আমার মিনি

কোমলতা (জুলাই ২০১৫)

তৌহিদুর রহমান
  • ২০
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন প্রায়ই আমার জ্বর হতো। আর সে এমনই জ্বর যে সহজে আমাকে রেহাই দিত না। অনেক ডাক্তার, কবিরাজ এর কাছে যাওয়ার পর সে জ্বর আমাকে রেহাই দিত। তো একবারের জ্বরে ডাক্তার, কবিরাজেও কাজ হচ্ছিল না। মানে সে জ্বর সম্ভবত আমাকে কোন ভাবেই রেহাই দেওয়ার পক্ষপাতী ছিল না। আমার আব্বু-আম্মু আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। তারা যে কি করবে তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না। আর এদিকে আমার তো যাই যাই অবস্থা। মানে যে কোন সময় পরপারে যাওয়ার ট্রেনটা আমার সামনে এসে থামবে আর আমাকে তাতে উঠে পড়তে হবে। তারপর সোজা পরপার। মাঝখানে কোথাও কোন বিরতি নেই। কিন্তু ঈশ্বরের বোধহয় আমার জন্য একটু দয়া হল। তার মনে হয়ত একটা প্রশ্ন জেগেছিল যে, " এত ছোট একটা ছেলে। এইতো সেদিন ওকে পৃথিবীতে পাঠালাম। এখনো তো পৃথিবীর কত কিছুই দেখতে পারল না। কত মজার মজার খাবার খেতে পারল না। আর তাছাড়া এত তাড়াতাড়িই বা ওকে কি করে পৃথিবী থেকে নিয়ে চলে আসি?" এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যেয়েই ঈশ্বর সম্ভবত আমার জন্য পরপারের ট্রেন না পাঠিয়ে একটা বিড়াল পাঠাল। আগেই বলে দিই, আমি আবার পশু-পাখি খুব ভালোবাসি। ওদের কষ্টে আমি কষ্ট পাই, ওদের সুখে আমি সুখ পাই। যাই হোক, মূল গল্পে ফিরে আসি। একদিন রাতে আমার জ্বর অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেড়ে যায়। তখন আমার আম্মু আমার মাথায় পানি দিতে লাগল এবং কপালে জলপট্টি দিতে লাগল। রাত এগারোটার দিকে আব্বু দোকান থেকে বাসায় ফিরল। তখন প্রতিদিন আব্বু ওই সময়ই বাসায় ফিরতেন। তো সেদিন আব্বু বাসায় ফেরার কিছুক্ষন পর আমাদের দরজার সামনে একটা বিড়াল খুব জোরে মিউ মিউ করে ডাকতে লাগল। আমার আম্মু তা শুনতে পেয়ে আব্বুকে বলল "দেখো তো বিড়ালটা ওরকম জোরে জোরে ডাকছে কেন?" আম্মুর কথা শুনে আব্বু দরজা খুলতেই বিড়ালটা আমাদের ঘরের ভিতর ঢুকে আরো জোরে মিউ মিউ করে ডাকতে লাগল। আম্মু তখন আব্বুকে বলল, "ওর মনে হয় খুব খিদে পেয়েছে। ওকে মাছ দিয়ে কিছু ভাত মাখিয়ে দাও।" আব্বু তাই করল। ওকে মাছ দিয়ে কিছু ভাত মাখিয়ে দিল আর ও খেতে লাগল। এদিকে বিড়ালটিকে দেখে আমার একটু ভাল লাগতে শুরু করল। মনে হতে লাগল জ্বরটা কেমন কমে যাচ্ছে। আম্মুকে বললাম আর আমার মাথায় পানি দিতে হবে না। আমার এখন একটু ভাল লাগছে। আমার কথা শুনে আম্মু আমার গায়ে হাত দিয়ে দেখলেন। তারপর কি মনে করে আমার মাথায় পানি দেয়া বন্ধ করে আমাকে ভাল ভাবে খাটে শুইয়ে দিলেন। আম্মু সম্ভবত বুঝতে পেরেছিলেন বিড়ালটা আসার জন্যই আমার এরকম ভাল লাগছে কেননা