আমৃত্যু সংসার

প্রত্যাশা (আগষ্ট ২০২০)

Helal Al-din
  • 0
  • 0
  • ৪৭
রোগাক্রান্ত হয়ে শুয়ে থাকা আব্দুল মতিন বিশ্বাসের ঘামে ঝরঝর অবস্থা, বাতাস করার মতোও কেই তার পাশে নেই। চার পাশে মাছি ভনভন করছে। তাড়ানোর শক্তিটুকুও নেই তার। গত দেড় মাস ধরে সে বিছানায় প্যারালাইজড হয়ে পড়ে আছে। এ অবস্থাতেই এসির ঝিরঝিরে ঠান্ডা হাওয়ার কথা মনে পড়ে আব্দুল মতিন বিশ্বাসের। মনে পরে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সে এসি রুমের ভেতর বসে বসে তার অধিনস্থদের তদারকি করতো। মনে পড়ে যায় তার সুখের দিনগুলোর কথা। মাসের বেতন পাওয়ার পর পুরো মাসের বাজার সে একদিনেই বস্তা ভর্তি করে নিয়ে যেত বাসায়। চাল, ডাল, আলু, তেল, মশলা যা যা প্রয়োজন! ফ্রিজ ভর্তি করে রাখতো দেশি মুরগী দিয়ে। কত রকমের সুস্বাদু খাবার রান্না হতো তার ঘরে মনে করে চোখে জল আসে আব্দুল মতিন বিশ্বাসের।

লক্ষীগঞ্জ গ্রামের দরিদ্র কৃষক রহমত আলী বিশ্বাসের একমাত্র মা মরা সন্তান আব্দুল মতিন বিশ্বাস। ভিটে বাড়ি এবং একখন্ড জমি ছাড়া তাদের আর কোন সম্পত্তি নেই। অতি কষ্টে রহমত আলী বিশ্বাস তার পুত্র আব্দুল মতিনকে পড়ালেখা করিয়েছেন। আব্দুল মতিন পড়ালেখা শেষ করে শহরের একটি বড় কোম্পানীতে চাকরি নেন যার ফলে তার বাবার দুঃখ ঘুছে যায়। ছেলের চাকরির ফলে তার সংসারে সুখ আসে। বাবার পছন্দেই আব্দুল মতিন বিশ্বাস বিয়ে করেন একই গ্রমের রোজিনা বেগমকে। পুত্র এবং তার পুত্রবধুর ভালোবাসা নিয়েই রহমত আলী বিশ্বাস তার ৬২ বছরের ইহজীবন ত্যাগ করেন।



বিয়ের ঠিক তিন বছরের মাথায় মতিন-রোজিনা দম্পতির কোল জুড়ে আসে জমজ দুই ছেলে সন্তান। ডেলিভারির পর মায়ের অবস্থা ভালো হলেও সন্তানদের আবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। আব্দুল মতিন বিশ্বাস ধার-দেনা করে তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে সুস্থ্য করে তোলেন। পরবর্তীতে সেই ধার দেনা পরিশোধ করেছেন বাবার রেখে যাওয়া একখন্ড আবাদী জমি বিক্রি করে। তারপর থেকে তাদের জীবন সুখেই কাটছিলো।



আব্দুল মতিন বিশ্বাসের সমস্থ ভাবনা জুড়েই তার দুটি সন্তান। তাদের মানুষ করাই যেন এখন তার কাজ। তাই তিনি তার সন্তান দুটিকে ভালো স্কুলে ভর্তি করালেন। বেতনের সমস্থ তিনি তার সংসারের পিছনে খরচ করে দিতেন। সন্তান যদি মানুষ করতে না পারি তাহলে টাকা দিয়ে কী হবে?



কিন্তু তার সুখ আর স্বপ্নের এই দিনগুলিকে যে সৃষ্টিকর্তা আর সহ্য করতে পারলেন না। পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন কালের সবচেয়ে ভয়ংকরতম আতংকযুক্ত ছুঁয়াছুঁয়ি জাতীয় রোগ। বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছে কোভিট-১৯ বা করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের কবলে পৃথিবী অসহায় হয়ে পরে। ধ্বংস হয়ে যায় পৃথিবী প্রতিটি দেশের অর্থনীতি। একে একে চাকরি হারাতে তাকে চাকরিজীবীরা। এমনিভাবে একদিন আব্দুল মতিন বিশ্বাসও তার চাকরি হারান। পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায় তার। চাকরি হারানোর ফলে তার সংসার চালানোর কোন উপায় নেই। মাস শেষে বাড়ি ভাড়া চারজন মানুষের খাবার খরচ কিন্তু একটি পয়সাও তার ইনকাম নেই। সেই টেনশনে টেনশনেই যেন আব্দুল মতিন বিশ্বাস স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে পরেন।



রোজিনা বেগম তখন স্বামী সন্তান নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। অভাবের সংসার এবং স্বামীর ঔষুধ খরচের টাকা ব্যবস্থা করার জন্য এখন রোজিনা বেগম এবং তার সেভেন পড়ুয়া দুই সন্তানকেই করতে হয়। গ্রামের কৃষকদের সাথে ফসলের ক্ষেত যেমন শিম ক্ষেত, বেগুন ক্ষেত পরিষ্কার করা ফসল উঠানো, কীটনাশক ছিঁটানো ইত্যাদি কাজ করে। সারাদিনই তারা অত্যন্ত পরিশ্রম করেন ফসলের মাঠে এদিকে আব্দুল মতিন বিশ্বাস তার ছোট ঘরে একা একাই পরে থাকেন। তার কাছে এ জীবন যেন অভিশপ্ত। শুয়ে শুয়ে পুরনো স্মৃতি আওরানো আর মৃত্যুর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার। এ সংসারে তার কোন প্রয়োজন নেই। তবুও আমৃত্যু সংসার করতেই হয় মানুষকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

০৫ মে - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