মায়া

কোমলতা (জুলাই ২০১৫)

মিসবাহ্ কামাল শুভ্র
মোট ভোট প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.২২
  • ২৫
সন্ধ্যা থেকে ছাদে বসে আছি। আকাশে আজ চাঁদ থাকার কথা,শুল্ক পক্ষের গোলগাল চাঁদ।আছে হয়তো।আবছা আবছা লাগছে,ঠিক বুঝতে পারছিনা।
হালকা একটা বাতাস বইছে,ঘুম পাড়িয়ে দেবার মতো।বেশ ভালো লাগছে।
দু বছর ধরে আমার অনেক কিছুই ভালো লাগে।এই যেমন রাতে বারান্দায় দাড়িয়ে গ্রীলটাকে খুটে দেখা,আমার পোষা চড়ুইটাকে একটু একটু করে হরলিক্স খাইয়ে দেয়া (যদিও খেতে চায়না),প্রতিদিন একটি করে মেসেজ ড্রাফটস করে রাখা,ইত্যাদি।
আমি ছাদের ঠিক পূব দিকটায় ইজি চেয়ার নিয়ে বসে আছি।সামনে ছোট্র টি টেবিলে সুন্দর করে সাজানো একটা সুরমা রঙের ফ্লাক্স, বাহারি ডিজাইনের দুটি মগ এবং একটি টোষ্টের খালি প্যাকেট।পাশেই একটা কোমর বাঁকানো নারকেল গাছ,কেমন হাত পা নেড়ে নেড়ে অদ্ভূত রকমের শব্দ করছে।মা বলেছে ওর ডালে নাকি মামদো ভূত থাকে।মামদো ভূতরা ভীষন পাজী।আমি যখন ছাদে ঘুমিয়ে পরি,ওরা এসে ফ্লাক্স থেকে কফি ঢেলে সুরুৎ করে খায়।যখন জেগে উঠি,ভীষন রকমের ভয় পায়।তিড়িং করে এক লাফে ডালে চড়ে বসে।

কেমন যেন ঝিমুনি পাচ্ছে,ক্ষিদেটাও দারুন।তারা গুনলে কেমন হয়? এক দুই তিন…এগারো…আমার মনে হয় পৃথিবীতে তারা গুনার চেয়ে সহজ কাজ আর নেই।ইচ্ছে মত আঙ্গুল ঘুড়িয়ে গুনে গেলই হলো।কোনটা বাদ গেল সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়না।আমি গুনেই চললাম……

তন্দ্রা ভাঙলো ফিসফিসে গলায়।
:ভাইয়া! ভাইয়া!
একটু ভয় পেয়ে পিট পিট করে তাকালাম।ঘাড়টা এক পাশে কাত হয়ে ছিল,ব্যথা করছে।কয়টা তারা গুনেছি কে জানে? আবছা মতো কিছু একটাকে চেয়ার টেনে বসতে দেখলাম।বুঝলাম সে এসে গেছে।
অনেকের বেলায় জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাই ভূত হয়ে যায়।
ও তেমনি একজন।
চোখটা কচলে নিয়ে বললাম,কখন এলি?
:এইতো এখন।কেমন আছেন?
-ভালো।তুই কেমন?
: ভালো।
একসময় এ ভূতটার আসল মানষটা ছিল আমার এ ঝাঁপসা জীবনে খুব কাছের একজন।
-আসতে এতো দেরী হলো যে?
:আপনি জেগে ছিলেন,তাই।
-জানি এটাই বলবি।কেন লজ্জা করছিল?
“হ্যাঁ”মাথা নেড়ে উত্তর করল ভূতটা।অন্ধকারে ওর চেহারাটা বুঝা যাচ্ছেনা।যেটুকু ঠাওর করলাম,মাথা নিচু করে বসে আছে।চেয়ারটা টেনে কাছে আসলাম,এখন আর ঝাপসা লাগছেনা। ”লজ্জা লাগে কেন? তুই ছেলে আমিও ছেলে।”
” জানিনা।” একটু চুপ করে বললাম,”না জানাই ভালো।”

কিরা কেটে বলছি,একটা ছেলে আরেকটা ছেলেকে লজ্জা পাবে কেন এটা আমার কাছে এক বিরাট কেস! কেসটাতে কয়েকটা রহস্য আছে। দু বছর পর ও কেসটার তেমন সুবিধা করতে পারলামনা।ভাবছি শার্লক হোমস বা কিশোর পাশার কাছে কেসটা হস্তান্তর করব।ওরা যদি কিছু খুজে পায়!

