জীবন এখানে

অস্থিরতা (জানুয়ারী ২০১৬)

শাহ আজিজ
সৈয়দ জামিল বসে আছেন একটা প্লাস্টিকের টুলে । গুলশান ১ নম্বর মোড়ে যাত্রী ছাউনির নিচে। তার লাগোয়া কি বোর্ড সমান ইকোনমি টেবিলে ডেস্কটপে এক তরুন ফটাফট টাইপ করছে । জামিল সাহেব মাঝে মধ্যে শরীর বাকিয়ে মনিটরে বানান দেখে নিচ্ছেন। বাঙালি ছেলে ইংরেজি বানান ভুলতো হবেই। জামিল সাহেব মৃদুস্বরে বানান নির্দেশ করছেন। এ-কদিনে তরুন বুঝে গেছে বড় দুদে কাস্টমার এসেছে তার কাছে। হাতে লেখা পাতাটা শেষ হতেই মুখের ডিকটেশন শুরু হচ্ছে, সাথে বানান ।
দুপুরের রোদ্দুর তার শরীরে জালাও পোড়াও অভিযান চালাচ্ছে। রাস্তায় বাস , গাড়ি , টেম্পুর হর্ন আর চিৎকার ,ধোয়া , তাপ, ফকিরদের অহরহ চাহিদা এসবের মাঝে সৈয়দ জামিলের কাজ বন্ধ নেই ।
সবাই টাইপ জানে। তার দরকার হয়নি তাই শেখেননি ।
ডাকসাইটে কর্মজীবনে প্রবাসে অতিদক্ষ শর্ট হ্যান্ড আর জেটের দ্রুতগতি সম্পন্ন টাইপিষ্টের কল্যানে কত টেলেক্স আর ফ্যাক্স পাঠিয়েছেন পৃথিবীময়। ভীষণ ব্যাস্ত জীবন কাটিয়েছেন বিশাল অফিস আর নানা দেশের কর্মীদের নিয়ে।
সব ব্যাস্ততা মুখ থুবড়ে পৌষের কুয়াশা ছাওয়া ভোরের গম্ভীর কাকের ডাক আর শান্ত স্থিরতা এনে দিয়েছে। অবসর নয় পুরো ফিন্যান্স কোম্পানি বন্ধ করল ব্রিটিশরা এবং কদিনের মধ্যে সারা পৃথিবীময়। চৌদ্দ হাজার বেকারের সাথে তিনিও যোগ দিলেন । ভগ্ন হৃদয়ে দেশে ফিরলেন । অনেক শীর্ষ পদের অফার এলো কিন্তু তিনি ফিরিয়ে দিলেন একটা অসম খেলার মানসিক দন্ধে।
তারচে সময় কাটুকনা আড্ডা মেরে। ঢাকা ক্লাব অনেকদিন থেকে তার স্পর্শ থেকে বঞ্চিত । জমে উঠলো পুরাতন বন্ধুদের আড্ডা ।
কর্মী মন চেতনা মাথা চাড়া দিল শেয়ার মার্কেট রমরমা হয়ে উঠলো। বড় অফিস করে ব্যাস্ত হয়ে গেলেন । শেয়ার বাজার পতন হলে আবারো মন ভেঙ্গে গেল। প্রায় নিঃস্ব হয়ে বেরুলেন।
সমাজ সেবায় মনোযোগ দিলেন । বন্ধু আত্মীয় স্বজন কেউ না কেউ অসুস্থ থাকেন তো তাদের দেখাশোনায় মনোযোগ দিলেন । আজ এর জানাযা কাল ওর মিলাদ, নিয়মিত হয়ে গেলেন ইউনাইটেড , অ্যাপোলো আর আজাদ মসজিদ নিয়ে। প্রতিটি দাফনের সময় বিচলিত হন, হন অস্থির নিজের কথা ভেবে। এর মধ্যেই একান্ত সঙ্গী ফাহমিদা দুবছরের আগের গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তাদের ছেড়ে চলে গেলেন , বড্ড একা হয়ে গেলেন জামিল। সারা বাড়ি খাঁখাঁ করে।
স্যার কমপ্লিট !
ধ্যান ভাঙ্গল জামিল সাহেবের ।
নিজের ট্যাবলেটে ভরে নিয়ে ফুটপাত ধরে গাছের ছায়ায় এগিয়ে চললেন বাসার দিকে। গেটে দারোয়ান সচকিত । গাড়ি রেখে ড্রাইভার বিশ্রামে । আজ আর বাইরে যাওয়া হয়নি। দুদিকে বাগান ঘিরে তিনটি জার্মান শেফার্ড ঘেউ ঘেউ করে লাফাতে শুরু করল । এসব তার ছেলের কীর্তি।
ইজি চেয়ারে বসতেই আহমেদ একটা শুকনো তোয়ালে এগিয়ে দিল । তার সাহেব ঘেমে গেছে। কারো নির্দেশ ছাড়াই এ সি চালু করেছে স্যারকে গেটে দেখেই। আহমেদ সব কাজ নিঃশব্দে করে । সারা বাড়িতে পাচ জন মানুষ থাকে কিন্তু টের পাওয়া মুশকিল শুধু কুকুরগুলোর মাঝে মধ্যে হাঁক দিয়ে ওঠা ছাড়া।
