ব্যস্ত শহরের কোলে কোন এক নির্জন কোণা; ক্লান্ত আমার বিষণ্ণ সন্ধ্যা যাপন হয়, সে আজ নূতন কথা নয়। এই শহরটির সাথে আমার পরিচয় ঠিক কয়েক বছর আগে। গ্রামের স্বর্গে বড় হওয়া কারো শহর কেনইবা লাগে? জানিনা। আজব যত নিয়ম! কিছুই বুঝিনা।
এই শহর নাকি সবার জন্য গর্ব নিয়ে বেঁচে থাকার ঠিকানা। তবে সত্যি বলছি; আমার কিন্তু শহর মোটেই ভালো লাগেনা। এই শহরের বুকে প্রেম নেই। এই শহর কেবল কাজের বিনিময়ে আশ্রয় দেয়, আর বাঁচার জন্য খাদ্য দিয়ে মানুষকে হালের বলদের মত কিনে নেয়। মানুষগুলো বলদই'তো!
আশ্চর্য ব্যাপার হলো আমাদের জেনে বুঝেই নাম লিখাতে হয় নাকাল পরে থাকা বলদের দলে। হায়... রে... জীবিকা! মাঝে মাঝে অনেক রাগ হয়, কিপ্টে এ শহরে না এলে সবার কি এমন ক্ষতি হয়? জানিনা। তবে সময় আমাকেও বাধ্য করেছে। জীবিকা আমাকেও যাযাবর করেছে। আমি গ্রামের মানুষ কিনা! ... তাই; শহুরে শিক্ষিত মানুষ গুলোর চোখে আধুনিকতার ভ্রম লাগানো উন্নতমাণের পদ্ধতিতে সীলকরা বস্তার চালে আমার পেট ভরেনা। হৃদয় তৃপ্ত হয় মত এখানে কখনোই খেতেপারিনা, খেলেই অগ্নিমান্দ্য হয়। অথচ গ্রামে আমার মাটির পাত্রে আধপেটা খেয়েই দিন যাপন করতে পারি। সারাদিন নিয়ম ছাড়া খাদ্যাভ্যাসেও আমার কিছুই হয়না। তবে জানিনা কেন এ পঁচা শহর আমাকে সয়না।
চারপাশে ঝঞ্ঝাটের রুগ্ণ আবহাওয়া, সমস্যার পাহাড় এখানে মানুষগুলোকে ভয়ঙ্কর অক্টোপাসের মত আবৃত করে রাখে, দিক-বিদিক কেবল দেনা-পাওনা আর অর্থের চাওয়া পাওয়া। এখানে সবাই পার্থিব সুখের পেছনে ছুটে বেড়ায়, জানিনা সবাই শেষ পর্যন্ত কি পায়। এখানে বাস্তবিক সুখ নামক বস্তুটা বড়ই দুষ্প্রাপ্য; সুখ এখানে টাকায় বিক্রি হয়, বলা যেতেপারে অকৃত্তিম সুখ-উপাদান গুলো চিরকাল এখানে সাবার অধরাই রয়। পাখিদের ডাক এখানে অসহায়ের আর্তনাদের মত লাগে। অসহায় প্রকৃতির হজম করতে না পারা এত গুলো বর্জ্যে শহুরে পৃথিবীটাই যেন নরকের টুকরো, আর এখানের আকাশ বাতাস যেনো রাত দিন ঈশ্বরের বর মাগে একটা চিরমুক্তির বিষ্ফোরণ ঘটাতে।
আমি গ্রামের ছেলেতো; তাই বোধয় এ শহরকে আমি মোটেই ভালোবাসতে পারি না। এখানের মানুষগুলোর চোখে কেবল পরশ্রীকাতরতা; আর অন্যের উচ্চ মহলে, এখানে কেউ মানতেই চায়না আরো কত মানুষ না খেয়ে দিনযাপন করে সেই মহলের তলে। এ শহরের বড়লোকেরা নিম্নস্থরের মানুষদের নর্দমার কীট ভাবে, আর; অপেক্ষাকৃত উচ্চস্থরকে নিজেদের গন্তব্য ভাবে। যতসব ভুল-ভাল চিন্তাধারা, কেউ কি বলতে পারে মানুষের শেষ গন্তব্য কোথায়? বোধয় সবাই জানে, কিন্ত এ শহর তা মানে না। আমরা গ্রামে প্রকৃতির খুব কাছে থাকি তো; তাই আমরা মানি; একদিন দেহটা এ প্রকৃতির মাঝেই হারিয়ে যাবে, মাটি মাটিতে হারাবে আর পানিতে মিশে যাবে পানি। ওরা তা না মেনে যাবে কোথায়?
আমি বাবা গ্রামের ছেলে, তাই ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া গভীর রাতকে ভুল করে সূর্য না ওঠা দিবসের মত লাগে। সত্যি বলছি, চতুর্দশী চন্দ্রের আলোয় একঝাঁক জোনাকির কোলাহল দেখে আসা আমার গ্রামের তূলনায় এ শহরকে আমার অভিশাপের রাজ্যের মত লাগে।
আমি গেঁয়ো ভূত, তাই এখানে এসে কোনভাবেই হয়না আমার জুত, এ শহরের সাথে। তবু আসতে হয় জীবিকার প্রয়োজনে, তবে আমার প্রাণে এই শহরকে দেয়ার মত কোন প্রেম নেই, গ্রামই আমার সব, আমার কাছে আমার গ্রাম যেন স্বর্গের অভয়ব। বিনামূল্যে আমাকে আজীবন যা দিয়েছে তার ঋণ আমি কি করে দিব জানিনা।
আমার হাজার জন্ম গ্রামেই হোক, ঈশ্বরের কাছে আমি আর কিছুই চাইনা। ------- রিফাত বিন ছানাউল্লাহ্
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্
বেশ কিছুদিন আগেও আজকের সব শহর কিন্তু শহর ছিল না । বর্তমান শহর গুলোর বেশরি ভাগ দালান-কোঠার মালিকও কিন্তু গ্রাম থেকেই আসা । সমস্যা হচ্ছে তারা গাঁয়ের মমতা জড়ানো ভালবাসাকে বিসর্জন দিয়ে নতুন এক শহুরে ভাবধারা সৃষ্টিতে সফলকাম হয়েছে । আর অমরা সেই ভাবধারাকে অনুসরণ করেই কর্মসংস্থানের তাগিদে শহরে এসেছি এবং ভাগ্য বিধাতা আমাদের প্রতি সুপ্রসন্ন হলে হয়তো আমরাও একদিন সেই ভাবধারাকেই নির্বিকার চিত্তেই মেনে নিব । তাই বিধাতার কাছে না হয় আমরা প্রার্থনা করি যে, বিধাতা যেন শহরবাসীর মাঝে গাঁয়ের সেই মমতা টুকু ফিরিয়ে দেন । কবিতাটা পড়ে খুব ভাল লাগল, তাই এত বড় মন্তব্যটা করলাম । গল্প কবিতায় এটাই কবির প্রথম কবিতা, তাই মন্তব্য করতেও ভাল লাগল, সাথে রেখে গেলাম ভোট ও শুভ কামনা ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।