আম্মু জানতেন যে, আমি পশু-পাখি অনেক ভালবাসি। কিছুক্ষন পর বিড়ালটার খাওয়া হয়ে গেলে আব্বু একটা খবরের কাগজ আমার পায়ের কাছে বিছিয়ে বিড়ালটাকে হাত দিয়ে ইশারা করলেন ওখানে উঠে শোয়ার জন্য। আর বিড়ালটা সাথে সাথেই লাফ দিয়ে খাটে উঠে খবরের কাগজের উপর গিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়ল। ভাবটাই এমন যে, প্রতিদিন ও ওখানেই ঘুমায়। আর আমি তো তখন মহা-খুশি। মনে হচ্ছিল ওকে কোলে নিয়ে ঘুমাই। কিন্তু আব্বু-আম্মু বকতে পারে তাই আর সেটা করলাম না। শুধু ভাবতে থাকলাম ওকে নিয়ে খেলা করব, ওকে ভাত খাওয়াব, ঘুম পাড়াব, ওকে অনেক আদর করব। এই সব ভাবতে ভাবতেই একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। আর পরদিন সকালে যখন আমি ঘুম থেকে উঠলাম তখন পুরোপুরি সুস্থ। আমার যে জ্বর হয়েছিল তা আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বিড়ালটার কথা মনে হতেই দেখি ও তখনো শুয়ে আছে। আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম। ওকে আদর করলাম। কোলে তুলে নিলাম। আর আম্মু-আব্বু তো আমাকে সুস্থ দেখে মহা-খুশি। তারপর থেকে সারাদিন ওকে নিয়ে খেলতাম, ওকে ভাত খাওয়াতাম, ওকে গোসল করাতাম, ওকে কোলে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। আমি যখন পড়তাম তখন ও আমার পাশে বসে থাকত। আমি ঘুমলে আমার সাথে ঘুমিয়ে থাকত। ওর একটা নামও দিয়েছিলাম। মিনি। নামটা মনে হয় ওর খুব পছন্দ হয়েছিল কেননা মিনি বলে ডাকলেই ও যেখানে থাকত ছুটে আমার কাছে চলে আসত। ওকে নিয়ে আমার দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল। কিন্তু একদিন হঠাৎ দেখি মিনি কোথাও নেই। অনেক ডাকাডাকির পরও ওর কোন সাড়া নেই। কাঁদতে কাঁদতে আম্মুকে যেয়ে বললাম আম্মু মিনিকে পাচ্ছি না। সাথে সাথে আম্মু ওকে খুঁজতে শুরু করলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আম্মু ওকে একটা ঝোপের ভিতরে পেল। কে যেন ওকে অনেক মেরেছিল। কে ওকে সেদিন মেরেছিল তা আজও জানতে পারি নি। মিনির একটা পা ভীষণভাবে চোটে গিয়েছিল। তাই ও হাঁটতে পারছিল না। মিনি আমাকে আর আম্মুকে দেখে তখন মিউ মিউ করে কাঁদছিল। আমিও তখন কাঁদছিলাম। ওর জন্য অনেক খারাপ লাগছিল আমার। আর মনে হচ্ছিল যে ওকে মেরেছে তাকে যদি একবার পেতাম তাহলে তাকে অনেক করে বকে দিতাম। কিন্তু কি আর করা। কে মেরেছে তা তো আর জানি না। আম্মু মিনিকে কোলে তুলে বাসায় নিয়ে আসল। ওকে খেতে দিল আর ওর সেবা করতে থাকল। আস্তে আস্তে মিনির পা ঠিক হতে লাগল। কিছুদিন পর মিনি আবার আগের মত সুস্থ হয়ে উঠল। কিন্তু মিনি আর আগের মত আমার সাথে খেলত না। আমার সাথে ঘুরে বেড়াত না। ওর ভিতর কেমন যেন একটা পরিবর্তন চলে এসেছিল। ও প্রায়ই কোথায় যেন চলে যেত আর ফিরে আসত