“আপনার চোখের কী অবস্থা ভাইয়া?”
“এইতো ভালো” জমিয়ে রাখা নিশ্বাসটা ফোস করে ছাড়লাম।এটা হতাসা না।হতাসা আমাকে ভীষন রকম ভয় পায়।ভালো একটা েদখতে পাইনা।টিচার বোর্ডে কী লিখল তা বুঝে উঠা আমার -7 পাওয়ারের চশমার সাধ্যের বাইরে।ক’দিন পর হয়ত X-Man সিরিজের রোবোটের মত Error সিগনাল দেখব।
মনে পড়ছে,মানুষটা একদিন আমার হাত ধরে হাটত।একসাথে রাস্তায় বেরুলে প্রায়ই ঘেমে উঠত,লজ্জায় নাকি চাপা পরার ভয়ে তা বুঝতামনা।
আর এখন যখন রাস্তায় হাটি,বাংলা কলেজ মিরপুরে যাই,একািক বাসায় ফিরি,মনে হয় যেন এ ভূতটা পিছু পিছু ঘামছে আর বলছে,”ভাইয়া সাবধানে।” এখনো যখন ট্রাফিক পুলিশের পাশে দাড়িয়ে অপেক্ষা করি কখন গাড়ি থামবে,তখনই যেন ভূতটা এসে সংকোচ ফেলে হাত ধরে।তারপর যত তাড়াতাড়ি পারে রাস্তাটা পেরিয়ে কেটে পরে।
দু বছর আগেতো আর সে ভূত ছিলনা,ছিল রক্ত-মাংসের জীবন্ত সত্তা।কলেজ,ডাইনিং,আড্ডা সবইতো ছিল একসাথে।অবশ্য দু বছর পর কত কিছুইতো পাল্টায়!

কফির মগটা ওকে ঠেলে দিয়ে বললাম,”তোর কবিতা লেখার কী খবর? নিয়মিত লেখছিসতো?”
“হু।" ছোট্র একটা চুমুক দিয়ে বলল,”নিয়মিত না হলেও চর্চাটা রাখছি।”
“তোর লাষ্ট কবিতার নাম কী?” শেষ চুমুকটা শব্দ করেই দিলাম। “নাম এখনো দেইনি,পরে দেব।”
নাম দেয়া ছাড়া কিভাবে কবিতা লেখা হলো তা আমার মাথায় ঢুকছেনা।তবে ও বেশ ভালো কবিতা লিখতে পারে।আমি হলফ করে বলতে পারি,চর্চা রাাখলে ও ভালো মাপের কবি হতে পারবে।আমার মাাঝে কবি বা সাহিত্যিক হবার অত বড় ভাব জন্মেনি।মজার ব্যপার হলো অনেকেই আমাকে দাার্শনিক বলে ডাকে।জীবসত্তা আর অন্তরাত্তার যে সব বিষয়কে পন্ডিতরা “It’s ok ” বা “Natural” বলে কেটে পরে,আমার সে সব ভাবতে ভালো লাগে।জীবনের প্রতিটি বাঁককে আমি ম্যগনিফাইং গ্লাস দিয়ে খুঁজে দেখি।লোকে ইকটু বাড়িয়ে বলে।নিজের কথাই বলি,আমি সহজ একটা ছেলে।লাইফষ্টাইল নেই,কখনো কোনো মেয়েকে ভালোবাসিনি।শুধু এ ভূতটার প্রতি একটা অকৃত্রিম টান কাজ করে যা আমার বিয়ে করা বউয়ের জন্য হবে কিনা জানিনা!

