চশমা কি শুধু একা পড়বে? রহিম:- না। এমনি জিঙ্গেস করলাম। জেনি:- তুমি এমনিতে জিঙ্গেস করনি। তোমার সেই অপমান! এখনো মনে আছে। সেই যে.. চশমা পড়া সেই বালকটা প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। রহিম:- থাক থাক... আর বলতে হবে না। জেনি:- কোথাও কি বসবে? রহিম:- নিশ্চই। জেনি:- বিয়ে করেছ? রহিম:- আরে না.. চাকরি ছাড়া বউ কে দিবে? তুমি বিয়ে ...... জেনি:- এখনো বিয়ে করি নি। তবে চাকরি হয়ে গেলেই বিয়ে করব। রহিম:- কাকে.. বিয়ে করবে শুনি? জেনি:- যে চাকরির অভাবে বউ খুঁজে পাচ্ছেনা থাকেই বিয়ে করব।
কতক্ষণ নীবরে হেসে বলে রহিম:- চশমা কিন্তু তোমাকে দারুন মানিয়েছে। আমি চোখের সমস্যার কারনে চশমা পড়ি। কিন্তু তুমি? জেনি :- সত্যি বলব না'কি মিথ্যা? রহিম:- মিথ্যা বলে আমাকে খুশি করার প্রয়োজন নেই। সত্যিই বলেন। জেনি:- চার বছর আগে আমার ভিষন মাথা ব্যাথা করত। ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার ওষুধ দিলেন আর সাথে দিলেন চশমা। কিছু দিন পর মাথা ব্যাথা কমে যায়। কিন্তু তারপর ও আমি চশমা পড়ি। কারন আমার কাছে চশমা মানে ব্যাটারি। আমার কাছে চশমা মানে রহিম। আমার কাছে চশমা মানে পন্ডিত্ব। আমার কাছে চশমা মানে রহিমের স্মৃতি। তাই আজো চশমা পড়ি।
দু'জন আগের মতই এক হয়ে গেল। গল্পে হারিয়ে এক হল। হাত বাড়িয়ে আপন হল। এভাবে পুরাতন প্রেম নতুন করে জমে উঠে। রাগ অভিমান ভুলে শুরু হয় জীবনের পথ চলা। "যে বালিকা করেছিল আবিষ্কার রহিমের দু'মণি, সেই বালিকাই হয়েছে আজ রহিমের র'মণী"।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সাদিক ইসলাম
ভালো লাগলো। শুভ কামন। গল্পে আমন্ত্রণ থাকলো।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।