দুই-তিন দিন পর। আর এদিকে আমি মনে করতাম আবার কি কেউ ওকে মারল। আর কাঁদতাম। তারপর আবার যখন ও ফিরে আসত তখন ওকে দেখে খুব খুশি হতাম। ওকে জড়িয়ে ধরে বলতাম,"বল, আর কখনো যাবি না।" ও তখন মিউ মিউ করে ডাকত। এরপর একদিন মিনি চলে গেল। আমি মনে করলাম ও মনে হয় আগের মত কোথাও গিয়েছে, আবার ফিরে আসবে। কিন্তু না, আমার মনে করাটা ভুল ছিল। মিনি আর ফিরে আসে নি। সেই ছোট্ট আমি আজ অনেক বড় হয়েছি কিন্তু মিনিকে আজও ভুলি নি। আর ভুলতেও চাই না কোনদিন। থাকুক ও আমার হৃদয় মাঝে সারা জীবন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তাপসকিরণ রায় ভাল লেগেছে আপনার বিড়াল নিয়ে লেখা,শিশু কিশোরদের কাছে এ গল্প আরও উপভোগ্য হয়ে উঠবে বলে মনে করি। ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে...
টোকাই ভালো লাগলো । ভোট রইলো ।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে...
আল্ আমীন ভাল লাগলো...ভোট দিয়ে গেলাম..
ধন্যবাদ...দোয়া করবেন...
আহমেদ খুব ভালো। নিরন্তর ভালোবাসা
আপনাকে ধন্যবাদ...দোয়া করবেন আমার জন্য...
কবিরুল ইসলাম কঙ্ক ভালো লাগালো । ভোট ও শুভেচ্ছা রইলো । রইলো আমার পাতায় আমন্ত্রণ ।
হুমায়ূন কবির আপনার লিখাটা অনেক সুন্দর হয়েছে। কিন্তু একটা পরিপূর্ণ গল্প হয়নি, লিখতে থাকুন অবশ্যই হবে। আপনার জন্য শুভেচ্ছা ও ভোট থাকল।
ধন্যবাদ...দোয়া করবেন আমার জন্য...
রবিন রহমান এটা একটা বর্ণনা, কিন্তু পরিপূন গল্প হতে হলে একটু কষ্ট করতে হবে , চেষ্টা করেন হয়ে যাবে..তবে হ্রৃদয় হিট করা গল্প ...
ধন্যবাদ...দোয়া করবেন আমার জন্য...
Salma Siddika মনটা খারাপ হলো মিনির গল্প পড়ে। ছোট বেলায় আমার খরগোশ ছিল। ঘটনা চক্রে তাকে অন্য একজনের বাসায় দিয়ে দিতে হয়েছিলো। সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল। ভালো লাগলো আপনার গল্প.
এই কিছুদিন আগে আমার আর একটা বিড়াল অনেক অসুস্থ হয়ে গেছিল। ওকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেছিলাম। ডাক্তার কিছু ঔষধও দিয়েছিল। তাতে করে কিছুটা সুস্থ হয়েছিল ও। কিন্তু কিছুদিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং একদিন ভোর বেলায় আমার হাতের উপর শুয়ে ও মারা যায়। অনেক খারাপ লাগছিলো তখন। আমার দুচোখের পানি ওর শরীরের লোমগুলোকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল... যাই হোক, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ কাহিনীটা পড়ার জন্য...
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ বেশ ভাল লাগল আপনার ব্যতিক্রমী ভালবাসার সুন্দর গল্প পড়ে । শুভ কামনা রইল ।
ধন্যবাদ আপনাকে...দোয়া করবেন আমার জন্য...

২৫ মে - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