মানুষটার জন্যই আমাকে দার্শনিক হতে হয়েছে।ওর প্রতি আমার ভিন্ন সত্তা যতই জাগ্রত হতে থাকলো,ততই ও কেমন যেন পাল্টাতে থাকলো।আমি তাকে বুঝাতে চ্ইলাম তুই আমার অন্য কেউ।আর সে কিনা উল্টো জিদ ধরলো! একদিনতো ফোন করেে বলেই দিল যাতে আমার এ ভিন্ন সত্তাটা ওকে বুঝতে না দেই।ইত্যাদি ইত্যাদি।ব্যস সেই থেকে দূরেই থাকি।দূরে বলছি কেন,সেতো সারাক্ষন আমার সাথেই থাকে।দু বছর পর এটাই বর্তমান।
গত দু বছর ধরে তাই আমাকে একটা জঘন্ন কথা শুনতে হচ্ছে।আমি নাকি পাগলের মতো নিজের সাাথে নিজেই কথা বলি।ডাক্তার বলেছে আমার স্কিতজোফ্রেনিয়া।অথচ ওকে যে আমি কাছ থেকে দেখতে পাই,জানি এর ব্যখ্যা কেউ দিতে পারবেনা।


আমার আবার ঘুম পাচ্ছে।বোকা ভূতটা এখনো কুলি করে করে কফি খাচ্ছে।এক মগ কফি খেতে কত ঘন্টা সময় লাগে তার কোন আদর্শ মান বাঁধা নেই।কিছু কথা ছিল, মনে পড়ছেনা।কাল আসলে বলব।ঘুমের জড়তা তাড়িয়ে ওকে আবার দেখে নিলাম।ঝাপসা ঝাপসা! ভূত আর মাানুষত এক হয়না! চেয়ারে হেলান দিয়ে আকাশটা দেখার চেষ্টা করলাম,চাঁদটা হয়তো মেঘে ঢেকে যাাচ্ছে।একটা কথা খুব মনে পড়ছে,দু বছর আগে কলেজে এ ভূতটা বলেছিল,”ভাইয়া,এতো দূরের চাঁদ আপনি দেখতে পান?”
ঘুমে চোখ বুজে আসছে।ভূতটা চলে যাবে এক্ষুনি।ড্রাফটস করা মেসেজটা আজকেও মানুষটাকে সেন্ড করা হয়নি। “Sudhu amar vetorta bishwash korish”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রেজওয়ানা আলী তনিমা ভালো লাগলো,অভিনন্দন , সাথে শুভ কামনা।
টোকাই অভিনন্দন!!
মোহাম্মদ আবুল হোসেন ভাল লাগলো। এক কথায় দারুণ
রবিন রহমান ভালো লাগলো বটে ........গল্প পেলাম golpe ...
কবিরুল ইসলাম কঙ্ক ভালো লাগালো । আমার কবিতা ও গল্পের পাতায় আমন্ত্রণ রইলো ।
জুন দারুণ,দারুণ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে গোছানো। আর মনে হলো আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম,বাস্তবকে আকর্ষন করেছে। ভালো লাগা সাথে শুভ কামনা।
ফয়সল সৈয়দ আপনার গল্পের হাত খুব ভাল ।আশা করি নিয়মিত লিখবেন ।শুভ কামনা রইল আগামীর জন্য।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
শামীম খান আপনার লেখার হাত চমৎকার । গল্প বলার স্টাইলটাও বেশ মনে ধরেছে । কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারিনি । ' ওর প্রতি আমার ভিন্ন সত্তা যতই জাগ্রত হতে থাকলো,ততই ও কেমন যেন পাল্টাতে থাকলো। ' কথাটার কি অর্থ ? শুভ কামনা রইল ।

০৭ জুন - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.২২

বিচারক স্কোরঃ ২.২২ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