খুব ভোরে মা বিছানা ছাড়লে আমিও তার পিছু যেতাম ।বাকি ভাইবোনরা অঘোরে ঘুমাচ্ছে। মা ঢুকতেন সবজি বাগানে আর আমি সাথের শুকিয়ে যাওয়া পুকুর পাড়ে। চৈত্র মাস , শক্ত শুকনো পাড় । কোনের দিকে দুটো বড় গজাল মাছ আছে । কদিন আগেই সন্ধান পেলাম। মা ই আমায় সন্ধান দিলেন যাতে আমি ওদের নিয়ে ব্যাস্ত থাকি । আমি এই চার বছর বয়স পর্যন্ত কোনদিন সবজি বাগানে ঢুকিনি শুঁয়োপোকার ভয়ে। বসে পড়লাম, হ্যা ওরা আছে এবং মাথা পানির লেভেলে এনে বড় হা করছে আর বন্ধ করছে । হাত বাড়ালাম , ধরা দিয়েই সরে যায়। শরীরটা তেলতেলে । আজ ভাত আনিনি তাই মনে হয় ওরা নিরাশ । খেলা চলছে এবং এই শুকনো সময়ে প্রতিদিন ভোরে আমি আসি দেখে আমার বড় বোন , মেজ ভাই সবাই এলো কিন্তু ওরা দেখাই দিলনা । আমাকে মিথ্যুক বলে দুটো চড় মারল । মা খুব বকে দিলেন আর নিষেধ করলেন আমার খেলা যাতে বন্ধ না হয়। মায়ের শাকপাতা তোলা শেষ হলেই বাগানের গেটে দাড়িয়ে আওয়াজ দিলেই আমি দৌড় মায়ের পিছ পিছ । রান্নাঘরের দাওয়ায় ঝুড়িটা রাখলেই আমার কাজ ছিল শাকের ভেজা পাতায় হাত বুলিয়ে দেয়া। কত শাকপাতা ওই বাগানে ।শুঁয়োপোকারা মরে গেলে আমিও একদিন বাগানে ঢুকব বলে আশায় থাকি। তারপর একদিন আমাদের ইটের চওড়া গেট ভেঙ্গে ফেলল কিছু লোক । তারপর বড় ট্রাক এলো মাটি ভর্তি । তারা এদিক দিয়ে মাটি ফেলতে লাগলো । হতবাক আমি ! বাবাকে নিয়ে ভীষণ ভীত বলে মা ই আমার সাথী । মা বললেন পুকুর বন্ধ করে দিচ্ছে আমাদের বাড়িটা দোতালা হবে। নিরাপদ দূরত্বে দাড়িয়ে দেখি ট্রাকের চলাচল । ট্রাক চলে গেলেই পানির দিকে এগিয়ে ঝুকে থাকি আমার বন্ধু দুজনকে খুজি। নিশ্চয়ই বাবা ওদের মাছ তুলে ফেলতে বলবেন। দুই তিন দিনে টানা মাটি ফেলে পুকুর ভরে ফেলল কিন্তু মাছের দেখা নেই। হতাশ আমি দাড়িয়ে দেখি কত দ্রুত ওরা মাটি ফেলে। মাটির কাজ অল্প বাকি হটাত একটা মাছ লাফিয়ে উঠল । চিৎকার করে আমি বললাম এই মাছটাকে মারবেন না , ওকে তুলে আনেন । ট্রাকের ইঞ্জিনের আওয়াজে আমার কচি কণ্ঠ তলিয়ে গেল । বড় একটি মাটির টুকরোয় আমার বন্ধু ঢাকা পড়ল মনে হয় থেতলে গেছে ওর শরীর । নিষ্ঠুর শ্রমিকরা আরও মাটি ফেলে জায়গাটা মিশিয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি তাকিয়ে থাকলাম চলমান ট্রাকে বসা একদল ঘাতকের দিকে তীব্র ঘৃণার দৃষ্টি নিয়ে। আমার শিশুমনে ওই যে বন্ধু হত্যার দৃশ্য আজও মনে রয়েছে। আমি ট্রাক শ্রমিকদের ঘৃণা করতে শিখেছি ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক
শুঁয়োপোকারা মরে গেলে আমিও একদিন বাগানে ঢুকব বলে আশায় থাকি।...চমৎকার শব্দযোজনায় সুন্দর অনূগল্প....এভাবেই আমরা নাগরিক সভ্যতার কাছে হেরে যাচ্ছি...আমার গল্পে আসবেন...
আহা রুবন
চমৎকার গল্প! আমরা তো পাল্লা দিয়ে পরিবেশের বারোটা বাজাচ্ছি। মনের ভাললাগাগুলো প্রয়োজনের কাছে হেরে যাচ্ছে। গল্পকার গল্পে যতটুকু বলেছেন তার চেয়ে বেশি বলেছেন তার না বলা অংশে, সেটাই বেশি ভাল লেগেছে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।