জামিলের বয়সী সবাই অসুস্থ। প্যারালাইজড এবং কেউ কেউ পরপারে চলে গেছেন।
কদিন আগেই ৮২ তে পা দিলেন জামিল। তার কোন অসুখ বিসুখ নেই। পাতলা ছিপ ছিপে শরীর । এর মধ্যেই এতগুলো বন্ধু নাই হয়ে গেল !! যুগপৎ বেদনা আর মৃত্যুভীতি তাকে মাঝে মধ্যে অস্থির করে তোলে।
সন্ধ্যায় গত ৬০ বছরের নিয়ম অনুযায়ী এক পেগ রেড লেবেল বরফ আর পানি দিয়ে ছোট ছোট চুমুক দিতে লাগলেন । সীমিত পান করেন, বেশি হলে বড় জোর দু পেগ। বড় এল সি ডিতে ন্যাট জিও তে সিংহ তার শিকার ভক্ষন করছে। ফুট টুলে পা রেখে হাতের কাগজগুলোও দেখছেন।
গত পরশু মশিউর চলে গেল। ওর মুখখানা দেখতে গিয়ে একটা ধাক্কা খেলেন। খুব প্রিয়জন ছিল তাই বোধ করি । জামিল সাহেব হটাৎই বিচলিত বোধ করলেন মশিউরের কালো চোখ আর বাঁকানো মুখের কথা মনে করে।
‘আহমেদ’ !
‘স্যার’ !
আহমেদ সবসময় রুমের বাইরে এক চোখ দিয়ে টি ভি দেখে যদিনা ছোট সাহেবের কাজে ব্যাস্ত থাকে ।
‘আয় , টি ভি দেখ”।
আহমেদ জীবনের প্রথমবার সাহেবের কাছ থেকে এই অভাবনীয় প্রস্তাব পেয়ে বিস্মিত।
গ্লাস থেকে হুইস্কি পুরোটাই গলায় ঢেলে দিলেন এবং আবারো জামিল বোতল থেকে ঢালছেন। আজ টেনশন বেশি হচ্ছে , আরেক পেগ চাই।
আহমেদের উপস্থিতি তাকে স্বস্তি দিচ্ছে।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুহুল আমীন ভিন্ন স্বাদের গল্প ।
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৬
ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৬
এম,এস,ইসলাম(শিমুল) ভিষণ সুন্দর লেগেছে,,, অসাধারণ,, ভোট ও শুভকামনা রইল কবি। আমার ক্ষুদ্র পাতায় আমন্ত্রণ রইল কবি।
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৬
ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৬
ইমরানুল হক বেলাল একটি ভিন্ন স্বাদের গল্প । পড়ে ভালো লাগলো। ভোট রেখে গেলাম । আমার পাতায় আমন্ত্রণ ।
ভালো লাগেনি ৮ জানুয়ারী, ২০১৬
ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৬
আল মামুন ভিন্ন স্বাদের লেখা। ভাল লেগেছে। শ্রদ্ধা জানবেন কবি.....
ভালো লাগেনি ৬ জানুয়ারী, ২০১৬
ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৬
রেজওয়ানা আলী তনিমা অসাধারণ হয়েছে লেখনি
ভালো লাগেনি ৫ জানুয়ারী, ২০১৬
ধন্যবাদ তনিমা
ভালো লাগেনি ৫ জানুয়ারী, ২০১৬
ফয়েজ উল্লাহ রবি খুব ভাল লেগেছে আজিজ ভাই,আপনার লেখা ভাল হয়,শুভেচ্ছা আর ভোট দুইটাই রইল।
ভালো লাগেনি ৩ জানুয়ারী, ২০১৬
ধন্যবাদ রবি
ভালো লাগেনি ৫ জানুয়ারী, ২০১৬
রুহুল আমীন রাজু অনেক ভালো লাগলো গল্পটি ...... আমার পাতায় আমন্ত্রন রইলো
ভালো লাগেনি ২ জানুয়ারী, ২০১৬
রুহুল আমীন রাজু আপনাকে ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ৫ জানুয়ারী, ২০১৬
মোজাম্মেল কবির শেষ সময়ের একাকীত্ব, অস্থিরতা চমৎকার করে তুলে ধরেছেন... বিষয় অসংশ্লিষ্ট যথাযথা লেখা। ভোট ও শুভ কামনা থাকলো।
ভালো লাগেনি ২ জানুয়ারী, ২০১৬
ধন্যবাদ মোজাম্মেল কবির
ভালো লাগেনি ৫ জানুয়ারী, ২০১৬

০৮ মে - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৮১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